এই শহরে বরাবরই
বুয়ার কদর বেশি,
বুয়ারা কেউ স্থানীয়, আর
কেউবা নানান দেশি।
নোয়াখালী, মমেসিং আর
জামালপুরের বুয়া,
ভাষা যা হোক, লাগছে কাজে
কেউ যদিও ভুয়া।
বুয়ার কদর দিনকে দিনে
যাচ্ছে যতই বেড়ে,
‘বান্ধা’ বুয়া হচ্ছে ‘ছোটা’
ঘরের মায়া ছেড়ে।
ছোটা বুয়ার লাভ বেশি তাই
ডিমান্ডও বেশ আজ,
সারা দিনে করতে পারে
সাত জা’গাতে কাজ।
কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা আর
বাসন ধোয়ার পরে-
ছোটা বুয়ার ক্লায়েন্ট বেশি
ছুটছে আরেক ঘরে।
বান্ধা বুয়ার ডিমান্ড আবার
অন্য রকম তাই-
গৃহিণীদের বিশ্বাসী আর
মনটা বোঝা চাই।
এই বুয়াদের হচ্ছে ট্রেনিং
গৃহিণীদের হাতে,
সোফায় বসে, টিভিও দেখে
আপত্তি নেই তাতে।
ঘরের কে কী ভালোবাসে
কার কী করা মানা,
এই বুয়াদের পরিবারের
সবার বিহেভ জানা।
বান্ধা বুয়া মাসে মাসেই
বেতন রাখে জমা,
ছোটখাটো হোক অপরাধ
কর্ত্রী করেন ক্ষমা।
বাড়ির সাহেব কেউ ‘দুলাভাই’
কাউকে ডাকে ‘খালু’,
বান্ধা বুয়ার ধান্ধা অনেক
দিন বাড়ে, হয় চালু!
বছর বছর বান্ধা বুয়ার
বেতন যদিও বাড়ে,
মেয়ের বিয়ে নানান ছুতোয়
নগদ নিতেও পারে।
গৃহিণীরা হয় কুপোকাত
বান্ধা বুয়ার টানে,
রান্নাঘরে কাজ করে আর
একলা বিজি গানে।
বান্ধা বুয়ার বাড়তি কিছু
কাজকর্মও আছে,
বাড়ির মেয়ে বাইরে গেলে
বুয়ারা রয় পাছে।
বখাটেরা টিজ করে যেই
অনেকে দেয় তালি,
সিকিউরিটি বুয়া তখন
আনমনে দেয় গালি।
বাড়ির ছেলেমেয়ের প্রেমে
বান্ধা বুয়াই আগে-
এগিয়ে আসে, মেসেজ দিতে
এদের কাজে লাগে।
বান্ধা বুয়ার ওপর যদি
বেশি ডিপেন্ড করে,
অনেক সময় অশান্তিও
আসতে পারে ঘরে।
বাড়ির মালী, দারোয়ান আর
কাজের ছেলে নিয়ে,
ঘরের জিনিস চুরি করে
পালিয়ে করে বিয়ে।
চোর ডাকাতের প্রলোভনে
পড়লে এসব বুয়া,
জীবন নিয়ে যখন তখন
খেলতে পারে জুয়া।
বান্ধা বুয়ার পরে এবার
ছোটার পর্বে ফিরি,
জায়গা বুঝে এদের থাকে
নানান রকম ছিরি!
ফকিরেরপুল, কমলাপুর
মুগদাপাড়া ঘুরে-
ছোটা বুয়ার জয়জয়কার
দেখবে শহরজুড়ে।
ছোটা বুয়ার অভিজ্ঞতা
বান্ধা বুয়ার চেয়ে-
অনেক বেশি, বলেই কাজও
সহজে যায় পেয়ে।
সাত বাসাতে কাজ করে হয়
নানান মানুষ দেখা,
সময় বুঝে অসুস্থ হয়
হিসাব মাথায় লেখা।
মেসের ছোটা বুয়ারা কেউ
মওকা হাতে পেলে-
ব্যাচেলরের সব নিয়ে যায়
আর কি দেখা মেলে?
পশ এলাকায় ছোটা বুয়ার
ডিমান্ড ভালো, তবে-
ডিশ দেখা আর ফেরার পথে
খাবার দিতে হবে।
বড়লোকের অনেক গোপন
কিসসা এরা জানে,
প্রলোভনে পড়লে এরাও
বিপদ ডেকে আনে।
খুন খারাবির মতো কাজেও
জড়িত হয় তারা,
ছোটা বুয়ার একেক জা’গায়
একেক কাজের ধারা।
মন্দ বুয়ার পাশাপাশি
অনেক বুয়াই ভালো,
ব্যাঙ্গা, কালুর মা নামে কেউ
ঘরকে করে আলো।
বুয়ারা হোক দুষ্টু, ওরা
লবণও দেয় চায়ে,
বিরক্তিতে চিমটি কাটে
ছোট্ট শিশুর গায়ে!
তবুও ওরা কাজ করে খায়
হয় দিতে ঘর ভাড়া,
নিজের শ্রমে চালায় জীবন
দান খয়রাত ছাড়া।
পঙ্গু স্বামীর চিকিৎসা আর
মেয়ের বিয়ে দিতে,
বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে কাজে
রৌদ্রে, ঝড়ে, শীতে।
নিজের জীবন তুচ্ছ করে
নিচ্ছে কত ঝুঁকি,
স্বপ্নগুলো হারায় আবার
কখনো দেয় উঁকি।
ময়লা কাপড়, খেটে খেটেই
কয়লা ওদের জান,
অলংকারের মুখ দেখেনি
যদিও ফুটো-কান।
ঠেকায় পড়ে কাজটা বুয়ার
করতে যখন হয়,
স্বামী-স্ত্রীতে থাকে তখন
ঝগড়া-ঝাঁটির ভয়!
এই শহরের ফ্ল্যাট বাড়ি সব
বুয়ার হাতেই মোছা,
শান্তি পেতে সারা জীবন
লাগবে ওদের পোছা।
ঝলমলে যেই পোশাক পরো
বুয়ার হাতেই ধোয়া,
বুয়ারা হোক দীর্ঘজীবী
সবাই করি দোয়া।
ওবায়দুল গনি চন্দন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৫, ২০০৮
Leave a Reply