কড়িকাহিনি এক সময় বাংলায় লেনদেন হতো কড়ি দিয়ে। কড়ির প্রচলন ও তার হারিয়ে যাওয়ার নানা গল্প শোনাচ্ছেন মাহবুব আলম
কড়ি। সে কালের লেনদেনের নিম্নতম মুদ্রামানের প্রতীক। শব্দটি হিন্দি ‘কৌড়ির’ পরিবর্তিত রূপ। সংস্কৃতে ‘কপর্দ’ অথবা ‘কপর্দক’। ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’, ‘হিসাবের কড়ি বাঘে খায় না’, ‘গাঁটের কড়ি’—একদা বহুল জনচল এহেন শব্দবন্ধের অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে বাংলার সমাজে, অর্থনীতিতে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে কড়ির ভূমিকা ছিল বিশাল। তখন বাংলার সর্বত্রই কড়ি দিয়ে কেনাবেচা হতো। অথচ আজ সে কড়ির কানা কড়িও মূল্য নেই।
মৃত সামুদ্রিক প্রাণীর শক্ত খোলস হলো কড়ি। বিদেশ থেকে আমদানি করা জিনিসটি যে কখন হাত ফেরতা হতে হতে বাংলার আর্থিক ও সামাজিক জীবনের অস্থিমজ্জায় মিশে গিয়ে কাব্য, সাহিত্য আর প্রবচনের অন্দরমহলে শক্ত ঠাঁই খুঁজে পেয়েছিল সে ইতিহাস আজ বলা কঠিন। এই চকচকে মনোহর বস্তুটি সাগর পেরিয়ে কবে মালদ্বীপ থেকে চালের বিনিময়ে জাহাজ বোঝাই করে বাংলায় নিয়ে আসা শুরু হলো তার তথ্যনির্ভর ইতিহাস এখনো আমাদের অজানা। একইভাবে অজানা কখন এবং কীভাবে বাংলায় প্রচলিত মুদ্রার সবচেয়ে নিচু ধাপের সহযোগী মুদ্রা হিসেবে কড়ির প্রচলন হয়েছিল। আমাদের দেশে কড়ির ব্যবহার সুপ্রাচীন। মৌর্যযুগে সরকারি কর্মচারী ও কারিগরদের বেতন দেওয়া হতো কড়ির হিসাবে। নীহাররঞ্জন রায় তাঁর বাঙালির ইতিহাস, আদিপর্বে লিখেছেন, গুপ্তযুগ থেকে বাংলাদেশে মুদ্রার নিম্নতম মান ছিল কড়ি। অ্যাংলো-ভারতীয় শব্দ সংগ্রহের অভিধান হবসন জবসন (১৮৮৬)-এর মতে উনিশ শতকের প্রায় শেষ পর্যন্ত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সীমিত আকারে কড়ির প্রচলন টিকে ছিল। গুপ্ত আমলে ও সোনা-রুপা আর তামার মুদ্রার বহুল প্রচলন সত্ত্বেও কড়ির চল ছিল। ঐতিহাসিক মিনহাজউদ্দিন (১৩০০ শতক) বলেছেন, বিজয়ী তুর্কিরা বাংলাদেশে কোথাও রৌপ্য মুদ্রার প্রচলন দেখতে পাননি, খুচরা কেনাবেচায় কড়িই ব্যবহূত হতো। ‘লক্ষণ সেনের নিম্নতম দান ছিল এক লক্ষ কড়ি’। পনের শতকে সুলতান গিয়াসউদ্দীন আজম শাহের সময়ে গৌড় ভ্রমণকারী চীনা রাজদূত মা হুয়ান লিখেছেন, এখানে রুপার মুদ্রা চালু, তবে খুচরা কেনাকাটার জন্য কড়িই ব্যবহার হয়। ১৭৫০ খৃষ্টাব্দে ইংরেজ বণিকেরা দেখেছেন কলকাতা শহরে কর আদায় হয় কড়ি দিয়ে।
সোনার টাকা মোহর বা আশরফি নামে পরিচিত ছিল। সাধারণত বাজারে লেনদেনের কাজে ব্যবহূত হতো না মোহর। এগুলো রাজস্ব, উপঢৌকন, উপহার ও সঞ্চয়ের জন্য তৈরি করা হতো। ঐতিহাসিক খান মোহাম্মদ মহসীন মোহরকে যথার্থই আখ্যা দিয়েছেন ‘সখের মুদ্রা’ বা ‘ফ্যান্সি কয়েন’ হিসেবে। তার মতে রুপার সিক্কা টাকাই ছিল প্রকৃতপক্ষে বৃহত্ লেনদেনের বৈধ মুদ্রা। বাংলার রমরমা আন্তর্জাতিক বা বহির্বাণিজ্যে এই সিক্কা টাকার ওপরই গড়ে উঠেছিল। তামার মুদ্রা ‘দাম’ খুচরা কেনাবেচার জন্য চালু হয়েছিল। একটি সিক্কা টাকার বিনিময়ে ৪০টি দাম হাতে পাওয়া যেত। আঠারো শতকের শুরু থেকে বাংলার অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। এ সময়ে অস্ত্র নির্মাণে তামার ব্যবহার বেডে যাওয়ায় ‘দাম’ তৈরির জন্য তামায় টান পড়ে। ধীরে ধীরে তামার পয়সা বাজার থেকে হারিয়ে যায়। শূন্যস্থান দখল করে কড়ি। আঠার শতকে কড়ি পুরোপুরি তামার পয়সাকে বাজার থেকে উঠিয়ে দেয়। (কে এম মহসীন—এ বেঙ্গল ডিস্ট্রিক ইন ট্রানজিশন: মুর্শিদাবাদ ১৭৬৫-১৭৯৩, এশিয়াটি সোসাইটি অব বেঙ্গল)
