প্রথমেই আমি গিয়ে হাজির হই পুলিশ স্টেশনে, পরিচিত হই থানার বড় দারোগার সঙ্গে। যতক্ষণ না ওই শহরের পুলিশকর্তাদের সঙ্গে সখ্য হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত একটা আতঙ্ক আর অস্থিরতা ঘিরে থাকে আমাকে। লোকে পুলিশের নামে যত দুর্নামই ছড়াক না কেন, বিপদে পড়লে পুলিশকে না ডেকে কি সমাধান হয় কোনো? আমি নিজে পুলিশের মেয়ে। যদিও আমার বাবা রিটায়ার্ড করেছেন অনেক আগে, কিন্তু তিনি খুব বড় অফিসার ছিলেন। বহু মেডেলটেডেল পেয়েছেন বলে এখনো বাবার পরিচয়টা ভালোমতোই কাজে দেয়। সেই সুবাদে হয়তো বা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই খাতির পাই আমি যেকোনো থানায়। তবে, আমি আসলেই মনে করি যে নতুন একটা শহরে কত রকম বিপদই তো থাকতে পারে, আর তার হাত থেকে বাঁচতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা বুদ্ধিমানেরই কাজ। শুধু নিজের নিরাপত্তা তো নয়, আমার স্বামী আর মেয়ের কথাও তো ভাবতে হয় আমাকে, না কি?
আমি গৃহিণী। এক্কেবারে এক শ ভাগ খাঁটি হাউসওয়াইফ। চাকরিজীবী স্বামী আর ক্লাস ফোরে পড়ুয়া একমাত্র মেয়েকে নিয়ে আমাদের ভারি সুখের সংসার। তবে, একটা বাড়িতে তো দূরের কথা, একটা শহরেও বেশি দিন থাকার সৌভাগ্য হয়নি আমার কখনো। না বিয়ের আগে, না বিয়ের পরে। বাবা পুলিশে চাকরি করতেন। সরকারি চাকরিতে বদলি হয় অনেকবার। সেই সুবাদে এই শহর ওই শহর করতে করতেই অস্থির ছিলাম আমরা। তারপর বিয়ে। আমার স্বামী বেসরকারি চাকুরে। একটা বড় এনজিওতে কাজ করেন উনি। বিয়ের আগে ভেবেছিলাম, বেসরকারি চাকরিতে কি আর অত ঘন ঘন বদলির বিষয় থাকবে। ওমা, বিয়ের পর দেখি যে কে সেই। আমার সাহেবেরও আজ এখানে পোস্টিং তো কাল ওখানে। কপাল!
তবে এই নিয়ে কিন্তু মোটেও অসুখী নই আমি। বাবার বদলির সুবাদে এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়ার অভ্যাস তো ছিলই। তাই শহর বদল নিয়ে মোটেও ঘাবড়াইনি আমি। আর বুঝেশুনে চললে শহর বদলের সমস্যাও কাটিয়ে ওঠা যায় অনায়াসে। তাই, মেয়ের স্কুল বদল, বাকির দোকানি খুঁজে বের করা, খাঁটি দুধের সন্ধান, মেয়ের জন্য ভালো প্রাইভেট টিউটর ইত্যাদির উপযুক্ত সমাধান নতুন শহরে এসেও খুঁজে বের করতে এই পর্যন্ত এতটুকু অসুবিধা হয়নি আমার।
কিন্তু এসব তো গেল ঘরগেরস্তির গল্প। সেসব না হয় সামলানো গেল ভালোয় ভালোয়। কিন্তু মানুষের জীবনে কি সব বিপদ আর বলেকয়ে আসে? তখন? নতুন একটা শহরে গেলে আপনি বুঝবেন কী করে যে রাতের বেলা জানালা খোলা রেখে ঘুমানো ঠিক হবে কি হবে না? কিংবা রাতের বেলা দাওয়াত থেকে ফেরার জন্য স্টেশন রোডটা ভালো নাকি বড়বাজারের সামনের রাস্তাটা? হঠাত্ করে কেউ অসুস্থ হলে রাতের বেলা গাড়ি জোগাড় হবে কী করে? খোদা না করুক, যদি স্কুলে যাওয়ার পথে মেয়েটাকে কেউ অপহরণ করে তবে তার সমাধান আসবে কোন পথে? আর, আমরা যারা মেয়ে তাদের জন্য বিপদের তালিকাটা তো এমনিতেই অনেক বেশি লম্বা। একজন পুরুষকে আর যা-ই হোক, ধর্ষণের শিকার তো হতে হয় না। আমার মতো সব মেয়েকে তাই তার শরীর নিয়ে ভারি অস্থির থাকতে হয়, থাকতে হয় আতঙ্কের মধ্যে।
আপনারা যারা জীবনে একটিবারের জন্যও শহর বদল করেননি তাঁরা বুঝতেও পারবেন না যে নতুন একটা শহরে এলে কত রকম বিপদের ঝুঁকি থাকে। সব শহরেই থাকে অনেক মন্দ মানুষ, নানা বিপদের আশঙ্কা। কিন্তু এক শহরে দীর্ঘদিন থাকলে তার চরিত্র পড়ে ফেলতে পারে মানুষ অনায়াসে; তখন বিপদ এড়ানো হয় সহজতর। কিন্তু নতুন একটা শহরে?
