৫২. ব্রক্ষাস্ত্র ২ [ওসিআর ভার্সন – প্রুফ সংশোধন করা হয়নি]
কুয়াশা ৫২
প্রথম প্রকাশ: জুন, ১৯৭৬
কামাল এবং রাজকুমারীকে কাবু করে শত্রুদল উল্লাসে ধেই ধেই করে নাচতে শুরু করল। কিন্তু হাতে বড় আকারের ঘড়িওয়ালা একজন চিৎকার করে উঠল, ‘সোলায়মান ছাড়া সবাই যে যার কাজে চলে যাও। আমরা পরবর্তী হুকুমের জন্যে থাকব কিছুক্ষণ এখানে।
উল্লাসধ্বনি থামল। সবাই চলে গেল বাড়ি ছেড়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই।
আরও খানিক পর দলপতির নির্দেশ এল, কামাল এবং কুয়াশার সহকারিণী রাজকুমারী ওমেনাকে হত্যা করো!’
হুকুম পেয়ে পকেট থেকে রিভলবার বের করল শত্রদলের দুজন।
ইতিমধ্যে অজ্ঞান কামাল এবং রাজকুমারীকে বেঁধে ফেলা হয়েছে। জ্ঞান এখনও ফেরেনি ওদের। দুই শত্রু ওদের দুজনের দিকে দুটো রিভলবার তাক করল।
অকস্মাৎ গর্জে উঠল একটি পিস্তল পর পর দু’বার।
কামরার মেঝেতে শত্রুদের, দেহ দুটো লুটিয়ে পড়া। বুক ভেদ করে গেছে বুলেট একজনের, অপরজনের মাথা ফুটো হয়ে গেছে। গুলিবিদ্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু।
কিন্তু কামরার ভিতর কেউ প্রবেশ করল না।
জ্ঞান ফিরল ওদের খানিক পরই। চোখ মেলে দুটো লাশ দেখে বিস্ময়ের সীমা পরিসীমা রইল না ওদের।
রাজকুমারী নিজের হাতের বাঁধন খুলে ফেলল “অনায়াসে। কামালের পা দুটোও বাধা হয়েছে। খুলে দিল রাজকুমারীই।
ব্যাপারটা কি? শত্রুদের অনুচররা খুন হলো কিভাবে?’ রাজকুমারী উত্তর না দিয়ে বলল, বাড়িটা একবার সার্চ করা দরকার।
বাড়ি সার্চ করে কাউকে না পেলেও কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেল, যা দেখে বোঝা গেল বাড়িটার মালিকের নাম সাঈদ চৌধুরী। বাড়ির উপরতলায় একটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি দেখা গেল। কিছু কিছু কাগজপত্রে একটি মেয়ের নাম কয়েকবার দেখা গেল।
মেয়েটির নাম সাঈদা শরমিন। বোঝা গেল সাঈদ চৌধুরীর মেয়ে হলো সাঈদা শরমিন।
‘এই সাঈদা শরমিনই কিন্তু কুয়াশাকে অনুসরণ করছিল। কুয়াশা একেই ।
দেখেছিল মোখলেসুর রহমানের অফিসে।
রাজকুমারীকে চিন্তিত দেখাল। কিছু যেন ভাবছে সে। চোখ দুটো হয়ে উঠেছে। নিস্পলক এবং স্বপ্নাচ্ছন্ন। কামাল চেয়ে রইল তার দিকে। গভীর ভাবে কিছু যেন
অনুভব করার চেষ্টা করছে রাজকুমারী।
কামাল বিরক্ত করল না ওকে।
খানিক পর নড়ে উঠল রাজকুমারী। বড় বড় হয়ে গেছে চোখ দুটো। কপালে ঘামের বিন্দু।
কামাল! সর্বনাশ! কুয়াশা তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিপদে পড়েছে–বাঁচার কোন আশাই নেই! কিংবা…কিংবা••এতক্ষণে হয়তো সে…।’
রাজকুমারী ‘বিষ্যৎ দেখতে পায়। আজ পর্যন্ত তার ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যে হয়নি। তার কথা অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।
বোবা দৃষ্টিতে চেয়ে রইল কামাল। হঠাৎ সে লক্ষ করল, থর থর করে কাঁপছে সে! কোথাও কোন ভুল হয়নি তো তোমার?
রাজকুমারী ছুটতে শুরু করল। ঝড়ের বেগে কামরা থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে সে বলল, ভূল না, কামাল। ভুল আমার হয় না।’
কামাল ছুটল রাজকুমারীর পিছু পিছু।
ট্যাক্সিটা ওদের কথামত অপেক্ষা করছিল তখনও। তবে ট্যাক্সিটা ছিল বনজঙ্গলের আড়ালে। ওদেরকে দেখে ভয়ে ভয়ে বেরিয়ে এল ড্রাইভার। বলল, ‘খানিক আগে কয়েকজন গুণ্ডা চেহারার লোককে যেতে দেখে লুকিয়েছিলাম আমি।’
রাজকুমারী জানতে চাইল, আর কাউকে দেখোনি চলে যেতে?’
দেখেছি। সুন্দরী একটি যুবতী মেয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে চলে গেল••• রাজকুমারী তাকাল কামালের দিকে।
সাঈদা শরমিন?’
রাজকুমারী উত্তর দিল না। ট্যাক্সি ছুটতে শুরু করেছে। বড় রাস্তায় ট্যাক্সি উঠতেই ওরা ধূম কুণ্ডলী এবং অগ্নিশিখা দেখতে পেল। দক্ষিণ দিকের আকাশ ঢাকা পড়ে গেছে প্রায়।
শহরের মাঝখানে কোথাও আগুন লেগে গেছে! রাজকুমারী আনমনে বলল, কুয়াশা আটকা পড়েছে ওই আগুনের ভেতরই, সম্ভবত। তার সাথে আর একজন আছে…সম্ভবত শহীদ ভাই।’
ট্যাক্সি শহরে পৌঁছুল।
এদিকে শহরের মধ্যস্থলের সেই বিল্ডিংয়ের সর্বাঙ্গ গ্রাস করেছে আগুন। মি. সিম্পসনের মুখটা রক্তের মত লাল হয়ে উঠেছে। জীপে বসে লাউডস্পীকারের মাউথপীসে মুখ ঠেকিয়ে অবিরাম নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি ফায়ারব্রিগেডের কর্মীদেরকে।
আগুন নেভাবার জন্য দমকল বাহিনীর অনেকগুলো গাড়ি এসে গেছে। হোস পাইপ থেকে অনর্গল পানির মোটা ধারা নিক্ষেপ করা হচ্ছে বিল্ডিংয়ের দিকে। কিন্তু আগুন নেভা তো দূরের কথা, তা যেন আরও ব্যাপক হয়ে আরও আয়ত্তের বাইরে
ভলিউম ১৮
চলে যাচ্ছে।
আসলে, দমকলবাহিনীর কর্মীরা হাল ছেড়ে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে। এ আগুন নেভানো সম্ভব নয়, তাদের অভিজ্ঞতা এ কথাই বলে। তারা চেষ্টা করছে আগুন যাতে পাশের বাড়িগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
বিল্ডিংটার চারদিকে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। বিদ্যুৎবেগে ছড়িয়ে পড়েছে খবর। সবাই জানে, কুয়াশা প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের ভিতর আটকা পড়ে গেছে। তার সাথে শহীদও আছে। | বিশ মাইল দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে অগ্নিশিখা এবং ঘন কালো ধূম কুণ্ডলী। কিন্তু টেলিফোনে, ওয়্যারলেসে খবর ছড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে দেশের সর্বত্র।
সবাই এখন জানে কুয়াশা এবং শহীদের বাঁচার কোন আশাই নেই।
ওই বিল্ডিংয়ের ভিতরে কেউ যদি থাকে, নির্ঘাৎ সে বেঁচে নেই।এ ব্যাপারে সন্দেহ করাবোকামি।
| কুয়াশার এমন বিপদের কথা শুনে শহরের হাজার হাজার নিঃসম্বল মানুষ ছুটে এসেছে।
পুলিস কর্ডন করে ঘিরে রেখেছে গোটা এলাকাটা। সেই কর্ডন ভেদ করে জ্বলন্ত বিল্ডিংয়ের দিকে এগিয়ে যাবার কোন উপায় নেই কারও।
রাজকুমারী এবং কামাল যখন ভিড় ঠেলে, পুলিসের কর্ডন ভেদ করে মি. নি পসনের কাছে পৌঁছুল তখন রাত সাড়ে সাতটা।
মি. সিম্পসনের চোখ দুটো জবা ফুলের মত লাল দেখাচ্ছে। টপটপ করে ঘাম পড়ছে তার কপাল থেকে। সরকারী গোয়েন্দারা রয়েছে তার চারপাশে, সবাই বোকার মত চেয়ে আছে আগুনের দিকে। মি. সিম্পসন উন্মাদের মত পায়চারি করছেন রাস্তার উপর।
ছুটন্ত জুতোর হিলের শব্দ শুনে সবেগে ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি। কামাল এবং রাজকুমারীকে ছুটে আসতে দেখে বিকৃত হয়ে উঠল তার মুখের চেহারা। অতি কষ্টে নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করলেন তিনি।
‘কি খবর, মি. সিম্পসন?’ কামাল হাঁপাচ্ছে।
সংক্ষেপে খণ্ডযুদ্ধের কথা এবং মাইক্রোফোনে কুয়াশার সাবধানবাণীর কথা বর্ণনা করল একজন গোয়েন্দা। মি. সিম্পসন পায়চারি করছেন আবার। কথা বলার মত মনের অবস্থা নেই তার এখন।
সরকারী গোয়েন্দা বলছে এখনও, মি. কুয়াশা যদি সময় মত সাবধান করে না দিতেন তাহলে কয়েকশো লোক মারা পড়ত। আহত হয়েছে মাত্র কয়েকজন, বিস্ফোরণের সময় ইটের আঘাতে।’
| রাজকুমারীকে অস্বাভাবিক শান্ত দেখাচ্ছে। সে জানতে চাইল, আর যাদেরকে পালাতে দিতে নিষেধ করেছিল কুয়াশা?’,
| ‘তাদের ছায়াও দেখতে পাইনি। শয়তান দুটো নিশ্চয়ই নিজেদের ফাঁদে পড়েছে–এতক্ষণে ছাই হয়ে গেছে পুড়ে। কুয়াশা ৫২’,
কামাল তখনও গোটা ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পারেনি। সে প্রায় চিৎকার করে উঠল, কুয়াশা কোথায়? শহীদ কোথায়? আমি জানতে চাই।’
, সরকারী গোয়েন্দা হঠাৎ কি মনে করে মাথা নিচু করল, তারপর ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়ে পা বাড়াল সরে যাবার জন্যে। পিছন থেকে থাবা মারল কামাল তার কাঁধে। গোয়েন্দার কাধ ধরে টান মারল, ভদ্রলোক চলে এল কামালের একেবারে পাশে। | আগুনের মত লাল হয়ে উঠেছে কামালের চোখ দুটো । কোটর ছেড়ে যেন বেরিয়ে আসবে চোখের মণি দুটো। আবার সে চিৎকার করে উঠল, ব্যাপার
।
।
‘আমি..মানে, বলতে চাইছি•••মি, কুয়াশা এবং মি, শহীদ ওই আগুনের ভিতর…।’
| শহীদ!’ আর্তনাদ করে উঠল কামাল। পরমুহূর্তে হিংস্র বুনো জন্তুর মত ছুটল সে অগ্নিকুণ্ডের দিকে।
মি. সিম্পসন থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। দেখছেন তিনি। কিন্তু কর্তব্যের কথা ভুলে গেছেন, কামালকে ছুটে যেতে দেখেও তার গলা থেকে কোন শব্দ বের হলো না।
সরকারী গোয়েন্দারা এবং দমকলবাহিনীর কর্মীবৃন্দ ছুটল। কয়েকজন পুলিস অফিসারও যোগ দিলেন তাদের সঙ্গে।
ধরে ফেলল সবাই মিলে কামালকে।
পাগল হয়ে গেছে যেন কামাল। চোখ ভরা পানি তার। উন্মাদের মত হাত-পা চুড়ছে ছাড়া পাবার জন্য। চিৎকার করছে পাগলের মত, ছেড়ে দিন! ছেড়ে দিন। আমাকে! ওকে আমি উদ্ধার করে আনবই…ছেড়ে দিন আমাকে…।’
কামালের পাশেই দাঁড়িয়ে শুনছিল ডি. কস্টা এবং রাসেল সরকারী গোয়েন্দার কথাগুলো। হঠাৎ রাসেল লক্ষ করল, ডিকস্টাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
এখান থেকে হাসপাতাল খুব দূরে নয়। বিস্ফোরণের শব্দই শুধু পায়নি ওরা, বিস্ফোরণের ধাক্কায় হাসপাতাল ভবনটা ভীষণভাবে কেঁপে উঠেছিল, ভেঙে গিয়েছিল জানালার কাঁচ। খানিক পরই নার্সের কাছে আসল খবর জানতে পারে ওরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষওদেরকে রিলিজ অর্ডার না দিলেও শারীরিকভাবে ওরা পুরোপুরি সুস্থই হয়ে উঠেছে কুয়াশার দেয়া আশ্চর্য ক্যাপসুল খেয়ে এবং ইঞ্জেকশন নিয়ে।
হাসপাতাল থেকে দ্রুত চলে এসেছে ওরা হেঁটেই। এসে দেখে কামাল এবং রাজকুমারী সরকারী গোয়েন্দার সঙ্গে কথা বলছে।
রাসেল এদিক ওদিক তাকিয়ে ডি কস্টাকে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়ে গেল। লোকটাকে ভাল করেই চেনে সে। কুয়াশার এমন বিপদের সময় তার মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেহায়েত কম নয়।
রাসেল মি. সিম্পসনের দিকে পা বাড়াল। উদ্দেশ্য, তিনি ডি কস্টাকে
ভলিউম ১৮
দেখেছেন কিনা জিজ্ঞেস করা। | কিন্তু রাসেল কাছাকাছি পৌঁছুবার আগেই মি. সিম্পসন অগ্নিকুণ্ডের দিকে, তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলেন, মাই গড! ওহ মাই গড! বোকার দল তোমরা সবাই করছ কি? একজন মানুষকে তোমরা মেরে ফেললে-মাই গড!
সবাই তাকাল অগ্নিকুণ্ডের দিকে।
হাঁ হয়ে গেল সকলের মুখ। বিল্ডিংয়ের একতলাটায় তখনও আগুন ধরেনি। ডি, কস্টাকে সেখানে দেখা যাচ্ছে। আগুনের অসহ্য উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে পড়ে গেছে সে উঠানে। ক্রল করে এগোচ্ছে, এক ইঞ্চি এক ইঞ্চি করে আরও সামনে, জ্বলন্ত লাল মৃত্যুর দিকে। | ‘গুলি করব আমি! এতগুলো লোকের চোখকে ফাঁকি দিয়ে গেল কি করে ডি. কস্টা ওখানে! এর জন্য যারা দায়ী তাদের সবাইকে আমি গুলি করব।
দিশেহারার মত ছুটোছুটি শুরু হয়ে গেল দমকলবাহিনীর কর্মীদের মধ্যে। একটা ক্রেনের মাথায় চড়ে বসল দুজন কর্মী। ক্রেনের স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ি ধীরে ধীরে
অগ্নিকুণ্ডের দিকে এগোচ্ছে।
এদিকে চিৎকার করছে মি. সিম্পসন, মি. ডি. কস্টা! মি. ডি. কস্টা! মি. ডি. কস্টা•••!
কিন্তু অগ্নিশিখার নৃত্যের শব্দে, বিল্ডিংয়ের অগ্নিদগ্ধ ইট-কাঠ সিমেন্ট-লোহা পতনের আওয়াজেই কান পাতা দায়, মি. সিম্পসনের কণ্ঠস্বর কানেই গেল না ডি. কস্টার।
এগিয়ে চলেছে সে। একটা কথা তার সম্পর্কে প্রচলিত ছিল, কুয়াশাও সে কথা বলত, যত ভানই করুক, আসলে ডি, কস্টা নাকি ভয় বলে কোন শব্দের সঙ্গে পরিচিত নয়। কথাটা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারত না। কিন্তু আজ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়ে গেল যে কথাটা এক বিন্দু মিথ্যে নয়।
কুয়াশা’ প্রজ্জ্বলিত বিল্ডিংয়ের ভিতর আছে একথা শোনার পর ডি কস্টা সকলের অজ্ঞাতে এগিয়ে গেছে।
| এগিয়ে চলেছে সে। এগিয়ে চলেছে মৃত্যুর দিকে, যেখান থেকে কেউ কোনদিন ফিরে আসে না।
অসহ্য উত্তাপে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে বলে মনে হলো ডি. কস্টার। মৃত্যুর এত কাছাকাছি চলে এসেছে সে, অথচ এতটুকু ভয় করছে না তার।
তার চারদিকে ছুটে এসে পড়ছে জ্বলন্ত ইট, কাঠ, কংক্রিটের বড় বড় চাঙ। ক্ষেপ নেই তার।
ক্রেনটা নেমে এসেছে ডি. কস্টার পিঠের উপর। হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে দুজন লোক। লোক দু’জন ডি. কস্টার শার্ট ধরে ফেলল। | ঝট করে মুখ তুলে তাকাল ডি. কস্টা। সঁতে দাঁত চাপল সে। কি যেন বলল মাথা নেড়ে। হাত উঁচু করে ঝাঁপটা মারল। তার সেই হাত খপ কবে ধরে ফেলল একজন লোক। অপরজন ডি. কস্টার পা দুটো ধরে ফেলল দুই হাত দিয়ে। | ক্রেন আবার উঠতে শুরু করল উপর দিকে।
কুয়াশা ৫২।
ডি. কস্টাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে দমকলবাহিনীর কর্মী দুজন।
ডি. কস্টা ও দমকলবাহিনীর কর্মী দুজনকে নিয়ে ক্রেনটা যখন রাস্তার উপর নেমে এসেছে, এমন সময় ঘটল বিস্ফোরণ।
. সেই কান ফাটানো, গগনবিদারী আওয়াজের কথা এ যুগের ঢাকাবাসী কখনও তুলবে না। “ বিস্ফোরণের শব্দটা এমনই ভয়ঙ্কর যে সেই শব্দের ধাক্কায় দমকলবাহিনীর কর্মীরা, পুলিস অফিসারবৃন্দ উপস্থিত বাকি সবাই, যেন ভীষণ একটা ঝাঁকুনি খেয়ে ছিটকে পড়ে গেল রাস্তার উপর।
| বিস্ফোরণের শব্দের পরই’শাটা আটতলা বিল্ডিংটা ধসে পড়ল। হড়মুড় করে ভেঙে পড়ল বিশাল অট্টালিকার কাঠামোটা। চোখের পলকের মধ্যে দেখা গেল উঁচু বিল্ডিংটার আর কোন অস্তিত্ব নেই। যেখানে বিল্ডিংটা ছিল সেখানে শুধু ইট, কাঠ, লোহা, আর কংক্রিটের তূপ দেখা যাচ্ছে।
| পটা জ্বলছে ভীষণভাবে। আগুন ছাড়া কোথাও কিছু নেই। দাউ দাউ আগুন শুধু নিদারুণ উল্লাসে যেন স্তূপের উপর উন্মত্ত ভঙ্গিতে নাচছে।
* মি. সিম্পসন উঠে দাঁড়িয়ে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছেন সেদিকে। চেয়ে আছে বাই। কামাল, রাসেল, ডি, কস্টা–উপস্থিত সবাই।
মি. সিম্পসন নিজের মাথার চুল ধরে টানছেন। অনর্গল ধারায় দু’চোখ থেকে গাল বেয়ে নোনা অশ্রু বেরিয়ে আসছে তার।
পাথরের মূর্তির মত অগ্নিপের দিকে চেয়ে আছে সবাই। কারও মুখে কথা নেই, কারও চোখে পলক নেই।
‘ননা! ননা! নো?’ অকস্মাৎ আর্তনাদ করে উঠলেন মি. সিম্পসন। তারপর শব্দ করে কেঁদে উঠলেন। | শহীদ! আমাকে ফেলে রেখে চলে গেলি তুই!’ বিড়বিড় করে কথাগুলো বলে
টলতে টলতে এক পা এগোল কামাল, পরমুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল সে রাস্তার উপর।
সবাই হতভম্ব। কেউ ধরতে এল না কামালকে।
শুধু একজন, রাজকুমারী ওমেনা, নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে, তার মুখের চেহারা দেখে মনের অবস্থা টের পাওয়া যাচ্ছে না।’
আরও কিছু ঘটবে এই আশায় যেন অপেক্ষা করছে সে।
এদিকে ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চও বসে নেই।
ধ্বংসপ্রাপ্ত বিল্ডিংটার সাততলাটা কারা দখল করে ছিল তা আবিষ্কার করে ফেলল তারা। দেওজী কাংকারিয়া এবং সান্তারাম উলকা নামের দুই সাংবাদিক ছিল সাততলায়। তারা এশিয়ার এক বৃহৎ রাষ্ট্রের নাগরিক। আবাসিক সংবাদদাতা হিসেবে ঢাকায় বসবাস করছে বছর তিনেক থেকে।
ভলিউম ১৮
কিন্তু বিন্ডিংটার প্রকৃত মালিকের সন্ধান পাওয়া গেল না। ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের এজেন্টরা সন্দেহ করল, বিল্ডিংটার মালিক দেওজী কাংকারিয়া এবং সান্তারাম উলকাই। কিন্তু বিল্ডিংয়ের মালিক হিসেবে নিজেদেরকে দাবি করত না তারা। ২
গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক চলল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে।সেক্রেটারি মিলিটারি এবং সিভিল অফিসারদের জানালেন, মি. কুয়াশা এবং সম্ভবত মি. শহীদ বেঁচে নেই বলেই জানা গেছে।
. এদিকে সারা রাত ধরে চলল আগুন নেভাবার সংগ্রাম।
সকাল হয়ে যেতে দেখা গেল আগুন আগের মতই জ্বলছে। এতটুকু কমেনি আগুনের নৃত্য। তবে ইট-কাঠ-পাথর-সিমেন্ট-লোহার স্তূপটা তুলনামূলকভাবে ছোট হয়ে গেছে।
ক্রমে বেলা বাড়তে লাগল। দুপুরের দিকে দ্বিতীয়বার জ্ঞান হারায় কামাল। দু’জন ডাক্তার তাকে দেখাশোনা করছে। হাসপাতাল বা অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তাকে। রাজি নয় সে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কোথাও যেতে।
. যায়নি কেউই। রাস্তার উপর সবাই দাঁড়িয়ে আছে সেই গত রাত সাড়ে সাতটা থেকে। ছাই উড়ে এসে সকলের কাপড়চোপড় কালো করে ফেলেছে। কালো, বিকৃত হয়ে গেছে সকলের চেহারা। খুঁটিয়ে কাছাকাছি থেকে না দেখলে চিনবার উপায় নেই কাউকে।
মোটা মোটা অসংখ্য পাইপ থেকে অবিরাম পানি নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অগ্নিকুণ্ডের দিকে। কোন কাজ হচ্ছে না। ভারী মেঘের মত ঘন ধোয়া উঠে যাচ্ছে শুধু আকাশের দিকে।
, বিকেলের দিকে সেই ঘন কালো ধোয়া পাতলা হয়ে এল। দমকলবাহিনীর কর্মীরা সেই সময় ধ্বংসস্তূপের ভিতর কয়েকটা প্রকাণ্ড আকারের চারকোণা তোবড়ানো জিনিস লক্ষ করল, দেখে মনে হয় ইস্পাতের কামরা এক একটা।
একটি ইস্পাতের কামরা বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করল সকলের। সেই কামরার ইস্পাতের দেয়ালে ফুটো হয়ে গেল হঠাৎ?
