আমেরিকান লেখক জে.ডি সালিংগার তার একনব্বুই বছরের জীবন শেষে ইন্তেকাল করলেন গত সাতাশে জানুয়ারি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে চল্লিশের শুরুর দিকে ছোটগল্পের মাধ্যমে তার লেখক জীবনের যাত্রা শুরু, আটচল্লিশে তিনি “আ পারফেক্ট ডে ফর ব্যানানাফিস” ছোটগল্পটি প্রকাশ করে তার দেশে প্রচুর আলোচিত হন, আর দুনিয়াজোড়া তার সুখ্যাতি হয় ১৯৫১ সালে প্রকাশিত উপন্যাস “দি ক্যাচার ইন দি রাই” এর সুবাদে। এর পরও তিনি লিখেছেন প্রচুর। অধিকাংশই ছোটগল্প ও প্রায়োপন্যাস। কিন্তু একান্ন’র সেই উপন্যাসটি প্রকাশের পরপরই অজানা কারণে তিনি নির্জনবাসী হয়ে যান, লোকসমাজে নিজের উপস্থিতি কমিয়ে দেন। পুরো জীবনকালে তাকে বিবেচনা করা হতো নিভৃতচারী হিসাবে, ভাবা হতো তিনি সমাজ-টমাজের ধার ধারেন না; বাইরের দুনিয়ায় তিনি হয়তো তেমনই ছিলেন। অথচ তারও ভেতরে ছিল খোশমেজাজি এবং মমতাময় এক মানুষ। সম্প্রতি জার্মান ম্যাগাজিন ‘ডার স্পিগেল’ এর হাতে আসা তার লেখা বেশ কিছু চিঠি এমনটিই সাক্ষ্য দেয়, চিঠিগুলো তিনি লিখেছিলেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তার এক সহযোদ্ধা সৈনিকের কাছে। স্পিগেল অবলম্বনে লিখেছেনণ্ড মোহাম্মদ আরজু
চিঠিটি ছোট্ট এবং অল্প কথার। ছয়টা প্যারা খুব সুন্দর করে টাইপ এবং সইটা লেখকের হাতে করা। প্রেরক লিখেছেন যে, তিনি প্রাপককে খুব অনুভব করেন ইদানীং এবং প্রাপকের অনুপস্থিতিতে কাটানো নিজ জীবনের খবর জানাচ্ছেন তিনি। স্মৃতিচারণ করছেন; দুই সহযোদ্ধা তারা, একজন আহত আর একজনকে মিলিটারি থেকে ছাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। বলছেন দুজনের বাইরে আরো একজনের কথাণ্ড যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা হয়েছিল যেই চমৎকার লোকটির সাথেণ্ড যে কি না এখন কিউবায় আছে। চিঠির ভাষায় কখনো মনে হয় লেখক নিজেকে টিটকারি দিচ্ছেন আবার কখনো করুণা করছেন নিজেকে। তাকে বিষাদগ্রস্ত মনে হয়, কিন্তু তিনি আবার সম্ভাবনার কথাও বলছেনণ্ড খুব শীঘ্রই প্রাপকের সাথে একসাথে ‘ড্রিংক’ করার সম্ভাবনা।
আমরা বুঝতে পারি, বন্ধুর কাছে বন্ধুর চিঠিই বটে এটা। কিন্তু শুধু ওটুকুই নয়, এর আরো মর্তবা আছে। ১৯৪৫ সালের ২৫ এপ্রিল লেখা চিঠিটি সম সময় ও সাহিত্যের ইতিহাসের এক চিলতে অংশ নিশ্চয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের ঠিক আগেভাগে জার্মানির যুদ্ধক্ষেত্র থেকে লেখা এক তরুণ যোদ্ধার চিঠি বলেই শুধু নয়, কিম্বা লেখক চিঠিতে যাকে ‘চমৎকার লোক’ বলছেন সেই লোকটি স্বয়ং আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বলেই শুধু এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বের আসল জায়গা যেখানেণ্ড আগেই বলেছি চিঠিটি লিখেছিলেন জে.