মুটিয়ে যাবার ভয় অনেকেরই থাকে। আর এই ভয়কে জয় করে একটা ফিট স্বাস্থ্য পেতে সচেষ্ট থাকেন কমবেশি সবাই। এজন্য কেউ জিমে ছোটেন আবার কেউবা কম খেয়ে দিন গুজরান করেন। যদিও পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে কার্যকর ডায়েট চার্ট কমিয়ে দিতে পারে মেদ ভাবনা। এই ফিচারে তুলে ধরা হলো মেদ কমানোর একটি ডায়েট চার্ট।
ডায়েট চার্টের পয়লা দিন
খাদ্যের প্রসঙ্গে পরে আসি। আগে বলি মনের কথা। এতোদিন যারা বেশ মজা করে তাড়িয়ে তাড়িয়ে রাজ্যের খাবার খেয়েছেন প্রথম দিনে তাদের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা হবে মনের সাথে যুদ্ধ। তবে এই যুদ্ধে যতোই কান্ত হয়ে পড়ুন না কেন প্রথম দিনে ফল ছাড়া আর কোনো খাদ্য সামগ্রীর দিকে কিন্তু ভুলেও হাত বাড়ানো যাবে না।
আবার মেদভুড়ির বন্ধু বলে ফলের এই তালিকাতে কোনোক্রমেই রাখা চলবে না কলাকে। এছাড়া যেসব ফলে পানির পরিমাণ বেশি যেমন তরমুজ, আম, পেপে, কমলা, আনারস প্রভৃতি যতোটা সম্ভব বেশি খেতে হবে। অন্যান্য ফল এবং ফলের রসও খাওয়া যাবে। তবে ডাবের পানিতে গলা ভেজানো যাবে না।
দিন নম্বর টু
ভাত-মাছ-মাংসের জন্য প্রাণ কাঁদলেও ওমুখো হওয়া যাবে না। আর সেই অভাব পূরণ করতে খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে সবজি। ভাত ছাড়া সবজি খেতে বলায় আমাদের পাগল ঠাওড়াতে পারেন। কিন্তু কি করবেন বলুন। পুষ্টি বিশেষজ্ঞ আর ডায়েট বিষয়ক বই-পুঁথিও যে একই কথা বলছে।
সে যাই হোক, দুঃখ বাদ দিয়ে বেশি বেশি সবজি খান। লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ডাঁটা, বরবটি, করোলা, কাঁচা পেপে, টমেটো, শসা থেকে শুরু করে যতো ধরণের সবজি বাজারে পাওয়া যায় তার সব পদই চেখে দেখতে পারেন এদিন। সেই সাথে পানি খান প্রচুর পরিমাণে।
তৃতীয় দিনের কথা
প্রথম দিন ফল খেয়েছিলেন। দ্বিতীয় দিন খেয়েছিলেন সবজি। আর আজ খাবেন ফল ও সবজি দু’টোই। কি একটু হলেও নিশ্চয়ই মন ভাল লাগছে। তবে এ আনন্দে যতো ধরণের ফল আর সবজি-ই উদরস্থ করুন না কেন ভুলেও হাত বাড়াবেন না কলা কিংবা আলুর দিকে। পানির সাথে বন্ধুত্বটা তৃতীয় দিনে আরো বাড়ান। সেই সাথে স্বাদে বৈচিত্র্য আনতে চেখে দেখতে পারেন ভেজিটেবল স্যুপ। এই স্যুপে সামান্য তেল দেয়া যেতে পারে, কিন্তু মসলা নয় মোটেও।
চার নম্বর দিন
