রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। নিত্যদিনের বাজারের বাইরেও এখন লাগবে ইফতার ও সেহ্রির জন্য বিশেষ বাজার। মাসের শুরুতে একটু বুদ্ধি করে বাজার-সদাই করলেই অহেতুক বিড়ম্বনার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
‘রমজান মাসের বাজারটা আমাদের দেখে, বুঝে, শুনে করতে হবে। তা না হলে অপ্রয়োজনীয় বাড়তি জিনিস কিনলে একদিক থেকে যেমন অর্থের অপচয় হবে আবার অতিরিক্ত জিনিস নষ্ট হওয়ারও আশঙ্কা থেকে যায়।’ বলছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ও সাবেক অধ্যক্ষ ফিরোজা সুলতানা। তিনি জানালেন রমজান মাসের বাজার-সদাই নিয়ে যাবতীয় কিছু।
পরিকল্পনা করুন আগেই
রমজান মাস শুরুর আগেই আপনাকে পরিকল্পনা করতে হবে এ মাসটা কীভাবে চালাবেন। এ মাসে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের হিসাবটুকু আপনার মাথায় থাকতে হবে। রোজা শুরুর আগে চিন্তা করুন কোন কোন জিনিস আপনার পুরো মাসে লাগবে এবং কোন জিনিসগুলোর খরচ আপনি কমাতে পারবেন না। এসব জিনিসের দরদাম সাধারণত ওঠানামা করে থাকে। কাজেই হিসাব কষে বের করে নিন রোজার পুরো মাসে আপনার কতটুকু পরিমাণে লাগবে। এই জিনিসগুলো একবারে পুরো মাসের জন্য কেনার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে কোনো পাইকারি দোকান থেকে কিনুন। এতে দাম অনেকটাই কম পড়বে। আবার অনেক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। এ থেকে কিনলেও খরচ কম হবে। সাধারণত এ ধরনের জিনিসের মধ্যে আটা, ময়দা, ছোলা, বেসন, পেঁয়াজ, বিভিন্ন ধরনের ডাল, তেল, চিনিই প্রধান। এ ধরনের জিনিস রোজা শুরুর আগেই কিনে ফেলতে চেষ্টা করুন এবং সেগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থাও করুন।
তালিকা তৈরি করুন
বাজার-সদাই করার আগেই তালিকা তৈরি করুন। শুধু তালিকা তৈরি করলেই হবে না, এর সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে প্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা যেন সত্যিকার অর্থেই প্রয়োজনীয় হয়; আর এর পরিমাপের হিসাবটা করবেন একটু বুঝে-শুনে। ধরুন, দিনে ইফতারি তৈরিতে কী পরিমাণ ছোলা লাগবে, এটা নির্ভর করবে আপনার পরিবারের সদস্যসংখ্যা আর খাদ্যাভ্যাসের ওপর। ধরে নিই আপনার প্রতিদিনের হিসাবে ছোলা লাগে ২৫০ গ্রাম। সে হিসাবে আপনি পুরো মাসের ছোলার পরিমাণ বের করে ফেলতে পারেন। আবার অনেক সময় অতিথি আপ্যায়ন ও প্রতিবেশীদের ইফতারি বিলানো বাবদ ছোলার হিসাবটা আপনাকে এই হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হবে।
রোজার মাসে কী ধরনের খাওয়াদাওয়া করবেন, তার একটা তালিকা তৈরি করে ফেলুন। অনেকে তেলে ভাজা খাবার পছন্দ করেন না। সারা দিন রোজা রাখার পর এসব খাবার খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। তাই ফলমূল বেশি করে খাওয়া দরকার। শুকনো ফল খেতে পারেন। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। চিঁড়া ধরনের খাবারটা শরীরের পক্ষে ভালো, সেই সঙ্গে দই। ছোলা, পিঁয়াজু, চপটা যে একেবারেই বাদ দেবেন, তা কিন্তু নয়। সারা বছর এ সময়েই শুধু এ ধরনের খাবার খাওয়া হয়। তাই লাগাতার ভাজাভুজি ধরনের খাবার বা চিঁড়ার মতো খাবার না দিয়ে বৈচিত্র্য আনুন খাবারে। অনেকের ধারণা, ডুবোতেলে পেঁয়াজু, চপ, বেগুনি ভাজলে সমস্যা হয়, কারণ এতে নাকি খাবার খুব বেশি তেল শুষে নেয়। এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। ডুবোতেলে খাবার ভাজলে খুব বেশি তেল যেমন তা শুষে নেয় না, আবার তেলও কম লাগে। আবার কম তেলে খাবার ভাজলে পুরো তেলটা শুষে নেয়, যা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। অবশ্য ননস্টিক ফ্রাইপ্যানে অল্প তেলে এসব ভাজাভুজি করলে সাশ্রয় হবে।
বদলে ফেলুন খাদ্যাভ্যাস
যদি তেলে ভাজা জিনিস খাওয়ার অভ্যাস থাকে তো নিজে থেকেই তা বদলে নিতে পারেন। এর বদলে তাজা ফলের রস, দই, চিঁড়া খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আবার রোজার মাসে ইফতার পর্বটাকে ইচ্ছে করলেই সংক্ষিপ্ত করতে পারেন। ফলের রস বা শুকনো ফল খেয়েই সরাসরি রাতের খাবার খেয়ে ফেলতে পারেন। এতে বদহজম ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যাবে। রোজার মাসের জন্য পাঁচজনের পরিবারের একটি নমুনা খরচের তালিকা দেওয়া হলোঃ
পণ্য পরিমাণ
আটা ১৫ কেজি
বেসন সাড়ে ৩ কেজি
পেঁয়াজ ৮ কেজি
তেল ৫-৭ লিটার
চিনি ৫-৭ কেজি
ছোলা ১০-১২ কেজি
ডাল ৫-৬ কেজি
একটি আদর্শ ডায়েট ইফতারির তালিকা
ফলের রস ১ গ্লাস
খেজুর ২টি
মৌসুমি ফল ১টি
দই ২০০-২৫০ গ্রাম
চিঁড়া মাঝারি মাপের ১ বাটি
ছোলা অল্প পরিমাণে
লক্ষ রাখুন
— ভাজাভুজি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
— মাসের বাজারটা রমজান মাস শুরুর আগেই সেরে ফেলুন।
— বাজার তালিকায় প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো খুচরা করে না কিনে একবারে কিনে ফেলুন।
— দীর্ঘদিন রাখতে হবে এ ধরনের পণ্য খুব ভালোভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুন।
নাজমুল হাসান
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৮, ২০০৯
Leave a Reply