স্যার আমি পারব
স্যার আমি টাইয়ের নট্ বাঁধতে পারি না
কিন্তু কোন বাস ছিদাম মুদি লেনে দাঁড়ায়
এক্ষুনি বলে দিতে পারি
এক্ষুনি বলে দিতে পারি গুমঘর লেনটা ঠিক কোথায়
আমি শিমুল গাছের পাতা চিনি
আমার বন্ধুরা বলে আমি হেভি কথা বলতে পারি
রাধা স্টোর্সের মালিকের কাছ থেকে
পঁচিশ টাকা চাঁদা একমাত্র আমিই তুলে দিতে পারি স্যার
এখান থেকেও একটিপে ঐ ল্যাম্পপোস্টের আলো
ভেঙে দিতে পারি আমি এক্ষুনি
আমি দাড়ি কামাতে পারি না
রামের সেলুনে গোবিন্দ কেটে দেয়
সপ্তাহে তিনদিন সঙ্গে মালিশ
আমি মাঞ্জা দিতে পারি
একটানে একবার একসঙ্গে তিনটে ঘুড়ি কেটেছিলাম
রাত্রিবেলা ঠোঙার মধ্যে মোমবাতি সেট করে
ঘুড়ি ওড়াতে পারি
স্যার সাধনদার দোতলার বারান্দায়
পাইপ বেয়ে উঠে বল পাড়তে হয় আমাকেই
একবার বল পারতে গিয়ে বিবসনা বৌদিকে দেখে
চেখ ফেরাতে পারি
বঙ্গ বিদ্যালয়ে পড়তাম তো—
ইংরাজি বুঝতে পারি, বলতে পারি না
কিন্তু একবার একটা সাহেবকে
নিমতলা ঘাটের রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলাম — বাংলাতেই
হল কালেকশনটা ভালো হলে
মাধ্যমিকের অঙ্কে লেটারটা পেয়ে যেতাম
তিনটে টিউশনি করি স্যার
একটা ছাত্রী এবার ক্লাসে ফিফথ্ হয়েছে
আমি একশেমিটার দূর থেকে
বাসের নম্বর ঠিক ঠিক পড়তে পারি স্যার
পেছনের গেটে ঝুলতে পারি আনায়াসে
জলের ট্যাঙ্কের ওপর একহাতে ভর দিয়ে
স্কুলের পাঁচিল টপকাতে আমার কোনো জুড়ি ছিল না স্যার
অশোককে কেন মহামতি বলা হয়
একবার ক্লাস ফাইভে পড়েছিলাম
তবুও#2451; মাধ্যমিকে চারপাতা লিখেছি
এখনও পারি
আমি মদ খাই না
কিন্তু পাড়ার স্পোর্টসে গো অ্যাস ইউ লাইকে
মাতাল সেজে প্রাইজ পেয়েছিলাম
আমি শম্ভুকে বুঝিয়ে পাতা খাওয়া ছাড়িয়ে দিয়েছি
শ্যামল আর তার দাদারা একটা নিরীহ পাগলকে বাঁশপেটা করছিল
আমি একা ওদেরকে আটকেছি স্যার
পিন্টুকে মেরেওছি বাধ্য হয়ে
আমি সাল মনে রাখতে পারি না
১৭৫৭-তে পলাশীর যুদ্ধ
১৮৫৭-তে সিপাহী বিদ্রোহ
আর ১৯৪৭-এ স্বাধীনতা ছাড়া আমার কিচ্ছু মনে নেই
কোন সালে গ্রাজুয়েট হয়েছি
সেটা সার্টিফিকেট দেখে মনে পড়ে
আমার স্যার দুটো জন্মদিন
একটা স্কুলের একটা বাড়ির
স্যার মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আপনার ঘাড়ে হাত ছুঁইয়ে
সমস্ত টেনশন উধাও করে দিতে পারি
বাবার মাথা ব্যথা হলে আমি মালিশ করে দিই স্যার
বাবা বলে, আমার হাতে জাদু আছে
আমার বাবা স্যার আমার মতো না
ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন
বাবা ভালো বক্সিং করতেন
মা স্যার ক্লাস সেভেন পর্যন্ত
‘এই করেছ ভালো নিঠুর হে’ গানটা দারুণ গায়
বাবার আফ্রিকা পরো মুখস্থ
আমি স্যার একবার সুকান্তর ছাড়পত্র মুখস্থ করেছিলাম
একটা প্রতিযোগিতায় নামও দিয়েছিলাম
প্রাইজ পাইনি—-ভুলেও গেছি কবিতাটা
খালি সুকান্তের ঘালে হাত দেওয়া ছবিটা
আর ‘নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’
এই লাইনটা ছাড়া কিচ্ছু মনে নেই |
মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে অস্বস্তি হয়
