কথা ছিল ছোট মামা বইমেলায় নিয়ে যাবেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই তিনি বইমেলায় নিয়ে গেলেন আমাদের। মেলায় ঢুকে বিভিন্ন স্টলে ঘোরার আগেই দেখলাম, একদল ছোট ছেলেমেয়ে খাতা-কলম নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে, আর অখ্যাত-বিখ্যাত কোনো লেখকের দেখা পেলেই অটোগ্রাফ নিতে ঘিরে ধরছে। বড়রাও কম যাচ্ছেন না। লেখককুঞ্জের আশপাশে কিংবা কোনো স্টলে ভালো কোনো লেখককে পেলে তাঁরাও নিচ্ছেন অটোগ্রাফ। এসব দেখছি আর মেলায় ঘুরছি, এমন সময় বেজে উঠল মামার মোবাইল ফোন। মামার কথাবার্তাতেই আমরা বুঝে গেলাম, মামার অফিসের কোনো জরুরি ফোন। নিশ্চয় জরুরি কোনো কাজে চলে যাবেন তিনি। ব্যাপারটা বুঝতে পারামাত্রই ইশারায় আমরা বুঝিয়ে দিলাম, মামাকে আমরা ছাড়ছি না। অগত্যা যিনি ফোন করেছেন, মামা তাঁকেই মেলাতে আসতে বললেন।
মামার অফিস মতিঝিল। সেখান থেকে বইমেলায় আসতে কতক্ষণ লাগে, আমরা তা না জানলেও দেখলাম, লোকটি মিনিট বিশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেছেন মেলায়। সম্ভবত গাড়ি নিয়ে এসেছেন। লোকটি এসে মামাকে জানালেন, দু-একটা কাগজে এক্ষুনি স্বাক্ষর করতে হবে। খুব জরুরি। মামা কাগজগুলো হাতে নিয়ে স্বাক্ষর দিতে লাগলেন। স্বাক্ষর করা শেষ হতেই মামা টের পেলেন, সেই শিশু-কিশোরের দল তাকে ঘিরে ধরেছে। প্রত্যেকেই বলছে, ‘আমাকে একটা অটোগ্রাফ দিন!’ হতবাক মামা বললেন, ‘আমি কী অটোগ্রাফ দেব, কেন দেব?’ পিচ্চিদের সঙ্গে থাকা বয়স্ক একজন লোক বললেন, ‘আপনি একজন লেখক, তাই তো ওরা অটোগ্রাফ চাইছে। দিয়ে দিন না। বাচ্চা মানুষ···।’ মামা আরও অবাক হয়ে বললেন, ‘কিন্তু আমি তো তেমন কোনো লেখক নই।’ লোকটি এবার বললেন, ‘এ আপনার বিনয়ের কথা। দিয়ে দিন না অটোগ্রাফ।’
বাধ্য হয়ে সব বাচ্চাকেই অটোগ্রাফ দিলেন মামা। সম্ভবত মামাকে স্বাক্ষর করতে দেখে বাচ্চারা ভেবেছিল, মামা কোনো লেখক এবং তিনি বুঝি অটোগ্রাফ দিচ্ছেন।
বাচ্চারা ভুল করতেই পারে-সে না হয় মানা গেল। কিন্তু ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দুজন তরুণ এসে মামাকে বলল, ‘স্যার, একটা অটোগ্রাফ।’ আরেকজন জানতে চাইল, ‘কিছু মনে করবেন না, স্যারের এবার কী বই বেরিয়েছে?’
আমরা ততক্ষণে হাসিতে ফেটে পড়েছি। তবে বুঝতে পারছি, মামা আর পারছেন না। এক্ষুনি রাগে ফেটে পড়বেন।
মহিতুল আলম
সূত্রঃ প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০০৯
Leave a Reply