পানির পাইপের মুখগুলো ঘুরে গেল সেদিকে। শুধুমাত্র সেই বিশেষ ইস্পাতের কামরার দিকে পানি নিক্ষেপ শুরু হলো।
ইস্পাতের কামরাটির আশপাশের আগুন নিস্তেজ হয়ে পড়ল ঘন্টাখানেকের চেষ্টায়। কিন্তু, তারপরও, কিছু ঘটল না।
এদিকে কামালের জ্ঞান ফিরে এসেছে। ডি, কস্টা, মি. সিম্পসন, রাজকুমারী, রাসেল দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি, দেখছে তারা ইস্পাতের কামরাটা। গোল গর্তটাও পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কামরাটার দেয়ালে। কামাল তাদের পাশে এসে দাঁড়াল।
সবাইকে মৃত মনে হচ্ছে। দম বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। এক একজন এক একটা মর্মর মূর্তি।
সময় বয়ে চলেছে। এমন সময়, হঠাৎ ইস্পাত নির্মিত কামরার দেয়ালের গোল গর্ত থেকে বেরিয়ে
কুয়াশা ৫২
এল একটি তুষার মানব!
অন্তত তুষার মানব বলেই মনে হলো তাকে। তার দেহ বরফ এবং তুষারে সম্পূর্ণ ঢাকা। পাতলা ধোয়া মত বাষ্প উঠছে বরফ থেকে। তুষার মানব মুখ হাঁ। করল, গলগল করে বেরিয়ে এল বাম্প। বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে সে,
এগিয়ে আসছে রাস্তার দিকে।
দ্বিতীয় তুষার মানবকে সবাই দেখতে পেল তারপর। দ্বিতীয় তুষার মানবটি প্রথমটির চেয়ে আকারে বেশ বড়। দৃঢ়, বলিষ্ঠ পায়ে দ্রুত এগিয়ে আসছে সে।
দমকলবাহিনীর কর্মীরা সোল্লাসে চিৎকার করে উঠল। ধ্বংসস্তূপের উপর পানি ফেলে আগুন নেভাতে তৎপর হয়ে উঠল তারা, তুষার মানবদের জন্য পথ তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগে গেল।
রাস্তায় উঠে এল তৃষার মানবদ্বয়। মি. সিম্পসন বিড়বিড় করে কি যেন বলছেন।
কামাল অবাক বিস্ময়ে চেয়ে আছে। রাসেল এতটুকু নড়ছে না। ডি. কস্টাকে দেখে মনে হলো, এই বুঝি কেঁদে ফেলল সে। শুধুমাত্র রাজকুমারী হাসছে–আনন্দের হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে তার অপূর্ব সুন্দর মুখটা।
প্রথম তুষার মানব তার গলার কাছে হাত রেখে কি যেন ধরে সজোরে টান মারল, মাথার বরফসহ একটা হুড খসে পড়ল রাস্তার উপর। তুষার মানবের মুখটা দেখা গেল এবার।
বিকৃত হয়ে গেছে মুখটা। অসম্ভব ঠাণ্ডায় দাঁতে দাঁত বাড়ি খাচ্ছে তার। কামাল এবং রাসেল ছুটল তার দিকে। | প্রথম তুষার মানব হচ্ছে শহীদ খান। ঠাণ্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপতে কাঁপতে শহীদ বলে উঠল, আর একটু হলে বরফ হয়ে যেতাম ঠাণ্ডায়। এত ঠাণ্ডা কি মানুষ সহ্য করতে পারে?’। | দ্বিতীয় তুষার মানবও তার মাথার হুড খুলে ফেলেছে। কুয়াশাকে হাসতে দেখা গেল। বলে উঠল সে, সত্যি, বড় বিশ্রী অভিজ্ঞতা! |
অ্যাসবেসটসের পোশাক খুলে ফেলল ওরা।
শহীদ হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হলো। সংক্ষেপে সম্পূর্ণ ঘটনাই বলে ফেলল ও ধীরে ধীরে।
কুয়াশা মাইক্রোফোনে সাবধান করে দিয়েছিল, তার কারণ থারমাইট বোমাগুলো লক্ষ করে সে বন্দী হবার আগেই। বোমাগুলোই দেখেনি সে, অ্যাসবেসটসের পোশাকের প্যাকেটও দেখতে পায় সেই সাথে । দুটো প্যাকেট সে নিজের কাছে রাখে, কাজে লাগবে মনে করে।
সিগারেট বাড়িয়ে দিলেন মি. সিম্পসন। শহীদ সেটা নিয়ে ঠোঁটে ঝোলাল। আগুন ধরিয়ে দিল কামাল।
কুয়াশা মুচকি মুচকি হাসছে। আবার শুরু করল শহীদ, লেসাবগানটা ছিল কুয়াশার কাছে। কিন্তু সেটা
ভলিউম ১৮
ব্যবহার করে বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেনি ও। ওর উদ্দেশ্য ছিল আমাকে উদ্ধার করা। কিন্তু আমাকে উদ্ধারকরতে করতে যা ঘটবার ঘটে গেল। লেসারগান ব্যবহার করেনি কুয়াশা, কারণ ও জানত থারমাইট বোমা ফাটানো হবে, আগুন গ্রাস করবে বিল্ডিংটাকে। ইস্পাতের যে কামরায় আমি বন্দী ছিলাম সেটা এমনই মোটা ইস্পাত দিয়ে তৈরি যে সাধারণ আগুন তার কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। লেসারগান ব্যবহার করে সেই কামরায় কুয়াশা ঢুকতে পারত ঠিকই, কিন্তু তাতে গর্তের সৃষ্টি হত, এবং পরে সেই গর্ত দিয়ে আগুন প্রবেশ করত। যাক, কুয়াশা করিডরে বন্দী হয়েছিল। করিডরের দেয়ালেই ছিল একটি সুইচ। সেটা কারও চোখে ধরা পড়ার কথা নয় কিন্তু কুয়াশা ঠিকই দেখতে পায় বোতামটা। বোতামটা আসলে আমার কামরায় ঢোকার চাবিকাঠি ছিল। সেই বোতামে চাপ দিতেই আমার কামরার দেয়াল দু-ফাঁক হয়ে যায়, কুয়াশা প্রবেশ করে ভিতরে, দেয়াল আবার স্বয়ংক্রিয় ভাবে জোড়া লেগে যায়। কুয়াশার পরামর্শে তখুনি আমি অ্যাসবেসটস দিয়ে তৈরি পোশাকটা পরে ফেলি। কুয়াশাও পরে নেয়। তারপরই ঘটে বিস্ফোরণ।’
মাই গড! তুমি দেখছি রূপকথা শোনাচ্ছ আমাদেরকে।
শহীদ হাসল। বলল, “রূপকথার চেয়ে কোন অংশে কম নয়, সত্যি! বেঁচে আছি ভাবতে সত্যি বড় অবাক লাগছে। অমন ঠাণ্ডায় কেউ বেঁচে থাকতে পারে। ভাবা যায় না…।’
সবাই হেসে উঠল।
শহীদ বলতে শুরু করুল আবার, বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছিলাম এবং সেই সঙ্গে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা অনুভব করেছিলাম আমরা। তাছাড়া বিশেষ কোন ব্যাপার টের পাইনি। শুধু, ভীষণ ঠাণ্ডা লাগছিল। অবশ্য, গোটা বিল্ডিংটা যখন ধসে পড়ল তখন দুজনে বেশ খানিকক্ষণ গড়াগড়ি খেয়েছি কামরার মেঝেতে। কিন্তু কামরাটা, উপর থেকে সরাসরি নিচে পড়েনি, তাই রক্ষে। তাহলে থেঁতলে যেত শরীর। রয়ে সয়ে, ধীরে ধীরে কামরাটা নিচে পড়ে যায়। তাই বিশেষ ব্যথা-ট্যথা পাইনি। যাক, এরপর আমাদের করার কিছুই ছিল না। অপেক্ষা করা ছাড়া। যখন অনুমানে বুঝলাম যে, আমাদের কামরার চারদিকে বিশেষ কোন বাধা নেই তখন কুয়াশা লেসারগান ব্যবহার করে দেয়ালে গর্তের সৃষ্টি করল•••তারপর তো তোমরাই সব দেখেছ।’
| ‘কিন্তু অ্যাসবেসটসের পোশাকে তুষার এল কোত্থেকে!’ কামাল জানতে চাইল।
| শহীদ পোশাক খুলে ফেলেছে। কুয়াশাও। দমকলবাহিনীর লোকেরা পোশাক দুটো পরীক্ষা করছে।
* শহীদ বলল, পোশাক দুটো পরীক্ষা করে দেখলেই রহস্যটা জানতে পারবি। পোশাকগুলো অস্বাভাবিক মোটা, লক্ষ করেছিস? এয়ার প্রুফ তো বটেই, ফাপাও, বটে। ফাপ জায়গাটায় উন্নত ধরনের অ্যামোনিয়া সলিউশন আছে, এই সলিউশন ব্যবহার করা হয় রেফ্রিজারেশন সিস্টেমে, যা উত্তাপ পেলে বরফ উৎপাদন করতে
কুয়াশা ৫২
পারে। উত্তাপ পেয়ে পোশাকের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় বাতাস আলোড়িত হয়, যোতের মত বয়ে যেতে থাকে। ফাপা জায়গাটায় অসংখ্য কয়েল আছে, কনডেনসার হিসেবে কাজ করে সেগুলো। মোট কথা, পোটেবল রেফ্রিজারেটরের ভিতর ছিলাম আমরা। তবে অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হয়ে মারাই যেতাম, যদি
কুয়াশার সাথে অক্সিজেন ক্যাপসুল থাকত।
কুয়াশার মুখের হাসি উবে গেছে।
হঠাৎ সে বলে উঠল, “আমাদের কাজ কিন্তু শেষ হয়নি। শত্রুপক্ষ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এখুনি এখান থেকে সরে পড়া দরকার আমাদের।
কিন্তু তোমরা বেঁচে আছো তা এখনও জানে না শত্রুরা।’
কুয়াশা যেন শুনতে পায়নি মি. সিম্পসনের কথা। এখুনি কাজ শুরু করা দরকার! আবার একটা ভয়ঙ্কর ঘর্টনা ঘটবে।’
| সবাই অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইল কুয়াশার দিকে। বাজে কথা বলার লোক সে নয়। নিশ্চয়ই কিছু বুঝতে পেরে বলছে কথাটা।
, এমন সময় একজন গোয়েন্দাকে পুলিস কর্ডন ভেদ করে ছুটে আসতে দেখা গেল এদিকে।
* চিৎকার করছে, কী আশ্চর্য! আপনারা বেঁচে আছেন। কিন্তু••.মি. কুয়াশা, দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে আবার একটা! হাঁপাতে হাঁপাতে কাছে এসে দাঁড়াল গোয়েন্দা। দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করল সে, “আমাদের একজন সহকর্মী খানিক আগে ফোন করে জানায় যে সে গোপন একটা খবর পেয়েছে। খবরটা হলো, আর্মি প্রুভিং গ্রাউন্ডের মত একটা দুর্ঘটনা অচিরেই ঘটবে। কিন্তু কোথায় সেই রহস্যময় মৃত্যু আঘাত হানবে তা সে জানতে পারেনি। তার বক্তব্য ছিল, খবরের সূত্রটি অথেনটিক..’
• বক্তব্য ছিল? দ্রুত জানতে চাইল কুয়াশা। | গোয়েন্দা বলল, হ্যাঁ, আমরা আমাদের সেই সহকর্মীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তাকে পাওয়া যায়নি, পাওয়া গেছে তার লাশ।’
সবাই নিশ্চপ! দাঁতে দাঁত চেপে ক্রোধ দমন করার চেষ্টা করছেন মি. সিম্পসন। শহীদের মুখটা অস্বাভাবিক গম্ভীর হয়ে উঠল।
| গোয়েন্দা হাত নেড়ে বলে উঠল আবার, কিছু একটা করতেই হবে, মি. কুয়াশা। আমরা এই নির্মম নাটকের নির্বাক দর্শক হয়ে থাকতে পারি না। কিছু একটা করতেই হবে আমাদের। তা না হলে কয়েকশো মানুষ খুন হবে আবার!
তিন
কামাল, ডি. কস্টা এবং মি. সিম্পসনকে কয়েকটা নিদের্শ দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দিল কুয়াশা । রাজকুমারী এবং শহীদকে নিয়ে ফিরে এল সে হোটেলে।
রাত বাড়ছে। পায়চারি করছে কুয়াশা রুমের মেঝেতে। মাঝে মাঝে দেয়াল
ভলিউম ১৮
১৪
ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে সে। | কামাল এল রাত সাড়ে দশটায়। বলল, তোমার কথাই ঠিক, কুয়াশা। গত রাতে পাঁচজন আরোহীকে নিয়ে একটা চার্টার্ড প্লেন টেক-অফ করেছে। আরিফ নামে একজন পাইলটও ছিল প্লেনে। প্লেনটা দিনাজপুর যাবার কথা। কিন্তু এ খবর
তুমি জানলে কিভাবে?
মি. সিম্পসন এলেন। বললেন, ‘শফিফুল কবীরকে মে গোয়েন্দা অনুসরণ করছিল সে মেসেজ পাঠিয়েছে আজ সকালে চট্টগ্রাম থেকে। মেসেজে সে জানিয়েছে, শফিফুল কবীর কক্সবাজারের দিকে রওনা হবে বলে মনে হচ্ছে।’
| ডি কস্টা এল একটা ব্যাগ নিয়ে। কুয়াশা তাকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আনার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছিল।
কুয়াশা বলল, মি. ডি. কস্টা, আমাদের হেলিকপ্টারটা এখন কোথায়? ‘ঢাকাতেই আছে। পাঁচ নম্বর আস্তানায়।’ | ‘গুড। আপনি এখনি পাঁচ নমূরে চলে যান। ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে চেক করিয়ে সব ঠিকঠাক আছে কিনা জেনে আমাকে খবর দেবেন। আমরা প্রথমে চট্টগ্রাম যাব, সেখান থেকে দরকার হলে যাব কক্সবাজারে। দেওজী কাংকারিয়া এবং সান্তারাম। উলকাকে আমরা চাই। ওরা গতরাতের প্লেনে দিনাজপুরের দিকে রওনা হয়েছিল। কিন্তু আসলে তারা দিনাজপুর যায়নি। প্লেন ঘুরিয়ে নিয়ে গেছে চট্টগ্রামের দিকেই।’
সবাই অবাক হয়ে চেয়ে রইল। এত সব খবর কুয়াশা জানছে কিভাবে? এইসব খবরের সূত্র কি? শহীদ কিন্তু অবাক হলো না। ও চেয়ে আছে কুয়াশার হাতের বড় আকারের হাত ঘড়িটার দিকে।
| ভোর চারটের সময় ফোন এল ডি কস্টার, হেলিকপ্টার রেডি ফর টেকঅফ, হাপনারা সব পাঁচ নম্বরে চলিয়া আসুন।’
একঘণ্টার মধ্যে ‘কপ্টার ওদের সকলকে নিয়ে আকাশে উড়ল। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল রাস্তায়, দেশী-বিদেশী শত শত সাংবাদিক কুয়াশার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য হোটেলের সামনে ভিড় করলেও পুলিস তাদের কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেয়নি। ছদ্মবেশ নিয়ে হোটেল ত্যাগ করে ওরা একটি মাইক্রোবাসে চড়ে। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তাদেরকে কর্তৃপক্ষ জানায় হোটেলের স্টাফরা নাইট-ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
ওদের গন্তব্যস্থান সম্পর্কে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়।
ভোর সাড়ে চারটা। কপ্টারের সীটে বসে সবাই ঘুমে ঢুলছে। জেগে আছে শুধু কুয়াশা। সুটকেস খুলে ভিতরের রাসায়নিক দ্রব্যভর্তি বোতলগুলো নিয়ে আপন মনে কাজ করছে সে।
মিনিট বিশেক পর কুয়াশা যেন আপন মনেই চমকে উঠল।
শহীদের দিকে তাকাল সে। শহীদ চোখ বুজে ছিল, ঘুমায়নি। নড়ে চড়ে বসল সে। তীক্ষ্ণ হলো ওর দৃষ্টি, বলল, কি ব্যাপার, কুয়াশী?
মাথা নিচু করে কি যেন অনুভব করবার চেষ্টা করছে কুয়াশা। শহীদের কথার
কুয়াশা ৫২
১৫
উত্তরে কিছুই বলল না সে, যেন শুনতেই পায়নি ওর কথা।
শহীদের গলা শুনে ঘুম ভেঙে গেছে কামালের। তার নড়াচড়ায় জেগে উঠেছে। ওমেনা। ডি. কস্টাও চোখ মেলে সিধে হয়ে বসল। রাসেলের ঘুম আগেই ভেঙেছে।
হঠাৎ মুখ তুলল কুয়াশা। গভীর থমথমে শোনাল তার কণ্ঠস্বর, দেরি হয়ে গেছে। আমাদের। শেষ রক্ষা বোধহয় করা গেল না।
সবাই অবাক হয়ে চেয়ে আছে। কুয়াশার কথা কেউ যেন ধরতে পারছে না।
আবার মাথা নিচু করে চিন্তা করতে লাগল কুয়াশা, কয়েক মুহূর্ত পর বলে উঠল সে, ‘মর্মান্তিক ঘটনাটা ঘটেছে-কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। সৈনিকদের প্রভাতৃকালীন প্যারেডের সময় ঘটনাটা ঘটে। পাঁচশো সোলার প্যারেডে যোগ দেয়। রহস্যময় মৃত্যু আঘাত হেনেছে তাদের উপর। বেশির ভাগই নিহত হয়েছে। বেঁচেছে মাত্র অল্প কয়েকজন।’
সবাই নিশ্চুপ। কারও মুখে কোন কথা নেই। শত্রুরা আবার ছোবল মেরেছে, কেড়ে নিয়েছে প্রায় পাঁচশো সেনার প্রাণ।
আগুন ধরে গেছে যেন ওদের প্রত্যেকের শরীরে। শত্রুদেরকে সমুচিত শিক্ষা দিতেই হবে। তা না হলে শান্তি পাবে না ওরা।
ওয়্যারলেসে যোগাযোগ করল কুয়াশা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের সঙ্গে। অপারেটরের মুখ থেকে প্রায় সব তথ্যই পাওয়া গেল।
বলাই বাহুল্য, কড়া প্রহরা ছিল প্যারেড গ্রাউণ্ডের চারদিকে। কোন সিভিলিয়ান উপস্থিত ছিল না সেখানে।
আর্মি অফিসাররা দুর্ঘটনার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এবারের প্যারেডে স্মোক-স্ক্রীন ৰা আর কিছুর পরীক্ষা হচ্ছিল না। সামরিক বিভাগের বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করে দুর্ঘটনার কারণ বলতে না পারলেও তারা একটি ব্যাপারে সবাই একমত যে আক্রমণটা পূর্ব পরিকল্পিত এবং শত্রুপক্ষ সেনাদেরকে হত্যা করার। জন্যই আক্রমণ পরিচালনা করেছে। তাদের ধারণা, কোন এক ধরনের লাঙ প্যারালাইজার মেশিন ব্যবহার করেছে শক্ররা। নিক্ষিপ্ত রশ্মি বা আলোক-বিন্দুর প্রভাব এমনই যে উপস্থিত প্রত্যেকের শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া আচমকা বন্ধ করে দিতে পারে।
অল্প যে ক’জন সেনা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে তাদেরকে অক্সিজেন ট্রিটমেন্ট-এর সাহায্যে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা চলছে।
কুয়াশা অপারেটরের কাছ থেকে প্রায় সব তথ্য পেলেও তাকে কেমন যেন অসন্তুষ্ট মনে হলো। অপারেটরকে নির্দেশ দিল সে, ‘প্যারেড পরিচালনা করছিল কে তা জানো?’
