প্রেস: আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র বইমেলায় নতুন বইয়ের সমারোহ দেখে বিস্মিত এবং আনন্দিত না হয়ে পারা যায় না। বইয়ের বিষয়বস্তু যাই হোক, মান যেমনই হোক, মুদ্রণের সৌন্দর্য দেখে অকুণ্ঠ প্রশংসা করতেই হয়। উইলকিন্স আর পঞ্চানন কর্মকার মিলে প্রথম যে বাংলা হরফ নির্মাণ করেছিলেন ২৩০ বছর আগে, তা দেখে এখনকার তুলনায় ২৫০ নয়, হাজার বছরের পুরোনো মনে হয়। তবে এই অগ্রগতি হয়েছে ধাপে ধাপে। ১৮৩০ সাল নাগাদ কলকাতার ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস যে ফন্ট তৈরি করেছিল, শ্রীরামপুর প্রেসকে তা ম্লান করে দিয়েছিল। এই নতুন হরফ ছিল তুলনামূলকভাবে সুগঠিত, আকারে অনেক ছোটো এবং একটা হরফ থেকে পরের হরফের বিন্যাসও সুশৃঙ্খল। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাংলা হরফ প্রামাণ্য রূপ লাভ করেছিল। সে তুলনায় পরবর্তী অর্ধশতাব্দীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে অনেক কম।
বাংলা হরফের আরও উন্নতির একটা বড় অন্তরায় ছিল যুক্তবর্ণ। সেভাবে হিসাব করলে যুক্তবর্ণসহ বাংলা হরফের সংখ্যা দুই শতাধিক। হরফ নির্মাতা ও কম্পোজিটর—উভয়ের জন্যই এটা একটা জটিল সমস্যা ছিল। তাই হরফ নির্মাণের প্রধান সমস্যা থাকল হরফের সংখ্যা কীভাবে কমানো যায়। মোটা হরফ, ইটালিক ইত্যাদি হরফ তৈরির চিন্তা তখনো অতটা গুরুত্ব লাভের সুযোগ পায়নি।
আরেকটা সমস্যা থাকল বাংলা টাইপরাইটার নির্মাণের। কারণ টাইপরাইটারের ওই কটা মাত্র ‘কি’ দিয়ে অতগুলো বাংলা হরফের সমস্যার কী করে সমাধান হবে?
যদ্দুর জানি, এই প্রায় অসম্ভব কাজটাকে সম্ভব করেছিল টাইপরাইটার তৈরিতে যে কোম্পানির ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে, সেই রেমিংটন। ইংরেজি টাইপরাইটার তৈরির সময় ‘কি’গুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছিল, যাতে বহুল ব্যবহূত হরফগুলো থাকে মাঝখানের সারিতে। কোন অক্ষরটা কতবার ব্যবহার করা হচ্ছে, তার কোনো নিখুঁত পরিসংখ্যান হয়েছিল বলে মনে হয় না। কিন্তু ধারণাটা ছিল ওই রকমই। বাংলা টাইপরাইটার তৈরি করতে গিয়ে রেমিংটন ওই রকম কোনো জরিপ করা তো দূরে থাক, কোনো রকম ধারণাও পেয়েছিল কি না, বলা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা অক্ষরগুলো সাজিয়েছিল অকারাদিক্রমে। ‘ক’, ‘ক-’এর ওপরে ‘খ’; ‘গ’, ‘গ’-এর ওপরে ‘ঘ’ ইত্যাদি। একেবারে ধারাবাহিকভাবে। ফলে যে হরফ বারবার ব্যবহার করতে হয়, সেটা হয়তো রাখা হয়েছিল এমন জায়গায়, যেখানে হাতের আঙুল সহজে পৌঁছানো যায় না। তা ছাড়া, এই হরফগুলো ছিল বড় এবং প্রতিটি হরফের মাঝখানে একটু ফাঁকও থেকে যেত। এর অর্থ, এই লেখা দেখলেই বোঝা যেত যে এটা ছাপানো বাংলার তুলনায় একেবারে আলাদা, অনেকটা উনিশ শতকের গোড়ার দিকের ছাপানো হরফের মতো।
