৫০. প্রফেসর ওয়াই ৭: শত্রুর কবলে [ওসিআর ভার্সন – প্রুফ সংশোধন করা হয়নি]
কুয়াশা ৫০
| প্রথম প্রকাশ: মার্চ, ১৯৭৬
এক গহীন গভীর আফ্রিকার অরণ্য।
‘ সেই দুর্গম অরণ্যের ভিতর প্রকাণ্ড রাজপ্রাসাদের মত মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রহস্যপুরী। এই রহস্যপুরীর কথা যুগ যুগ ধরে শুনে এসেছে সভ্য জগতের মানুষ, চোখে দেখেনি কেউ। যদিও বা কেউ দেখে থাকে, দেখাটুকুই সার, রহস্যপুরী দেখে সশরীরে সভ্য দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারেনি কেউ।
| বাঙালী কিশোর আবিদই ঘটনাচক্রে এই রহস্যপূরী দেখে সর্বপ্রথম। সে আজ এক যুগেরও বেশি দিনের কথা। আফ্রিকার জঙ্গলে দীর্ঘদিন কাটিয়েছে সে এবং লিজা। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে, আবিদের মাধ্যমেই রহস্যপুরী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে পৃথিবীর মানুষ। জানতে পারে প্রফেসর ওয়াই, জানতে পারে কুয়াশা, জানতে পারে শহীদ, কামাল, মি. সিম্পসন, মহুয়া। * রহস্যপুরীতে শত শত বছর ধরে জমে উঠেছে সোনা, মণি-মাণিক্যের সুউচ্চ পাহাড়। রহস্যপুরী হলো দেবতাদের বাসস্থান। জংলীদের এই দেবতারা উপঢৌকন চান। জংলীরা দেবতাদের তুষ্ট করার জন্য শত শত বছর ধরে অলঘনীয় নিয়ম অনুযায়ী সোনা, মণি-মাণিক্য রেখে আসে রহস্যপুরীতে। দেবতারা আরও একটা জিনিস চান। সেটা হলো নরবলি। জংলীরা তাও দেয়। জংলীরা বন্দী করে আনে সভ্য দুনিয়ার মানুষ।
দেবতার পাদমূলে তারা বলি দেয় বন্দী মানুষদেরকে। দেবতারা তুষ্ট হন।
কিন্তু প্রফেসর ওয়াই দেবতাদেরকে তুষ্ট করতে নয়, রুষ্ট করার সিদ্ধান্ত নিল। রহস্যপুরীর ধনভাণ্ডার লুট করার পরিকল্পনা করল সে। তার সেই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে বাধা দেবার জন্য উঠে পড়ে লাগল মহাশক্তিশালী কুয়াশা। কুয়াশা একা নয়, প্রফেসরের উদ্দেশ্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াল শহীদ, কামাল, মি. সিম্পসন। নানা ঘটনা ঘটতে লাগল। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ চলল। অবশেষে
ওরা সবাই পৌঁছুল রহস্যপুরীতে।
রহস্যপুরীর ধনভাণ্ডারের ভিতর ওরা বন্দী হলো। প্রফেসর ওয়াই, কুয়াশা, শহীদ, কামাল, মি. সিম্পসন, টুইন আর্থ আনতারার রাজকুমারী ওমেনা, ডি. কস্টা, মহুয়া- সবাই। | রহস্যপুরীর ধনভাণ্ডারটি গোলাকার প্রকাণ্ড একটি কারাকক্ষের মত দেখতে।
ভলিউম ১৭
3o
চারদিকের পাথরের দেয়াল কঠিন ইস্পাতের পুরু পাত দিয়ে সম্পূর্ণ মোড়া। মাথার উপর কোন ছাদ বা সিলিং না থাকলেও প্রকাণ্ড একটা লোহার ঢাকনি ঢাকা দিয়ে রেখেছে জায়গাটাকে। বিরাটাকার একটা ড্রামের সাথে তুলনা করা যায় জায়গাটাকে। ওরা এই ড্রামের ভিতর আটকা পড়ে গেছে। | দরজাগুলো বিদ্যুৎশক্তির সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত। রহস্যপুরীর সর্বত্র, এমন কি এই ধনভাণ্ডারের ভিতরও লুকানো আছে টিভি ক্যামেরা। রহস্যপুরীর মহাশক্তিশালী কর্তৃপক্ষ সর্বক্ষণ সেই ক্যামেরার সাহায্যে টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পাচ্ছে ধনভাণ্ডারের বন্দী প্রত্যেককে। তারা লক্ষ্য রাখছে এদের গতিবিধি ভাবভঙ্গির উপর।
বন্দী হবার পর আমূল পরিবর্তন দেখা দিয়েছে প্রফেসর ওয়াইয়ের মানসিকতার। তার কথাবার্তা শুনে অন্তত তাই মনে হচ্ছে। কুয়াশাকে মহাবিজ্ঞানী বলে স্বীকার করলেও তাকে প্রাণের দুশমন বলে মনে করে প্রফেসর ওয়াই। সেই কুয়াশার প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সে। তার বক্তব্য, আমরা পরস্পরের শত্রু হলেও পরস্পরকে আমরা শ্রদ্ধাও করি, ভালও বাসি। তাছাড়া, আমরা সবাই বাংলাদেশেরই নাগরিক। বিদেশ বিভুইয়ে এসে বিজাতীয় একদল শত্রুর ফাঁদে যখন পা দিয়েছি তখন পরস্পরকে ক্ষমা করে দিয়ে আমরা বন্ধুত্বে উত্তীর্ণ হতে পারি এবং সবাই একজোট হয়ে এই মহা সংকট থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে চেষ্টা করতে পারি।
শহীদ প্রফেসরের কথা শুনে ঠাট্টা করে তাকে ভীতু বলে সম্বোধন করলে পফেসর উন্মাদের মত অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। একনাগাড়ে তিন মিনিট বিকট মরে হাসার পর থামল প্রফেসর।
শহীদের দিকে তাকিয়ে বজ্রকণ্ঠে সে বলতে শুরু করল নিজের কথা। কর্কশ, ঘরঘরে তার কণ্ঠস্বর। এক একটা শব্দ যেন এক একটা বোমা। | ভয়? ভয়ে আমি আধমরা হয়ে গেছি? ইউ গডড্যাম ফুল!’
থরথর করে কাঁপছে প্রফেসর। খেপে গেছে সে শহীদের উপর। জংলীদের পোশাক পরা প্রকাণ্ড দেহটা নিয়ে পায়চারি শুরু করল সে মেঝেতে। পরনে রাজা অমেনটোট টেটার ছদ্মবেশ। মুখময় লাল, হলুদ, কালো রঙের লম্বা লম্বা নকশা। কপালে চন্দন। মাথায় মুকুট। মুকুটের চার ধারে ইগল পাখির পালক আটকানো। গলায় ঝুলছে মানুষের হাতের আঙুলের হাড় দিয়ে তৈরি মালী। মালার মাঝখানে শোভা পাচ্ছে একটি নরকরোটি। কোমরে জড়ানো ডোরা কাটা চিতাবাঘর ছাল । উর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত হলেও বুকের কাছে সাপের চামড়ার বেল্ট বাধা। সেই বেল্টের সাথে ঝুলছে স্বর্ণের এবং মুক্তার মেডেলসদৃশ অলঙ্কারাদি। প্রফেসরের বিখ্যাত ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি দেখা যাচ্ছে না। সাধের দাড়িটা তাকে কাটতে হয়েছিল জংলীদের খাজা অমেনটো টেটার ছদ্মবেশগ্রহণের প্রয়োজনে। | পায়চারি থামিয়ে শহীদের মুখোমুখি দাঁড়াল প্রফেসর ওয়াই। সশব্দে নিঃশ্বাস ফেলল সে। চমকে উঠল শহীদ। কী সাংঘাতিক! প্রফেসরের নিঃশ্বাস যেন আগুনের মতই গরম। কুয়াশা ৫০
দাঁতে দাঁত চেপে প্রফেসর বলতে শুরু করল, আমার মহাশত্রুরাও যা বলতে পারেনি তুমি আজ তাই বললে আমাকে! পৃথিবীতে একমাত্র আমি, প্রফেসর ওয়াই,
এই বুকে হাত দিয়ে বলছি, কাউকে ভয় করি না! না, ভুল হলো। ভয় আমি মাত্র– একজনকে করি। সে কে জানো? মি. শহীদ, শুনবে তার নাম?
| ভাঁটার মত বড়বড় চোখে চেয়ে আছে প্রফেসর। খানিক আগে চোখের মণি দুটো একটু যেন লালচে বলে মনে হয়েছিল তার, কিন্তু সবিস্ময়ে শহীদ দেখল সে দুটো এখন যেন নীলচে দেখাচ্ছে।
তার নাম প্রফেসর ওয়াই। তাকেই আমি সত্যিকার অর্থে একটু যা ভয় করি। কেন, কেন তাকে ভয় করি? কারণ, আমি জানি, তারই একমাত্র ক্ষমতা আছে খেপে গেলে যে-কোন ধ্বংসকাণ্ড ঘটাবার। আমি, প্রফেসর ওয়াই, পারি না এমন কাজ নেই। তোমরা বুদ্ধ, তাই আজও আমাকে চিনতে পারোনি। আমাকে তোমরা চ্যালেঞ্জ করো? বেশ, মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা সময় দাও আমাকে। আমি কথা দিচ্ছি, পৃথিবী নামক তোমাদের এই গ্রহকে আমি আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে মহাশূন্যে মিশিয়ে দেব ধুলিকণায় রূপান্তরিত করে।
কুয়াশাকে গম্ভীর দেখাচ্ছে। মেঝের উপর বসে সে তার লেসারগানটা মেরামত করার চেষ্টা করছিল। মুখ তুলে তাকিয়ে প্রফেসরের উদ্দেশ্যে কথা বলে উঠল সে,
শান্ত হও, ওয়াই। সত্যিসত্যি খেপে গেছ দেখছি।
‘মি. কুয়াশা। বিশ্বাস করুন, একমাত্র আপনাকেই শুধু আমি আমার সমকক্ষ বলে মনে করি। আপনি আমার ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন। এরা বোকা, এরা আমাকে চিনতে পারে না।’
| কুয়াশা বলল, কিন্তু একটা কথা, ওয়াই। তোমার ক্ষমতা আছে, স্বীকার করি। কিন্তু সে ক্ষমতাও আর সকলের সব ক্ষমতার মত আপেক্ষিক। তোমার ক্ষমতা ব্যবহার করার সুযোগের ওপর সব কিছু নির্ভর করে। কেউ যদি তোমাকে বাধা না দেয় অর্থাৎ বিনা বাধায় যদি তুমি তোমার ক্ষমতা ব্যবহার করার সুযোগ পাও শুধুমাত্র তখনই যা খুশি তাই করতে পারো, ঘটাতে পারো যে-কোন। ধ্বংসকাণ্ড। কিন্তু কেউ যদি তোমাকে বাধা দেয়? তুমি জানো, তোমার কাজে বাধা দেবার মত মানুষ কেউ একজন অাছে। অবশ্য তুমি যদি ভাল কাজ করো । তাহলে কেউ তোমাকে বাধা দেবে না।’
হ্যাঁ, জানি। বাধা একজন অন্তত দেবে। আমাকে বাধা দেবার ক্ষমতা তার আছে, স্বীকার করি। তিনি আর কেউ নন–আপনি স্বয়ং। কিন্তু, মি. কুয়াশা, বিচলিত হবেন না। কারণ, সত্যিসত্যি এই পৃথিবীটাকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার পরিকল্পনা এখনও আমি করিনি। পৃথিবীটাকে আমি নতুন ভাবে গড়ে তুলতে চাই। ইতিহাসের পাঠকমাত্রই জানে, এই পৃথিবীতে সঠিক পথে কোনদিন শান্তি আসেনি। পণ্ডিত ব্যক্তিরা বলেন, শান্তি আগামীতেও আসবে না। এর কারণ কি? পৃথিবীর মাটিতে কি চিরকাল ধরে চলবে এই দলাদলি, এই হিংস্র স্বার্থপরতা? হিংসা বিদ্বেষের বিষবাষ্প থেকে পৃথিবীর বাসিন্দারা কি কোনদিন মুক্ত হতে পারবে না? এই প্রশ্নের উত্তর কি তা আমাদের মোটামুটি জানা আছে। মানুষ জন্মসূত্রেই কিছু
ভলিউম ১৭
৪২
দুর্বলতার শিকার। সে পরশ্রীকাতর, সে স্বার্থপর, সে ভাবাবেগজড়িত, সে অন্ধ এবং নীতিহীন। সভ্যতাও তাকে পরিপূর্ণভাবে মানুষ করতে পারেনি। সুযোগ পেলেই সে অসৎ হয়। শিক্ষা তার ভিতরকার পশুটাকে বন্দী করে রাখতে সমর্থ হলেও তাকে পোষ মানাতে সক্ষম হয়নি। সুযোগ পেলেই সেই পশুটা বীভৎস চেহারা নিয়ে
বেরিয়ে পড়ে বাইরে। শিক্ষার সুযোগ আর পাওয়া যায় না। এই নিয়েই চলছে। মানুষ। তাই মানুষের সমাজে এত অশান্তি, এত দাঙ্গাহাঙ্গামা, এত যুদ্ধ-বিগ্রহ। এর প্রতিকার আমি করতে চাই। আমি চাই স্থায়ী এবং শর্তহীন শান্তি নেমে আসুক এই পৃথিবীতে। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? সম্ভব বিজ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে। বিজ্ঞানের দ্বারা অসম্ভবকে সম্ভব করা অসাধ্য নয়। মানুষকে রূপান্তরিত করতে হবে বিজ্ঞানের মাধ্যমে। এই দায়িত্ব যার-তার দ্বারা পালন করা সম্ভব নয়। আমি একজন বিজ্ঞানী এবং আমি মনে করি গোটা পৃথিবীতে আমার মত বিজ্ঞানী আর একজনও নেই, আপনি ছাড়া। আমি পরীক্ষা চালাচ্ছি মানুষকে রূপান্তরিত করার সম্ভাব্যতা নিয়ে। মানুষের শরীরের সবচেয়ে গোলমেলে এবং জটিল যন্ত্র হচ্ছে তার মস্তিষ্কটি। ব্রেন হচ্ছে সবকিছুর মূল। এই ব্রেন, আগেই বলেছি, খুব জটিল একটা যন্ত্র। আমি এই যন্ত্র নিয়েই গবেষণা করছি। সাধারণ একটা ধারণা থেকে আমি আমার কাজ শুরু করেছি। ধারণাটা হলো, ব্রেনটাকে নানা কাজে ব্যবহার না করে মাত্র কয়েকটা কাজে ব্যবহার করা হলে কাজগুলো হবে অপেক্ষাকৃত নিখুঁত এবং নিপুণ। ধরা যাক এমন একটা ব্রেনের কথা, যে ব্রেন দুশ্চিন্তা করতে জানে না। যতবড় বিপদই ঘনিয়ে আসুক, সেই ব্রেনের অধিকারী দুশ্চিন্তাহীন থাকতে পারে। সাংঘাতিক একটা ব্যাপার হবে না কি সেটা? আমি এই ধরনের ব্রেন আবিষ্কারও করেছি। এক্সপেরিমেন্টালি এই কৃত্রিম ব্রেন মানুষের মধ্যে যুক্ত করে দিলে কেমন হবে? হয়তো দারুণ ভাল ফল পাওয়া যাবে। তবে অনেক অসুবিধেও দেখা দিতে পারে। সে যাই হোক, সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধানও করা যাবে। মোটকথা, এই গবেষণা ব্যর্থ হলেও আমি ক্ষান্ত হব না। একটার পর একটা উপায় উদ্ভাবন করে পৃথিবীর লোককে নিঃস্বার্থ, কর্মনিষ্ঠ, হিংসা-বিদ্বেষ শূন্য, আদর্শ এবং ভোগ বিলাসহীন নিখুঁত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই আমি; যাতে পৃথিবীটা সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। যাতে শান্তি স্থায়ী এবং সর্বাঙ্গীণ হয়ে ওঠে। সে কারণেই পৃথিবীকে ধ্বংস করার কথা এখনও ভাবিনি আমি। মি. কুয়াশা, ভয়ের কিছু নেই। তবে, হ্যাঁ, শেন পর্যন্ত আমি যদি ব্যর্থ হই, যদি প্রমাণিত হয় যে এই পৃথিবীতে যারা বাস করে ‘তারা কোনদিনই সত্যিকার অর্থে ত্রুটিহীন পূর্ণাঙ্গ আদর্শ মানুষে রূপান্তরিত হতে পারবে না–সেদিন আমি নির্দ্বিধায় ধ্বংস করে ফেলব নিজেকে, তার আগে অবশ্যই গুড়ো করে উড়িয়ে দেব জঞ্জালসর্বস্ব এই প্রাচীন দুনিয়াটাকে।’
দীর্ঘ ভাষণ দেয়া শেষ করে আবার পায়চারি শুরু করল প্রফেসর ওয়াই। স্বাভাবিক উত্তেজিত দেখাচ্ছে তাকে।
মুচকি মুচকি হাসছে কুয়াশা। শহীদ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কৌতুক খেলা করছে তার দৃষ্টিতে। প্রফেসর ওয়াইয়ের দশবারোজন অনুচর পাথরের মূর্তির মত একধারে লাইনবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা সবাই সতর্ক, প্রস্তুত। প্রফেসর
কুয়াশা ৫০
৪৩
ওয়াই কোন নির্দেশ দেয়া মাত্র তা পালনের জন্য একপায়ে খাড়া হয়ে আছে।
কামাল ফিসফিস করে কি যেন বলছে মহুয়ার কানের কাছে মুখ নামিয়ে। মি. সিম্পসন গভীর ভাবে চেয়ে আছেন স্তূপীকৃত স্বর্ণের দিকে।
বিড় বিড় করে কিছু বলছে প্রফেসর ওয়াই আপনমনে। ডি. কস্টা কয়েক পা এগিয়ে গেল তার দিকে। গলাটা লম্বা করে দিয়ে খাড়া করে রাখল কান, প্রফেসরের অস্পষ্ট শব্দগুলো শুনতে চাইছে সে।
| কুয়াশার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ কথা বলে উঠল টুইন আর্থের রাজকন্যা রাজকুমারী ওমেনা, কুয়াশা!
ওমেনার কণ্ঠে উদ্বেগ। কুয়াশা দ্রুত তাকাল তার দিকে।
কি ব্যাপার, ওমেনা? ওমেনাকে সিরিয়াস দেখাচ্ছে। হঠাৎ চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল সে।
চিন্তিত হয়ে উঠল কুয়াশা। চিন্তিত হয়ে উঠল শহীদও। কেননা ওরা জানে ওমেনা পৃথিবীর মানুষের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত মস্তিষ্কের অধিকারী। অস্বাভাবিক ক্ষমতা আছে ওমেনার ব্রেনের। ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা সে আগে থেকে কিভাবে যেন টের পায়। হুবহু ঘটনাটা বলে দিতে না পারলেও ঘটনার প্রকৃতিটা কেমন হবে তা সে চেষ্টা করলে বলে দিতে পারে।
কয়েক মুহূর্ত পর চোখ মেলল ওমেনা। বলল, ‘মনটা কেন যেন খুঁত খুঁত করছিল। গভীরভাবে চিন্তা করলাম তাই। আমার মনে হচ্ছে, একটা বিপদ এগিয়ে আসছে দ্রুত আমাদের দিকে।
কি ধরনের বিপদ?’
