ডেভিড কফ বঙ্গদেশের ইতিহাস চর্চায় যাঁরা সবচেয়ে খ্যাতি লাভ করেছেন, বিশেষ করে উনিশ শতকের বঙ্গদেশের ইতিহাস বিষয়ে, তার মধ্যে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন মার্কিন অধ্যাপক ডেভিড কফ। ১২ মার্চ তাঁর ৮০ বছর পূর্ণ হলো। প্রথম মহাযুদ্ধে সময়ে তাঁর পিতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান ভিয়েনা থেকে। আর মাতা আসেন পোল্যান্ড থেকে। সেখানেই তাঁদের পরিচয় এবং বিবাহ। ডেভিড কফের জন্ম নিউ জার্সিতে, ১৯৩০ সালে। স্নাতক হন নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। গত শতকের ষাটের দশকে আমেরিকায় যখন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ইতিহাস চর্চায় জোয়ার এসেছিল, তখন স্টিফেন হের অধীনে তিনি পিএইচডি করেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে—বিষয়বস্তু ‘বঙ্গীয় রেনেসন্স এবং তাতে ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ্যা-বিশারদদের অবদান’। ব্রিটিশ অরিয়েন্টালইজম অ্যান্ড দ্য বেঙ্গল রেনেসন্স নামে এই গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। পরের বছর মার্কিন ইতিহাস সমিতি তাঁর এই অসামান্য গবেষণার জন্য ওয়াটুমাল পুরস্কার দেয়।
তাঁর এই গবেষণার ফলে জানা যায়, স্যার উইলিয়াম জোনসের নেতৃত্বে কলকাতায় কীভাবে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয়। আর এই প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রাচ্যবিদ্যা-বিশারদেরা আবিষ্কার করেন ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী, তুলনামূল ভাষাতত্ত্ব, ভূগোল, খনিজ পদার্থ থেকে আরম্ভ করে গাছগাছড়া ও ফল-ফুলের অজানা তথ্য। তা ছাড়া, ডেভিড কফের গবেষণা থেকে জানা যায়, এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বছর পনেরো পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে উইলিয়াম কেরির নেতৃত্বে কীভাবে শুরু হয় বাংলা ভাষার চর্চা এবং গড়ে ওঠে সমগ্র এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম ছাপাখানা। সেই ছাপাখানার অগ্রযাত্রা ও বাংলা পত্রপত্রিকার প্রকাশনার খবর। এমনকি, প্রাচ্যবিদ্যা-বিশারদ প্রিন্সসেপ কী করে ব্রাহ্মীলিপি পাঠোদ্ধার করেন এবং বিস্মৃত সম্রাট অশোকের ইতিহাস তুলে ধরেন পণ্ডিতদের সামনে। ডেভিড কফ এই প্রাচ্যবিদ্যা-বিশারদদের অজ্ঞাত তথ্য প্রথমবারের মতো বিস্তারিতভাবে উদ্ধার করেন এবং তাঁদের অবদানে কীভাবে বঙ্গীয় রেনেসন্সের সূচনা হয়, তা প্রকাশ করেন। মোট কথা, তাঁর গবেষণার ফলে বঙ্গীয় রেনেসন্সের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
বঙ্গীয় রেনেসন্সের একটা অসাধারণ ফল হলো ব্রাহ্মসমাজের জন্ম ও বিকাশ। সেই ব্রাহ্মসমাজ আবার কীভাবে বঙ্গীয় রেনেসন্সকে আরও এগিয়ে দেয় এবং আধুনিকতার আলো জ্বেলে দেয় বাঙালি তথা ভারতীয়দের মননে, সেটাও ছিল প্রায় অজ্ঞাত বিষয়। ব্রাহ্মসমাজের বর্ণনামূলক ইতিহাস শিবনাথ শাস্ত্রীসহ আরও কেউ কেউ লিখেছেন। কিন্তু ব্রাহ্মসমাজ ও রেনেসন্সের আলোক কীভাবে বঙ্গদেশ ও ভারতবর্ষের আধুনিক মননশীলতাকে লালন এবং কতটা প্রভাবিত করেছিল, তার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। বঙ্গদেশ সম্পর্কে তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ দ্য ব্রাহ্ম সমাজ অ্যান্ড দ্য শেইপিং অব দ্য মডার্ন ইন্ডিয়ান মাইন্ড। বঙ্গদেশের ইতিহাস চর্চায় এ গ্রন্থ এক অসাধারণ সংযোজন। রেনেসন্সের ওপর শফিউদ্দীন জোয়ারদারের সঙ্গে তাঁর সম্পাদিত একটি গ্রন্থের কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে—রিফ্লেকশনস অন দ্য বেঙ্গল রেনেসেন্স।
