রাগাত্মিক পদ ।।
নিত্যের আদেশে, বাশুলী চলিল,
সহজ জানাবার তরে।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে, নান্নুর গ্রামেতে,
প্রবেশ যাইয়া করে।।
বাশুলী আসিয়া, চাপড় মারিয়া,
চণ্ডীদাসে কিছু কয়।(১)
সহজ ভজন, করহ যাজন,
ইহা ছাড়া কিছু নয়।।
ছাড়ি জপতপ, করহ আরোপ,
একতা করিয়া মনে।(২)
যাহা কহি আমি, তাহা শুন তুমি,
শুনহ চৌষট্টি সনে।।(৩)
বসুতে গ্রহেতে, করিয়া একত্রে,
ভজহ তাহারে নিতি।(৪)
বাণের সহিতে,(৫) সদাই যুজিতে,
সহজের এই রীতি।।
দক্ষিণ দেশেতে, না যাবে কদাচিতে,
যাইলে প্রমাদ হবে।
এই কথা মনে, ভাব রাত্রি দিনে,
আনন্দে থাকিবে তবে।।
রতি পরকীয়া, যাহারে কহিয়া,
সি সে আরোপ সার।(৬)
ভজন তোমারি,(৭) রজক ঝিয়ারি,
রামিনী নাম যাহার।।
বাশুলী আদেশে, কহে চণ্ডীদাসে,
শুনহ দ্বিজের সুত।
একথা ল\’বে না, না জানে যে জনা,
সেই সে কলির ভূত।।
————–
রসিক ভক্তগণের সাধন প্রণালীর নাম \”রাগাত্মক।\”
রসিক ভক্তরা \”রাগানুগ\” ভক্ত।
(১) জীবনী দ্রষ্টব্য।
(২) বৈধি ধর্ম্ম ত্যাগ করিয়া প্রকৃতি ভাবে কৃষ্ণ ভজনা কর।
অনুরাগ–কল্পনা বা এক বস্তুতে অন্য বস্তুর স্থাপন।
যথা–রজ্জুতে সর্পারোপ। ভজন মার্গে গোপী অনুগতি বা আপনাকে গোপীজনের দাসী মনে করাই আরোপ। শ্রীকৃষ্ণকে যাঁহারা পতিরূপে ভজন করেন তাঁহাদের এরূপ আরোপ ব্যতীত উপায় নাই। ঠাকুর মহাশয় স্বীয় প্রার্থনা এবং প্রেমভক্তি চন্দ্রিকায় এই আরোপের কথা বহুস্থানে বলিয়াছেন।
(৩) চৌষট্টি রস সহিত। বিধ্যুদিত নিরসভাবে নহে, রসিক শেখরকে সরস উপাশনাই কর্ত্তব্য। তন্ত্রে ৬৪ কলার সহ ভজন বিধি কথিত আছে। কলা শব্দে–কামকলা, শিল্পকলা ইত্যাদি।
(৪) বসু ৮, গ্রহ ৯, একত্রে ১৭। খুব সতরের ঘরে অর্থাৎ বিশেষ সতর্কতার সহিত তাঁহাকে প্রত্যহ ভজন কর।
নিতি–নিত্য, প্রত্যহ।
ভাষা কথায় আছে–\’সতরর ঘরে বিনাশ নাই\”।
(৫) বান, পাঁচ। মদন, মাদন, স্তম্ভন, শোষণ ও মোহন। অর্থাৎ মধুর রসে উপাসনা।
(৬) ব্রজভাবানুসারে যে ভজন তাহাই সার অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ ব্রজ গোপীর ন্যায় পরকীয়া ভাবের যে ভজন তাহাই শ্রেষ্ঠ।
(৭) চণ্ডীদাস রামিনীকে মধুর ভজনে সাহায্যকারিণী গুরুরূপিণী বলিয়া \”ভজন তোমার\” বলিতেছেন। বিল্বমঙ্গল ঠাকুরও এইরূপ চিন্তামণিকে গুরুরূপে বন্দনা করিয়াছেন।
Leave a Reply