সফদর হাশমীর নাম জানতাম। প্রতিবাদী নাটক করার অপরাধে দিল্লির এ প্রতিভাবান নাট্যকর্মীকে প্রতিক্রিয়াশীলেরা খুন করেছিল। নাট্যজগতে সফদর হাশমী এক শহীদের নাম। ওঁর বোন শবনম হাশমী ও কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় যখন যৌথভাবে কাশ্মীরের এক চলচ্চিত্র উত্সবে যোগ দিতে নিমন্ত্রণ জানালেন তখন খুশিই হয়েছি। খুশি হয়েছি এই কারণে, ভারতের এ সুন্দরতম রাজ্যটিকে দেখার আগ্রহ তো ছিলই, তা ছাড়া সশস্ত্র সংঘাতে বিপর্যস্ত কাশ্মীরের শ্রীনগর শহরে একটা চলচ্চিত্র উত্সব কেমন হবে তা দেখার গভীর কৌতূহলটাও ছিল।
দিল্লি থেকেই বুঝলাম, কাশ্মীরের কোনো ফ্লাইটে নিরাপত্তার বিষয়টি কত স্পর্শকাতর। সবাইকে একসঙ্গে বিমানে উঠতে ও বসতে হলো। আর শ্রীনগর বিমানবন্দরে দেখি সিভিলিয়ানের চেয়ে সামরিক পোশাকের লোকজনই বেশি। এ শহরেও কিছু দূর যেতে না যেতেই চোখে পড়ে ভারতীয় সামরিক প্রহরী। কাশ্মীরের বন্ধুরা জানালেন, বছরখানেক আগে অবস্থা আরও খারাপ ছিল। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের শীতে এ শহর ঠান্ডায় প্রায় জমে যাওয়ার অবস্থা। তবে বরফ পড়া শুরু হয়নি। কেবল দূরের পাহাড়গুলোয় সাদা বরফের মুকুট, আর ডাল হ্রদের পানি সবে ধূসর সাদাটে হওয়া শুরু করেছে। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই জমে বরফ হতে শুরু করবে।
ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপাল—উপমহাদেশের এসব দেশের দুই ডজন প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে চলচ্চিত্র উত্সবটির। বাংলাদেশ থেকে আমার নির্মিত স্বপ্নভূমি ছাড়াও ছিল তরুণ প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা আনোয়ার চৌধুরী ও মোশারফ হোসেন জেমীর তৈরি ওয়াটারওয়াকার্স নামে একটি ছবি।
লক্ষ করলাম, যেসব ছবিতে রাজনৈতিক-ঐতিহাসিক বিষয়গুলো সাহসের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে সেসব ছবির প্রতি যেন কাশ্মীরের দর্শকদের আগ্রহটা বেশি। পাকিস্তানের মুনিজা জাহাঙ্গীর নিয়ে এসেছিল সার্চ ফর ফ্রিডম—চার আফগান নারীর সাক্ষাত্কারের ভেতর দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানসমাজের এক বাস্তব ও করুণ চিত্র। নেপালের অঞ্জু ছেত্রী এনেছিলেন নেপালের সাম্প্রতিক গৃহযুদ্ধে নিহত বিধবাদের ওপর এবং যুদ্ধে ধর্ষিতা নারীদের ওপর দুটি প্রামাণ্যচিত্র। এসব ছবি বেশ আলোচিত ছিল উত্সবে। ভারতের বিশিষ্ট প্রামাণ্যচিত্রনির্মাতা দিল্লির অমর কানওয়ার নিয়ে এসেছিল এ নাইট অব প্রফেসি নামের ঘণ্টাখানেক দৈর্ঘ্যের এক চমত্কার প্রামাণ্যচিত্র যেখানে ভারতের নাগাল্যান্ড, বোম্বের দাদার ব্রিজের তলার দরিদ্র বস্তিবাসী, দক্ষিণ ভারতের দলিত ও কাশ্মীরের এক কবির কবিতার মধ্য দিয়ে এসব জনগোষ্ঠীর জীবনের দুঃখ, বঞ্চনা ও আর্তিকে তুলে ধরা হয়েছে।
কাশ্মীরে তিন ভাষা—কাশ্মীরি, ডগরি ও লাদাখি। আমার জন্য এ তিনটে ভাষাই চীনে হরফ! ফলে ভাঙ্গা হিন্দি আর ইংরেজিই কেবল ভরসা। মেয়েদের ব্যাপারে কাশ্মীরের মুসলমানেরা সাধারণত বেশ রক্ষণশীল। তবে ভালো লাগল কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরখাপরা মেয়েদের সাবলীল চলাফেরা ও নানা কর্মতত্পরতা দেখে। উত্সবের আয়োজক ও সংগঠক হিসেবে এই মেয়েরাই দেখলাম সবচেয়ে উদ্যোগী ও সক্রিয়। আসলে শিক্ষা এমন এক জিনিস, বা হয়তো একমাত্র জিনিস, যা সব রক্ষণশীলতাকেই অযৌক্তিক এবং একসময় অর্থহীন করে ফেলে।