‘মেজর সালেক, মি. কুয়াশা।’
কুয়াশা বলল, “তাকে খবর দাও। আমি তার সাথে কথা বলতে চাই।’ কয়েক মিনিট পরই মেজর সালেকের যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর ভেসে এল, মি. কুয়াশা?
ভলিউম ১৮
আমি মেজর সালেক বলছি। আপনার অক্সিজেন ট্রিটমেন্ট সাকসেসফুল। সেন্ট পার্সেন্ট। কিন্তু কথাটা আমরা প্রকাশ করছি না। কাউকে জানানো হয়নি। এমনকি ক্যান্টনমেন্টের কয়েকজন অফিসার ছাড়া কেউ জানে না আসল ঘটনা।
কুয়াশা বলল, গুড। ঠিক আছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল কুয়াশা। সবাই একযোগে প্রশ্ন করে উঠল। কি ব্যাপার? অক্সিজেন ট্রিটমেন্ট মানে?’
কুয়াশাকে শান্ত, দুশ্চিন্তামুক্ত দেখাচ্ছে। বলল, ‘যাক, শেষ পর্যন্ত ক্ষতি হয়নি। ব্যাপার কি জানো, আমি প্রতিটি ক্যান্টনমেন্টে অক্সিজেন ক্যাপসুল পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, সেনারা যখন একত্রিত হয়ে কোন কাজে যাবে তখন যেন তাদের প্রত্যেককে একটা করে ক্যাপসুল খাইয়ে দেয়া হয়। প্যারেডে যারা যোগ দিয়েছিল তারা খেয়েছিল একটা করে ক্যাপসুল, ফলে কেউ মরেনি। কিন্তু কথাটা চেপে রাখা হবে, যাতে শত্রুপক্ষ ধরে নেয় যে তাদের অস্ত্র ব্যর্থ
হয়নি।’
সবাই অবাক হয়ে চেয়ে রইল কুয়াশার দিকে।
চট্টগ্রামে পুরো একটা দিন কাটিয়ে পরদিন প্লেনে চড়ে কক্সবাজারে পৌঁছেছে শফিকুল কবীর। সরকারী গোয়েন্দা হেলাল আহমেদ তাকে ছায়ার মত অনুসরণ করে যাচ্ছে।
বিমান বন্দর থেকে ট্যাক্সি নিয়ে শহরের দিকে যাচ্ছে শফিকুল কবীর। অপর একটি ট্যাক্সি নিয়ে অনুসরণ করছে হেলাল আহমেদ।
রাস্তার মাঝখানে ট্যাক্সি থেকে নামল শফিকুল কবীর। পায়ে হেঁটে এগোচ্ছে সে। হাঁটার ভঙ্গিতে কোন তাড়াহুড়ো বা চাঞ্চল্য নেই। হেলাল আহমেদকে সে সন্দেহ করেছে বলে মনে হচ্ছে না।
. ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে শফিকুল কবীরকে অনুসরণ করে যাচ্ছে হেলাল আহমেদ।
শহরের সবচেয়ে বড় হোটেলে প্রবেশ করল শফিকুল কবীর। হেলাল আহমেদ লক্ষ করল হোটেলের খাতায় নাম না লিখিয়ে সোজা উপরে উঠে গেল সে। অর্থাৎ হোটেলের রূম তাগেই তার জন্য রিজার্ভ করা ছিল। | হেলাল আহমেদ লবির এক কোণায় বসে অপেক্ষা করতে লাগল। একটা দৈনিক পত্রিকা সামনে মেলে ধরল সে। পত্রিকার আড়াল থেকে নজর রাখতে লাগল সিঁড়ির দিকে।
| তিনতলায় নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিল শফিকুল কবীর। শার্টের বুক পকেট থেকে বের করল সে চেন দিয়ে বাঁধা ঘড়িটা। দম দেবার। কাটাটা ঘোরালসে। ঘড়িটা বাঁ হাতের তালুর উপর চিৎ করে রেখে দাঁড়িয়ে রইল নিঃশব্দে। ‘
অনেকক্ষণ কেটে গেল। হাতের তালুর উপর ঘড়িটা সেই একইভাবে পড়ে আছে। আরও খানিক পর মুখটা বিকৃত হয়ে উঠল তার। ঘন ঘন মাথা নাড়ল সে আপন মনে। তিক্ত হাসি ফুটল মুখে। তার ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হলো, কিছু একটা ২–কুয়াশা ৫২
১৭ :
আবিষ্কার করতে পেরেছে সে।
এরপর কুয়াশার আলখেল্লার ভিতরের পকেট থেকে চুরি করা একটা বোতল। এবং স্বাভাবিক আকারের চেয়ে একটু বড় একটা চুরুট বের করল সে নিজের কোটের পকেট থেকে। জিনিস দুটো অনেকক্ষণ ধরে দেখল সে। কাগজ দিয়ে মুড়ে ফেলল সে বোতলটা। চুরুটটা রাখল পকেটে, যেমন আগে ছিল। মূলত, এই চুরুটের জন্যই গিয়েছিল সে কুয়াশার কাছে। এই চুরুটটা চুরি করাই তার উদ্দেশ্য ছিল। ওটা আসলে চুরুটের মত দেখতে হলেও চুরুট নয়। ওটা একটা মারণাস্ত্র। মুখে পুরে ফুঁ দিলেই ছোট্ট একটা বুলেট তীরবেগে বেরিয়ে সামনের মলোককে আঘাত করবে–আঘাত লাগার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু। বুলেটটায় বিষ মাখানো
আছে।
শফিকুল কবীর এরপর পোশাক বদলাল। ছদ্মবেশ নিল সে। মিনিট বিশেক পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসল। নিজেকে নিজেই চিনতে পারছে না। সে–এতই নিখুঁত হয়েছে ছদ্মবেশ।
উপর থেকে নিচের লবিতে নামল শফিকুল কবীর আধঘণ্টা পর। | হেলাল আহমেদ প্রথমে তাকে চিনতে পারল না। কিন্তু পরমুহূর্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার চোখ দুটো। লোকটাকে শফিকুল কবীর বলে মনে না হলেও একটি। জিনিস তার নজর এড়াল না। লোকটার বুক পকেটে সরু একটা সোনার চেন দেখা যাচ্ছে। পকেট ওয়াচের চেন ওটা। শফিকুল কবীরের পকেটে একটা পকেট ওয়াচ ছিল–সেটার চেনও ওই রকম–সোনার।
সন্দেহ হওয়াতে লোকটার দিক থেকে চোখ সরাল না হেলাল আহমেদ। শফিকুল কবীর ছদ্মবেশ নিলে কি হবে, তার হাঁটার ভঙ্গি বিশেষ বদলায়নি। লবি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে সে। হেলাল আহমেদ তাকে অনুসরণ করবার জন্য উঠে দাঁড়াল।
অন্য ধরনের একটা সন্দেহ উদয় হলো হেলাল আহমেদের মনে। কোন সন্দেহ নেই এখন আর যে শফিকুল কবীর জেনে ফেলেছে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। কিন্তু ছদ্মবেশ নেয়া সত্ত্বেও ঘড়ির চেনটা লুকায়নি কেন সে?
সে কি চায় তাকে অনুসরণ করা হোক? হেলাল আহমেদের জন্য সে কি কোন ফাঁদ পাতার কথা ভেবেছে? নাকি ভুলক্রমে চেনটা লুকায়নি?
সন্দেহটা মনে উদয় হলেও অনুসরণে পিছপা হলো না হেলাল আহমেদ।
ট্যাক্সি নিল শফিকুল কবীর। কাছেপিঠে আর মাত্র একটি ট্যাক্সি ছিল। সেদিকে এগিয়ে গেল হেলাল আহমেদ। ড্রাইভার নিচে নেমে পিছনের দরজাটা খুলে দিল। কিন্তু পিছনের সীটে উঠল না হেলাল আহমে, উঠল সে সামনের দরজা দিয়ে। বসল ড্রাইভারের পাশে। ট্যাক্সি পৌঁছুল বিমানবন্দরে। আধঘণ্টা পর একটা প্লেন ল্যাণ্ড করল রানওয়েতে। প্লেন থামল। দেখা গেল সাঈদা শরমিন নেমে আসছে নিচে প্লেনের সিঁড়ি বেয়ে।
সাঈদা শরমিনকে খুবই কাহিল এবং ক্লান্ত দেখাচ্ছে। রানওয়ে থেকে বেরিয়ে এল সে। শফিকুল কবীরকে দেখতে পেল। থমকে দাঁড়া। তারপর দ্রুত পায়ে
ভলিউম ১৮
এগিয়ে আসতে লাগল।
| সাঈদা শরমিনের সাথে শফিকুল কবীর এয়ারপোর্ট বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ওদেরকে অনুসরণ করল হেলাল আহমেদ।
শফিকুল কবীর এবং সাঈদা শরমিন কথা বলতে বলতে একটা ট্যাক্সিতে উঠছে। হেলাল আহমেদ যে ট্যাক্সিতে চড়ে বিমানবন্দরে এসেছিল সেটার দিকে এগিয়ে গেল।
ট্যাক্সিতে চড়ে বসল সে দ্রুত। শফিকুল কবীররে ট্যাক্সি ছুটতে শুরু করেছে।
হেলাল আহমেদের ট্যাক্সি স্টার্ট নিল। এমন সময় বিপদটা টের পেল হেলাল আহমেদ। ট্যাক্সিতে ড্রাইভার ছাড়াও আরও দুজন লোক রয়েছে। তাড়াহুড়ো করে ওঠার সময় এদেরকে দেখেনি সে। লোক দুজন মাথা নিচু করে বসে ছিল পিছনের সীটে।
চেঁচালে কোন লাভ নেই।’ একজন নোক শাসিয়ে বলে উঠল। লোক দুজনের হাতে দুটো আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।
ট্যাক্সি ছেড়ে দিল। তীরবেগে ক্রমশ দূরে সরে যাছে গাড়িটা বিমানবন্দরকে পিছনে রেখে।
হেলাল আহমেদ লক্ষ করল বিমানবন্দরে যে ড্রাইভার তাকে নিয়ে এসেছিল তার বদলে অন্য একজন ট্যাক্সি চালাচ্ছে। রহস্যটা তেমন জটিল বলে মনে হলো না। শফিকুল কবীর জেনে ফেলেছিল তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। হোটলে নিজের রূম থেকে সম্ভবত টেলিফোনের মাধ্যমে তার সহকারীদের নির্দেশ দেয় সে। তার সহকারীরা সুযোগ বুঝে ট্যাক্সির ডাইভারকে মারধর করে বা অন্য কোন উপায়ে সরিয়ে দিয়ে নিজেরা ফাঁদ পেতে বসেছিল ভিতরে। এরা যে শফিকুল কবীরের লোক তার প্রমাণ দুজনের হাতেই বড় আকারের দুটো হাতঘড়ি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
হেলাল আহমেদকে সার্চ করা হলো। কেড়ে নেয়া হলো তার রিভলবার।
শহর ছাড়িয়ে ছুটে চলল ট্যাক্সি। দুপাশে উঁচু উঁচু মাটির ঢিবি। ঢিবির উপর জঙ্গল। প্রায় নির্জন রাস্তা। কয়েকবার বাক নিল ট্যাক্সি।
পাকা রাস্তা ছেড়ে মেটো পথ ধরে মিনিট দশেক এগোবার পর একটা পাকা বাড়ির সামনে থামল ট্যাক্সি। আশেশে আর কোন বাড়িঘর নেই বলে মনে হলো।
আগেই কি করতে হবে ভেবে রেখেছিল হেলাল আহমেদ। শত্রুদের উদ্দেশ্য ভাল না, বুঝতে পেরেছে সে শত্রুদের মুখের চেহারা দেখেই। তাকে যে খুন করার জন্যেই এত দূরে নিয়ে আসা হয়েছে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
ট্যাক্সি থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে নামানো হলো হেলাল আহমেদকে।
নামল হেলাল আহমেদ। একজন লোক আগেই নেমেছে, এবার দ্বিতীয় লোকটা নামল। ড্রাইভার ট্যাক্সি ঘুরিয়ে নিল, চলে গেল ট্যাক্সি।
হাঁটো, গোয়েন্দা সাহেব! কোন রকম চালাকি করার চেষ্টা কোরো না–যদি আরও কিছুক্ষণ বাঁচতে চাও। কুয়াশা ৫২
ঠিক সেই সময় হেলাল আহমেদের শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ল সে সামনের লোকটার উপর।
উদ্দেশ্য সফল হলো হেলাল আহমেদের। পিছনের লোকটা গুলি করবে না, ধরে নিয়েছিল সে। গুলি করলে নিজের দলের লোকের গায়েও লাগতে পারে।
সামনের লোকটা এতটা ভাবেনি। আক্রান্ত হয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সে। হেলাল আহমেদ তার হাত থেকে চিলের মত ছোঁ মেরে কেড়ে নিল রিভলবারটা। তাল সামলে পিছন দিকে গুলি করতে কয়েক সেকেণ্ড দেরি হলো তার।
এই দেরিটাই হলো তার জন্য কাল। পিছনের লোকটা গুলি করল এবার।
হেলাল আহমেদের মাথার পাশে লাগল গুলি। মাখার অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল উত্তপ্ত বুলেট মগজের মাঝখান দিয়ে পথ করে নিয়ে। | পড়ে গেল দেহটা। এতটুকু নড়ল না’। বুলেট বিদ্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু ঘটেছে বেচারা হেলাল আহমেদের।
টিকটিকি মেরে মজা নেই। নিজের হাতের রিলবারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল খুনী লোকটা, শয়তান কুয়াশাকে এভাবে গুলি করে খুন না করা পর্যন্ত শান্তি নেই আমাদের।’
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের গেটের সামনে থামল ওদের গাড়ি। গাড়ি থেকে ওরা নামার আগেই অপেক্ষমাণ দেশী-বিদেশী সাংবাদিকের দল চারপাশে ভিড় করে দাঁড়াল।
গাড়ি থেকে নামল কুয়াশা, পিছন পিছন শহীদ। অপর দরজা দিয়ে নামল রাজকুমারী, কামাল, ডি. কস্টা এবং রাসেল।
সাংবাদিকের দল প্রশ্ন করতে লাগল চারদিক থেকে। হাজারটা প্রশ্ন তাদের।
কুয়াশা গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত। তারপর মুখ খুলল সে, আপনাদের সব প্রশ্নেরই উত্তর দেব আমি। তবে এক শর্তে। শর্তটা হলো, আমাদের কাউকে অনুসরণ করবেন না আপনারা। তাতে আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।’
সাংবাদিকরা শর্ত পূরণ করতে রাজি হলো।
ফটোগ্রাফাররা কুয়াশার ছবি তুলছে চারদিক থেকে। সাংবাদিকরা একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছে। | কুয়াশা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেল। শেষে বলল, “আসলে মৃত্যুরশ্মি সম্পর্কে বিশেষ কিছু এখনও আমি নিজেই জানতে পারিনি। শত্রু কারা, এ প্রশ্নের উত্তরও আমার পক্ষে এই মুহূর্তে দেয়া সম্ভব নয়। তবে কথা দিচ্ছি, আপনাদের কৌতূহল নিবৃত্ত করার জন্য যথাসময়ে আমি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকব–সব রহস্য ব্যাখ্যা করে বলব তখন। | একজন সাংবাদিক জানতে চাইল, আচ্ছা, মি, কুয়াশা, এই রহস্যের সাথে একটি সুন্দরী মেয়ে জড়িত বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে-কথাটা কতদূর সত্যি?
প্রশ্নটা করে রিপোর্টার ভিড় ঠেলে কুয়াশার একেবারে মুখোমুখি এসে দাঁড়াল। ‘আপনি এ-ব্যাপারে বরং রাজকুমারী ওমেনাকে জিজ্ঞেস করুন।
ভলিউম ১৮
কুয়াশার কথা শুনে সকলে তাকাল রাজকুমারী ওমেনার দিকে। পরমুহূর্তে হাজারটা প্রশ্ন নিক্ষিপ্ত হলো রাজকুমারীর উদ্দেশে। রাজকুমারী, আপনি আপনার গ্রহ আনতারায় ফিরে যাবার কথা ভাবছেন কিনা? রাজকুমারী, আপনি কি মহামানব মি. কুয়াশাকে বিয়ে করবেন? রাজকুমারী, আমাদের পৃথিবী কেমন লাগছে আপনার? রাজকুমারী, আপনার গ্রহের মানুষের কি বয়স বাড়ে না, তারা কি অমর? রাজকুমারী, আপনার সাথে মি. কুয়াশার সম্পর্ক ঠিক কি ধরনের বলবেন কি? এমনি হরেক রকম প্রশ্ন।
চুপ করুন।’ রাজকুমারী বলে উঠল। চুপ করল সবাই।
রাজকুমারী বলল, আমি মাত্র একটি প্রশ্নের উত্তর দেব। তাও দেব একটি শর্তে। শর্তটা হলো আর কোন প্রশ্নের উত্তর চাইতে পারবেন না কেউ। আপনদের প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি আমি। না, এই রহস্যের সঙ্গে কোন মেয়ে জড়িত নেই।
রাজকুমারীর কথা শেষ হতেই কুয়াশা বলে উঠল, “আপাতত এখানেই শেষ করুন আপনারা।’
গেট পেরিয়ে ক্যান্টনমেন্টের ভিতর ঢুকল ওরা।
সাংবাদিকরা তাদের গাড়ির দিকে ছুটল। গাড়িগুলো স্টার্ট নিয়ে সবেগে ছুটে চলল পত্রিকা অফিসের দিকে।
| কিন্তু একটি গাড়ি পত্রিকা অফিসের দিকে না গিয়ে ছুটল প্রধান পোস্ট অফিসের দিকে। পোস্ট অফিসে গিয়ে ফোন করল সাংবাদিক এবার নির্দিষ্ট একটা নাম্বারে। অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এল কর্কশ একটা কণ্ঠস্বর, দেওজী কাংকারিয়ার কণ্ঠস্বর, হ্যালো!’
• সাংবাদিকের ছদ্মবেশধারী দেওজী কাংকারিয়ার অনুচর উত্তেজিত ভাবে বলল, রহস্যটা জানতে পেরেছি, বস। শয়তান কুয়াশা আমাদের সব খবর কি ভাবে জেনে ফেলছে আগেভাগে আমি তা ধরতে পেরেছি। তার হাতে আমাদেরই একটা হাতঘড়ি দেখেছি আমি!