ধরুন, আপনার বাড়িতে রাতের বেলা চোর এল। আপনি যে ‘চোর চোর’ বলে চিত্কার করে প্রতিবেশীদের নিয়ে চোরকে পাকড়াও করার চেষ্টা করবেন সেই উপায় নেই। কারণ প্রতিবেশীরা তো আপনাকে চেনেই না। আর কে-ই বা আজকাল অপরিচিতের বিপদে এগিয়ে আসে বলুন? আর না জেনেশুনে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মাখামাখি করাটাও কিন্তু কোনো কাজের কথা নয়। কেন, ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী কর্তৃক প্রতারণার খবর কি কাগজে বা টেলিভিশনে চোখে পড়েনি আপনার? আর আজকাল তো জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ভয়ে নতুন কারও সঙ্গে পরিচিত হওয়াটাই ভয়ের। মুখ দেখে তো আর বোঝা যায় না কে ভালো, কে মন্দ।
আর ওই যে আগেই বলেছি, মেয়ে হওয়ার বিপদ সব সময়ই বেশি। যখন আমার বয়স ষোলো তখন বাবা সৈয়দপুরে বদলি হন। সেখানে আমাদের প্রতিবেশী স্বপন মামা আমার কিশোরী শরীরটাকে নিয়ে যে কী সব জঘন্য কাজ করেছেন সে কথা আজ পর্যন্ত কাউকে মুখ ফুটে বলিনি আমি। তাই, অত সহজে প্রতিবেশীকে বিশ্বাস করার পাত্রী আমি নই।
কিন্তু কাউকে না কাউকে তো বিশ্বাস করতে হবেই। তাই, অনেক ভেবেচিন্তে আমি কৌশলটা নিয়েছিলাম বিয়ের পরেই। কোনো নতুন শহরে গেলে বাবার পুলিশ পরিচয়ের সূত্র ধরে স্থানীয় পুলিশকেই করেছি আমাদের ভরসার কেন্দ্র। আমার স্বামী এমনিতে খুব ভালো এবং দায়িত্ববান মানুষ, কিন্তু ভারি মুখচোরা। মুখ ফুটে নিজেদের কথা কাউকে বলতে পারেন না তিনি। তাই, আমিই নিয়েছি সেই দায়িত্বটা। কোনো নতুন শহরে স্বামীর বদলির খবর পাওয়ামাত্র আগেভাগেই ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ফোন নম্বরটা জোগাড় করে ফেলি আমি। তারপর আমার রিটায়ার্ড পুলিশ বাবার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেই আমি ওই কর্মকর্তার। বাবা তাঁকে বলে রাখেন, ‘অচেনা শহরে পাঠাচ্ছি আমার মেয়ে, মেয়ে-জামাই আর আদরের নাতনিকে। ওদের একটু দেখেশুনে রাখবেন।’
