স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কোনো খাদ্যই বহুদিন ঘরে রাখা যায় না। প্রাকৃতিক কারণেই তাতে পচন ধরে। সে জন্য প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ খাদ্য সংরক্ষণের জন্য নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতিতেও এসেছে নানা পরিবর্তন। প্রাচীন পদ্ধতিগুলোকে ছাপিয়ে সেগুলোর জায়গা করে নিয়েছে রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ। আধুনিক জীবনে ঘরে একটা ফ্রিজ থাকা বিলাসিতা নয়, বরং নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালির অংশ। ব্যস্ত গৃহিণীরা মাসের বা সপ্তাহের বাজার করে সহজেই ফ্রিজের ওপর নির্ভর করতে পারছেন। বাজার থেকে খাদ্যদ্রব্য কিনে শুধু ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলেই হবে না, এর গুণগত মান ও পুষ্টি যেন ঠিক থাকে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি।
এ প্রসঙ্গে নানা পরামর্শ দিয়েছেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাফিকা সুলতানা। তিনি জানান, যেকোনো খাদ্যই টাটকা খাওয়া উচিত। এতে যে পুষ্টিগুণ থাকে, তা ফ্রিজে সংরক্ষিত খাদ্যে পাওয়া যায় না। এই ব্যস্ত নগরজীবনে বেশির ভাগ মানুষেরই প্রতিদিন বাজার করার সময় হয় না। তাই ফ্রিজের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশের খুব কম বাসায়ই আলাদা ডিপ ফ্রিজ আছে। সাধারণ রেফ্রিজারেটরে যে ডিপ ফ্রিজ থাকে, তাতেই খাদ্য সংরক্ষণ করা যায়। ফ্রিজে একেক খাবার একেকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। মাছ, মাংস, ফল, রান্না করা খাবার-সবই ভিন্নভাবে রাখতে হবে।
ফল সংরক্ষণঃ ফল পলিথিনে মুড়ে রাখলে ভালো থাকে। তবে যেসব ফলে আঁটি থাকে, সেগুলোর আঁটি বের করে ডিপ ফ্রিজে রাখলে অনেক দিন ভালো থাকে।
কাগজের প্যাকেটে মুড়িয়ে রাখলে কলা ভালো থাকে।
শাকসবজি সংরক্ষণঃ শাকসবজি সাধারণত এক সপ্তাহের বেশি ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। সবজি দু-তিন মিনিট ফুটন্ত পানিতে ভাপিয়ে নিতে হবে। পরে হিমশীতল পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে, পানি ঝরিয়ে বায়ুশূন্য পলিথিন ব্যাগে মুড়িয়ে রাখলে অনেক দিন তা ভালো থাকে।
এ ছাড়া যেসব শাকসবজির মূল আছে, তা কেটে ফেলতে হবে। তারপর পানি ঝরিয়ে পলিথিনে রাখতে হবে।
কাঁচা মরিচের বোঁটা ফেলে দিয়ে পলিথিনে মুড়িয়ে ফ্রিজে রাখলে তাতে সহজে পচন ধরে না।
মাছ-মাংস সংরক্ষণঃ মাংস পরিষ্কার করে চর্বি ফেলে দিয়ে হালকাভাবে পলিথিনে মুড়িয়ে ডিপ ফ্রিজে রাখতে হবে।
মাছের ভেতরের ময়লা ও চর্বি ফেলে দিয়ে আঁইশসহ পলিথিনের মোড়কে রাখতে হবে। মাছের ক্ষেত্রে মোড়কের মুখ শক্ত করে মুড়িয়ে রাখলে কটু গন্ধ হয় না।
দুধ ও রান্না করা খাবার সংরক্ষণঃ দুধ সাধারণত প্লাস্টিকের বোতলে বা পলিথিনের প্যাকেটে রাখা উচিত।
‘রান্না করা খাদ্য প্লাস্টিকের বাক্সে না রেখে স্টেইনলেস স্টিল বা রুপার পাত্রে রাখলে তা ভালো থাকে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, ফ্রিজে রাখা খাদ্য যেন সব সময়ই ঢাকা থাকে, যাতে এক খাবারের গন্ধ আরেক খাবারে না যায়।’ বলেন রাফিকা সুলতানা।
অনেক সময় ডিপ ফ্রিজে মাছ-মাংসের সঙ্গে বরফ, ফলের রস, সস ইত্যাদি রাখা হয়। সে ক্ষেত্রে এগুলো ঢাকনাযুক্ত বাক্সে রেখে ভালোভাবে মুখ বন্ধ করতে হবে।
ফ্রিজে পরিষ্কার বোতলে পানি রাখা উচিত। এ ছাড়া সেদ্ধ ডিম, কাস্টার্ড, চর্বিজাতীয় খাদ্য ঢাকনাসহ পাত্রে রাখা উচিত। তবে অবশ্যই অনেক দিন রাখা উচিত নয়। এতে খাদ্যের গুণগত মান ও পুষ্টি কমে যায়।
মনে রাখতে হবে
–ফ্রিজে রাখার আগে খাদ্যবস্তুকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।
–সঠিকভাবে সংরক্ষণের জন্য খাদ্যবস্তু সতর্কতার সঙ্গে বাছাই করতে হবে। অযথা নাড়াচাড়া করাও ঠিক নয়।
–শাকসবজি ও ফল ফ্রিজের পেছনের দিকে রাখা উচিত নয়। কারণ, এগুলোর পানি জমে খাদ্য নরম হয়ে যায়।
–ফ্রিজে খাদ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এর সঠিক তাপমাত্রার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
–ফ্রিজ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২১, ২০০৮
Leave a Reply