শত্রুতামূলকভাবে কেউ আমাদেরকে শাস্তি দেবার বা শাস্তি ভোগ করবার মত পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে। পরিষ্কার করে বলতে পারছি না আমি।’
. প্রফেসর ওয়াই পায়চারি থামিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওমেনার দিকে । হঠাৎ সে তার মুখোমুখি এসে দাঁড়াল: ‘রাজকুমারী, আমি একটা কথা বলতে চাই তোমাকে। অবশ্য তুমি যদি অনুমতি দাও।’
| ওমেনা সরে গেল প্রফেসরের কাছ থেকে। মৃদু অথচ দৃঢ় কণ্ঠে সে বলে উঠল, ‘মাফ করবেন। আপনাকে আমি পছন্দ করি না। সুতরাং অনুমতির প্রশ্নই ওঠে না।’
আর কেউ এই কথা বললে প্রফেসর ওয়াই খেপে গিয়ে তুলকালাম কাণ্ড শুরু করে দিতেন। কিন্তু ওমেনার কথা শুনে তাকে এতটুকু বিরূপ হতে দেখা গেল না। মুখের চেহারা একটু ম্লান হয়ে উঠল কেবল। এমন কি ওমেনার কথা শুনে সে কোন মন্তব্যও করল না। কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে উঠল।
শহীদ বলল, আসল সমস্যার প্রসঙ্গটা চাপা পড়ে গেছে। প্রফেসর ওয়াই, এই বন্দীদশা থেকে আমাদের মুক্তি পাবার ব্যাপারে•• |
‘ওহ-হে! প্রফেসর ব্যস্ত হয়ে উঠল। কুয়াশার দিকে তাকাল সে।
‘আমাদের সমস্যার প্রকৃতিটি আগে জানা দরকার। আমার কাছে অস্ত্র বলতে আছে রিভলভার আর অটোমেটিক কারবাইন। এসব এখানে কোন কাজে আসবে
। ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা ছিল ম্যাটাবরের কাছে। তার কপালে কি ঘটছে তা
৪৪
ভলিউম ১৭
আপনার বন্ধু মি. শহীদ হয়তো বলতে পারবেন।
শহীদ নয়, উত্তর দিল কামাল। বলল, ম্যাটাবরের কপালে যা ঘটেছে তার জন্য আমরা কেউ দায়ী নই। নেকড়েরা তাকে পছন্দ করে, তাই সাথে করে নিয়ে গেছে ডিনার খাবে বলে।
প্রফেসর গর্জে উঠল, শাট আপ! আমার ডানহাত সে। নেকড়ে কেন, সিংহও তাকে খেয়ে হজম করতে পারবে না।’
কুয়াশার দিকে তাকাল প্রফেসর ওয়াই, মোটকথা, ম্যাটার কোথায় এখন তা আমি জানি না । ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা তার কাছে ছিল, সেটার খবরও বলতে পারছি না। অস্ত্রপাতি আপনার কাছে কি কি আছে বলুন তো?
কুয়াশা বলল, আছে তো অনেক। তবে লেসারগানের মত কোনটাই তেমন কাজের নয়, এই পরিস্থিতিতে। লেসারুগানটা নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হবার কারণটা এখনও ঠিক বুঝতে পারছি না আমি। তবে দরজা বা ইস্পাতের দেয়াল কেটে পথ তৈরি করার জন্য আমি ছোটখাটো এক আধটা অস্ত্র দিতে পারি। কিন্তু তাতে কি লাভ হবে কিছু?
প্রফেসর বলল, ‘সব দিক ভাল করে ভেবে দেখে তবে কাজে হাত দিতে হবে আমাদের। সবচেয়ে আগে আমাদের মধ্যে একটা আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়ে যাওয়া উচিত। আমি একটা সভা করার কথা বলছি। সভা করতে হলে একজন সভাপতি দরকার। আজকের এই বিপদের হাত থেকে মুক্তি লাভের জন্য যে সভা একটু পরই শুরু হবে সেই সভার চেয়ারম্যান হিসেবে আমি মি. কুয়াশার নাম প্রস্তাব করছি।’
হামি, দি গ্রেট স্যানন ডি কস্টা, এই প্রষ্টাবের ঘোর বিরোটিটা করিটেছি! ‘হোয়াই।
খিক খিক করে খানিকক্ষণ হাসল ডি কস্টা। তারপর বিরক্তির সাথে বলল, এটো বুড়ছি আপনার আর সামান্য জিনিসটা ধরিটে পারিলেন না? মি. অ্যাবসেন্ট মাইডেন্ট প্রফেসর, হাপনি কি চেয়ারম্যানের অঠ অবগট নহেন?’ | প্রফেসর ধীরে ধীরে গরম হয়ে উঠছে। রক্তচক্ষু মেলে সে তাকিয়ে আছে ডি. কস্টার দিকে, জানি বৈকি। কি বলতে চান আপনি পরিষ্কার করে বলুন। | ডি, কস্টা প্রফেসর ওয়াইয়ের রক্তচক্ষুকে এতটুকু গ্রাহ্য করল না। বলে উঠল, না জানিয়া জানি বলাটা খুবই বড় টরনের আহম্মকি, বিলিভ মি। চেয়ারম্যানের জন্য একটি চেয়ার ডরকার হয়। কোঠায় সেই চেয়ার? চেয়ার ছাড়া হামার ফ্রেণ্ড মি. কুয়াশা চেয়ারম্যান হইটে পারেন না।
হেসে উঠল সবাই। হাসল না শুধু প্রফেসর ওয়াই। গর্জে উঠল সে। চেয়ার নেই বলে কি সভা হবে না?
হেবে, হোবে। অন্য কারও নামে প্রস্টাব করিলে হোবে। মি. কুয়াশার কঠা আলাডা। হি ইজ এ গ্রেট ম্যান। টাহাকে চেয়ারম্যান করিটে চাহিলে চেয়ার অফকোর্স ঠাকিবে।
কামাল বলে উঠল, কিন্তু চেয়ার ছাড়া চেয়ারম্যান হতে আর কেউই বা রাজি হবে কেন? কুয়াশা ৫০
ডি, কস্টা গম্ভীর হয়ে উঠল, ‘বিপডের সময় আমি প্রেসটিজ ট্যাগ করিটে-সম্মট আছি।’
“তারমানে?
চেয়ারের অভাবে কেউ চেয়ারম্যান হইটে রাজি হইবে না, বুঝিটে পারিটেছি। কিন্টু হামার ওইসব বালাই নাই। হামি বিপডটাকেই অগ্রাঢ়িকার ডিটে চাই। আপনারা সাপোর্ট ডিলে হামি চেয়ারম্যানের জন্য নিজের নাম প্রস্টাব করিটে পারি। ফ্র্যাঙ্কলি, আমি সেই প্রস্টাবই ডিটেছি।– হাসির বন্যা বয়ে গেল। কামাল বলে উঠল, “আমি ডিকস্টার প্রস্তাব সমর্থন করছি।’
| হাততালি দিয়ে উঠল ওমেনা।
গম্ভীর, কর্কশ কণ্ঠে প্রফেসর বলে উঠল, বেশ। তাহলে সভার কাজ শুরু করা যাক।
| ‘ওয়েট এ বিট!’ ডি. কস্টা কথাটা বলে সরু পাটখড়ির মত ডানহাতটা ভুলে প্রফেসর ওয়াইয়ের মূর্তিবৎ দণ্ডায়মান অনুচরদেরকে কাছে ডাকল, ‘শোেননা টোমরা। এডিকে অ্যাডভান্স করো।’
প্রফেসরের দশবারোজন অনুচর যন্ত্রের মত একযোগে তাকাল প্রফেসর ওয়াইয়ের দিকে।
গর্জে উঠল ডি. কস্টা। ওডিকে কি, হামার ডিকে টাকাও টোমরা। শুনটে পাওনি, সবাই আমাকে চেয়ারম্যানের পোস্টে বরণ করিয়া নিয়াছে? হামি যে অর্ডার । ডিবো টাহা অক্ষরে অক্ষরে পালন করিটে হইবে।’
অনুচরবৃন্দ তাকাল ডি. কস্টার দিকে।
‘টোমরা ওই গোল্ডের মাউন্টেন অর্থাৎ স্বর্ণের টুপগুলাকে লুণ্ডর করিয়া সাজাও। এমনভাবে সাজাইবে যাহাটে হামি উহার উপরে বসিটে পারি।’
কুয়াশার দিকে তাকাল ডি কস্টা। মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘স্বর্ণের সিংহাসন, হামার মটো একজন সভাপটির যোগ্য আসন, ইজ ইট নট?
প্রাণ খুলে হেসে উঠল কামাল।
প্রফেসর ওয়াইয়ের অনুচরেরা ডি. কস্টার নির্দেশে কাজে লেগে গেল। খানিক পর স্বর্ণের স্তূপের উপর বসল ডি. কস্টা।
সভার কাজ শুরু হলো। | প্রথমেই ভাষণ দিল ডি. কস্টা, লেডিস অ্যাণ্ড জেন্টলমেন, অ্যাটেনশান প্লীজ। হামি, হাপনাডের রেসপেক্টবল চেয়ারম্যান সকল বণ্ডির উজ্ঞেশ্যে ভাষণ ডিটেছি। হামাডের সামনে ভয়ংকর বিপউ ডেকা ডিয়াছে। এই ভয়ংকর বিপড হইটে পলাইটে হইলে উল-মট নিরবিশেষে হামাডেরকে এক হইটে হইবে। পাওয়ার হামাডের এনিমিডের টুলনায় বহুট বেশি, সুটরাং উইন হামাডের অবারিট। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ, সায়েনটিস্ট মি. কুয়াশা এবং টাহার মিস-গাইডেড প্রাক্টন শিষ্য অ্যাবসেন্ট মাইণ্ডেড প্রফেসর ওয়াই ছাড়াও হামাডের মডে রহিয়াছেন ফেমাস প্রাইভেট ডিটেকটিভ মি. স্যানন ডি. কস্টা, মি. শহীড, রহিয়াছেন প্রিসেস ওমেনা,
৪৬
ভলিউম ১৭
মিসেস মহুয়া এবং মি. কামাল। সরি, আমার জাটভাই, স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিস অফিসার মি. সিম্পসনের কঠা ভুলিয়া গিয়াছিলাম। টিনিও হামাডের মঢ্যে রহিয়াছেন। হামরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেট্রে এক একজন জিনিয়াস। সুটরাং এনিমিবাহিনী যটো বড় এবং ভয়ঙ্করই হোক, হামরা বিজয়ী হইবই।’ | দম নিয়ে সকলের দিকে একবার করে তাকিয়ে নিল ডি. কস্টা। খুশি হয়ে উঠল সে। সবাই বেশ মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছে। আবার শুরু করল সে:
‘এনিমিডের কবল হইটে নিজেডেরকে মুক্টো করাটা কোন সমস্যা নয়, টাহা আগেই হামি বলিয়াছি। সমস্যা আই মীন প্রবলেম, অন্যখানে। এই বণ্ডিখানায় হামরা বণ্ডি হইয়াছি তুইটা ডল। একটি ডলের নেটা প্রফেসর ওয়াই, অন্য ডলের নেটা মি. কুয়াশা । হামরা প্রফেসর ওয়াইয়ের কার্যকলাপ এবং নীটি সাপোর্ট করি না। টিনি আইন মানেন না, টিনি মানুষকে অকারণে মার্ডার করেন। যাহাই হউক, টারই রিকোয়েস্টে হামরা সব বিভেড ভুলিয়া এক হইয়াছি। এই একোটা যেন অটুট. ঠাকে, এই হামার অনুরোঢ়। প্রফেসর ওয়াইকে হামরা খুব ভাল করিয়াই চিনি। টিনি কঠা ডিয়া কঠা রাখেন না। টিনি সুযোগ পাইলে বেঈমানী করেন। টাই টাহাকে হামি বিশেষভাবে বলিটে চাই যে, ডয়া করিয়া বেঈমানী করিবেন না। ডয়া করিয়া হামাডেরকে না জানাইয়া কোন গোপন ষড়যন্ত্র ফাঁড়িবেন না। আমার ঐটিহাসিক ভাষণ শেষ করিটেছি। টার আগে শেষ একটা কঠা বুলিটে চাই। এই বণ্ডিকক্ষে লক্ষ লক্ষ ডলারের গোল্ড রহিয়াছে। এই গোল্ড ডুই ভাগে ভাগ হইবে। এখান হইটে মুকটো হইয়া ভাগাভাগি করিব । একভাগ পাইবেন মি, কুয়াশা। বাকী : এক ভাগ হামরা সকলে সমানভাগে বণ্ঠন করিয়া লইব। আশা করি ইহাটে কাহারো কোন আপট্টি নাই।’
এক পা সামনে এগিয়ে এল প্রফেসর ওয়াই।
‘আছে। আমি আপত্তি করছি। মি. কুয়াশা একা পাবেন অর্ধেক আর বাকী অর্ধেক আমরা সবাই ভাগ করে নেব–এ কেমন বিচার? মি. ডি. কস্টা, মাননীয় সভাপতি, আপনি আগেই বলেছেন এখানে আমরা দুটো দল আছি। একটি দলের নেতা মি. কুয়াশা, অপর দলটির নেতা আমি। স্বর্ণ দুই ভাগেই ভাগ হোক। কিন্তু একটি ভাগ আমরা, আর একটি ভাগ আপনারা নিন।
| ডি কস্টা প্রফেসর ওয়াইয়ের বক্তব্য শোনার পর বলল, প্রফেসর ওয়াই, আপনি একটা ইমপরট্যান্ট কঠা ভুলিয়া গিয়াছেন। হামি টাহা আপনাকে মনে ‘রাইয়া ডিটে চাই। মি. কুয়াশার ডল অঠাট হামরা ইচ্ছা করিলেই সব গোল্ড ওখল করিয়া নিটে পারি। ক্ষমতার জোর হামাডের বেশি, বুড্ডির জোরও হাপনাডের চেয়ে হামাডের বেশি। হাপনার ডলে ওনলি হাপনিই একমাটু বুড়িমান। বাকী । সবাই ব্রেনলেস মাঙ্কি অর ডাক্তি। কিন্টু হামাডের ডলে হামরা সবাই বুড়িমান। সুটরাং, ইচ্ছা করিলে ছলে-বলে কৌশলে এই গোন্ড হামরা নিজেডের দখলে শাখিটে পারি। কিন্টু টাহা আমরা চাহি না। হামরা বিবেকবান, হামাডের ডয়ামায়া আছে। ডয়া করিয়া টাই আপনাডেরকে স্বর্ণের ভাগ ডিটে চাহিটেছি। এ ব্যাপারে হাপনার উচিট হামাডের প্রটি কৃটজ্ঞটা প্রকাশ করা।
কুয়াশা ৫০
প্রফেসর ওয়াই অস্বাভাবিক গম্ভীর হয়ে উঠল। রক্তচক্ষু মেলে ঠায় চেয়ে রইল সে ডি, কস্টার দিকে। তারপর হুঙ্কার ছাড়ার মত একটা শব্দ করল সে: ই।’
| ডি. কস্টা বলতে শুরু করল, গোল্ড ভাগ বাটোয়ারার প্রবলেম সলভ হইয়া গেল। এখন গোল্ডগুলা চটের ব্যাগে ভরিয়া ভাল করিয়া বাধা হউক। এখান হইটে মুকটো হইয়া পালাইবার সময় যেন হাঙ্গামা পোহাইটে না হয়। এ ব্যাপারে হামি প্রফেসর ওয়াইয়ের শিষ্যডের সুযোগ ডিটে চাই। টাহারাই চটের ব্যাগে গোল্ড ভরিবার দায়িত্ব পালন করুক। সাবান, কেউ যেন দু’এক টুকরা পকেটে ভরিবার চেষ্টা করিবেন না। চুরি করিলে গড, ভগবান এবং খোদার কাছে ঠেকা ঠাকিবেন। লেডিস অ্যাণ্ড জেন্টলমেন, হামার বক্টব্য শেষ।
| ডি. কস্টা থামতে কথা বলে উঠল কামাল।
এবার এই বন্দীখানা থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে। আমার একটা প্রস্তাব আছে।
সভাপতি বলে উঠল, হাপনার প্রস্টাব পেশ করুন। ..
কামাল বলল, আমাদের সকলের কাছে যা যা অস্ত্র আছে তা একত্রিত করা। হোক। অস্ত্রের সংখ্যা এবং গুণাগুণ সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা পেতে চাই আমরা। মনে করতে হবে, শুক্র মহাশক্তিশালী। এবং শত্রুরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের হত্যা করবে। সমস্যাটা জীবন-মরণের। এই বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করতে হলে বুদ্ধির চেয়ে বেশি দরকার অস্ত্র। অস্ত্র যদি কাজের হয় তাহলে আমরা পরবর্তী কর্তব্য সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসতে পারব।’
কুয়াশা বলে উঠল, ‘আমি কামালের প্রস্তাব সমর্থন করি।’ প্রফেসর ওয়াই বলে উঠল, “আমিও।*
সভাপতি বলল, গুড। ডেরি না করিয়া যে যার উইপন বাহির করিয়া মেঝেটে রাখুন।’
কুয়াশা তার পকেট থেকে ছোট ছোট অনেকগুলো অস্ত্র বের করে মেঝেতে রাখল। সব অস্ত্রই তার নিজের আবিষ্কত। স্মোক বম, গ্যাস বম থেকে শুরু করে কাঠকাটার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, ইস্পাত ছিদ্র করার যন্ত্র, রিভলভার, মাস্ক, বিষাক্ত সুচ নিক্ষেপক পিস্তল–সবই রয়েছে। প্রফেসর ওয়াইয়ের অস্ত্রগুলো স্ব-আবিষ্কত। স্টেনগান, স্মোক বম্ গ্যাস বম ছাড়া সে মেঝেতে রাখল একটা পেটমোটা বোতলের মত স্টীলের যন্ত্র।
“ওটা কি? জানতে চাইল শহীদ।
প্রফেসর বলল, এটা একটা, রেডিও। আমার হেডকোয়ার্টারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য এটা ব্যবহার করি। তাছাড়াও, এটা ব্যবহার করা যায় অন্য নানা কাজে। পাইলটহীন এরোপ্লেন আছে আমার গোটা চারেক। সেগুলোকে পরিচালনা করতে হলে এই রেডিওর সাহায্য একান্ত দরকার। কিন্তু কপাল খারাপ, পরীক্ষা করে দেখেছি আমি এটা কোন কারণে যেন নষ্ট হয়ে গেছে।
কুয়াশা বলে উঠল, ‘আমার নেসারগানটাই শুধু নয় অন্যান্য অস্ত্রও বিকল হয়ে গেছে। এখন আমি কারণটা অনুমান করতে পারছি। এই রহস্যপুরীর কোথাও
ভলিউম ১৭
১৮
শক্তিশালী ম্যাগনেট আছে। যার প্রভাবে সব যন্ত্রের কলকজা প্রভাবিত হয়ে পড়েছে। ফলে কোন অস্ত্রই আর কাজের নেই।’
সভাপতি চেঁচিয়ে উঠল, টাহলে উপায়? প্রশ্ন করল শহীদ, কুয়াশা, অস্ত্রগুলো কি মেরামত করা সম্ভব হবে?’
