‘হতচ্ছাড়া, বেলা দশটা পর্যন্ত পড়ে পড়ে ঘুমানো! আজ পিটিয়ে যদি তোর চামড়া না ছাড়াই···’ ডিজিটাল অ্যালার্ম ঘড়ির শব্দেও হাসানের যে ঘুমটা ভাঙেনি, তাই চটে গেল বাবার এই হুঙ্কারে। রাগে ঘড়িটা ছুড়ে মারতেই তা আঘাত হানল দেয়ালে ঝুলানো ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবিটাতে। বাঁধাই করা ছবিটা নিচে পড়েই ঝনঝন শব্দে ভেঙে গেল। এত শব্দ হলো, ঠিক যেন ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড!
ছবি ভাঙায় ঘরে হইচই আরও বেড়েছে। ঘর থেকে বেরিয়ে আসে হাসান। তারপরই মনে পড়ল, ডিজিটাল রেডিওটা নিয়ে আসা উচিত ছিল। খেলার আপডেটটা জানা যেত। হঠাৎ হাসানের চোখে পড়ল-একটি ডিজিটাল ওজন মেশিন নিয়ে একটি লোক বসে আছে। নাশতা না সেরেই বাইরে বেরিয়েছে হাসান। ওজন কতটুকু কমল মেপে দেখা দরকার। ওজন মেপে হাসানের মেজাজ আরও খারাপ হলো-তার ওজন নাকি ২৫ কেজি!
হাসান বিকেলে যে ছাত্রটাকে পড়ায়, আজ তাকে দুপুরেই পড়াতে চলে এল। ডিজিটাল ক্যালকুলেটর দিয়ে অঙ্কটা ঠিক মতো করাতে পারলেও ব্যাঘাত ঘটল ইংরেজির বেলায়। হাসানের ছাত্র হঠাৎই আবিষ্কার করল, তার স্যার ডিজিটাল ডিকশনারি ব্যবহার করতে পারে না! যদিও স্যার স্বীকার না করে ওকে ধমকধামক দিয়ে চলে গেল। মোবাইল ফোনে সেভ করা ১১ ডিজিটের নম্বরটিতে অনেক চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত মানুষটির কণ্ঠ শুনতে পেল না হাসান। তখনই চোখে পড়ল একটি ডিজিটাল ব্যানার, ‘ফোন করা যায়।’ দোকানে ঢুকে ডিজিটাল ফোন দিয়ে নিশিদের বাসায় ফোন করল সে। নিশিই ফোন ধরল। ফোন বন্ধ থাকায় অনেক ‘সরি’ হয়ে বিকেলে হাসানকে দেখা করতে বলে নিশি।
নিশির সঙ্গে সময়টা ভালোই কাটে হাসানের। আজও তা-ই কাটল। বিদায়বেলা নিশি তার ব্যাগ থেকে একটি ডায়েরি বের করে হাসানকে দিয়ে বলল, ‘এটা তোমার জন্য।’ ডায়েরিটা খুলতেই ‘হো হো’ হাসির ভয়ঙ্কর শব্দ শোনা গেল। চমকে লাফিয়ে ওঠে হাসান। আর তাতেই হেসে ওঠে নিশি। বলে, ‘এটা একটা ডিজিটাল ডায়েরি, এটা খুললেই এ রকম ভূতের হাসি শোনা যাবে।’
রাতে বাড়ি ফেরার পথে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে হাসান। ছিনতাইকারীকে কিছুই দিতে রাজি না হওয়ায় যথারীতি উত্তম-মধ্যম খেতে হয় তাকে।
একটু পর হাসান নিজেকে আবিষ্কার করে একটি ডিজিটাল ল্যাবে। তাকে নাকি একটা ডিজিটাল এক্স-রে করাতে হবে।
২০২১ সালে নাকি বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এ পরিণত হবে। তবে এ মুহূর্তে দুনিয়ার সব ডিজিটাল যন্ত্রের ওপরই তার চরম রাগ হচ্ছে।
মহিতুল আলম পাভেল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১২, ২০০৮
Leave a Reply