ঈদ চলে গেল। ঈদের পর আর কোনো গল্প থাকে না। সব গল্প ঈদসংখ্যাগুলোয় লেখা হয়ে যায় বা আঁকা হয়ে যায় বা আইডিয়া পাচার হয়ে যায়। কিন্তু তার পরও বোধ হয় একটা গল্প ছিল।
এক লোক···ঈদের আগে আগে এ লোকটা হাইজ্যাক হয়েছিল। তার বেতন-বোনাস সব গেছে, ঈদ করা হয়নি। ধারদেনা করে কোনো রকমে চালিয়েছে। মেজাজ তার সেই যে খারাপ হয়েছে, এখনো ভালো হয়নি। ভালো হওয়ার কথাও না। সেই লোক অফিসে যাচ্ছে, হঠাৎ আবার হাইজ্যাকার! শুধু হাইজ্যাকার না, সেই হাইজ্যাকার-
‘তুমি?’
‘আপনি?’
‘তুমি আবার কী চাও? দাঁতে দাঁত চেপে বলল লোকটি।’
‘আর কী, কিছু ছাড়েন।’
‘হারামজাদা! তখন ঈদের কথা কয়া নিলি, এখন আবার কী?’
‘ওই মিয়া, মুখ খারাপ করেন ক্যান? আরে এক ঈদ গেছে তো কী হইছে, আরেক ঈদ তো আইসা গেছে!’
‘হারামজাদা! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন!’ বলেই হাইজ্যাকারের কলার চেপে ধরে, ‘তোর জন্য আমি ঈদ করতে পারলাম না!’
‘আরে আপনের জন্য তো আমারও ঈদ হইল না।’
‘মানে?’
‘মানে আপনের বেতন-বোনাসের অর্ধেক টাকাই তো জাল ছিল।’ চিঁ চিঁ করে বলে হাইজ্যাকার। তার গলায় বজ্র আঁটুনি দিয়ে ধরেছে জীবন বাজি রেখে সেই লোক। হাইজ্যাকারের হাতের ছুরিকেও গুরুত্ব দেয় না। ‘বদমাইশ! আবার মিছা কথা কস!’ কলার আরও জোরে চেপে ধরে।
‘বিশ্বাস করেন, স্যার, আপনের নোট এখনো একটা পকেডে আছে।’ বলে সে পকেট থেকে বের করে একটা নোট দেখায়। ৩০০ টাকার নোট। ‘এই দেখেন, ৩০০ টাকার নোট। ৩০০ টাকার নোট হয়, শুনেছেন কখনো?’
লোকটার তখন সন্দেহ হয়। আরে এটা তো সে ভেবে দেখেনি। কারণ তার বস লোকটা দুই নম্বর। তাকে বেতন-বোনাস দিতেই চায়নি। একসময় হঠাৎ দিয়ে দিল। তবে কি জাল টাকাই দিয়েছিল? সে তো টাকার বান্ডিল খুলেও দেখেনি, তার আগেই হাইজ্যাক! বস লোকটার অবশ্য অনেক রকমের দুই নম্বর ব্যবসা আছে, থাকেও মিরপুর ২ নম্বরে! সে হাইজ্যাকারের কাছ থেকে ৩০০ টাকার নোট ছিনিয়ে নিয়ে ছুটল বসের কাছে। বস তখন অফিস থেকে বের হয়েছে সবে। লোকটি গিয়ে ধরল-
‘বস, আপনি আমারে জাল টাকা দিছেন?’
‘অ্যাঁ, ইয়ে···কে, কে বলেছে?’
‘কে বলেছে মানে? আমি তো ঈদই করতে পারলাম না। এই দেখেন, ৩০০ টাকার নোট, জাল নোট!’
‘ঠিক আছে, এই দেখো, এটা যদি জাল নোটই হবে, তাহলে নিশ্চয়ই এটা ভাঙানো যাবে না।’ বলে সে পাশের একটা দোকানে গেল। ‘এই, এই নোটটার ভাঙতি দাও তো।’
লোকটা মুহূর্তেই দুটো নোট বাড়িয়ে ধরল। দেড় শ টাকার দুটো নোট।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ০৬, ২০০৮
Leave a Reply