তা সম্ভব হবে। তবে জটিল যন্ত্রগুলো মেরামত করতে প্রচুর সময় লাগবে। খামার লেসারগান বা ওয়াইয়ের রেডিও মেরামত করতে কমপক্ষে দুদিন লাগবে। ছোটখাটো অস্ত্রগুলো মেরামত করতে একঘণ্টার বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয়
বোমাগুলোর খবর কি?’ ‘ওগুলো ঠিকমত আছে।’
শহীদ বলল, সেক্ষেত্রে আমাদের প্রথম কাজ অস্ত্রগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোমত করে ফেলা।’
কুয়াশা বলল, ঠিক তাই। | প্রফেসর বলল, আর একটা ব্যাপার। ওরা আমাদের ওপর সর্বক্ষণ নজর
•াখছে। নিশ্চয়ই এখানে টিভি ক্যামেরা লুকানো আছে। ক্যামেরাগুলো খুঁজে বের
•রে নষ্ট করার চেষ্টা করতে হবে।’
কুয়াশা বলল, এই দায়িত্ব আমি শহীদকে দিতে চাই।’
সভাপতির আসন থেকে মি, ডি, কস্টা বলে উঠল, “মি. কুয়াশার এই প্রস্তাব। আমি সমঠন করিটেছি। আর কাহারো কোন প্রস্টাব আছে?’
| ওমেনা বলে উঠল, আছে। আমার মন বলছে, আমাদের মধ্যে একজন লোক
• মনে চিন্তা করছে নিজের দলকে নিরাপদে মুক্ত করে এই বন্দীখানা থেকে ‘শিয়ে যাবার কথা। লোকটা কে তা আমি জানি না। সে মি. কুয়াশার দলের | ||কও হতে পারে, প্রফেসর ওয়াইয়ের দলের কেউও হতে পারে। এই ধরনের | | | করা অন্যায়। আমি প্রস্তাব করছি, এই ধরনের চিন্তা থেকে বিরত থাকার জন্য
‘| হুশিয়ার করে দেয়া হোক।’
সভাপতি গর্জে উঠল, ‘টুমি বেঈমান যেই হও, সাবান! ঢরা পড়িলে হামি 11-র কাঁচা মাংস চিবাইয়া খাইব!’
প্রফেসর বলে উঠল, ‘আমি বা আমার কোন লোক এই ধরনের চিন্তা করছে
| কামাল বলে উঠল, ‘ওমেনা কিন্তু কারও নাম উল্লেখ করেনি।
•রিটা–”আমি কলা খাইনি’ ধরনের হয়ে গেল না কি, প্রফেসর?’ | ‘ওহে মি. টিকটিকির সহকারী, ব্যঙ্গ করে কথা বলো না!’ প্রফেসর গর্জে
১.1।
কুয়াশা থামিয়ে দিল ওদেরকে, থামো সবাই। যে যা ইচ্ছা চিন্তা করুক।
• যদি বেঈমানী করে করুক, প্রাপ্য শাস্তি সে পাবে। এ প্রসঙ্গে আর কোন
•াচনার দরকার নেই। এবার কাজে হাত দেয়া যাক।
সভাপতি বলে উঠল, সভার সমাপ্তি ঘোষণা করিটেছি। দুই ডল ডুই ডিকে
। কুয়াশা ৫০
| ৪৯
সরিয়ে গিয়া বসুন। খুড়ে অস্ত্রগুলো মেরামতের কাজ শুরু করা যাক।
সভার কাজ শেষ হয়ে গেল।
জরুরী সভা বসেছে রহস্যপুরীর আর এক প্রকোষ্ঠে।
সভাপতির আসনে বসে আছে দেবতা অ্যাংগেলা। তার সম্মুখবর্তী স্বর্ণাসনে পাশাপাশি বসে আছে আরও ডজন দেড়েক দেবতা। জংলীদের মধ্যে তারা দেবতা রোহান কোরা, হিরোশো হালা, রাঙাচা পাঙশি, গটেন টট, হোমরু চোমরু, বেলকা চামুর, বিজা বিজা চোন, জেমবালা ধুরী, মালকোস মামবানা, লুলুলা লাম্বালা, ফেকরী কদ্দম, ওয়ালাফা মোয়ালাফা, তানতবলা ভুমা, বেয়াকানা জীরন, সালায়কা হোদালা প্রভৃতি নামে পরিচিত।
এক একজন দেবতা এক একরকম দেখতে। মানুষের মত হাত পা এবং শরীর হলেও মুখের চেহারা কারুরই মানুষের মত নয়। কোন দেবতার মুখ হুবই বাঘের মত, কোন দেবতার মুখ হুবহু সিংহের মত, কারও বা ভাল্লুকের মত মুখ, কারও বা. গরুর মত।
সভাপতি দেবতা অ্যাংগেলার মুখ হুবহু হাতির মত। প্রকাণ্ড দুটো কান নাড়তে নাড়তে ভাষণ দিচ্ছে সে।
* শত্রুরা ছোট নয়। এদের মধ্যে এমন দুজন লোক রয়েছে যারা এই রহস্যপুরী কেন, গোটা আফ্রিকা মহাদেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তবে, ভয়ের আর কোন কারণ নেই। কেন না, তারা যত ভয়ঙ্করই হোক, সবাই এখন আমাদের হাতে বন্দী। তবু, সাবধানের মার নেই। আমাদেরকে সারাক্ষণ সাবধানে থাকতে হবে।’
দেবতা বিজা বিজা চোন বলে উঠল, শত্রুদেরকে হত্যা করে ফেললেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
সভাপতি দেবতা অ্যাংগেলা বলল, অধৈর্য হওয়া কোন মতেই উচিত হবে না আমাদের। আমি আগেই বলেছি, গত শত বছরের মধ্যে এত বড় বিপদের মুখোমুখি হইনি আমরা। সত্যি কথা বলতে কি, এই বিপদ আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। তাড়াহুড়ো করে এমন কোন কাজ করা উচিত হবে না যার ফলে হিতে। বিপরীত ঘটে যায়। যাই করি, নিখুঁতভাবে করতে হবে। করার আগে বারবার ভেবে চিন্তে দেখতে হবে। শত্রুদের মধ্যে কুয়াশা নামে যে মানুষটা আছে তার কথা। তোমরা কেউই বিশেষ কিছু জানো না। কিন্তু আমি তোমাদের নেতা, অনেক খবর রাখতে হয় আমাকে। আমি এই কুয়াশা সম্পর্কে অনেক কথা জানি। কুয়াশা হচ্ছে। বাংলাদেশের সন্তান। শুধু বাংলাদেশের না, সারা বিশ্বের নাতিহীন ধনী সম্প্রদায়ের কাছে কুয়াশা মূর্তিমান আজরাইল এবং সারা বিশ্বের গরীব, নির্যাতিত মানুষের কাছে এই কুয়াশাই ফেরেশতার মত শ্রদ্ধেয়। আজ পর্যন্ত কোন দেশের পুলিস বা সামরিক বাহিনী কুয়াশাকে বন্দী করে রাখতে পারেনি। এগারোটা দেশ কুয়াশাকে জীবিত বা
৫০
ভলিউম ১৭
মত ধরে দেবার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে। সর্বমোট পঁয়ত্রিশ লক্ষ ডলার। এত বড় অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করা সত্ত্বেও কেউ কুয়াশাকে বন্দী বা হত্যা করতে | এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। বুঝতেই পারছ, আগুন নিয়ে খেলছি আমরা। ইচ্ছা করলে এই আগুন নিভিয়ে ফেলতে পারি অর্থাৎ কুয়াশাকে হত্যা করতে পারি। কিন্তু কুয়াশাকে হত্যা করার পর কিছু ঘটবে কিনা তাও ভেবে দেখতে হবে আমাদেরকে। এই এলাকার প্রায় প্রতিটি জংলী উপজাতির রাজা মহারাজার সাথে কুয়াশার বন্ধুত্ব আছে। দু’চার বছর পর পর কুয়াশা এই এলাকায় একবার না একবার আসেই। জংলীরা সবাই কুয়াশার প্রতি কৃতজ্ঞ। বিপদের সময় কুয়াশা তাদেরকে সাহায্য করেছে, তাদের নানান আপদ-বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে। তারা অন্ধের মত ভালবাসে কুয়াশাকে। বহু জংলীরাজা জানে, কুয়াশা রহস্যপুরীতে প্রবেশ করেছে। তারা হয়তো অপেক্ষা করছে কুয়াশার জন্যে। কুয়াশাকে যদি তারা রহস্যপুরী থেকে বেরুতে না দেখে তাহলে স্বভাবতই তাদের মনে নানারকম সন্দেহের উদ্রেক হবে। দাতেঁধে তারা যদি রহস্যপুরীতে কুয়াশার খোঁজে ঢুকে পড়ে তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
* তাহলে উপায়?’, সভাপতি বলল, অপেক্ষা করব আমরা। দেখি, জংলীদের মধ্যে কিরকম প্রতিক্রিয়া হয় আমি অবশ্য অন্য একটা সম্ভাবনার কথাও ভাবছি।’
সকলে জানতে চাইল, “কি সম্ভাবনা?’।
সভাপতি অ্যাংগেলা প্রকাণ্ড কান দুটো নাড়তে নাড়তে বাল, কুয়াশা খুবই শক্তিশালী লোক।তার ক্ষমতা অতুলনীয়। তার মেধা, প্রতিভা, বুদ্ধি এবং সাহস দার বস্তু। তার মত দুর্লভ রত্নকে যদি আমরা দলে পাই তাহলে আমাদের ক্ষমতা হয়ে উঠবে আকাশচুম্বি।’
সকল দেবতা সানন্দে করতালি দিয়ে উঠল। সভাপতি অ্যাংগেলা বললেন, প্রফেসর ওয়াই নামে আর একজন মহা বানিক আছে বন্দীদের মধ্যে। কুয়াশার মতই ভয়ঙ্কর ক্ষমতাবান নে। তবে কিটার মাথায় গণ্ডগোল আছে। তাকে খতম করাই উচিত কাজ হবে। লোকটা
কথায়, হিংস্র বাঘ একটা। ওকে দলে গ্রহণ করার কথা ভাবা যায় না। বন্দীদের মধ্যে আরও আছে বিশ্ববিখ্যাত ডিটেকটিভ শহীদ খান এবং তার সহকারী কামাল
হমেদ। আছে বাংলাদেশের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের প্রখ্যাত অফিসার মি. সিম্পসন ।
•াশার সহকারী স্যানন ডি, কস্টার কথা বলিনি, না? এই লোকটা দেখতে রোগ পাকা তালপাতার সেপাই হলে কি হবে, ভয় বলে কিছু নেই লোকটার মধ্যে।
•য়াশার নির্দেশে নিজেকে টুকরো টুকরো করে কাক চিনকে খাইয়ে দিতে পারে।
ত্যি ছাড়াও লোকটার আর একটা গুণ হচ্ছে তীঃ স্মরণশক্তি। কিছুই ভোলে
•[ লোকটা। দলে আছে মিসেস শহীদ এবং মিস ওমেনা। এই ওমেনা সম্পর্কে কিছু
•• দরকার। যতটুকু জানি, মিস ওমেনা এই পৃথিবীর মেয়ে নয়। সে নাকি অন্য IF গ্রহের রাজার মেয়ে। ওমেনা অনেক অস্বাভাবিক গুণের অধিকারিণী। এমনকি
মনে কোন বিপদ আছে কিনা তা সে আগে থেকে বলে দিতে পারে। কুয়াশাকে
•াশা ৫০
আমরা হত্যা করব এখবর ওমেনা হয়তো জেনে ফেলবে বা ইতিমধ্যেই জেনে | ফেলেছে। আমার ইচ্ছা, ওকে সবার আগে হত্যা করা উচিত। অবশ্য এখনি নয়।
জংলী রাজাদের প্রতিক্রিয়া দেখার পর সিদ্ধান্ত নেব আমরা।’
দেবতা ফেকরী কদ্দমের মুখটা হুবহু সিংহের মত। অবশ্য কণ্ঠস্বরটা তার একেবারে মিহি, মেয়েদের মত, আমার একটা প্রশ্ন আছে। বন্দীরা যদি ধনভাণ্ডারের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে বা অন্য কোন উপায়ে নিজেদেরকে মুক্ত করার চেষ্টা করে তাহলে আমরা কি ব্যবস্থা গ্রহণ করব?
. উত্তর দিল নেকড়েমুখো রাঙাচা পাঙশি, দরজা ভাঙা সম্ভব নয়। দরজার ভিতর আছে স্টিলের পাত। তবু, যদি ভেঙেও ফেলে, লাভ হবে না কোন। প্রতিটি দরজার তিন হাত সামনে আছে স্টীল শাটার। এক একটা শাটার এক একটা দরজার মতই প্রকাণ্ড। মোটা ইস্পাত দিয়ে তৈরি শাটারগুলো। ভাঙা বা কেটে ফেলা সম্ভব নয়। মোটকথা, পালাবার কোন উপায় ওদের নেই। তাছাড়া টেলিভিশনে ওদের সকলকে দেখা যাচ্ছে, কিছু করার চেষ্টা করলে আমরা সাথে সাথে তা দেখতে পাব।’
দেবতা গটেন টট প্রশ্ন করল, আপনি বলছেন কুয়াশা সাংঘাতিক ক্ষমতাশালী লোক, তাকে দলে ভেড়াবার চেষ্টা করা হবে। ভাল কথা। তার সাথে কথা বলে দেখলে কেমন হয়?
সভাপতি বলল, “আসলে কুয়াশাকে হত্যা করা সম্ভব হলে আমরা কোনরকম ঝুঁকি নিতে চাই না।’
“ দেবতা রোহান কোরা বলে উঠল, বন্দীরা এক একজন ভয়ঙ্কর প্রকৃতির লোক। ওদের একসাথে রাখা কি উচিত হচ্ছে? আমার মতে, ওদেরকে আলাদা আলাদা ফেলে রাখাটাই সবদিক থেকে নিরাপদ হবে।’ | সভাপতি দেবতা অ্যাংগেলা বলল, এব্যাপারে ভেবে দেখেছি আমি। ওরা কেউই সাধারণ মানুন নয়, এক একজন এক একটা আগ্নেয়গিরি। ওদেরকে বেশি ঘটাতে চাই না। ধনভাণ্ডার থেকে ওদেরকে স্থানান্তরিত করতে যাওয়া মানে ভয়ঙ্কর একটা ঝুঁকি নেয়া। একটু এদিক ওদিক হলেই ভীষণ কাণ্ড বাধিয়ে দেবে ওরা। আমি আগুন নিয়ে খেলা করতে চাই না। ওখানেই থাকু ওরা। তেমন কিছু করছে দেখলে আমরা গ্যাস ছাড়ব। অজ্ঞান করে রাখব সবাইকে।
সভাপতি অ্যাংগেলা সকলের দিকে একবার করে তাকাল। তারপর আবার কথা বলতে শুরু করল, কয়েকটা নির্দেশ দিচ্ছি আমি। সবাইকে মেনে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় বিপদের মুখোমুখি হয়েছি। এই বিপদের হাত থেকে মুক্ত হতে না পারলে আমাদের অস্তিত্ব লোপ পাবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত, কেউ নিজের মুখোশ খুলবে না। রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা সবাই মুখোশ পরে থাকবে। দুই নম্বর নির্দেশ, প্রত্যেকেই নিজের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখবে। অবশ্য অপ্রয়োজনে অর্থাৎ প্রাণ বাঁচাবার প্রয়োজন ছাড়া, কেউ বন্দীদেরকে গুলি করবে না। গুলি করলেও হত্যা করার জন্যে গুলি করা নিষেধ। প্রয়োজনে বন্দীদেরকে আহত করার জন্যে গুলি করা যেতে পারে। অবশ্য
৫২
ভলিউম ১৭
আমি উপস্থিত থাকলে আমার কাছ থেকে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত গুলি করা চলবে
। তিন নম্বর নির্দেশ, যে যার দায়িত্ব নিখুঁতভাবে পালন করে যাও। তোমাদের অধস্তন কর্মীদেরকে সতর্ক করে দাও। সবাই যেন যে-কোন পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকে। ওদের সবাইকেও মুখোশ পরে থাকতে নির্দেশ দাও। সভা আজকের মত
এখানেই শেষ হলো।’
সভাশেষে ভোজন পর্ব।
প্রকাণ্ড ডাইনিং রূমে গিয়ে বসল সবাই। ডাইনিং রূমের মাঝখানে মাঝারি আকারের একটা স্টেজ। স্টেজের পর্দাটা গাঢ় নীল রঙের। টেবিলের চারদিকে বসল দেবতারা। দেবতাদের কর্তা অ্যাংগেলা ডাইনিং রূমে প্রবেশ করেনি। হলরূম থেকে সরাসরি সে তার খাস কামরায় গিয়ে ঢুকেছে। অয়ারলেসে কথা বলছে সে তার বস-এর সাথে। সুদুর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ভেসে আসছে তার বস-এর যান্ত্রিক, কণ্ঠস্বর।
| এই রহস্যপুরী কে বা কারা তৈরি করেছিল তা জানা যায় না, জানার কোন উপায় নেই। আফ্রিকার এই অঞ্চলে হয়তো বা কোন এক যুগে সভ্যতা ছিল, সভ্য মানুষ বসবাস করত, এ কীর্তি হয়তো তাদেরই।
| রহস্যপুরী বর্তমানে যারা দখল করে আছে তারা জংলীদের কাছে দেবতা। হিসাবে পরিচিত হলেও এরা আসলে একদল ঠকবাজ, লম্পট, লোভী অপরাধী ছাড়া
আর কিছু নয়।
ক্যালিফোর্নিয়ায় এদের দলপতি থাকে । তার নির্দেশেই এরা পরিচালিত। | এই রহস্যপুরী আবিষ্কার করে সেই দলপতি, কার্ল শার্প হুড।
কার্ল শার্প হুড ওয়াশিংটনে বসবাস করত। ব্যবসা ছিল তার আফিম, গাঁজা, কোকেন অর্থাৎ নানা জাতের মাদকদ্রব্য চোরাচালান করা। পুলিস তার পিছু ধাওয়া করে। সে প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা ।
কার্ল পালিয়ে আসে দলবল নিয়ে আফ্রিকায়। গহীন জঙ্গলে শিকার করে দিন কাটতে থাকে তাদের । এইসময়েই তারা আবিষ্কার করে রহস্যপুরী।
জংলীরা শত শত বছর ধরে দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য রহস্যপুরীতে স্বর্ণ ও মহামূল্যবান পার্থর রেখে যেত। শত শত মণ স্বর্ণ এবং পাথর জমা হয়েছিল। রহস্যপুরীতে। কার্ল এবং তার দলবল সেই কোটি কোটি টাকার ধনরত্ন লুঠ করবার পরিকল্পনা নেয়।
কার্ল কিছু দিন পর সেই ধনরত্ন নিয়ে ফিরে যায় আমেরিকায়। ছদ্মবেশ নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করতে থাকে সে। নতুন ব্যবসা শুরু করে সেখানে। ব্যবসাটা স্বভাবই স্বর্ণের।