রেনেসন্স ছাড়া, তাঁর বহু লেখারই বিষয়বস্তু হলো স্বরূপের সংকট। ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কিত তাঁর গ্রন্থের মধ্যেও হিন্দুদের ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণে স্বরূপের সংকট কীভাবে কাজ করেছে, তার ব্যাখ্যা আছে—যদিও এই বিশ্লেষণের সঙ্গে অনেক সমালোচকই একমত হতে পারেননি। স্বরূপের সংকট সম্পর্কে তাঁর সম্পাদিত একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো বেঙ্গলি রিজিয়নাল আইডেনটিটি।
১৯৮০ সালে ব্রাহ্মসমাজ গ্রন্থটি প্রকাশের আগে থেকেই তিনি কাজ শুরু করেন বিশ্ব ইতিহাসের বিভিন্ন দিক নিয়ে। বিভিন্ন অঞ্চলের সভ্যতার তুলনামূলক ইতিহাস আর গণহত্যার বিষয়ে। তুলনামূলক সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে তিনি আরও দুজনের সঙ্গে দুই খণ্ডে যে অসাধারণ মূল্যবান গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন, তার শিরোনাম হলো: দ্য কম্পারেটিভ হিস্টরি অব সিভিলাইজেশন ইন এশিয়া।
গণহত্যা সম্পর্কেও তাঁর একাধিক গ্রন্থ আছে। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো দ্য হলোকস্ট অ্যান্ড স্ট্র্যাটিজিক বোম্বিং: জেনোসাইড অ্যান্ড টোটাল ওয়র ইন দ্য টুয়েন্টিএথ সেঞ্চুরি (১৯৯৫)। হিটলারের ইহুদি-নিধন অর্থাত্ হলোকস্ট নিয়ে শত শত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু এ গ্রন্থে ডেভিড কফ এবং তাঁর সহলেখক বিষয়টাকে দেখেছেন একটা ব্যাপক প্রেক্ষাপটে। এ যে আসলে গণহত্যা এবং অন্যান্য এলাকায়ও এ ধরনের গণহত্যার মধ্যে একটা প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া যায়, তা-ই হলো এ গ্রন্থের মূল বিষয়। তথ্যসমৃদ্ধ এই গ্রন্থটি ইতিহাসে আগ্রহী সবার পড়া উচিত। এর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধেরও আলোচনা আছে। ভারতবর্ষের ইতিহাস বিষয়ে তাঁর আর-একটি গ্রন্থ আছে, যার নাম দি ইন্ডিয়ান ওয়ার্ল্ড (১৯৭৭)। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক জার্নালে লিখেছেন অর্ধশতাধিক প্রবন্ধ।
ডেভিড কফ কেবল ‘নিরস’ ইতিহাস লেখেননি। সৃজনশীলতারও স্বাক্ষর রেখেছেন দুটি উপন্যাস এবং দুটি কবিতার বইয়ে। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্ক্র্যাচেস অন দ্য মাইন্ড অব কালী। তবে এই উপন্যাস পড়লেও বোঝা যায় ইনি কোনো সাধারণ ঔপন্যাসিক নন, এঁর উপন্যাসের ফাঁকে ফাঁকে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার জাতীয়তাবাদ, যুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালের বিপ্লব, যার ফলে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাসটি পড়ার সৌভাগ্য এখনো হয়নি। কিন্তু এটি লিখেছিলেন তরুণ বয়সের রোম্যান্টিক ডেভিড কফ। পাণ্ডুলিপিটি সম্প্রতি খুঁজে পাওয়ার পর প্রকাশ করেন। তাঁর দুটি কবিতার বইয়ের মধ্যে একটি পুরস্কৃত হয়েছে।
২.
