রাগাত্মিক ।।
চৌদ্দ ভুবনে ভুবন তিন।
সপ্ত আখর তাহার চিন।।
দুইটী আখরে সদা পিরীতি।
তিনটী পরশে উপজে রতি।।
নির্জ্জন কাননে আছয়ে ঘর।
দুইটী আখর পাঁচের পর।।
কনক আসন আছয়ে তাতে।
মনসিজ রাজা বৈসয়ে যাতে।।
কর্পূর চন্দন শীতল জলে।
যেমন আনন্দ লেপন কালে।।
তাপিত জনে সে আনন্দ পায়।
শীত ভীত জন ভয়ে পলায়।।
পঞ্চ রস আদি একত্রে মেলি।
যে যার স্বভাব আনন্দে কেলি।।
অষ্ট আখর একত্র যবে।
কনক আসন জানিবে তবে।।
পঞ্চ রস অনুবাদ যে হয়।
আদি চণ্ডীদাস বিধেয় কয়।।
——————-
বীরভূম জেলার অন্তঃপাতি সিউড়ি নিবাসী শ্রীযুক্ত কুঞ্জলাল বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের প্রতিপাদিত অর্থ এইরূপ, যথা—
চৌদ্দ ভুবন – সপ্ত স্বর্গ ও সপ্ত পাতাল।
ভুবন তিন – ব্রজ, গোলক ও দ্বারকা।
সপ্ত আখর – রাধা, রমণ, কুঞ্জ।
দুইটী আখর – রাধা।
তিনটী আখর – রমণ।
নির্জ্জন কানন – রাধারমণ, পরে কুঞ্জ।
অষ্টম আখর – “স্থ” অর্থাৎ রাধারমণ কুঞ্জস্থ।
শ্রীযুক্ত বাবু অক্ষয়চন্দ্র সরকার মহাশয়ের প্রতিপাদিত অর্থ এই :—
চৌদ্দ ভুবন – চতুর্দ্দশ ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট দেহ। চতুর্দ্দশ ইন্দ্রিয়, অর্থাৎ পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচ কর্ম্মেন্দ্রিয়, চারি অন্তরেন্দ্রিয়।
ভুবন তিন – ভাব, কান্তি ও বিলাস। ইহা সপ্তাক্ষর বিশিষ্ট। কবির রীত্যানুসারে এ স্থলে অক্ষর গণনা হইয়াছে; তৎপ্রমাণ “পিরীতি—আখর তিন”।
দুইটী আখর – ভাব। ইহাএ সর্ব্বদা প্রীতি বিরাজ করে।
তিনটী আখর – বিলাস। ইহাই রতির কারণ।
নির্জ্জন কানন ইত্যাদি – হৃদয়রূপ নির্জ্জন কাননস্থিত পঞ্চভূত আত্মার পর; বা কান্তি বিলাসের পর দুইটী আখর “ভাব”।
কনক আসন ইত্যাদি – ষট্চক্রমতে হৃদয়স্থিত রত্নবেদিকায় অভিন্ন মদন শ্রীকৃষ্ণ রাধা সহ বিরাজ করেন।
পঞ্চ রস – শান্ত, দাস্য, বাৎসল্য, সখ্য, মাধুর্য্য।
অষ্টম আখর – ভাব কান্তি বিলাসের পর “জ্ঞা” এই বর্ণ যুক্ত হইয়া “ভাব কান্তি বিলাসজ্ঞ” শ্রীকৃষ্ণকেই বুঝাইতেছেন এবং তদীয় অধিষ্ঠান বশতঃই হৃদয় “কনক আসন” রূপে ব্যক্ত হয়।
পঞ্চ রস ইত্যাদি – প্রাগুক্ত পঞ্চরস মধ্যে, চণ্ডীদাসের মতে মাধুর্য্য বা শৃঙ্গার রস প্রধান। তৎপ্রমাণ, “সব রস সার শৃঙ্গার এ” ইত্যাদি পদ।
বীরভূমের অন্তর্গত সাঁকুলিপুর গ্রামবাসী শ্রীযুক্ত জীউলাল মজুমদারের প্রতিপাদিক অর্থের কতকাংশ এই :—
চৌদ্দ ভুবন – সপ্ত স্বর্গ ও সপ্ত পাতাল। ভূলোক, ভূবর্লোক, স্বর্লোক, মহল্লোক, জনলোক, তপলোক ও সত্যলোক, এই সপ্ত স্বর্গ। অতল, বিতল, সুতল, তল, তলাতল, রসাতল ও পাতাল, এই সপ্ত পাতাল।
ভুবন তিন – গোলোক, বৈকুণ্ঠ, শ্রীবৃন্দাবন।
মনসিজ রাজা – অপ্রাকৃত মদন শ্রীকৃষ্ণ।
Leave a Reply