কার্লোর লোকজন এখন থাকে রহস্যপুরীতে । আশাতীত বেতন পায় এরা। এরা প্রত্যেকেই এক একজন কুখ্যাত অপরাধী। কার্ল বেছে বেছে কুখ্যাত অপরাধীদেরকেই এই রহস্যপুরীতে পাঠায়। বছরে দুইবার আসে কার্লের নিজস্ব মালবাহী প্লেন। সেই প্লেনে করে পাঠিয়ে দেয়া হয় সোনা এবং পাথর।
অপরাধীরা জংলীদের সামনে নরবলি দেবার সময় ছাড়া বের হয় না। কিন্তু
কুয়াশা, ৫০
সর্বদা মুখোশ ব্যবহার করে এরা, কারণ, বলা তো যায় না, জংলীরা যদি হঠাৎ কাউকে দেখে ফেলে! মুখোশ পরা অবস্থায় দেখলে জংলীরা মানুষ বলে মনে না করে বরং দেবতা বলে মনে করবে–এই ভেবেই মুখোশের প্রচলন হয়েছিল এদের
মধ্যে ।
অপরাধীরা মিথ্যে ভাবেনি। সত্যি জংলীরা এদের দু’একজনকে দৈবাৎ দেখে ফেলেছে।
| এদিকে ডাইনিং হলে সুন্দরী মেয়েরা পরিবেশনের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। দামী পোশাক পরা পরিচারিকারা টেবিলে টেবিলে সাজিয়ে রাখছে সুস্বাদু খাদ্যবস্তু। হরেক রকম মদ, বিভিন্ন প্রাণীর রান্না করা মাংস, সুস্বাদু ফল, ইংলিশ এবং চায়নিজ ডিশ–টেবিল ভরে উঠল দেখতে দেখতে। এমন সময় দেবতা অ্যাংগেলা প্রবেশ রেল ডাইনিং হলে। সকলের মুখোমুখি এটি আসনে বসল সে। বেজে উঠল দ্রুত তালে ইংরেজি বাজনা। ধীরে ধীরে সরে গেল স্টেজের পর্দা।
মঞ্চে দেখা যাচ্ছে অপূর্ব সুন্দরী মেয়েদেরকে। তারা নাচতে শুরু করল।
ভোজনপর্ব শুরু হলো। সময় বয়ে য়াচ্ছে। দ্রুত থেকে দ্রুততর তালে বাজছে বাজনা। নর্তকীরা উদ্দাম তালে নাচছে।
দেবতারা আনন্দ উল্লাসে চিৎকার করে উঠছে থেকে থেকে। গ্লাসে ঢেলে দিচ্ছে পরিচারিকারা দামী মদ।
দেবতারা মাতাল হয়ে উঠছে।
ডাইনিং হলে ভীষণ উল্লাসে ফেটে পড়ছে দেবতার ছদ্মবেশে কুৎসিত শয়তানের দল। মঞ্চে অশ্লীল ভঙ্গিতে নাচছে নর্তকীরা।
সময় বয়ে চলেছে। ভোর হতে চলল। মাতাল শয়তানরা হাঃ হাঃ হোঃ হোঃ করে হাসছে।.এমন সময় বেজে উঠল সাইরেন।
থেমে গেল বাজনা। থেমে গেল নাচ। বন্ধ হলো বোতল থেকে গ্লাসে মদ ঢালা। থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল ব্যস্ত পরিচারিকার দল। ছদ্মবেশী শয়তানরা চমকে
উঠল। কেটে গেল তাদের নেশার ঘোর।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সবাই। সব শব্দ থেমে গেছে। সবাই অধীর, উত্তেজিত। সবাই তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।
অপেক্ষার পালা শেষ হলো একমুহূর্ত পরই। শূকরের মুখোশ পরা মেসেঞ্জার ঢুকল ডাইনিং রূমে।
সে ঘোষণা করল, “জংলীদের একটি দল এসে হাজির হয়েছে। মণ দুয়েক স্বর্ণ, চারজন বন্দীসহ নিয়ে এসেছে অগুনতি পশু।
অ্যাংগেলা তার প্রকাণ্ড কান দুটো নাড়তে নাড়তে কর্কশ কণ্ঠে নির্দেশ জারি করল, রাঙাচা পাঙাশি, গটেন টট, জেমবালা ধুরী–তোমরা দেবতা রোটেনহেপো হেমনোসান ক্যান ক্যান-এর পাদমূলে জংলীদের বন্দীদেরকে বলি দেবে আজ। জংলীদের থাকার ব্যবস্থা করো গে হিরোশা হালা এবং তানতবলা ডুমা। আর বেয়াকানা জীরন ও মালায়কা হোদানা, তোমাদের দু’জনের ওপর দায়িত্ব রইল জংলীদের শরীরে তাজা রক্ত মাখিয়ে দেবার।
৫৪
ভলিউম ১৭
নির্দেশ পেয়ে বেরিয়ে গেল সবাই।
দেব-মূর্তি রোটেনহেপো হেমনোসান ক্যান ক্যান-এর পাদমূলে জংলীরা জমায়েত হয়েছে।
| রাঙাচা পাঙাশি, গটেন টট এবং জেমবালা ধুরী উপস্থিত হলো সেখানে। গটেন টটের হাতে প্রকাণ্ড একটা ভোজালি।
জংলীরা বন্দীদেরকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। হঠাৎ তারা সিংহমুখো, ভাল্লুক মুখো এবং ঘোড়ামুখো দেবতাদেরকে দেখে মেঝের উপর লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে বিকট এবং দুর্বোধ্য স্বরে মন্ত্র উচ্চারণ করতে শুরু করল। | রাঙাচা পাঙাশি এবং জেমবালা ধূরী হাত-পা বাঁধা বন্দীদেরকে প্রকাণ্ড দেব মূর্তি রোটেনহেপো হেমনোলান ক্যান ক্যান-এর পাদমূলে জোর করে ধরে শুইয়ে দিল।
বন্দীদের চারজনই শ্বেতাঙ্গ। তারা এসেছিল আফ্রিকার জঙ্গলে বাঘ শিকার করতে। ঘটনাচক্রে মাস সাতেক আগে তারা ধরা পড়ে জংলীদের হাতে। জংলীরা গত সাত মাস তাদেরকে বন্দী করে রেখেছে। শিকারীরা নিজেদের প্রাণের মায়া অনেক আগেই ত্যাগ করেছে। ওরা ছিল স্বাস্থ্যবান সুপুরুষ। সেই চেহারা আজ আর নেই। রোগা, হাড্ডিসার হয়ে গেছে সবাই। দাড়ি গোফ গজিয়েছে লম্বা লম্বা। বুনো পশুদের মত হয়ে উঠেছে হাত পায়ের নখ।
গটেন টুট এগিয়ে গেল। রাঙাচা পাঙাশি বিকট স্বরে গর্জে উঠে কি যেন বলল জংলীদের ভাষায়।
জংলীরা মাথা তুলি। উঠে বসল সবাই একে একে। একটা দরজা খুলে গেল। সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করল গরুমুখো এবং বানরমুখো দুই ছদ্মবেশী শয়তান। এই সব শয়তান জংলীদের কাছে দেবতা হিসেবে পরিচিত। এরা দেবতা বেয়াকানা জীরন এবং মালায়কা হোদানা।
বন্দীরা করুণ চোখে তাকিয়ে আছে।
বিড় বিড় করে মন্ত্র পড়ছে জংলীরা। গটেন টটের হাতে ধারাল, চকচকে ভোজালি। বন্দীরা সবাই বুঝতে পারছে। তাদেরকে হত্যা করা হবে এখানে। গত সাত মাস ধরে এই কারণেই তাদেরকে বন্দী করে রেখেছিল জংলীরা।
গটেন টট একজন বন্দীর উদ্দেশ্যে মাথার উপর ভারি ভোজালিটা তুলে ধরল।
মৃত্যুপথযাত্রী নিরীহ বন্দী আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল। সেই চিৎকার শয়তান গটেন টটের হদয়ে এতটুকু দয়ামায়ার সঞ্চার করা না।
নেমে এল ভোজালি। বন্দীর আতঙ্কিত চিৎকার অকস্মাৎ স্তব্ধ হয়ে গেল । দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে তার দেই। ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তার মুণ্ডুটা।
রক্তের বন্যা বইছে দেব-মূর্তি রোটেনহেপো হেমনোসান ক্যান ক্যান-এর পাদদেশে।
গরুমুখো এবং বানরমুখো শয়তান অর্থাৎ বেয়াকানা জীরান ও মালায়কা হোদানা সেই তাজা উষ্ণ লাল রক্ত আঁজলা ভরে তুলে নিয়ে ছিটিয়ে দিল জংলীদের মাথা লক্ষ্য করে।
কুয়াশা ৫০ |
৫৫
জংলীরা জয়ধ্বনি করে উঠল। এবার গটেন টট এগিয়ে গেল দ্বিতীয় বন্দীর দিকে।
বন্দী বোকার মত তাকিয়ে আছে। হঠাৎ সে গগন বিদারী কণ্ঠে আর্তনাদ করে উঠল।
কিন্তু কে তার চিৎকারে কান দেয়। এর নাম রহস্যপুরী। রহস্যপুরীর নির্মম শয়তানদের খপ্পরে এসে পড়েছে তারা। এখান থেকে, এদের হাত থেকে বাঁচার কোন উপায় নাই।
আজ পর্যন্ত কেউ বেঁচে ফিরে যেতে পারেনি।
তিন
প্রফেসর ওয়াইকে ঘিরে বসেছে তার স্বাস্থ্যবান অনুচরবৃন্দ। সবার মাঝখানে প্রফেসর ওয়াই। তাকে প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। প্রফেসর স্বয়ং এবং তার দলের লোকেরা অস্ত্রগুলো মেরামতের কাজে ব্যস্ত।
| ব্যস্ত কুয়াশাও। একের পর এক অস্ত্র মেরামত করছে সে।
শহীদ কামাল এবং ডি, কল্টার কাঁধে চড়ে ধন-ভাণ্ডারের গোলাকার ইস্পাত নির্মিত দেয়ালগুলো পরীক্ষা করা শেষ করেছে। শেষ করেছে প্রতিটি দরজার নিম্নভাগ থেকে উর্ব ভাগ পরীক্ষা করার কাজ। গোপন টিভি ক্যামেরার হদিস পায়নি
ও ।
মাথার উপরকার মস্ত লোহার ঢাকনিটার সাথে টিভি ক্যামেরা ফিট করা আছে বলে সন্দেহ হলো ওর। কিন্তু সেখানে পৌঁছানো অসম্ভব। পাঁচ ছয় মানুষ উঁচুতে সেই ঢাকনি, উঠবে কিভাবে অত উপরে?
শহীদ ঘোষণা করল, আমি ব্যর্থ। কোনো টিভি ক্যামেরার খোঁজ পাচ্ছি না।
সবাই আশা করল প্রফেসর ওয়াই এ ব্যাপারে তার মতামত দেবে। কিন্তু প্রফেসর ওয়াই বা তার অনুচরেরা যেন শহীদের কথা শুনতেই পায়নি; আপন মনে তারা সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।
কুয়াশা মুখ তুলে তাকাল। চোখাচোখি হলো শহীদের সাথে। অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে পরমুহূর্তে ডি. কস্টার দিকে তাকাল কুয়াশা। তারপর শহীদের উদ্দেশ্যে বলল, করার কিছু নেই। দেবতারা আমাদেরকে দেখছে, দেখুক। যখন মনে করব আমাদের গতিবিধি ওদেরকে দেখতে দেয়া উচিত নয় তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা যাবে। চিন্তা কোরো না।’ | ডি. কস্টা ইতিমধ্যে উঠে দাঁড়িয়েছে। এক পা দুপা করে কক্ষটার দূর প্রান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। প্রফেসর ওয়াইকে দেখতে পাচ্ছে সে। মাথা নিচু করে
প্রফেসর ওয়াই বিড় বিড় করে কি যেন বলছেন। | হঠাৎ একজন অনুচর প্রফেসরের উদ্দেশ্যে কিছু বলল। অনুচরটি ডি, কস্টাকে এগিয়ে আসতে দেখে ফেলেছে। ঝট করে প্রফেসর ওয়াই মাথা তুলে শিরদাঁড়া সোজা করে বসল। দ্রুত কি যেন ঢুকিয়ে ফেলল সে পরনের বাঘের চামড়ার
৫৬
. ভলিউম ১৭
অন্তরালে।
মি. ডি. কস্টা যে! আসুন আসুন! কি মনে করে হঠাৎ এদিকে? আপনাদের অস্ত্রগুলো মেরামতের কাজ কতদূর এগোল বলুন দেখি?
ডি. কস্টা গভীর। বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে সে প্রফেসরের কোলের দিকে।
‘প্রফেসর! সট্রিকঠা বলিবেন। হাপনি মিঠ্যা কঠা বলিলে দোজখে পূডিয়া ছারখার হইয়া যাইবেন। বাঘের চামড়ার ভিটর ঝটপট কি লুকাইলেন বলুন টো?’
‘লুকিয়েছি? কি লুকিয়েছি? ইয়ার্কি মারা হচ্ছে, না? ও, বুঝেছি, ঠাট্টা মস্করা করছেন! হাঃ হাঃ হাঃ হা••
| প্রফেসর প্রথমে গর্জে উঠলেও হঠাৎ সে গলা ছেড়ে কর্কশ বিকট কণ্ঠে অট্টহাসিতে ভেঙে পড়ল।
| ডি কস্টা তার সরু গলা সপ্তমে চড়িয়ে গর্জে উঠল। রেগে উঠেছে সে, ‘স্টপ! স্টপ! ঠামান আপনার ব্যর্থ অভিনয়! মাই গড, ডোজখের ভয় নাই হাপনার। কী ডোরাল আদাম বাপ! পাক্কা বড়মাশ, ডিকে রাট করিয়া ফেলিটে পারে। হামি উইথ মাই ওউন আইজ ডেকিলাম কি যেন একটা জিনিস লুকাইয়া ফেলিলেন। অঠচ ডিনাই করিটেছেন ডিবি!’
প্রফেসর হাসি থামিয়ে বলল, মি. ডি. কন্টা, বয়স তো আর কম হলো না আপনার। তাই চোখে ছানি পড়া বিচিত্র কিছু নয়। কি দেখতে কি দেখেছেন। যাক, মাক করে দিলাম আপনাকে। সত্যি আমি কিছু মনে করিনি।’
| ডি. কস্টা তড়াক করে লাফিয়ে উঠন, ‘লে বাবা! প্রফেসর ডেকটি বড় ঢালাক! হয় কে নয় করিটে এক নম্বরের এস্টাড! বাট হামার চোখে ঢুলো ডিটে পারেন নাই! প্রাফেসর!
| বান।
ভয়া করিয়া ভন্ডরলোকের মটো একবার সোজা হইয়া উঠিয়া ছাড়ান টো ডেকি! টাহা হইলেই প্রমাণ হইয়া যাইবে হাপনি আপনার পরনের বাঘের চামড়ার ভিটর কিছু লুকাইয়া রাখিয়াছেন কিনা?’
প্রফেসর এবার খেপে উঠল, কী! এতবড় কথা! আপনার সন্দেহ দূর করার জন্য গ্রামাকে উঠে দাঁড়াতে হবে! ইউ ননসেন! সরে যান বলছি সামনে থেকে ।
হঠাৎ হেসে উঠল ডি কস্টা খিকখিক করে।
হোয়াট! সাহস তো কম নয় পাটখড়ির। হাসি থামিয়ে দেব বলছি চিরকালের জন্য•••।’
কথা বলতে বলতে প্রফেসর কোলের ভিতর থেকে পেট মোটা বোতলের মত দেখতে রেডিও সেটটা বের করে পাচার করে দিল তার সামনে বসা একজন অনুচরের কোটের পকেটে।
চোখ বুজে দুলে দুলে বেদম হাসছে ডি. কস্টা।
এদিকে থরথর করে কাঁপছে প্রফেসর ওয়াই। যেন রাগে উন্মাদ হয়ে গেছে। মারমুখো হয়ে ডি কস্টার দিকে এক পা এগিয়ে এল সে।
হাসি থামল ডি, কস্টার। সকৌতুকে চেয়ে রইল প্রফেসরের দিকে কয়েক
কুয়াশা ৫০
মুহূর্ত। তারপর বলে উঠল, সাঢ়ে কি হাপনাকে হামি অ্যাবসেন্ট মাইন্ডেড প্রফেসর বলি! ওই প্রফেসর, সট্টিসট্টি হাপনি আজব এক চীজ। আরে, আমি টো হাপনার সাথে ঠাট্টা মস্করা করিটেছিলাম। আশ্চর্য ব্যাপার, আপনি হাস্য-কৌটুকও বোঝেন
প্রফেসর গলে পানি হয়ে গেল নিমেষে।
‘ও, তাই বলুন। হেঃ হেঃ হেঃ, সত্যিই স্বীকার করি, আপনার রসিকতা করার ক্ষমতা অসাধারণ। যাক, কিছু মনে করবেন না। নীরস লোক আমি, আপনার রসিকতা ঠিক ধরতে পারিনি।’ * ডি, কস্টা একগাল হেসে বলে উঠল, মনে করিবার কিছু নাই। হাপনি হামার ব্রাদার। আমি আপনার ব্রাদার। আসুন, হামরা পরস্পরকে আলিঙ্গন করিয়া বন্ধুত্বটা পাকাপোক্ত করিয়া লই।’
| কথাটা বলে ডি, কল্টা প্রফেসরের দিকে দুই হাত বাড়িয়ে দিল। প্রফেসর সানন্দে ডি কস্টাকে জড়িয়ে ধরল নিজের বুকের সাথে।
মাত্র এক মুহূর্ত, তারপরই চেঁচিয়ে উঠল ডি কস্টা, মাই গড! মরিয়া গেলাম। ছাড়িয়া ডিন! ফর গডস সেক, ছাড়িয়া ডিন হামাকে! বাপরে কী শর্ট হাপনার বক!’
প্রফেসর হাসতে হাসতে ছেড়ে দিল ডি, কন্টাকে। | হাঁপাচ্ছে ডি, কস্টা। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে উঠেছে তার। বোকার মত চেয়ে আছে সে প্রফেসরের দিকে।
মাই গড! আপনার শরীর অটো কঠিন কেন বলুন টো? লোহা দিয়া টৈরি নাকি?’
হোঃ হোঃ শব্দে হেসে উঠল প্রফেসর ওয়াই। ডি. কস্টা পিছিয়ে এল। বলল, না পলায়ন করি। লাইফে আর কোনভিন হাপনার সাঠে কোলাকোলি করব না। হামার শখ মিটিয়া গেছে। আর একটু হইলে প্রাণটা বাহির হইয়া যাইট।
শহীদ এবং কামাল কক্ষের অপরপ্রান্ত থেকে গোটা ব্যাপারটা লক্ষ্য করছিল। ফিসফিস করে কথা বলে উঠল শহীদ। কামাল লক্ষ্য করলি?
কি বল তো?’ ‘চোখে পড়েনি কিছু?
কামাল ভুরু কুঁচকে তাকাল শহীদের দিকে, না তো। তুই কি প্রফেসরের অভিনয়ের কথা বলছিন? তা যদি জানতে চাস–হ্যাঁ, লক্ষ করেছি। প্রফেসর সত্যি কিছু একটা লুকিয়ে ফেলেছিল কোলের ভিতর। সেটা সে পাচার করে দিয়েছে তার নিজের একজন লোকের কাছে। তবে জিনিসটা কি তা আমি দেখতে পাইনি।’
শহীদ মৃদু হেসে বলল, “না, আমি প্রফেসরের অভিনয়ের কথা বলছি না। প্রফেসরের অভিনয় তো ধরা পড়ে গেছে। এমন কি ডি কস্টার চোখকেও সে ফাঁকি দিতে পারেনি। আমি বলছি প্রফেসরের নয়, ডি, কস্টার অভিনয়ের কথা।
কী বলছিস তুই? ডি, কল্টা আবার অভিনয় করল কোনখানটায়?’
শহীদ বলল, তুই আসলে দেখতে পাসনি। কিন্তু আমি পরিষ্কার দেখতে পেয়েছি। ব্যাপারটা ঘটেছে ওরা যখন প্রম্পরকে আলিঙ্গন করছিল তখন।
ভলিউম ১৭
‘কি ঘটেছে?
শহীদ বলল, “ডি, কস্টা আলিঙ্গন করার সময় প্রফেসরের মাথার মুকুটের ওপর ছোট্ট একটা জিনিস ফেলে দিয়েছে।’
বলিন কি!