রেমিংটন যত দিনে বাংলা টাইপরাইটার নির্মাণ করে, তত দিনে মুদ্রণের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছিল মোনো টাইপ আর লাইনো টাইপের দৌলতে। মোনো টাইপে একেকটা শব্দ আস্ত একটা ধাতব ব্লকে তৈরি হতো। একে পরিবর্তন অথবা শুদ্ধ করতে হলে পুরো শব্দটাকেই নতুন করে তৈরি করতে হতো। আর লাইনো টাইপে ছাপা হতো পুরো একটা লাইন ধরে। কোনো পরিবর্তন করতে হলে পুরোটা লাইনই নতুন করে বানাতে হতো। প্রথম মোনো টাইপ অথবা লাইনো টাইপের অক্ষরবিন্যাস অথবা অক্ষরগুলো কে তৈরি করেছিলেন, সে তথ্য আমার জানা নেই। কিন্তু লাইনো টাইপে যুক্তবর্ণের সমস্যা সমাধানে মৌলিক চিন্তার ছাপ ও প্রয়োগ ছিল। দেখতেও সুন্দর ছিল। ধরা যাক, ম দিয়ে যেসব যুক্তবর্ণ তৈরি হতো, সেগুলো আলাদা আলাদা তৈরি না করে, প্রথমে একটা ছোট ম (ম) রাখা হতো। তারপর অন্য হরফ সাজিয়ে ম্প, ম্ফ, ম্ব, ম্ভ, ম্ম লেখা হতো। ফলে হরফের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। যদ্দুর জানি, এই সমস্যার সমাধান করেছিলেন ফিয়োনা রস, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে যিনি বাংলা টাইপোগ্রাফিতে পিএইচডি করেছিলেন। তিনি তেমন বাংলা জানেন না। তাঁর টাইপের সীমাবদ্ধতা যা ছিল তা হলো, বহুল ব্যবহূত সব বর্ণ কিবোর্ডের সুবিধাজনক জায়গায় সাজানো ছিল না।
মুদ্রণের সমস্যা সহনীয় করে তোলার পরও সমস্যা থেকে গেল টাইপরাইটারের। রেমিংটনের আদিম টাইপরাইটারকে আধুনিক করার দায়িত্ব নেন মুনীর চৌধুরী। প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসেবে তাঁর প্রথমেই মনে হয়েছিল যে কোন বর্ণ (মূল বর্ণ, স্বরচিহ্ন, যুক্তবর্ণ) কোনখানে সাজালে টাইপের গতি বাড়ানো এবং লাইনো টাইপের মতো যুক্তবর্ণ সমস্যার সমাধান করা যায়। তাঁর নিজের মুখেই শুনেছি, তাঁর আরেকটা লক্ষ্য ছিল, কী করে টাইপরাইটারের লেখাকেও প্রায় ছাপার মতো চেহারা দেওয়া যায়।
বহুল ব্যবহূত বর্ণগুলো সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রাখার জন্য জরিপ করা যে অত্যাবশ্যক, তাও তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। এ জন্য তিনি একটি অনুদান পান কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে। জরিপ করার জন্য তিনি তিনজন কর্মচারী রাখেন তিন মাসের জন্য। তাঁদের কাজ ছিল কেবল বর্ণ অথবা অর্ধবর্ণগুলো কতবার ব্যবহার করা হচ্ছে, তার হিসাব করা। সেই জরিপের ভিত্তিতেই তিনি তাঁর কিবোর্ড সাজিয়েছিলেন। অর্ধ স্পেস এবং মৃত বর্ণ অর্থাত্ যে বর্ণ টিপলেও কোনো স্পেস পড়বে না (যেমন ,র্ , ু, ৃ ইত্যাদি) এসবের কথা তিনি ভেবেছিলেন, যাতে টাইপরাইটারের লেখাকেই ছাপার হরফের মতো মনে হয়। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে তিনি বাংলা টাইপরাইটারের ইতিহাসে যুগান্তর সৃষ্টি করেন।
