ছেলেতে ছেলেতে, মেয়েতে মেয়েতে বন্ধুত্ব যতটা সহজ-সরল, ঠিক ততটাই রহস্যময় হচ্ছে ছেলে আর মেয়েতে বন্ধুত্ব। প্রকৃতির কত রহস্যেরই কিনারা হলো, কিন্তু নারীকে রহস্যের কেন্দ্রে রেখে ছেলেদের দল কেন পাক খেতে থাকে, এই রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। ছেলেদের কেউ হয় মেয়েটির বন্ধু, কেউ বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু। কিন্তু ছেলে হলেই সবাই বয়ফ্রেন্ড হতে পারে না। সব বয়ফ্রেন্ডই ছেলে, কিন্তু সব ছেলেই বয়ফ্রেন্ড নয়। চাকরিতে যেমন আছে সিনিয়র-জুনিয়র, তেমনি একটি মেয়ের ছেলেবন্ধুদের মধ্যেও আছে নানা স্তর; স্তরভেদে আচরণের ভিন্ন ধরনও। ‘তোমার জন্য মরতে পারি ও সুন্দরী···’ মনোভাব সব ছেলের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। এই লুকোচুরির কারণেই বাড়ছে রহস্যময়তা। ইদানীং মোবাইল ফোন এই রহস্যময়তা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও এক ধাপ। আসুন, প্রকৃতির এই রহস্যময় সম্পর্কটির সঙ্গে কিছুটা পরিচিত হই।
সম্পর্কটা যখন কেবল বন্ধু
এটি ছেলে আর মেয়েতে বন্ধুত্বের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়। এ পর্যায়ে ছেলেটির অবস্থা ঘরে রাখা শো-পিসের মতো। মেয়েটির কাছ থেকে ছেলেটির দূরত্ব কম হলেও ছেলেটির কাছ থেকে মেয়েটি বেশ দূরে। মেয়েটি ইচ্ছে হলে তাকে ফোন দিয়ে অনেক কথা বললেও ছেলেটি নিজ থেকে কিছু জানার অধিকার তখনো অর্জন করে না। এ স্তরে ফোনালাপটা হয় কিছুটা একতরফাঃ
মেয়েঃ হ্যালো, আমি ঘুরতে যাচ্ছি, তুমি কি দুদিন পর একটা ফোন দিতে পারবে?
ছেলেঃ কোথায় যাচ্ছ?
মেয়েঃ ওটা তোমার বিষয় না, রাখি। (ধপ করে ফোন রেখে দেবে)।
মোটামুটি ভালো বন্ধু
এ পর্যায়ে ছেলেটি দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়। তখন সে শো-পিস থেকে টিভি রিমোটে পরিণত হয়; মানে নিজের কিছু ফাংশন যুক্ত হয়। ব্যাটারি-দেওয়া হলেও মেয়েটির মোড বদলানোর কাজটি সে করতে পারে। এখন সে চাইলে অকারণে ফোন দিয়ে খুবই সাধারণ খোঁজ-খবর নিতে পারে। এ পর্যায়ে ফোনে কথাবার্তা একতরফা না হলেও পাল্লা মেয়েটির দিকেই ভারী থাকেঃ
ছেলেঃ হ্যালো, কী করছো?
মেয়েঃ আমি একটু বাইরে যাচ্ছি, তোমাকে একটু পরে ফোন দিচ্ছি।
(দুদিন পর)
মেয়েঃ সেদিন কেন ফোন দিয়েছিলে?
