হেতমপুরের মাঠে
কে একটা তোর মতো ঠিক হাঁটে
তার চলন বলন সব
যেন পাখির কলরব
যে পাখির নরম নরম ডানা
হয় তুই বা হাসনুহানা
যে হাসনুহানার নেশা
যেন তোর সুবাসেই ঠাসা
যে সুবাস আমি খুঁজি
যখন তোর বুকে মুখ গুঁজি
যখন তুই আমি ভঙ্গুর
দ্রাদিম দ্রিম দ্রিমা দুর দুর
দুর দুর দুরন্ত প্রাণ
সুখ স্বপ্নে সব আনচান
যে স্বপ্নে সাপ আর শিশির
শিশির অন্ধকারে ভিজে
যে অন্ধকারের রঙে
তুই তোর তুলনা নিজে
যে অন্ধকারের রসে
ভেজে জংলি মনের ফুল
যে জংলি মনের ফুলে
আজ বাতাস দোদুল দুল
সেই বাতাস আমার চেনা
সেই বাতাস আমায় ধরে
সেই বাতাস এতই সুখের
আমি ভুগি বাতাস জ্বরে
শরীর গরম শরীর কাঁপে
তখন বাতাসই জ্বর মাপে
তখন বাতাসই দেয় জল
তখন বাতাসই দেয় সাড়া
তখন বাতাসই ঝড় হয়
ঝড় ঝিলিক ঝম ঝম
সেই ঝিলিক যেন হাসি
তোর চোখের কোণে খেলে
যে খেলা খেলতে ভালোবাসি
যে খেলা না হয় যেন সারা
যে খেলায় না হার না জিৎ
যে খেলায় খসে পড়বে তারা
তারা পড়বে আমার বুকে
তারা পড়বে ঢেউয়ের সুখে
তারা পড়বে তুমুল টানে
তারা উল্কা হয়ে জ্বলে
পড়ে চিল্কা হ্রদের জলে
মিশিয়ে তারা বুকে
হ্রদ ঘুমিয়ে যাবে সুখে
সুখ ঝরা পাতার মতো
দুলবে হ্রদের কোলে কোলে
কালো জলের কোলে
টলটলিয়ে ঢেউ
যেন কাজল কাজল চোখে
ঝিলিক তোলে কেউ
সেই কাজল কাজল ঝিলিক
সেই শান্ত শীতল ঢেউ
যেন স্নিগ্ধ ছায়ার মতো
জলে আঁচল বেছায় কেউ
সেই আঁচল সুবাস মাখা
তাতে ভরা জাম কুড়োনোর বেলা
তাতে ভরা হেতমপুরের রোদ
তাতে ভরা পুতুল পুতুল খেলা
যে আঁচলে মনসাতলার পাশে
চাঁপা ফুল কুড়িয়ে দিতাম রেখে
যে আঁচল রঙিন মার্বেলে
ভরতাম অন্য আঁচল ভুলে
যে আঁচল থাকত যখন ফাঁকা
চোখে মুখে বুলিয়ে নিতাম আদর
যে আঁচল এখন হ্রদের জলে
ছলছল আমার জন্য রাখা
এ আঁচল — আঁচল ? না কি আদর
আদর না মেঘ মেশানো চাদর
চাদরে তারার কারুকাজ
কারু কাজে লাগবে কি এ সাজ
এ সাজে সাঁঝের প্রদীপ জ্বালা
গোধূলির ধুলোয় মাখা মন
এ ধুলোয় তুলসি পাতার বাস
এ সুবাস ঘোমটা খুলে আসে
খুলে যায় বন্ধ পাখির ঠোঁট
খুলে যায় সুড়ঙ্গেরই পথ
চলে যাই পাথর পাথর পথে
যে পথে নিশিগন্ধা ফোটে
যে পথের পাশেই ধানক্ষেত
যে ক্ষেতের ঘাসের গায়ে ধুলো
যে ধুলো গন্ধে রঙে লাল
যে লাল দেখলেই মন নাচে
যে নাচে নাচতে থাকে তারা
যে তারা খসে পড়তে জানে
যে জানা অজানাকেই ডাকে
যে ডাকে এখনও জ্বর আসে
যে জ্বরে বাতাস যাবে কেঁপে
যে বাতাস উড়িয়ে দেবে আঁচল
যে আঁচল ঝর্ণা হতে পারে
ঝর্ণার আঁচল থেকে আবার
তারাদের ঝর্ণা হতে পারে
যে তারার চোখের তারায় তারায়
সর্বনাশের খবর থেকে
যে খবর শুনতে পেলেই বুকে
দ্রিম দ্রিম দ্রাদিম দ্রাদিম সুর
দূর দূর দূরের শালবনে
বাতাসের ফিসফিসানি সুর
যে সুরের বাঁধন মানা দায়
যে বাঁধন খুলতে ভালো লাগে
যে খোলা ভাঙার মতো খোলা
যে ভাঙার ছন্দ মনের মতো
যে ভাঙার ছন্দ মদের মতো
যে মদে ভর্তি হ্রদের কোল
যে হ্রদের ওপর গাছের ছায়া
মেঘ আর তার ছায়াতে মেশা
যে মেশায় মিশলে পরেই নেশা
যে নেশা ছিটকে নিয়ে যায়
গোধূলির হেতমপুরের মাঠ
যেখানে তোর মতো কেউ হাঁটে
তার চলন বলন সব
ঠিক যেন পাখির কলরব
যে পাখির নরম নরম ডানা
হয় তুই বা হাসনুহানা
যে হাসনুহানার নরম ঠোঁটে
প্রতিদিন সন্ধ্যাতারা ফোটে
ফোটে আর জ্বলে এবং জ্বালায়
সে জ্বালা জ্বলতে ভালো লাগে
জ্বলি তবু বলতে ভালো লাগে
এ জ্বলন বড্ড মিঠে জ্বলন
এ জ্বলন ছড়িয়ে দেব আমি
যেভাবে সূর্য ছড়ায় আবির
তোর মতো মেঘের চোখে মুখে
ধিকি ধিকি জ্বলবে শাল আর শিমূল
জ্বলবে আমার করা ভুলে
যে ভুলে পুড়বে কচি সবুজ
দ্রিম দ্রিম দ্রাদ্রিম দাবানলে
Leave a Reply