কলিযুগের হে প্রবাদপুরুষ
স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আপনি সবাইকে এক দিন বারবার হাত ধুতে বলেছেন। কিন্তু জনাব, আপনি বোধহয় জানেন না, আমাদের যে ওয়াসার পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে সে পানি কতটা বৈচিত্র্যময়। আমাদের এই ওয়াসার পানিতে সহনীয় মাত্রার অনেক বেশি কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া বাস করে। আপনি নিশ্চয় কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া কী, কী করে, এসব বিষয়ে অবগত আছেন।
হে মহান স্বাস্থ্যসচেতনতার অগ্রপথিক
এই কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পেটে গেলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা শতভাগ, আরও কত কিছু যে হতে পারে, সেটাও কি বলতে হবে? কিন্তু বারবার এই পানি দিয়ে হাত ধুতে গেলে হাতে লাগা ব্যাকটেরিয়া তাড়াব কীভাবে?
হে জনগণের বন্ধু
আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমাদের ওয়াসার পূতিগন্ধময় পানি দিয়ে বারবার হাত ধোয়া কোনোভাবেই না ধোয়ার চেয়ে ভালো হবে না! সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার ওয়াসার পানি ধরি বলে সে জন্য কী পরিমাণ ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করতে হয়, আপনি জানেন? না জানলে এ দেশে এসে টিভিতে ডিওডোরেন্টের বিজ্ঞাপন দেখে যাবেন।
হে জ্ঞানতাপস
এই ওয়াসার পানি দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন পানির অপর নাম জীবন। এই পানিতে ব্যাকটেরিয়ার মতো ছোটখাটো জীবন থেকে শুরু করে আপনি কেঁচোর মতো জীবন খুব সহজে খুঁজে পাবেন। সেই পানিতে হাত না ধুয়ে যদি ক্ষেতে সেচ দিতে বলতেন, সেটাই বেশি ভালো হতো।
হে মান্যবর
আপনি নিশ্চয় শুনেছেন সেই প্রবাদটি-কুইনাইন নাহয় জ্বর সারাবে কিন্তু কুইনাইন সারাবে কে? এখন আমাদের বলতেই হচ্ছে, ওয়াসার পানিতে হাত পরিষ্কার নাহয় করলামই কিন্তু হাত থেকে ওয়াসার পানি পরিষ্কার করব কীভাবে? এই এক দিন সবার হাত ধোয়ার জন্য যদি আপনি লিটারখানেক মিনারেল ওয়াটারের ব্যবস্থা করতেন, তাহলে নাহয় আপনার আইডিয়াটা সফল করতে এগিয়ে আসতাম।
হে আলোকিত মানুষ
আপনার এই দিবসটি পালন করার জন্য বারবার ওয়াসার পানি ঘেঁটে আমরা কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চাই না। আমাদের এই অপরাধ আপনি ক্ষমা করবেন। আমরা বারবার এই দূষিত পানি দিয়ে হাত ধুয়ে আমাদের বৈচিত্র্যময় এই জীবনটাকে রোগশোক দিয়ে আরও বৈচিত্র্যময় করতে চাই না।
হে ক্ষমাশীল
মহান ওয়াসার কল্যাণে এই হাত ধোয়া কর্মসূচির ব্যাপারে আমরা আপনার সঙ্গে কোনোভাবেই একমত হতে পারলাম না বলে দুঃখিত। আমাদের এই অপারগতাজনিত কারণে আপনার মহান স্বাস্থ্যসচেতন কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পারার ধৃষ্টতা ক্ষমা করবেন।
বাংলাদেশি জনগণের পক্ষে খোলা চিঠিটি লিখেছেন-জনৈক ওয়াসার পানি ব্যবহারকারী।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২০, ২০০৮
Leave a Reply