ধাতব মুদ্রার সঙ্গে কড়ি পেরে উঠেছিল এর দুটি বৈশিষ্ট্যের জন্য। কড়ি ধাতব মুদ্রার মতো সহজে ক্ষয়ে যেত না। ধাতব মুদ্রায় ভেজাল দিতে খুব কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজনে হয় না। ওজনে একটু কম ধাতু দিলেও সহজে তা ধরা যায় না। কড়ির বেলায় এসব সমস্যা নেই। সোনা-রুপা তামার নানা ধরনের বিকল্প এবং জনপ্রিয় ব্যবহার ছিল—যেমন গয়নাগাটি, বাসনকোসন, যুদ্ধাস্ত্র—এসব তৈরিতে কড়ির কোনো বিশেষ ব্যবহার ছিল না। সব ধাতব মুদ্রাকেই জাল বা নকল করা সম্ভব, কড়ির ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই।
কড়ির মূল জোগানদার ছিল মালদ্বীপ। ভারত মহাসাগর মুখ্যত কড়ির প্রাচুর্যের জন্য বিখ্যাত। দীর্ঘদিন থেকেই মালদ্বীপ এই এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ কড়ি রপ্তানির কেন্দ্রবিন্দু। আরব বণিক সোলায়মান (৮৫১ খ্রি.) মালদ্বীপের কড়ি সংগ্রহের একটি সাশ্রয়ী এবং স্বল্পশ্রমের পদ্ধতি আবিষ্কারের কাহিনি শুনিয়েছেন। মালদ্বীপের অগভীর সমুদ্র উপকূলে নারকেলের পাতাসহ ডাল পানিতে চুবিয়ে রাখলে জীবন্ত সামুদ্রিক কড়ি ঝাঁকে ঝাঁকে সেই ডালে আশ্রয় নেয়। কিছুদিন পর কড়িসহ সেই ডাল ডাঙায় তুলে রোদে ফেলে রাখা হয় এরপর মৃত কড়ির দেহাবশেষ পচেগলে শুধু এর শক্ত খোলসা পড়ে থাকে। এই চকচকে শক্ত খোলসটিই ধুয়ে পরিষ্কার করে কড়ি হিসেবে নানা দেশে রপ্তানি করা হয়।
ইবনে বতুতা লিখেছেন, চালের বিনিময়ে বাংলায় কড়ি রপ্তানি হতো। সতের শতকে পাইরান্ড ডি লাডেন্স জাহাজডুবির শিকার হয়ে মালদ্বীপে দুই বছর আটকা পড়েছিলেন। তিনি বছরে ৩০ থেকে ৪০টি জাহাজকে শুধু কড়ি বোঝাই হয়ে বাংলার দিকে রওনা হতে দেখেছিলেন। আবুল ফজল জানাচ্ছেন, মোগল আমলে কোনো কোনো অঞ্চলে কড়ির মাধ্যমে খাজনা নেওয়া হতো। কোম্পানি আমলের প্রথম দিক পর্যন্ত রংপুর ও সিলেটে জেলার জমিদাররা পুরো খাজনাই কড়িতে আদায় করতে পারতেন।
১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট জেলার প্রথম কালেক্টর হিসেবে উইলিয়াম ম্যাকপিস থ্যাকরে যোগদান করেন। সে সময় সিলেটের রাজস্ব ছিল এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। জমিদারেরা কড়ি দিয়ে এই রাজস্ব আদায় করতেন। লিন্ডসেও লিখেছেন তাঁর সময়ে সিলেটের পুরো রাজস্বই কড়ি দিয়ে আদায় হতো। তত দিনে সিলেটের খাজনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আড়াই লাখ টাকায়। সে সময় পাঁচ হাজার ১২০টি কড়িতে এক টাকা পাওয়া যেত। লিন্ডসে আরও লিখেছেন এই বিপুলসংখ্যক কড়ি রাখার জন্য শহরে অনেক গুদাম ছিল। এক বিরাট নৌবহরের সাহায্যে এই কড়ি প্রতি বছর ঢাকায় পাঠানো হতো।
ঢাকায় পাঠানো কড়ি নিলামে বিক্রি করে রুপার টাকায় বদলে নেওয়া হতো। লিন্ডসে সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অবশেষে লিখছেন, ‘সুখের বিষয় যে এই প্রথা দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় নাই, সত্বরই তাহা উঠাইয়া দেওয়া হয়’।
