এই প্রশ্নগুলোর সঙ্গে আমরা পরিচিত। শুধু প্রশ্নগুলোর সঙ্গেই নয়, উত্তরের সঙ্গেও পরিচয় রয়েছে আমাদের। কিন্তু উত্তরগুলো যদি গতানুগতিক না হয়ে একটু ভিন্ন রকম হয়? লিখেছেন ইকবাল খন্দকার
কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে সেখানে পাঠানো হয় রিপোর্টারকে। তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সংবাদপাঠক। তবে কথা শুরুর আগে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?’
উত্তরঃ না, আপনাকে শুনতে পাচ্ছি না। আপনার কথা শুনতে পাচ্ছি। তবে খুব ভালো করে যে শুনতে পাচ্ছি, তাও কিন্তু না। এই না শুনতে পাওয়ার জন্য আমি টেলিফোন লাইনকে দোষারোপ করছি না। কারণ মূল সমস্যা আমার কানে। আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমার কানে প্রচুর ময়লা জমেছে। তবে আমি যত শিগগির সম্ভব ময়লা পরিষ্কারের জন্য নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যাব।
—
উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যাপারে এলাকার লোকজনের মন্তব্য নেওয়া হয়। এলাকার যিনি গণমান্য ব্যক্তি, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?’
উত্তরঃ বিষয়টি ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই। এ জন্য এটিকে আমি খালি চোখে না দেখে পাওয়ারফুল চশমা দিয়ে দেখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ পাওয়ারফুল চশমাই হলো ছোট জিনিসকে বড় করে দেখার উত্তম উপায়। তবে টেলিস্কোপ বা একটা অণুবীক্ষণ যন্ত্র হলে হয়তো আরেকটু ভালো হতো।
—
কোনো কাজ করে যদি নামধাম কুড়ানো যায়, তাহলে সবাই সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে শুরুর দিকের কথা জানতে চাইতে পারে। যেমন, নামীদামি অভিনেতাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘আপনি কীভাবে অভিনয়ে এলেন?’
উত্তরঃ দেখুন, আমার যেহেতু দুটি পা আছে, অতএব যেকোনো জায়গায় আমি হেঁটে হেঁটে যেতেই পছন্দ করি। অভিনয়ে আসার ক্ষেত্রেও আমি একই পন্থা অবলম্বন করেছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করেছি, হালকা নাশতা করেছি। তারপর পোশাক-আশাক পরে সোজা হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছি অভিনয়ে, মানে অভিনয় করতে। বিলিভ মি, সিএনজি কিংবা রিকশায় উঠিনি।
—
ছোট কোনো ছেলেমেয়ের সঙ্গে যদি আপনার পরিচয় হয়, তাহলে নানা রকম প্রশ্ন করেন তাকে। এগুলোর মধ্যে কমন একটা প্রশ্ন হলো, ‘তোমার বাবা কী করেন?’
উত্তরঃ আমার বাবা অনেক কিছু করেন। সকালে মা যখন নাক ডেকে ঘুমুতে থাকেন, তখন তিনি উঠে চা-নাশতা বানান। তারপর মাকে ডেকে তুলে খাওয়ান। বুয়া না এলে মায়ের জামাকাপড়ও ধুয়ে দেন। শপিংয়ে গেলে মায়ের ব্যাগ বহন করেন। কোনো কারণে মা রেগে গেলে উনি হাতজোড় করে ক্ষমা চান। এ ছাড়া প্রতি রাতে মশারি তো টানানই। এমনকি মশারির ভেতর মশা ঢুকলে তিনিই লাইট জ্বেলে মারেন।
—
আজকাল সমবয়সী বা এই টাইপের কারও কুশল জানতে চাওয়ার অতি প্রচলিত একটি প্রশ্ন হলো, ‘কী অবস্থা?’
উত্তরঃ যেহেতু এখন আমি জেগে আছি, অতএব জাগ্রত অবস্থা। এ ছাড়া আরও একটা ব্যাপার হলো, এখন আমি আছি বসা অবস্থায়। কিছুক্ষণ পর হয়তো দাঁড়ানো কিংবা হাঁটা অবস্থায় থাকতে পারি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি এখন আছি নরমাল অবস্থায়। কারণ জরুরি অবস্থা সেই কবেই তুলে নেওয়া হয়েছে।
—
সবশেষে যে প্রশ্নটার কথা বলব, সেটা মৌখিক নয়, লৈখিক। বাস বা অন্যান্যজায়গায় লেখা থাকে, ‘কিছু ফেলে গেলেন কি?’
উত্তরঃ জি, ফেলে গিয়েছি। তবে সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমার ফেলে যাওয়া জিনিসগুলো পেলেও আমাকে ফেরত দেওয়ার দরকার নেই। এগুলো আমার আর লাগবে না। ও হ্যাঁ, আমি যা ফেলে গিয়েছি তা হলো বাদামের খোসা আর ঝালমুড়ির ঠোঙা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৯, ২০০৯
Leave a Reply