তাঁর এই বিশাল অবদানের ফলে মুদ্রণশিল্পে বিপ্লব আসেনি। এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে অ্যাপল ম্যাক কম্পিউটার ও মোস্তফা জব্বারের জন্য। অ্যাপল ম্যাকের ব্যবস্থা ছিল রোম্যান হরফের বাইরে অন্যান্য ভাষার ফন্ট তৈরি করার। সেই সুযোগ নিয়ে মোস্তফা জব্বার বাংলা ফন্ট তৈরি করেন। তবে তিনি কম্পিউটারের ৫০টি চাবিতে প্রথমে যেভাবে বর্ণগুলো সাজিয়েছিলেন, তা কোনো জরিপের ওপর ভিত্তি করে সম্ভবত সাজাননি। তিনিও রেমিংটনের পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে বর্ণগুলো সাজিয়েছিলেন বলে মনে হয়। কিন্তু অত কমসংখ্যক ঘরে বর্ণমালা এবং সবগুলো যুক্তবর্ণের ব্যবস্থা রাখা একেবারে অবাস্তব ধারণা। সে জন্য তখন বাংলা লিখতে কখনো নর্মাল, কখনো শিফট, কখনো অপশন এবং কখনো শিফট+অপশন চাবি টিপে লিখতে হতো।
একে সহজ করার জন্য পরে তাঁকে লিখতে হয়েছিল বিজয় প্রোগ্রাম। যাতে জোড়া লাগানোর চাবি হিসেবে ‘জি’ ব্যবহার করে তিনি প্রায় অসাধ্য সাধন করেন। এখন দু-তিনটি বর্ণ যুক্ত করেও একটা বর্ণ তৈরি করা যায়, যা কিবোর্ডে দেওয়া থাকে না। ‘ন’ আর ‘ধ’ যোগ করে ‘ন্্ধ’ পাওয়া যায় না, কম্পিউটারের অদৃশ্য ঘর থেকে রেরিয়ে আসে ‘ন্ধ’। যখন তিনি বিজয় প্রোগ্রাম তৈরি করেন, তখন অবশ্যই বর্ণমালা ব্যবহারের জরিপ করে থাকবেন। বলা যেতে পারে, তিনি ধারণাটা পেয়েছিলেন মুনীর চৌধুরীর কাছ থেকে। কিন্তু টাইপরাইটারের তুলনায় কম্পিউটারের প্রযুক্তি অনেক অগ্রসর। সে জন্যই তিনি ‘জি’কে জোড়া দেওয়ার বর্ণ হিসেবে নিয়ে স্বরধ্বনি এবং স্বরচিহ্নকে একই চাবিতে রাখতে পেরেছেন।
পশ্চিমবঙ্গেও কম্পিউটারের জন্য একাধিক প্রোগ্রাম তৈরি হয়েছে। সেগুলো মোস্তফা জব্বারের আগে তৈরি হয়েছে, নাকি সবার আগে মোস্তাফাই বাংলা প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন, সে তথ্য আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশে অনেকেই তাঁর অনুকরণে বাংলা প্রোগ্রাম লিখেছেন। সাম্প্রতিক বিজয় প্রোগ্রামে তিনি ইউনিকোড থেকে শুরু করে মুনীর-অপটিমা, এমনকি অহমিয়া ভাষারও ব্যবস্থা রেখেছেন।
একটা সময়ে ছাপাখানায় শত শত মণ সিসার অক্ষর থাকত। এই প্রেসকে বলা হতো হট মেটাল প্রেস। কিন্তু এখন আর ধাতব টাইপের দরকার নেই। এখনকার প্রেস হলো কোল্ড মেটাল প্রেস। আগেকার প্রযুক্তি লোপ পেয়ে এখন তা মিউজিয়ামে জায়গা নেওয়ার অবস্থা। ২০ বছর আগেকার ধাতব অক্ষরে ছাপানো বইয়ের সঙ্গে এখনকার বইয়ের তুলনা করলেই এই পার্থক্য একজন আধা অন্ধের চোখেও ধরা পড়বে। এখন যে বইমেলায় ২৮ দিনেই হাজার হাজার নতুন বই আসছে, এখন যে সম্প্রতি ধনী হওয়া যে কেউ নিজ নিজ প্রতিপত্তি বাড়ানোর জন্য নতুন নতুন দৈনিক পত্রিকা নিয়ে বাজারে নিজেদের জাহির করতে পারছেন, তার মূলে রয়েছে মুদ্রণশিল্পের বিপ্লব। কিন্তু বাংলা মুদ্রণশিল্পে এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান মোস্তফা জব্বারের।