চার
প্রথম থেকেই কুয়াশা বুঝতে পেরেছিল বড় আকারের হাত ঘড়িগুলোর বিশেষ একটা ভূমিকা আছে এই রহস্যে। আইনজ্ঞ মোখলেসুর রহমানের অফিস বিল্ডিংয়ে। খণ্ডযুদ্ধের পর শত্রুপক্ষের একজনের একটা হাতঘড়ি হস্তগত করে সে-ঘড়িটা পরীক্ষা করে আসল ব্যাপারটা জেনে ফেলে। | হাতঘড়িটা আসলে কোন ঘড়িই নয়–এটা একটা মিনি সাইজের ওয়্যারলেস সেট। তবে অন্যান্য মিনি ওয়্যারলেস সেটের সঙ্গে এর মৌলিক পার্থক্য আছে। এটার সাহায্যে মেসেজ রিসিভ করা যায় কারও কোন সন্দেহের উদ্রেক না করেই। গায়ে গা ঠেকিয়ে কোন লোক দাঁড়িয়ে থাকলেও সে টের পাবে না মেসেজ আসছে। কোন কোনটা আবার মেসেজ রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ ট্রান্সমিট কুয়াশা ৫২
করার ক্ষমতাও রাখে। কুয়াশা যেটা পেয়েছিল সেটা অবশ্য শুধুই রিসিভ করতে পারে–ট্রান্সমিট করতে পারে না।
সিগন্যাল আসে ঘড়ির পিছন দিককার গায়ে, উত্তাপ রূপে। কন্টিনেন্টাল কোড. যাদের জানা আছে তারা এই উত্তাপ অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গে সিগন্যালের অর্থ
অনুধাবন করতে পারবে অনায়াসে। | হাতঘড়িটা হাতে পরার পর কুয়াশা আরও জানতে পারে যে, সাইফার কোড ব্যবহার করা হয় কদাচ, শুধু অস্বাভাবিক গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ পাঠাবার দরকার হলে। সেক্ষেত্রে, স্বভাবতই, সাইফার কোডকে নিয়মানুযায়ী ভেঙে মেসেজের প্রকৃত অর্থ বের করে নিতে হয়। কুয়াশার বেলায় অবশ্য তার দরকার হয় না। অসাধারণ স্মরণশক্তি ও মেধা তার। সাইফার কোডকে অনুবাদ করে মেসেজ উদ্ধার করার কাজটা সে সিগন্যাল পাবার সঙ্গে সঙ্গেই সারতে পারে।
| এই ধরনের অর্থাৎ সাইফার কোডে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল শফিকুল কবীর। কুয়াশা মেসেজটা রিসিভ করে। সরকারী গোয়েন্দা হেলাল আহমেদকে খুন করার জন্য শফিকুল কবীর তার দুই অনুচরকে নির্দেশ দেয় সেই মেসেজে। কুয়াশা মেসেজটা পাবার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট পুলিসকে এ ব্যাপারে সতর্ক হবার নির্দেশ দেয়।
হাতঘড়িটা খুলে পরীক্ষা করার পর আরও অনেক তথ্য জানতে পেরেছে কুয়াশা। ঘড়িগুলো আসলে হাইলি সেনসিটিভ, জটিল রেডিও রিসিভার।
“ কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই রিসিভার সাধারণ রেডিও ওয়েভ রিসিভ করে
।, ঘড়িটা তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে যাতে শুধুমাত্র মাইক্রোসকোপিক ওয়েভ রিসিভ করতে পারে এটা। এই ধরনের মাইক্রোসকোপিক ওয়েভ কমিউনিকেশনের
প্রয়োজনে আগে কখনও ব্যবহার করা হয়নি।
| ইনফ্রা-রে প্রকৃতপক্ষে কল্পনাতীত ক্ষুদ্র বেতার তরঙ্গ ধারণে সক্ষম, এটা এতদিন তত্ত্বের মধ্যেই সীমিত ছিল-কেউ এই তত্ত্বকে বাস্তবে প্রয়োগ করে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়নি। কিন্তু শত্রুপক্ষ পেরেছে। শত্রুপক্ষের ক্ষমতা কতটুকু এ থেকে তা খানিকটা অনুমান করা যায়। শত্রুপক্ষে যে প্রতিভাবান বিজ্ঞানী আছে তাতে : কোন সন্দেহ করার অবকাশ নেই।
| মোখলেসুর রহমান রঙিন কাঁচের চশমা পরে ছিল বলে পাশের বিল্ডিং থেকে ট্রান্সমিটরত আলোক সঙ্কেত দেখতে পেয়েছিল। যারা ওই বড় আকারের হাতঘড়ি পরেছিল তারা অনুভব করেছিল সিগন্যালগুলো চোখে দেখেনি।
শফিকুল কবীর এবং সাঈদা শরমিনকে নিয়ে ট্যাক্সি অবশেষে গিয়ে থামল শহর থেকে অনেক দূরে, একটা প্রকাণ্ড বাগান বাড়ির ভিতর।
হলরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ওদেরকে অভ্যর্থনা জানাল স্বয়ং দেওজী কাংকারিয়া এবং সান্তারাম উলকা। দুজনেই হাসছে।
ওদের হাসি দেখে থমকে দাঁড়াল শফিকুল কবীর এবং সাঈদা শরমিন। কেমন যেন ব্যঙ্গাত্মক হাসি।
২২
ভলিউম ১৮
প্রবেশ পথ থেকে সরে দাঁড়াল দু’জন। ওরা হলরুমে প্রবেশ করল। দেওজী এবং সান্তারামের পরনে দামী সট। দু’জনের হাতেই জ্বলন্ত সিগার। তারাও ভিতরে ঢুকল। সান্তারাম বন্ধ করে দিল দরজা। তারপর, হঠাৎ, দুজনই পকেট থেকে দুটো লোডেড রিভলবার বের করল।
পাংশুবর্ণ ধারণ করল শফিকুল কবীরের মুখের চেহারা। তোতলাতে শুরু করল সে ভয়ে, “কি ব্যা-ব্যাপার! এ-এ-এসব কি! আমি ভে-ভেবে ছি-ছিলাম আ আপনারা সাঈদ চৌ-চৌধুরীর বন্ধু•••আ-আমরা তা-তার সঙ্গে দে-দে-দেখা করতে এসেছি…!
সান্তারাম উলকা আচমকা রিভলবার ধরা হাতটা শফিকুল কবীরের মাথার উপর তুলেই বিদ্যুৎবেগে নামিয়ে আনল। রিভলবারের ভারী নলটা শফিকুল কবীরের মাথার মাঝখানে আঘাত হানল।
| কেঁপে উঠল শফিকুল কবীর। দুই হাত সামনে বাড়িয়ে অন্ধের মত হাতড়াতে লাগল সে কিছু একটা ধরার জন্য। তারপর পড়ে গেল মেঝেতে। নিঃসাড় হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে দেহটা। জ্ঞান হারিয়েছে সে।
‘এ কি! তোমরা ভেবেছ কি•••! সাঈদা শরমিন রাগে ঠকঠক করে কাঁপছে। | ‘থামুন, মিস শরমিন। আগে সব কথা শুনুন আমাদের-তারপর যা হয় ক.বন। সান্তারাম উলকা কথাগুলো বলে তাকাল দেওজীর দিকে। _ দেওজী কাংকারিয়া শুরু করল, শফিকুল কবীর আপনার বাবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, মিস শরমিন। সে শয়তান কুয়াশার সঙ্গে দেখা করে তাকে জানিয়ে এসেছে যে রহস্যময় হত্যাযজ্ঞের-পিছনে আপনার বারাই হলো আসল কালপ্রিট।’
দেওজী কাংকারিয়া গম্ভীর হলো। বলল, হ্যাঁ। শফিকুল কবীর জঘন্য, হীন চরিত্রের লোক। সে এ কাজ করায় আমি এতটুকু আশ্চর্য হইনি। যাক, ও যা করেছে তার জন্যে মন খারাপ করলে লাভ হবে না। আমাদের সামনে এখন মস্ত বড় বিপদ দেখতে পাচ্ছি আমি। আপনার বাবাকে রক্ষা করতে হবে কুয়াশার হাত থেকে। কিন্তু কি উপায়ে তা সম্ভব ভেবেই পাচ্ছি না আমি। তবে একটা কথা ভাবছিলাম খানিক আগে। আপনি, মিস শরমিন, ইচ্ছা করলে একটা উপায় করতে পারেন। কিন্তু তা করবেন কিনা, করতে পারবেন কিনা সেটাই হলো প্রশ্ন। মনে রাখবেন, সমস্যাটা আপনার বাবাকে নিয়ে। তাঁর জীবন-মরণ নিয়ে।
কি যেন ভাবল সাঈদা শরমিন। দৃঢ় গলায় তারপর জানতে চাইল সে, কি করতে হবে আমাকে?
‘শুনুন তাহলে•••{‘
বলতে শুরু করল দেওজী কাংকারিয়া। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারির সঙ্গে বৈঠকে বসল ওরা। সেক্রেটারি সাহেব সবিস্তারে গত ভোরের মর্মান্তিক ঘটনার কথা বললেন। ভদ্রলোকের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে তাকে। সামরিক বাহিনীর এই বিপদে নিজেকে শান্ত কুয়াশা ৫২
২৩
রাখা কোন দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীর পক্ষেই সম্ভব নয়। প্যারেডে যে একজন সেনাও মারা যায়নি, সেকথা এমন কি তিনিও জানেন না।
কামাল প্রশ্ন করল, কোন কু পাওয়া যায়নি সার্চ করার পরও?
অনুসন্ধানকারীরা একটা মাত্র কু পেয়েছে। সেটা তেমন কোন কাজে আসবে। বলে মনে হয় না। প্যারেড গ্রাউণ্ড থেকে বেশ খানিকটা দূরে, কিছু লোকের পায়ের দাগ পাওয়া গেছে। দেখে মনে হয় কিছু লোক জায়গাটায় দাঁড়িয়েছিল। সামরিক বাহিনীর কোন লোকের ওদিকে যাবার কথা নয়। ওখান থেকে প্যারেড গ্রাউণ্ড দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মৃত্যু-রশ্মির মেশিনটা ওখানে রাখা হয়েছিল, ওখান থেকেই সেটাকে পরিচালনা করা হয়েছে।’ | অকস্মাৎ চেয়ার ছেড়ে দ্রুত উঠে দাঁড়াল কুয়াশা । বলল, আমরা আশা করি এই রহস্যের সমাধান খুব তাড়াতাড়ি হবে। তেমন উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য পেলে। জানাব আপনাকে। এই মুহূর্তে বিদায় নেই আমরা।’
সবাই অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইল কুয়াশার দিকে। দীর্ঘ পদক্ষেপে সিটিং রূম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে সে। দেরি না করে সবাই তাকে অনুসরণ করল। | বাইরে বেরিয়ে এসে জীপে উঠল ওরা। কুয়াশার পাশে বসল শহীদ। জানতে চাইল ও, ব্যাপার কি, কুয়াশা?
| ‘সাঈদা শরমিন তার বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্যে কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছে।’
রাজকুমারী প্রশ্ন করল, মেয়েটা কি সত্যিই এই রহস্যের সঙ্গে জড়িত? :
‘ওর কাছে অত্যন্ত মূল্যবান কিছু তথ্য আছে।’ বলল কুয়াশা। স্টার্ট দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিল সে। তীরবেগে ছুটতে লাগল সামরিক বাহিনীর জীপ।
| ‘কক্সবাজারের ঠিক কোথায় যাচ্ছে সে?
. কর্ণেলিয়াস পার্কে অপেক্ষা করবে সে। এদিকে দেওজী কাংকারিয়ার লোকেরা তাকে বন্দী করবার জন্য তৈরি হচ্ছে। এখন থেকে ঠিক দুই ঘণ্টা পর সাঈদা শরমিন, পার্কে পৌঁছুবে। দেওজী কাংকারিয়ার লোকেরা আগে থেকেই লুকিয়ে থাকবে পার্কে।
* শহীদ বলল, তার মানে আমাদেরকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছুতে হবে পার্কে।’ |
, রাস্তায় কোন বিপদ না ঘটলে একশো মাইল দুই ঘণ্টার মধ্যে অতিক্রম করতে পারব।’ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাবার রাস্তাটা তেমন ভাল নয়। আঁকাবাঁকা রাস্তা। পাকা রাস্তার মাঝখানে ছোট বড় হাজার হাজার গর্ত। জীপের স্পীড প্রায়ই কমাতে! হচ্ছে। | তবু চেষ্টার বিরাম নেই কুয়াশার । সময় থাকতে পৌঁছুতেই হবে নির্দিষ্ট । জায়গায়।
| দুঘণ্টা কেটে গেল। কক্সবাজারে পৌঁছে গেছে ওরা। কর্ণেলিয়াস পার্ক আর মাত্র আধমাইল দূরে।
ভলিউম ১৮
কয়েক মিনিট পর পার্কের গেট দেখতে পেল ওরা। হঠাৎ চিৎকার করে উঠল ডি. কস্টা, কালো মরিস! কালো মরিস! মি. কুয়াশা, এনিমিডের কার উহা-ফর গডস সেক।’
সত্যিই তাই। পার্কের ভিতর থেকে ঝড়ের বেগে একটা কালো মরিস বেরিয়ে এসে বাক নিয়ে সোজা ছুটে চলেছে পুব দিকে।
জীপের স্পীড বাড়িয়ে দিল কুয়াশা।
মরিসের ভিতর সাঈদা শরমিনকে দেখা যাচ্ছে। দু’জন লোক তাকে চেপে ধরে রেখেছে। হাত-পা ছুড়ছে সে।
শত্রুরা এখনও টের পায়নি তাদেরকে একটা জীপ অনুসরণ করছে। কিন্তু তবু গাড়ির স্পীড় ক্রমশ বাড়ছে তাদের। দ্রুত শহর ছাড়িয়ে দূরে চলে যাচ্ছে মরিস।
| ‘মার্সি পিস্তল!
কুয়াশা শব্দ দুটো উচ্চারণ করতেই শহীদ এবং ডি কস্টার পকেট থেকে বেরিয়ে এল বড় আকারের দুটো পিস্তল। ঠিক সেই সময় সামনের মরিস বাক নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল চোখের আড়ালে। | কয়েক মুহূর্ত পরই বাঁক নিল জীপ। আবার দেখা যাচ্ছে মরিসকে। মেটো পথ। সামনে পাহাড়ের মত সুউচ্চ ধুলোর দেয়াল উঠল। দেখা যাচ্ছে না আর মরিসকে–ধুলোয় ঢাকা পড়ে গেছে সেটা।
ধুলোর দেয়ালের ভিতর দিয়েই চালিয়ে দিল কুয়াশা জীপটাকে। যে কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অচেনা রাস্তা। কোথায় বাক, কোথায় চিবি, কোথায় খাদ–কিছুই জানা নেই।
মেটো পথ ধরে কয়েক মুহূর্ত ছুটল জীপ। ধুলোর পাহাড় মিলিয়ে গেছে সামনে থেকে। সামনের রাস্তাটা ফাঁকা, নির্জন, যানবাহন শূন্য দেখা যাচ্ছে। মরিসটার ছায়া পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না কোথাও। যাদুমন্ত্রের মত সামনে থেকে গাড়িটা যেন বাতাসের সঙ্গে মিশে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
– ব্রেক করল কুয়াশা। টায়ারের শব্দ হলো। তীব্র ঝাঁকুনি খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল
পথের দু’পাশে উঁচু ঢিবি। ঢিবিগুলোর মাঝখানে ছোট একটা মাঠ। সেই মাঠের উপর গাড়ির চাকার দাগ।
ঘাসের উপর দিয়ে, দুই ঢিবির মাঝখান দিয়ে ছুটে গেছে মরিস।
জীপ থামতেই সবাই ক্যাঙারুর মত লাফ দিয়ে নেমে পড়ল নিচে। পথের পাশে অনেক গাছ। গাছের আড়ালে গা ঢাকা দিয়ে দাঁড়াল সবাই। প্রত্যেকের হাতে কুয়াশার দেয়া মার্সি পিস্তল শোভা পাচ্ছে।
কুয়াশা উন্মুক্ত মাঠের উপর দিয়ে দ্রুত এগোল। কয়েক পা সামনে এগোবার পরই থমকে দাঁড়াল সে। একটি নারী কণ্ঠের তীক্ষ্ণ আর্তচিৎকার চারদিকের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে খান খান করে দিল।
সাঈদা শুরমিনের গলা চিনতে ভুল হলো না কুয়াশার। ছুটল সে শব্দ লক্ষ্য করে। সবাই পিছু নিল তার। কুয়াশা ৫২
জীপ।
ছোট্ট মাঠটা পেরিয়ে ওরা বাক নিল। একটা ঢিবির কিনারা ঘেঁষে খানিক দূর এগোবার পরই চোখে পড়ল মরিসটা। ঢিবির ভিতর দিকে একটা সুড়ঙ্গ চলে গেছে। সুড়ঙ্গ মুখটা প্রকাণ্ড হাঁ করে গিলতে আসছে যেন।
“ থমকে দাঁড়াল ওরা সবাই সুড়ঙ্গ মুখের সামনে। ভিতরে দৃষ্টি চলে । গাঢ় অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে ভিতরে। | ‘ফাঁদ নয় তো?’ প্রশ্ন করল শহীদ। পরমুহূর্তে আবার সাঈদা শরমিনের
আর্তনাদ ভেসে এল সুড়ঙ্গের ভিতর থেকে।
এক মুহূর্তও ইতস্তত করল না কুয়াশা। লাফ দিয়ে সুড়ঙ্গের ভিতর প্রবেশ করল সে। ফাঁদ হোক বা না হোক, এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই তার। একটি মেয়ের জীবন-মৃত্যু হয়তো নির্ভর করছে এর উপর–ফাঁদ মনে করে নিষ্ক্রিয়। থাকা Wর নয় তার পক্ষে।
বিশ গজের মত এগোল ওরা, তারপর একটা বাঁক। বাঁক নিতেই স্বল্প আলোর দেখা পাওয়া গেল। খুবই অবাক কাণ্ড বলে মনে হলো ব্যাপারটা, বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বলছে কেন?
কুয়াশা বলল, ট্যুরিস্টদের আকৃষ্ট করার জন্য কিছু কিছু সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল বছর কয়েক আগে। পর্যটন কর্তৃপক্ষই আলোর ব্যবস্থা করেছিল।’
এগিয়ে চলল ওরা। খানিক দূর যাবার পরই সুড়ঙ্গটা চওড়া হয়ে গেছে। রীতিমত প্রশস্ত করিডরের মত জায়গাটা। ঠাণ্ডা বাতাস লাগছে চোখেমুখে। দেয়ালগুলোও সেঁতসেঁতে, ভিজে ভিজে।
সুড়ঙ্গের অপর দিকে সম্ভবত নদী আছে,’ কামাল মন্তব্য করুল। সাগরের সঙ্গেও যোগ থাকতে পারে,’ বলল রাসেল। | বৈদ্যুতিক আলোয় এগিয়ে যেতে কোন অসুবিধে হচ্ছে না ওদের। কিন্তু কুয়াশা পকেট থেকে একটা ফ্ল্যাশলাইট বের করল দেখে শহীদ অবাক হয়ে কারণটা জিজ্ঞেস করতে গেল–কিন্তু কি ভেবে ক্ষান্ত হলো। কারণ নিশ্চয়ই একটা আছে। কারণ না থাকলে কুয়াশা কোন কাজ করে না।
| আরও খানিক দূর যাবার পর সুড়ঙ্গের চৌমাথায় পৌঁছুল ওরা, ইতস্তত না করে ডান দিকের পথ ধরে এগোল কুয়াশা। ধুলোর উপর জুতোর দাগ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।
সাঈদা শরমিনের চিৎকার সেই যে থেমেছে, আর শোনা যায়নি একবারও। পরিষ্কার বুঝতে পারছে ওরা–মেয়েটাকে শত্রুরা সুড়ঙ্গের অভ্যন্তর ভাগে টেনে নিয়ে গেছে। বলা যায় না, এতক্ষণে হয়তো মেরেই ফেলেছে তাকে।
সুড়ঙ্গটা সামনের দিকে আরও চওড়া হয়ে গেছে। একটা ইলেকট্রিক বলবের নিচে দিয়ে এগোচ্ছিল ওরা–আচমকা অফ হয়ে গেল আলো।
| গাঢ়, নিচ্ছিদ্র অন্ধকার গ্রাস করল ওদেরকে।
সামনে ছিল কুয়াশা এবং শহীদ। একযোগে দাঁড়িয়ে পড়ল ওরা। দাঁড়িয়ে পড়ল পিছনের সবাই।
বাতাসে কেমন যেন একটা গন্ধ। কেউ কিছু বুঝবার আগেই টলে উঠল
ভলিউম ১৮
প্রত্যেকের শরীর। বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছে ওরা। সশব্দে পড়ে গেল সবাই প্রায় একসাথে। জ্ঞান নেই কারও।
পাঁচ জ্ঞান ফিরে পেয়ে বিরূপ হয়ে উঠল ওরা। মাথায় অসহ্য ব্যথা। পাঁজরে, কব্জিতে আর ঘাড়েও প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করল সবাই।
জ্ঞান ফিরে পাবার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে নার্ভ গ্যাসের গন্ধ পেল ওরা। অনুভব করল, শক্ত দড়ি দিয়ে বাঁধা ওদের হাত এবং পা।
কুয়াশার আলখেল্লার পকেট থেকে সব যন্ত্রপতি এবং অস্ত্রশস্ত্র বের করে নেয়া হয়েছে। আর সকলের পকেটও শূন্য। কুয়াশার হাতঘড়িটাও নেই।
আচমকা একটা কর্কশ, ব্যঙ্গাত্মক কণ্ঠস্বর শোনা গেল। ঝট করে ওরা সবাই তাকাল উপর দিকে।
দেওজী কাংকারিয়া এবং সান্তারাম উলকা সুড়ঙ্গের উঁচু সিলিংয়ের ফাটল দিয়ে উঁকি মারছে। কথা বলছে কাংকারিয়া, জ্ঞান ফিরেছে তাহলে! ভগবান! তোমাকে শত সহস্র ধন্যবাদ। এইবার সফল হয়েছি আমরা। সাক্ষাৎ যম এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের হাতের মুঠোয় পেয়েছি। আর দেরি নয়। শুভ কাজে দেরি করতে নেই। ওহে মহামানব কুয়াশা-তুমি তো পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানী! তোমার মত শক্তিশালী নাকি আর দ্বিতীয়টি নেই। পারবে আমার হাত থেকে বাঁচতে? হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ! এমন ফাঁদ পেতেছি যে স্বয়ং ভগবানও তোমাকে বাঁচাতে পারবে না। যাই হোক, তোমার বীরত্বের অনেক কাহিনী শুনেছি-একজন বীরপুরুষ কিভাবে মরে তা দেখার সাধ মিটবে আজ আমারএখনই! সাভারাম, ফাটাও তোমার ডিনামাইট!’
| এক, দুই, তিন-চার সেকেণ্ড পর কানফাটানো শব্দ হলো বিস্ফোরণের। প্রচণ্ড ভূমিকম্প শুরু হলো যেন। থরথর করে কাঁপছে সুড়ঙ্গের দেয়াল, মেঝে এবং সিলিং। বিস্ফোরণের শব্দ মিলিয়ে যাবার আগেই পানির প্রবাহের তীব্র শব্দ কানে ঢুকল ওদের।
| ফিসফিস করে কথা বলে উঠল শহীদ, ‘ডিনামাইট দিয়ে সুড়ঙ্গের দেয়াল উড়িয়ে দিয়েছে। সাগরের পানি ঢুকছে সুড়ঙ্গে।
‘সলিল সমাধি লাভ করবে তোমরা!’ উপর থেকে সহাস্যে বলে উঠল কাংকারিয়া, কেউ তোমাদেরকে আর রক্ষা করতে পারবে না। | কাংকারিয়ার কথা ওদের কারও কানে ঢুকল না। সুড়ঙ্গের ভিতর তীব্র বেগে নোনা পানি ঢুকছে। দ্রুত বাড়ছে পানি। ডুবে যাচ্ছে ওদের হাঁটু, কোমর, বুক,
গল।
‘ দেখতে দেখতে পানির উচ্চতা ওদের মাথা ছাড়িয়ে গেল। ডুবে গেল কুয়াশা, শহীদ, রাজকুমারী, কামাল, ডি. কস্টা এবং রাসেল।
দেওজী কাংকারিয়া এবং সান্তারাম উলকা উপর থেকে দেখছে। অনেকক্ষণ কুয়াশা ৫২
।
*
তাকিয়ে রইল তারা। পানির উপর কোন আলোড়ন নেই দেখে কি ঘটেছে বুঝতে অসুবিধে হলো না ওদের। কুয়াশা এবং তার বন্ধু-বান্ধবরা সলিল সমাধি লাভ করেছে।
শত্রুর বংশ ধ্বংস করে দিয়েছি! দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল কাংকারিয়া ।
সুড়ঙ্গের উপরের ছাতে দেওজী এবং সান্তারামের সঙ্গে মিলিত হলো আরও একজন লোক। দেখে বিশ্বাস করা কঠিন এই লোকই শফিকুল কবীর।
প্রৌঢ় শফিকুল কবীর ছদ্মবেশ ত্যাগ করেছে। আটাশ বছরের দোহারা গড়নের যুবক সে। মাথায় ব্যান্ডেজ বাধা রয়েছে।
* যাই বলুন, অত জোরে আমাকে মারা আপনাদের উচিত হয়নি।’
‘আর কোন উপায় ছিল, বলুন? মেয়েটাকে বোঝাবার দরকার ছিল যেন আমি অভিনয় করছি না। যা হবার হয়েছে–ভুলে যান। শয়তান কুয়াশা আর তার দলবল খতম হবার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পথ এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। পরবর্তী কাজ আমাদের কি বলুন তো? কেমিক্যাল কম্পাউণ্ডের ফরমুলাটা উদ্ধার করা। তার আগে আপনি বলুন, কুয়াশার কাছ থেকে সেই জিনিসটা আনতে পেরেছেন কিনা?
