রাগাত্মিক পদ ।।
চণ্ডীদাসে কহে শুনহ মাতা।
কহিলে আমারে সাধন কথা।।
সাতাশী উপরে তিনের স্থিতি।
সে তিন রহয়ে কাহার গতি।।
এ তিন দুয়ারে কি বীজ হয়।
কি বীজ সাধিয়া সাধক কয়।।
রতির আকৃতি বলিয়ে যারে।
রসের প্রকার কহিব মোরে।।
কি বীজ সাধিলে সাধিব রতি।
কি বীজ ভজিলে রসের গতি।।
সামান্য রতিতে বিশেষ সাধে।
সামান্য সাধিতে বিশেষ বাধে।।
সামান্য বিশেষ একতা রতি।
এ কথা শূনিয়া সন্দেহ মতি।।
সামান্য রতিতে কি বীজ হয়।
বিশেষ রতিতে কি বীজ কয়।।
সামান্য রসকে কি রস যজে।
কি বীজ প্রকারে বিশেষ মজে।।
তিনটি দুয়ারে থাকয়ে যে।
সেই তিন জন নিত্যের কে।।
চণ্ডীদাস কহে কহবে মোরে।
বাশুলী কহিছে কহিব তোরে।।
এ দেহে সে দেহে একই রূপ।
তবে সে জানিবে রসেরই কূপ।।
এ বীজ সে বীজে একতা হবে।
তবে সে প্রেমের সন্ধান পাবে।।
সে বীজ যজিয়ে এ বীজ ভজে।
সেই সে প্রেমের সাগরে মজে।।
রতিতে রসেতে একতা করি।
সাধিবে সাধক বিচার করি।।
বিশুদ্ধ রতিতে বিশুদ্ধ রস।
তাহাতে কিশোরা কিশোরী বশ।।
বিশুদ্ধ রতিতে করণ কি।
সাধহ সতত রজক ঝি।।
সাতাশী উপরে তাহার ঘর।
তিনটি দুয়ার তাহার পর।।
বীজে মিশাইয়া রামিনী যজ।
রসিক মণ্ডলে সতত ভজ।।
বিশুদ্ধ রতিতে বিকার পাবে।
সাধিতে নারিলে নরকে যাবে।।
বাশুলী কহয়ে এই সে হয়।
চণ্ডীদাস কহে অন্যথা নয়।।
————–
\”সাতাশী\”–
পঞ্চবাণ, অর্থাৎ মদন, মাদন, শোষণ, উন্মাদন ও স্তম্ভন।
পঞ্চপ্রাণ, অর্থাৎ প্রাণ, অপান, সমান, উদান, ব্যাণ।
পঞ্চভূত, অর্থাৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুত, ব্যোম।
পঞ্চভাব, অর্থাৎ সান্ত, দাস্য, সৌখ্য, বাৎসল্য, মাধুর্য্য।
পঞ্চগুণ, অর্থাৎ শব্দ, গন্ধ, রূপ, রস, স্পর্শ।
দশ ইন্দ্রিয়।
দশ দিক।
দশ দশা। যথা–\”চিন্তাত্র জাগরূদ্বেগৌ তানবং মলিনাঙ্গতা। প্রমাদো ব্যাধিরুম্মাদৌ মোহ মৃত্যু দশাদশঃ।।
নবধাঙ্গ ভক্তি ও আত্মভাব, এই দশ। যথা–শ্রবণ, কীর্ত্তন, স্মরণ, অর্চ্চন, বন্দন, পদসেবন, দাস্য, সৌখ্য, নিবেদন, এবং স্বীয় ভাব।
অষ্টদিক। যথা–উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব্ব, পশ্চিম, নৈঋত, বায়ু, অগ্নি ও ঈশান।
অষ্টকাল/অষ্টপ্রহর। যথা–প্রাতঃ, পূর্ব্বাহ্ন, মধ্যাহ্ন, সায়াহ্ন, অপরাহ্ন, প্রদোষ, মধ্যরাত্রি, নিশান্তক।
এবং ছয় রিপু।
সাতাশী উপর \”তিন\”–(রতি) সামর্থা, সাধারণী ও সামঞ্জসা।
\”গতি\”–অধিকার।
\”সামার্থা\”–শ্রীরাধিকা ও গোপীগণ।
\”সাধারণী\”–কুব্জা ও কুব্জিকাগণ।
\”সামঞ্জসা\”–রুক্ষ্মিণী প্রভৃতি।
Leave a Reply