ছেলেঃ এমনি, খোঁজ-খবর নিতে।
মেয়েঃ ও। আচ্ছা, রাখি।
ভালো বন্ধু
এটি বেশ কাছের একটি অবস্থান। রিমোট থেকে সে এখন প্রেশারকুকারের সেফটি ভাল্বের মতো হয়ে ওঠে। মেয়েটি কষ্ট পেলে ছেলেটির সঙ্গে কথা বলে হালকা হয়। এককথায় বললে, ছেলেটি এখন মেয়েটির জন্য দরকারি হয়ে ওঠে। এ পর্যায়ের ফোনালাপে মেয়েটি ভালো বক্তা হয়ে ওঠে আর ছেলেটি হয় অনুগত শ্রোতাঃ
মেয়েঃ জানো, ও না কিছু খাচ্ছে না। নিজের কাজেও মন দিচ্ছে না। আমার সঙ্গেও তেমন কথা বলে না। আমার মনে হয়, সে আমাকে এখন আর পছন্দ করে না।
ছেলেঃ ও-টা কে?
মেয়েঃ কেন, আমার বয়ফ্রেন্ড! তুমি শুনছো তো?
ছেলেঃ ও আচ্ছা। হ্যাঁ, আমি শুনছি, বলে যাও।
খুব ভালো বন্ধু
এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এ সময় ছেলেটি প্রমোশন পেয়ে অটোরিকশাচালকের আসনে পৌঁছায়। মেয়েটিও তাকে ছাড়া কিছুই করে না। সে যেখানেই যাবে ছেলেটিকে তার সঙ্গে যেতেই হবে। ছেলেটির সঙ্গে ঘুরে মেয়েটি অনেক মজা পায়, তবে ছেলেটি মজা পাচ্ছে কি না এটা কোনো বিষয় না। ভুল বুঝবেন না, ছেলেটি কিন্তু তার বয়ফ্রেন্ডজাতীয় কিছু নয়। কিন্তু ছেলেটি ঠিকই একদিন ভুল করে তাকে বলে বসবে মনের গোপন কথাটিঃ
ছেলেঃ আমি যদি তোমার বয়ফ্রেন্ড হই, তোমার আপত্তি আছে?
মেয়েঃ আরে, বল কী! তুমি তো অনেক ফানি! এ জন্যই তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু। আমার বয়ফ্রেন্ড সাকিব শুনলেও খুব মজা পাবে।
সবচেয়ে ভালো বন্ধু
এবার বলা যায় ছেলেটি বিশেষ কিছু। এখন সে কখনো বন্ধু, কখনো অভিভাবক, কখনো ভাই-মোটকথা, টোটাল সিকিউরিটি। ছেলেটি তাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবে, নোট লিখে দেবে, এমনকি হাত ধরেও হয়তো কোথাও বসবে। এ পর্যায়ে ছেলেটি একটি গুরুতর ভুল করবে। সে নিশ্চিত ধরে নেবে মেয়েটি তাকে ভালোবাসে। কিন্তু এমনই এক দিনে মেয়েটি তার হবু জামাইয়ের সঙ্গে ছেলেটির পরিচয় করিয়ে দেবে যে কিনা বড় চাকরি করে; যার বাড়ি-গাড়ি আছে।
মেয়েঃ দোস্ত, এ হচ্ছে আমার জামাই। আর ও হচ্ছে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তোমাকে বলেছি না ওর কথা?
ছেলেঃ হ্যালো, কেমন আছেন? (হ্যান্ডশেক করতে গিয়ে হাতের চাপে তার কবজি মচকাবে। এখন তার ভগ্নহৃদয়, ভগ্নকবজি)
বয়ফ্রেন্ড
এটা বন্ধুত্বের সম্পর্কের শেষ পর্যায়। এরপর আর ওপরে যাওয়ার জায়গা নেই। প্রেম হলো তো বন্ধুত্বও শেষ। সম্ভবত এখান থেকেই সম্পর্ক আবার নামতে থাকে। এ পর্যায়ে আপনার সম্পর্ক থাকলে প্রস্তুত থাকুন; প্যারাস্যুট থাকলে খুব ভালো হয়-কখন যে আবার লাফ দিতে হবে!
সূত্রঃ প্রথম আলো, অক্টোবর ১৩, ২০০৮
Leave a Reply