আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করা হবে। ঢাকা শহরের কয়েকটি পরিচিত এলাকা ঘুরে জনগণের কাছে তিনটি বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-
–ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আপনি কী বোঝেন?
–ডিজিটাল বাংলাদেশ হলে কী হবে?
–ডিজিটাল বাংলাদেশে আপনার প্রত্যাশা কী?
আগ্রহী-অনাগ্রহী অনেকেই নিজেদের মতামত দিয়েছে। সেই মতামতগুলোই ক্রমানুসারে তুলে ধরা হলো।
হুমায়রা চৌধুরী টুম্পা
পুষ্টিতত্ত্ব বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডিজিটাল বাংলাদেশ আমার কাছে এমন হলে ভালো হতো যেন সবার চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, এ কেমন মানুষ, ভালো না খারাপ। আর দুর্নীতিবাজ কি না, তাহলে সবাই কোনো উল্টাপাল্টা কিছু করতে পারত না লজ্জায়।
দুলাল
ঝালমুড়ি বিক্রেতা
‘কতক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন।’ যখন দ্বিতীয় প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম, তখন মাথা নামিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে পেঁয়াজ কাটছিলেন। তৃতীয় প্রশ্ন করতেই অসহিষ্ণুতার সুরে বললেন, ‘যান তো ভাই, কাম করতে দেন, যত্তোসব আজাইরা প্যাঁচাল।’ ধমক খেয়ে যখন চলে এলাম, তখন পেছন থেকে তিনি ডেকে বললেন, ‘ভাইজান, শুনেন, ‘আমরা আর কী চাই! দেশ ভালো চললেই তো হলো।’
সোহাগ
তেজগাঁও কলেজ
কথাটা শুনছি, কিন্তু কিছুই বুঝি নাই।
লিটন
শ্যামলী
ডিজিটাল বাংলাদেশ হলে সারা দেশে সার্বিক সম্পর্ক সবার মধ্যে উন্মুক্ত হয়ে আসবে।
মিলন
আগারগাঁও
আমি আসলে জিনিসটাই বুঝি না।
বেলাল
তালতলা
শেখ হাসিনা এটাকে যেভাবে বলেছেন, অনেকটা তার ওপর নির্ভর করবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আমি বুঝি বর্তমান অবস্থা থেকে মডার্ন ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা, যেখানে টেকনিক্যাল সব সুবিধা থাকবে।
মলি
মিরপুর-১২
–কিছুই বুঝিনারে ভাই, আমারে বুঝাইয়া দেন।
–যদি আসলেই ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়, তাহলে আমি চাইব তথ্যের স্পষ্ট প্রকাশ। তাহলে কেউ আর ‘ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই না’ জাতীয় কথা বলতে পারবে না।
রতন
তৃতীয় শ্রেণী
আমি চাই যেকোনো ভিডিও গেমস খেলতে, যেন তা চাইলেই পাই। হোটেলে যেমন ওয়েটার থাকে, ঠিক তেমনি নতুন নতুন গেমস নিয়ে তারা দাঁড়িয়ে থাকবে। ডাকলেই গেমস দিয়ে যাবে।
সাইফুল ইসলাম
শেকৃবি
ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আমি বুঝি টেকনোলজিক্যাল দিক দিয়ে অনেক উন্নতি ও সরকারের মধ্যে কাগজবিহীন একটি যোগাযোগ মাধ্যম, যাতে মন্ত্রণালয়ের মধ্যে কাগজের দরকার না হয়। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উন্নতি বুঝি।
শাহাদাত ও
ধীমান রায়
কাজীপাড়া
ডিজিটাল বাংলাদেশ কী, তা-ই তো ঠিকমতো জানি না। আমাদের দেশের রেজুলেশনটা এখন সাদাকালো। ডিজিটাল বাংলাদেশ হলে আমাদের দেশটা কালারফুল হবে।
রোমান মানিক
শেকৃবি
–ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে অর্থব্যবস্থা কোনোভাবেই টালমাটাল থাকবে না।
–ডিজিটাল বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হবে। অনেক সময় সেভ হবে। এতে আমরা অন্য কাজ করতে পারব।
–নেট সার্ভিসিং উন্নত করতে হবে। বাইরের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এখনো ইলেকট্রনিকসের দাম বেশি। এগুলো সুলভ করতে হবে। গ্রামের মধ্যেও ইন্টারনেট সুলভে চালু করতে হবে। কৃষিব্যবস্থা প্রযুক্তিনির্ভর করতে হবে। যেকোনো প্রযুক্তির সুবিধা আমরা খুব সহজে পেতে চাই। মধ্যস্থ কারবারি চাই না।
বাদল
ঢাকা মেডিকেল
–যে বাংলাদেশে পুরা জীবনটাই অটো হইয়া যাইব, সেটাই ডিজিটাল বাংলাদেশ।
–ডিজিটাল বাংলাদেশে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারলেই আমি খুশি।
মামুন
রিকশাচালক
–ডিজিটাল আমেরিকা হয় নাই, ডিজিটাল ইংল্যান্ড হয় নাই, ডিজিটাল বাংলাদেশ হইব কেমনে!
–প্রত্যাশা কিছু নাই। আমার যা বয়স তাতে তত দিন তো বাঁচুম না।
নাজ, ডায়না, বর্ষা
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের প্রত্যাশা, নারীর সম-অধিকার থাকতে হবে। তাদের মত প্রকাশের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
রিপন
বুয়েট
–ডিজিটাল বাংলাদেশ কী, সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করেন কেন? আমার থেকে শেখ হাসিনা অনেক ভালো বলতে পারবেন।
–ডিজিটাল বাংলাদেশ হলে আবার অ্যানালগ বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য আন্দোলন হবে।
–খুশি মুখ চাই।
লিপু, রিমেল, বাবলু
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি
হবে মনে হয় কিছু একটা, যখন হবে তখন আবার আইসেন, বইলা দিব।
সাইদুল করিম পরশ
মিরপুর
কোথাও কোনো তৈলবাজি চলবে না। কারণ, ডিজিট চাপতে হয়, তেল দিতে হয় না।
নারগিস সুলতানা শিবলী
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
–প্রযুক্তি ও তথ্যনির্ভর বাংলাদেশ, যেখানে প্রযুক্তি যেমন থাকবে, তথ্যনির্ভরতাও থাকবে। ডিজিটাল বাংলাদেশে শুধু ডিজিটই থাকবে।
–সবাই প্রযুক্তির সঙ্গে একাত্ম হবে। ইস, যদি মানুষকে ফ্যাক্স করে অন্য জায়গায় পাঠানো যেত!
রফিকুল ইসলাম
নটর ডেম কলেজ
ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আমার মনে হয় একটি গ্রাফিক্যাল বাংলাদেশকে বোঝানো হচ্ছে। সেটাতে বহির্বিশ্বের সবাই একবার নজর বোলালেই বুঝতে পারবে যে আমাদের দেশটা কেমন। যেমন-আমরা ক্যালকুলেটরের দিকে তাকালে বুঝতে পারি যে এটা ক্যালকুলেটর, কম্পিউটারের দিকে তাকালে কম্পিউটার-এই রকম।
সুফিয়া খাতুন
গৃহিণী
কী আর হইব, যোগাযোগ বাড়ব, অনেকের খোঁজখবর নেওয়া যাবে।
আরাফাত
ষষ্ঠ শ্রেণী
–দূর, জানি না।
–আমরা ফ্রি ফ্রি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারব, রাস্তায় রাস্তায় গেমস খেলা যাইব।
–আমি চাই পড়ালেখা যেন মোবাইলের সিমের মতো মাথার ভেতরে ঢুকাইয়া দেওয়া যায়, তাইলে অনেক মজা হইব।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১২, ২০০৮
Leave a Reply