পারিবারিকভাবে নিরামিষ খাবার খান, বাংলাদেশে এমন মানুষের সংখ্যা কম। বাঙালি খেতে ভালোবাসে। তারপরও আজকাল স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেকেই বেছে নিচ্ছেন নিরামিষ খাবার। ডায়েট করার প্রবণতা বাড়ায় খাদ্যাভ্যাসের ধরনেও নতুনত্ব দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে নিরামিষ খেয়ে ডায়েট করা একটি ধরন। সাধারণত তিনভাবে এই ডায়েট করা যায়।
১. সম্পূর্ণ নিরামিষভোজী অর্থাৎ যাঁরা মাছ, মাংস, দুধ, ডিম কোনোটাই খান না।
২. ল্যাকাটা নিরামিষভোজী অর্থাৎ যাঁরা দুধ খান, অন্য কোনো প্রাণিজ প্রোটিন খান না।
৩. ওভোল্যাকাটা নিরামিষভোজী অর্থাৎ যাঁরা ডিম ও দুধ খান, অন্য কোনো প্রোটিন খান না।
সাধারণত ধর্মীয় কারণে যাঁরা নিরামিষভোজী, তাঁদের বেড়ে ওঠাটাই খাবারের একটি নিয়ম মেনে। কিন্তু যাঁরা নিজে হঠাৎ করে নিরামিষভোজী হন, তাঁদের জন্য অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল অনেকেই ওজন কমাতে চান। এ ছাড়া হৃদ্রোগসহ নানা কারণে নিরামিষ ডায়েট শুরু করেন। তাঁদের জন্য সঠিক প্রোটিন গ্রহণ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সে বিষয়গুলো জানা অনেক জরুরি।
দীর্ঘমেয়াদি সবজির ওপর ভিত্তি করে খাবার চালিয়ে নিলে ধীরে ধীরে অনেকের ভিটামিন বি১ ও ২, আয়রন, হিমোগ্লোবিন ইত্যাদির মাত্রা রক্তে কমে যেতে পারে। সঠিক প্রোটিন চাহিদা পূরণ না হলে পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন ত্বকের সমস্যা, চুল পড়া, বিষণ্নতা, দুর্বলতা, মাংসপেশি কমে যাওয়া, লাবণ্য কমে যাওয়া ইত্যাদি। তাই নিরামিষভোজীদের খুব হিসাব করে এমন খাবার খেতে হবে, যাতে প্রোটিনের ঘাটতি না হয়। সাধারণত যাঁরা নিজের ইচ্ছায় নিরামিষভোজী হন, তাঁরা মাছ বা মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন। তাই তাঁদের খাবারে প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে—
* সবজিতে ডাল ব্যবহার করে খাওয়া
* টক দই, মাওয়া, দুধ ইত্যাদি প্রোটিনজাতীয় খাবার রান্নায় ব্যবহার করা।
* খাবারে ভেজিটেবল অয়েল বা ঘি দিয়ে বাগার দেওয়া।
* যাঁরা ডিম খান, তাঁদের মেনুতে দৈনিক একটা কুসুমসহ ডিম অবশ্যই খেতে হবে।
* কিছু কিছু সবজিতে একটু বেশি মাত্রায় প্রোটিন থাকে। যেমন পালংশাক, ব্রকোলি, অঙ্কুরিত ছোলা, মাশরুম, মটরশুঁটি, কাঁঠালের বিচি, ভুট্টা ইত্যাদি খাওয়া।
যাঁরা দুধ পান করেন, তাঁরা তাঁদের খাবারের মেনুতে দই, দুধ, ছানা, পনির, লাচ্ছি ইত্যাদি হিসাব করে খেলে ভালো মাত্রার প্রোটিন পাওয়া যাবে।
খাবার পদে সয়া থাকলে ভালো মাত্রার প্রোটিন পাওয়া সম্ভব। যাঁরা দুধ বা ডিম কোনোটাই খাবে না, তাঁদের খাবারে দৈনিক পাঁচমিশালি ডাল, টফু, সয়া প্রোটিন, মাশরুম অবশ্যই রাখতে হবে।
প্রোটিন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তাই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি কেজি ওজনের বিপরীতে দৈনিক কমপক্ষে ১ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের প্রয়োজন হয়। তাই যাঁরা হঠাৎ নিরামিষ খেতে শুরু করবেন, তাঁদের উচিত অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে বসে পরামর্শ করে নেওয়া।
তামান্না চৌধুরী, প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র – প্রথম আলো
Leave a Reply