আজকাল সংবাদ পাঠক-পাঠিকারা তেমন কিছুই জানাতে চান না। বিস্তারিত জানানোর দায়িত্ব চাপিয়ে দেন প্রতিবেদকদের ওপর। দৈনন্দিন জীবনেও যদি আমরা বিস্তারিত জানানোর দায়িত্বটা পাশের জনের ওপর চাপিয়ে দিই, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়, আসুন তো দেখি। দেখাচ্ছেন ইকবাল খন্দকার।
পাবলিক বাসে উঠে কন্ডাক্টরের কাছে ভাড়া কত জানতে চাইলেন। কন্ডাক্টর নিজে কিছু না জানিয়ে বলে দিল, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাচ্ছে আমাদের হেল্পার মতলব মিয়া।
জি, জনাব! কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া মাত্র পাঁচ টাকা। এখানে কোনো কমিশনের বন্দোবস্ত নেই। ছাড়ের তো প্রশ্নই ওঠে না। উত্তর উঠবে দূরের কথা। পাঁচ টাকার বিনিময়ে যাত্রাপথে আপনি পাবেন পর্যাপ্ত খোলা আলো-বাতাস। কারণ, আমাদের গাড়ির সব গ্লাস ভাঙা। এ ছাড়া দাঁড়িয়ে গেলেও আপনাকে রড ধরতে হবে না। কারণ, পাশের যাত্রীদের চাপাচাপিতে আপনি এমনভাবে সোজা হয়ে থাকবেন যে পড়ে যাওয়ার কোনো চান্সই নেই।
শপিং মলে গেলেন কেনাকাটা করতে। মনে করুন মোবাইল ফোনসেট কিনবেন। দোকানের মালিক কিংবা ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলেন নতুন আসা সেটটি সম্পর্কে। ম্যানেজার নিজে কিছু না জানিয়ে বলে দিলেন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আমাদের সেলসম্যান আসগর আলী।
হ্যাঁ, ভাই, সেটটা গতকাল মাত্র এল। এই সেটের নানা সুবিধা। এই সেট দিয়ে আপনি যেকোনো নম্বরে ফোন করতে পারবেন। এই সেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটি দিয়ে কথা বলাও যায়, আবার শোনাও যায়। শুধু তা-ই নয়, মিসকল দিলে কোনো টাকাও কাটবে না। এই সেট দিয়ে যার সঙ্গে কথা বলবেন, তাকে দেখতেও পাবেন। কারণ, ফোন এলে স্ক্রিনে তার ছবি ভেসে ওঠে।
দু-তিন দিন ধরে আপনার প্রেমিকা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। কী হয়েছে, এটা জানতে চেয়ে তার বাসার নম্বরে ফোন করতেই সে বলল, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাচ্ছে আমাদের কাজের মেয়ে নসিমন।
জি, ভাইজান, গত কয়েক দিন আফার খুবই সমস্যা আছিল। একটুর লাইগা আফারে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় নাই। ক্যামনে কী অইল হেইডাও জানায়া দিতাছি। আফায় হাইহিল জুতা কিন্না আনছিল। হিলগুলা প্রায় হাফ ফুটখানেক উঁচা আছিল। আফায় এগুলা পইরা ইস্টাইল করতে করতে সিঁড়ি দিয়া নামতেছিল। আৎকা পা পিছলায়া পইড়া গড়াইতে গড়াইতে তিনতলা থেইকা নিচতলায় চইলা গেছিল।
কোথাও গিয়ে হয়তো রাস্তা চিনছেন না। জিজ্ঞেস করলেন কাউকে। সে নিজে না বলে দেখিয়ে দিল পাশের জনকে। আরও বলল, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাচ্ছে আমার খুব কাছের ছোট ভাই বদরুল।
এই রাস্তা দিয়ে আপনি শুধু বাংলাদেশের না, পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় যেতে পারবেন। মনে করেন, আপনি আমেরিকায় যাবেন। ব্যস, কয়েক কিলো সামনে গিয়ে বাসে উঠে চলে যাবেন ঢাকা, তারপর বিমানে উঠে সোজা আমেরিকা। এই রাস্তা দিয়া যেহেতু আমেরিকাও যাওয়া যায়, আপনি যেখানে যেতে চাচ্ছেন, তা তো খুব সোজা। নাক বরাবর সামনে যাবেন। তারপর হয়তো ডানে যাবেন, নয়তো বাঁ দিকে। আশা করা যায়, আজকের দিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন।
টিউশনি করবেন। কথা হচ্ছে অভিভাবকের সঙ্গে। আপনি ছাত্রীর বাবার কাছে জানতে চাইলেন, সপ্তাহে আপনাকে কয় দিন পড়াতে আসতে হবে। তিনি নিজে কিছু না বলে বললেন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আমার সহধর্মিণী আকতার বেগম।
যে কয় দিন আমরা বাড়িতে থাকি, প্রতিদিনই আসতে হবে। যেদিন বাড়িতে থাকব না, সেদিন খালি বাড়িতে একা একা আমার মেয়েকে পড়াতে আসার কোনো দরকার নেই। আর হ্যাঁ, খুবই সাধারণ পোশাকআশাকে আসতে হবে। আমার মেয়েকে জোরে জোরে পড়াতে হবে। যাতে বাইরে থেকেই শোনা যায়-পড়ালেখাবহির্ভূত আপত্তিকর কোনো কথাবার্তা হচ্ছে কি না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাকে আন্টি ডাকা যাবে না। ডাকতে হবে ‘আপা’।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০০৯
Leave a Reply