বন্ধুরা পই পই করে বলে দিয়েছিল, ‘কাশ্মীরে যাচ্ছ, ডাল হ্রদে শিকারায় চড়ে না ঘুরলে জীবন বৃথা! তো ঘোরা গেল। কাশ্মীরে ইংরেজদের জমি কিনে বাস করার অধিকার ছিল না। ওরা তাই বাস করত বাড়ির আদলে তৈরি হাউসবোটে। সেই থেকেই ডাল হ্রদ, নাগিন হ্রদ ও ঝিলাম নদীতে এই হাউসবোট সংস্কৃতির উদ্ভব ও চর্চা। হাউসবোটের নামগুলোও এখনো তাই রয়ে গেছে উপনিবেশগন্ধী—‘কুইন অব হার্টস’, ‘কুইন এলিজাবেথ’, ‘প্রিন্স অব ওয়েল্স’—যেন ইংরেজরা এখনো এ দেশ ছেড়ে যায়নি! তো ও রকম এক হাউসবোটে উঠে সব ঘুরেফিরে দেখলাম। একজন হাসন রাজাই বোধ হয় এ ধরনের রাজসিক হাউসবোটের যথার্থ কদরটা করতে পারেন বলে মনে হলো!
প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় ওভারকোটের পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিস্ দিতে দিতে ডাল হ্রদের চারপাশে ঘুরে বেড়াতাম। আশপাশে কাশ্মীরি শাল, কাশ্মীরি লোকজ শিল্পের নানা রকম পণ্য আর শুকনো ফলের সারি সারি দোকান। আমি চিরকালই জানালার বাইরের ক্রেতা। দেখেই নয়ন সুখ! তবে হঠাত্ হঠাত্ করে চোখে পড়ত, দোকানগুলোর আড়ালে অন্ধকারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা নজর রাখছে। তখনই মনে পড়ত, কাশ্মীর কত ঝুঁকিপূর্ণ এক জায়গা! যদিও গুলি-বোমা ছোড়া এসব কিছুটা কমিয়ে শ্রীনগরবাসী এখন প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে হরতালকে বেছে নিয়েছে, তবু কাশ্মীর এমন এক অঞ্চল যেখানে যেকোনো মুহূর্তে যা কিছু ঘটে যেতে পারে। এ কথা মনে হলেই মেরুদণ্ড দিয়ে একটা শিরশির অনুভূতি বয়ে যেত!
কাশ্মীরি শালের নাম আছে। একেবারেই কাশ্মীরের নিজস্ব জিনিস এসব পশমের শাল। তবে ওর দোকানের শাল না কিনলেও দেখলাম আপত্তি নেই শালওয়ালা মাহমুদ আলী কোরেশীর। শুনেছিলাম বটে কাশ্মীরি শালওয়ালারা বেশ গপ্পবাজ হয়! মাহমুদ আলীকে পেলাম তার জলজ্যান্ত প্রমাণ হিসেবে। একসময় জঙ্গি ছিল। এখন ওসব ছেড়েছুড়ে শাল ব্যবসাতে মন দিয়েছে। আমাকে বলল, ‘সাব, হামলোগ সে সবলোগ গাদ্দারি কিয়া!’ ওর বক্তব্য হচ্ছে, প্রথমে ভারত সরকার গাদ্দারি করেছে কাশ্মীরে গণভোট হতে না দিয়ে, আর এখন পাকিস্তান গাদ্দারি করছে কাশ্মীর ইস্যুকে কেবল নিজের দেশের সেনাবাহিনীর খরচ বাড়াতে ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করে। শাল বেচলে কী হবে, মাহমুদ আলীর রাজনীতির জ্ঞান দেখলাম খুবই টনটনে। আমাকে কাশ্মীরের বর্তমান রাজনীতি, ভারত-কাশ্মীর সম্পর্ক ও কাশ্মীরবাসীর মনোজগতের হালহকিকত সম্পর্কে অনেক কথাই বলল। ওর ছোকড়া সহকারীটি চা নিয়ে এল। হাতলওয়ালা বিশাল কাপে ঘন দুধের কাশ্মীরি চা—এই ঠান্ডায় যেন অমৃত!
তবে সত্যি কথা বলতে কী, ডাল হ্রদের যত নামডাক শুনেছিলাম, মন তেমন টানল না। বিশাল জলাধার, আর দূরে পাহাড়, এই যদি হয় ডাল হ্রদের বিশ্বজুড়ে সৌন্দর্যের খ্যাতির কারণ, তাহলে আমাদের সুনামগঞ্জের হাওড়গুলিই বা কম কিসে!