ডি সালিংগার। সেই বিচ্ছিন্নতাপ্রিয় লেখক যার একটি উপন্যাস তার দেশের কয়েকটি প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রভাব ফেলেছে। ১৯৬৫ এর পরে যেহেতু তিনি আর কিছু প্রকাশ করেন নি, কাজেই যখনি তার কোনো ছিটেফোঁটা পুরনো লেখার তালাশ পাওয়া গেছে নতুন করে, গবেষকরা তার প্রতিটি শব্দকে আক্ষরিকভাবেই ‘কব্জা’য় নেয়ার চেষ্টা করেছেন।
এখন বেরিয়ে এলো এই চিঠিটিসহ আরো অনেকগুলো চিঠি, এতোকাল যেগুলো নজরে আসেনি, নিউইয়র্কের শহরতলিতে সালিংগার-এর এক মিলিটারি-মেট এর পড়ার ঘরের কাগজের মধ্যে পড়েছিল। সেই সৈনিক-বন্ধুটির নাম ওয়ের্নার ক্লিমেন। ক্লিমেন আর সালিংগার একসাথে লড়েছেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেণ্ড আমেরিকার হয়ে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের আইফেল পর্বতমালার যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে লড়েছেনণ্ড মহাযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী লড়াইগুলো। চিঠিটি যখন স্পিগেল-এর তালাশে আসে ক’দিন আগেণ্ড ক্লিমেন ম্যাগাজিনটিকে তার সাথে সালিংগারের সর্ম্পকের বিষয়ে বলেন, ‘আমরা একসাথেই বেড়ে উঠেছি যুদ্ধের মধ্যে, একসাথে আমাদের বেড়ে উঠতে হয়েছে। অনেকেই তাকে যেভাবে জানে না, আমি জেরিকে সেভাবে জানি’। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নিউইয়র্ক শহরে গৃহসজ্জা-সামগ্রীর এক ছোট্ট দোকানি ক্লিমেন-এর বয়স এখন একানব্বুই, যে বয়সে মারা গেলেন বন্ধু সালিংগার এবং তাদের জীবিত বন্ধুজনের সংখ্যা এখন হাতেগোনা কয়েকজন।
ক্লিমেনের কাছে এসব চিঠি তিনি লিখেছিলেন ১৯৪৫ থেকে ১৯৬৯ সালের মধ্যকার সময়ে। প্রথম চিঠিটিতে ফিরতি ঠিকানা দেয়া ছিলো ‘জার্মানি’ আর শেষেরগুলোতে ‘উইন্ডসর, ভিটি’, যেই উইন্ডসরের ডাকঘরটি পাশের কর্নিশ গ্রামের চিঠিও বিলি করতো, নিই হ্যাম্পশায়ারের যে গ্রামে থাকতেন তখন সালিংগার । আজ পর্যন্ত প্রাপক ছাড়া হাতে গোনা কয়েকজনই চিঠিগুলো পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ডার স্পিগেল এর সাংবাদিকরা যথেষ্ট সময় নিয়ে চিঠিগুলো পড়ে, বিশ্লেষণ করে বলছেন যে, এসব চিঠি তার নির্জন দুনিয়ার ভেতরে তাকানোর এক বিরল সুযোগ, তার জীবন কাহীনির ফাঁক-ফোকরগুলো এতে ধরা পড়ছে। সালিংগারের জীবন-চরিত ঘিরে থাকা না কল্পকাহিনীর পর্দা সরিয়ে তার ব্যক্তিজীবনের মেজাজ-মর্জি খুব কাছ থেকে দেখা যায় এসব চিঠিতে। বিখ্যাত ইংরেজ সমালোচক ইয়ান হ্যামিল্টন পর্যন্ত লেখককে ‘বিচ্ছিন্নতাপ্রিয় আর বিষাদগ্রস্ত জীবনের একজন’ বলে ধার্য করেছেন।