তবে এ কথা বলে রাখা ভালো যে ইংরেজের চোখে খাজনা নির্ধারণের ভিত্তি ছিল অবশ্যই রুপার টাকা, কড়ি নয়। যেখানে কড়ি দিয়ে খাজনা আদায় করা হয়েছে, সেখানে খাজনা হিসেবে নির্ধারিত কড়ির হিসাব করা হতো রুপার টাকার সঙ্গে কড়ির সে সময়ের বিনিময় হারের ভিত্তিতে। ১৮০৪ সালে ফোর্ট উইলিয়াম জেলার কালেক্টরদের ৫২৮০টি কড়ির সমান ধরে খাজনা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান লিখেছেন, যারা কড়িতে কেনাবেচনা করত তারা আয়ও কড়িতেই করত—সোনা বা রুপার মুদ্রায় নয়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন প্রাক-মুসলিম বাংলায় কড়ির ব্যাপক ব্যবহারের কারণ সোনা ও রুপার টাকার দুষ্প্রাপ্যতা। তাদের দৃষ্টিতে এহেন পরিস্থিতির জন্য দায়ী ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যে আরবদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার দরুন উপমহাদেশে সোনা ও রুপার আমদানিতে ঘাটতি পড়ে। কিন্তু মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পরও কড়ির ব্যবহার কেন অক্ষুণ্ন ছিল? কেউ কেউ মনে করেন মধ্যযুগের বাংলায় সোনা ও রুপার পর্যাপ্ত সরবরাহ আবার শুরু হলেও বাঙালিরা চিরাচরিত অভ্যাস ও অন্ধ আনুগত্যের কারণে কড়ির ব্যবহার থেকে সরে আসেনি।
বাংলা থেকে কড়ি উঠে যাওয়ার মূলত দুটি কারণ গবেষকেরা খুঁজে পেয়েছেন (বাংলা ও ভারতে কড়ি, অর্নিবান বিশ্বাস, সুবর্ণরেখা)। ১. ১৭৬৫ সালে ইংরেজের দেওয়ানি লাভের পর রুপার সিক্কা টাকার তুলনায় কড়ির দাম কমে যাওয়ার ফলে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে কড়ির কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া; ২. কড়ির বিকল্প বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ইংরেজ কোম্পানির তামার পয়সা চালু করা। প্রথম কারণটি সম্পর্কে একটু বিস্তারিত বলা এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
বাংলা তথা ভারতে সোনা ও রুপা পাওয়া যেত সামান্য। সোনা ও রুপার প্রায় সবটাই আসত রপ্তানি বাণিজ্যের বিনিময়ে। বাংলায় বরাবরই আমদানির চেয়ে রপ্তানি ছিল বেশি। ফলে সোনা ও রুপার সরবরাহে কখনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। তবু বহির্বাণিজ্য মারফত প্রাপ্ত সোনা ও রুপার ওপরই মুদ্রার উত্পাদন বহুলাংশে নির্ভর করত।
ইংরেজসহ সব বিদেশি কোম্পানিগুলোকে এ দেশে পণ্য কিনে বিলেত ইউরোপে রপ্তানির খরচ মেটাতে বাংলায় প্রচুর রুপা আনতে হতো। কিন্তু ১৭৬৫ সালে বাংলার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর কোম্পানির হাতে প্রতিবছর এত টাকা উদ্বৃত্ত থাকত যে মূলধনের জন্য আর বিলেত থেকে রুপা বা রুপার টাকা আমদানি করতে হতো না।
এভাবে ধীরে ধীরে বাংলায় রুপার টাকা ও রুপার আমদানি কমতে শুরু করে এবং বাংলায় রুপার টাকার বিশাল ঘাটতি দেখা দেয়। নবাবি আমলেই রুপার টাকা আনার অনুপাতে কড়ির বিনিময়মূল্য কম ছিল। এখন কড়ির বিনিময়মূল্য আরও কমে যাওয়ায় কড়ি যে ক্রমাগত অকার্যকর হয়ে পড়েছে তা সহজেই বোধগম্য।