একটা মেয়ে রোজ দেখতাম দূর থেকে
ও বারান্দায় ঘুরে ঘুরে পড়ত
আর আমি নীচে ট্রাম রাস্তায়
একটা চিঠি ফেলেছিল ওপর থেকে
পালিয়েছিলাম স্যার, ওপাড়াতে আর যেতাম না
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম টি টি খেলি
কেউ বিশ্বাস করত না
টপ স্পিন দিতে পারি, চপ করতে পারি
খুব তাড়াতাড়ি শিখে ফেলতে পারি
সুযোগ পেলে—
আমি তবলাও ভালো বাজাতে পারি স্যার
বাড়িতে কিন্তু তবলা নেই
তবে ডেস্ক বাজাতে পারি আরও ভালো
সঞ্জু গান গাইলে আমাকেই ডেস্ক বাজাতে হয়
আমি গান গাইতে পারি না স্যার
একবার পলসায়েন্সে ব্যাক পেয়েছিলাম
পরের বার ক্লিয়ার করে ফেলেছি
অবশ্য স্নিগ্ধা না থাকলে হত না স্যার
ওই আমাকে নোটস্ লিখে দিত
আমি তো ক্লাস-ফ্লাস বিশেষ কিছু করতাম না
চন্দ্রদাকে পনেরো টাকা দেওয়ায়
আর নন-কলেজিয়েট হইনি
স্নিগ্ধা খুব ভালো মেয়ে স্যার
ওকে ঠিপ পড়লে দারুণ লাগে
ও জানত আমি গাঁজা খেতাম
তবু কিছু বলেনি
আমাকে খারাপ ভাবেনি
রজতকে, কৃষ্ণেন্দুকে রোজ আমার কথা জিজ্ঞাসা করত স্যার
ইন্টার কলেজ ক্রিকেটে ও আমার খেলা দেখতে গেছিল
ওই একমাত্র মেয়ে দর্শক ছিল সেদিন
ও ক্রিকেট কিছু বোঝে না
তবু সবার ওকে ভালো লাগে স্যার
ওকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম
স্কুলে কখনও লেটার রাইটিং ট্রাই করিনি
প্রেসিটাই চেষ্টা করতাম
স্নিগ্ধা চিঠির উত্তর দিয়েছিল
লিখে ছিল আমি নাকি ভালো চিঠি লিখি
স্নিগ্ধা আমাকে কিছু বলেনি কিন্তু আমি গাঁজা ছেড়ে দিয়েছি
পলসায়েন্সে ব্যাক পাওয়ার পরেও
ও আমার সঙ্গে ছিল স্যার
ওই আমাকে কাগজ থেকে Appointment- এর
বিজ্ঞাপন কেটে দেয়
স্নিগ্ধার জন্য আমি দাড়ি কামিয়েছি
শার্টটা ইস্ত্রি করিয়েছি মাকে দিয়ে
সুজিতকে দিয়ে টাইয়ের নট বাঁধিয়েছি
টাইটা স্যার দাদুর
আমার দাদুর কাঠের আলমারিতে ছিল
আমি স্যার তুবড়ি বানাতে পারি
হাতে রেখে চকলেট বোম ফাটাতে পারি
আমার অ্যাপ্লিকেশনটা বাবা লিখে দিয়েছে স্যার
আমি পারব স্যার
স্নিগ্ধা বিবেকানন্দ রোডে দাঁড়াবে বলেছে
ও টেনশনে আছে স্যার
কিছু না বুঝতে পারলে ও সব বুঝিয়ে দেবে
ও অনেক কিছু জানে
শ্যাম বেনেগালের লেটেস্ট ছবির নাম জানে
সমরেশ বসুর লেখা, সুনীল গাঙ্গুলীর উপন্যাস
ও পড়েছে স্যার
ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর কথা ওই আমাকে বলেছে
আমি স্যার ঘুড়ি, ক্রিকেট, গাঁজা, ডেস্কবাজানো, কবিতা
আড্ডা ছাড়া কিছুই পারি না
কিন্তু স্নিগ্ধার জন্য সব করতে ইচ্ছে করে
ওর জন্য একদিন আমি দিলরুবার সামনে
দু’ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম স্যার
ওর জন্য রাত্রি জেগে চিঠি লেখার চেষ্টা করি স্যার
ওর জন্য আমি অনেক সাহস পাই স্যার
ওর জন্য অনেক কিছু জানতে পারি
শান্তি পাই, বুকের ভেতরে পায়রা ওড়ার শব্দ পাই
ওর চোখের দিকে তাকালে কীসের যেন ডাক শুনতে পাই
স্নিগ্ধার জন্য এত কিছু পারি স্যার
এত কিছু পারি স্যার একটা চাকরি পাব না |
Leave a Reply