হা। জিনিসটা কি তা আমি দেখিনি। তবে আমার ধারণা কুয়াশার ইঙ্গিতেই জিনিসটা ডি, কল্টা প্রফেসরের মুকুটে রেখে এল।’
কামাল বলল, তারমানে কুয়াশা প্রফেসরকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না? কিন্তু জিনিসটা কি হতে পারে?
‘বিশ্বাস তো আমিও করি না প্রফেসরকে। কুয়াশাও বিশ্বাস করে না। জিনিসটা? কী জানি, ওটা হয়তো মিনি মাইক্রোফোন। প্রফেসর তার অনুচর বা ওয়্যারলেস কিংবা রেডিওর সাথে কি কথা বলে তা হয়তো জানতে চায় কুয়াশা। মিনি মাইক্রোফোনটা হয়তো ট্রান্সমিটারের কাজ করবে। কুয়াশার রিসিভিং সেটে ধরা পড়বে প্রফেসরের কথাগুলো।’
কামাল কি যেন বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু তার আগেই গমগম করে উঠল লাউডস্পীকারের মাধ্যমে ভরাট একটা কণ্ঠস্বর ।
‘দেবতা রোটেনহেপো ােেমনোসান ক্যান ক্যান-এর নগণ্য সেবক কথা বলছি। আমি। আপনারা বন্দী হয়েছেন কেন তার কারণ আগেই জানানো হয়েছে। রহস্যপুরীর পবিত্রতা নষ্ট করেছেন আপনারা। দেবতারা ভয়ানক অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আপনাদের এই গুরুতর অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। বিনা বিচারে আপনাদেরকে হত্যা করা হবে এই সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম আমরা। দেবতা রোটেনহেগো হেমনোমান ক্যান ক্যান-এর সেবকবদ আমরা আপনাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে নতুন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তা হলো এই যে, বিনা বিচারে [পনাদেরকে হত্যা করা হবে না। এখন থেকে চব্বিশ ঘণ্টা পর অর্থাৎ আগামীকাল সকাল আটটার সময় আপনাদের সকলের বিচার হবে। আমরা একমত হয়ে যে যায় দেব তাই চুড়ান্ত বলে গণ্য হবে। বিচারে আপনাদের মৃত্যুদণ্ড নাও হতে পারে। [[পনারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন। বিচারের রায়ে যদি আপনারা নির্দোষ. পাণিত হন তাহলে সসম্মানে মুক্তি দেয়া হবে আপনাদেরকে। আমাদের তরফ থেকে আপনাদের প্রতি নির্দেশ এবং অনুরোধ, আপনারা দয়া করে কোন রকম
ৗশল বা চালাকীর আশ্রয় নেবেন না। আপনাদের গতিবিধির ওপর আমরা | রাক্ষণ নজর রাখছি। আপনারা যাই করুন, আমরা তা দেখতে পাব। ভুলে। ||বেন না, এই রহস্যপুরী থেকে আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ কোন দিন পালাতে পারেনি, আপনারাও পারবেন না। চেষ্টা করা বৃথা। আমাদের সাবধান বাণী সত্ত্বেও ‘পনারা যদি সেরকম কোন চেষ্টা করেন তাহলে লাভবান তো হবেনই না, বরং টারের রায় তার ফলে আপনাদের বিরুদ্ধে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি আপনারা অপরিচিত ছোটখাট অস্ত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। বিশ্বাস
•নি, আপনাদের বোকামি দেখে হাসি পাচ্ছে। ওই সব ছেলে ভুলানো অস্ত্রের সাহায্যে রহস্যপুরী থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।’
•াশা ৫০
দেবতা রোটেনহেপো হেমনোসান ক্যান ক্যান-এর সেবক দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করল, “ছেলেমানুষি ত্যাগ করুন। আমাদের পরামর্শ নিন। তাতে লাভ বই লোকসান হবে না আপনাদের। অস্ত্রগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিন এক কোনায়। চুপচাপ অপেক্ষা করুন। খানিক পর উপর থেকে পানীয় জল এবং ব্রেকফাস্টের জন্য প্রচুর খাবার নামিয়ে দেয়া হবে নিচে। খাওয়া দাওয়া করুন, আর দেবতার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে প্রার্থনা করুন। দেবতা সন্তুষ্ট হলে আপনারা অবশ্যই মুক্তি পাবেন, ফিরে যেতে পারবেন নিজেদের দেশে । আমার বক্তব্য আমি শেষ করছি। আপনারা কি করবেন না করবেন ভেবে দেখুন। অস্ত্রগুলো আপনারা ফেলে দিয়েছেন দেখলেই আমরা আপনাদের জন্য খাবার নামাবার ব্যবস্থা করব। সুপ্রভাত। দেবতা রোটেনহেপো হেমনোসান ক্যান ক্যান আপনাদের সুমতি দিন এবং আপনাদের সহায় হোন।
দেবতার সেবক তার ভাষণ শেষ করল। উঠে দাঁড়াল কুয়াশা। ‘ওয়াই!’
প্রফেসর ওয়াই মাথা নিচু করে আগের মত তার রেডিওর সাথে কথা বলছিল এতক্ষণ। লাউডস্পীকারের মাধ্যমে এতক্ষণ যা বলা হলো তা সে শোনেনি, শোনার চেষ্টাও করেনি। সে ছিল তার নিজের কাজে ব্যস্ত। কুয়াশার ডাকে মাথা তুলে, তাকাল সে।
বলুন। কুয়াশা বলল, তোমার অস্ত্র মেরামত হয়েছে সব?’ ‘প্রায় সব।’
কুয়াশা বলল, গুড়। আর দেরি করার কোন মানে হয় না। এবার আমরা কাজে হাত দিতে চাই। দরজা ভাঙা যাবে না তা আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। তা
যাক। আমার অটোমেটিক করাত দিয়ে দরজার বাটের কাঠ কেটে ফেলতে হবে। মানুন যাবার মত খানিকটা কেটে এই বন্দীখানা থেকে আগে বেরুতে চাই আমরা। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে। তুমি কি বলো?’
আপনার আইডিয়াটাই বেস্ট। আমি সমর্থন করি আপনাকে।’
কুয়াশা বলল, কাজ শুরু করার আগে আর একটা ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, দরকার। শত্রুরা আমাদের ওপর নজর রাখছে। আমরা দরজা কাটছি দেখতে পেলে ওরা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সুতরাং, আমরা কি করছি তা যাতে ওরা দেখতে
পায় তার ব্যবস্থা করতে হয়।
কিন্তু তা কি সম্ভব?
কুয়াশা বলল, ‘সম্ভব। এই দেখো।’ কথাটা বলেই কুয়াশা পকেট থেকে মারবেল আকৃতির একটা স্মোক কম বের করে সজোরে ছুঁড়ে দিল উপর দিকে।
পাঁচ-ছয় মানুষ সমান উঁচুতে মস্ত ঢাকনির গায়ে গিয়ে লাগল বমটা! সাথে সাথে বিস্ফোরিত হলো সেটা। চোখের পলকে ধূসর রঙের ধোয়ায় উপরিভাগটা ভরে উঠল।
ভলিউম ১৭,
ক্রমে ঢাকা পড়ে গেল ঢাকনিটা। সকলের মাথার উপর যেন ভাসছে একটা মেঘের টুকরো। অনড়, নিশ্চল।
কুয়াশার গলা শুনে সবাই দৃষ্টি নামাল, এই ধোয়া ওপরেই থাকবে, নিচের দিকে নেমে আসবে না। তবু, আমাদের সকলের উচিত মুখোশ পরে নেয়া।
পকেট থেকে অনেকগুলো মুখোশ বের করল কুয়াশা। প্রত্যেকের হাতে দিল একটা করে। রবারের মুখোশ। ভিতরটা ফাঁপা। কুয়াশা বলল, “যে-কোন বিষাক্ত পরিবেশে এই মুখোশ অদ্ভুত কাজ দেয়। সবচেয়ে মজার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর
অক্সিজেন উৎপাদন করার ক্ষমতা। পরে নাও সবাই।’
| সবাই এমনকি প্রফেসর এবং তার অনুচরেরাও পরে নিল একটি করে মুখোশ।
| শত্রুরা আমাদেরকে এখন আর দেখতে পাচ্ছে না। এবার আমরা কাজ শুরু করতে পারি। তবে, সবাই সাবধান থেকো। আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে না বলে ওরা নিশ্চয়ই পাল্টা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বলা যায় না, গরম পানি ছেড়ে দিয়ে এই জায়গাটা ভরে দেবার ব্যবস্থাও করতে পারে। সবাই মরব তাহলে এখানে। বুঝতেই পারছ, যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে আমাদেরকে। সত্যি কথা বলতে কি, আমরা ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি স্মোক বম ফাটিয়ে দিয়ে।’
শহীদের হাতে একটা স্বয়ংক্রিয় করাত দিল সে। জিনিসটা একটা সিগারেটের প্যাকেটের মত দেখতে।
‘এটার উল্টো দিকটা চেপে ধরবে তুমি দরজার বাটের গায়ে। বোম টিপলেই ধারাল রেড সেকেণ্ডে তিনশো যাবার ঢুকবে আর বেরুবে। খুব জোরে চেপে ধরে রাখবে তুমি যন্ত্রটা দরজার গায়ে। আপনাআপনি কাটতে থাকবে কাঠ। তুমি শুধু একটু একটু করে সরিয়ে নিয়ে যাবে চেপে ধরে রেখে। যেদিকে সুরাবে সেদিকেই কাটবে। | প্রফেসর ওয়াই ঘন ভুরু কুঁচকে জানতে চাইল, আপনি এ দায়িত্ব মি. শহীদকে দিচ্ছেন কেন? আপনি কি করবেন তাহলে?’
কুয়াশা বলল, আমার হাতে অনেক কাজ। সবচেয়ে জরুরী কাজ হলো, ওয়্যারলেসটা মেরামত করা। রেডিও সিগন্যাল পাঠাতে পারছি না। তুমি বোধহয়। জানো না ওয়াই, আফ্রিকায়ও অামার একটা আস্তানা আছে। নাইজেরিয়ার এক পাহাড়ে অনেকদিন ছিলাম। সেখানে আধুনিক একটা আস্তানা গড়ে তুলেছিলাম। সেখানে আমার বিমানবাহিনীর শাখাও আছে। রেডিওর সাহায্য পেলে একটা বিমান নিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারি এখানে বসে বসেই। দেখি, কতদূর কি করতে পারি।’
শহীদ ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। তার আশেপাশে ভিড় করে দাঁড়িয়েছে সবাই। শুধু প্রফেসর এবং তার অধিকাংশ অনুচর ছাড়া। প্রফেসর নিজের জায়গায় গিয়ে বসেছে। তাকে ঘিরে বসে আছে অনুচরবৃন্দ। প্রফেসর মাথা নিচু করে পেট মোটা রেডিওর সাথে কথা বলছে বিড় বিড় করে, যাতে আর কেউ তার কথা শুনতে না পায়।
ব্যাপারটা লক্ষ্য করে মুচকি হাসল শুধু কুয়াশা। পর মুহূর্তে সে তার কাজে মগ্ন
কুয়াশা ৫০
হয়ে পড়ল।
চার আশায় ভরে উঠেছে সকলের বুক। কুয়শার স্বয়ংক্রিয় করাত যাদুমন্ত্রের মত কাজ করছে। দরজার বাটের কাঠ, ইস্পাতের পাতসহ দ্রুত কেটে ফেলছে। | দশ মিনিটের মধ্যে উদ্দেশ্য পূরণ হলো। গোল করে কাটা হয়েছে কবাটের মাঝখানে। একজন মানুষ অনায়াসে গলে যেতে পারে।
| মাথা নিচু করে ফাঁকটা দিয়ে দরজার ওপারে চলে গেল সবার আগে শহীদ ও তার পিছু পিছু কুয়াশা স্বয়ং।
সর্বনাশ! এত পরিশ্রম সব ব্যর্থ হয়ে গেল দেখছি!”
ব্যাপারটা কুয়াশাও দেখেছে। দরজার কাছ থেকে হাত তিনেক দুরেই দেখা। যাচ্ছে আর একটা দরজা। সম্পূর্ণ স্টীলের।
‘এটা আসলে মূল দরজার শাটার। শহীদ, শত্রুরা বোকা নয়। যাক, নিরাশ। হবার কিছুই নেই। এই করাত দিয়েই কাটা যাবে স্টীলের দরজা। তবে সময় লাগবে কিছু বেশি। হাত পা গুটিয়ে বসে না থেকে তুমি তোমার কাজ শুরু করে। দাও। আমি আমার রেডিওটা সেরে ফেলেছি, মেসেজ পাঠাবার কাজটা শেষ করে
ফেলি এবার।
তাই যাও।’
শহীদ নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করল। এবার আর কাঠ কাটার কাজ নয়, স্টীল কাটার কাজ।
এক ইঞ্চি কাটতেই সময় লাগল পনেরো মিনিট। মনে মনে হিসেব কষতে গিয়ে নিরাশ হলো শহীদ। মানুষ যাবার মত ফাঁক চাই। অতটা কাটতে সময় লাগবে অন্তত পাঁচ সাত ঘণ্টা। এত সময় কি দেবে শক্ররা? তাছাড়া এই স্টীলের দরজা কাটার পর সামনে আবার কিসের বাধা পাওয়া যাবে তাই বা কে জানে। তবু, অত কথা ভাবলে কোন কাজই হবে না।
কাজ করে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের লক্ষণ, ফলাফল কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে। | হঠাংহোঃ হোঃ করে হেসে উঠল প্রফেসর ওয়াই ধনভাণ্ডারের ভিতর থেকে। ব্যাপার কি? হাতের কাজ বন্ধ করে কান পাতল শহীদ। দরজার ফাঁক দিয়ে গলে দেখে আসবে নাকি একবার? পর মুহূর্তে কাজে মন বসান ও। পাগল প্রফেসর অকারণেই হয়তো হাসছে। খামোকা সময় নষ্ট করে দেখতে যাওয়ার কোন মানে হয় না। তেমন কিছু ঘটলে কুয়াশা ওকে ডাকবে ।
শহীদ। কুয়াশার ডাক। গলার স্বর শুনেই শহীদ বুঝতে পারল মারাত্মক কিছু একটা ঘটছে। প্রফেসর কোন ষড়যন্ত্র করেনি তো? শহীদের মনে প্রথমেই প্রশ্নটা দেখা
দিল।
৬২
ভলিউম ১৭
দরজার ফাঁক গলে ভিতরে ঢুকল শহীদ। ঢুকে দেখল সবাই উপর দিকে মুখ তুলে কি যেন দেখছে।
দেখছ?’ প্রশ্ন করল কুয়াশা।
শহীদ উপর দিকে তাকিয়ে দেখল স্মোক বমের ধূসর রঙের ধোয়া গোলাপি হয়ে গেছে। দ্রুত বদলাচ্ছে ধোয়ার রঙ। টকটকে লাল হয়ে উঠছে ক্রমশ।
ব্যাপারটা কি?’ শহীদ প্রশ্ন করল অবাক হয়ে।
উত্তর দিল প্রফেসর, মি, কুয়াশার স্মোক বনু থেকে বেরিয়েছে এই ধোয়া। এ এমনই ধোয়া, যে ধোয়া নিজের রঙ বদলাতে পারে। মানে, টেকনিকালার ধোয়া, বহুরূপী।’
কথাগুলো বলেই হোঃ হোঃ করে হেসে উঠল প্রফেসর ওয়াই।
থামো তুমি!’ ধমকে উঠল কুয়াশা। তাকাল সে শহীদের দিকে। বলল, শহীদ, বিপদ নেমে আসছে। শত্রুরা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। বিষাক্ত গ্যাস ছাড়ছে ওরা ওপর থেকে।’
মহুয়া কুয়াশার পাশ থেকে বলে উঠল, সে কি!’। | ভয় পাসনে বোন। গ্যাস যতই বিষাক্ত হোক, যতক্ষণ মুখোশ পরে থাকব আমরা ততক্ষণ ভয়ের কিছু নেই। | ওরা আলোচনা করছে, সেই ফাঁকে প্রফেসর ওয়াই, আবার কক্ষের দূর প্রান্তে ফিরে গেছে। তার অনুচরদের মাঝখানে বসেছে সে। তাকে প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। মাথা নিচু করে কথা বলছে সে রেডিওর সাথে। চাপা উত্তেজিত কণ্ঠে কাউকে যেন জরুরী কোন নির্দেশ দিচ্ছে সে ।
কামালের গভীর কণ্ঠস্বর শোনা গেল, কুয়াশা, ওপর দিকে চেয়ে দেখো। গ্যাস নেমে আসছে নিচের দিকে।’
সবাই আবার তাকাল উপর দিকে। সত্যিই তাই। ঘন লাল ধোয়া ধীরে ধীরে নেমে আসছে নিচের দিকে। | ‘শহীদ তোমার কাজে তুমি ফিরে যাও!’ কুয়াশা বলে উঠল। শহীদ দরজার সঁক গলে বেরিয়ে গেল কক্ষ থেকে। কুয়াশা পকেট থেকে রেডিও সেটটা বের করে মেসেজ পাঠাতে শুরু করল তার নাইজেরিয়ার আস্তানার উদ্দেশ্যে।
মুখোশ পরে থাকা সত্ত্বেও সবাই ভয় পাচ্ছে। গ্যাস নেমে আসছে নিচে। কি কম গ্যাস কে জানে। শত্রুরা হয়তো খুন করার জন্যই ছেড়েছে এই গ্যাস। গুখোশের দ্বারা কতক্ষণ ফাঁকি দেওয়া সম্ভব বিষাক্ত গ্যাসকে? চারদিকের আবহাওয়া বা বাতাস যদি বিষাক্ত হয় তাহলে কি মুখোশের সাথে ফিট করা অক্সিজেন তৈরি করার যন্ত্রটা নির্ভেজাল অক্সিজেন তৈরি করতে পারবে? না, সম্ভব নয়। তাছাড়া গ্যাসের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেলেও কি মৃত্যুকে এড়ানো যাবে? শত্রুরা নিশ্চয়ই টের পাবে, গ্যাস কোন ক্ষতিই করতে পারেনি তাদের। টের পাওয়া মাত্র তারা নতুন উপায়ে হত্যা করার ব্যবস্থা করবে। হয়তো কুয়াশার আশঙ্কা সঠিক প্রমাণিত হবে। শত্রুরা হয়তো গরম পানি ছেড়ে দেবে, ভরাট করে দেবে এই কক্ষটা। সবাইকে
মরতে হবে অসহায় অবস্থায়।
কুয়াশা ৫০
রেডিও মেসেজ পাঠাবার কাজ শেষ করে উঠে দাঁড়াল কুয়াশা। সকলের উদ্দেশ্যে বলল, সাহস হারিও না কেউ। ধোয়া নেমে আসছে, আসুক। খুব ঘন ধোয়া, সম্ভবত ঢেকে ফেলবে আমাদেরকে। পরস্পরকে হয়তো দেখতে পাব না। যাই হোক, বিচলিত না হয়ে যে যেখানে আছ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। নড়াচড়া কোরো না। শহীদ স্টীল শাটার কাটার চেষ্টা করছে। দেখা যাক কতদূর কি হয়।’
কামাল সরে এল কুয়াশার পাশে। পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে উঁচু হয়ে কুয়াশার কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে গেল সে। ফিসফিস করে জানতে চাইল,
তোমার বিমান কি আসবে আমাদেরকে উদ্ধার করতে?’
| ‘আসবে। তবে দেরি হবে। নাইজেরিয়ায় আস্তানার দায়িত্বে যে লোক আছে সে জানাল সবগুলো বিমানকেই একটা অ্যাসাইনমেন্টে পাঠিয়েছে সে। ওখানে মাত্র তিনটে বিমান আছে আমার। তিনটের মধ্যে একটা সি প্লেন। ওটাকেই পাঠাতে বলেছি।’
কতক্ষণ লাগবে বলে মনে করো? ঠিক বলতে পারছি না। তবে ঘটা ছয়েক তো লাগবেই।’ নিরাশ হলো কামাল।
কুয়াশা বলল, বিমানটা আমাদেরকে ঠিক উদ্ধার করতে আসবে না। এই রহস্যপুরী থেকে মুক্তি পেতে হবে আমাদেরকে বাইরে থেকে কোন সাহায্য না পেয়েই। বিমানটা আসবে শুধুমাত্র আমাদেরকে বয়ে নিয়ে যাবার জন্যে। রহস্যপুরীর আশেপাশে সেটা ল্যাণ্ড করবে।’
কামাল নিচু গলায় জানতে চাইল, প্রফেসর ওয়াই-এর কি খবর? সেও নিশ্চয়ই নানা রকম চেষ্টা করছে মুক্তি লাভের জন্যে?