তবে শ্রীনগরের আশপাশে দেখার অনেক জায়গা আছে। গেলাম শ্রীনগর শহরের এক্কেবারে লাগোয়া ‘নিশান্থ বাগ’ দেখতে। মোগলরা যেখানেই গেছে, এ রকম ফোয়ারাওয়ালা বাগান ও জলাধার বানিয়েছে। রুক্ষ দেশের মানুষ ছিল মোগলরা। তাই পানি খুব ভালোবাসত। উঁচু এক পাহাড়ের নিচে চিনার গাছে ভরা ও নানা রকম ফোয়ারায় সজ্জিত এই নিশান্থ বাগটা বানিয়েছে সম্রাজ্ঞী নুরজাহানের ভাই আসাফ জাহান।
দেখতে গেলাম কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই হজরত বাল মসজিদ। সাদা পাথরের আরবি স্থাপত্যের মসজিদটি দেখতে ভারি চমত্কার। আর গেলাম পরীমহল দেখতে। দারা শিকোহর বানানো। মোগলদের মধ্যে, হয়তো আকবরের পরেই, দারা শিকোহকে আমার সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক মানুষ বলে মনে হয়। শাহজাহানের পরে কট্টরপন্থী আওরঙ্গজেবের বদলে যদি শাহজাহানের বড় ছেলে সুশিক্ষিত ও উদারপন্থী এই দারাশিকোহ দিল্লির মসনদে বসত, এই উপমহাদেশের ইতিহাসটাই হয়তো অন্য রকম হতো! দারা শিকোহর জীবনের পরিণতির মতোই কেমন যেন একটা বিষণ্নতা ছেয়ে আছে পাহাড়ের ওপরে ওর তৈরি এই পরীমহলে!
‘হোটেলে কী সব খাচ্ছেন, কাশ্মীরের বদনাম হয়ে যাচ্ছে’—এসব বলেটলে দুই ভাই উলফত বাট আর শওকত বাট ধরে নিয়ে গেল ওদের বাড়িতে ‘কাশ্মীরের আসল খানা’ খাওয়াতে। কাশ্মীরি খানা মানেই নানা রকম মাংসের পদ। জীবনে এত পদের মাংস এক আসরে কখনোই খাইনি—কোর্মা, কোফতা, কলিজা, মিটবল, রোস্ট, ভুনা, কিমা, আরও কত কী! আমার তো প্রায় ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা! আর দুই ভাই উলফত ও শওকত ক্রমাগতই দুঃখ প্রকাশ করে চলেছে, ‘কিছুই খাওয়াতে পারলাম না আপনাকে! আমাদের মা অসুস্থ। মা-ই তো আসল রাঁধুনি, বউরা কি রাঁধতে পারে’ ইত্যাদি! আসলে কাশ্মীরের মুসলমানদের মতো এত বেশি মাংস খেতে আমি খুব কম জাতিকেই দেখেছি। এদের ভেড়ার মাংসের মিটবলগুলো প্রায় ক্রিকেট বলের সাইজের এবং প্রতি বেলাতেই দেখতাম একেকজন দিব্যি তিন-চারটে করে খাচ্ছে। শাস্ত্রে বলে, ‘রোমে থাকতে হলে রোমানদের মতো চলো!’ তো আমিও কাশ্মীরি মহাজনদের পথ ধরলাম। নেহাত কাশ্মীরের পানি খুব ভালো বলেই ভালোয় ভালোয় পৈতৃক প্রাণটা নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছি! না হলে গুলিতে না মরলেও লাল মাংসের প্রমাণ সাইজের ও রকম মিটবল প্রতিদিন ছয়-সাতটা করে খেয়ে কোলেস্টরলের শনৈঃশনৈঃ বৃদ্ধির ফলে বেঁচে ফিরতে পারার তো কথা নয়!
আমাদের স্বপ্নভূমি ছবিটা দেখতে দর্শক হয়েছিল মিলনায়তন উপচে পড়া। সিট তো সব আগে থেকেই ভর্তি। দর্শকেরা কেউ মেঝেতে বসে, অনেককেই আবার দেখলাম পেছনে দাঁড়িয়ে গোটা ছবিটা দেখছে। স্বপ্নভূমি ছবিটাতে ১৯৪৭-এর ভারত বিভাগ ও ১৯৭১-এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়গুলো রয়েছে। এসব বিষয়ে দেখলাম কাশ্মীরের দর্শকদের সীমাহীন আগ্রহ। ছবির শেষে ছবির পরিচালক হিসেবে আমার সঙ্গে দর্শকদের একটা প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল। দর্শকদের প্রশ্ন যেন আর শেষই হয় না! প্রশ্নকারীদের মধ্যে বোরখাপরা অনেক মহিলা দর্শকও, মূলত ছাত্রী, ছিল। সময় শেষ হয়ে যাওয়াতে হলের লবিতে, ও পরে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানেও, ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন চলছে তো চলছেই! ওদের বক্তব্য হচ্ছে, এসব কথা আমরা কখনোই আগে জানতাম না!
