রান্নাঘরকে যতটা পরিষ্কার মনে করা হয়, আসলে তা ততটা পরিষ্কার নয়। এ ঘরে লুকানো থাকে অসংখ্য জীবাণু। এ জীবাণু আমাদের শরীর-স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রান্নাঘরে ব্যবহূত বিভিন্ন জিনিসপত্রেই এসব জীবাণু লুকিয়ে থাকে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:
হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন বা পানির গ্লাস মাজার জন্য ব্যবহূত স্পঞ্জ বা মাজনি: রান্নাঘরে ব্যবহূত স্পঞ্জ বা মাজনি অসংখ্য রোগ-জীবাণুর আরামদায়ক আবাস। থালা-বাসন মেজে এগুলোকে কলের পানিতে একটু ধুয়েই ভেজা অবস্থায় রাখা হয়। থাকে ভেজা, স্যাঁতসেঁতে। হাঁড়ি-পাতিল মাজার পর স্পঞ্জ বা মাজনি পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করলেও এর ভেতরে থেকে যায় বেশ কিছু খাদ্যকণা ও ময়লা। ভেজা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এসব খাবার ও ময়লা খেয়ে রোগ-জীবাণু বংশ বৃদ্ধি করে খুবই দ্রুত। দুর্গন্ধ হয় তাতে। তারপর স্পঞ্জ বা মাজনির মাধ্যমেই রোগ-জীবাণু চলে যায় পেটে, পাতিলে কিংবা পানির গ্লাসে। স্পঞ্জ বা মাজনির জীবাণু সহজে দূর হয় না। এগুলোকে প্রতি সপ্তাহেই এক-দুবার সাবান দিয়ে ধুয়ে এবং পানিতে ফুটিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। মাইক্রোওভেনে দিয়েও এগুলোকে জীবাণুমুক্ত করা যায় কয়েক মিনিটে। স্পঞ্জ বা মাজনি শুকনো রাখতে হবে যেন জীবাণুগুলো সহজে বংশ বৃদ্ধি করতে না পারে।
রান্না করার পর হাঁড়ি-পাতিলের বাইরের দিক মোছা বা ধরার কাজে ব্যবহূত কাপড় বা ছোট তোয়ালে: এসব কাপড় বা ছোট তোয়ালে সাধারণত প্রতিদিনই ধুয়ে পরিষ্কার করা হয় না। ব্যবহারে ব্যবহারে এগুলোও হয়ে যায় ময়লাযুক্ত এবং আর্দ্র। হয়ে ওঠে জীবাণুর বংশ বৃদ্ধির আবাসস্থল। এগুলোকেও স্পঞ্জ বা মাজনির মতোই নিয়মিত পরিষ্কার করে নিতে হবে। রাখতে হবে শুকনো।
রান্নাঘরের বেসিন, বেসিনের পাইপ এবং পানির কলের হাতল: থালা-বাসন, হাঁড়ি-পাতিল রান্নাঘরের বেসিনেই ধোয়া হয় কলের পানি ছেড়ে। এসবের ময়লা তো বেসিনেই পড়ে। ময়লা হাতে কলের হাতল খোলা বা বন্ধ করার সময় বেশ ময়লা লাগে কলের হাতলে। যদি ভালোভাবে পরিষ্কার করা না হয় তাহলে বেসিনে, বেসিনের পাইপে বা কলের হাতলে রোগ-জীবাণু বৃদ্ধি পায় বেশ এসব ময়লা পেয়ে। সুতরাং রান্নাঘরের বেসিন ও পানির কলের হাতল পরিষ্কার করতে হবে প্রতিদিন, পরিষ্কার রাখতে হবে নিয়মিত। গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করাই ভালো।
রান্নাঘরে ব্যবহূত দা, বঁটি, ছুরি, চাকু, কাটিং বোর্ড: মাছ-মাংস কুটা হয় দা, বঁটি, ছুরি, চাকু দিয়ে। সবজিও কুটা হয়। কাটিং বোর্ডে রেখে কাটা হয় এসবের অনেক। এগুলোতে ময়লা লাগবেই তখন। নিয়মিত ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে রোগ-জীবাণুর সুন্দর আবাস হয় এগুলো। সুতরাং প্রতিবার কাটাকুটির পর এসব যন্ত্রপাতি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।
থালা-বাসন রাখার ঝুড়ি বা র্যাক: থালা-বাসন ধুয়ে যে র্যাকে বা ঝুড়িতে রাখা হয় তাও কিন্তু ময়লা হয় বেশ। র্যাকগুলো যদি থাকে স্যাঁতসেঁতে ভেজা, তবে জীবাণু বাড়ে দ্রুত। সুতরাং থালা-বাসন রাখার র্যাক বা ঝুড়ি মাঝেমধ্যেই ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করতে হবে, শুকনো রাখতে হবে।
রান্নাঘরে বসতি গড়া উল্লেখযোগ্য জীবাণুর মধ্যে আছে সালমোনেলা, ই. কলাই, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টর, স্ট্যাফাইলোকক্কাস ও ছত্রাক। খাদ্যে বিষক্রিয়া করতে পারে এসব জীবাণু। ফলে আমাদের হতে পারে পেটের ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানাসহ বিভিন্ন রকমের পেটের পীড়া। জ্বরও হতে পারে। অতএব রান্নাঘরের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে একটু বেশিই যত্নবান হতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ
বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
কমিউনিটি বেজড, মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১
Shyamol Kumar Sorkar
send some tips about recipe which may decline acidity & procedure to cook in bengali maner.
salam
nice.