বাহ! গিয়েছিলামই তো ওটা আনতে। সুযোগ পেয়ে কুয়াশাকে খুন করারও চেষ্টা করেছিলাম–কিন্তু পারিনি। তবে জিনিসটা এনেছি।’
পকেট থেকে কাগজে মোড়া একটা বোতল বের করল শফিকুল কবীর। বলল, এই হলো সেই জিনিস।’
কাংকারিয়া কাগজের আবরণ থেকে বোতলটা মুক্ত করল। বোতলের গায়ে লেখা রয়েছে-টুথ সেরাম।
ভিতরে লালচে তরল রাসায়নিক দ্রব্য। এই রাসায়নিক দ্রব্য কারও শরীরে সিরিঞ্জ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিলে যাদুমন্ত্রের মত কাজ হয়। যে প্রশ্ন করা হবে, ওষুধ গ্রহণকারী ব্যক্তি সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে বাধ্য। চেষ্টা করেও মিথ্যে কথা বলতে পারবেনা সে।
ছাদের শেষ মাথায় পৌঁছে একটা সুড়ঙ্গে প্রবেশ করল ওরা তিনজন। কথা বলতে বলতে দ্রুত হাঁটছে ওরা।
সমস্যাগুলো কেটে গেছে এক এক করে সব। আর কয়েকটা কাজ নির্বিঘ্নে, সারতে পারলেই হয় এখন।’
সান্তারাম মন্তব্য করল, ‘পরবর্তী পদক্ষেপ খুব সতর্কতার সঙ্গে ফেলতে হবে। যাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে যাচ্ছি আমরা তারা সুযোগ পেলে বেঈমানী করার চেষ্টা করবে–তাই না?’ | সুড়ঙ্গের শেষে একটি দরজা। দরজা খোলা। ভিতরে ছোট্ট একটা কামরা। সেই কামরায় প্রবেশ করল ওরা।
‘সর্বনাশ! পালিয়েছে। দাতে দাঁত চাপল কাংকারিয়া।
শফিকুল কবীর হাসল। বলল, কিন্তু ভয়ের কিছু নেই। সাঈদা খুব ভাল করেই জানে তার বাবার পজিশন কতখানি শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছে গেছে–মুখ
, ভলিউম ১৮
২৮
খোলার সাহস তার কোনদিনই হবে না। নিজেই সে আসবে ধরা দিতে। বাধ্য
নিজেকে মুক্ত করলেও সাঈদা শরমিন কি করবে ভেবে পেল না। দিশেহারার মত
ছুটতে ছুটতে একটা সুড়ঙ্গের বাইরে বেরিয়ে এসে সাগরের সামনে দাঁড়াল সে।
নির্জন বালুকাবেলায় দাঁড়িয়ে উন্মাদিনীর মত অশান্ত সাগরের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল সে। সাগরের অশান্ত রূপ তাকে আরও অশান্ত করে। তুলল। তীব্র বাতাসে তার চুল উড়ছে, শাড়ির আঁচল উড়ছে। হাতের ছোরাটা চোখের সামনে তুলে ধরল সে। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে উঠল। হঠাৎ চমকে উঠে পিছন দিকে তাকাল সে। দেওজী কাংকারিয়ার ভয়ে কেঁপে উঠল সে।
ধরা তাকে পড়তেই হবে। কাংকারিয়া ভয়ঙ্কর প্রকৃতির লোক। তার হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই। নিজের মানসম বাঁচাবার কোন উপায় নেই-বুঝতে পারছে সে। শেষ আশাকুয়াশার সাহায্য–তাও পাওয়া যাবে না আর। দেওজী কাংকারিয়ার মিথ্যে আশ্বাসে কুয়াশা আর তার বন্ধু-বান্ধবদের ফাঁদে ফেলতে সাহায্য করেছে সে। মারাগেছে ওরা সবাই। | অনুশোচনায়, অনুতাপে, হতাশায় বিমূঢ় হয়ে পড়ল সাঈদা শরমিন। ছোরাটার দিকে আর একবার তাকাল সে। তারপর গলায় ঠেকাল ছোরার ধারাল ব্লেডটা•••|
সাগরের অথৈ জলের নিচ থেকে একটা মাথা ভেসে উঠল।
ভেসে এল সাঈদা শরমিনের কানে একটি ভরাট কণ্ঠস্বর, ‘আত্মহত্যা করা চরম বোকামি।’
চমকে উঠে সাঈদী শরমিন সাগরের দিকে তাকাল। হাতের ছোরাটা পড়ে গেল হাত থেকে। অবিশ্বাস ভরা চোখে চেয়ে আছে সে সাগরের দিকে।
সাগর থেকে তীরে উঠছে কুয়াশা। তার পিছনে দেখা যাচ্ছে শহীদ, রাজকুমারী, কামাল, রাসেল ডি. কস্টাকে।
‘আ-আপনারা বেঁচে আছেন!’
সহাস্যে সাঈদা শরমিনের কাছে এসে দাঁড়াল ওরা। ব্যাখ্যা করল শহীদ, ‘শয়তান দেওজী কাংকারিয়া ভেবেছিল কুয়াশার পকেটেই সব যন্ত্রপাতি থাকে–ওগুলো সরিয়ে নিয়ে সে ভেবেছিল কুয়াশার আর কিছু করার নেই। আসলে যন্ত্রপাতি কুয়াশার কাছে এরপরও ছিল। ফলস-স্ক্রিন–অর্থাৎ কুয়াশার শরীরের চামড়ার সঙ্গে নকল চামড়ার পকেট ছিল–তাতে বেশকিছু যন্ত্রপাতিও ছিল । পানির নিচে আমরা ডুবে যেতেই কুয়াশা প্রত্যেককে একটা করে অক্সিজেন ক্যাপসুল খেতে দেয়। অক্সিজেন ক্যাপসুল খাবার ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজন ফুরোয় আমাদের। ফলস স্কিনের পকের্টে ছুরিও ছিল। সেটা বের করে কুয়াশা নিজের এবং আমাদের হাত-পায়ের রশির বাধন কেটে দেয়।’
সাঈদা শরমিন শহীদের কথা শুনছিল না। ভয়ে কাঁপছিল সে। শহীদ থামতেই সে বলে উঠল, কিন্তু আমার কোন দোষ নেই, বিশ্বাস করুন। আমি স্বীকার করছি,
কুয়াশা ৫২।
আপনাদেরকে ফাঁদে ফেলেছি আমিই…কিন্তু, বিশ্বাস করুন, দেওজীর নির্দেশে, আর কোন উপায় ছিল না বলে বিশ্বাস করুন। আমি চাইনি আপনারা বিপদে পড়ুন•• |
কুয়াশা শান্তভাবে বলল, আমরা জানি। ‘আ•••আপনি কি আমাকে ক্ষমা করবেন?
নিশ্চয়ই। তোমাকে দুর্বল পেয়ে শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে জঘন্যভাবে ব্যবহার ‘ করেছে। আমি জানি তোমার কোন দোষ নেই। যাক, আমরা তোমার সব কথা
শুনতে চাই এবার।
| অনেক কথা বলবার আছে আমার। কিন্তু আপনারা আমাকে আর আমার বাবাকে সাহায্য করবেন তো?’
নির্দোষ মানুষকে সাহায্য করার জন্যে আমরা প্রস্তুত। তোমার বাবা যদি নির্দোষ হন তাহলে নিশ্চয়ই তাকে আমরা সাহায্য করব।’ কুয়াশা আশ্বাস দিয়ে
বলল।
কয়েক হপ্তা আগে ঘটনা ঘটতে শুরু করে।’ সাঈদা শরমিন বলতে শুরু করল, ‘আমার বাবা একজন বিজ্ঞানী। কেমিস্ট্রিতে তিনি একজন পণ্ডিত। কিছুদিন আগে বাবা এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করেন যা যুগান্তকারী বলে বিশ্বাস করেন তিনি। আবিষ্কারের ফরমুলা নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্যে তিনি একজন অ্যাডভোকেটের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন•••|’
‘অ্যাডভোকেটের নাম মোখলেসুর রহমান, তাই না?’ জানতে চাইল কুয়াশা।
সাঈদা শরমিন বলল, হ্যাঁ। শফিকুল কবীর আমার কাকা বটে, কিন্তু সে আমার বাবার সৎ-ভাই। ল্যাবরেটরিতে সে বাবার অ্যাসিস্টেন্ট ছিল। বাবার আবিষ্কার সম্পর্কে শুনলেও ভিতরের তথ্য তার জানার বাইরেই থেকে যায়।’
অনেক রহস্যের সমাধান পাওয়া যাচ্ছে সাঈদা শরমিনের কথা শুনে। সবাই গভীর মনোযোগের সঙ্গে শুনছে তার কথা।
অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমানের কাছে বাবা পৌঁছুতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। কথাটা আজই আমি জানতে পারি। বাবা হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে গেলেন–তার কোন সন্ধানই আমি পেলাম না। শফিকুল কাকা আমাকে বলল, বাবা নাকি নিরাপদেই আছে। কাকার কথা শুনে নিশ্চিন্তই ছিলাম আমি। কিন্তু তারপরই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে দুশো সেনা নিহত হলো। হত্যাযজ্ঞ ঘটার খবর পেয়েই আমি বুঝলাম এই মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে বাবার আবিষ্কারের কোন না কোন। যোগ আছে। বাবা আমাকে তার আবিষ্কার সম্পর্কে যতটুকু বলেছিলেন তাতে আমার বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে এক ধরনের কেমিক্যাল কম্পাউণ্ড আবিষ্কার করেছেন তিনি, যার ক্ষমতা অসাধারণ।’
বলে যাও।’
‘ঢাকায় আমাদের একটা বাড়ি আছে। সে বাড়িতেই ছিলাম আমি। শফিকুল কাকা টেলিগ্রাম পাঠিয়ে আমাকে জানিয়েছিল সে ঢাকায় আসছে। তাকে রিসিভ
ভলিউম ১৮
করার জন্যই এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম আমি। প্লেন থেকে কিন্তু নামতে দেখলাম না শফিকুল কাকাকে। এয়ারপোর্টের বাইরে বেরিয়ে দেখি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গাড়ির ড্রাইভারটা কাংকারিয়ার লোক। শফিকুল কাকার সঙ্গেও লোকটাকে একবার দেখেছিলাম। ওর কাছ থেকে খবরাখবর পাব মনে করে ট্যাক্সি নিয়ে অনুসরণ করি আমি। মাঝ পথে দেখি গাড়ির ড্রাইভার চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে ছুটতে শুরু করল। লোকটাকে কে খুন করে তা আমি বলতে পারব না। তবে ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে আসার সময় তাকে আমি পড়ে থাকতে দেখি। লোকটাকে সাহায্য করার জন্যই সেদিকে এগোই আমি। সেই সময়ই আমার হাতের রুমালটা ওখানে কিভাবে জানি না পড়ে গিয়েছিল।
‘মোখলেসুর রহমানের অফিসে কেন গিয়েছিলে তুমি? জানতে চাইল শহীদ।
মোখলেসুর রহমানকে বাবা চিঠিপত্র লিখেছে কিনা খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম ওখানে। যতই সময় কাটছিল–আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম বাবার আবিষ্কারই ব্যবহার করা হয়েছে সেনাদের হত্যাযজ্ঞে। কিন্তু এ কথা কাউকে বলার উপায় ছিল
আমার। বাবার সন্ধান না পাওয়া অবধি এ ছাড়া আর কিই বা করতে পারতাম আমি।’
| কুয়াশা সমর্থন জানিয়ে মাথা নাড়ল।
‘ওখান থেকে আমি বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখি মি. কামাল এবং রাজকুমারীকে বন্দী করে রেখেছে কয়েকজন লোক। লোকগুলো ওদেরকে খুন করতে গেলে আমি গুলি করি তারপর সেখান থেকে পালিয়ে যাই। যাক, এরপর আবার একটা টেলিগ্রাম পাই আমি শফিকুল কাকার। তিনি আমাকে কক্সবাজারে আসতে বলেন। তাই করি আমি। কাকার সঙ্গে আমি দেওজী কাংকারিয়ার কাছে যাই। দেওজী কাকাকে আক্রমণ করে অজ্ঞান করে ফেলে। আমাকে বলে, তোমার বাবার সঙ্গে তোমার কাকা বেঈমানী করেছে। তোমার বাবার নির্দেশেই তোমার কাকাকে শাস্তি দেব আমরা। এরর দেওজী আমাকে বলে তোমার বাবা এই মুহূর্তে খুব বিপদে আছে। তুমি যদি কুয়াশা আর তার বন্ধু বান্ধবদের জন্যে ফাঁদ পাততে আমাকে সাহায্য করো তাহলে তোমার বাবা এ যাত্রা বিপদ কাটিয়ে উঠবে। বাবার স্বার্থে ওদের কথায় আমি রাজি হই। তারপরের ঘটনা তো আপনারা জানেনই। আপনাদেরকে ফাঁদে ফেলি আমি। তারপর দেওজী আর তার লোকেরা আমাকে বেঁধে একটা কামরায় ফেলে রাখে। সেই সময় আমি ওদের সঙ্গে শফিকুল কাকাকেও দেখি। আসলে শফিকুল কাকা ওদের দলের লোক। কাকাকে দেওজী মেরেছিল অভিনয় করে, আমার বিশ্বাস অর্জনের জন্যে। মি, কুয়াশা, আপনি পরোপকারী–শুনেছি, আপনি নাকি অসহায়ের পরম বন্ধু। আমি জানি আমার বাবা সম্পূর্ণ নির্দোষ। বাবা ওদের হাতেই বাদী হয়ে আছে বলে মনে হয়। আমার বিশ্বাস বাবার কাছ থেকে আবিষ্কারের ফরমুলাটা আদায় করবে ওরা. তারপর বাবাকে মেরে ফেলবে। মি. কুয়াশা, আপনার দুটো পায়ে ধরি, আমার বাবাকে আপনি উদ্ধার করুন। কেঁদে ফেলল সাঈদা শরমিন।
কুয়াশা শান্ত গলায় শুধু বলল, তোমার বাবাকে উদ্ধার করাই এখন আমার কুয়াশা ৫২
প্রথম কর্তব্য। তুমি চিন্তা কোরো না, শরমিন।’
বালুকাবেলা থেকে ঘুর পথে হেঁটে জীপের কাছে চলে এল ওরা। ড্রাইভিং সীটে বসল স্বয়ং কুয়াশা। শহরের দিকে ছুটে চলল জীপ।
শহরে পৌঁছে কুয়াশা একটা ওয়াচ স্টোরের সামনে জীপ দাঁড় করাল। কাউকে কিছু না বলে নেমে গিয়ে সোজা ঘড়ির দোকানে ঢুকল সে। ফিরে এল তিন মিনিট পরই।
. সবাই দেখল কুয়াশার হাতে অনেকগুলো হাতঘড়ি। প্রত্যেককে একটা করে। ঘড়ি দিল সে।
* সবাই অবাক বিস্ময়ে চেয়ে রইল কুয়াশার দিকে। কুয়াশা জীপ ছেড়ে দিয়ে মৃদু হেসে বলল, চট্টগ্রাম থেকে ওয়্যারলেসে আমার একজন সহকারীকে ঘড়িগুলো পাঠাতে বলেছিলাম। ঢাকায় থাকতেই তৈরি করেছিলাম এগুলো। ফিটিং-এর কাজ বাকি ছিল অবশ্য। ঘড়ির দোকানটা আমার এক পরিচিত লোকের, এই ঠিকানাতেই পাঠাতে বলেছিলাম।’
দ্রুত প্রত্যেকে পরে নিল একটা করে ঘড়ি। বলাই বাহুল্য, দেওজী কাংকারিয়া বা তার অনুচরেরা যে মেসেজ যেখানেই পাঠক, ওরা সে মেসেজ এখন রিসিভ
• করতে পারবে অনায়াসে।
| কক্সবাজারে এরপর কয়েকঘণ্টা কাটাল ওরা। হোটেলে বসে অপেক্ষা করছে। সবাই। অপেক্ষা করছে মেসেজ রিসিভ করার জন্য। কয়েক ঘণ্টা পর একটা মেসেজ রিসিভ করল ওরা।
কিন্তু মেসেজটা পেয়ে মন খারাপ হয়ে গেল ওদের।
ওরা মেসেজ পেয়ে বুঝতে পারল বিজ্ঞানী সাঈদ চৌধুরীকে নিয়ে শত্রুরা রওনা হয়েছে কোথাও।
ছয় সগর্জনে উড়ে যাচ্ছে একটি হেলিকপ্টার।
সীটের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে বিজ্ঞানী সাঈদ চৌধুরীকে। উন্মাদের মত চিৎকার করছেন তিনি, ‘না-না! মেরে ফেলো তোমরা আমাকে। আমি মরতে রাজি আছি কিন্তু তবু বলব না সে-কথা! আমার আবিষ্কারের ফরমুলা আমি কাউকে বলব না ।’
মুচকি মুচকি হাসছে শফিকুল কবীর। কথা বলে উঠল সে। তার হাতে একটা হাইপডারমিক সিরিজ দেখা যাচ্ছে। | সাঈদ ভাই! অমন চেঁচিয়োনা বোকার মত। নিজের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করো। ফরমূলাটা বললে ক্ষতি কি তোমার? একটা কাজের জিনিস আবিষ্কার করেছ–তার বদলে টাকা চাও-এই তো? টাকা দেবকত টাকা চাও তুমি?’
টাকা আমি চাই না!’ চিৎকার করে উঠলেন প্রৌঢ় সাঈদ চৌধুরী, আমার
ভলিউম ১৮
আবিষ্কারকে আমি অসৎ কাজে ব্যবহার করতে দেব না।’
‘আমরা জানি তুমি ফর্মুলাটা বলবে না। তার জন্য আমরা তৈরি।’
শফিকুল কবীর দেওজী কাংকারিয়ার দিকে তাকাল। কাংকারিয়া মাথা কাত করে অনুমতি দিল।
শফিকুল কবীর সাঈদ চৌধুরীর বাহুতে ইঞ্জেকশনের সুচ বিধিয়ে দিল।
ইঞ্জেকশন পুশ করার পর শফিকুল কবীর, কাংকারিয়া এবং সান্তারাম উলকা নিস্পলক চোখে তাকিয়ে রইল সাঈদ চৌধুরীর দিকে।
সাঈদ চৌধুরীর চোখের দৃষ্টি কেমন যেন ভাবলেশহীন হয়ে উঠল। বোকা বোকা দেখাচ্ছে তাকে। শরীরের মাংসপেশীগুলো ঢিলে, নরম হয়ে গেল তার।
মেসেজ রিসিভ করে ওরা জানতে পেরেছিল দেওজী কাংকারিয়া এবং তার দলের কয়েকজন লোক সাঈদ চৌধুরীকে নিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে চলে যাচ্ছে খুলনা অভিমুখে। খুলনায় তাদের লোক আছে, তাদেরকে মেসেজ পাঠিয়ে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে কাংকারিয়া। কিন্তু মেসেজে সে উল্লেখ করেনি কোথায় তাদের
কপ্টার ল্যাও করবে।
বিমান বন্দরে পৌঁছে ওরা সবাই দেখল কুয়াশার জন্য একটা হেলিকপ্টার সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। | সংক্ষেপে ব্যাখ্যা দিল কুয়াশা, দরকার লাগবে মনে করে চট্টগ্রামে ওয়্যারলেসে খবর পাঠিয়েছিলাম আমার লোককে–সেই নিয়ে এসেছে ‘কপ্টারটা।’
| হেলিকপ্টারে চড়ে বসল সবাই। ক্যাপ্টেনের সীটে বসল রাজকুমারী এবং রাসেল।
পিছনের সীটে বসল কুয়াশা এবং শহীদ। কপ্টার আকাশে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কাজে মনোনিবেশ করল দুজন। কাজটা কি তা যেন ওদের চেয়ে ভাল আর কেউ জানে ন্ম। মাঝে-মধ্যে কুয়াশা দ্রুত একটা নকশা আঁকছে কাগজে, তাকাচ্ছে শহীদের দিকে, শহীদ মাথা নেড়ে সমর্থন জানাচ্ছে তাকে।
মিনিট বিশেক পর স্বাভাবিক হয়ে উঠল সাঈদ চৌধুরী। এতক্ষণ যেন সে ঘুমিয়ে ছিল। সংবিৎ ফিরে পেয়ে কাঁপা গলায় সে জানতে চাইল, কি কি রলেছি আমি?’