এই বিশিষ্ট ঐতিহাসিকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল কার্যকারণে। এবং পরিচয় যে হয়েছিল, তার জন্য আমার ভাগ্যকে আমি ধন্যবাদ জানাই। বাংলা ভাষায় ইতিহাস চর্চা যথার্থভাবে গড়ে ওঠেনি। বাঙালিরা সন-তারিখ এবং ঘটনার বিবরণ দিয়ে ইতিহাস লিখতে যতটা পারদর্শী এবং অভ্যস্ত, বিশ্লেষণাত্মক ইতিহাস লেখায় ততটা নন। প্রবীণতম ঐতিহাসিক থেকে আরম্ভ করে নবীনতম ঐতিহাসিক প্রায় সবার সম্পর্কেই এ কথা প্রযোজ্য।
স্বাধীনতাযুদ্ধের ঠিক পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ। সত্যিকার পাণ্ডিত্য এবং অমায়িকতাসহ তাঁর অনেক গুণ ছিল। এসব গুণ অন্যদেরও থাকে। কিন্তু তাঁর অসাধারণ যে-গুণটি ছিল, তা হলো তিনি ভবিষ্যদ্রষ্টা ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিদ্যা, বিশেষ করে ইতিহাস চর্চা করার প্রয়োজন, অথচ তার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান নেই, বিশেষ করে আদি এশিয়াটিক সোসাইটির মতো—এটা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সবার আগে। এ জন্য তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবিদ্যা চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যার নাম দিয়েছিলেন ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস)। তিনি অসাধারণ কিছু করতে চেয়েছিলেন। ফরাসি বিপ্লবী এবং সাহিত্যিক আন্দ্রে মার্লো—যিনি বৃদ্ধ হয়েও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চেয়েছিলেন—তাঁকে নিমন্ত্রণ করে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি দেওয়া যেমন। অন্য কেউ ভাবেননি। রবিশঙ্কর অথবা আলি আকবর খানও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিলেন, কিন্তু কেউ তাঁদের ডেকে সম্মান জানাননি।
সে যা-ই হোক, অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ যত দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, তখন নামকরা বিদেশি অধ্যাপকদের নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসা হতো। তাঁরা অস্থায়ী অধ্যাপক অথবা গবেষক হিসেবে কাজ করতেন। ইংরেজি বিভাগকেও তিনি উত্সাহ দিয়েছিলেন বিদেশ থেকে অধ্যাপক নিয়ে আসার জন্য। তাঁর সময়ে আইবিএস প্রখ্যাত যেসব পণ্ডিতকে নিয়ে আসে, তাঁদের একজন বঙ্গবিদ্যা-বিশারদ ডেভিড কফ—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনিসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক। এখন—২০১০ সালে যিনি ইমেরিটাস অধ্যাপক। ১৯৭৩ পর্যন্ত তাঁর যে-মহামূল্যবান গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল, সেটির কথা আগেই বলেছি—বঙ্গীয় রেনেসন্স এবং তাতে ব্রিটিশ প্রাচ্যবিদ্যা-বিশারদের অবদান। ওই একটি বই-ই, কিন্তু তা বঙ্গীয় রেনেসন্সের ইতিহাস চর্চায় বিশাল অবদান রেখেছিল। তাঁর এই খ্যাতি অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের জানা ছিল। তাঁকে তিনি রাজশাহীতে নিয়ে আসেন ’৭৫ সালের গোড়ায়—তিন মাসের জন্য।
তিনি আসার ঠিক পরই—দু-এক দিনের মধ্যে—তাঁকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাবে বসে থাকতে দেখি—একা। আমি কাছে গিয়ে বসে তাঁর সঙ্গে আলাপ করি। তাঁর লেখাপড়ার বিশেষ ক্ষেত্র উনিশ শতকের বঙ্গদেশ। আমারও। এখনো আমার ইংরেজি ভালো নয়। তখন ছিল আরও খারাপ। তা সত্ত্বেও আমাদের বন্ধুত্ব হতে দেরি হয়নি। হাসান আজিজুল হক, সনত্ সাহা, আলী আনোয়ার এবং অন্য বন্ধুদেরও তাঁর সঙ্গে পরে পরিচয় করিয়ে দিলাম। তারপর থেকে অতিথি-ভবনে তাঁর কক্ষে আমাদের আড্ডা বসত প্রায়ই।
