পেটে ছুঁচোদের ডন-বৈঠক চললে মনে হয় সামনে যা পাই, তা-ই খেয়ে ফেলি! যেমন ধরুন, অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ভীষণ খিদে পায়। তখন কোনো কিছু বাছবিচার না করেই আমরা বাসায় যা আছে, তা খেয়েই কাজে যাই। কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে, খালি পেটে একদমই খাওয়া উচিত নয়। নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আসুন জেনে নেই খালি পেটে কোন খাবারগুলো পরিহার করা উচিত:
ফল খান বেছে বেছে
মানুষের মধ্যে প্রচলিত ধারণা হলো, যেকোনো ফলই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু সেটা কোন অবস্থায় খাওয়া উচিত, সে সম্বন্ধে আমরা অনেকেই জানি না। যেমন ধরুন, কলা স্বাস্থ্যকর ফল হলেও তা খালি পেটে খাওয়া ক্ষতিকর। হজম-সহায়ক কলায় রয়েছে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম। খালি পেটে কলা খেলে এসব উপাদান রক্তে অন্য উপাদানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট করে। বিশেষ করে শরীরে ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা হৃৎপিণ্ড ও রক্তের ধমনির জন্য ক্ষতিকর।
অনেকে টমেটো খেতে ভালোবাসেন। কিন্তু খালি পেটে একদম টমেটো খাবেন না। পুষ্টিগুণে ভরপুর টমেটোর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পেকটিন ও ট্যানিক অ্যাসিড। খালি পেটে টমেটো খেলে পেকটিন ও ট্যানিক অ্যাসিডের সঙ্গে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের বিক্রিয়া ঘটে থাকে। এতে পাকস্থলীতে এক অদ্রবণীয় জেলের সৃষ্টি হয়, যেখান থেকে পরবর্তী সময়ে পাকস্থলীতে পাথর হয়। এ ছাড়া খালি পেটে টমেটো খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
খালি পেটে টকজাতীয় কিংবা ‘সাইট্রাস’ (কমলা) ধরনের ফল পরিহার করাই ভালো। টকজাতীয় ফল, যেমন আমলকী, করমচা, তেঁতুলে প্রচুর অ্যাসিড থাকে। এতে পেট ও বুক জ্বালাপোড়া করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সৃষ্টি হয়। খালি পেটে ‘সাইট্রাস’ ফল আপনার শৈষ্মিক ঝিল্লিকে (মিউকাস মেমব্রেন) ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে মারাত্মকভাবে, এ ছাড়া বুক জ্বালাপোড়া ও গ্যাস্ট্রিকের সৃষ্টি হয়।
চা-কফি-সোডাকে ‘না’ বলুন
সকালে ঘুম থেকে উঠেই চায়ের পেয়ালায় চুমুক না দিলে অনেকের দিন শুরু হয় না। সুস্থ থাকতে চাইলে এই অভ্যাস আজই পাল্টান। চা-কফির মধ্যে রয়েছে ক্যাফেইন। খালি পেটে এই ক্যাফেইন বুকের মধ্যে জ্বালাপোড়া সৃষ্টির পাশাপাশি হজমেও ব্যাঘাত ঘটায়। চা-কফি গ্যাস্ট্রিক রস ক্ষরণের মাত্রা বাড়ায়, এতে হজম প্রক্রিয়ায় অসুবিধা হয় এবং গ্যাসের উদ্রেক ঘটে। তাই চা-কফি খাওয়ার আগে অন্তত কিছু খেয়ে নিন, অন্তত এক গ্লাস পানি হলেও খান। সকালে সব সময় নাশতার পর চা-কফি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। খালি পেটে চা-কফি শরীরে সেরাটোনিনের কমতি ঘটায়, ফলে সারা দিন মন-মেজাজ খারাপ থাকতে পারে।
খালি পেটে সোডা ওয়াটার বা কোমল পানীয়ও খাবেন না।
দুগ্ধজাত খাবার পরিহার করুন
খালি পেটে আপনি এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন, কিন্তু দুগ্ধজাত খাবার না খাওয়াই ভালো। গাজন প্রক্রিয়ায় বানানো দুগ্ধজাত খাবার, যেমন দই; এ ধরনের খাবার খালি পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি করে, যা দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে ল্যাকটিক অ্যাসিডের গুণাগুণ নষ্ট করে। এতে অ্যাসিডিটির সৃষ্টি হয়। তাই দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার আগে অন্য কিছু খেয়ে নিন।
ঝাল-মসলা শত্রু
বেশির ভাগ বাঙালিই একটু ঝাল ঝাল তরকারি খেতে ভালোবাসেন। তবে পেট খালি থাকলে এমন ভালোবাসা বিসর্জন দেওয়াই নিরাপদ। ঝাল তরকারিতে অ্যাসিডিক বিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, যা খালি পেটে অসহনীয় জ্বালাপোড়া তৈরি করে। পেটের ভেতরকার পেশিতে সংকোচন হওয়ার ফলে পেটব্যথাও হতে পারে।
শাকসবজিতে সাবধান
প্রচলিত ধারণা হলো, সবুজ শাকসবজি সব সময়ই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন অবস্থায় ভালো? সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর অ্যামিনো অ্যাসিড। এই অ্যাসিড শরীরের জন্য যেমন ভালো, তেমনি খালি পেটে বিষম গ্যাস্ট্রিকের সৃষ্টি করতে পারে। শাকসবজির ‘ফাইবার’ ঠিকভাবে হজম না হলে তলপেটে ব্যথাও হতে পারে।
শেষ কথা
মদপান এমনিতেই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। খালি পেটে খাওয়া মানে বিষপান। এতে কিডনি, লিভার ও হৃৎপিণ্ড ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খালি পেটে মিষ্টি আলু বেশি পরিমাণ অ্যাসিড ক্ষরণ করে, এতে পাকস্থলীর পেশি সংকুচিত হয় এবং তলপেটে ব্যথার সৃষ্টি করে। এ ছাড়া বেশি পরিমাণে বাদাম খাওয়াও পরিহার করুন। খালি পেটে অতিরিক্ত বাদাম খেলে পেটব্যথার সৃষ্টি হয়। মোট কথা, খালি পেটে খাদ্যাভ্যাস খানিকটা সাবধানতা মেনে চললে জীবন হবে আরও সুন্দর।
সোর্স – প্রথম আলো।
Leave a Reply