বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়। আসলেও তাই। শুধু বৃক্ষের নাম বলে কথা নয়, ফলের নামেও কিছু যায়-আসে না। পুষ্টিগুণই হচ্ছে আসল ব্যাপার। বৃক্ষ ও ফলের নাম, উভয় দিকের বিবেচনায় বেগুনের কপাল মন্দই বলা যায়। নামই যার ‘বেগুন’, তার আবার গুণ কি? বেগুন নিয়ে এ রকম মন্তব্য করেন অনেকেই। কিন্তু আসলেই কি বেগুনের কোনো গুণ নেই? প্রকৃতপক্ষে বেগুনেরও গুণ আছে। হতে পারে সেই পুষ্টিগুণ অন্য তরিতরকারির তুলনায় কম। বেগুন যে একেবারেই কাজে আসে না তা কিন্তু নয়।
প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যেপযোগী বেগুনে রয়েছে ০.৮ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১.৩ গ্রাম আঁশ, ৪২ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১.৮ গ্রাম আমিষ, ২.২ গ্রাম শর্করা, ২৮ মিগ্রা ক্যালসিয়াম, ০.৯ মিগ্রা লৌহ, ৮৫০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন (ভিটামিন-এ-এর প্রাক অবস্থা), ০.১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৮ মিগ্রা ভিটামিট বি-২, ৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি ইত্যাদি। শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন-এ-এর চাহিদা ৩০০-৪০০ মাইক্রোগ্রাম। বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা ৫৭৫-৭৫০ মাইক্রোগ্রাম। মাত্র ১০০ গ্রাম বেগুন থেকে সহজেই ভিটামিন-এ-এর সেই চাহিদা পূরণ করা যায়।
এছাড়া অন্যান্য সহায়ক পুষ্টি উপাদান তো রয়েছেই। অন্য তরিতরকারির তুলনায় বেগুনের দামও একটু কম। সেই বিচারে বেগুন কম দামে ভিটামিন-এ বরবরাহ করছে বলা যায়। তাছাড়া গ্রামগঞ্জে অধিকাংশ লোকই বেগুন পছন্দ করেন। কাজেই বেগুনের নামকে বিবেচনায় না রেখে পুষ্টিগুণের বিচারে বেগুন খাওয়াকে উৎসাহিত করা উচিত।
তবে বেগুনের একটি দুর্নাম হচ্ছে- এটি এ্যালার্জির উদ্রেক করে। এ কথাটিও পুরোপুরি ঠিক নয় এ কারণে যে, যেকোনো খাবারের প্রতি যে কারও এ্যালার্জি থাকতে পারে। এক্ষেত্রে শুধু বেগুনকে দোষ দিয়ে লাভ কি? তবে বেশিরভাগ লোকজনই বেগুন খায় বলে হয়ত বেগুনের এ্যালার্জিটা একটু বেশি চোখে পড়ে। যেমন- সবাই পানি পান করি বলে অসাবধানবশত পানিবাহিত রোগই সমাজে বেশি দেখা যায়। তবে বেগুনের প্রতি এ্যালার্জি থাকলে বেগুন খাবেন না। অন্য কোন খাবারের প্রতি কারও এ্যালার্জি থাকলে সেক্ষেত্রেও এই পরিহার নীতি প্রযোজন। কিন্তু এ্যালার্জি না থাকলে অকারণ ভয়ে বেগুন পরিহার করার যুক্তি নেই।
ডা. সজল আশফাক
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জুন ২৭, ২০০৯
Leave a Reply