পাখি কার না ভালো লাগে। কিন্তু কারোরই প্রিয় পাখির তালিকায় কাকের নাম নেই বললেই চলে। কিন্তু হিমুভক্ত না হয়েও কাক আমার পছন্দের শীর্ষে। কারণ, সৃষ্টিকর্তা যদি এই প্রাকৃতিক পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব দিয়ে কাক না পাঠাতেন, আর কাকেরা যদি মনোযোগ দিয়ে কাজটি না করত, তাহলে দেশটা মুহূর্তে দুর্গন্ধে ভরে উঠত। (আমি যে অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তি, এটা কি বোঝা গেল?) অবশ্য কাককে পছন্দ করার আরেকটা শক্ত কারণ হলো, এর সাবান চুরি করার স্বভাব। আমার এক বড় ভাই একদিন আফসোস করে বলেছিলেন, দেশের কাকগুলোকে একটু অর্থনীতিতে শিক্ষিত করা প্রয়োজন। কারণ জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, তিনি গোসলের জন্য পুকুরপাড়ে দামি সুবাসিত সাবান আর কম দামি কাপড় ধোয়া সাবান নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু একটি কাক তফাৎ না বুঝে কম দামি সাবানটিই নিয়ে গিয়েছিল। আচ্ছা, বলুন তো, কাকের সাবান চুরি না করে উপায় কী? সারা দিন মনুষ্যসৃষ্ট ময়লা সাফ করে ওরা কি অপরিষ্কার অবস্থায় ঘরে ফিরবে? আমরা না বুঝে সাময়িক উত্তেজনার বশে কতই না বকাঝকা করে থাকি। আমরা যদি কাকদের জন্য ক্রো-বিউটি সোপ বানিয়ে দিতাম, তাহলে ওরা নামীদামি তারকাদের সাবান নিয়ে টানাটানি করত না। আর স্বজাতির প্রতি ভালোবাসা কাকদের বরাবরই অত্যন্ত প্রবল। যদি বিশ্বাস না হয়, তাহলে একটা মরা কাক জোগাড় করে বাড়ির বারান্দায় ঝুলিয়ে রেখে দেখতে পারেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কাকেরা কিন্তু কাকের মাংস খায় না। আপনি চেষ্টা করেও খাওয়াতে পারবেন না। কথিত আছে, অতিরিক্ত লোভ করতে গিয়েই নাকি কাকদের রূপ হরণ করা হয়েছিল। কিন্তু একবার ভাবুন তো, কী অন্যায়! আমাদের জনদরদি নেতারা কি রিলিফের ঢেউটিন চুরি করেননি? কই, তাঁদের চেহারার তো কোনো অবনতি দেখলাম না। কখনো কাকের চোখে চোখ রেখেছেন? একবার তাকিয়ে দেখুন না, কাকের ঘনকালো চোখে হারিয়ে যাবে মন। (একটু কাগজ-কলম হবে, প্লিজ, ভাব এসে গেছে, একটা কবিতা লিখতাম।)
যাঁদের সকালে ঘুম থেকে উঠতে খুব কষ্ট হয় তাঁদের বলছি-আজই মোবাইল সেটটির রিং টোনে কাকের কা কা রব সেট করুন। যদি ব্যাটারি ভালো থাকে, তবে আপনার ঘুম ভাঙবেই ভাঙবে, কথা দিলাম। এদিকে কোকিলের ডিম সম্পূর্ণ বিনা খরচে কাকেরা ফোটাচ্ছে সেই আদিকাল থেকেই। কিন্তু সেই ভবঘুরে কোকিলদের নিয়ে পাতার পর পাতা কবিতা-সাহিত্য লেখা হলেও তাদের বংশবৃদ্ধির ধারক কাকদের নিয়ে কোনো বন্দনাই নেই-এ নিছক পক্ষপাতিত্ব। ইদানীং কাকদের মধ্যে আঞ্চলিকতার ছাপ পড়া শুরু হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সিলেট শহরের কাকেরা নাকি আর কা কা করে ডাকছে না। সিলেটের আকাশে এখন খা খা রবে মুখর। দেশে জনসংখ্যা তো পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় শুধু ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উচ্ছিষ্ট খেয়ে শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দুর্গন্ধ বেড়েই চলেছে। তাই বিভিন্ন সভা-সমিতিতে কথা উঠেছে, দু-তিনটা শিফটে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো যায় কি না। যদি কংসদে (কাকদের জন্য নির্দিষ্ট সংসদ) বিলটি পাস করানো যায়, তাহলে নিকট-ভবিষ্যতে দুর্গন্ধ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে কাকেরা আশাবাদী।
মো· মাশুকুর রহমান
সূত্রঃ প্রথম আলো, অক্টোবর ২৭, ২০০৮
Leave a Reply