মসলা বাঙালির রসনাবিলাসের ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরোনো। আর এত দিনে দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিনদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে বাঙালি রান্নার খ্যাতি। আর এর রহস্যটা হলো রান্নায় বাহারি সব মসলার ব্যবহার।
কত রকম মসলা
পেঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরা, ধনে, হলুদ, মরিচ, লং, দারচিনি, কালিজিরা, মেথির মতো এত সব বাহারি মসলার দেখা এই উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও পাবেন না।
আমাদের পাকা রাঁধুনির রান্নাঘরের সাজানো রঙিন মসলার স্বাদ, ঘ্রাণ আর পুষ্টিগুণের কথা বলেছেন রন্ধনবিদ সিদ্দিকা কবীর এবং বারডেমের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা আখতারুন নাহার। আমাদের এই উপমহাদেশের রোদ-বৃষ্টি আর আলো-ছায়ায় এখানে গড়ে উঠেছে বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদজগৎ। আজকের যে তেজপাতা তা হয়তো নিছক কোনো গাছই ছিল একদিন। পরখ করতে গিয়ে সেটির সুঘ্রাণে মোহিত হয়ে কেউ এটাকে যোগ করে দিয়েছেন রান্নায়। শুধু পাতা নয়, দারচিনিটা কিন্তু গাছের বাকল। মরিচ বা জিরা, ধনে, জায়ফল হলো ফল। মাটির নিচের হলুদ, পেঁয়াজ, রসুন—এসব যে কবে যোগ হয়েছে রান্নায়, তার সঠিক খবরটা কোথায় পাই বলুন? তবে প্রকৃতির এই খেয়ালখুশির উপহারটা কিন্তু ঠিকই বাড়িয়েছে আমাদের জিভের স্বাদ।
মসলার পুষ্টিগুণ
আখতারুন নাহার বলেন, ‘স্বাদ আর সুঘ্রাণের জন্য মসলার ব্যবহার শুরু হলেও মসলাটার মধ্যে পুষ্টিগুণও রয়েছে। আমরা রান্নায় যে দারচিনি ব্যবহার করি, এটি আমাদের শরীরের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। কাঁচা মরিচে রয়েছে ভিটামিন-সি। লালমরিচ ভালো রাখে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য। মরিচ বাড়ায় রক্ত চলাচল ও খিদে। হলুদের চেয়ে ভালো অ্যান্টিবায়োটিক আর হয়ই না। এতে অনেক লৌহ থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আর কাঁচাহলুদ রক্তস্বল্পতায় খুব কাজে দেয়। চিকিৎসকেরা অনেক সময় হলুদের রস বা হলুদ ভাজি খাওয়ারও পরামর্শ দেন। হলুদ ভাজি কোনো কাঁটাছেঁড়া থাকলে খেলে তা শুকাতে সাহায্য করে। পেটের যেকোনো রোগে আরাম দিতে পারে কালিজিরা। দিনে অল্প করে কাঁচা কালিজিরা চিবিয়ে খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। পেঁয়াজ আমাদের শরীরের রক্তকে তরল করে, যা শারীরিক সুস্থতার জন্য জরুরি। রসুন রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। জিরায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী। কাঁচা ধনেপাতায় আছে পটাশিয়াম, যা আমাদের শরীরের পানির সমতা ঠিক রাখে। জায়ফল বা জয়ত্রীতে রয়েছে লৌহ ও ভিটামিন-এ।
কিসের সঙ্গে কী
