দৃশ্য ১
নায়ক-নায়িকা একই বাসে করে যাচ্ছে। নায়ক বুঝতে পারে নায়িকার কাছে টিকিট নেই। নায়ক নিজের টিকিটটি নায়িকার হাতে গুঁজে দেবে। টিকিট না থাকার অপরাধে নায়ককে টিকিট চেকার বাস থেকে নামিয়ে দেবে। নায়কের এমন আত্মত্যাগে নায়িকা তার প্রেমে পড়ে যাবে! তার জন্য নায়িকার খুব মন খারাপ হয়।
টিকিট চেকারঃ দেখে তো ভদ্রই মনে হচ্ছে। টিকিট ছাড়া বাসে চড়ার এ অভ্যেস কত দিনের?
নায়িকা (মনে মনে)ঃ আজ আমার জন্য তাকে এত কথা শুনতে হলো। তার মানে নিশ্চয় আমাদের মধ্যে প্রেম হয়ে গেছে।
দৃশ্য ২
এরপর নায়ক প্রতিদিন ওই পথে নায়িকাকে খোঁজে। কিন্তু নায়িকার আর দেখা নেই। একদিন হঠাৎ চিৎকার-বাঁচাও, বাঁচাও। নায়িকাকে গুণ্ডা আক্রমণ করেছে। নায়ক ইয়া ঢিসুম ঢিসুম শব্দে মারামারি করে নায়িকাকে গুণ্ডামুক্ত করবে।
নায়িকাঃ ছেড়ে দে শয়তান। চিল্লানিটা দিয়ে নিই, তখন দেখবি, নায়ক এসে তোদের কীভাবে শায়েস্তা করে।
নায়কঃ আমি ০ থেকে ১-এর বেশি গুনতে পারি না। সুতরাং এর ভেতরেই ছেড়ে দে ওকে।
এরপর নায়ক-নায়িকা দুজনই পরস্পরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। পাশেই দেখুন সেই সোশ্যাল অ্যাকশন দৃশ্যটি।
দৃশ্য ৩
দু-এক দিন পরের দৃশ্য। নায়ক-নায়িকা একটি পার্কে বসে প্রেম করবে। দুজন বাদাম খাবে। নায়িকা তার ব্যাগ থেকে সেই টিকিটটি বের করে নায়কের হাতে দেবে। নায়ক আবেগাপ্লুত হয়ে নায়িকাকে জড়িয়ে ধরতে পারে। এর পরই একটা বৃষ্টিভেজা গান উইথ নৃত্য মানে দুজনের শারীরিক কসরত। এখন বৃষ্টিভেজা সেই রোমান্টিক গানটি দেখুন, নিচের দৃশ্যে।
নায়কঃ আজ এই বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে কাপড়ের যত ময়লা···
নায়িকাঃ তবু ধুয়ে যাবে না এই মেকআপের রং··· (গান)
দৃশ্য ৪
নায়ক-নায়িকা সব সময় ছটফট করে দুজন দুজনকে দেখার জন্য। এক মুহূর্তের জন্য কেউ কাউকে ছাড়তে চায় না। একদিন নায়কের বাবা নায়কের মায়ের কাছ থেকে শুনবেন, তাঁর ছেলে প্রেমে পড়েছে। নায়কের বাবা আধুনিক স্কুলশিক্ষক। তাই তিনি খুশি হতে পারেন। তিনি পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে সস্ত্রীক মেয়ের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবেন।
বাবাঃ শাব্বাশ বাপকা ব্যাটা! তোর মাকেও তো আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম।
মাঃ এই বুড়ো বয়সে ছেলের সামনে তোমার লজ্জা করে না এসব বলতে?
দৃশ্য ৫
মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে এসেই ঘটনা প্যাঁচ খেয়ে যাবে। মেয়ের বাবা শহরের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী গডফাদার ফকির শাহ, যাঁকে নায়কের বাবা ২০ বছর ধরে খুঁজছেন। এই সেই ফকির শাহ, যে তাঁকে গ্রাম থেকে ভিটেমাটি ছাড়া করে পথে নামিয়েছিলেন (এখানে একটা ফ্লাশব্যাক)। নায়িকার বাবাও চিনতে পেরে অপমান করে ঘর থেকে বের করে দেবেন তাঁকে।
ফকির শাহঃ সামান্য স্কুলমাস্টার হয়ে তুমি আমার মেয়ের দিকে তাকিয়েছ, তুমি জানো না তেলে-জলে কখনো মিশ খায় না? বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।
এরপর তিনি তাঁর মেয়েকে ঘরে বন্দী করে রাখবেন। আরেক ব্যবসায়ীর গুণ্ডামার্কা ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করবেন ফোনে।
দৃশ্য ৬
বাবাকে অপমান করেছে শুনে নায়ক বিশাল এক চিৎকার দেবে। চিৎকারের পরই দেখা যাবে, সে নায়িকার বাড়ির সামনে। কিন্তু নায়িকা বন্দী ঘরে থেকে বিরহের গান গাইছে আর কাঁদছে। নায়কও তখন গান শুরু করবে। এ সময় বিজলী চমকানোসহ বৃষ্টি শুরু হবে। নায়কের হাতে একটা পানির বোতলও থাকবে। তখন নায়কের পুলিশ অফিসার বন্ধু এসে হাজির হয়ে নায়ককে বাড়ি নিয়ে যাবে। যেতে যেতে-
