সেই শ্রীধরের কিছু শুনহ আখ্যান
খোলার পসার করি রাখ নিজ প্রাণ |
একবার খোলা ষোড় কিনিয়া আনয়
খানি খানি করি তাহা কাটিয়া বেচয় |
তাহাতে যে কিছু হয় দিবসে উপায়
তার অর্ধ গঙ্গার নৈবেদ্য লাগি যায় |
অর্ধেক সওদায় হয় নিজ প্রাণ রক্ষা
এই মত হয় বিষ্ণু ভক্তির পরীক্ষা |
মহাসত্যবাদী তিহোঁ যেন যুধিষ্ঠির
যার যেই মূল্য বলে না বলে বাহির |
মধ্যে মধ্যে যেবা জন তার তত্ত্ব জানে
তাহার বচনে মাত্র দ্রব্যখানি কিনে |
এইমতে নবদ্বীপে আছে মহাশয়
খোলা বেচা জ্ঞান করি কেহ না চিনয় |
চারি প্রহর রাতি নিদ্রা নহে কৃষ্ণ নামে
সর্বরাত্রিহরি বোলে দীঘল আহ্বানে |
যতেক পাষণ্ডী বলে শ্রীধরের ডাকে
রাত্রে নিদ্রা নাহি যাই দুই কর্ণ ফাটে |
মহা চাসা বেটা ভাতে পেট নাহি ভরে
ক্ষুধায়ে ব্যাকুল হঞা রাত্রি জাগে মরে |
এইমত পাষণ্ড মরয়ে মন্দ বলি
নিজ কার্য করয়ে শ্রীধর কুতুহলী |
হরি বলি ডাকিতে যে আছয়ে শীধরে
নিশাভাগে প্রেম যোগে ডাকে উচ্চস্বরে |
অরেধপথ গেল মাত্র ভক্তগণ ধাঞা
শ্রীধরের ডাক শুনি তথাই থাকিয়া |
ডাক অনুসারে গেলা ভাগবতগণ
শ্রীধরের ধরিয়া লইল ততক্ষণ |
চল চল মহাশয় প্রভু দেখ সিয়া
আমরা কৃতার্থ হই তোমা পরসিয়া |
শুনিয়া প্রভুর নাম শ্রীধর মূর্ছিত
আনন্দে বিহ্বল হই পড়িলা ভূমিত |
আথে ব্যথে ভক্তগণ লইল তুলিয়া
বিশম্ভর আগে নিল আলস করিয়া |
শ্রীধর দেখিয়া প্রভু প্রসন্ন হইলা
আয় আয় শ্রীধর বলি ডাকিতে লাগিলা |
বিস্তর করিয়া আছ মোর আরাধন
বহুজন্ম মোর প্রেমে ত্যেজিলা জীবন |
এহো জন্মে মোর সেবা করিলা বিস্তর
পাসরিলা আমা সঙ্গে যে কৈলা উত্তর |
যখনে করিলা প্রভু বিদ্যার বিলাস
পরম উদ্ধত হেন যখনে প্রকাশ |
সেই কালে গূঢ় ভাবে শ্রীধরের সঙ্গে
খোলা বেচা কেনা ছলে কৈল বহু রঙ্গে |
প্রতিদিন শ্রীধরের পসারেত গিয়া উপরে
ষোড় কলা মূল খোলা আনেন কিনিয়া |
প্রতিদিন চারিদণ্ড কলহ করিয়া
তবে সে কিনয়ে দ্রব্য অর্ধ মূল্য দিয়া |
সত্যবাদী শ্রীধর যা লইব তাহা বোলে
অর্ধমূল্য দিয়া প্রভু নিজ হস্তে তোলে |
উঠিয়া শ্রীধর দাস করে কাড়াকাড়ি
এইমত শ্রীধর ঠাকুরে হুড়াহুড়ি |
প্রভু বোলে কেনে ভাই শ্রীধর তপস্বী
অনেক তোমার অর্থ আছে হেন বাসি |
আমার হাথের দ্রব্য লহ যে কাড়িয়া
এতদিন কে আমি না জানিস ইহা |
প্রম ব্রহ্মণ্য শ্রীধর ক্রুদ্ধ নহে
বদন দেখিয়া সর্ব দ্রব্য কাড়ি লয়ে |
মদনমোহন রূপ গৌরাঙ্গ সুন্দর
ললাটে তিলক শোভে ঊর্দ্ধ মনোহর |
ত্রি বসন শোভে কুটিল কুন্তল
প্রকৃতি নয়ন দুই পরম চঞ্চল |
শুক্ল যজ্ঞসূত্র শোভে বেড়িয়া শরীরে
সূক্ষ্মরূপ অনন্ত যে হেন কলেবরে |
অধরে তাম্বুল হাসে শ্রীধরে চাহিয়া
আর বার খোলা লয় আপনে তুলিয়া |
শ্রীধর বলেন, শুন ব্রাহ্মণ ঠাকুর
ক্ষমা কর মোয়ে মুঞি তোমার কুকুর |
প্রভু বোলে, জানি তুমি পরম চতুর
খোলা বেচা অর্থ তোমার আছয়ে প্রচুর |
আর কি পসার নাহি, বলয়ে শ্রীধরে
অল্প কড়ি দিয়া তথা আন পাতখোলা |
প্রভু বোলে যোগানিয়া আমি নাহি ছাড়ি
থোর কলা দিয়া মোরে তুমি লহ কড়ি |
রূপ দেখি মুগ্ধ হৈয়া শ্রীধর যে হাসে
গালি পাড়ে বিশ্বম্ভর পরম সন্তোষে |
প্রত্যহ গঙ্গারে দ্রব্য দেহত কিনিয়া
আমারে না কিছু দিলে মূল্যেতে ছাড়িয়া |
যে গঙ্গা পূজহ তুমি আমি তান পিতা
সত্য সত্য তোমারে কহিল এই কথা!
কর্ণ ধরি শ্রীধর শ্রীবিষ্ণু বিষ্ণু বোলে
উদ্ধত দেখিয়া তানে দেই পাতখোলে |
এই মত প্রতিদিন করেন কন্দল
শ্রীধরের জ্ঞানে বিপ্র পরম চঞ্চল |
শ্রীধর বলেন, মুঞি হারিনু তোমারে
কড়ি বিনু কিছু দিনু ক্ষমহ আমারে |
একখণ্ড খোলা দিমু এক খণ্ড থোড়
এক খণ্ড কলা মূল আর দোষ মোর |
প্রভু বোলে ভাল ভাল আর নাহি দায়
শ্রীধরের খোলে প্রভু প্রত্যহ অন্য খায় |
Leave a Reply