অথচ চিঠিগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে সেই জে.ডি সালিংগার লোকসমাজের আড়াল হবার অনেকানেক বছর পরেও তার যোদ্ধাজীবনের বন্ধুর সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কে জড়িয়ে আছেন, নব্বই বছর পার করেও তরুণ বয়সের পুরনো বন্ধুর সাথে ‘ড্রিংক’ করার ইচ্ছের কথা জানাচ্ছেন ! ১৯৬১ সালে লেখা এক চিঠিতে তিনি ক্লিমেনকে জানাচ্ছেনণ্ড হেমিংওয়ের আত্মহত্যায় তিনি ‘চরম বিষণ্ন’ বোধ করছেন। বন্ধু ক্লিমেন স্পিগেলকে বলছেন, সালিংগার ‘আবেগপ্রবণ আর খোশমেজাজি ছিল’। নিউইয়র্কের ‘মর্গান লাইব্রেরি’ সংগ্রহশালার কিউরেটর ডিক্ল্যান কেলি চিঠিগুলো নিরীক্ষা করে জানিয়েছেন, ওগুলো আসল। মর্গানে সালিংগারের কয়েকটি চিঠি আছে এবং এই সপ্তাহেই ওখানে চিঠিগুলোর প্রদর্শনী চলছে। কেলি আশা করছেন. উপযুক্ত মূল্যের বিনিময়ে ক্লিমেন চিঠিগুলো তাদের সংগ্রহশালায় দেবেন। প্রতিটি চিঠির মূল্য ৬০,০০০ ডলার হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। ক্লিমেন কিছু জানাননি এখনো। সাবেক সৈনিক হিসাবে যে পেনশন পান তাতেই মূলত নিজের খোরপোষ যোগান করেন ক্লিম্যান, তারপরও এখন একটি ব্যাংকের সেফ লকারে বন্ধুর চিঠি হেফাজত করেছেন তিনি।
সালিংগারের মতো সাহিত্যিকের সাথে বন্ধুত্বের বিষয় তো আছেই, একই সাথে ক্লিম্যানের নিজের জীবনেও ঘটন-অঘটনের এত বেশি ঘনঘটা যে, একটা বিশাল উপন্যাসের জন্য যথেষ্ট রসদপাতি তার জীবনেও আছে। সেদিক থেকে এসব চিঠি তার রোমাঞ্চকর অতীতকে আবার অনুভবে ফিরিয়ে আনার কাজে বেশ টনটনে। নাজিরা কিভাবে ক্রমশ জার্মানির ক্ষমতায় আসে তা বাভারিয়া অঞ্চলের তখনকার এক ইয়াহুদি বালকও চ্যানেল পার হয়ে ফ্রান্সের নরমান্ডি উপকূলে জার্মান বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে ওয়ের্নার ক্লিম্যান খুব কাছে থেকে দেখেছেন। মহাযুদ্ধ শুরু হবার পর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দি হন, পরে ছাড়া পেয়ে নিউইয়র্কে পালান এবং মার্কিন নাগরিকত্ব হাসিল করে আমেরিকার মিলিটারিতে যোগ দেন।
সালিংগারের সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ ইংল্যান্ডের দক্ষিণের শহর ডেভনশায়ারে, ১৯৪৪ সালের মার্চে। মিত্রবাহিনী তখন সেখানে প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইংলিশ লন ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে, দুজনেই মিত্র বাহিনীর চতুর্থ পদাতিক ডিভিশনের ১২তম রেয়িে ইউরোপের মূল ভূখন্ডে ঢোকার। ক্লিম্যান ছিলেন টাইপরাইটার আর সালিংগার ছিজেমেন্টের সদস্য ছিলেন। তখন ২৫ বয়সের যুবক সালিংগারের সাহিত্য-জীবন মাত্র শুরু। ১৯৪২-এ মিলিটারিতে যোগ দেয়ার আগেই তিনি বেশ কিছু ছোটগল্প প্রকাশ করেছিলেন। সালিংগারের মিলিটারিতে যোগ দেয়ার পরের বিশেষত যুদ্ধের শেষের দিককার সময়ের বিষয়ে খুব কম তথ্যই এখনও পর্যন্ত জানা গেছে। মাসের পর মাস গবেষণার খাটুনি খেটে পরে ইয়ান হ্যামিল্টন তার লেখা সালিংগারে জীবনীগ্রন্থে এই হতাশার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, লেখকের জীবনের অধিকাংশই তার কাছে ‘ছায়াচিত্র’ -এর মতো।
