রেস্তোরায় যে মানুষ বেড়াতে কিংবা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যায় না এটা সবাই জানেন। কাজেই রেস্তোরাঁয় খেতে বসেও যদি আপনাকে একগাদা আদবকেতা মেনে চলতে বলা হয় তাহলে অনেকে কিছুটা হলেও রেগে যেতে পারেন। তবে কথায় বলে, সব পরিবেশ আর পরিস্থিতিরই নাকি আলাদা একটা ‘চাল’ আছে। তাছাড়া একবার ভেবেই দেখুন না। আপনি খেতে বসেছেন কোনো চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। নীরব আলো আঁধারীর মাঝে চলছে টুংটাং শব্দ আর সুস্বাদু সব খাওয়া দাওয়া। এর মধ্যে পাশের টেবিলে কেউ যদি খাওয়া ফেলে উচ্চ স্বরে তার সেলফোনে ব্যবসায়িক কোনো আলাপ চালিয়ে যেতে থাকে তাহলে তিনি নিশ্চয়ই আপনার বিরক্তের কারণ হবেন। কাজেই আপনিও যেন খেতে বসে অন্য কারো বিরক্তির কারণ না হোন সেটি নিশ্চিত করতেই ঝটপট পড়ে নিন আমাদের দেয়া এই রেচ্চোরাঁ ম্যানার্সগুলো –
০ চার-পাঁচজন বন্ধু কিংবা সহকর্মীর সাথে কোথাও খেতে গেলে আপনাদের হৈ হল্লা কিংবা আড্ডা যেন অন্যদের জন্য অস্বস্তির কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন
০ খেতে বসে হঠাৎ কোনো জরুরী ফোন এলে তাকে পরে কল করতে বলুন। অথবা টেবিল এর সবাইকে বলে বিনীতভাবে এক পাশে যেয়ে নীচু স্বরে কথা বলুন।
০ ওয়েটারের সাথে শালীনতা ও আদবকেতা বজায় রেখে কথা বলুন। কোনো অর্ডার সার্ভ করতে সমস্যা হলে প্রথমে তা বুঝিয়ে বলুন। তাতেও সমাধান না হলে রেস্তোরাঁ ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ করুন। তবে কখনোই ওয়েটারের সাথে হৈ-হট্টগোল করে পরিবেশের বারোটা বাজাবেন না।
০ নেহাত ঘরোয়া পার্টি হলে আগে আপনার পাশের জনকে খাবার তুলে দেয়াটাই ভদ্রতা।
০ এক টেবিলে অনেকজন একটা খাবার শেয়ার করলে প্রত্যেকে হাতের ডানদিকে খাবার পাস করবেন।
০ কোনো খাবার মুখে দেয়ার পর সেটি ফেলে দিতে হলে একটা চামচে করে প্লেটের এককোণায় বা ‘ওয়েস্টেজ’ ফেলার প্লেটে ফেলুন। চামচ দিয়ে খেতে খেতে কখনোই মুখ থেকে খাবার হাতে নেবেন না।
০ খাবার টেবিলে বসে কখনোই হাঁচি বা কাশি দেয়া শোভন নয়। তবে কোনো কারণে হঠাৎ হাঁচি-কাশি চলে এলে নাক বা মুখের সামনে একটি রুমাল বা টিস্যু দিয়ে হাঁচি-কাশি দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আর হাঁচি কিংবা কাশি যদি ক্রমাগত আসতে থাকে তাহলে ওয়াশ রুমে যেয়ে কফ পরিস্কার করে আসা উচিত।
০ যেসব রেস্তোরাঁয় আলাদাভাবে ন্যাপকিন সরবরাহ করা হয় সেসব রেস্তোরাঁয় ন্যাপকিন পায়ের উপর ভাজ করে রাখুন।
০ যতোটুকু খেতে পারবেন ঠিক ততোটুকুই প্লেটে উঠিয়ে নিন। অযথা বাড়তি খাবার নিয়ে প্লেটের মাঝে জমিয়ে রাখবেন না।
০ টেবিল চামচ, কাঁটা চামচ কিংবা ছুরি দিয়ে খাবার কেটে কেটে খাবার সময় তা যেন আপনার বা পাশের কারো গায়ে ছিটকে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
০ খেতে বসে কখনোই পা নাচাবেন না। সেই সাথে খাবার সময় যেন মুখ দিয়ে কোনো ধরণের বাজে শব্দ না হয় সেটির প্রতিও লক্ষ্য রাখবেন।
০ যেসব রেস্তোরাঁয় আগে বিল পরিশোধ করে টোকেন জমা দিয়ে খাবার নিতে হয় সেসব জায়গায় লাইন মেনে চলুন। একই কথা প্রযোজ্য বুফে’র ক্ষেত্রেও।
০ বুফে খাবার সময় যখন যেটি খাবেন ঠিক তখনই সেটি টেবিল থেকে সংগ্রহ করবেন। একবারে এপিটাইজার, মেইন ডিশ এবং ডেজার্ট এনে নিজের সামনে জমিয়ে রাখা কখনোই স্মার্টনেসের পরিচায়ক নয়।
০ ওয়েটার বিল নিয়ে আসার পর তাকে দাঁড় করিয়ে রেখে কে বিল দেবে সেই প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবেন না। এছাড়া বিল নিয়ে অযথা কাড়াকাড়ি করাটাও দৃষ্টিকটু। কাজেই কয়েক বন্ধু মিলে খেতে গেলে বা কাউকে হঠাৎ করে রেস্তোরাঁয় আপ্যায়ন করলে বিল কে দেবে সেটি আগে থেকেই সমঝোতা করে রাখুন। একই ভাবে কয়েক বন্ধু মিলে চাঁদা তুলে খেতে গেলে আগে থেকেই একজনের কাছে তা জমা রাখবেন। কখনোই খাবার টেবিলে বসে এর-ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিল দেবেন না।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুলাই ১৪, ২০০৯
Leave a Reply