একে তো পুলিশের প্রাক্তন বড়কর্তার অনুরোধ, তার ওপর বাংলাদেশের মানুষ এমনিতেই ভারি আবেগী এবং অতিথিপরায়ণ। সব মিলিয়ে খুব ভালো ফল পাই এভাবে। শহরে গেলে ওই থানার কর্তাব্যক্তিরাই সাদরে আমাদের গ্রহণ করেন। তাতে শহর বদলের প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলানো যায় সহজেই এবং লোকে যখন দেখে আমাদের সঙ্গে ইউনিফর্ম পরা লোকদের সখ্য তখন স্বভাবত একটু সমঝে চলে প্রথম দিন থেকেই। তার পরই আমি যে কাজটি করি তা হলো, ওই থানার বড়কর্তাকে সপরিবারে আমাদের বাড়িতে দাওয়াত করি একদিন। তাতে করে সম্পর্কটা আরও গাঢ় হয়। বিপদে-আপদে সাহায্য পাওয়া অনেক সহজ হয়।
অনেকেই অবশ্য আমার এই আচরণকে বাড়াবাড়ি বলে। বলে, আমি নাকি মানসিক বিকারগ্রস্ত। আমার এক খালা তো রীতিমতো সিরিয়াসলিই বলেছিলেন যে আমি যেন তাঁর পরিচিত এক সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে দেখা করি। আমার স্বমীও মাঝে মাঝে মজা করে বলেন, ‘তোমার উচিত ছিল বড় হোমরাচোমরা দেখে এক পুলিশ অফিসারকে বিয়ে করা।’
আমি এসব কথার ধার ধারি না। আমার নিজের ভালো-মন্দ তো আমাকেই দেখতে হবে, নাকি? তা ছাড়া বিপদ কি আর বলেকয়ে আসে? আজকাল শুনি মোবাইল ফোন ছিনতাই হয় সন্ধ্যার পর। তাই সন্ধ্যার পর কখনোই সেট নিয়ে বেরোই না আমি। এই কয় বছর আগেও যখন মোবাইল ছিল না তখন কী চলতে পারত না মানুষ? আমার মনে হয় এগুলো হলো অন্ধ অনুকরণ আর লোক দেখানো মাত্র। জেনেশুনে বিপদ ডেকে আনে একমাত্র মূর্খই। আমি মূর্খ নই, তাই নিজেদের স্বার্থেই নতুন শহরে গেলে প্রথমেই পরিচিত হই পুলিশের সঙ্গে। বিপদের সময় তাঁরাই তো আমার বন্ধু হবেন!
অনেকেই পুলিশের ওপর আমার এই আস্থা দেখে আমাকে বলে, এত বাড়াবাড়ি বিশ্বাসের অর্থ কী। পুলিশের একটা বড় অংশই তো নানা দুর্নীতি আর ভয়াবহ সব অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত। আমি যে বিষয়টা জানি না, তা নয়। বরং পুলিশের মেয়ে হওয়ার সুবাদে পুলিশের নাড়িনক্ষত্র আমি খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু কথা হলো যে পুলিশও মানুষ, আর মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ দু-ই আছে। এইটেই জগতের রীতি। তবে, এত কিছুর পরও পুলিশের মধ্যে এখনো সততা আর নীতিবোধ আছে। তারা যে ইউনিফর্মটা গায়ে চড়ায়, সেটা তো নিছক একটা কাপড় নয়। ওটা আদর্শেরও প্রতীক। তাই, চারদিকে অসংখ্য অনিরাপত্তার মধ্যে খানিকটা নিরাপত্তা খুঁজতে পুলিশের শরণাপন্ন না হয়ে উপায় কী বলুন?