তাঁর বিজয় প্রোগ্রাম যে নিখুঁত—এটা বলতে পারছি না। যেমন—এক পৃষ্ঠা লিখতে গিয়েও কোথাও ঋ-কার ব্যবহার করার প্রয়োজন না হতে পারে, কিন্তু রেফের ব্যবহার প্রায়ই করতে হয়। কিন্তু তিনি রেফটাকে শিফটে রাখায় যারা অদক্ষ টাইপিস্ট, তাদের ঝামেলা হয়। একই কথা বলা চলে ‘ঙ’ ও ‘ং’ সম্পর্কে। ‘ং’-এর ব্যবহার অনেক বেশি। কিন্তু আছে শিফটে। ‘র-ফলা’ ও ‘য-ফলা’ উভয়ই বহুল ব্যবহূত বর্ণ। কিন্তু আছে একই চাবিতে। এবং সেই চাবির অবস্থানও সুবিধাজনক জায়গায় নয়। ‘ড’ ও ‘ঢ’-এর ব্যবহার, ‘য’ ও ‘য়’-র তুলনায় অনেক কম। কিন্তু ‘ড’ ও ‘ঢ’-এর অবস্থান অগ্রাধিকার পেয়েছে। মোট কথা, বিজয় আরও বৈজ্ঞানিক হতে পারত। তবে স্বীকার করতে হবে, পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো ফন্টের তুলনায় বিজয় বৈজ্ঞানিকভাবে শ্রেষ্ঠ। বিজয় দিয়ে যত দ্রুত টাইপ করা যায়, রবীন্দ্র অথবা সত্যজিত্ কিবোর্ড দিয়ে তা হয় না। আনন্দবাজার গোষ্ঠী যে সুন্দর ফন্ট ব্যবহার করে, তা ফিয়োনা রসের সৃষ্টি। কিন্তু তাঁর কিবোর্ড জরিপভিত্তিক নয়, অর্থাত্ যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক নয়। এর প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো টাইপ করার মন্থরগতি। (মন্থর লিখতে ক্ষতি কী?)
বিজয়ের সবচেয়ে সমালোচনা অন্যত্র। লাইনো টাইপে যুক্তবর্ণের সমাধান যেভাবে করা হয়েছিল, জব্বার সেই অগ্রগতিকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারতেন। এর বদলে তিনি পেছনের দিকে গেছেন। একটি দৃষ্টান্তই যথেষ্ট হবে। ন্তু। ন+ত+উ মিলে এই যুক্তবর্ণ তৈরি হয়েছে। স+ত+উ মিলে স্তু। কিন্তু যেভাবে এ দুটি বর্ণ লেখা হয়, তাতে পাঠক বিশেষ করে শিশুরা বিভ্রান্ত হয় সহজেই। এর ফলে বর্ণমালা শিখতে তাদের অনেক বেশি সময় লাগে। অথচ অ্যাপল ম্যাকের জন্য তিনি এই যুক্তবর্ণটি সহজ করে তৈরি করেছেন। ন্তু; স্তু। এটাকে দেখে শিক্ষার্থীর পক্ষে চেনা অনেক সহজ। ন+ধ+র কে ‘ন্ধ্র’ লিখলে ক্ষতি কী? বরং শিক্ষার্থীর জন্য সেটা বোঝা সহজ হয়। মোস্তফা জব্বারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই পেছনে ফিরে যাওয়ার কারণ কী? তিনি বললেন, প্রকাশকদের অনুরোধে। এটা কোনো কথা নয়। প্রকাশকেরা টাইপ তৈরি করেন না। তাঁরা তৈরি টাইপ দিয়ে বই ছাপান। প্রযুক্তি তাঁদের অনুসরণ করে না, তাঁরা প্রযুক্তিকে অনুসরণ করেন।
