পুরোনো দিনের সেই সব রূপকথা-সেসব আর ভালো করে মনে পড়ে না। সেই সব রূপকথা মনে করতে গিয়ে কী যে মনে পড়ল, কতটুকু যে ঠিকঠাক মনে পড়ল আর কতটুকু বিকৃত হয়ে গেল কে জানে। তবু পড়ে দেখুন। লিখেছেন মেহেদী মাহমুদ আকন্দ।
রাজকুমার ও কিডন্যাপার
এক দেশে ছিল এক রাজকন্যা। তবে সে অন্য রাজকন্যাদের মতো মূর্খ ছিল না। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। একদিন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ক্যাডার তাকে কিডন্যাপ করল। এ খবর পেয়ে পাশের দেশের রাজকুমার বাড়তি ভাড়ায় সিএনজি ঠিক করে সোজা চলে এল রাজকন্যার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কিন্তু কোনো কূল-কিনারা করতে না পেরে সে গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ক্যাডারের কাছে। সে রাজপুত্রকে বলল, ওই কিডন্যাপকারীকে মারতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যেতে হবে। সেই হলে আছে একটি দলীয় রুম, সেই রুমে আছে একটি বিছানা, সেই বিছানায় আছে একটি বালিশ, সেই বালিশের নিচে আছে একটি চাবি, সেই চাবি দিয়ে বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখা সুটকেসটা খুলতে হবে। সেই সুটকেসের মধ্যে আছে একটি চাদর, সেই চাদরের নিচে আছে একটি বিদেশি পিস্তল। ওই পিস্তল দিয়েই কিডন্যাপকারীদের বশ করতে হবে। সাহসী রাজকুমার সবকিছু কথামতো করে উদ্ধার করে আনল রাজকুমারীকে।
রাজকন্যার ঘুম
এক দেশে ছিল এক রাজপুত্র। আরেক দেশে ছিল এক রাজকন্যা। রাজকন্যার এক অদ্ভুত ব্যাপার ছিল, সে শুধুই ঘুমাত। তার ঘুম কখনো ভাঙত না। এ সংবাদ পেয়ে ওই রাজকুমার ঘোড়ায় চেপে ছুটে গেল সেই রাজকন্যার দেশে। তারপর সে ওই ঘুমন্ত রাজকন্যার গায়ের ওপর পানি ছিটিয়ে দিল, চামড়া আর শুঁটকির ঘ্রাণ শুঁকাল কিন্তু রাজকন্যার ঘুম আর কিছুতেই ভাঙে না। অবশেষে রাজকুমার তার ল্যাপটপ অন করল। তারপর ‘রাজকন্যার ঘুম ভাঙানোর উপায়’ লিখে গুগলে সার্চ দিল। কম্পিউটারের বলে দেওয়া উপায় অনুযায়ী রাজকুমার রাজকন্যার শিয়রে রাখা মাশকারা আর আইলাইনার ডান চোখের নিচে ছোঁয়াল। অমনি রাজকন্যা ঘুম থেকে জেগে উঠল। তারপর তারা বিয়ে
করে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকল।
রাজকন্যাদের ভালোবাসা
একবার এক রাজা তাঁর তিন মেয়েকে ডেকে পাঠালেন। তারপর তাদের একে একে জিজ্ঞেস করলেন, তারা রাজাকে কেমন ভালোবাসে। সব থেকে বড় রাজকন্যা বলল, সে তার বাবাকে গোলাপ ফুলের মতো ভালোবাসে। রাজা তো শুনে মহাখুশি। এরপর দ্বিতীয় রাজকন্যা বলল, সে তার বাবাকে সমুদ্রের মতো ভালোবাসে। রাজা তো এবারও খুশিতে গদগদ। সব থেকে ছোট রাজকন্যা বলল, সে তার বাবাকে ফ্যানের মতো ভালোবাসে। শুনে রাজা খুব ক্ষুব্ধ হলেন। তাঁর মেয়ে তার ভালোবাসাকে নগণ্য ফ্যানের সঙ্গে তুলনা করল! রাগের মাথায় রাজা তাঁর ছোট মেয়েকে বনবাসে পাঠালেন। এরপর রাজা একদিন গোলাপ বাগানে ঘুরতে গিয়ে গোলাপের ঘ্রাণ নেওয়ার সময় একটা পোকা রাজার নাকের মধ্যে ঢুকে গেল। তারপর সে কী কাণ্ড! এরপর একদিন রাজা সমুদ্রে পানিতে নেমে ঢেউয়ের আছাড় খেয়ে নাস্তানাবুদ হলেন। সবশেষে একদিন পুরো রাজ্যে লোডশেডিং হলো। ঘুরল না ফ্যান, ঘর্মাক্ত রাজা বুঝতে পারলেন ফ্যানের গুরুত্ব। তারপর বনবাস থেকে ফিরিয়ে আনলেন ছোট রাজকন্যাকে।
রাজকুমারীর বিয়ে
এক রাজ্যে এক রাজার ছিল এক সুন্দরী রাজকন্যা। রাজকন্যা বিবাহযোগ্য হওয়ায় রাজা এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। আর তাতে নিমন্ত্রণ করলেন সব দেশের রাজকুমারদের, যাতে রাজকুমারী তার পছন্দসই পাত্র খুঁজে নিতে পারে। কিন্তু রাজকুমারীর কাউকেই পছন্দ হচ্ছে না। হঠাৎ বিকট শব্দে একটি হেলিকপ্টার এসে সামনের মাঠে নামল। আর সেই হেলিকপ্টার থেকে নেমে এল সুদর্শন রাজকুমার। কিন্তু পাইলট মিটারের থেকে ১০ টাকা বেশি চাইতেই ঝামেলাটা শুরু হলো। রাজকুমার তো কিছুতেই মিটারের থেকে ১০ টাকা বেশি দেবে না। ওদিকে পাইলটও ছাড়বে না। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি, তারপর বিশালদেহী পাইলটের এক চড়ে রাজকুমার ছিটকে পড়ে গেল ঘাসের ওপর। আর এই দৃশ্য দেখে রাজকুমারী ‘না, নাহ্’ বলে চিৎকার দিয়ে স্কচটেপ মারা একটি ১০ টাকার নোট হাতে নিয়ে দৌড়ে গেল আর নোটটা ছুড়ে মারল পাইলটের মুখে। তার পরের কাহিনী তো বুঝতেই পারছেন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০০৯
Leave a Reply