সবকিছু ঠিক থাকলে তৃতীয় দিনের শুরুতেই শরীরের অতিরিক্ত মেদে ভাঙ্গন ধরবার কথা। কিন্তু শরীর যেন হঠাৎ করেই ভেঙ্গে না পড়ে তাই চতূর্থ দিনে মেদের কথা ভুলে কিছুটা পুষ্টির কথাও ভাবতে হবে। আর এটা ভাবতে গিয়েই কলা খেতে হবে। হ্যাঁ, এতোদিন ধরে যেই ডায়েট চার্টের সাথে কলার সাপে-নেউলে সম্পর্ক চলছিল সেই কলাই আজ আপনাকে খেতে বলছেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা। তবে কলাভক্ত খাদকেরা আবার এই আনন্দে ডজনের পর ডজন কলা সাবার করে দেবেন না যেন। খুব বেশি ইচ্ছে হলে বড়জোর ২ হালি কলা খেতে পারেন। সেই সাথে খেতে হবে দুধ; কমপে তিন গ্লাস।
পঞ্চম দিনের খাবার
আজ আপনি গরুর মাংস খেতে পারবেন। চাই কি চেখে দেখা যাবে মুরগীর মাংস ও। ভাবছেন রসিকতা করছি। উহুঁ মোটেও নয়। সত্যি সত্যিই খানিকটা গরু কিংবা মুরগীর মাংস খেতে পারবেন ডায়েট চার্টের পঞ্চম দিনে। তবে শুধু শুধু মাংস না খেয়ে সাথে টমেটো কিংবা লাউ, কুমড়া দিয়ে রেঁধে খাবেন। মাংস রান্নার ক্ষেত্রে তেল-মসলা অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। এছাড়া মাংস খাবার সময় পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। পানিও খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে।
ষষ্ঠ দিবসের ভাবনা
বেশ, বেশ, বেশ। আগের পাঁচদিন যদি সুবোধ বালক কিংবা বালিকার মতো সব পরামর্শ মেনে থাকেন তবে ষষ্ঠ দিনে পুরস্কার হিসেবে আপনি খেতে পারবেন সবজি এবং মাংস। তাও মেপে টেপে নয়, একেবারে উদরপূর্তি করে। অর্থাৎ এ দিন আপনার যতো খুশি মাংস ও সবজি খেতে পারবেন। তবে এই আনন্দে রুটিন মাফিক পানি খাবার কথা ভুলবেন না।
আজ শেষ (সপ্তম) দিন
আজ মনের আনন্দে খেতে পারবেন ফ্রুট জুস, সবজি ও ভাত। আহ! সবজি দিয়ে ভাত মেখে খাবার পর যদি দেখেন শরীরের ওজনটাও খানিকটা কমেছে তবে আনন্দের মাত্রাটা ষোলআনা হতে বাধ্য। সাধারণ হিসেবে সাতদিনের ডায়েট চার্টে আপনার ওজন কমবার কথা প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ কেজি। কিন্তু তাই বলে আবার ডায়েট চার্ট শেষ করবার আনন্দে তৎক্ষনাৎ গপাগপ বহুকিছু খেয়ে ফেলবেন না যেন। বরং ধীরে চলো নীতিতে পরিমাণমতো খাবার পথেই চলতে থাকুন। আর বাই-বাই বলুন মেদকে।
মনে রাখুন
১. সাতদিনে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। প্রতিদিন কমপে আট থেকে দশ গ্লাসতো বটেই।
২. ভুলেও অ্যালকোহলের ত্রি-সীমায় ঘেরা যাবে না।
৩. চা-কফি খেলেও তা খেতে হবে দুধ এবং চিনি ছাড়া।
৪. সপ্তম দিনের আগে কোনোভাবেই কোনো ফ্রুট জুস খাওয়া যাবে না।
৫. ডায়েট চার্ট ফলো করবার পাশাপাশি হালকা পরিশ্রমের কাজও চালিয়ে যান।
রওশন আরা
এই ডায়েট চাট কি শুধু এক সপ্তাহ পালন করতে হবে ,নাকি সারা জীবন ? জানালে উপকৃত হতাম।
bindu
কি করে শরীরের অতিরিক্ত মেদ দূর করতে পারি?