তা করছে বৈকি। সে কি বাইরে থেকে সাহায্য পাবে?’ কুয়াশা বলল, “পাবে। তবে কি ধরনের সাহায্য তা আমি জানতে পারিনি।
উপর দিকে তাকাল কামাল। চমকে উঠল সে। ঘন লাল ধোয়া নেমে এসেছে। মাথার কাছে।
দেখতে দেখতে ওদের শরীর ঢেকে ফেলল ধোয়া। মুখোশ পরা ছিল বলে কোন অসুবিধেই হলো না ওদের। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের কাজ ব্যাহত হলো না। কিন্তু গাঢ় ধোয়ায় আধহাত দূরের জিনিসও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না ।
সবাই স্থির চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
কারও কিছু করার নেই। মিনিট পাঁচেক পর কুয়াশা কামালের হাতে অনেকগুলো ক্যাপসুল দিল। বলল, সবাইকে একটা করে ক্যাপসুল দাও। এখুনি গিলে ফেলুক সবাই একটা করে। ফুসফুসকে গ্যাসের হাত থেকে নিরাপদে রাখার
জন্যে এই ক্যাপসুল। আগে থেকে সাবধান হয়ে যাওয়া দরকার।’
কামাল ক্যাপসুলগুলো নিয়ে মহা ফ্যাসাদে পড়ল। আধ হাত দরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না। কে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে জানা নেই। তবু কাজটা করা দরকার। ডি. কস্টার নাম ধরে ডাকল ও, মি. ডি, কস্টা?
৬৪।
ভলিউম ১৭
সাড়া নেই।
বিরক্ত হলো কামাল ডি, কস্টা ইচ্ছা করে সাড়া দিচ্ছে না মনে করে। আবার ডাকল সে, মি. ডি, কস্টা!
তবু ডি. কস্টা সাড়া দিল না।
কথা বলে উঠল কয়েক হাত দূর থেকে আবিদ, কামাল ভাই, মি. ডি. কস্টা তো আমার গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল খানিক আগে। হঠাৎ সে খুব তাড়াতাড়ি ‘রে গেল কোথায় যেন।
চুলোয় যাক। আপনি আমার দিকে এগিয়ে এসে একটা হাত বাড়িয়ে দিন। একটা ক্যাপসুল দেব, খেয়ে ফেলবেন সাথে সাথে। লিজা কোথায়?’
আমার পাশেই।’ ‘ওকেও একটা দেবেন।’
আবিদ কয়েক পা এগিয়ে এল কামালের কণ্ঠস্বর লক্ষ্য করে। কামাল হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। আবিদের হাতটা স্পর্শ করল সে। দুটো ক্যাপসুল আবিদের হাতে দিয়ে মুখ খুল, মহুয়াদি।
বলো।’ ‘কোথায় তুমি?’
মহুয়া হেসে ফেলল, কোথায় তা তো ঠিক জানি না। তবে রহস্যপুরীর বন্দীখানা থেকে তোমরা এখনও আমাদেরকে মুক্ত করতে পারোনি, এটুকু জানি। আরে! দাদা! ধোয়া যেন হালকা হয়ে যাচ্ছে!
কুয়াশা বলল, হ্যাঁ। আমি বাতাসে স্প্রে করে দিয়েছি এক ধরনের রাসায়নিক তরল পদার্থ। বোয়া বা গ্যাস কিছুই থাকবে না আর।
কথা বলে উঠল ওমেনা, মি. কুয়াশা।’ ওমেনার গলায় উত্তেজনা। “কি হলো?
ওমেনা রুদ্ধশ্বাসে বলে উঠল, এই বন্দীখানার কোন একটা দরজা খুলে গেছে–মন বলছে আমার। সেই খোলা দরজা দিয়ে কেউ বা কারা যেন বেরিয়ে গেছে। কিন্তু দরজাটা ঠিক কোন দিকে তা বুঝতে পারছি না।’
কুয়াশা বলল, ধোয়া সরে যাচ্ছে দ্রুত। এখুনি জানা যাবে।
কামাল বলে উঠল, শহীদ নয় তো? ও হয়তো স্টীলের দরজা কেটে বেরিয়ে গেছে বাইরেটা দেখার জন্য।’
ধোয়া দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। পরস্পরকে আবছাভাবে দেখতে পাচ্ছে ওরা। হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন মি. সিম্পসন ।
কুয়াশা। শয়তান প্রফের ওয়াই তার দলবল নিয়ে পালিয়েছে।
কামালের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর শোনা গেল পরক্ষণে, সর্বনাশ! স্বর্ণ বোঝাই বস্তাগুলোও নেই দেখছি!
| ওমেনা বলল, “ওই যে, ওই যে-হাঁ হাঁ করছে একটা দরজা। ওই পথেই পালিয়েছে ওরা।’
কিন্তু ডি, কস্টা কোথায় গেল?
৫–কুয়াশা ৫০
সত্যিই তো! ডি. কস্টাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন? কুয়াশা ভারি কণ্ঠে ডেকে উঠল, শহীদ!’ একমুহূর্ত পরই শহীদ কক্ষে প্রবেশ করল। ‘প্রফেসর পালিয়েছে, কেমন? জানতে চাইল শহীদ।
কুয়াশা বলল, হ্যাঁ। পালিয়ে গেছে। কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায়? আমি সেকথা ভাবছি না, শহীদ। ভাবছি ম্যাটাবরের কথা। শহীদ, খোলা দরজাটা পরীক্ষা করো একবার।
হাঁ হাঁ করছে দরজাটা। শহীদ ও কামাল দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। পরীক্ষা করতে হলো না, দেখেই যা বোঝবার বুঝে নিল ওরা।
‘ভ্যানিশিং রে-র দ্বারা দরজার কবাট দুটো গায়েব করে দেয়া হয়েছে। তারমানে, ম্যাটার মরেনি। নেকড়েদের কবল থেকে বেঁচে গেছে সে।
কুয়াশা ওদের পিছন থেকে বলে উঠল, হ্যাঁ। ম্যাটারই ভ্যানিশিং রে ব্যবহার। করে রহস্যপুরীর দরজা একটার পর একটা অদৃশ্য করে দিয়ে এখানে এসেছিল। প্রফেসর রেডিওর মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছিল তার সাথে সারাক্ষণ। ধোয়া আমাদের সবাইকে ঢেকে ফেলায় সুযোগটা পায় সে পালাবার।’
শহীদ বলল, সবাই তৈরি তো? এখনও বেশিদূরে যেতে পারেনি শয়তানটা। পিছু ধাওয়া করলে ধরা অসম্ভব হবে না।
কুয়াশা বলল, চলো সবাই।’ খোলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে এল সবাই বাইরের করিডরে।
সবার আগে কুয়াশা এবং শহীদ। ওদের পিছনে মহুয়া, ওমেনা, লিজা, আবিদ। সবার পিছনে রিভলভার হাতে কামাল এবং মি. সিম্পসন।
ছুটছিল ওরা। সবাইকে উত্তেজিত দেখাচ্ছে। কিন্তু কুয়াশা একেবারেই শান্ত। শহীদও অচঞ্চল।
হঠাৎ থমকে দাঁড়াল ওরা দুজন। কান পেতে কি যেন শোনার চেষ্টা করছে দুজনেই।
প্রথম মুখ খুলল শহীদই, কোথাও যেন কে চিৎকার করছে, তাই না কুয়াশা? তোমার শ্রবণশক্তি তো সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। বলতে পারো
কে চিৎকার করছে?
চিন্তার কয়েকটা রেখা ফুটে উঠেছে কুয়াশার প্রশস্ত, চকচকে কপালে। মুখ খুলল সে, পারি। ডি. কন্টার গলা ওটা।’
দেরি করা উচিত হচ্ছে না•••।’ ছুটল শহীদ। ছুটল কুয়াশা। ছুটল আবার সবাই ওদের পিছু পিছু।
পাঁচ ছুটতে ছুটতেই শহীদ জানতে চাইল, কুয়াশা, তখন তুমি বললে প্রফেসর খুব বেশি
ভলিউম ১৭
দূর যেতে পারেনি। কথাটার অর্থ? :
কুয়াশা বলল, অপেক্ষা করো। দেখতে পাবে।’
পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে ডি. কস্টার তীক্ষ্ণ সরু কণ্ঠের আর্তচিৎকার। কেউ যেন ভয় দেখাচ্ছে বা ভূতের দল ঘিরে ধরেছে তাকে, তাই চেঁচাচ্ছে, হেল্প মি! হেল্প মি! আর পারিটেছি না। ফর গডস সেক, যুডটে জিটিয়াও হারিয়া যাইবার সম্ভাবনা ডেকা ডিটেছে। হেল্প মি! হেপি মি!
করিডরের শেষ মাথায় আবার একটা দরজা। সেটার কবাট দুটোও ভ্যানিশিং রে-এর সাহায্যে অদৃশ্য করে দেয়া হয়েছে। তীর বেগে দরজা অতিক্রম করে একটি প্রশস্ত করিডরে পৌঁছল ওরা। ডি. কস্টার চিৎকার ভেসে আসছে ডানদিক থেকে।
ছুটল ওরা সেদিকে। সামনেই একটা বাক। বাঁক ঘুরতেই ডি কস্টাকে দেখা গেল।
সবাইকে ছুটে আসতে দেখে ডি, কস্টা উল্লাসে গর্জে উঠল, “জিটিয়া গিয়াছি। মাই গড়, জিটিয়া গিয়াছি।’
কথা শেষ করে ডি, কস্টা ম্যাটাবর ম্যাটচেক মন্টোগোমারীর বাঁ হাতটা আরও জোরে সর্বশক্তি দিয়ে মুচড়ে দিল।
অসহনীয় ব্যথায় ককিয়ে উঠল ম্যাটাবর।
ওদের দুজনকে ঘিরে দাঁড়াল সবাই। হড়বড় করে কথা বলতে শুরু করল ডি, কস্টা। তার কথা শুনে পরিষ্কার হয়ে গেল রহস্যটা।
প্রফেসর পালাবে এই রকম একটা সন্দেহ ডি. কস্টা আগেই করেছিল। কুয়াশা যখন তাকে নির্দেশ দেয় প্রফেসরের মুকুটে মিনি ট্রান্সমিটার যন্ত্রটা রেখে আসার জন্য তখনই সন্দেহটা জাগে তার মনে। তারপর থেকে সে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে শুরু করে প্রফেসর আর তার অনুচরদের উপর। প্রফেসরের একজন অনুচরের কাছাকাছি ছিল সে সব সময়। ধোয়ায় যখন বন্দীখানাটা ঢাকা পড়ে গেল তখন ডি. কস্টা সেই অনুচরটির শার্টের একটা কোনা ধরে ফেলে। কয়েক মুহূর্ত পরই অনুচরটি পা বাড়ায়। ডি, কস্টাও আলতোভাবে তার শার্টের প্রান্ত ধরে রেখে তার পিছু নেয়।
বন্দীখানা থেকে বেরিয়ে ডি. কস্টা অবশ্য আত্মগোপন করে ওদেরকে অনুসরণ করতে শুরু করে। প্রফেসর এবং তার অনুচরবৃন্দ আগে আগে যাচ্ছিল। পিছনে ছিল ম্যাটাবর।
একটার পর একটা করিডর অতিক্রম করে প্রফেসর দলবল নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে দেখে ডি. কস্টা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। খানিক পরেই সে দেখতে পায় প্রফেসর এবং তার দলবল অনেক আগে এগিয়ে গেছে, দেখাই যাচ্ছে না তাদের কাউকে, পিছনে রয়েছে শুধু ম্যাটাবুর।
ম্যাটাবরের পিছিয়ে পড়ার কারণ ছিল। তার সারা শরীরে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন। একটা পায়ের হাঁটুর উপরের মাংস নেই পোয়াটেক। হাঁটতে বড় কষ্ট হচ্ছিল তার।
ম্যাটাবরের দুর্বলতার সুযোগটা গ্রহণ করে ডি. কস্টা। পিছন থেকে লাফিয়ে
কুয়াশা ৫০
৬৭
পড়ে সে.ম্যাটাবরের বাঁ হাতটা ধরে ফেলে। হাতটা মুচড়ে ধরে সে চলে আসে মটাবরের পিছনে।
ম্যাটাবর প্রাণপণ চেষ্টা করছিল ডি কস্টার হাত থেকে মুক্তি পাবার। ডি. কস্টার চেয়ে চারগুণ বেশি শক্তি তার শরীরে। ভয়ানক ভাবে আহত হলেও ডি. কস্টার মত দুচারজন লোককে এখনও সে একা ধরাশায়ী করার ক্ষমতা রাখে।
কিন্তু ডি. কস্টা কৌশলে বাজীমাত করে। ম্যাটাবরের হাতটা এমন কায়দায় মুচড়ে ধরে সে যে প্রচণ্ড ব্যথায় জ্ঞান হারাবার মত অবস্থা দাঁড়ায় তার।
তীব্র যন্ত্রণায় নীল হয়ে গেছে ম্যাটাবরের ফর্সা মুখটা। আহ! ছেড়ে দিন ওকে!! কামাল বলে উঠল, প্রফেসর দলবল নিয়ে কোন্ দিকে গেছেন বলুন তো?’
শহীদ বলল, আমার সাথে এসো সবাই। কামাল, ডি. কস্টার সাহায্যে তুই, ম্যাটাবরকে বেঁধে নিয়ে আয়।’
কুয়াশা কোথায়! এদিক ওদিক তাকিয়ে জানতে চাইল কামাল। পকেট থেকে একটা নাইলনের কর্ড বের করল সে।
শহীদ বলল, কুয়াশা করিডর ধরে সোজা চলে গেছে ওদিকে। আমিও যাচ্ছি। তোরা আয় ম্যাটাবরকে নিয়ে।
বাধা দিল শহীদকে ওমেনা, ‘মি. শহীদ, যাবেন না ওদিকে। মি. কুয়াশা বিপদে পড়তে যাচ্ছেন, পরিষ্কার বুঝতে পারছি আমি। ওদিকে এখন যে যাবে সে-ই বিপদে পড়বে।’
“কি ধরনের বিপদের কথা বলছ তুমি?’ ‘তা ঠিক জানি না। হয়তো কেউ ফাঁদ পেতে রেখেছে।’
কামাল বলল, ‘অসম্ভব নয়। প্রফেসরের কাছে ভ্যানিশিং রে যন্ত্রটা আছে। কথাটা আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়।’
| ‘কিন্তু কুয়াশা বিপদে পড়বে জানতে পেরেও আমরা নিষ্ক্রিয় থাকব বলতে চাস? অসম্ভব।
শহীদ দ্রুত পা বাড়াল।
ওমেনা তার পিছু নিল সাথে সাথে। বলল, “ভেবে দেখুন আর একবার, মি. শহীদ। মি. কুয়াশা বিপদে পড়েছে বলে তার সাথে সবাইকে বিপদে পড়তে হবে, এরকম ভাবা উচিত নয়। আমরা বিপদের বাইরে থাকলে বরং মি. কুয়াশারই উপকার হবে। তাকে বিপদ থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে পারব।’
| শহীদ বলল, তোমার যুক্তিটাও অগ্রাহ্য করার মত নয়। কিন্তু কুয়াশা কি ধরনের বিপদে পড়তে পারে তা তো তুমি বলতে পারছ না। ধরো, প্রফেসর ওয়াই বা আর কেউ যদি তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে? অঘটন একটা ঘটে গেলে কি করব তখন আমরা?’
ওমেনা আর কথা বাড়াল না।
করিডর ধরে ছুটছে ওরা। সকলের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। কয়েকবার বাক ঘুরে সরু একটা প্যাসেজে পৌঁছুল ওরা। শেষ প্রান্তে একটা দরজা। দরজা অতিক্রম
৬৮
ভলিউম ১৭
করে প্রশস্ত একটা করিডর আবার। করিডরের দুই পাশে কয়েক হাত পর পর বড় বড় দরজা।
সবগুলো দরজাই বন্ধ মনে হচ্ছে।
করিডরের মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে প্রফেসর ওয়াই এবং তার অনুচরবৃন্দ।
কুয়াশাকে দেখা যাচ্ছে। প্রফেসরের শরীর হাতড়ে ব্যর্থ হয়েছে সে। পায়নি ভ্যানিশিং রে যন্ত্রটা। অনুচরদের প্যান্ট-শার্টের পকেটগুলো পরীক্ষা করছে সে ব্যস্ততার সাথে।
‘এদের এ অবস্থা হলো কিভাবে?