C সহাস্যে শফিকুল কবীর বলে উঠল, কি বলেছ? জিজ্ঞেস করো, কি বলোনি! একবার নয়, দুবার মুখস্থ বলে ফেলেছ তুমি তোমার আবিষ্কারের ফর্মুলা।
মাথাটা ঝুঁকে পড়ল সাঈদ চৌধুরীর। দুচোখ ভরে উঠল পানিতে। সান্তারাম উলকা বলল, ওকে আর আমাদের প্রয়োজন নেই।
কাংকারিয়া একটু ভাবল। তারপর বলল, কুয়াশার টুথ সেরাম ঠিকভাবে কাজ করেছে কিনা এখনও আমরা সঠিক জানতে পারছি না। ফর্মুলা বলেছে বটে ও, কিন্তু কিছু বাদ পড়েছে কিনা জানব কিভাবে আমরা? এক্সপেরিমেন্টের পর যখন বুঝতে পারব মৃত্যু-রশ্মি তৈরি করতে পেরেছি আমরা তখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে। ততক্ষণ ওকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। ৩-কুয়াশা ৫২
কথাগুলো বলে কন্ট্রোল কেবিনে গিয়ে ঢুকল কাংকারিয়া। পাইলটকে কয়েকটা নির্দেশ দিল সে। তারপর প্রকাণ্ড একটা ট্রান্সমিটারের সামনে গিয়ে বসল
সে। শুরু করল মেসেজ পাঠাতে। | কাংকারিয়ার পাঠানো মেসেজ রিসিভ করল কুয়াশা এবং তার সঙ্গের বাকী সবাই। ‘ শহীদ বলল, খুলনা শহর থেকে বিশ মাইল দূরে একটা মাঠ আছে– কাংকারিয়ার ‘কপ্টার সেখানে নামবে। সভবত, আশপাশে ওদের কোন হাইড আউট আছে। ভোর তিনটের সময় ল্যাণ্ড করবে ওদের ‘কপ্টার।
দ্রুত কাজ শুরু করল কুয়াশা। সে-ও একটা মেসেজ পাঠাল। সিক্রেট সরকারী কোড ব্যবহার করল সে। খুলনায় পুলিস বিভাগের হেডকোয়ার্টারে পাঠাল সে মেসেজটা।
মেসেজের শেষ কয়েকটা কথা হলো: শত্রুদেরকে গ্রেফতার করার সময় খুব সাবধান! এরা নির্মম খুনী। খুন করাই এদের পেশা। খুব বেশি লোক যেন না থাকে মাঠে। খুলনার পুলিস বিভাগ যে কোন মূল্যে শত্রুদেরকে গ্রেফতার করার জন্য তৈরি হলো। পুলিস কমিশনার দ্রুত থানাগুলোয় নির্দেশ পাঠালেন। শহরের বিভিন্ন থানা থেকে সশস্ত্র পুলিস ছুটে এল। তারা রওনা হলো কয়েকজন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে নির্দিষ্ট মাঠের দিকে। সঙ্গে নিল তারা গ্যাস মাস্ক, স্টেনগান এবং টিয়ার গ্যাস।
ভোর তিনটের বেশ কিছু আগেই সশস্ত্র পুলিসবাহিনী পৌঁছে গেল নির্দিষ্ট জায়গায়। গোটা এলাকাটা ঘিরে ফেলা হলো। আশপাশের রাস্তায় মোতায়েন করা হলো প্রহরী। ইন্সপেক্টরদের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়ে প্রত্যেকটি সেপাই পরে নিল গ্যাস মাস্ক।
এদিকে কাংকারিয়ার অনুচরেরা মাঠের কাছাকাছি পৌঁছে পুলিস তৎপরতা দেখে পিছিয়ে গেল দ্রুত। তাদের হাতের হাতঘড়ি ব্যবহার করল তারা।
যথাসময়ে খবর পেল কাংকারিয়া।
অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে পুলিসবাহিনী। সবাই ভাবছে–শেষ পর্যন্ত আসবে তো কপ্টারটা?
ঠিক তিনটের সময় গর্জন শোনা গেল। উপর দিকে তাকিয়ে কপ্টারের আলো দেখতে পেল সবাই।
মাঠের উপর চক্কর মারতে লাগল সেটা। পুলিশ বাহিনীর সকলের মনে সন্দেহের উদয় হলো–শত্রুরা টের পেয়ে গেল নাকি? ‘কপ্টার ঘুরিয়ে নিয়ে ফিরে যাবে না তো? | না। এতক্ষণে নেমে আসছে ‘কপ্টারটা। কিন্তু কপ্টারের চাকা মাঠ স্পর্শ করার আগেই ঘটল আবার সেই ভয়ঙ্কর ঘটনা।
মাঠ এবং মাঠের বাইরে চারদিকে বিন্দু বিন্দু নীল আগুনের ফুলকি দেখা গেল হঠাৎ। আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়ল সকলে।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেকে অনুভব করূল, শ্বাস-প্রশ্বাস,
ভলিউম ১৮
এ
:
ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের। আশপাশের বাতাস অকস্মাৎ যেন ফুরিয়ে গেছে••• |
ব্যস, এরপরের কোন ঘটনা তারা জানার সুযোগ পেল না।
কপ্টারটা যখন মাঠে নামল তখন পুলিস বাহিনীর একজন লোকও বেঁচে নেই। | কাংকারিয়ার অনুচরেরা এই সময় এবং সুযোগের জন্যই অপেক্ষা করছিল। গাড়ি নিয়ে সোজা মাঠে প্রবেশ করুল তারা।
কপ্টারের আওয়াজ ইতিমধ্যে থেমেছে। কাংকারিয়া নেমে এল সবার আগে। তারপর সাঈদ চৌধুরী। তার হাত দুটো পিছমোড়া করে বাঁধা। তার পিছনে সান্তারাম উলকা এবং শফিকুল কবীর।
গাড়িতে উঠে বসল ওরা। মাঠের এদিক সেদিক অনেকগুলো লাশ পড়ে রয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে মুচকি একটু হাসল শুধু কাংকারিয়া।
| জ্ঞান হারাল একজন। সাঈদ চৌধুরী তার আবিষ্কৃত কেমিক্যাল কম্পাউণ্ডের অপব্যবহার দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে ডুকরে কেঁদে উঠল, তার অজ্ঞান হয়ে পড়ল গাড়ির ব্যাকশীটে।
তীরবেগে মাঠ থেকে বেরিয়ে গেল লাল অস্টিনটা।
সাত পুলিস কমিশনার স্বয়ং ওয়্যারলেসে ইন্সপেক্টরদের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখছিলেন। আচমকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বিপদ ঘটেছে বুঝতে পারেন, সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে অকুস্থলের দিকে রওনা হন তিনি।
এরপর উদ্ধার কার্য শুরু হয়। পুলিশবাহিনীর প্রায় দেড়শো লোকের মধ্যে মাত্র বাচল এগারোজন। এই এগারোজনও ভয়ানক রকম অসুস্থ, বাঁচবে কিনা সন্দেহ। অ্যাম্বুলেন্সে তুলে আহত লোকগুলোকে পাঠিয়ে দেয়া হলো পুলিস হাসপাতালে। | খবর, বিশেষ করে খারাপ খবর, কখনও চেপে রাখা যায় না। সকালের আলো ফুটবার সঙ্গে সঙ্গে খুলনা শহরেই শুধু নয়, সারা দেশে দুঃসংবাদটা ছড়িয়ে পড়ল। | খুলনার পুলিস কমিশনার শহরের প্রতিটি বাড়িতে অনুসন্ধান চালাবার কথা বিবেচনা করতে লাগলেন।
দেশের প্রায় প্রত্যেকটি প্রধান সংবাদপত্রে একটি ফিচার ছাপা হলো রহস্য সম্পর্কে। ফিচারটা কে লিখেছে, লেখক তথ্যগুলো কোথা থেকে পেয়েছে তা জানা গেল না। ফিচারের প্রথম দিকেই লেখক জানিয়েছে বিশ্বস্তসূত্রে প্রকাশ।
ফিচারের মূল বক্তব্য হলো–এখন জানা গেছে যে এই মৃত্যু-রশ্মির পিছনে একদল সুসংগঠিত দুষ্কৃতকারী রয়েছে। তারা তাদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার চেষ্টায় লিপ্ত। ফিচারে আভাস দেয়া হয়েছে, দুষ্কৃতকারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে ক্রমশ। অল্পসময়ের মধ্যেই তারা ধরা পড়তে বাধ্য। দুষ্কৃতকারীরা এই কেমিক্যাল কম্পাউও বিদেশী কোন রাষ্ট্র বা শক্তির কাছে বিক্রি করতে চাইছে। একের পর এক হত্যাযজ্ঞ ঘটাচ্ছে তারা শুধু মাত্র তাদের হাতের অস্ত্রটা কী সাংঘাতিক রকমের
কুয়াশা ৫২
৩৫
ভয়ঙ্কর তা প্রমাণ করার জন্য, যাতে যারা এই অস্ত্র কিনতে আগ্রহী তারা যেকোন অঙ্কের টাকা দিয়ে এটা কিনতে পিছ-পা না হয়। মোট কথা, কেমিক্যাল কম্পাউণ্ডের দাম বাড়াবার জন্যই শয়ে শয়ে মানুষকে হত্যা করেছে দুষ্কৃতকারীরা।
ফিচারটা পড়ে বাংলাদেশস্থ অনেক বিদেশী সিক্রেট এজেন্ট কেমিক্যাল কম্পাউন্ডের মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য উঠে পড়ে লেগে গেল।
অনুসন্ধান চালাচ্ছিল কুয়াশা এবং তার দলবলও। কিন্তু ওদের সার্চ করার পদ্ধতি আর সকলের চেয়ে আলাদা। কক্সবাজার থেকে হেলিকপ্টারে করে আসার সময় কুয়াশা এবং শহীদ যে যন্ত্রটা তৈরি করেছে সেটা ব্যবহার করছিল ওরা। হেলিকপ্টারের ভিতর ছোটখাট একটা কেবিন ছিল, তাতে যন্ত্রপাতি ছিল প্রচুর। সেই সব যন্ত্রপাতি দিয়ে তৈরি করেছে ওরা এই যন্ত্রটা। | সংবাদপত্রে যে ফিচারটা ছাপা হয়েছে সেটা কুয়াশারই লেখা। কথাটা অবশ্য শহীদ ছাড়া আর কেউ জানে না।
খুলনার যে হোটেলটায় ওরা উঠল সেই হোটেলের রুমেই ওদের তৈরি বিশেষ যন্ত্রটা স্থাপন করা হলো। যন্ত্রটা আসলে কাংকারিয়ার ইনফ্রা-রে রেডিও সেণ্ডার
এর মতই একটা মেশিন। একই ধরনের, একই কাজের উপযুক্ত।
| যন্ত্রটা স্থাপন করার পর সুইচ অন করল কুয়াশা। দ্রুত মেসেজ পাঠাল সে।
সবাই নিরবে তাকিয়ে দেখছে তার কাজকর্ম।
কুয়াশা যে মেসেজ পাঠাল সেই মেসেজ রিসিভ করল কাংকারিয়ার প্রত্যেক অনুচর। তারা মেসেজটাকে কাংকারিয়ার পাঠানো মেসেজ বলেই মনে করল। অন্য রকম মনে করার কোন কারণই ঘটল না।
চমকে উঠল শুধু কংকারিয়া, সান্তারাম উলকা এবং শফিকুল কবীর। নিজেদের হাতঘড়ির দিকে হা করে তাকিয়ে রইল তারা। কি ঘটছে তা বুঝতেই পারুল না । প্রথমে। তারপর তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠল অবিশ্বাস।
অসম্ভব! এ হতে পারে না! শফিকুল কবীর বোকার মত মাথা নাড়তে লাগল। | কিন্তু এ রকম কাণ্ড কে করতে পারে! কুয়াশার ব্রেন ছাড়া•••
কাংকারিয়া বলে উঠল, কি বলতে চাও মি, উলকা? শয়তান কুয়াশা বেঁচে : আছে?’ | * অবিশ্বাস্য হলেও কথাটা বোধহয় সত্যি। সে নিশ্চয়ই বেঁচে আছে। কুয়াশা ছাড়া আর কারও পক্ষে আমাদের মত ইনফ্রা-রে রেডিও সেণ্ডার তৈরি করা সম্ভব নয়।’
কাংকারিয়া দাঁতে দাঁত চেপে কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠল, সে যাই হোক–এটা বন্ধ করতে হবে যেভাবে হোক।’
কথাগুলো বলেই সে ছুটে গিয়ে দাঁড়াল একটা ডুপ্লিকেট ইনফ্রা-রে ট্রান্সমিটার। যন্ত্রের সামনে। সুইচ অন করুন। পরমুহূর্তে প্রায় আর্তনাদ করে উঠে ছিটকে চলে এল কামরার মাঝখানে। কাঁপছে কাংকারিয়া।
ভলিউম ১৮
‘এ নিশ্চয়ই কুয়াশার কাণ্ড! মেসেজ পাঠাচ্ছে সে। শুনলে, কি রকম ডিসটার্ব করছে আমাদের’মেশিন? শয়তানটা তার সেট অন করে রেখেছে–যতক্ষণ ওটা অন করা থাকবে ততক্ষণ আমাদের এই সেট থেকে পাঠানো কোন মেসেজ কেউ রিসিভ করতে পারবে না। আমাদের সেটের চেয়ে শয়তানটার সেট অনেক বেশি
শক্তিশালী। “ সান্তারাম উলকা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, তীরে এসে তরী ডুববে–তা হতে পারে না।’
টেলিফোনের রিসিভার তুলে ডায়াল করতে শুরু করল সে। নিজেদের দলের কয়েকজনকে দ্রুত ফোন করে নির্দেশ দিল সে, তোমাদের অধীনে যত লোক আছে তাদের সবাইকে আমাদের আস্তানায় পাঠিয়ে দাও। সাবধান, কেউ যেন রিস্টওয়াচের নির্দেশ অনুযায়ী মুভ না করে।’ কুয়াশা মেসেজ পাঠিয়ে বসে নেই। মেসেজে সে কাংকারিয়ার প্রত্যেক অনুচরকে শহরের একটা পার্কে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে।
মেসেজ পাঠিয়ে কুয়াশা কামাল এবং রাসেলকে পাঠিয়ে দিয়েছে পার্কে। কাংকারিয়ার অনুচরদের ধরে আনবে তারা।
পার্কে পৌঁছুল ওরা। পনেরো মিনিট অপেক্ষা করার পরই দু’জন লোককে দেখল ওরা। এরা কাংকারিয়ার লোক তা জানা গেল তাদের সন্দেহজনক আচরণ দেখে।
অনায়াসে লোক দু’জনকে গ্রেফতার করে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে এল এরা হোটেলে। বড় আকারের হাতঘড়িগুলো পাওয়া গেল ওদের পকেটে। চেয়ারে বসিয়ে, চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হলো দু’জনকে, কুয়াশা একজনের সামনে দাঁড়াল। শান্ত গলায় জানতে চাইল সে, কি নাম তোমার?
ভয়ে হাত-পা পেটের ভিতর সেঁধিয়ে যাবার অবস্থা হয়েছে লোকটার। কাঁপা গলায় সে উত্তর দিল, কেশব চন্দ্র।
দেওজী আর সাভারাম কোথায় তারা?
ঢোক গিলল লোকটা মাথা নাড়ল ঘন ঘন। উত্তর দেবে না, বোঝাতে চাইছে। সে।
দেওজী মেরে ফেলবে! প্রায় কেঁদে ফেলবার উপক্রম করে কথাটা বলল। লোকটা।
কুয়াশা লোকটার পিছনে গিয়ে দাঁড়াল। তার ঘাড়টা চেপে ধরল হাত দিয়ে জোরে। ব্যথায় ককিয়ে উঠল লোকটা। এরপর আর কোন অসুবিধে হলো না। গড়গড় করে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেল সে।
রাত নামল। কেশর চন্দ্র এবং আবদুল হককে পাঠিয়ে দেয়া হলো থানা হাজতে।
নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল ওরা। হঠাৎ কামাল বলে উঠল, কুয়াশা কোথায়?
কুয়াশা ৫২
৩৭
সবাই এদিক ওদিক তাকাল। রূমের ভিতর নেই কুয়াশা। কখন যেন, সকলের অগোচরে, হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে গেছে সে।
রাত আটটায় শহীদ বেরিয়ে গেল হোটেল থেকে। কিছু জিনিসপত্র কিনতে হবে, বলে গেল ও।
নটা বাজল। ফেরেনি তখনও কুয়াশা। রাজকুমারী এবং রাসেলের উপর ট্রান্সমিটার পাহারা দেয়ার দায়িত্ব।
কামাল এবং ডি কস্টা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তিনজনের জন্যে ডিনারের অর্ডার দিল। রাজকুমারী আর রাসেল এখুনি খাবে না, জানিয়ে দিয়েছে।
সাঈদা শরমিন গালে হাত দিয়ে বসে আছে একটা চেয়ারে।
ডিনার শেষ করে কামাল এবং ডি, কস্টা উঠে দাঁড়াল একযোগে। এতক্ষণ নিচু গলায় আলোচনা করেছে ওরা।
| ডি, কস্টা রাজকুমারীর উদ্দেশে বলল, ‘হামরা দুই ফ্রেণ্ড একটু ভ্ৰমণ করিয়া আসি। হাপনারা পাহারায় ঠাকুন। বী কেয়ারফুল, হাইজ্যাক হইবার ডর আছে! এনিমি আসিলে হামরা না রিটার্ন করা অবডি ওয়েট করিটে বলিবেন।’
| পাশের রুমে চলে গেল ওরা। কাপড় চোপড় ছেড়ে দুজনেই ছদ্মবেশ নিল। মিনিট বিশেক পর সেই রূম থেকেই করিডরে বেরিয়ে এল নিঃশব্দে। সাদা চাপদাড়ি সহ বৃদ্ধের ছদ্মবেশ নিয়েছে ওরা।
কেশব চন্দ্র কুয়াশার প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে কাংকারিয়ার আস্তানার ঠিকানা। কাংকারিয়ার আস্তানায় হানা দেবার উদ্দেশ্য নিয়েই কামাল এবং ডি. কস্টা হোটেল ছেড়ে বেরিয়েছে।
ওদের ধারণা, কুয়াশা এবং শহীদ আলাদা আলাদা ভাবে গেলেও ওরা আসলে কাংকারিয়ার আস্তানায় হানা দেবার জন্যই গেছে। | শহরের মধ্যেই কাংকারিয়ার আস্তানা। পাঁচতলা একটা হোটেলের পাশেই বাড়িটা। তিনতলা। বাইরে থেকে বাড়িটা দেখে নিরাশ হলো ওরা। গাঢ় অন্ধকারে ভিতরটা ঢাকা। বাড়ির গেটেও তালা ঝুলছে। ভিতরে মানুষ আছে বলে মনে হয়
পিছন দিক দিয়ে ঢুকব আমরা।’ কামাল দ্রুত হাঁটতে শুরু করল। পিছু নিল বৃদ্ধ ডি. কস্টা।
বাড়িটার পিছন দিকের পঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকল ওরা। বাগানের ভিতর দিয়ে কয়েক পা এগোতেই আশপাশ থেকে একদল লোক বুনো শুয়োরের মত
ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
‘ আক্রমণটা এমনই অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটল যে কামাল বা ডি. কস্টা বাধা দেবার সময় পর্যন্ত পেল না। শত্রুরা দ্রুত ওদের দুজনের হাত-পা এবং মুখ বেঁধে ফেলল। দুই বৃদ্ধকে কাঁধে তুলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল তারা।
৩৮
ভলিউম ১৮
আট
দোতলার যে কামরায় ওদেরকে নিয়ে গিয়ে মেঝেতে বসিয়ে দেয়া হলো সেটা আধুনিক আসবাবপত্রে সুসজ্জিত। সোফা সেট, আরাম কেদারা, মেঝেতে কার্পেট, বুক শেলফ–সবই আছে।
কার্পেটের উপর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ওদের মত আর একজন বন্দীকে দেখল ওরা। শত্রুরা ওদের মুখ বাব্বার প্রয়োজন বোধ করল না। কামরা থেকে বেরিয়ে গেল তারা। বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে দিল। ডি কস্টা বন্দী নোটার উদ্দেশে বলে উঠল, “আসোলায় মালায়কুম। হাপনার পরিচয় কি, মিস্টার?
কামাল ধমকে উঠল, ‘আহ, থামুন।
কথাটা বলে কামাল বন্দী লোকটার দিকে তাকাল। বলল, আমার অনুমান যদি মিথ্যে না হয়–আপনি নিশ্চয়ই মি. সাঈদ চৌধুরী-তাই না?