নায়কঃ ওই ফকির শাহ···তুই আমার বাবাকে অপমান করেছিস, আমিও আজ তোর বাবাকে···
দৃশ্য ৭
নায়কের মুখে সবকিছু শুনে পুলিশ বন্ধু নায়িকার বাবাকে চিনতে পারবে। সেও তাকে খুঁজছে। সে শহরের অনেক বড় ক্রিমিনাল। তারা দুজন মিলে নায়িকাকে উদ্ধার করতে যাবে। এদিকে এই পুলিশ অফিসারের তৎপরতা বন্ধের জন্য নায়িকার বাবা পুলিশ অফিসারকে খুন করার জন্য সন্ত্রাসী পাঠাবে। এ সময় নায়িকার মা এসে জানাবে, নায়িকাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ভিলেন বাবা তখনই লোক পাঠিয়ে দেবে নায়কের মা-বাবাকে ধরে আনার জন্য।
ভিলেনঃ হা হা হা, আমার মেয়েকে নিয়ে তুমি কোথায় যাবে হিরু, আমি তোমার মা-বাবাকে ধরে আনাচ্ছি।
দৃশ্য ৮
নায়িকাকে নিয়ে নায়ক বাসায় এসে দেখবে, তার মা-বাবা নেই। বাড়ির কাজের ছেলে মরতে মরতে জানাবে ফকির শাহর লোকেরা তুলে নিয়ে গেছে। জানিয়েই সে মারা যাবে। এবার নায়ক আরও বড় একটা চিল্লানি দেবে ফ···কি···র···শা···হ··· বলে। চিল্লানি শেষ হওয়ার আগেই সে পৌঁছে যাবে নায়িকার বাড়িতে। কিন্তু বাড়ি ফাঁকা। এ সময় নায়িকার মা আসবেন। নায়িকার মা এত দিন ধরে তাঁর স্বামীর অনেক অপরাধ সহ্য করেছেন, আর নয়। তিনিও স্বামীর বিপরীতে অবস্থান নেবেন।
নায়িকার মাঃ আমি এত দিন অনেক সহ্য করেছি, বাবা, আর নয়। ওরা গাজীপুরের শালবনের আস্তানায় গেছে। তোমরা এক্ষুনি যাও।
দৃশ্য ৯
নায়ক, নায়িকা আর পুলিশ বন্ধুটি মুহূর্তেই পৌঁছে যাবে গাজীপুর শালবন আস্তানায়। ভিলেন বন্দীদের নিয়ে নানা রকম ঠাট্টা-মশকরা করবে। এমন সময় একদিক থেকে কাচ ভেঙে শূন্য দেহে নায়ক, অন্যদিকে দরজা ভেঙে মোটরসাইকেল নিয়ে পুলিশ অফিসার এবং আরেক দিক দিয়ে নায়িকা প্রবেশ করবে আস্তানায়। এরপর শুরু হবে সামাজিক অ্যাকশন। তখন নায়ক ভিলেনের পিস্তলের সামনে পড়ে যাবে।
ভিলেনঃ এখন তোমাকে কে বাঁচাবে, হিরু···? হা···হা···
নায়কঃ আমাকে মারার ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে কারও জন্ম হয়নি।
বন্ধু পুলিশ অফিসার ভিলেনের হাতে গুলি করলে তার হাত থেকে পিস্তল পড়ে যাবে। ওটা তুলে নেবে নায়ক।
দৃশ্য ১০
এ সময় নায়িকার মা আরও পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হবে। পুলিশ এসে দেখবে নায়ক ভিলেনকে মনের ঝাল মিটিয়ে মারছে। পুলিশ বলবে, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’ এরপর পুলিশ সবাইকে ধরে নিয়ে যাবে। তারা তখন সবাই মুক্ত। দৃশ্য কাট করে চলে যাবে নায়ক-নায়িকার গানের দৃশ্যে। গান উইথ সেই রকম নৃত্য।
নায়িকাঃ যৌবন একটা লাল টমেটো···
নায়কঃ প্রেম একটা দিল্লিকা লাড্ডু···
সতর্কতাঃ বিনা অনুমতিতে হুবহু এই গল্প কিংবা এর
কোনো অংশ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কেউ ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ক থো প ক থ ন
নায়ক
আমার জীবনে আমি অনেক ছবি করেছি কিন্তু এমন অসাধারণ কাহিনীনির্ভর সামাজিক গল্পের ছবিতে আগে কখনো অভিনয় করিনি।
নায়িকা
হি···হি···আমি আসলে কি বলব, কাহিনীটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম হি··· হি···।
পরিচালক
আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, এ রকম চলচ্চিত্র এ দেশে এর আগে কেউ বানাতে পারেনি। আপনি একবার ভাবুন, সামান্য একটা টিকিট থেকে একটা ছবির কাহিনী হতে পারে তা কি এর আগে কেউ ভাবতে পেরেছে···?
কাহিনী ও চিত্রনাট্যঃ তাওহিদ মিলটন
সংলাপঃ আদনান মুকিত
সম্পাদনাঃ সিমু নাসের
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০৯, ২০০৯
Leave a Reply