সুং টিংপো তখন যুবক। একদিন রাতে বেড়াতে বেরিয়ে পথে হঠাৎ একটা ভূত দেখে থমকে দাঁড়ায়। ভূতটা না থেমে তার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে বুকের ভেতরটা দুরুদুরু করে উঠলেও, ভয় পেয়েছে, তাকে বুঝতে না দিয়ে কাছে আসতেই সরাসরি সে মুখের ওপর বলে উঠল, কে তুমি?
ভূতটা সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল, আমি ভূত-তুমি কে?
টিংপো ঘাবড়ে না গিয়ে নিজের আসল পরিচয় চেপে বলে ওঠে, আমিও একজন ভূত।
ভূত প্রশ্ন করে, তুমি কোথায় যাচ্ছ?
টিংপো উত্তর দেয়, ওয়াংসি।
আরে, আমিও ওখানেই যাব।
ভূতটা তৎক্ষণাৎ উত্তর দেয়, চলো, একসঙ্গে যাই!
অগত্যা দুজনে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে।
প্রায় মাইলখানেক যাওয়ার পর ভূতটা বলে ওঠে, আমরা কী বোকা! দুজন মিছিমিছি কেন হেঁটে মরছি? তার চেয়ে এসো, আমরা পালা করে একজন আরেকজনকে বয়ে নিয়ে যাই। তাতে দুজনেরই পরিশ্রম কম হবে।
টিংপো বলে, খুব ভালো কথা, আমার অমত নেই।
তখন ভূতটা প্রথমেই টিংপোকে নিল কাঁধে তুলে। মাইলখানেক হাঁটার পর তাকে ঘাড় থেকে নামিয়ে দিয়ে ভূতটা জিজ্ঞেস করে, ভূতের চেয়ে তোমার ওজন অনেক বেশি। ঠিক করে বলো তো, তুমি কি সত্যি একজন ভূত?
এই সেরেছে, ধরে ফেলে বুঝি, টিংপোর বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলেও চট করে একটা বুদ্ধি তার মাথায় খেলে যায়। ভূতের মনে বিশ্বাস আনার জন্য সে চট করে রেগে ওঠে-আমি তো নতুন ভূত, সেই জন্য আমার ওজন তোমার চেয়ে বেশি এখনো।
বলতে বলতেই টিংপো ভূতটাকে কাঁধে তুলে হাঁটতে শুরু করল। কিন্তু ভূতটা এতই হালকা যে তার মনে হলো না কোনো ভার সে বহন করছে।
এইভাবে তারা পাল্টাপাল্টি করে একজন আরেকজনকে বইতে থাকে। যেতে যেতে একসময় টিংপো ভূতটাকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা, ভূতেরা সবচেয়ে ভয় পায় কিসে?
ভূতটা ভাবে, ও নতুন, বলে দেওয়া উচিত। তাই তখনই বলে ফেলে, ভূতেরা যা সবচেয়ে ভয় করে থাকে তা হলো, মানুষের মুখের থুতু।
এমনি করে হাঁটতে হাঁটতে তারা একটা নদীর ধারে এসে পড়লে টিংপো ভূতটাকে আগে নদীটা পেরিয়ে যেতে বলে। ভূতটা যখন পার হয়ে গেল, একটুও জলের শব্দ হলো না। তাই টিংপোর বেলা হুসহাস শব্দ শুনে ভূতটা আবার তাকে প্রশ্ন করে-ভূত তো জলের ওপর দিয়ে গেলে শব্দ করে না! আশ্চর্য, সত্যি কি তুমি একজন ভূত? ঠিক করে বলো?
টিংপোর মনে আবার ভয়, গেল বুঝি সব ফেঁসে, তীরে এসে তরী ডুবল! তাই আগের মতো আবার বুঝিয়ে দেয়-আশ্চর্য হচ্ছ কেন, আমি নতুন ভূত, এখনো নদী পার হওয়ার অভ্যাস হয়নি যে!
তারপর তারা শহরের কাছে পৌঁছালে টিংপো ভূতটাকে পিঠের ওপর তুলে নিয়ে এত জোরে তাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরল যে ভূতটা যন্ত্রণায় চিৎকার করে কেঁদে উঠে পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়ার জন্য ধস্তাধস্তি শুরু করে দিল।
তখন আরও কষে ভূতটাকে চেপে ধরে টিংপো চলতে থাকল। বাজারের কাছাকাছি এসে পড়তে টিংপো ভূতটাকে যেই পিঠ থেকে নামাল, সঙ্গে সঙ্গে সে একটা ছাগল হয়ে গেল! অমনি টিংপো ছাগলটার ওপর থুতু ফেলল, যাতে সে আর অন্য কোনো রূপ ধরতে না পারে।
তারপর বাজারে দেড় হাজার ওয়ান নিয়ে সেই ছাগলটাকে বিক্রি করে আনন্দে ঘরে ফিরে গেল!
অনুবাদঃ সুমথনাথ ঘোষ
এই চীনা গল্পটির লেখকের নাম পাওয়া যায়নি।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২০, ২০০৮
Leave a Reply