আমি তখন পিএইচডি ডিগ্রি করার জন্য উনিশ শতকের বঙ্গদেশের সামাজিক ইতিহাস নিয়ে কাজ করছিলাম। অনেক দূরই এগিয়েছিলাম। যখন শুনলাম, তিনি আবার আগস্ট মাসে ফিরে আসবেন এক বছরের জন্য, তখন প্রস্তাব করলাম, অভিসন্দর্ভটা আমি তাঁর তত্ত্বাবধানে লিখতে পারি কি না। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। আমি বিষয়বস্তু হিসেবে নির্বাচন করলাম ‘হিন্দু সমাজ-সংস্কার সচেতনতার ইতিহাস এবং বাংলা নাট্যরচনায় তার প্রতিফলন’। পরের বছর সেই অভিসন্দর্ভ পরীক্ষার জন্য জমা দিই। সে কারণে, সরকারিভাবে আমি আইবিএস-এর পিএইচডি।
আমি সন-তারিখের ইতিহাস না-লিখে লিখেছিলাম সচেনতার ইতিহাস। এই ইতিহাস লেখার ধারণা পেয়েছিলাম আগের বছর তপন রায়চৌধুরীর আটটি সেমিনার থেকে। তাঁর মুখেই প্রথম শুনি ইতিহাসচর্চার বহুমুখিতার কথা—সন-তারিখের নয়, রাজা-বাদশার নয়—ভাবনার ইতিহাস, মননশীলতার ইতিহাস, সামাজিক ইতিহাস, সংস্কৃতির ইতিহাস, রোগ-ব্যাধি-ওষুধের ইতিহাস, উদ্বেগের ইতিহাস, প্রেমের ইতিহাস ইত্যাদি। নীরদ চৌধুরীর বাঙালি জীবনে রমণীতেও নতুন ধরনের ইতিহাসের স্বাদ পেয়েছিলাম।
ডেভিড কফের তত্ত্বাবধানে লেখার ফলে সাধারণ সামাজিক ইতিহাসকেই আমি একটি বিশেষ কোণ থেকে দেখতে পেরেছিলাম। তা ছাড়া, বর্ণনামূলক ইতিহাস নয়, লিখতে শিখেছিলাম কী করে তথ্যকে বিশ্লেষণ করে একটা ধারণাগত কাঠামোর (কনসেপটুয়াল ফ্রেমওয়ার্কের) মাধ্যমে পরিবেশন করা যায়। যেমন, মদ্যপাননিবারণী আন্দোলনের বিবরণ না-লিখে লেখা যায় স্থিতিশীল সমাজ গঠনের প্রয়াস। স্ত্রীশিক্ষা, বিধবাবিবাহ আন্দোলন, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ নিবারণ, পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন ইত্যাদির বিবরণ না-দিয়ে লেখা যায় স্ত্রীজাতির উন্নতির প্রতি সচেতনতা। এসব শিক্ষা ডেভিড কফের কাছ থেকেই পেয়েছিলাম।
রাজশাহীতে তাঁর সঙ্গে যে-বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, ৩৫ বছর পরও তা ভেঙে যায়নি। ইউরোপে এলে অনেক সময়ই তিনি আমাদের সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যান। অ্যামেরিকায় গেলে আমিও তাঁর ওখানে থেকে আসি। প্রসঙ্গত মনে পড়ল, ১৯৯০ সালে আমি কয়েকটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করি, সেই বক্তৃতা-সফর তিনিই আয়োজন করেছিলেন। সম্ভবত দেখাতে চেয়েছিলেন যে, তাঁর এক ছাত্র কত বড় মূর্খ! তা, আমি সেই অজ্ঞনতা ও মূর্খতার পরিচয় হাতে-কলমে দিয়ে এসেছিলাম। সেবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য টিকিট পাঠিয়েছিলেন তিনিই। তাঁর বাড়িতে একটা গ্যালারি আছে অনেকের ছবির, বেশির ভাগই জীবনে যেসব রমণীকে ভালোবেসেছিলেন, তাঁদের। তবে ব্যতিক্রমও আছে আপনজনদের কিছু ছবির। তার মধ্যে আমারও একটি ছবি দেখে অভিভূত হয়েছিলাম।
সে যা-ই হোক, যে-ঐতিহাসিক আমাদের কাছে বঙ্গীয় রেনেসন্সের উদ্ভব, ক্রমবিকাশ, রূপান্তর, এমনকি, ভাঁটার খবর দিয়েছেন, তার গভীর প্রভাব উদ্ঘাটন করেছেন এবং বঙ্গীয় রেনেসন্সের স্বরূপ বুঝতে আমাদের সাহায্য করেছেন, তাঁর ৮০ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে জানাই সশ্রদ্ধ অভিনন্দন।
গোলাম মুরশিদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১২, ২০১০
Leave a Reply