কড়ির দাম কমার চিত্রটি আরেকটু পরিষ্কার করা যেতে পারে কয়েকটি পরিসংখ্যান ব্যবহার করে। ১৭৪০ সালে দুই হাজার ৪০০টি কড়ি পাওয়া যেত একটি রুপার টাকা দিয়ে। কিন্তু ১৭৭১ সালে সেই একটি রূপার টাকা পেতেই চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার ২০০টি কড়ি গুণতে হতো। আমরা আগেই দেখেছি ১৮০৪ সালে একটি রুপার টাকার দাম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ২৮০টি কড়ি।
কড়ি হয়তো আরও কিছুদিন ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকত কিন্তু দেশের মুদ্রানীতির ওপর ইংরেজের নিরঙ্কুশ আধিপত্য কায়েমের ইচ্ছা ও মুদ্রা সংস্কারের দীর্ঘদিনের সযত্ন প্রয়াস কড়ির অন্তিম পর্বকে ত্বরান্বিত করল। ১৭৯০ সালে-কড়ির বিকল্প হিসেবে তামার পয়সা ও ‘আধলা’ (এক পয়সার অর্ধেক) চালু হলে কড়ির দিন ফুরানোর পালা দ্রুত এগিয়ে এল। আরও একটু পরে ‘পাই’ (এক পয়সার এক- তৃতীয়াংশ) ও ‘ছিদাম’ (এক পয়সার এক-চতুথাংশ) ইত্যাদি মুদ্রা এসে কড়িকে বাজার থেকে উত্খাতে নেমে পড়ল। ১৮০৭ সালে ইংরেজ কোম্পানি একটি কানুন জারি করে কড়িতে খাজনা নেওয়া বন্ধ করে দেয়। এর পরই কড়ির চাহিদা কমে গিয়ে দ্রুত দাম পড়তে শুরু করে। বিনিময় মাধ্যম হিসেবে কখন কড়ির ব্যবহার পুরোপুরি উঠে যায় তা বলা কঠিন। সন্দেহ নেই, বিশাল ইংরেজ রাজত্বে একই সময় সব জায়গা থেকে একসঙ্গে কড়ি উঠে যায়নি। ১৮৭০ সালে বন্তার এলাকায় কড়ির ব্যবহার থেকে এর প্রমাণ মেলে। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশাল দুর্বলতার কারণে বাংলার আনাচে-কানাচে ইংরেজ সরকারের কড়ি বাতিলের হুকুম দ্রুত পৌঁছাতে নাও পারে। হান্টার তাঁর থেকারেজ ইন ইন্ডিয়া গ্রন্থে লিখেছেন, ১৮২০ সালের পরও গ্রামীণ বাংলার কোনো কোনো জায়গায় কড়ি সীমিতভাবে শুধু দৈনন্দিন প্রয়োজনের তাগিদে ব্যবহূত হতে থাকে। কড়ি উঠে যাওয়ার পর এ দেশের জনসাধারাণের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল বা গ্রামীণ অর্থনীতিতে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কড়ি ব্যবসায়ী পোদ্দাররা যে কিছুটা আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। পূর্ণাঙ্গ তথ্যের অভাবে এবং আঞ্চলিক ইতিহাসের অসম্পূর্ণতার কারণে এ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখা অনুচিত হবে। তবে বরিশালের কবি মুন্সী আলিমুদ্দিন তাঁর লেখা দিল্লীর রাজাদের নাম (১৮৭৪)-এ রানী ভিক্টেরিয়ার প্রশস্তি গাইতে গিয়ে ইংরেজের সুশাসনের ফিরিস্তির মধ্যে কড়ির বদলে পয়সা চালু হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন: ‘শাসিতের সীমা বিচারের একশেষ/যাহার আমলে নাহি প্রজাদের ক্লেশ।/আছিল কডির চল দিল উঠাইয়া/পয়সা হাতে যথা সেই লইছে কিনিয়া।’ ছত্রগুলো পড়লে কী মনে হয়।
কড়ি উঠে যাওয়ায় দেশে খেদের জন্ম হয়েছিল? কে জানে! বাতিল হয়ে যাওয়া লাখ লাখ কড়ি যা ইংরেজ সরকার ও দেশের অগণিত মানুষের হাতে রয়ে গেল, তা কোয়ায় গেল? এই বিশাল কড়ির ভাণ্ডার কি আফ্রিকা বা অন্য কোথাও রপ্তানি হয়েছিল? এসব প্রশ্নের জবাব এখনো অধরা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০২, ২০১০
Leave a Reply