বিজয় ফন্টের আরেকটি সমালোচনা: বিভিন্ন নামে শ খানেক ফন্ট তৈরি করে মুদ্রণে বৈচিত্র্য আনতে চেষ্টা করলেও, বেশির ভাগ ফন্টই কোনো না কোনো ত্রুটিপূর্ণ। কোনোটায় হয়তো সবগুলো যুক্তবর্ণ গঠন করা যায় না। কোনো ফন্ট আবার অন্য কোনো ফন্টে পরিবর্তন করলে কিছু বর্ণ বদলে যায়। এমনকি, সবগুলোর কিবোর্ড লে-আউটও হুবহু এক রকমের নয়। মোট কথা, ইংরেজিতে যেমন নিখুঁত ফন্ট আছে, মোস্তফা জব্বার এখনো তা তৈরি করতে পারেননি। তা ছাড়া, বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম, ওয়ার্ড প্রসেসিং এবং ডেস্কটপ পাবলিশিং প্রোগ্রাম সময়ের সঙ্গে যতটা এগিয়ে যাচ্ছে, মোস্তফা জব্বার এর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছেন না। তা ছাড়া, এসব প্রোগ্রামের আপগ্রেড হলে যে আপগ্রেডের অংশটুকু শস্তায় বিক্রি করার নিয়ম প্রচলিত আছে, বিজয়ের ক্ষেত্রে আপগ্রেড বিনা দামে অথবা অল্প দামে দেওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই। বছরখানেক আগে তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, তিনি ডজন ডজন নতুন নতুন ফন্ট তৈরি না করে আমাদের যদি একটি নিখুঁত ফন্ট উপহার দিতে পারেন, তাহলে বিজয় ব্যবহারকারীরা সবাই একটা নির্ভরযোগ্য ফন্ট পেয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারি। তিনি তাঁর ফন্টের খুঁত সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু সেই খুঁত দূর করার ব্যাপারে অতটা তত্পর বলে আমার মনে হয়নি।
মোস্তফা জব্বার বহু ব্যাপারে অন্যদের তুলনায় অগ্রসর। যে দেশে বিদ্যুতের সরবরাহ একেবারে নির্ভরযোগ্য নয়, সে দেশে তিনি নিজের টাকায় ৩০টি স্কুল খুলে একটা ক্লাস রেখেছেন বাধ্যতামূলক। সেটা কম্পিউটার শিক্ষা। যাতে বিনা বাধায় এই কম্পিউটারগুলো চলতে পারে, তার জন্য বসিয়েছেন সোলার প্যানেল। অর্থাত্ সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা, যাতে বিদ্যুত্ সরবরাহের ওপর নির্ভর করতে না হয়। কিন্তু কিবোর্ডের আরেকটু উন্নতি করতে তাঁর আরেকটু অগ্রসর দৃষ্টি থাকায় অসুবিধে কোথায়?
বাংলা মুদ্রণশিল্প এখন যেকোনো ভাষার মুদ্রণশিল্পের মতো এগিয়ে গেছে। এর পেছনে উইলকিন্স, পঞ্চানন কর্মকার, মনোহর কর্মকার থেকে শুরু করে ফিয়োনা রস ও মোস্তফা জব্বারের অবদান আমাদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মনে রাখা উচিত। কিন্তু এখন বাংলায় যা দরকার, বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলা—উভয়ের একটি প্রামাণ্য কিবোর্ড। বাংলা মুদ্রণে বিপ্লব সৃষ্টি হলেও এই অভাব থেকেই গেছে। এর জন্য দুই বাংলা মিলে একটি সমঝোতায় আসা দরকার। দরকার এ বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো একজন ব্যক্তির।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২৬, ২০১০
Leave a Reply