ইসলামপুর একসময় জুতা বেচাকেনার জন্য বিখ্যাত ছিল। একজন বাবু এক দোকানে এসে জুতা দেখতে চাইলেন। কিন্তু পছন্দ না হওয়ায় আরেক দোকানে গেলেন। দোকানদার বুঝেছেন, ক্রেতা কোনো ভালো জুতা খুঁজছেন। তাই মওকা বুঝে ক্রেতাকে ফাঁসানোর ফন্দি আঁটলেন।
দোকানদারঃ আপনেরে দেইখাই তো হালায় বুঝছি যে আপনে যেমন তেমন লোক না, আপনি হইলেন গিয়ে মহারাজ। আপনেরে হালায় জুতা দিব কৈথেইকা।
বাবুঃ অত কথা বলার দরকার কী? আপনার কী জুতা আছে তা-ই দেখান।
দোকানদারঃ মহারাজ, রাগ করতাছেন কেল্লাই। আমরা আপনেগ খেতমত করণের লেইগাই আছি। মাগার যে জুতা দেহামু হুজুর তার দাম কিন্তুক জারা বেসি অইব।
বাবুঃ ঠিক আছে, ভালো জুতা হলে দাম কিছু বেশি দিতে আমার আপত্তি নেই।
দোকানদারঃ আসল কথাটা কই, হুজুর। আমাগো ঢাকার নবাব আছে না, হেই নবাব সাব দুই জোড়া জুতার অর্ডার দিছিল। মাগার এক জোড়া আর নেয় নাই। হেই জুতা জোড়াই আপনেরে দিমু, মহারাজ।
বাবুঃ ঠিক আছে, আগে দেখাও না।
দোকানদার তখন এক জোড়া জুতা ভেতর থেকে বের করে পরম যত্নের সঙ্গে ক্রেতার সামনে এনে রাখেন। এরপর জোতার এক সোলের সঙ্গে আরেক সোল পিটিয়ে দেখান। জুতার তলায় পিতল সোল আঁটা।
দোকানদারঃ মহারাজ, আমার কথামতো জুতা জোড়া লইয়া যান। গেরান্টি হইল, আইজ থেইকা পাঁচ বছরের মধ্যে যদি জুতা ছিঁড়ে, তাহলে হেই ছিঁড়া জুতা লইয়া আইবেন। আর করবেন কী, হেই ছিঁড়া জুতা দিয়া এইগা (একটা) বাড়ি মাইরা টেকা ভি ফেরত লইয়া যাইবেন। দেখছেন হালায় জুতা কেমন চকচক করতাছে। করব না কেন? চামড়া যে গিলাছটিকের (গ্লেইজফিট)।
এমন সব মিষ্টি কথায় জুতা কিনে বাবু বাড়ি চলে গেলেন। কিন্তু পাঁচ বছর দূরে থাক, ছয় মাস পরেই জুতা জোড়া ছিঁড়ে খান খান হয়ে যায়। জুতার তলা খুলে পড়ে গেছে। তখন বাবু জুতা হাতে নিয়ে সে দোকানে গেলেন।
বাবুঃ কি মিয়া, খুব তো গেরান্টি দিলেন, এখন কী হলো? আমি আপনাকে জুতাপেটা করতে চাই না, টাকাটা ফেরত দিলেই বাঁচি।
দোকানদারঃ আপনে মহারাজ গোস্সা অইছেন কেল্লাইগা?
বহেন, একটু ঠান্ডা অইয়া লন, তারপর দেহা যাক।
একটু পরে দোকানদার বাবুকে জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা মহারাজ, আপনে জুতা দিয়া কী করছিলেন?
বাবুঃ কেন? জুতা পায়ে দিয়েছি।
দোকানদারঃ মহা মুশকিলে পড়লাম, হালায়। জুতা পায় দেবেন না তো মাথায় দেবেন? পায়ে দিয়ে কী করেছেন?
বাবুঃ কেন, হেঁটেছি?
দোকানদারঃ মহা ঝামেলায় ফাইস্যা গেছি। হাঁটবেন না তো কি খাড়াইয়া থাকবেননি? মাগার হাঁটছেন কোনহান দিয়া?
বাবুঃ কেন, রাস্তা দিয়ে হেঁটেছি।
দোকানদারঃ ইস, এহন বুঝবার পারতাছি যে এমন ইজ্জতওলা জুতার এমন দশা হইল কী কইরা। আমারই বুল অইছিল, আপনেরে আসলেই মনে করেছিলাম মহারাজা বইলা। তার লেইগাই তো আমাগো নবাব সাবের অর্ডারি জুতা আপনেরে দিলাম। হালায় বাবু আপনে করছেন কী? আমাগো নবাব সাবের জুতার ইজ্জত মারছেন। আরে বাবু, নবাব সাবের জুতা পাইয়া আপনে গেছেন রাস্তা দিয়া হাঁটতে? আপনার আক্কেলটা কী, কন দেহি?
বাবুঃ কেন? নবাব সাবরা জুতা পায়ে দিয়ে রাস্তায় হাঁটে না বলতে চান?
দোকানদারঃ হুনেন মশায়, নবাব সাবরা জুতা পায়ে দিয়া লাল গালিচার ওপর দিয়া আস্তে কইরা গিয়া মোটরগাড়িতে বসে। আবার আস্তে কইরা নাইম্যা গালিচার ওপর দিয়া হাইটা যায়। আর আপনে কিনা বাবু, বেয়াকেল্লের মতো আমাগো নবাব সাবের জুতা পায় দিয়া রাস্তায় রাস্তায় হাইটা বেড়াইছেন। তয় নবাব সাবের ইজ্জতওয়ালা জুতা ছিঁড়ব না তো আস্ত থাকব? আবার আইছেন টেকা ফিরত নিতে? যান, মানে মানে বাড়িত যান গিয়া, আর বেইজ্জত হওনের কাম নাই। সোজা রাস্তা দেহেন।
আপেল মাহমুদ, ঢাকা
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৬, ২০০৮
Leave a Reply