কার কথা কীভাবে বলব আমি?
বন থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঝরাপাতা—কারা তাতে লেখে আর কারাই বা পাঠক-পাঠিকা? কার কাছে বলা যায়—উত্তরের হাওয়া আসে গুপ্তচর হয়ে? সন্ধে থেকেই ওঁত্ পেতে বসে আছে আততায়ী ঘ্রাণ, চন্দ্রমল্লিকার! মনে হয়, ভাবনা সম্প্রচার কেন্দ্রের আজ রজতজয়ন্তী, তুমুল ভাবনাসূচি…ভাবনাকে দেখতে আসে বুদ্বুদ—দোস্তে দোস্তে জুয়া খেলে কয়েক সেকেন্ড; এর মধ্যেই ঝাঁপ দেয় গনগনে কবিতাখসড়া, এর মধ্যেই উঁকি দিয়ে যায় এক স্বর্ণমৃগয়া, নড়ে ওঠে ঝোপঝাড়, যেহেতু সতর্ক…পদবুলি বাইপাস করে ছুটতে থাকি ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে বনবনানির নির্জনতায় যেখানে এলাম—ওহ কী দুরবস্থা, নিজেই রচনা করেছি সুনিপুণ আত্মঘাতী ব্যাকরণ—আমি এই জঙ্গলের গাছে গাছে ফেরার কোনো চিহ্ন এঁকে রেখে আসিনি, কীভাবে ফিরব? আমি কি আজ অরণ্যমন্ত্রী? না, আমি এই বনবাস উদ্যাপন করছি না। হাওয়া-বাতাসের অর্কেস্ট্রায় এই মর্মর কম্পোজিশন আমার ভালো লাগছে না। আমি জানি, এক দিগ্বালিকা বড় হচ্ছে ঘরের মধ্যে, রাতে; বাইরে বসন্তপূর্ণিমা, বাইরে অঙ্গার বৈরাগীর গান—পাতা-টাতা নাই বনে, ভালোবাসি তোমারে, হরিণেরা কি জানে, ভালোবাসি তোমারে…? ঘরের মধ্যে বড় হচ্ছে বালিকা, বালিকারা বড় হচ্ছে কার জন্যে—এই প্রশ্ন কোনো প্রশ্নই হয়ে উঠত না, যদি, আমাদের কবিতার চেয়ে করে আসা লোকাচার, ধর্মাচার, তদীয় গ্রন্থাচার বড় না হতো! আমি জানি এক দিগ্বালিকা বড় হচ্ছে ঘোরের মধ্যে, ঘরের মধ্যে, জনপদে। সে বালিকা জানে তার ভালোবাসা সেই ডালিম, ধীরে ধীরে বড় হয়, লুব্ধক প্রেমিকের হাতে পড়লেই পাকা ডালিমটা ফেটে যায়, পাকা ডালিম ফাটা ডালিম ভেতরটা দেখিয়ে দেয়…আমি সেই ফলের রসময়ী দানাগুচ্ছ থেকে বহুদূরে এক স্বর্ণমৃগয়ার খপ্পরে পড়ে এই বনভূমির মধ্যে…আজ আর এই গ্রিন অভিবাস পছন্দ করছি না।
যদিও কোকিল ডাকছে, এতে পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে, স্বাভাবিকতার পতন ঘটছে। এ সময় কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে, এ সময় উত্তরের হাওয়া আসে গুপ্তচর হয়ে, দক্ষিণের বারান্দায় ওঁত্ পেতে বসে থাকে আততায়ী ঘ্রাণ, চন্দ্রমল্লিকার…মনে হয়, শিহরণ শব্দের অর্থ বুঝতেই দিগ্বালিকা আজ আর স্কুলে যাবে না, কিন্তু স্কুলে যাবার নাম করে সে ঠিকই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়বে…
শিহরণ, তোর কথা কীভাবে লিখব আমি?
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১২, ২০১০
Leave a Reply