চায়ের সঙ্গে আমি এখন আর দুধ-চিনি খাই না। ছোটবেলায় জানতাম, দুধ ছাড়া যে চা বানানো হয় সেটাকে র চা বলে। এখন দেখি সেটাকে বলে রং চা। তার মানে পৃথিবীতে হয় রং চা আছে, নয়তো রাইট চা আছে। ভালো চা-পাতা (নাকি পাতি) দিয়ে বানানো চা ঘরে ঢুকলেই বোঝা যায়, আহ, চা এসে গেছে। কী সুঘ্রাণ! একবার গিয়েছিলাম শ্রীমঙ্গল চা বোর্ডের অফিসে, সেখানে গিয়ে শিখেছি, বাংলাদেশের চায়ের রং ভালো, দার্জিলিংয়ের চায়ের ভালো গন্ধ। আর ওই গন্ধটা নির্ভর করে আল্টিচুডের ওপরে, অর্থাৎ চা বাগানটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কত উঁচুতে তার ওপরে। যা-ই হোক, বাঙালিরা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছেন, কয়েকটা দেশে যাওয়ার সুযোগ নিজেও পেয়েছি, মোটামুটি নানা দেশের নানা কোম্পানির চাায়ের স্বাদই পেয়েছি। দার্জিলিংয়ে গিয়ে কেব্ল কারে চড়িনি, ভয়ে, যদি ছিঁড়ে যায়, আমার ছোট্ট মেয়েটা পর্যন্ত চড়েছিল, ডাঙায় ওদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে এক পাহাড়ি রমণীর বানানো চা খেয়েছিলাম, সেই স্বাদ ভুলতে পারব না। একবার, বহু বছর আগে, আমাদের অকালপ্রয়াত সহকর্মী লতিফ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গিয়েছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে নাট্যকার সেলিম আল দীন আমাদের নিজ হাতে বানিয়ে খাইয়েছিলেন জেসমিন টি। জাপানে গিয়ে খেয়েছি জাপানি চা, সেটা কিন্তু আমরা যে চা খাই, একেবারেই সেটা নয়, তার স্বাদটা অনেকটা সুপের মতো। এইবার আমি বলব, আমার জীবনে খাওয়া শ্রেষ্ঠ চায়ের গল্প।
অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা। আমার বন্ধু সাকলাইন, বুয়েটের সিনিয়র ভাই মতিন প্রমুখের সঙ্গে গেছি ক্যানবেরায়। বিকেলে হাইকমিশনের মিলনায়তনে একটা অনুষ্ঠানমতো হলো। বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়া তার অন্যতম উদ্যোক্তা। অনুষ্ঠান শেষে রাতের বেলা আমরা হাজির হলাম জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীর বাসায়। নৈশভোজ শেষে ভাবি আমাদের হাতে তুলে দিলেন এক অপূর্ব অমৃত-ধবধবে কাপে চমৎকার রঙের চা। পিরিচ হাতে নেওয়ার আগেই নাকে এসে লাগল তার সঞ্জীবনী সুঘ্রাণ। এক চুমুক দিয়ে বললাম, আহ, এই তো পৃথিবীর সেরা চা। ভাবি হাসলেন। কোথাকার চা জানেন? কোথাকার? কান খাড়া করে বললাম। ভাবি সু্নিত হাসি হেসে বললেন, সিলেটের। সিলেটেও ভালো চা হয়। সাধারণত মার্কেটে দেওয়া হয় না। সিলেটের বাগান থেকে বেছে আনতে হয়।
তা-ই হবে। আমার দেশ ছাড়া এত ভালো চা আর কোথায় হবে?
সূত্রঃ প্রথম আলো, অক্টোবর ২৭, ২০০৮
Leave a Reply