বিজ্ঞানী সাঈদ চৌধুরী কামালকে দেখলেন কিছুক্ষণ। তার চোখের দৃষ্টিতে, মুর চেহারায় নৈরাশ্যের কালো ছায়া। মাথা নাড়লেন তিনি। বললেন, হ্যাঁ।
আপনারা?’
| কামাল বলল, আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব মুষড়ে পড়েছেন। শত্রুরা আপনার ওপর অত্যাচার করেছে বুঝতে পারছি। কিন্তু যা ঘটবার ঘটেছে–আর কিছু ঘটবে না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন–কুয়াশা আমাদেরকে উদ্ধার করবে।’
সাঈদ চৌধুরী ভাঙা গলায় বলল, উদ্ধার করলেই কি, না করলেই কি। সর্বনাশ যা ঘটবার ঘটে গেছে। শয়তানরা আমার শরীরে টুথ সেরাম ইঞ্জেক্ট করেছিল, নিজের অজ্ঞাতে আমি আমার আবিষ্কৃত মৃত্যু-রশ্মির ফর্মুলা ওদেরকে বলে দিয়েছি।’ | ডি, কস্টা অকস্মাৎ হাঃ হাঃ করে হেসে উঠল। সাঈদ চৌধুরী তার দিকে চেয়ে রইলেন। ডি কস্টার হাসির কারণটা তিনি বুঝতে পারছেন না।
হাসি থামিয়ে ডি, কস্টা বলে উঠল, ‘নো চিন্টা, মিস্টার, ডু ফুটি! হাপনি জানেন না আপনি এনিমিডেরকে কিভাবে ঘোলাপানি খাওয়াইয়াছেন! হামার বথুড়ি, হামার ফ্রেণ্ড মি. কুয়াশা অটি বুড্ডিমান-টিনি সব কাজ করেন বুড্ডির সাহায্যে। মি. কুয়াশা জানেন, হামরা এনিমিডের হাটে যে কোন মোমেন্টে গ্রেফটার হইটে পারি। এবং এনিমিরা হামাডের টুথ-সেরাম হামাডের বিরুদ্ভেই ব্যবহার করিটে পারে হামাডেরকে ডিয়া কঠা বলাইবার জন্য । টাই টিনি বুড্ডি খরচ করিয়া টুথ সেরামের বটলে লাই-সেরাম এবং লাই-সেরামের বটলে টুথ সেরাম-এর লেবেল আঠা ডিয়া সঁটিয়া রাখেন। শফিকুল কবীর যে বটলটা চুরি করিয়া নিয়া আসিয়াছিল সেই বটলের গায়ে টুথ-সেরামের লেবেল ঠাকিলেও উহা আসলে লাই-সেরাম। অঠাট কুয়াশা ৫২
৩৯
হাপনি এনিমিডেরকে হাপনার ইভেনশনের রিয়েল ফর্মুলা না ডিয়া ফলস্ ফর্মুলা ডিয়াছেন•••।
‘মাই গড! বলেন কি! সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি আমি আসল ফর্মুলাটা ওদেরকে দিইনি?’
সাঈদ চৌধুরীর কথা শেষ হতেই গোটা বাড়িটা কেঁপে উঠল থরথর করে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ হলো সেই সঙ্গে।
ডি. কস্টা মুচকি হাসল। বলল, “ওই যে, আমার ফ্রেণ্ড মি. কুয়াশা বোমা ফাটাইটে ফাটাইটে হামাডেরকে মুক্ট করিটে আসিতেছেন!
কামাল খেপে গিয়ে গর্জে উঠল, কচু!
কামরার তিনটে দরজা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে খুলে গেল। একটি দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল দেওজী কাংকারিয়া, সান্তারাম উলকা এবং শফিকুল কবীর। বাকী দুটো দরজা খুলে সশস্ত্র প্রহরীরা দাঁড়িয়ে রইল দোরগোড়ায়।
রাগে কাঁপছিল কাংকারিয়া। সান্তারাম দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে কি যেন বলছে।
শফিকুল কবীরকে আতঙ্কিত দেখাচ্ছে।
কাংকারিয়া প্রায় ছুটে গিয়ে দাঁড়াল সাঈদ চৌধুরীর সামনে। সবুট লাথি মারল “সে সাঈদ চৌধুরীর বুকে।
তীব্র ব্যথায় ককিয়ে উঠলেন সাঈদ চৌধুরী।
কাংকারিয়া, চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠল, ‘কুত্তার বাচ্চা। আমার সঙ্গে চালাকি! তোর ফর্মুলা পরীক্ষা করতে গিয়ে আর একটু হলে জানটাই চলে যাচ্ছিল!’
আবার লাথি মারল কাংকারিয়া সাঈদ চৌধুরীর পেটে। এখনও যদি ভাল চাস তো বল! | গর্জে উঠল ডি, কস্টা, ইউ সান অব আ বীচ! টোর চৌড় পুরুষের নিকুচি
করি হামি…!’
লাফ দিয়ে কামাল এবং ডি, কস্টার সামনে এসে দাঁড়াল কাংকারিয়া। অন্ধ আক্রোশে এলোপাথাড়ি লাথি চালাতে লাগল সে দুজনের দিকে।
ক্লান্ত না হওয়া অবধি থামল না কাংকারিয়া। হাঁপাতে লাগল সে সশব্দে। একটাও কথা না বলে আবার গিয়ে দাঁড়াল সাঈদ চৌধুরীর সামনে, বলবি কিনা বল!
সাঈদ চৌধুরী কথা না বলে ভীত দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন।
এরপর শুরু হলো টরচার। কাংকারিয়া, শফিকুল কবীর এবং সান্তারাম উলকা–তিনজন মিলিতভাবে দৈহিক অত্যাচার চালাতে লাগল সাঈদ চৌধুরীর উপর। ।
সহ্য করার একটা সীমা আছে। সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল অত্যাচার। | পরাজয় স্বীকার করলেন সাঈদ চৌধুরী। কথা বলতে শুরু করলেন তিনি।
এবার তিনি তাঁর আবিষ্কৃত কেমিক্যাল-কম্পাউণ্ডের প্রকৃত ফর্মুলাটা প্রকাশ
30
ভলিউম ১৮
করে দিলেন।
আচমকা গুলির শব্দ ভেসে এল সিঁড়ির দিক থেকে। পরপর কয়েকটা গুলি হলো। পরমুহূর্তে বারান্দায় ধস্তাধস্তির শব্দ হলো।
মুহূর্তের জন্য বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কাংকারিয়া এবং তার দলের লোকেরা। কিন্তু তারপরই লাফ দিয়ে ছুটল কাংকারিয়া। একটি দরজা পেরিয়ে চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল সে। তাকে অনুসরণ করল শফিকুল কবীর।
কিন্তু সান্তারাম উলকা তখনও কামরা থেকে বেরোয়নি। পকেট থেকে একটা রিভলবার বের করছে সে।
ঠিক সেই সময় বাইরের বারান্দায় ছুটন্ত পদশব্দ পাওয়া গেল। কে যেন ছুটে আসছে এ দিকে।
সান্তারাম উলকা রিভলবার বের না করে লাফ দিল। ঠিক সেই সময় কামরার ভিতর ঝড়ের বেগে প্রবেশ করল কুয়াশা। সান্তারাম তখনও কামরার ভিতর রয়েছে। পিছু ধাওয়া করলে তাকে ধরা যায় অনায়াসে। কিন্তু কুয়াশা সে চেষ্টা না করে বিদ্যুৎবেগে পকেট থেকে কি যেন বের করে ছুঁড়ে দিল সান্তারাম উলকার দিকে।
পরমুহূর্তে সান্তারাম উলকা দরজা পেরিয়ে বেরিয়ে গেল পিছনদিকের বারান্দায়। তার ছুটন্ত পদশব্দ ভেসে আসছে–ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে শব্দটা।
নিচ থেকে তখনও গুলির শব্দ হচ্ছে। শহীদের নেতৃত্বে কয়েকজন সশস্ত্র পুলিস শত্রুপক্ষের লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
দ্রুত তিনজনের বন্ধন মুক্ত করল কুয়াশা। প্রায় চিৎকার করে উঠল সে, বাড়ির বাইরে বেরিয়ে যাও সবাই–এই মুহূর্তে!
কথাগুলো বলে সাঈদ চৌধুরীর অজ্ঞান দেহটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে ছুটল সে।
নিচে নেমে এল ওরা হুড়মুড় করে। শহীদ এগিয়ে এল একটা গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে।
কুয়াশা বলল, বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ো এখুনি।’
কেউ কোন প্রশ্ন করল না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার মাঝখানে পৌঁছুল ওরা। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা বিস্ফোরণের শব্দ হলো। কেঁপে উঠল গোটা এলাকাটা।
কুয়াশার অনুমানই সত্য প্রমাণিত হলো। কাংকারিয়া তার এই আস্তানাটাও প্রয়োজনে বোমা ফাটিয়ে উড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা করে রেখেছিল।
নয় সাঈদ চৌধুরীর অবস্থা গুরুতর। উপযুক্ত চিকিৎসা দরকার তার। কুয়াশা তাকে নিজের হোটেলে নিয়ে এল। নিজেই সে সাঈদ চৌধুরীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিল।
কুয়াশা ৫২
৪১
অল্পক্ষণের চেষ্টাতেই জ্ঞান ফিরল সাঈদ চৌধুরীর। শুধু তাই নয়, কুয়াশার নিজের তৈরি বিশেষ ক্যাপসুল খেয়ে এবং ইঞ্জেকশন নিয়ে সাঈদ চৌধুরী ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠল। ব্যথা-বেদনা, দুর্বলত-ক্লান্তি সব যেন উবে গেছে শরীর থেকে।
সাঈদ চৌধুরী বারবার বলছিলেন, শফিকুলকে আমি ক্ষমা করব না। ওকে “আমি দেখে নেব। ‘
কুয়াশা বলল, ‘আমরা সবাই এখন বাইরে যাব। মি. সাঈদ, আপনি আপনার মেয়ের সঙ্গে এখানে থাকবেন।’
সাঈদ চৌধুরী বলল, আমাকেও নিয়ে চলুন।
কুয়াশা বলল, “তা হয় না। আমরা একদল বর্ন-ক্রিমিনালের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। আপনি প্রায় বৃদ্ধ–সামলাতে পারবেন না।’
কুয়াশার পিছন পিছন হোটেল থেকে বেরিয়ে এল ওরা। কেউ জানে না কুয়াশা কোথায় যাবে।
বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। উল্কাবেগে ছুটে চলল গাড়ি।
কাংকারিয়া এবং তার দলবলকে বন্দী করার জন্য যাচ্ছে কুয়াশা। সে জানে শত্রুরা কোথায় আছে।
| রাজকুমারীর প্রশ্নের উত্তরে কুয়াশা পকেট থেকে একটা ঘড়ির মত দেখতে ছোট্ট যন্ত্র বের করল। জিনিসটা দেখা মাত্র সবাই বুঝতে পারল রহস্যটা।
. কাংকারিয়ার আস্তানায় কুয়াশা ইচ্ছা করলেই সান্তারাম উলকাকে বন্দী করতে পারত। কিন্তু কুয়াশা শুধু সান্তারামকে না, গোটা দলটাকে পাকড়াও, করতে চায়। তাই সে সান্তারামকে পালাবার সুযোগ দেয়।
তবে পালাতে দেবার আগে একটা কাজের কাজ করে ফেলেছিল কুয়াশা। পকেট থেকে পালভারাইজড পাউডার বের করে ছুঁড়ে দিয়েছিল সে সান্তারামের পিছন দিকে। তার কোটের পিছন দিকে লেগে আছে এখনও সেই পাউডার। পাউডারটা আসলে একটা দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ। একমাত্র দক্ষিণ আমেরিকাতে পাওয়া যায়। এই খনিজ পদার্থের মধ্যে অত্যাশ্চর্য চৌম্বক শক্তি বিদ্যমান। কুয়াশা
এমন একটা যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যার দ্বারা এই পাউডার যার গায়ে থাকবে তার কাছে পৌঁছানো সম্ভব অনায়াসে।
| শহর ছাড়িয়ে তীরবেগে ছুটছে গাড়ি। প্রায় ঘণ্টাখানেক এক নাগাড়ে গাড়ি চালাবার পর বাক নিল কুয়াশা।
মেঠো পথ ধরে ছুটল গাড়ি।
কুয়াশার হাতের ছোট্ট যন্ত্রটার ডায়ালের মাঝখানে একটা কাটা রয়েছে। হঠাৎ কাটাটা দ্রুত তালে কাঁপতে শুরু করল। ব্রেক কষে গাড়ি দাঁড় করাল সে। বলল, ‘আশপাশেই আছে ওরা।’
গাড়ি থেকে নিঃশব্দে নামল সবাই। চারদিকে বেশ গভীর জঙ্গল দেখা যাচ্ছে। বাড়ি ঘরের কোন চিহ্ন পর্যন্ত নেই।
কুয়াশা এগোল আগে আগে। প্রায় তিনশো গজ হাঁটার পর থমকে দাঁড়াল সে।
৪২
ভলিউম ১৮
থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল সবাই। গাছের ফাঁক দিয়ে একটা উঁচু বাড়ি দেখা যাচ্ছে। বাড়ির উপরতলায় আলো জ্বলছে। বাড়িটা তিনতলা। সুরম্য অট্টালিকা বলতে যা বোঝায় তাই। বাড়ির সামনে সুন্দর একটা বাগান। কোন ধনী লোকের বাগান বাড়ি বলে মনে হয়।
সম্ভবত, খুব বেশি লোকজন নেই বাড়িটায়। কাংকারিয়া এখনও তার দলের সব লোককে এই নতুন আস্তানার কথা জানাবার সুযোগ পায়নি।
শহীদ নিচু গলায় বলল, একসঙ্গে না ঢুকে আলাদা আলাদা ভাবে ঢুকলে কেমন হয়?
‘তুমি ঠিকই বলেছে। সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেখান দিয়ে যার সুবিধে মনে হয় ভিতরে ঢুকে পড়ো। সাবধান, একান্ত প্রয়োজন দেখা না দিলে কেউ গুলি কররে
।’
বাড়িটার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল ওরা।
কুয়াশা কোন দিকে গেল তা কেউ দেখতে পেল না। হঠাৎ যেন সে অদৃশ্য হয়ে গেল।
বাড়ির পিছন দিক দিয়ে ভিতরে ঢুকল কামাল এবং ডি কস্টা। ডান পাশের পাঁচিল টপকাল রাজকুমারী এবং রাসেল। শহীদ একা বাড়ির সামনে দিয়ে ভিতরে চুক।
| বাগান ছাড়িয়ে ফাঁকা উঠানের উপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে উঁচু বারান্দার দিকে এগোল ও। হঠাৎ চমকে উঠল উপর দিকে চোখ পড়তেই।
একটা লোক পানির পাইপ বেয়ে দ্রুত উঠে যাচ্ছে ছাদের দিকে। আবছা অন্ধকারে লোকটাকে ভাল দেখা যাচ্ছে না। কয়েক সেকেণ্ড তাকিয়ে দেখার পর শহীদের সন্দেহ দূর হলো। লোকটা শত্রুপক্ষের কেউ নয়। স্বয়ং কুয়াশা পানির পাইপ বেয়ে উপর দিকে উঠে যাচ্ছে।
বারান্দায় পৌঁছুল শহীদ, কুয়াশার কথাই সত্যি বলে মনে হচ্ছে। শত্রুপক্ষের লোকজন সবাই এসে পৌঁছায়নি এখনও।
কাংকারিয়া বিপদের আশঙ্কা করছে বলেও মনে হয় না। তার এই নতুন আস্তানার খবর কেউ জানতে পারেনি বলে ভেবেছে হয়তো সে। তাই বাড়ির
কোথাও কোন প্রহরী নেই।
বারান্দা ধরে এগোল শহীদ। বাঁ হাত দিয়ে পকেট থেকে একটা টর্চ বের করল। অপর হাতে রয়েছে উদ্যত পিস্তল।
| অনেক খুঁজেও সিঁড়ির সন্ধান পেল না শহীদ। রহস্যটা বুঝতে পারল না। সিঁড়ি ছাড়া উপরে ওঠে কেমন করে? তবে কি এলিভেটর আছে? কিন্তু, কোথায়?
| পকেট থেকে মাস্টার কী বের করল শহীদ।
বারান্দার সঙ্গে পাশাপাশি অনেকগুলো বন্ধ দরজা দেখা যাচ্ছে। প্রত্যেকটি দরজায় তালা ঝুলছে।
একটি দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢুকল শহীদ। ফাঁকা, শূন্য কামরা। কামরায় আরও দুটো দরজা দেখা যাচ্ছে। নিঃশব্দে পা বাড়াল ও। তালা খুলে পাশের
কুয়াশা ৫২
৪৩
কামরায় ঢুকল। না, এ কামরাতেও লিফট বা এলিভেটর কিংবা সিঁড়ি কিছুই নেই।
আরও একটা দরজার তালা খুলল শহীদ।
এবার যে কামরায় প্রবেশ করল ও সেটা আকারে আগেরগুলোর চেয়ে চারগুণ বড়, প্রকাণ্ড একটা হলরূমের মত দেখতে। টর্চের আলোয় প্রকাণ্ড কামরাটার দৃশ্য দেখে চমকে উঠল ও।
কামরার সর্বত্র আশ্চর্য সব জিনিস সাজানো রয়েছে। প্রতিটি জিনিসই যুদ্ধের কাজে ব্যবহৃত হয়। যুদ্ধ সরঞ্জামের এমন প্রদর্শনী এর আঁগে দেখেনি শহীদ।
অত্যাধুনিক অগ্নি-নিক্ষেপক যুদ্ধাস্ত্র, বড় মর্টারের ছোট ছোট মডেল, ফাইটার প্লেনের মডেল, ট্যাঙ্কের মডেল, ফ্লোটিং স্টীল নেট–এই সবের সঙ্গে রয়েছে। অটোমেটিক বম-সাইটার। মেশিনগান, স্টেনগান, রাইফেল–এসব তো আছেই।
কামরাটার এক প্রান্তে একটা সিঁড়ি দেখা গেল। ‘
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে থমকে দাঁড়ালি শহীদ। উপর থেকে কাদের যেন গলা ভেসে আসছে। | দোতলায় উঠে করিডরে থামল শহীদ। কান পেতে শোনার চেষ্টা করল কোন্ দিক থেকে ভেসে আসছে শব্দ। তারপর পা টিপে টিপে এগোল ও।
| বন্ধ একটা কামরার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল শহীদ। কামরার দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ভিতরে আলো জ্বলছে। কী হোলে চোখ রেখে ভিতরে কাউকে দেখতে পেল না ও। তবে কাংকারিয়ার নাম ধরে একজন লোক কথা বলছে।
কথা বলছে সান্তারাম উলকা। ‘কাংকারিয়া, ক্রেতারা এই মাত্র খবর পাঠিয়েছে–আসছে তারা।’
শফিকুল কবীরের গলা শোনা গেল, প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলব আমরা।’
| কাংকারিয়া বলল, কাউকে জানতে দেয়া হবে না যে ক্রেতার সংখ্যা। একাধিক। প্রত্যেককে বলব আমরা আপনিই একমাত্র ক্রেতা-আপনার কাছেই কেমিক্যাল কম্পাউণ্ড বিক্রি করতে যাচ্ছি আমরা। এই মারণাস্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণ করার জন্য বহু মানুষকে খুন করতে বাধ্য হয়েছি আমরা। ক্রেতারা “ কেমিক্যাল কম্পাউণ্ডের ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্যে বারবার আমাদেরকে বাধ্য করেছে হত্যাযজ্ঞ সংঘঠিত করতে। জিনিসটার ক্ষমতা যে কি ভয়ঙ্কর তা এখন বুঝতে পেরেছে সবাই। ক্রেতারা নিজেদেরকে যতই বুদ্ধিমান মনে করুক, আমরা জানি আমরা কি করব। কঠোর পরিশ্রম করেছি আমরা, মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে । ঝুঁকি নিয়েছি শতবার। সুতরাং অল্পে সন্তুষ্ট হচ্ছি না আমরা। একই ফর্মুলা আমরা বিক্রি করব এক ডজন কিংবা তারও বেশি ক্রেতার কাছে।
| দ্রুত ভাবছিল শহীদ। বন্ধ, কামরার ভিতর কাংকারিয়া সান্তা এবং শফিকুল–তিন শয়তানই আছে। দরজা ভেঙে আচমকা আক্রমণ করলে তিনজনকেই বন্দী করা সম্ভব। দরজাটা পরীক্ষা করে নিরাশ হলো শহীদ। কাঠের দরজা, কিন্তু ভিতরে ইস্পাতের পাত রয়েছে।
একজনের একবারের গায়ের ধাক্কায় দরজা ভাঙবে বলে মনে হয় না। আর
৪৪
ভলিউম ১৮
একটা উপায় অবশ্য আছে। গুলি করা যেতে পারে কী হোলে। কিন্তু সেক্ষেত্রে শত্রুরা কয়েক মুহূর্ত সময় পাবে সাবধান হবার জন্য। শেষ পর্যন্ত কী হোলে গুলি করারই সিদ্ধান্ত নিল শহীদ। পিস্তল তুলে গুলি করতে যেতেই ক্ষুি গলায় পিছন থেকে কুয়াশা বলে উঠল, না।
ঝট করে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল শহীদ। কুয়াশা ওর পাশে এসে দাঁড়াল।
কামরার ভিতর থেকে কাংকারিয়ার কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। ওরা দুজনই কান পেতে শুনতে লাগল তার কথা।
| সান্তারাম, তুমি এখুনি মেসেজ পাঠিয়ে দাও আমাদের সব সহকারীদেরকে। জানিয়ে দাও যে কেমিক্যাল কম্পাউণ্ড কিনতে আগ্রহী যে কোন পার্টির সঙ্গে তারা যেন যোগাযোগ করে তাদের অফার সম্পর্কে জেনে নেয়। মূল্য বাবদ কে কত টাকা দিতে চায় তা যেন আগামী বারো ঘন্টার মধ্যে জানায় আমাকে সবাই।
শহীদ এবং কুয়াশা পরস্পরের দিকে নিঃশব্দে তাকাল।
নিস্তব্ধতা নামল কামরার ভিতর। সম্ভবত, সান্তারাম অন্য কামরায় চলে গেছে। মেসেজ পাঠাতে।
অপেক্ষা করতে লাগল ওরা। মিনিট তিনেক পরই সান্তারামের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘ভয়ানক কাণ্ড! রেডিওর এরিয়াল কাজ করছে না। মেসেজ পাঠানো কোন মতে সম্ভব নয় এখন।
এতক্ষণে শহীদ বুঝতে পারল কুয়াশা পানির পাইপ বেয়ে কেন ছাতে উঠেছিল।
কুয়াশা ফিসফিস করে বলল, দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকা যাবে না। কী হোলে গুলি করেও লাভ নেই। ভিতর থেকে দরজায় অনেকগুলো তালা লাগানো আছে। অন্যান্য কয়েকটা কামরার দরজা পরীক্ষা করে সবগুলোতে একই ব্যাপার লক্ষ করেছি আমি। এসো আমার সঙ্গে।
| পা বাড়াল ওরা। ঠিক সেই সময় সাইরেনের মত একটা আওয়াজ শোনা গেল।
| শক্ররা বিপদ টের পেয়ে গেছে!