মসলার এত গুণে মুগ্ধ হয়ে সব মসলা আবার সব তরকারিতে ঢেলে দেবেন না যেন। সিদ্দিকা কবীর বলেন, মাছ বা মাংসের মসলা অথবা সবজির মসলা কিন্তু এক নয়। মাংসে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, গরম মসলা, ধনে, জিরা—প্রায় সব মসলাই দেওয়া যায়। কিন্তু মাছের ক্ষেত্রে সেটা নয়। বিশেষ বিশেষ মাছের মসলা বিশেষ রকম। ইলিশ মাছে বাদ দিতে হবে জিরা আর ধনে। সাধারণত প্রায় সব মাছের সাধারণ মসলা হলো পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ। আদা-রসুন রুই আর কোরাল ছাড়া অন্য কোনো মাছে খেতে ভালো লাগে না। পাঙ্গাশ মাছেও দেওয়া যায়, তবে অল্প পরিমাণে। মাছে মেথিও দিতে পারেন। ভিন্ন স্বাদ আনতে শোল মাছে দিতে পারেন জিরা, ধনিয়া। সবজি রান্নায় দিন খুব অল্প মসলা। সবজির রংটা যেন অপরিবর্তিত থাকে। ভাজির ক্ষেত্রে হলুদ-পেঁয়াজের পাশাপাশি একটু গরম মসলার গুঁড়োর ছিটে দিতে পারেন। তবে আদা-রসুন বাদ দিন। শুঁটকি রান্নায় রসুনের জুড়ি নেই। ডালের সঙ্গেও তাই। তবে ডালে একটু ভিন্ন স্বাদ আনতে পেঁয়াজ-রসুন দিয়ে বাগার না দিয়ে পাঁচফোড়ন ভেজে তাও ঢেলে দিতে পারেন। ঝোল-তরকারিতেও কম মসলা ব্যবহার করুন।
কায়দা-কানুন
রান্নার কায়দা-কানুনের ওপর কিন্তু স্বাদ অনেকটা নির্ভর করে। তাই রান্নায় কিছু দিক খেয়াল রাখুন। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজ ছেড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে হালকা ভাজা করুন; যাতে তেল না ছেটে সে জন্য এক চিমটি লবণ দিয়ে নিতে পারেন। খুব ভাজবেন না পেঁয়াজ। হালকা বাদামি হলে তাতে আগে অল্প পানিতে গুলিয়ে রাখা মসলা ঢেলে দিন। তারপর ঢাকনি দিয়ে সুন্দর করে কষিয়ে নিন কম আঁচে। সুন্দর একটা ঘ্রাণ বেরোলে মাছ, মাংস বা সবজি ঢেলে দেবেন। তেলে পেঁয়াজ ভাজা হলে একটু পানি দিয়ে তাতেও মসলা দিতে পারেন। তবে পানি ছাড়া মসলাটা সরাসরি তেলে দেবেন না। তাতে এটা পুড়ে অন্য রং হয়ে যাবে। স্বাদটাও কমে যাবে। কম বা বেশি না দিয়ে পরিমিত মসলা ব্যবহার করবেন রান্নায়।
রোগবালাইয়ে
মসলার ভেষজ গুণটার কথাও নিশ্চয়ই সবাই জানেন। তবু মনে করিয়ে দিই, ছোটখাটো অসুখে বেশ কাজে দেবে এই টিপস—
ঠান্ডা, সর্দি-কাশিতে দুধ-চা না খেয়ে আদা ছেঁচে তা দিয়ে লিকার-চা খান।
গলাব্যথা, কাশিতে তেজপাতা ও এলাচ-চাও খুব ভালো।
যাদের বাইরে বেশি খেতে হয় তারা মাঝেমধ্যে হজমের সমস্যায় ভুগতে পারেন। পকেটে এক টুকরো আদা রেখে দিন। একফাঁকে চিবিয়ে নিলে হজম ভালো হবে।
মঞ্চে গান গাইতে বা কবিতা আবৃত্তি করতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মুখে একটা লবঙ্গ পুরে নিন। গলা পরিষ্কার থাকবে।
পথে চলতে গিয়ে হাঁটু বা পায়ে ব্যথা পেয়েছেন। ঘরে ফিরে সরিষার তেলে দুটো রসুনের কোয়া নিয়ে গরম করে মালিশ করুন। আরাম পাবেন।
রসুন কাঁচাও খেতে পারেন। রক্তের চর্বি কাটবে।
রূপচর্চায়
হলুদ আপনি প্রায় সব সময়ই মাখতে পারেন হাতে-মুখে। এতে রোদে পোড়া দাগ মুছে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
ধনেপাতার রস চুলের গোড়ায় লাগালে শক্ত হয়।
পেঁয়াজের রস চুল পড়া বন্ধ করে।
মেথির গুঁড়ো চুলকে রেশমি ও কোমল করে।
মেথি ও মসুর ডালের গুঁড়া একসঙ্গে মিলিয়ে ত্বকেও লাগাতে পারেন।
শান্তা তাওহিদা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২০, ২০১০
WAZED HERA
I am a jourenalist of daily newspaper.I want to Know youre all recipe espasilly youre new recipe.piease coredially received my request.
WAZED HERA
pliease coredially received my request.