সময়টা ছিল ২০০৭ সালের মার্চ মাস। বার্মিংহাম ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বসে আছি। গন্তব্য ছিল ডেনমার্ক। ছিল বলছি, কারণ এয়ারলাইন্সের ৭৬৭ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। তথ্যকেন্দ্র থেকে জানতে পারলাম, সবার টিকিট নতুন আরেকটা ফ্লাইটে রি-বুক করা হবে। কী আর করা, কফি বারে বসে কফি খাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর টার্মিনালের স্পিকারে ভেসে এল একটি সুরেলা কণ্ঠ। বলা হচ্ছে, যারা ৭৬৭ ফ্লাইটের যাত্রী, তারা যেন ১৪ নম্বর কাউন্টারে লাইনে দাঁড়ায় টিকিট রি-বুক করার জন্য। ঘোষণা শুনে কফিতে লম্বা একটা চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। খুঁজে খুঁজে যখন ১৪ নম্বর কাউন্টার পেলাম, দেখি বেশ লম্বা লাইন হয়ে গেছে। লাইনের শেষেই দাঁড়িয়ে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর যে ঘটনাটি ঘটল, আমার মনে হলো এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে বসা মহিলাকে তার রসবোধের জন্য পুরস্কার দেওয়া উচিত। ঘটনাটা খুলেই বলি।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ভদ্রলোক, যিনি বেশ বিরক্তিতে বারবার নড়েচড়ে উঠছিলেন। একপর্যায়ে তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। তিনি লাইন ভেঙেই এগিয়ে গেলেন এবং কাউন্টারে সজোরে টিকিট রেখে বললেন, ‘আমাকে এই ফ্লাইটেই যেতে হবে এবং আমি ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট চাই।’ কথা শুনে কাউন্টারে বসা মহিলা আন্তরিকভাবে বললেন, ‘আমি সত্যি দুঃখিত। আমি আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করব। কিন্তু তার আগে, যাঁরা লাইনে আছেন তাঁদেরটা শেষ করে, আপনারটাও করে দিচ্ছি। আপনি একটু ধৈর্য ধরে লাইনে আসুন।’
কথা শুনে যাত্রী মহোদয় মোটেও আশ্বস্ত হলেন না। তিনি খুব উত্তেজিত স্বরে বারবার বললেন, ‘আপনি জানেন, আমি কে? আমি কে?’
তৎক্ষণাৎ মহিলাটি দাঁড়িয়ে একটি চমৎকার হাসি দিয়ে সামনের মাইক্রোফোনটি অন করে বলতে লাগলেন, ‘অঞঞঊঘঞওঙঘ চখঊঅঝঊ!’ মহিলার আওয়াজ পুরো টার্মিনালে শোনা যাচ্ছিল। ‘গেট নম্বর ১৪তে একজন যাত্রী পাওয়া গেছে, যিনি জানেন না উনি কে। যদি কেউ তার পরিচয় জানাতে পারেন, তাহলে অনুগ্রহ করে ১৪ নম্বর কাউন্টারে আসুন, ধন্যবাদ।’
লাইনের সবাই তখন হাসিতে গড়াগড়ি। তা দেখে যাত্রী মহোদয় আরও রেগে গেলেন, ‘দাঁড়াও, আমি তোমাকে দেখে নেব।’ কাউন্টারের মহিলা আরেকটা চমৎকার হাসি দিয়ে বললেন, ‘স্যার, আমি দুঃখিত। এর জন্যও আপনাকে সিরিয়ালে আসতে হবে।’
— ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত এই গল্পটি নিজের বলে চালিয়েছেন মুনাস ইকবাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০২, ২০০৯
Leave a Reply