এই যে আমার স্বামীর চাকরির বদলির কারণে আমার বিবাহিত জীবনে যে পাঁচবার শহর বদলাতে হলো, সেখানে অন্তত তিনটে ঘটনার কথা আমি এই মুহূর্তে আপনাদের বলতে পারব, যেখানে পুলিশের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণেই আজ পর্যন্ত আমরা বহাল তবিয়তে আছি।
যেমন, যেবার আমরা সিলেটে গেলাম তখন আমার স্বামী যে এনজিওতে কাজ করেন তার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের একটা গ্রুপ খুব আন্দোলন করছিল। আমার স্বামী বেচারা এসবের ধারেকাছেও ছিলেন না, কিন্তু কেন যেন রটে গেল যে উনি নাকি চেয়ারম্যানের খাস লোক। ব্যস, আর যায় কোথায়, শুরু হলো রাত-বিরাতে ফোনে হুমকি। এমনকি অফিস থেকে বাসায় আসার পথে একবার পথ আটকেও শাসানো হলো ওঁকে। দিন দিন পরিস্থিতি ভীষণ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াল। চেয়ারম্যান স্যারের লোক বিবেচনায় এক প্রোগ্রাম অফিসারকে রামদা দিয়ে কোপানো পর্যন্ত হলো। আতঙ্কে আর অস্থিরতায় উন্মাদ হয়ে যাচ্ছিলাম আমরা। এমনই এক রাতে হঠাত্ আওয়াজ পেলাম, কারা যেন দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। কোনোমতে জানালা দিয়ে উঁকি মারলাম। দেখি দশ-বারোজন গুন্ডামতো লোক। কারও হাতে রামদা, কারও হাতে বন্দুক। আমার স্বামী আতঙ্কে নীল হয়ে গেছে তখন।
আমি ভয় পেলেও বুদ্ধি হারাইনি। কয় দিন আগেই পরিচিত হয়েছি থানার ওসির সঙ্গে। আমি ওসি সাহেবের মোবাইলে ফোন করলাম। এমনিতে কে আর এত রাতে ফোন ধরে, কিন্তু আমার নামটা ওনার মোবাইলে সেভ করা ছিল বলে রক্ষা। মুহূর্তের মধ্যেই সব ব্যবস্থা করলেন উনি। পুলিশ ফোর্স এসে উদ্ধার করল আমাদের।
কিংবা নওগাঁর ঘটনাটাও বা কম কী? এনজিওর চাকরিতে বেতন-ভাতা মন্দ নয়। সেটা ভালোমতোই জানে চাঁদাবাজের দল। নওগাঁয় গিয়ে আমরা দেখলাম আমার স্বামীর সহকর্মীরা চাঁদা দিচ্ছে নিয়মিত। পুলিশে গেলে বাড়তি ঝামেলা হবে ভেবে থানায় খবর দেয়নি কেউই। তত দিনে ওখানকার ওসি কামরুল সাহেবের সঙ্গে রীতিমতো পারিবারিক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে আমাদের। আমিই সাহস করে ওনাকে বলে ফেললাম কথাটা। রীতিমতো যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন কামরুল ভাই। বললেন, ‘এত দিন বলেননি কেন, ভাবি? যা-ই হোক, আপনারা ভাববেন না কিছু, যা করার আমি করব।’ ব্যস, আসলেই কিছু করতে হয়নি আমাদের। চাঁদাবাজদের পুরো দলটাকেই দুই দিনের মধ্যে শ্রীঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন কামরুল ভাই। আমাদের একটা টাকা চাঁদাও গুনতে হয়নি।
মনে পড়ে জামালপুরের ঘটনাও। হয়েছিল কি, তখনো অমার বয়স ত্রিশ পেরোয়নি, শরীর-স্বাস্থ্য-চেহারা তখন পর্যন্ত বেশ আকর্ষণীয়। আর, সুন্দরী না হলেও একটা বাড়তি চটক আছে আমার চেহারায়। সেটা দেখে ওখানকার এক গুন্ডা আমার পিছে লাগল। খুব ডিস্টার্ব করত। যখন-তখন ফোন করে বসত। একদিন তো বাড়িতেও চলে এসেছিল। আমি ভয়ে স্বামীকেও বলতে পারিনি। বউকে ছেলেরা যতই বিশ্বাস করুক না কেন, এসব ব্যাপার কেউই ভালো চোখে দেখে না, মুখে না বললেও মনে মনে ধরেই নেয়, নির্ঘাত বিষয়টায় বউটারও প্ররোচনা আছে। আমি জানালাম ওসি মিজানকে। মিজান ভাই স্মিত হেসে বললেন, ‘আপনি কিছু ভাববেন না, ভাবি।’ ওই হারামজাদাকে এমন সাইজ করব আমি যে আপনি তো দূরের কথা, জীবনে আর কোনো মেয়ের দিকেও মুখ তুলে তাকাবে না।’ ঠিকমতোই ‘সাইজ’ করা হয়েছিল গুন্ডাটাকে। এরপর আর কখনো ঝামেলা করেনি ব্যাটা।
এত কিছুর পরও কি আপনারা বলবেন যে নতুন শহরে গেলে প্রথমেই পুলিশের বড় দারোগার সঙ্গে পরিচিত হওয়াটা আমার বাড়াবাড়ি, পুলিশে ভরসা করাটা বোকামি?
