লোকজন দেখতে পেল ফাঁকা রাস্তা থেকে একটি গাড়ি সজোরে ছুটে যাচ্ছে পাশের ফসলি জমির দিকে। আর গাড়ির সামনে প্রাণভয়ে ছুটে পালাচ্ছে একটি মানুষ। কিছুক্ষণ পর জোরে একটা শব্দ ভেসে এল। বোঝা গেল লোকটির ভাগ্যে কী ঘটেছে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাসের চালকের ব্যাখ্যাটা ছিল এমন-‘তখন কী-ই বা আমার করার ছিল। ফাঁকা রাস্তা। হঠাৎ কোথা থেকে যেন উদিত হলো পাগলটি। রাস্তার মাথায় এসে নাচতে শুরু করল। ভেবে দেখলাম, আমি যদি পাগলটিকে বাঁচাতে যাই তবে বাসসুদ্ধ সবাইকে মারতে হবে। আর বাসের সবাইকে যদি বাঁচাতে যাই তবে পাগলটিকে মারতে হবে। আমি পাগলটিকেই মারার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কিন্তু আমি যখন পাগলটিকে মারতে গেলাম, পাগলটি তখনই দৌড়ে ছুটে গেল ফসলের ক্ষেতের দিকে!
২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতার লালসায় উন্মাদ ‘একদল খুনির’ হাত থেকে বাঁচাতে বুঝি এ সরকার জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। অস্বস্তির চেয়ে তখন সাধারণ মানুষের স্বস্তিই লেগেছিল বেশি। তারপর লাইনচ্যুত ট্রেনটি লাইনে তোলা হলো, নানা রকম অনিশ্চয়তা আর সংশয়ের মধ্যেও ট্রেনটি চলতে শুরু করল। কিন্তু ট্রেনটি এখন কোন পথে চলছে? বাসটির মতো যাত্রীদের বাঁচাতে ছুটছে না তো?
বুঝতেই তো পারছেন
প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার সময় রাস্তার মাথায় একটি ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে। শিলা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ছেলেটি বলে ওঠে, ‘অ্যাই আপু, আপনি খুব সুন্দর।’ এর পরই বলে, ‘আই লাভ ইউ।’ শিলা অবাক হয়ে যায়। বয়সে ছোট একটি ছেলে কী করে এমন অসভ্যতা প্রকাশ করতে পারে! একই ঘটনা বারবার ঘটতে থাকলে শিলা ছেলেটির বাসায় গিয়ে অভিযোগ করে এল। ছেলেটির বাবা-মা নিতান্তই ভদ্রলোক। কথা দিলেন, ছেলেকে তারা শাসন করবেন। এমন আর হবে না। এর ঠিক এক দিন পরের কথা। শিলা রাস্তার মাথায় পৌঁছেই দেখে ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে। আগের মতো। এবার ছেলেটি আগের মতো কিছু বলেনি। তবে কাছে গিয়ে শুধু বলল, ‘অ্যাই আপু···।’ শিলা একটু রেগে বলল, ‘আবার?’ ছেলেটি বলল, ‘বুঝতেই তো পারছেন।’
বাতাস বদলাতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে চাঁদা চেয়ে ফোন আসা শুরু হয়েছে। অমুক ভাই তমুক ভাইয়ের নামে তোরণও শোভা পেয়েছে নগরে। পোস্টারে এলাকাবাসীর দোয়া চাইতে শুরু করেছে এত দিন গর্তে জীবন যাপন করা ছিঁচকে চোরেরাও। আর বিখ্যাতদের কথা বাদই দিলাম। সামনে নির্বাচনের কথা হচ্ছে। নির্বাচন হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারও চলে যাবে, কিন্তু তারপর কী?
‘বুঝতেই তো পারছেন।’
পরের স্টপেজ
তিন বন্ধু ট্রেনে করে বেড়াতে যাচ্ছেন। একজন লম্বা একটা গল্প শুরু করলেন। অপর দুজন তা শুনছেন। এমন সময় আরও একজন যাত্রী তাঁদের পাশে এসে বসলেন। তিনিও বসে গল্পটা শুনতে লাগলেন। গল্পের মাঝামাঝি অপর দুই বন্ধু গল্পের দিকে মনোযোগ না দিয়ে অন্য বিষয় নিয়ে মজা করা শুরু করলেন। প্রথম বন্ধু তাঁর গল্পটি শেষ করতে চাইছিলেন, কিন্তু অপর দুই বন্ধুর যন্ত্রণায় তা পারছিলেন না। এমন সময় অপরিচিত যাত্রীটি দুই বন্ধুর একজনের দিকে ফিরে বললেন, ‘দয়া করে কি ওনাকে গল্পটা শেষ করতে দেবেন? প্লিজ, আমাকে পরের স্টপেজে নেমে যেতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো পরের স্টেশনে নেমে যাবেন, তবে আমাদের গল্পের শেষ পরিণতি কী হবে? নিচের গল্পটির মতো হবে না তো?
নিপাট পরিপাটি এক ভদ্রলোক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এমন সময় দেখলেন একটি বাড়ির সামনে দরজায় ছোট একটি ছেলে বেল টেপার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, কিন্তু ঠিকমতো নাগাল পাচ্ছে না। আহা, বেচারা! লোকটি এগিয়ে গিয়ে বেল টিপে দিলেন। হেসে বললেন, ‘কী ব্যাপার বাবু?’ বাবুটি বলল, ‘ব্যাপার গুরুতর, বাড়িওয়ালি দজ্জাল মহিলা। এই বুঝি দরজা খুলল, আপনি এবার বুঝুন, আমি পালাই।’
আবার আসিব ফিরে
উকিল সাহেব বাড়ি ফিরেই বউকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি করে সোনার গয়না, টাকাপয়সা, সব তোমার বাপের বাড়ি রেখে এসো।’ বউ অবাক হয়ে বললেন, ‘কেন?’ উকিল সাহেব বললেন, ‘আজ এক কুখ্যাত চোরের জামিনের ব্যবস্থা করেছি। সন্ধ্যার পর নাকি সে কৃতজ্ঞতা জানাতে আসবে।’
সোনাডাঙ্গা মডেল থানা উদ্বোধন করতে গিয়ে পুলিশের আইজি বলেছিলেন, ‘যাঁরা হত্যা মামলার আসামিকে বাঁচাতে ২০ কোটি টাকা ঘুষ নেন, তাঁদের নেতৃত্বে আমরা কাজ করেছি।’ সেই দিন আবার ফিরে আসছে না তো?
টিনচোর আর গমচোর এখন জামিনে বের হয়ে আসছে। কেউ অপেক্ষায় জেলখানায়, কেউ বা সীমান্তের বাইরে, তাঁদের একটাই অপেক্ষা। জীবনানন্দ দাশের কবিতার মতো··· আবার আসিব ফিরে।
কী ভয়ানক কথা! আমরা তখন কী করব? চাঁদা রেডি করব আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুটি লাইন ধার করব-তুমি কোন পথে যে এলে, এলে পথিক···।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২০, ২০০৮
Leave a Reply