দর্শকদের মধ্যে মুসলিম উগ্রপন্থী দলেরও দু-চারজন ছিল। ওরা আমাকে প্রশ্ন করল, কেন আমরা ‘ভারতের প্ররোচনায়’(!) পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ করলাম? ওদের প্রশ্নের ভঙ্গিটা ছিল বেশ আক্রমণমুখী। তবে এসব ক্ষেত্রে উত্তেজিত হতে নেই! আমি তাই ধীর স্বরেই ওদের বললাম যে কেন আমরা বাঙালিরা পাকিস্তান রাষ্ট্র সম্পর্কে মোহমুক্ত হয়েছিলাম। ওদেরকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ষাটের দশকের ছাত্র-আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন ও সর্বোপরি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের কথা বললাম। বললাম কী নৃশংসতায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে ও এক কোটি মানুষকে ভিনেদশে শরণার্থী হতে বাধ্য করেছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা কাশ্মীরের তরুণ-তরুণীরা দেখলাম খুবই মন দিয়ে শুনল। ওরা আসলে এসব কথা কোনো দিনই শোনেনি তেমনভাবে।
উত্সবের দিনগুলোতে বিভিন্ন সময়ে এসব ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমাদের ওরা চা-কফি খাইয়েছে, ওদের সঙ্গে গল্প করেছি, করেছি নানা তর্ক-বিতর্ক। বোরখাপরা একটা মেয়ে, নাম খাদিজা, দেখলাম খুবই সংবেদনশীল। আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করত, ১৯৭১-এর বাংলাদেশে ঠিক কী হয়েছিল? নারীদের ওপর কী রকম নিপীড়ন ঘটেছে? বলত, জানেন, কাশ্মীরেও অনেক কিছু ঘটেছে, সবকিছু তো বলা যায় না! ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব যখন বেড়েছে, আমি খোলাখুলিই প্রশ্ন করেছি, ‘কী চাও তোমরা? ভারত না পাকিস্তান?’ আমার এ প্রশ্নের জবাবে এক বড় অংশ বলল, ‘চাই স্বাধীন কাশ্মীর!’ আবার যারা কিছুটা বাস্তববাদী তারা বোঝাল, কেবল পাহাড়কেন্দ্রিক এক রাষ্ট্রের এই আধুনিক যুগে টিকে থাকা সম্ভব নয়। ভারতের প্রতি, বিশেষ করে ভারতের গণতন্ত্র ও সংস্কৃতির প্রতি দেখলাম অনেকেরই রয়েছে বেশ গভীর টান। আসলে ভারতের বিশাল অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সুবিধা কাশ্মীরবাসী ইদানীং পেতে শুরু করেছে। ফলে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে সোচ্চার অনুযোগ থাকলেও পাকিস্তানপন্থী জঙ্গিদের প্রতিও আগ্রহ তেমন নেই। তা ছাড়া পাকিস্তান দেশটির বর্তমান রক্তাক্ত ক্ষয় ও অবক্ষয়ও হয়তো ওরা দেখতে পাচ্ছে। ওদের সহানুভূতির কাঁটাটা তাই যেন ভারত ও পাকিস্তানের দোলাচলের মধ্যে দুলতে দুলতে শেষ পর্যন্ত ভারতের দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ত।
উত্সবের শেষ দিন খাদিজা ওর বন্ধুদের নিয়ে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এল। বলল, ‘আপনার ছবি, অন্যান্য ছবিগুলো এবং এই চলচ্চিত্র-উত্সবটি আমাদের রীতিমতো চোখ খুলে দিয়েছে। এই উপমহাদেশের আসল ইতিহাস যে এ রকম এটা আমরা আগে তেমন জানতামই না!’
বিমানবন্দর দূরে বলে বিদায়ের দিনে হোটেলের লবিতেই সবাই বিদায় জানাতে এল। ওদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় এই অসামান্য সুন্দর দেশটা, আর অনিন্দ্যসুন্দর এই ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রার্থনা করলাম—ওরা শান্তিতে থাকুক। স্বাধীনতায় বাঁচুক, বেড়ে উঠুক সত্যিকারের গণতান্ত্রিক এক সংস্কৃতিতে!
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৫, ২০১০
Leave a Reply