আমিই তো তোমাকে বসুন্ধরার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছি
সোনাদাদের বাড়ির বাইরের দিকে পোড়ো চানঘর
তার ছাদের ওপর ডুমুর গাছের বাস
নগেন বলে একটা ছেলে একটা প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে
ভর্তি করছিল ডুমুর
সবে তখন বাচ্চা পেড়েছিল সাদা হলদে বেড়ালটা
আমি আলাপ করাইনি ?
আমিই তো তোমাকে ডেকেছিলাম
জানালার শিকের ওপর হুমড়ি খেতে বাধ্য করেছিলাম |
কাজলকাকুর বাবার গরুটার নাম লক্ষ্মী
ঐ ডুমুর গাছের ফাঁক দিয়ে
এক চিলতে জংলা মাঠের ওপর
গর্ভবতী লক্ষ্মী প্ল্যাসেন্টা
আস্তে আস্তে বাছুরটা ভুমিষ্ট হল
উঠে দাঁড়াল
মা লক্ষ্মী চেটে খেল জীবাণু-বীজাণু
শ্যামপার্কে ছিটকে পড়ে গেলে
ছড়ে গেল হাঁটু
স্কুলের নীল প্যান্টটার ছিঁড়ে যাওয়া
ভয়—
কে ছিল তোমার সঙ্গে
গঙ্গা জলের নীচে পড়ে থাকা পল#2495;
সেই পলি তুলে পুতুল গড়ার ব্যর্থ চেষ্টা
বাথরুমের জং ধরা ফ্লাশ-এর ওপর
গোলা পায়রা —পালক —ডিম
সারা দুপুর সবার ঘুমের সুযোগে
বাথরুমের দরজা বন্ধ করে
পায়রা ধরা
একদিন লুকিয়ে খেলে নেভিকাট
মুখে কীরকম গরম লাগছিল
মনে হচ্ছিল পুড়ে যাবে
তবুও ছাড়োনি —-
ধোঁয়ার সঙ্গে প্রথম মোলাকাৎ
নিষিদ্ধ স্বাদ
সাধুপুরির ভগ্নস্তুপ
যে ভাঙা বাড়ির ওপর আগাছা
নাকি আগাছার ওপরেই বাড়িটা
বোঝা যেত না
কেন যে ওটার নাম সাধুপুরি
ভুলে গেছ ?
কিন্তু মনে আছে
টকটকে লাল একটা ফড়িং-এর পেছন পেছন
তাড়া করেছিলে চাটুজ্জেদের শিবমন্দির থেকে
ধাওয়া করতে করতে
পৌঁছে গেছিলে সেই হানা বাড়িটাতে
কী অসম্ভব সুন্দরী সেই ফড়িংটার
পিছু নিতে নিতে
ঢুকে পড়েছিলে সেই পোড়ো বাড়িতে
মাকড়সার জাল—অন্ধকার
অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে গেছিল ফড়িংটা
বা আটকে গেছিল —- মাকড়সার জালে
হঠাৎ গা ছমছম
একা মনে হয়েছিল তোমার
আমি কিন্তু ছিলাম
তোমার পা পড়ে গেছিল কাঁচা বিষ্ঠায়
অবাক হয়েছিলে —- তালপুকুরের পাথরটার ওপর
কচলে কচলে পা ধুতে ধুতে
ভেবেছিলে কে এত নিশ্চিন্তে পায়খানা
করে এরকম ভুতুরে বাড়িতে
মেজমামুর বাড়ির গন্ধরাজ গাছটা
তার পাশেই বেঁটে জবা গাছটা
তার পাশেই চিনিচম্পা
আর তার পাশে সেই জোড়া পেয়ারা গাছটা
যা তোমার শয্যার মতোই নিরিবিলি ছিল
মগডালে বসে হেলান দিয়ে
কাঁচা পেয়ারার গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে
চোখ চলে যেত ইলেকট্রিক পোল
বাঁকা খেজুর গাছটাকে পেরিয়ে
ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত
আর ছবির মতো একটা হলদেটে বাড়ি
কাউকে কোনোদিন জিজ্ঞাসা করনি
ওটা কী ?
একের পর এক লোক পেরিয়ে যেত
সাইকেলে, হেঁটে, ছাতা মাথায়
ততক্ষণে আইসক্রিমওলা হর্ন বাজাতে শুরু করত
লাল, সবুজ, হলদে, সাদা অমৃত
দশপয়সায় দুটো
কয়েক মুহূর্তের জন্য তুমি একবার হারিয়ে গেছিলে
ঘুরে দাঁড়িয়ে খুঁজে পাওনি কাউকে
বেলুনওলা, ওমলেটভাজা, নাগরদোলা
ছ্যাৎ করে উঠেছিল তোমার বুকের ভেতর
কান্না পায়নি ?
তখন তুমি একটা পাড়াও চেনো না
পৃথিবী তো দূরের কথা |
আজকে যখন বয়স্ক চোখে
গঙ্গার জলে ভাসতে থাকা
বয়ার গায়ে শ্যাওলা দেখো
কিংবা তীরের দিকে অদ্ভুত নোঙরা কিছু
যার নিজস্ব চরিত্র হারিয়ে
এখন নোঙরা—- অজানা হয়ে গেছে
তারই পাশে শিকড়গাড়া
ক্যাপস্টানটা দেখো জং পড়েছে কি না
কিম্বা বাইপাসের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা
কালো কাচের সুমোর ভেতর
ঘনিষ্ঠতা প্রত্যক্ষ করো
মনে রেখো
আমিই তোমাকে পৃথিবীর সঙ্গে আলাপ
করিয়ে দিয়েছিলাম
Leave a Reply