কোনো এক গাঁয়ের বধুর
কথা তোমায় শোনাই শোনো
রূপকথা নয় সে নয়।
জীবনের মধুমাসের কুসুম ছিঁড়ে
গাঁথা মালা
শিশির ভেজা কাহিনী শোনাই শোনো।
একটুখানি শ্যামল ঘেরা
কুটিরে তার স্বপ্ন শত শত
দেখা দিত ধানের শিষের ইশারাতে
দিবা শেষে কিষাণ যখন আসতো ফিরে
ঘি মউ-মউ আম কাঁঠালের
পিঁড়িটিতে বসতো তখন
সবখানি মন উজাড় করে
দিত তারে কিষাণী
সেই কাহিনী শোনাই শোনো।
ঘুঘু ডাকা ছায়ায় ঢাকা
গ্রামখানি কোন মায়া ভরে
শ্রান্তজনে হাতছানিতে
ডাকত কাছে আদর করে
সোহাগ ভরে,
নীল শালুকে দোলন দিয়ে
রঙ ফানুসে ভেসে
ঘুমপরী সে ঘুম পাড়াত
এসে কখন যাদু করে
ভোমরা যেত গুনগুনিয়ে
ফোটাফুলের পাশে
আকাশে বাতাসে সেথায় ছিল
পাকা ধানের বাসে বাসে
সবার নিমন্ত্রণ |
সেখানে বারোমাসে
তেরো পাবণ
আষাঢ় শ্রাবণ কি বৈশাখে
গাঁয়ের বধুর শাঁখের ডাকে
লক্ষ্মী এসে ভরে দিত
গোলা সবার ঘরে ঘরে
হায়রে কখন
এল সমন
অনাহারের বেশেতে
সেই কাহিনী শোনাই শোনো |
ডাকিনী যোগিনী
এলো শত নাগিনী
এলো পিশাচেরা এলো রে
শতপাকে বাঁধিয়া
নাচে তাথা তাথিয়া
নাচে তাথা তাথিয়া নাচেরে
নাচে রে।
কুটিলের মন্ত্রে
শোষণের যন্ত্রে
গেল প্রাণ শতপ্রাণ গেল রে |
মায়ার কুটিরে
নিল রস লুটিরে
মরুর রসনা এলো রে
হায় সেই মায়া ঘেরা সন্ধ্যা
ডেকে যেত কত নিশিগন্ধা
হায় বধু সুন্দরী
কোথায় তোমার সেই
মধুর জীবন মধুছন্দা |
হায় সেই সোনাভরা প্রান্তর
সোনালি স্বপনভরা অন্তর
হায় সেই কিষাণের
কিষাণীর জীবনের
ব্যথার পাষাণ আমি বহি রে।
আজও যদি তুমি
কোনো গাঁয়ে দেখো
ভাঙা কুটিরের সারি
জেনো সেইখানে
সে গাঁয়ের বধুর
আশা স্বপনের জীবন্ত সমাধি।
(কথা ও সুরঃ সলিল চৌধুরী, শিল্পীঃ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)
অলক রায়চৌধুরী। Alok Raychaudhuri
হায়রে কখন
এল সমন
অনাহারের বেশেত্
‘সমন’? না ‘শমন’?