কঠিন, তবে সম্ভব, যদি কয়েকটি শর্ত পূরণ হয়। প্রথম হলো, কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে। এখানেই সমস্যা। শিল্পোন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ক্রমাগত উত্পাদন বাড়িয়ে চলেছে। সম্প্রতি চীন, ভারত, ব্রাজিল প্রভৃতি উদীয়মান অর্থনীতির দেশের প্রবৃদ্ধিও দ্রুত হারে বাড়ছে। উন্নয়নের জন্য তেল-গ্যাস-কয়লা প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে যায়। এগুলো পোড়ালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস বা গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়ে। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এখন যদি কার্বন নির্গমন কমাতে হয়, তাহলে উন্নত দেশগুলোর উন্নয়নের হার কমাতে হবে। সেটা আমেরিকা, ইউরোপ বা চীন, ভারত সহজে মানতে চায় না। কে গরিব হতে চায়? তাহলে উত্পাদন না কমিয়েও উষ্ণায়ন কমানোর উপায় কী? একটা উপায় হলো, বন রক্ষা করা এবং আরও বেশি বনায়ন। এটাও কঠিন, কারণ, বনের জন্য অনেক জমি দরকার। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে বনের জন্য বেশি জমি থাকবে না। তাই চেষ্টা চলছে, এমন প্রযুক্তি বের করার, যা কম জ্বালানি ব্যবহার করে বেশি উত্পাদন করবে। অন্যদিকে সৌর-বিদ্যুত্, বায়ু-বিদ্যুত্, পানি-বিদ্যুত্ প্রভৃতির উত্পাদন ও ব্যবহার বাড়ানো। শুধু তা-ই নয়, মাটির ভেতর থেকে বিশেষ পাইপের সাহায্যে তাপ বের করে এনে তাকে ব্যবহার করে শীতের দেশে ঘরবাড়ির ভেতরের অংশ গরম রাখার কাজ (হিটিং সিস্টেম) চালানোর প্রযুক্তিও আবিষ্কার হয়েছে। এতে জ্বালানি পোড়ানোর হার কমবে। আরেকটি চমকপ্রদ উপায় হলো, শিল্পোন্নত দেশগুলোর অপচয়ের হার কমানো। একটি জরিপে দেখা গেছে, শুধু আমেরিকার সব মানুষ মিলে বছরে ১৫০ ট্রিলিয়ন (১৫০ লাখ কোটি) কিলো ক্যালোরির সমপরিমাণ খাদ্য নষ্ট করে। অন্যভাবে বলা যায়, তাদের জন্য বছরে যত খাদ্য দোকানপাটে আসে, তার প্রায় ৪০ শতাংশই নানা কারণে না খেয়ে ফেলে দেওয়া হয়। নষ্ট করা এই পরিমাণ খাদ্য তৈরিতে প্রায় ৩০ কোটি ব্যারেল জ্বালানি তেল পোড়ে। উপরন্তু ফেলে দেওয়া খাদ্য পচে মিথেন গ্যাস সৃষ্টি করে, যা কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস। ১৯৭৪ সালে আমেরিকায় খাদ্য অপচয়ের হার ছিল ৭৪ শতাংশ। অর্থাত্, দিনে দিনে এ ধরনের অপচয় বাড়ছে। যদি উন্নত দেশগুলো খাদ্য-স্বেচ্ছাচারিতা কমায়, তাহলেও অনেক কার্বন কমানো সম্ভব। তবে মনে রাখা দরকার, এত কিছু করেও হয়তো সবটা সামাল দেওয়া যাবে না। কারণ, কার্বন নির্গমনের হার এতটাই কমাতে হবে, যেন আগামী ৫০ বছরে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি না বাড়ে। বর্তমানের ধারাটি অব্যাহত থাকলে তাপমাত্রা বাড়বে চার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, যা মানুষের প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলতে পারে। তাই বিপর্যয় রোধে ছোটখাটো নয়, বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে হয়তো কার্বন নির্গমন কমানো সম্ভব।
আব্দুল কাইয়ুম
Leave a Reply