বাঁক নিল কুয়াশা এবং শহীদ। রাজকুমারী এবং রাসেলকে দেখা গেল, ছুটে আসছে তারা। তাদের পিছন পিছন আসছে কামাল ও ডি. কস্টা।
দাঁড়াল না কুয়াশা। দ্বিতীয় বাকটা সামনেই। সবাই কুয়াশাকে অনুসরণ করছে।
কুয়াশা বাকটা ঘুরতেই গুলির শব্দ হলো। পাঁচ ছয়জন লোক ছুটে আসছিল, কুয়াশাকে দেখেই তাদের একজন গুলি করেছে।
রিভলবারের গুলি কুয়াশার বুকে লাগল । কিন্তু বুলেটটা তাকে কাবু করতে পারুল না। বুলেট প্রুফ বর্ম রয়েছে কুয়াশার বুকে। সিংহের মত হুঙ্কার ছেড়ে লাফ, দিল কুয়াশা।
শত্রুদের ঘাড়ে গিয়ে পড়ল কুয়াশা। দুটো ঘুসি মেরে দু’জনকে অজ্ঞান করে ফেলল সে। বাকী চারজন কুয়াশার উপর লাফিয়ে পড়ল।
কুয়াশা ৫২
গা ঝাড়া দিল কুয়াশা। ছিটকে চারজন চারদিকে গিয়ে পড়ল।
শহীদ এবং অন্যান্যরা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শত্রুদের জন্য কুয়াশা একাই যথেষ্ট মনে করে এগোচ্ছে না কেউ।
চার দুশমন উঠে দাঁড়াল।
কুয়াশা শান্তভাবে এগিয়ে গেল একজনের দিকে। লো টা পিছিয়ে যেতে শুরু করল। হঠাৎ ডানদিকে লাফ দিয়ে অপর একজন শক্রর উপর গিয়ে পড়ল কুয়াশা।
| অপ্রত্যাশিত আক্রমণে লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। দ্রুত লোকটাকে শূন্যে তুলে নিল কুয়াশা। দেহটা ছুঁড়ে দিল সবেগে সামনের লোকটার দিকে। পরমুহূর্তে বিদ্যৎবেগে বাঁ দিকে ছুটে গেল সে। তৃতীয় লোকটা পিছন ফিরে। পালাবার চেষ্টা করছিল। কুয়াশা তার ঘাড়টা চেপে ধরল, জোরে একবার চাপ দিয়েই ছেড়ে দিল ঘাড়টা।
জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল লোকটা।
চতুর্থ লোকটা পালাচ্ছিল, ডি, কস্টার ল্যাঙ খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল সে। কামাল তার পাজরে সবুট লাথি মারতে জ্ঞান লোপ পেল তার।
| কালবিলম্ব না করে ছুটল আবার সবাই। কুয়াশা আগে আগে ছুটছে। সিঁড়ির দিকে যাচ্ছে সে। বিনাবাক্যব্যয়ে সবাই তাকে অনুসরণ করছে।
সিঁড়িতে পা দিয়েই থমকে দাঁড়াল কুয়াশা। একজন লোকের আর্তচিৎকার ভেসে এল দূর থেকে। কণ্ঠস্বরটা পরিচিতসাঈদ চৌধুরীর।
আবার ছুটল কুয়াশা।
সিঁড়ি বেয়ে উপরের করিডরে উঠে তীরবেগে দৌড়তে শুরু করল কুয়াশা। কোথায় সে যাচ্ছে, কি উদ্দেশ্যে যাচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। ‘
কেউ কোন প্রশ্নও করছে না তাকে। কুয়াশা যা করে ভেবেচিন্তেই করে। সকলের অগাধ আস্থা তার উপর। প্রশ্ন করার প্রয়োজন মনে করল না কেউ।
করিডর ধরে খানিকদূর গিয়ে দাঁড়াল কুয়াশা। পকেট থেকে আগেই চাবির গোছা বের করে রেখেছে সে। তালা খুলল দ্রুত। অন্ধকার কামরার ভিতর অদৃশ্য হয়ে গেল সে। এক মুহূর্ত পরই আলো জ্বলে উঠল কামরার ভিতর।
কুয়াশা কামরার মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াল। লোহার একটা ঢাকনি দেখা যাচ্ছে। সেটা নিঃশব্দে তুলে সরিয়ে রাখল সে এক পাশে। একটা গোল গর্ত দেখা গেল ঢাকনিটা সরিয়ে ফেলার ফলে। কথা না বলে সেই গর্তের ভিতর ঢুকে গেল।
কুয়াশা। | কেউ কোন কথা বলল না। কুয়াশার মত শহীদও লাফ দিল গর্তের ভিতর। তারপর একে একে সবাই।
কাংকারিয়া এবং তার সহকারীরা যে কামরায় ছিল সেই কামরায় ঝুপ ঝুপ করে নামল ওরা সবাই।
বিপদ টের পেয়ে কাংকারিয়া কামরার এক প্রান্তে ছুটে গিয়ে একটা ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে পালাবার জন্য তৈরি হয়ে গেল। এক সেকেণ্ড পরই কামরার ভিতর
৪৬
ভলিউম ১৮
|
. | .
.
•
•••
প্রবেশ করল শফিকুল কবীর এবং সাঈদ চৌধুরী। সাঈদ চৌধুরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে শফিকুল কবীর। ওদের পিছু পিছু ভিতরে ঢুকল আরও দুজন। সাঈদা শরমিনকে কাঁধে করে তুলে নিয়ে এসেছে একজন লোক।
: সাঈদ চৌধুরী প্রতিশোধ নেবার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। কুয়াশা তাঁকে হোটেল থেকে বেরুতে নিষেধ করলেও মনে মনে তিনি ঠিক করে ফেলেছিলেন নিজের কর্তব্য।
সাঈদা শরমিনকে সঙ্গে নিয়ে কুয়াশাকে ফলো করে কাংকারিয়ার এই আস্তানায় পৌঁছান তিনি। কিন্তু ধরা পড়ে যান শফিকুল কবীর এবং কাংকারিয়ার
একজন লোকের হাতে।
সাঈদ চৌধুরী তখনও ধস্তাধস্তি করছিলেন।
ঠিক সেই সময় সিলিংয়ের গর্তের ভিতর থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামল কুয়াশা। ব্যস আপ?’ * তড়াক করে লাফ দিল সান্তারাম উলকা। কাংকারিয়াও চোখের পলকে গিয়ে দাঁড়াল সাঈদ চৌধুরীর পিছনে।
হাঃ হাঃ করে হেসে উঠল সান্তারাম উলকা। সাঈদা শরমিনের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সে। রিভলবারটা ধরেছে সাঈদা শারমিনের মাথার পিছনে।
অট্টহাসি থামিয়ে গর্জে উঠল সান্তারাম উলকা, খবরদার! কোনরকম চালাকি করো না! ফেলে দাও সবাই হাতের অস্ত্র! তা না হলে গুলি করে মেরে ফেলব। একে!’
কামরার ভিতর একে একে শহীদ, কামাল, রাজকুমারী, ডি. কস্টা এবং রাসেল, নেমে পড়েছে ইতিমধ্যে। সান্তারামের কথা শুনে পাথরের মত নিষ্প্রাণ, নিঃসাড় দাঁড়িয়ে রইল ওরা সবাই।
‘গুলি করছি আমি! দাঁতে দাঁত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে ঘোষণা করল সান্তারাম উলকা।
কথা বলে উঠল শান্ত গলায় কুয়াশা, সারেণ্ডার করছি আমরা। কথাটা বলে হাতের রিভলবার ফেলে দিল সে মেঝেতে। কুয়াশার দেখাদেখি আর সকলেও যে যার অস্ত্র ফেলে দিল।’
সগর্বে হাসল সান্তারাম উলকা। রিভলবারের নল ঘুরিয়ে নিল সে। লক্ষ্য স্থির করুল কুয়াশার মাথার দিকে।
| সান্তারাম উলকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। কুয়াশাকে হত্যা করার এই সুবর্ণ সুযোগ আর কখনও আসবে না। সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায় না সে।
শহীদ লক্ষ করছিল কুয়াশাকে। নিপলক চেয়ে আছে সে সান্তারামের দিকে। এতটুকু নড়ছে না তার দেহ। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে যে-কোন মুহূর্তে বিদ্যুৎবেগে লাফ দেবার জন্য তৈরি হয়ে আছে।
সবাই তাকিয়ে আছে সান্তারাম উলকার দিকে। এই বুঝি গুলি করল সে। দাঁড়াও!’ কাংকারিয়া রিভলবার হাতে নিয়ে এগিয়ে গেল কামরার এক প্রান্তে। ম্যান
কুয়াশা ৫২
৪৭
হোলের সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে। বলল, “এবার করো গুলি।
গুলির শব্দ হলো পরমুহূর্তেই। কিন্তু সান্তারাম নয়, গুলি করেছেন সাঈদ চৌধুরী।
সাঈদ্র চৌধুরীর পকেটে তখনও ছিল অতিরিক্ত রিভলবারটা । সেটা বের করে | গুলি করেছেন তিনি।
সাঈদ চৌধুরী গুলি করেছেন শফিকুল কবীরকে লক্ষ্য করে। কিন্তু লক্ষভ্রষ্ট হয়েছে। শফিকুল কবীরের লাগেনি গুলি। তার কোটের বুক পকেট ছিঁড়ে নিয়ে ছুটে গেল বুলেটটা।
শফিকুল কবীরের গায়ে না লাগলেও সান্তারাম উলকার বুকে গিয়ে লেগেছে বুলেটটা। তার শার্টে একটা ফুটো তৈরি হলো। চোখের পলকে দেখা গেল সেই ফুটো দিয়ে সশব্দে কলের পানির মত তাজা লাল রক্ত বেরিয়ে আসছে।
সশব্দে পড়ে গেল দেহটা মেঝেতে।
প্রায় একই সময় কয়েকটা ঘটনা ঘটে গেল আরও। চারদিক থেকে ভেসে এল রিভলবারের শব্দ। কাংকারিয়া সুইচ বোর্ডের একটা সুইচে আঙুল ঠেকাতেই
অন্ধকার হয়ে গেল কামরাটা।
অন্ধকার রূমের ভিতর ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেল।
শহীদ টর্চ জ্বালল। শত্রুদেরকে চেনা গেল টর্চের আলোয়। কয়েকজন অনুচর ভিতরে ঢুকে পড়েছিল, তারা পালাবার পথ খুঁজছে।
কুয়াশা একাই একশো। একাই সে বিদ্যুৎবেগে ঘুরে বেড়াতে লাগল কামরার চারদিকে। সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই ঘুসি মেরে অজ্ঞান করে ফেলছে।
এমন সময় কাংকারিয়া আরও একটা সুইচে হাত দিল। দ্রুত কালো ধোয়ায় ভরে গেল কামরা। আধহাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছে না।
হঠাৎ চিৎকার করে উঠল রাজকুমারী, কেমিক্যাল কম্পাউণ্ড।
সত্যিই তাই। অকস্মাৎ কামরার সর্বত্র উড়ে বেড়াতে দেখা গেল লাল নীল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। ‘
শহীদ অনুভব করল, দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার। শুধু শহীদ নয়, সবাই হঠাৎ বাতাসের তীব্র অভাব বোধ করল।
আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে উঠল কামাল, রাসেল, ডি. কস্টা, রাজকুমারী। ধীরে ধীরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে ওরা।
কুয়াশা!’ নিস্তেজ গলায় ডাকল শহীদ। কুয়াশার সাড়া পাওয়া গেল না।
কয়েক সেকেন্ড পর শহীদ হঠাৎ অনুভব করল শ্বাসকষ্ট দূর হয়ে যাচ্ছে, বাতাসের অভাব নেই যেন আর সুস্থ হয়ে উঠছে সে আবার। ‘
শহীদ একা নয়, সবাই সুস্থ হয়ে উঠতে লাগল দ্রুত।
কালো ধোয়ারাশি বেরিয়ে যাচ্ছে কামরা থেকে। দেখা গেল দরজাগুলো খোলা হয়েছে কখন যেন। হঠাৎ জ্বলে উঠল কামরার আলো।
কুয়াশার শান্ত কণ্ঠস্বর শোনা গেল, দুঃখিত। এর চেয়ে তাড়াতাড়ি কাজ করা
ভলিউম ১৮
১৮
সম্ভব হলো না।’
রাজকুমারী সবিস্ময়ে বলে উঠল, বালাম কিভাবে? মৃত্যু-রশ্মি ব্যবহার করেছিল শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে।
সবাই দেখল কামরার ভিতর কাংকারিয়ার অনুচরদের জ্ঞানহীন দেহগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
কাংকারিয়া পালিয়েছে? কামাল চিৎকার করে জানতে চাইল। কুয়াশা বলল, না।’ | সবাই অবাক হয়ে তাকাল কুয়াশার দিকে। কামরার কোথাও কাংকারিয়া বা শফিকুল কবীরকে দেখা যাচ্ছে না। অথচ কুয়াশা বলছে পালায়নি…!
কুয়াশা বলল, ব্যস্ত হয়ো না। শত্রুরা পালাতে পারেনি। আমাদের জন্য পাতা ফাঁদে তারা নিজেরাই পড়ে মরেছে।’
শহীদ প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে জানতে চাইল, কুয়াশা, মৃত্যু-রশ্মি বা কেমিক্যাল কম্পাউণ্ডের রহস্যটা কি তা আমি বোধহয় অনুমান করতে পেরেছি। আমার ধারণার কথাটা বলি ভুল হলে শুধরে দিয়ো।’
| মৃদু হাসল কুয়াশা। সপ্রশংস দৃষ্টিতে শহীদের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি বুদ্ধিমান। প্রথম থেকেই রহস্যটা সম্পর্কে তুমি মোটামুটি একটা ধারণা করতে পেরেছ, তাই না?
শহীদ বলল, হ্যাঁ। সাঈদ চৌধুরী একজন রসায়নবিদ। আমার ধারণা তিনি কয়েক ধরনের কেমিক্যাল সংযোগে এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করেছেন যা যুগান্তকারী হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
কিন্তু জিনিসটা কি?’ জানতে চাইল কামাল।
সংক্ষেপে উত্তর দিল শহীদ, আমার ধারণা, জিনিসটা অক্সিজেনকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। সাঈদা চৌধুরীর আবিষ্কারের নামকরণ করতে পারি আমরা–অ্যান অক্সিজেন ডেস্ট্রয়ার! অক্সিজেনকে গায়েব করে দেবার জন্য একটা কেমিক্যাল ফর্মুলা আবিষ্কার করেছেন তিনি। তুমি কি বলো, কুয়াশা?’ | কুয়াশা হাসল। বলল, তুমি ঠিকই অনুমান করেছ।
শহীদ বলল, কুয়াশাও ব্যাপারটা প্রথম থেকেই অনুমান করেছিল। বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি এই অক্সিজেন বিধ্বংসী অস্ত্রের উপযুক্ত ব্যবস্থা করে সে। এই আবিষ্কারের বদৌলতেই আমরা এখনও বেঁচে আছি, তাই না, কুয়াশা?’
কুয়াশা বলল, হ্যাঁ। প্রথম থেকেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম এমন একটা কেমিক্যাল শত্রুরা ব্যবহার করছে যা সাময়িকভাবে বাতাসের অক্সিজেনকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর প্রাকৃতিক শত্রু আছে। মি, সাঈদ চৌধুরী অক্সিজেনের শত্রুকে আবিষ্কার করেছেন।’
শহীদ আবার বলতে শুরু করল, যুগান্তকারী আবিষ্কার এই কেমিক্যাল বোমার ভিতর ভরে উপর থেকে ফেলা হয়েছিল, যার ফলে বাংলাদেশী জোয়ানরা নিহত হয়। শফিকুল কবীর এই মৃত্যু-রশ্মি ব্যবহার করে কুয়াশার বিরুদ্ধে। কিন্তু কুয়াশা
৪-কুয়াশা: ৫২
| ৪৯
বেঁচে যায়। তার বাঁচার কারণ সে দীর্ঘক্ষণ দম বন্ধ করে থাকতে পারে।
কামাল প্রশ্ন করল, কিন্তু শফিকুল কবীর নিজে কেন আক্রান্ত হয়নি?
শহীদ বলল, তার কারণ, শফিকুল কবীরের মুখে ছিল একটা মোটা পাইপ। পাইপটা ধূমপানের জন্য ব্যবহার করত না সে। পাইপের ভিতর ছিল পিওর
অক্সিজেন। বুঝতে পেরেছিস কেন সে আক্রান্ত হয়নি?
| ডি. কস্টা হঠাৎ গর্জে উঠল, বাট, এনিমিরা কোঠায়? হামি টাহাদেরকে কিছু প্রশ্ন করিটে চাই।
কুয়াশা বুলল, প্রশ্নের উত্তর দেবার ক্ষমতা নেই তাদের। কথাটা বলে উন্মুক্ত ম্যানহোলের দিকে এগিয়ে গেল সে। | সবাই তাকে অনুসরণ করল।
নিচের দিকে একটা সিঁড়ি নেমে গেছে। টর্চের আলো ফেলতে দেখা গেল দেওজী কাংকারিয়া এবং শফিকুল কবীরের প্রাণহীন দেহ পড়ে রয়েছে সিঁড়ির ধাপের উপর।
| ‘শেষবার অক্সিজেন ডেস্ট্রয়ার নিক্ষেপ করে শফিকুল কবীর, কুয়াশা বলে চলে, সে জানত, কাংকারিয়ার কাজ ফুরালে প্রথম সুযোগেই তাকে হত্যা করবে। তাই আমাদেরকে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে কাংকারিয়াকেও হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কাংকারিয়ার সঙ্গে ম্যানহোলে নামে সে। সিঁড়ির দেয়ালে সুইচ বোর্ডটা দেখতে পাচ্ছ? সুইচটা চেপে ধরলেই মৃত্যু-রশ্মি বিভিন্ন জায়গা থেকে বেরোতে শুরু করে। কাংকারিয়াকে টের পেতে না দিয়ে সুইচটা চেপে ধরে সে। মৃত্য-রশ্মি এই কামরায় এবং সিঁড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। শফিকুল কবীর ভেবেছিল এবারও সে তার পাইপের অক্সিজেনের সাহায্যে বেঁচে যাবে। কিন্তু ভাগ্য তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সাঈদ চৌধুরীর গুলি তার গায়ে না লাগলেও তার কোটের পকেটে লেগেছিল লক্ষ করেছিলে তোমরা নিশ্চয়ই? বুলেটটা পকেট স্পর্শ করে ছুটে যাবার সময় পাইপের গায়ে ফুটো করে দেয়। ওই পকেটেই ছিল পাইপটা। ফলে পিওর
অক্সিজেনের সরবরাহ পায়নি সে।’
| ডি, কস্টা মান কণ্ঠে মন্তব্য করল, ব্যাডলাক! পাইপের মদ্যে হোল ঠাকিলে মানুষ মারা যায় হামার লাইফে এমোন কঠা এই ফাস্ট টাইম নিলাম।
| সবাই হেসে উঠল তার কথা বলার ভঙ্গি দেখে।
শহীদ জানতে চাইল, খুলনার পুলিসগুলো মরল কিভাবে, কুয়াশা? তুমি ওদেরকে অক্সিজেন ক্যাপসুল খেতে বলনি?’
বলিনি যে তা নয়। বলেছিলাম যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্যাপসুল আনিয়ে নিতে। আনাতে দেরি হয়ে গেলে মাঠের কাছে যাবার দরকার নেই, জানিয়েছিলাম আমি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কেউ আমার কথায় গুরুত্ব দেয়নি। সেজন্যেই মরতে হলো অতগুলো নিরীহ মানুষকে।
Leave a Reply