মুর্শিদি ভক্তিমূলক বাউল জারি সারি ।
গান গাই রচনা করতে তখন পারি ॥
আমাদের গ্রামে আসলেন বাউল একজন।
গান শুনে আকৃষ্ট হলেন গ্রামবাসীগণ ॥
ভালোবেসে বাউলকে কেউ চায় না ছাড়িতে।
আসর হলো ধলআশ্রম চৌধুরী বাড়িতে ॥
প্রতিদ্বন্দ্বী বাউল ছিলেন মান উল্লা নাম।
ছাতক থানায় বাড়ি আছিনপুর গ্রাম ॥
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বুঝে নিলাম ফল ।
ভাব দিয়ে গাইতে পারেন রচনায় দুর্বল ॥
পরে আরও দুই বাউলের হলো আগমন।
ভাটিপাড়ার কামাল উদ্দিন, সঙ্গে আরেকজন ॥
গ্রামের সবাই আমাকে খবর করে নিলেন।
গ্রামের মোড়ল-বাড়িতে আসর করে দিলেন ॥
দুইজনের সঙ্গে তখন দুই রাত্র গাইলাম।
আসরে মোটামুটি আনন্দ পাইলাম ॥
বাউল কামালের গান ভালো গেল শোনা।
দ্বিতীয়জনের বাড়ি ছিল নেত্রকোনা ॥
ভক্তিমূলক মনোভাব সেই লোকটির ছিল।
উস্তাদ তার রশিদ উদ্দিন পরিচয় দিল ॥
এই নাম পূর্ব থেকেই ছিল আমার জানা।
বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন বাড়ি নেত্রকোনা ॥
রশিদ উদ্দিনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম।
দেখা করিতে মনে উদ্যোগ নিলাম ॥
নেত্রকোনার অন্তর্গত বাইশ চাপরা গ্রাম।
এই গ্রামে জন্ম সাধক রশিদ উদ্দিন নাম ॥
দেখা পেয়ে আনন্দে বিভোর হইলাম ।
শ্রদ্ধাভরে উস্তাদের বাড়িতে রইলাম ॥
তিনিও ভালোবেসে আমাকে ছাড়েন না।
বার্ধক্য এসেছে গান গাইতে পারেন না ॥
বিভিন্ন আলোচনা করেন যখন বসে।
ভক্তগণ শান্তি পায় শান্ত মধুর রসে ॥
আশীর্বাদ পাইতে পদে আশ্রয় নিলাম।
উস্তাদের কাছে মাত্র পাঁচদিন ছিলাম ॥
উস্তাদ বললেন, চেষ্টা কর নিয়ে ভালোবাসা।
আশীর্বাদ করি তোমার পূর্ণ হবে আশা ॥
উস্তাদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
ময়মনসিংহ ভ্রমণে চারমাস ছিলাম ॥
ময়মনসিংহে বাউল তখন ছিল বিস্তর।
রাত্রে নয় দিনের বেলা বসিত আসর ॥
এই পরিবেশে তখন মিশে পড়লাম।
বিভিন্ন গানের আসরে যোগদান করলাম ॥
তৈয়ব আলী, মিরাজ আলী, আবদুস সাত্তার।
খেলু মিয়া, দুলু মিয়া, মজিদ তালুকদার ॥
নীলগঞ্জের ফজলুর রহমান, আবেদ, আলাল।
উহাদের পূর্বসূরি রশিদ-জালাল ॥
বেশ কয়েকটা আসরে গান তখন গাইলাম।
ভাবের সাগর উকিল মুন্সির দেখা পাইলাম ॥
থানা জামালগঞ্জ লক্ষ্মীপুর গ্রামেতে।
আসর হলো উকিল মুন্সি সাহেবের সাথে ॥
ময়মনসিংহ জেলাতে বাউল যারা ছিল।
তারা আমায় ভালোবেসে কাছে টেনে নিল ॥
বাউলগণ বাউল গান গায় পঞ্চরসে।
গ্রাম গঞ্জে প্রচুর গানের আসর বসে ॥
আজমিরীগঞ্জে আসর গাওয়ার দায়িত্ব নিলাম ।
আমি এবং আবদুস সাত্তার প্রথম ছিলাম ॥
পরে আসলেন নীলগঞ্জের ফজলুর রহমান।
আসলেন উস্তাদ রশিদ উদ্দিন অতি গুণবান ॥
রশিদ উদ্দিন আজমিরীগজ্ঞে আসিলেন যখন।
নিজে কোনো গান বাদ্য করেন না তখন ॥
ফজলুর রহমানের উস্তাদ রশিদ উদ্দিন।
আমাকেও শিষ্য বললেন, জেনে দীনহীন ॥
তখন আজমিরীগঞ্জে সাত দিন ছিলেন।
আমাদেরে অনেক উপদেশ দিলেন ॥
উস্তাদ বলে মান্য করি আশীর্বাদ চাই।
রশিদ উদ্দিন আজ এই পৃথিবীতে নাই ॥
বাউলগণ বাউল গানে নূতন রূপ দিল।
এলাকার জনগণ তা গ্রহণ করে নিল ॥
যে কোনো এক বিষয়কে সামনে তুলে ধরে।
গাইতে হয় দুই জনে প্রশ্ন উত্তর করে ॥
বাউল প্রতিযোগিতা কবিগানের ধারা।
এলাকার জনগণ নাম দিল মালজোড়া ॥
বাউলগণ রঙ্গ রসে গায় বাউল গান।
শুনতে আসে ধনী-গরিব হিন্দু-মুসলমান ॥
কথাপ্রধান বাউল গান বুঝতে সবাই পারে।
প্রাণ খুলে গায় যেজনে ভালোবাসে তারে ॥
দেখা গেল বাউল গান সবাই আদর করে।
আসর হয় গ্রাম-গঞ্জ শহর ও বন্দরে ॥
সময়ে যখন ঢাকা শহরে যাইতাম।
খালেক আর রজব দেওয়ানের দেখা পাইতাম ॥
এই সমস্ত বাউলদের সঙ্গে গান গেয়েছি।
মানুষের ভালোবাসা আনন্দ পেয়েছি ॥
ছিল না টাকা নিয়ে দর কষাকষি।
টাকা নয় ভালোবাসা পেয়েছি বেশি ॥
পূর্ববর্তী:
« মুর্শিদ মৌলা বক্স মুন্সি, দয়ার ঠাকুর
« মুর্শিদ মৌলা বক্স মুন্সি, দয়ার ঠাকুর
পরবর্তী:
মুর্শিদের কাছে আমি কেন যাই »
মুর্শিদের কাছে আমি কেন যাই »
Leave a Reply