চাচা আর ভাস্তে সন্ধ্যাবেলায় দুইজনে আলাপসালাপ করিতেছে। ভাস্তেঃ চাচা! আজ বাজারে গিয়াছিলাম।
চাচাঃ যাবি না! তবে বাড়িতে বসিয়া থাকবি নাকি?
ভাস্তেঃ একটা কুমড়া লইয়া গিয়াছিলাম।
চাচাঃ নিবি না? খালি হাতে বাজারে যাবি নাকি?
ভাস্তেঃ একটা লোক আসিয়া কুমড়াটার দাম জিজ্ঞাসা করিল।
চাচাঃ দাম জিজ্ঞাসা করিবে না? তবে কি বিনা পয়সায় কুমড়াটা লইবে?
ভাস্তেঃ আমি আট আনা চাহিলাম।
চাচাঃ আটআনা চাবি না? তবে কি মাগনা দিবি অত বড় কুমড়াটা?
ভাস্তেঃ সে লোকটা দুই আনা বলিল।
চাচাঃ বলিবে না? অতটুকু কুমড়া তুমি আটআনা চাহিলেই সে নিবে কেন?
ভাস্তেঃ আমি বলিলাম বাপের পুষ্যি কুমড়া খাইছ কোনো দিন?
চাচাঃ বেশ বলিয়াছিস। এত বড় কুমড়াটা বেটা দুই আনা মাত্র দর করিল!
ভাস্তেঃ এমন সময় এক পুলিশ আসিল।
চাচাঃ আসিবে না? তুমি ভদ্রলোকের ছেলেকে বলিয়াছ, বাপের পুষ্যি কোনো দিন কুমড়া খাইয়াছ? দেখ না কী হয়!
ভাস্তেঃ পুলিশ আসিয়া কুমড়াটার দাম জিজ্ঞাসা করিল।
চাচাঃ দাম জিজ্ঞাসা করিবে না? পুলিশ বলিয়া কুমড়াটা মাগনা লইবে না কি?
ভাস্তেঃ আমি কুমড়ার দাম আট আনা চাহিলাম।
চাচাঃ বেশ! বেশ! আমার ভাস্তে! দাম চাহিবি না! পুলিশ দেখিয়া ডরাইবি না কি?
ভাস্তেঃ পুলিশ দুই আনা দাম করিল।
চাচাঃ করিবে না? পুলিশ দেখিয়া তাহারা জিনিসের দামদস্তুর জানে না? এতটুকু কুমড়া তার দাম দুই আনার বেশি আর কত হইবে?
ভাস্তেঃ আমি বলিলাম বাপের পুষ্যি কুমড়া খাইয়াছ কোনো দিন?
চাচাঃ বেশ বলিয়াছিস! পুলিশ বলিয়া ডরাইবি কেন? বেটা আট আনার কুমড়াটা দুই আনায় লইতে চায়?
ভাস্তেঃ তখন পুলিশ আমাকে ধরিয়া খুব মার দিল।
চাচাঃ দেবে না? যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা? পুলিশের সঙ্গে বাহাদুরি!
ভাস্তেঃ মারিতে মারিতে আমাকে থানায় লইয়া গেল।
চাচাঃ থানায় লইয়া যাইবে না? পুলিশকে তুমি অপমান করিয়াছ।
ভাস্তেঃ সেখানে গেলে বড় দারোগা আসিল।
চাচাঃ আসিবে না? দেখ তোমার ওপর আরও কী দুর্গতি হয়।
ভাস্তেঃ বড় দারোগা আসিয়া আমাকে ছাড়িয়া দিল।
চাচাঃ দেবে না? তুমি যে রহিমুদ্দীর ভাইর বেটা।
জসীমউদ্দীনঃ পল্লীকবি। নকসী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, ও মা যে জননীকান্দে তাঁর বিখ্যাত গাথাকাব্য। সাহিত্য-সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো, অক্টোবর ১৩, ২০০৮
Leave a Reply