শহীদের প্রশ্ন শুনে মুখ না তুলেই কুয়াশা উত্তর দিল, যে মুখোশগুলো প্রফেসর এবং তার দলের লোকদের দিয়েছিলাম সেগুলো বিশেষভাবে তৈরি। শত্রুদের উদ্দেশ্যেই তৈরি করা ওগুলো। অক্সিজেন তৈরি করার যে যন্ত্রটা মুখোশের সাথে ফিট করা আছে সেটা নির্দিষ্ট কিছু সময় পর অক্সিজেনের বদলে এক ধরনের বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করতে শুরু করে। এই গ্যাস ফুসফুসে প্রবেশ করলেই জ্ঞান লোপ পায়। প্রফেসর এবং তার দলের লোকেরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু শহীদ, ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা ম্যাটাবরের কাছে পাওনি, তাই না? প্রফেসরের কাছেও নেই। গেল কোথায় সেটা?’ সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াল কুয়াশা। হঠাৎ কঠিন আকার ধারণ করল তার মুখের চেহারা।
বুঝেছি। শহীদ, আমি এখানে পৌঁছবার আগেই কেউ এসেছিল। নিশ্চয়ই এই রহস্যপুরীর শয়তানের দলের কাণ্ড! তারাই ভ্যানিশিং রে-র যন্ত্রটা সরিয়ে ফেলেছে।’
সর্বনাশ! ওমেনা সভয়ে বলে উঠল। শহীদ বলল, ‘নিশ্চয়ই তারা লক্ষ্য রাখছে আমাদের ওপর।
ওমেনা বলল, “শুধু লক্ষ্যই রাখছে না। আমার ধারণা তারা ঘিরে রেখেছে চারদিক থেকে আমাদেরকে।
কামাল এবং ডি. কস্টাকে দেখা গেল এগিয়ে আসছে। তাদের সাথে হাত বাধা অবস্থায় ম্যাটাবরকে দেখা যাচ্ছে।
এমন সময় একটি বন্ধ দরজার ভিতর থেকে বজ্রকণ্ঠে গর্জে উঠল একজন লোক, ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা এখন আমাদের দখলে। এটা একটা যুগান্তকারী অস্ত্র। আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সব অস্ত্রই এর কাছে খেলনা বিশেষ। বুঝতেই পারছ। তোমরা, যে কোন মুহর্তে তোমাদের সবাইকে খতম করে দিতে পারি। কিন্তু সে রকম ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা সবাই নিয়ম-কানুনের পূজারী। তোমাদের কপালে যাই ঘটুক, আমাদের ৰীতি-পদ্ধতি অনুযায়ী ঘটবে। তবে, তোমরা যদি কোন রকম কৌশল খাটাবার চেষ্টা করো তাহলে আলাদা কথা। টের পাওয়া মাত্র সবাইকে হত্যা করব আমরা। ভালয় ভালয় হাতের খেলনা অস্ত্রগুলো ফেলে দাও ছুঁড়ে। তারপর মাথার ওপর হাত তুলে দাঁড়াও। তোমরা আমাদের বন্দী, এটা স্বীকার করে নাও। তাতে তোমাদের ভালই হবে।
কুয়াশা ৫০
কুয়াশার দিকে তাকাল শহীদ ও কামাল।
মি, সিম্পসন রিভলভার তুললেন দরজার দিকে। ওই দরজার ভিতর থেকেই ভেসে আসছিল শত্রুর কণ্ঠস্বর।
| কুয়াশা বলে উঠল, “গুলি করে নিজেদের বিপদ বাড়িয়ে লাভ কি? আত্মসমর্পণ করাই আপাতত বুদ্ধিমানের কাজ হবে, মি. সিম্পসন।
ফেলে দিল ওরা যে-যার হাতের অস্ত্র। তারপর মাথার উপর হাত তুলে দিল নিঃশব্দে।
ওমেনার অনুমান মিথ্যে নয়। শত্রুরা আসলেই ওদেরকে ঘিরে রেখেছিল চারদিক থেকে। | করিডরের দুই দিকের দুই বাঁক থেকে এগিয়ে এল স্টেনগানধারী একজন সেন্ট্রি।
| করিডরের দুই পাশের চারটে দরজা খুলে গেল একযোগে। বেরিয়ে এল দুজন করে সশস্ত্র লোক। তাদের একজনের হাতে দেখা যাচ্ছে ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা।
লোকটা বলে উঠল, ‘আমার নাম অ্যাংগেনা। জংলীদের কাছে আমি একজন দেবতা হিসেবে পরিচিত। আসলে আমি দেবতা নই। দেবতা রোটেনহেপো হেমনোসান ক্যান ক্যান-এর নগণ্য সেবক আমি।’
| কুয়াশা কঠোর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে অ্যাংগেলার দিকে। গর্জে উঠল সে, ‘থামাও তোমার লেকচার। আমার প্রশ্নের উত্তর দাও আগে। জানতে চাই, তোমাদের নেতা কে?’
| আমাদের নেতা থাকেন আমেরিকায়। রহস্যপুরীতে যারা আছে তাদের নেতা আমিই।’
কুয়াশা আরও কঠোর হলো, ‘তোমরা আমাদের বিচার করতে চাও। সে অধিকার তোমাদেরকে কে দিয়েছে?
অ্যাংগেলা ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটার ব্যারেল ধরে রেখেছে কুয়াশার বুক লক্ষ্য করে।
‘রহস্যপুরীর সর্বময় কর্তা আমরা। এটা আমাদের সম্পত্তি। আমরা দেবতা রোটেনহেপো হেমনোসান ক্যান ক্যান-এর সেবক, পূজারী। এই রহস্যপুরীর পবিত্রতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের ওপর। আপনারা রহস্যপুরীর পবিত্রতা নষ্ট করেছেন। সুতরাং আমরা আপনাদের বিচার করব না তো করবে কে?’
হাঃ হাঃ করে অট্টহাসিতে ভেঙে পড়ল কুয়াশা। চমকে উঠল অ্যাংগেলা। | হাসি থামিয়ে কুয়াশা বলল, চমৎকার, চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছ। জংলীদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তাদের সঞ্চয় করা লক্ষ লক্ষ ডলার মূল্যের স্বর্ণ আদায় করছ বছরের পর বছর ধরে আফ্রিকার এই দুর্গম এলাকার অভ্যন্তরে নিরাপদ রহস্যপুরীতে বসে। বিদেশে পাচার করছ সেই স্বর্ণ। পরিশ্রম নেই, চেষ্টা নেই–আপনা আপনি মণ মণ স্বর্ণ আসছে, তা বিক্রি করে কোটি কোটি ডলার রোজগার করছ–অদ্ভুত!
৭০
ভলিউম ১৭
ভেবেছিলে চিরকাল এমনি চলবে, তাই না? হাঃ হাঃ হাঃ! বিচার করো আর যাই করো, তোমাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। আমার হাতেই তোমাদের ধ্বংস ঘটবে। চেনো আমাকে? আমার নাম কুয়াশা। অত্যাচারীর, মিথ্যাবাদীর, শোষকের এবং অপরাধীর যম আমি। এরা আমার আজন্মের শত্রু। শত্রুকে আমি ক্ষমা করতে জানি না। বিচার করবে? বেশ, চলো। দেখি তোমাদের বিচার আমাকে কি শাস্তি দেয়।’
অ্যাংগেলা ঢোক গিলল। সে তার সহকারীদের উদ্দেশ্যে বলল, বন্দীদেরকে বাধে। পিছমোড়া করে বেধে ফেলো প্রত্যেকের হাত।’
এমন সময় মেঝেতে শোয়া অবস্থা থেকে তড়াক করে লাফিয়ে সিধে হয়ে পঁড়িয়ে পড়ল প্রফেসর ওয়াই। জ্ঞান ফিরে এসেছে তার এবং তার অনুচরবৃন্দের।
| ষড়যন্ত্র! মস্ত যড়যন্ত্র! মি. কুয়াশা, এই ষড়যন্ত্রের হোতা আপনি। মুখোশের সাথে আপনি গ্যাসের ব্যবস্থা রেখেছিলেন। সেই গ্যাসের কবলে পড়ে আমরা জ্ঞান হারাই। আপনি বড় বেশি কৌশল দেখাতে শুরু করেছেন। এর শাস্তি আপনাকে পেতে হবে। আমার নাম প্রফেসর ওয়াই, আমি আপনাকে দেখে নেব!’
কুয়াশা মৃদু শব্দে হেসে উঠল। বলল, কিন্তু আমাদের মধ্যে মৌখিক একটা চুক্তি হয়েছিল, মনে নেই বলি? একদল আর এক দাকে ছেড়ে পালাবার চেষ্টা করবে না এই রকম একটা শর্ত ছিল না? আপনি কি সেই শর্ত মেনে চলেছেন?’
| প্রফেসর গর্জে উঠল, ওসব কথা আমি শুনতে চাই না। চুক্তি, শর্ত–এসব আবার কি? সুযোগ পেলে কে ছাড়ে শুনি? আমার সহকারী পালাবার রাস্তা তৈরি করল, সেই রাস্তা আপনাকে ব্যবহার করতে দেব কেন নি? আপনি কি আমার শত্রু নন? আপনি কি আমার আদর্শের ঘোর বিরোধী নন?’
কুয়াশা বলল, তোমার মত নীতিহীন শয়তান ত্রিভুবনে আর একটিও নেই, ওয়াই। যাক, এ প্রসঙ্গে আমি আর কথা বলতে চাই না।’
তা না চাইলে কিছুই হবে না আমার। তবে মনে রাখবেন, শাস্তি আপনাকে আমি দেবই।’
কুয়াশা হাসতে হাসতে বলল, বেশ তো। কে কাকে শাস্তি দিতে পারে তা সময় এলেই দেখা যাবে।’
দাঁতে দাঁত চেপে প্রফেসর ওয়াই গর্জে উঠল, ‘ঠিক আছে। দেখা যাবে। প্রস্তুত থাকবেন।’
স্টেনগানের নল চারদিকে। পিছনে অ্যাংগেল। তার হাতে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্র। করিডরের পর করিডর ধরে হাঁটছে ওরা। কুয়াশা, প্রফেসর ওয়াই, শহীদ, মি. সিম্পসন, কামাল, ডি, কল্টা, আবিদ এবং প্রফেসর ওয়াইয়ের দলের প্রত্যেকটি লোকের হাত পিছমোড়া করে বাধা। মেয়েদের হাত বাধা হয়নি অজ্ঞাত কোন কারণে।
প্রশস্ত একটা জায়গায় এসে থামল সবাই। দেখা যাচ্ছে সিঁড়ির অস্বাভাবিক লম্বা ধাপ। অ্যাংগেলার নির্দেশে সেদিকে আবার পা বাড়াল সবাই।
সিঁড়ি বেয়ে প্রকাণ্ড একটা চত্বরে উঠে এল সবাই। মাঝখানে একটা কূয়া।
Fয়াশা ৫০
৭১
কৃয়ার চারপাশে গোলাকার উঁচু দেয়াল। কৃয়ার মুখে মস্ত একটা ঢাকনা, ঢাকনাটা ঝুলছে সিলিংয়ের সাথে আটকানো লোহার শিকলের সাহায্যে। কূয়াটা চিনতে পারল ওরা। এই কূয়ার নিচেই ধনভাণ্ডার, ওরা যে ধনভাণ্ডারে বন্দী হয়ে ছিল।
প্রকাণ্ড চত্বরের আর এক প্রান্তে বিস্ময়কর একটা মূর্তি। মূর্তিটা সম্পূর্ণ ব্রোঞ্জের। হাঁটু মুড়ে বসে আছে সর্বকালের সর্ববৃহৎ মূর্তিটা।
| মূর্তিটার মুখের দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে চেয়ে রইল সবাই। অপূর্ব সৃষ্টি। মূর্তি বলে মনেই হয় না। চোখ দুটোর মণি নীল। সম্ভবত নীলকান্ত মণি। টিকালো নাক। চওড়া কপাল। একমাথা ঝাকড়া চুল। মুখটা ভয়ঙ্কর সজীব। তাকিয়ে থাকতে থাকতে সকলেরই মনে হলো, এই বুঝি মস্ত মাথাটা নেড়ে কথা বলে উঠবে মূর্তিটা বা হাসিটা আরও বিস্তৃত হয়ে উঠবে।
মূর্তির পাদদেশে জমাট বাঁধা প্রচুর রক্ত দেখা যাচ্ছে। রক্তের উপর পড়ে রয়েছে চারটি নর মুণ্ড। দৃশ্যটা বীভৎস, ভয়ঙ্কর।
মহুয়া ডকুরে কেঁদে উঠল। মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকাল লিজা। | অ্যাংগেলা কথা বলে উঠল, এই মর্তির সামনে আপনাদের বিচার হবে। আমি আশা করব বিচারের রায় মেনে নেবেন আপনারা। বিচার কার্য শেষ হবার আগে কেউ কোন রকম কৌশল খাটাবার চেষ্টা করবেন না। তেমন কিছু করলে আমরা খুন করার জন্য ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রের বোতামে চাপ দেব। সুতরাং, সাবধান।
| অ্যাংগেলা তার একজন সহকারীর হাতে ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা দিয়ে তার কানে কানে কিছু বলল। সহকারী মাথা নাড়ল ঘন ঘন।
অ্যাংগো বলল কুয়াশাদের উদ্দেশ্যে, আপনারা অপেক্ষা করুন। আমি বিচার অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার জন্য যাচ্ছি। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসব।’
দ্রুত পায়ে চত্বর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে একটি দরজা পথে অদৃশ্য হয়ে গেল অ্যাংগেলা ।
ছয়।
অ্যাংগেলা মিটিংরামে প্রবেশ করে দেখল তার দেড় ডজন সহকারী স্ব স্ব আসনে অধীর অপেক্ষায় বসে আছে।
সভাপতির আসনে গিয়ে বসল অ্যাংগেনা।
সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা জানতে চাই।’ কথা বলে উঠল রাঙাচা পাংশি।
সভাপতি অ্যাংগেলা বলল, আমাদের এই বৈঠক মাত্র পাঁচ মিনিট স্থায়ী হবে। আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব। সর্বশেষ পরিস্থিতি আমার সম্পূর্ণ আয়ত্তে এবং অনুকূলে। বন্দীদেরকে জড়ো করা হয়েছে দেব-মূর্তি রোটেনহেপো হেমনোসান ক্যান ক্যান-এর সামনে। শত্রুদের বিস্ময়কর মারণাস্ত্র ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটাও এখন আমাদের দখলে।
৭২
ভলিউম ১৭
মোটকথা, সবই ঠিকঠাক আছে। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি এই কথা ভেবে যে শত্রুদের দুই নায়ক প্রফেসর ওয়াই এবং কুয়াশা পারে না এমন কাজ নেই। কুয়াশা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে আমাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবে নিজের হাতে।
আমি জানি, ফালতু কথা বলার লোক সে নয়। ভয় পাচ্ছি সেজন্যেই।
অ্যাংগেলা থামল। একজন প্রশ্ন করল, সমস্যার সমাধানের কথা কিছু ভেবেছেন কি?
ভেবেছি। আগে ভেবেছিলাম জংলীদের প্রতিনিধির সামনে ওদের বিচার করা হবে। কিন্তু এখন ভেবে দেখছি, তাতে সময় লাগবে আরও। আমি আর মোটেই সময় নষ্ট করতে চাই না। কুয়াশা এবং প্রফেসর ওয়াই যতক্ষণ বেঁচে আছে ততক্ষণ আমরা প্রকৃতপক্ষে নিরাপদ নই। আমার মতে, কালবিলম্ব না করে ওদের সবাইকে। মৃত্যুদণ্ড দেয়া হোক। জলংনীদের মধ্যে যদি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে ভেবেচিন্তে একটা উপায় বের করা যাবে। জংলীরা কোনমতেই বড় ধরনের কোন সমস্যার সৃষ্টি করবে বলে মনে হয় না। তোমরা কি মনে করো?
আপনার কথাই ঠিক।’ সকলে সমস্বরে বলে উঠল। বন্দীদেরকে হত্যা করাই হোক তাহলে?’ ‘হত্যা করাই হোক।’ ‘গুড। আজকের মত সভার কাজ শেষ হলো।’ মিটিংরুম থেকে বেরিয়ে গেল সবাই দলবদ্ধ ভাবে।
দেবমূর্তি রোটেনহেপো হেমনোমান ক্যান ক্যান-এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা সবাই নিশ্চল পাথরের মত। প্রফেসর ওয়াই চেয়ে আছে দেব-মূর্তির চোখ দুটোর দিকে নিস্পলক নেত্রে। রহস্যময় একটুকরো হাসি তার ঠোঁটে ফুটে উঠেই শিলিয়ে গেল।
দেব-মূর্তির চোখ দুটো নীল। মহা মূল্যবান নীলকান্ত মণি ও দুটো। কয়েক কোটি টাকার জিনিস, সাত রাজার ধন ।
‘মি, কুয়াশা!’ প্রফেসর ওয়াই কুয়াশার দিকে ফিরল । কুয়াশা নিচু স্বরে কথা বলছিল শহীদের সাথে। প্রফেসরের দিকে ফিরল সে। বলো।’
প্রফেসর হাসছে। বন্ধুত্বের হাসি। বলল, ‘যা হবার হয়ে গেছে। আসুন সব কথা ভুলে যাই আমরা।’
কুয়াশা কথা বলল না।
রাজকুমারী চট করে বলে বসল, কিন্তু আপনার মনের কথা তো ওটা নয়। আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি, আপনি মিথ্যে কথা বলতে চাইছেন। আপনার উদ্দেশ্য বন্ধুত্বের অভিনয় করে সুযোগ মত বেঈমানি করা।
* প্রফেসর ওয়াই চটল না। কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইল সে রাজকুমারীর দিকে। সে জানে, মানুষের মনের খবর চেষ্টা করলে বলে দিতে পারে রাজকুমারী।
রাজকুমারী, তোমার গুণের তুলনা হয় না, জানি আমি। কিন্তু তোমার গুণ
য়াশা ৫০
৭৩
আছে বলেই তার অপব্যবহার করবে নাকি? বাজে কথা বোলা না, সাবধান করে দিচ্ছি, বুঝলে! তুমি খুব ভাল করেই জানো আমি আমার অন্তর থেকে চাইছি মি. কুয়াশার বন্ধুত্ব। শুধু তাই নয়, আমি মি, কুয়াশাকে সাথে নিয়ে কাজও করতে চাই। অসাধারণ ব্রেন ওঁর। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আমরা দুজন একসাথে কাজ করলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যাবে।’, কুয়াশা বলে উঠল, “থাক ওসব কথা। তুমি তো জানোই, তোমার নীতিহীনতার জন্যই আমি তোমাকে ভাল চোখে দেখি না। তোমার মধ্যে সব গুণ আছে, গুণের চেয়ে বেশি আছে অসাধারণ বুদ্ধি এবং ক্ষমতা কিন্তু সবচেয়ে যেটা বেশি প্রয়োজন সেটা তোমার মধ্যে এক বিন্দুও নেই। মানবতা নেই যার সে আমার শত্রু। তোমার মধ্যে মানবতা নেই।
| এ আপনার অযৌক্তিক কথা। মানবতা নেই একথা আপনি প্রমাণ করতে পারবেন? স্বীকার করি, মানুষকে খুন করতে হয় আমাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন খুন করি? খুন করি বিজ্ঞানের সাধনা করার জন্য। এই পৃথিবীর মানুষকে আমি নিখুঁত দেখতে চাই। যে মানুষ মরবে না, যার দুঃখবোধ থাকবে না, যার রাগ-শোকের বালাই থাকবে না, যার মধ্যে হিংসা, ক্রোধ, লোভ, খারাপ গুণ কিছুই থাকবে না। মানুষের সমাজ হবে শান্ত, নিরুপদ্রব, উন্নত। আপনি কি চান না এই রকম একটা সমাজ? আপনি কি স্বীকার করেন না আমি মানুষকে ভালবাসি বলেই এই রকম একটা সমাজ গঠনের জন্য কাজ করছি?’
কুয়াশাকে গভীর দেখাচ্ছে। মানুষকে তুমি যেমন দেখতে চাও, তুমি নিজে কি ঠিক সেই রকম হতে পেরেছ?
