মাংস সংরক্ষণের পদ্ধতি
এই ঈদে মাংস তো খাওয়া হবেই। বাড়তি মাংস সংরক্ষণ করে রাখার প্রয়োজনও হবে।
সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে না জানলে মাংস নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এভাবে দীর্ঘদিন মাংস সংরক্ষণ করা স্বাস্থ্যসম্মত কি না কিংবা আদৌ তাতে পুষ্টি থাকে কি না, সে বিষয়ে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। তাই মাংস সংরক্ষণ করতে হলে জানতে হবে এর সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি। এ বিষয়ে রন্ধনবিদ রাহিমা সুলতানা জানান:
মাংস ভালোভাবে কেটে পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ছোট ছোট প্যাকেট করে রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে।
মাংসে লবণ, ভিনেগার, মসলা মাখিয়েও রেফ্রিজারেটরে রাখা যেতে পারে।
মাংস বড় একটা ডিশে করে রেফ্রিজারেটরে রাখা যেতে পারে।
কড়া রোদে মাংস শুকিয়ে মাংসের আর্দ্রতা কমিয়ে এনে তা সংরক্ষণ করা যায়।
রেফ্রিজারেটরে মাংস না রেখে বাইরে রাখতে চাইলে বড় বড় টুকরা করে কাটা মাংসে মসলা মাখিয়ে তেল দিয়ে কড়াইতে রাখা যেতে পারে। তবে প্রতিদিন অন্তত একবার কড়াইতে রাখা মাংস গরম করতে হবে।
কোল্ড বিফ বা হান্টার বিফ তৈরি করেও মাংস রেখে দিতে পারেন। প্রয়োজনমতো বের করে খাওয়াও যাবে।
বহুদিন ধরে সংরক্ষিত মাংসে আদৌ পুষ্টির অভাব হয় কি না বা সংরক্ষিত মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত কি না, এসব নিয়ে বলছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যাপক ফাতিমা সুরাইয়া, ‘আমাদের দেশে সাধারণত গরু, মহিষ, খাসি, ভেড়া—এসব পশু কোরবানি দেওয়া হয়ে থাকে। এসব পশুর মাংসে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে, যা অত্যন্ত উচ্চ মানের। এ ছাড়া এই মাংস লোহা, ফসফরাসের ভালো উৎস। যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি এসব মাংসে সংরক্ষিত থাকে।’
জেনে নিন
প্রথমত, কোরবানি দেওয়ার আগে পশুর কোনো রোগ আছে কি না, তা যাচাই করতে হবে। জবাইয়ের আগেই এর সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
জবাইয়ের আগে অন্তত ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়া থেকে পশুকে বিরত রাখতে হবে।
পশু জবাইয়ের আগে কোনোভাবেই তাকে পরিশ্রম বা উত্তেজিত করা যাবে না। এর ফলে মাংসের গ্লাইকোজেন বা সঞ্চিত শক্তি হারিয়ে যায়। গ্লাইকোজেন ল্যাকটিক এসিডে পরিণত হতে পারে না বলে মাংসের অম্লত্ব বাড়ে না। ফলে দ্রুত মাংস নষ্ট হয়ে যায়।
পশু জবাইয়ের অন্তত তিন-চার ঘণ্টা পর্যন্ত মাংস শক্ত থাকে। সে সময় কোনোভাবে মাংস রেফ্রিজারেটরে রাখা যাবে না।
তিন-চার ঘণ্টা পর মাংস শক্ত থেকে নরম হলে প্রক্রিয়াজাত করে তারপর রান্নার কিংবা রেফ্রিজারেটরে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মাংস ঘরে আনার ৮-১০ ঘণ্টার পর লবণ দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে (১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা) নিলে মাংস ভালো থাকবে। ফলে মাংসের ভেতরের অন্যান্য জীবাণু মরে যায়। এর ফলে গরমকালে ১২ ঘণ্টা এবং শীতকালে ২৪ ঘণ্টা মাংস ভালো থাকে। মাংস ফোটানোর পর ঠান্ডা করে রাখতে হবে।
কাঁচা অবস্থায় মাংস রেফ্রিজারেটরে রাখতে চাইলে ১৮ থেকে ২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপে বরফজাত করে রাখতে হবে। এতে গরুর মাংস ১২ মাস, খাসির মাংস ছয় মাস, মাথা, কলিজা ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
মাংসটা যখন ডিপ ফ্রিজে কিংবা রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা হবে, তখন প্যাকেটে সেদিনের তারিখটা লিখে রাখতে হবে। এতে পরে বোঝা যাবে মাংস পুরোনো হয়ে নষ্ট হয়ে গেল কি না।
খুব কড়া রোদে সাত দিন মাংস শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। রোদে শুকালে মাংসের আর্দ্রতা কমে যায়। পানি শুকিয়ে গেলে তবেই মাংস সংরক্ষণ করা যাবে।
যেসব পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে মাংস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে, এসব পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করলে প্রোটিন, লৌহ, ফসফরাস—এসব সংরক্ষিত থাকে। অল্প তাপে বেশি সময় ঢেকে মাংস রান্না করলে ভিটামিন ডি সংরক্ষিত থাকে। বলছিলেন অধ্যাপক ফাতিমা সুরাইয়া।
নাঈমা আমিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১৬, ২০১০
Mohibar rahaman
Addhapok fatima noy addhapika