এখন ক্লিম্যানই পারেন লেখককে এই ছায়াচিত্রের আড়াল থেকে বের করে আনতে। দু-একটি সূত্র থেকে আগে জানা গিয়েছিল যে, যুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে সহযোদ্ধাদের সাথে খুব একটা মিশতেন না লেখক। কিন্তু ক্লিম্যানের মতে, সালিংগার তখন লেখালেখির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকতেন; সেই মাসগুলোতেই ‘দি ক্যাচার ইন দি রাই’-এর কাহিনী-চরিত্রের গড়ন তার মনে গেঁথেছিল। ক্লিম্যান স্মৃতিচারণ করে জানান যে, ডেভনশায়ার থেকে রওনা করে ইংলিশ চ্যানেল পার হবার সময়ে দু সপ্তাহ ধরে সালিংগার ব্যস্ত ছিলেন তার নিজের জিপটাকে পানিরোধক করার কাজে। তার ভাষায় জিপটার ওপর ‘সে একটা খাসা কাজ করেছিল, তার গল্পগুলোর মতই’। ওই সময়টাতেই কেবল দুজন সবচেয়ে কম কথা বলেছিলেন। ‘খুব চাপের মধ্যে ছিলাম, সবাই ভয়ে ভয়ে ছিলাম, ওটা ছিল অজানার উদ্দেশ্যে এক আতঙ্ক আর রহস্যে ভরা সফর’। নরম্যান্ডি উপকূলের উটাহ সৈকতে অবতরণের সেই ভয়াবহ দিনণ্ড ডি ডে’র স্মৃতিচারণ করতে নারাজ ক্লিম্যান, ওই স্মৃতি তার নাপছন্দ। তার কাছে লেখা চিঠিগুলোতে সালিংগার ডি- ডে’র কথা এড়িয়ে গেছেন বরাবর।
কিন্তু যুদ্ধের দুই দশক পরে লেখা কয়েকটি চিঠিতে তিনি আবার ঠিকই তার ভাষায় ‘হার্টেগবাড কারবার’ এর কথা স্মরণ করেছেন। সেই স্মরণে একই সাথে বেদনা ও নির্লিপ্ততা মিশে ছিল। নরম্যান্ডি উপকূলে অবতরণের পর ভয়াবহ প্রতিরোধ মোকাবিলা করে ফ্রান্সে ঢোকে মিত্র বাহিনী, সেখান থেকে সালিংগারদের রেজিমেন্ট ক্রমাগত অগ্রসর হতে হতে চলে আসে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের আইফেল পার্বত্যাঞ্চলে। ওখানকার যুদ্ধক্ষেত্র হার্টেগবাডণ্ড যেখানে ২২,০০০ এর বেশি আমেরিকান সেনা নিহত হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। ওই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা সালিংগারের অনেক ছোট গল্পেই ঢুকে পড়েছে। ক্লিম্যান ওখানকার বিষয়েও নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। ‘সালিংগারের কমান্ডিং অফিসার ছিল পাড় মাতাল, যে কিনা তার যোদ্ধাদের নিদারুণ নাজেহাল করে ছাড়তো, বোতলের পর বোতল গিলতো সেই অফিসারটি।’ একবার সে সালিংগারকে বাধ্য করেছিল পুরো রাত যুদ্ধক্ষেত্রের একটি গর্তে কাটাতে, রাতটি ছিলো তুষার বর্ষণের কনকনে ঠান্ডা রাত এবং গর্তটি ছিলো তুষারে ঢাকা। ক্লিম্যান তার মায়ের হাতে বোনা মোজা সেই রাতে পরতে দিয়েছিলেন সালিংগারকে। একটি বাড়তি কম্বলও দিয়েছিলেন, যেটি তিনি নিয়ে এসেছিলেন নরমান্ডি উপকূলের হোটেল আটলান্টিক থেকেণ্ড ওখানেই তাদের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয় আর্নেস্ট হেমিংওয়ের। হেমিংওয়ে যুদ্ধ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এরপরও যুদ্ধক্ষেত্রে অনেকবার হেমিংওয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে তাদের। হার্টেগবাড লড়াইয়ের সময় এক সন্ধ্যায় সালিংগার বললেন, ‘চলো হেমিংওয়েকে দেখে আসি’। একটা বাড়িতে তারা খুঁজে পেয়েছিলেন হেমিংওয়েকে, যে কিনা তখন একটা বিশাল গদিতে শুয়ে মদ গিলছিলেন। বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল, ইলেকট্রিক জেনারেটর। দুই বন্ধু প্লাস্টিকের কাপে করে হেমিংওয়ের সাথে আধেক রাত শ্যাম্পেন পান করে আর খোশগল্প করে কাটান সেদিন। ১৯৬১ তে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে আত্মহত্যা করলে সে বছর ক্লিম্যান এক চিঠিতে সালিংগার প্রশ্ন করেন, ‘মনে আছে ?’ণ্ড সেই রাতের স্মৃতি ?
বন্ধুর সাথে ক্লিম্যানের শেষ দেখা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের দূর গ্রামে তখন নির্জনাবাসে ছিলেন সালিংগার। ক্লিম্যান জানান, ‘সালিংগারের বাড়ীর সামনে ছিল আগাছা ভর্তি, তার কুকুর ছিলো, ওগুলো ঘেউ ঘেউ করছিলো, ও সামনের ঝুল বারান্দায় বেরিয়ে এসে হাত নেড়ে আমাকে স্বাগত জানায়। উপরে চলে আসোণ্ড বলে আমাকে ডাক দিয়েছিলো।’ সেই দেখার সময় বন্ধুকে তার পান্ডুলিপি-কক্ষটি দেখিয়েছিলেন সালিংগার। যেখানে তার সব পান্ডুলিপি সংরক্ষিত। এতোকাল এই ‘পান্ডুলিপি-কক্ষ’ কেবলই গুজব ছিল। এখন ক্লিম্যান তা নিশ্চিত করছেন।
কি চিঠি, কি অন্য লেখালেখি, সব কিছুতেই সালিংগারের লেখার শৈলি এক নিমিষেই চেনা যায়; তার খটখটে রসবোধ, মার্জিত বাক্যগঠন আর অবাধ ছন্দময়তা। অতীতে কয়েকজন শিল্পী, সম্পাদক আর প্রেমিকার কাছে লেখা যে ক’টি চিঠি আজতক প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোতে যা পাওয়া যায় নাণ্ড তাই পাওয়া গেছে ক্লিম্যানকে লেখা চিঠিগুলোতে। পাওয়া গেছে এতকাল আড়ালে থাকা এক অন্য সালিংগারকে। যে সালিংগার একজন যুদ্ধফেরত প্রবীণ সৈনিক। এটা এমন এক জীবন যা কিনা একজন সহযোদ্ধাই সবচেয়ে ভালো বুঝবেন। ক্লিম্যান যেমনটি বলছেন, ‘আমরা একই সাথে জাহান্নাম-যাত্রা করেছিলাম, যা আমাদের একসাথে জুড়ে দিয়েছিলো।’ বন্ধুকে সালিংগার সর্বশেষ চিঠিটি লিখেছিলেন ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। সে চিঠিতে তিনি তার স্বেচ্ছা-বিচ্ছিন্নতার বিষয়ে কথা বলেছিলেন। বন্ধুকে তিনি জানিয়েছিলেন যে, তিনি ‘রক্ত-মাংসের শরীরটি নিয়ে আর কোথাও ফিরতে’ চান না।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, এপ্রিল ০৯, ২০১০
Leave a Reply