তাই এবারও আমার স্বামী রাজশাহীতে বদলি হয়ে আসামাত্র পরিচিত হয়ে নিয়েছি ওসি সাইদুর রহমান সাহেবের সঙ্গে। দিব্যি সজ্জন মানুষ। বউ-ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে দাওয়াতও খেয়ে গেছেন। এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত আমি।
আজ ২২ তারিখ। আমাদের একমাত্র মেয়ের জন্মদিন আজ। কোনো অনুষ্ঠান করব না। কিন্তু ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য সন্ধ্যাবেলায় আমি এসেছি সাহেববাজারে। বেকারির দোকান থেকে একটা কেক কিনব। কেকটা কারখানা থেকে এনে দিতে বেশ অনেকটা সময় নষ্ট হলো। যখন রিকশায় করে ফিরছি তখন রাত। শীত চলে এসেছে। তাই সন্ধ্যার পরই ঝুপ করে নেমেছে রাত। আমার কেমন জানি একটু ভয় ভয় করতে লাগল। একদম নির্জন একটা রাস্তা দিয়ে রিকশাঅলা আসছে। চারদিকে জনমানুষের চিহ্ন নেই। নতুন এসেছি শহরে। চিনি না রাস্তাঘাট। রিকশাঅলা বলল, ‘এটাই শটকাট হবে, আপা।’ ও কি সত্যি বলল নাকি কোনো কুমতলবে এই নির্জন রাস্তায় নিয়ে এল আমাকে? বুকটা ধক্ধক্ করতে লাগল আমার। ছিনতাইয়ের ভয়ে ফোনসেটটাও বাসায় রেখে এসেছি। না হলে ওসি সাইদুর ভাইকে ফোন করা যেত।
যখন এসব ভাবছি তখন হঠাত্ করে রিকশা থামাল রিকশাঅলা। ভয়াবহ চমকে উঠে আমি, ‘কী হলো?’
রিকশাঅলা বলল, ‘কিছু না আপা, আপনে একটু বসেন। আমি একটু সাইডে যামু। খুব প্রস্রাব ধরছে।’
বলেই রিকশাঅলা হাওয়া। আমি ততক্ষণে নিশ্চিত হয়ে গেছি, কপালে দুর্ভোগ আছে আমার আজকে। ছিনতাই? নাকি শরীর? হঠাত্ করেই যেন দেবদূতের মতো রাস্তার ওই মাথায় চোখে পড়ে, হেঁটে আসছে দুজন টহল পুলিশ।
পুলিশ!
যেন জানে পানি ফিরে আসে আমার।
রিকশা থেকে নেমে এক দৌড়ে পুলিশ দুজনের দিকে ছুটি আমি।
২৩ অক্টোবর তারিখে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি খবর:
রাজশাহীতে ধর্ষণের পর খুন
রাজশাহী সংবাদদাতা: রাজশাহীতে সালমা আক্তার (৩৭) নাম্নী এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে শহরের পার্ক রোডে এই ঘটনা ঘটে। খবরে প্রকাশ, সালমা আক্তার রিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন। রিকশাচালক প্রাকৃতিক কাজ সারতে গেলে আততায়ী দুজন এই কাণ্ড ঘটায়। রিকশাচালক প্রাকৃতিক কাজ সেরে সালমা আক্তারকে না পেয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে। তারপর এক কোণের ঝোপে গিয়ে সে ঘটনাটি দেখতে পেয়ে সাহসিকতার সঙ্গে খুনি দুজনকে ধরে ফেলে। কিন্তু ততক্ষণে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে হতভাগ্য সালমাকে। উল্লেখ্য, আততায়ী দুজন মদ্যপ অবস্থায় ছিল। তারা দুজন এক ফিল্ম ইউনিটে শুটিং শেষে মাতাল অবস্থায় ওখান দিয়ে ফিরছিল। গ্রেপ্তারের সময় তাদের পরনে পুলিশের ইউনিফর্ম ছিল। জানা গেছে, আততায়ী দুজন জুনিয়র আর্টিস্ট, সিনেমায় কনস্টেবলের চরিত্রে অভিনয় করছিল। নিহতের স্বামী জহির আহমেদ এনজিও কর্মকর্তা। তিনি বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানিয়েছেন, নিহত সালমা তার পূর্বপরিচিত। তিনি বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৮, ২০১০
Leave a Reply