‘পারিনি।’
কুয়াশা বলল, আর পারবেও না। ভারসাম্যের অভাব আছে তোমার মধ্যে। নিজেকে না শুধরে বড় বড় কথা চিন্তা করার কোন অর্থ হয় না। তোমার প্রত্যেকটা কাজ পরস্পরবিরোধী।
প্রফেসর ওয়াই হঠাৎ হেসে উঠল। বলল, ঠিক আছে, তমি কথা দিচ্ছি, ভেবে দেখব নিজেকে শুধরে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব কিনা। যদিও জানি নীতি মেনে চলা বড় কঠিন কাজ। তাই এখনই আমি কোন কথা দিচ্ছি না। এখন আমাদের সামনে বিপদ। জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে। আসুন, আমরা বন্ধুর মত একত্রিত হই, আঘাত হানি শত্রুর উপর। শত্রুদেরকে ধ্বংস করে…’ | কুয়াশা বলল, তোমার বন্ধুত্ব ছাড়াই আমরা শত্রুদেরকে ধ্বংস করব। ওদের হাতে বন্দী হয়েছি তোমারই দোয়ে। ভ্যানিশিং-রে এখন ওদের হাতে। খুবই জটিল হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি। তবু, শেষ পর্যন্ত বিজয় আমাদের হবেই। হয়তো, আমাদের দুএকজন নিহত হবে শত্রুদের সাথে যুদ্ধে·••|
আপনি কি আমার সহযোগিতা গ্রহণ করতে রাজি নন?’ | কুয়াশা হাসল, রাজি নই বলা ঠিক হবে না। আমার কথা হলো, সত্যিই যদি বন্ধুত্ব চাও তাহলে এসো, শত্রুর বিরুদ্ধে একসাথে লড়ি। কিন্তু বন্ধুত্বের সুযোগে যদি বেঈমানি করার ইচ্ছা থাকে তাহলে••।’
ভলিউম ১৭
৭৪
বিশ্বাস করুন, কোন বদ উদ্দেশ্য আমার মধ্যে নেই।’
বেশ। কাছে এসো, পরামর্শ দিই কিছু।’
প্রফেসর ওয়াই কুয়াশার কাছে এসে দাঁড়াল। কুয়াশা নিচুস্বরে কথা বলতে নাগল।
একটু পরই চত্বরে উঠে এল অ্যাংগেলা। তার সাথে দেড় ডজন সহকারী। প্রত্যেকে মুখোশ পরিহিত। প্রত্যেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র।
‘এত জানোয়ার বাস করে এখানে!’ সকৌতুকে বলে উঠল শহীদ।
অ্যাংগেলা কুয়াশা এবং প্রফেসর ওয়াইয়ের দিকে তাকাল পালাবদল করে। তারপর বিশাল দেব-মূর্তির দিকে এগোল দৃঢ় পায়ে। তার পিছু পিছু চলল
সহকারীরা।
হঠাৎ থমকে দাঁড়াল অ্যাংগেলা। সহকারীকে দিয়ে যাওয়া ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা হাত বাড়িয়ে নিল। দেব-মূর্তির কোলের কাছে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াল সে।
শহীদ ফিসফিস করে কথা বলে উঠল, ‘কুয়াশা! ওরা আমাদেরকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওদের হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে ব্যাপারটা!
রাজকুমারী নিচু গলায় বলল, হ্যাঁ। আমিও বুঝতে পারছি।
অ্যাংগেলার কণ্ঠস্বর শোনা গেল, আমরা কোন রকম ঝুঁকি নিতে চাই না। সবাই পিছন ফিরে দাঁড়াও!’
ঠিক সেই সময় ঘটনাটা ঘটল।
প্রফেসর ওয়াই হঠাৎ চিৎকার করে উঠল। পর মুহূর্তে পড়ে গেল মেঝেতে। মেঝেতে পড়ে কৈ মাছের মত লাফাতে লাগল। কি হলো কি হলো বলে কামাল লাফ দিয়ে কাছে গিয়ে প্রফেসরের কাছে বসে পড়ল। এবং একই সময় চিৎকার করে উঠল শহীদ।
| প্রফেসরের কাণ্ড দেখে শত্রুরা বিমূঢ় হয়ে পড়েছিল। ব্যাপারটা কি তা টের পাবার আগেই শহীদের চিৎকার শোনা গেল।
অ্যাকশন!’
সেই একই সময় বিদ্যুৎ খেলে গেল কুয়াশার শরীরে। ডাইভ দিল কামাল। রাজকুমারী চোখ বুজে নিজের দেহের চারদিকে সাব সোনিক র্যাডিয়েশন আমদানী করার জন্য ধ্যানমগ্ন হলো। মহুয়া একজন শত্রুর ঘাড়ে কারাতের কোপ বসিয়ে দিল প্রাণপণ শক্তিতে। আবিদ এবং লিজা লাফিয়ে পড়ল নিকটস্থ শত্রুর উপর।
এবং শহীদ পকেট থেকে একটা গ্রেনেড বের করে দাঁত দিয়ে খুলল পিনটা, তারপর ছুঁড়ে দিল এক প্রান্তে। একই সাথে ছো মেরে কেড়ে নিল একজন শত্রুর একটি রিভলভার।
শত্রুপক্ষও কম যায় না।
অ্যাংগেলা সত্তৰ্কই ছিল। কুয়াশাকে বিদ্যুৎবেগে নড়ে উঠতে দেখেই পলকে সরে গেল সে, চেপে ধরল ভ্যানিশিং রে-এর বোতাম।
অদৃশ্য হয়ে গেল কুয়াশার পিছনে দাঁড়ানো ডি কস্টার টুপিটা। লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে অ্যাংগেলার। কুয়াশার গায়ে লাগেনি রে।
কুয়াশা ৫০
৭৫
কিন্তু ডি কস্টা সটান পড়ে গেল মেঝেতে। নিঃসাড় পড়ে রইল তার দেহ।
অ্যাংগেলা ব্যর্থ হলেও, তার সহকারীরা ব্যর্থ হয়নি। তিনচারজনের হাতের আগ্নেয়াস্ত্র গর্জে উঠল একযোগে। কুয়াশার শরীরে গিয়ে লাগল বুলেট। বুকে, পাঁজরে, হাঁটুতে বুলেট খেয়েও কুয়াশা থামল না। যেন কিছুই হয়নি, এগিয়ে গেল
সে ঝড়ের বেগে।
অ্যাংগেলা লাফ দিয়ে সরে গিয়ে একটি বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাল সামলাবার চেষ্টা করলে কুয়াশা তার ঘাড়ে গিয়ে পড়ল। চোখের পলকে দেখা গেল
অ্যাংগেলা শুন্যে উঠে গেছে, ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা কুয়াশার হাতে রয়েছে।
সশব্দে শূন্য থেকে মেঝেতে পড়ল আংগেলা। ব্যথায় ককাচ্ছে সে। গর্জে উঠল কুয়াশা, সাবধান! ভ্যানিশিং রে এখন আমাদের দখলে।’
থেমে গেল খণ্ড যুদ্ধ। ধীরে ধীরে নামল কামাল একজন শত্রুর বুকের উপর থেকে। শহীদ মাথার উপর তুলে ফেলেছিল আর একজন শত্রুকে, নামিয়ে দিল তাকে মেঝেতে। মি. সিম্পসনের হাতে দেখা গেল দুটো রিভলভার, দুইদিকে ধরে দুই শত্রুর বুক লক্ষ্য করে ট্রিগারে চাপ দিতে যাচ্ছিলেন তিনি, ক্ষান্ত হলেন। তাঁর পায়ের কাছে দুটো নিঃসাড় দেহ পড়ে রয়েছে, দুই শত্রুর মাথা ঠুকে দিয়ে অচল করে ফেলেছেন তিনি। রাজকুমারী চোখ মেলে বলল, ‘সাবসোনিক ব্ল্যাডিয়েশন আমদানী করার প্রয়োজন ফুরিয়েছে।
– প্রফেসর ওয়াই পেটে হাত দিয়ে অসুস্থতার ভান করে মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল, উঠে দাঁড়িয়েছে সে ইতিমধ্যেই। তার হাতে শোভা পাচ্ছে অদ্ভুত আকৃতির একটি পিস্তল। সেটা থেকে তরল অ্যাসিড নিক্ষিপ্ত হয়। পিস্তলটা ব্যবহার করার দরকার
পড়ল না আর।
বিকট শব্দে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হলো! এতগুলো ঘটনা ঘটে গেল এক সেকেণ্ড বা তার কিছু বেশি সময়ের মধ্যে ।
শহীদ, বেঁধে ফেলো সবাইকে,’ কুয়াশা শান্ত অথচ দ্রুত গলায় বলল।
তীব্র ব্যথায় গোঙাচ্ছে শত্রুদের কয়েকজন। অ্যাংগেলার মুখোশ খসে পড়েছে। মুখ থেকে। কুৎসিত কদাকার ক্ষত-বিক্ষত মুখ তার। তাকানো যায় না, ভয় করে। টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল সে। মাথার উপর হাত তুলল ধীরে ধীরে। শত্রুরা সবাই তার দেখাদেখি হাতের অস্ত্র ফেলে দিয়ে মাথার উপর হাত তুলল।
প্রফেসর ওয়াইকে বিরূপ মনে হচ্ছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে সে। তার অনুচরবৃন্দ তাকিয়ে আছে তারই দিকে। | ডি. কস্টা ছাড়া সবাই অক্ষত। শহীদ ও কামাল নায়লনের কর্ড দিয়ে শত্রুদের দিকে এগিয়ে গেল। সবাই জয়ের আন্দে আনন্দিত। কিন্তু ডি. কস্টার কি হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না কিছু। পড়ে আছে সে নিঃসাড়। কোন শব্দ হলো না, কুয়াশার পিছনের দরজাটা খুলে গেল। কুয়াশার মাথার পিছনে শীতল ধাতব পদার্থের স্পর্শ লাগল।
নড়েছ কি মরেছ!’ গর্জে উঠল একটি কর্কশ কণ্ঠস্বর। চমকে উঠল সবাই। কুয়াশার পিছনের দরজা থেকে বেরিয়ে এসেছে বিড়ালের মুখোশধারী একজন শত্রু।
৭৬
ভলিউম ১৭
হাতের রিভলভার চেপে ধরেছে কুয়াশার মাথায়। কুয়াশার শরীরে বুলেট প্রুফ এক
বর্ম আছে টের পেয়েছে শত্রুরা আগেই। একমাত্র মাথায় গুলি করলে মরবে সে। | সবাই যে-যার হাতের অস্ত্র ফেলে দাও! পচ পর্যন্ত গুণব–এক, দুই•• | হুকুম করল অ্যাংগেলা। কাঁপছে সে। কুৎসিত মুখটা হিংস্র হয়ে উঠেছে।
নড়ছে না কুয়াশা। ভয় হচ্ছে তার, পিছনের শত্রু তাকে একচুল নড়তে দেখলেই রিভলভারের ট্রিগার টেনে দেবে।
শহীদ ফেলে দিল ওর হাতের অস্ত্র। দেখাদেখি সবাই তাই করল। টলতে টলতে দেয়ালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অ্যাংগেলা।
দেয়ালের গায়ে ধূসর রঙের বোতাম দেখা যাচ্ছে। সেটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরে ঘুরে দাঁড়াল সে। তাকাল সিলিংয়ের দিকে।
সিলিং থেকে দ্রুত নেমে আসছে একটি দড়ির ফাস।
অ্যাংগেলা চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে উঠল, “অনেক খেলা দেখিয়েছ তুমি কুয়াশা। আর নয়! কোনরকম চালাকি করো না, মাথা ফুটো হয়ে যাবে। তোমাকেই আমাদের যত ভয়, দাঁড়াও, তোমার ব্যবস্থাই আগে করি।’
| নেমে এসেছে মোটা দড়ির ফাস। কুয়াশাকে ঘিরে দাঁড়াল চারজন শত্রু। কুয়াশার মাথার দিকে তুলে ধরেছে সবাই আগ্নেয়াস্ত্র। অ্যাংগেলা ইঙ্গিত করতেই একজন এগিয়ে গেল। দড়ির ফাঁসটা পরিয়ে দিল সে কুয়াশার গলায়।
নিঃসাড় দাঁড়িয়ে আছে কুয়াশা। একজন শত্রু ইতিমধ্যেই ছিনিয়ে নিয়েছে তার হাত থেকে ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা। অ্যাংগেলা আবার হাত দিল দেয়ালে। চেপে ধরল হালকা নীল রঙের অপর একটি বোতাম।
ফাস চেপে বদল কুয়াশার গলায়।
অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। এত বড় বিপদ চোখের সামনে দেখেও কারও কিছু করার নেই।
অ্যাংগেলা এগিয়ে আসছে। সহকারীর হাত থেকে ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা নিল সে।
ফাসটা চেপে বসছে কুয়াশার গলায়। কুয়াশা হাত দিয়ে চেষ্টা করছে ফাসটা আলগা করার। এমন সময় দেখা গেল কুয়াশার পা দুটো মেঝে থেকে শুন্যে উঠে গেছে।
ফাসসহ মোটা দড়িটায় টান পড়েছে। ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে কুয়াশা উপর দিকে।
দম বন্ধ হয়ে আসছে কুয়াশার। পা ছুঁড়ছে সে শূন্যে । | এইবার! সবাই লাইন দিয়ে দাঁড়াও।’
অ্যাংগেলা কুৎসিত ভঙ্গিতে হাসছে।
পিছন থেকে রিভলভার, পিস্তলের খোঁচা খেয়ে প্রফেসর ওয়াই সহ সবাই লাইন দিয়ে দাঁড়াল। ওদের চার হাত সামনে দাঁড়িয়ে আছে অ্যাংগেনা। ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা ওদের দিকে ধরা। বোতামে চাপ দিতে যাচ্ছে সে। দেখে নিচ্ছে কুয়াশার এবং প্রফেসর ওয়াইয়ের দলবলকে গায়েব করে দেবার সাথে সাথে আর কেউ বা
কুয়াশা ৫০
৭৭
আর কিছু তাদের লাইনে পড়ে যাবার ভয় আছে কিনা।
কুয়াশা মারা যাচ্ছে। নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না সে। পা দুটো এখন আর তেমনভাবে নড়ছে না। অবশ হয়ে আসছে দেহ।
এমন সময় টাশ করে একটা শব্দ হলো। মুখটা হাঁ হয়ে গেল অ্যাংগেলার। বুকের কাছে শার্ট ফুটো হলো, লাল তাজা রক্ত বেরিয়ে আসছে দেখা গেল কলকল শব্দে। চোখ দুটো আতঙ্ক আর মৃত্যু যন্ত্রণায় বিস্ফারিত।
| ডি, কস্টা শুয়েই আছে। কিন্তু মাথাটা তুলে চেয়ে আছে সে অ্যাংগেলার দিকে। তার হাতে ছোট্ট একটা পিস্তল।
শহীদ একমুহূর্ত দেরি করেনি। ডি. কস্টার হাতের পিস্তল গর্জে ওঠার সাথে সাথে শহীদের শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। প্রফেসর ওয়াই পকেট থেকে অ্যাসিড পিস্তলটা বের করে শত্রুদের দিকে উঁচিয়ে ধরেছিল, শহীদ সেটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিল। অ্যাসিড পিস্তল সিলিংয়ের দিকে তুলে ধরে ট্রিগারে টান মারল ও। ছিঁড়ে গেল সিলিং থেকে ঝুলন্ত দড়িটা।
ঝুপ করে পড়ে গেল কুয়াশা। বসে পড়ল সে। তারপর ঢলে পড়ল তার দেহ। মনে হলো, জ্ঞান নেই।
এদিকে হত্যাকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে। শহীদ, কামাল, ডি. কস্টা এবং প্রফেসর ওয়াই গুলি করছে, অ্যাসিড নিক্ষেপ করছে। প্রফেসর ওয়াইয়ের হাতে এখন ভ্যানিশিং রে-র ভারি যন্ত্রটা।
শত্রুদের যন্ত্রণাকাতর চিৎকারে কান পাতা দায়।
মিনিট দুয়েকের মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটল। শত্রুপক্ষ পরাজিত। বেশির ভাগই গুরুতর আহত। অ্যাংগেলাসহ মোট পাঁচজন নিহত। শুধু নিহতই নয়, তারা ভ্যানিশিং রে-এর যাদুমন্ত্রে গায়েব হয়ে গেছে, বাতাসের সাথে মিশে গেছে সম্পূর্ণ।
শহীদ, কামাল এবং রাজকুমারী দ্রুত কাজ করছে। শত্রুদেরকে বেঁধে ফেলছে ওরা! প্রফেসর ওয়াই খেপে গেছে ভীষণ। তার অনুচর মারা গেছে চারজন। দুজন গুরুতর আহত।
মি. কুয়াশা! আমি এর প্রতিশোধ নেব । আমার দলের লোকদের এভাবে খুন করেছে যারা, তাদেরকে আমি নিজে খুন করব•••!’
হঠাৎ চুপ করল প্রফেসর ওয়াই। কোথায় কুয়াশা। তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না!
সাত
কুয়াশাকে দেখা গেল কয়েক মুহূর্ত পরই। দেব-মূর্তি রোটেনহেপো হেমনোসান : ক্যান ক্যান-এর পিছন থেকে বেরিয়ে এল সে।
প্রফেসর ওয়াই ঝট করে মুখ তুলে তাকাল দেব-মূর্তির দিকে। দেব-মূর্তির চোখের নীল মণি দুটো নেই, সেখানে দুটো বড় আকারের গহ্বর দেখা যাচ্ছে।
নীলকান্ত মণি দুটো কি হলো!
৭৮
ভলিউম ১৭
প্রফেসর ওয়াই প্রায় মরিয়া হয়ে চিৎকার করে উঠল।
কুয়াশা হাসল। বলল, আমি খুলে নিয়েছি। ভয় নেই, আর সবের মত এরও অর্ধেক ভাগ পাবে তুমি, অর্থাৎ একটা নীলকান্ত মণি তোমার••• | প্রফেসর ওয়াই হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠল। আচমকা হাসি থামিয়ে বলে উঠল সে উত্তপ্ত কণ্ঠে, ভাগ? ভাগবাটোয়ারায় আমি বিশ্বাসী নই! মি. কুয়াশা, আপনি একটা আস্ত বোকা! ভাগ করে কারা? দুর্বলরাই ভাগাভাগি করে। আমি কি দুর্বল? আমার কি শক্তির অভাব ঘটেছে? আমি ভাগাভাগিতে রাজি নই। এই রহস্যপুরীর সব ধন-সম্পদ আমি একা নেব।’
| কুয়াশার মুখের চেহারা এতটুকু বদলাল না। আগের মতই হাসছে সে। বলল, ‘তোমার কথা শুনে আশ্চর্য হচ্ছি না। এইরকম ব্যবহারই তোমার কাছ থেকে আশা করেছিলাম আমি।’
সাবধান! কেউ নড়বে না! দেখছ তো, ভ্যানিশিং রে-র যন্ত্র আমার হাতে। কোনরকম চালাকি করতে দেখলেই গায়েব করে দেব! মাথার ওপর হাত তোলো সবাই।’
সবাই চেয়ে আছে প্রফেসর ওয়াইয়ের দিকে। মি. সিম্পসন দাঁতে দাঁত চাপছে। শহীদকে দেখে মনে হচ্ছে যে-কোন মুহূর্তে প্রফেসরের দিকে লাফিয়ে পড়বে সে। কামান রাগে কাঁপছে মৃদু মৃদু।
মহুয়া আতঙ্কিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ভ্যানিশিং রে-র যন্ত্রটার দিকে। ডি. কস্টা চেয়ে আছে কুয়াশার দিকে। চেয়ে আছে রাজকুমারীও।
কোথাও কোন শব্দ নেই। থমথমে পরিবেশ। যেন ঝড় উঠবে, চারদিকে তারই পূর্বাভাষ।
‘কাউকে আমি কিছু বলব না। সবাইকে বেঁধে রেখে যাব আমি। ফিরে আসব খানিক পর। ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে যাবে আমার স্বয়ংক্রিয় প্লেন। সেই প্লেনে আমার অনুচরেরা তুলবে পঞ্চাশ মণ সোনা এবং বাইশ মণ হীরা-জহরত-মুক্তো; এই রহস্যপুরীতে বন্দী থাকবেন আপনারা। পারলে নিজেদেরকে মুক্ত করবেন, না পারলো না খেয়ে মরবেন। তবে আপনাদের একজনকে আমি সাথে করে নিয়ে যাব।’ | রাজকুমারীর দিকে তাকাল প্রফেসর ওয়াই। বলতে শুরু করল আবার, ‘রাজকুমারী ওমেনা, তুমি একটা জিনিয়াস। তোমার ব্রেনের তুলনা হয় না। তুমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাও। এই গুণটা তুমি আমার স্বার্থে ব্যবহার করবে। তাছাড়া, তোমার সাবসোনিক র্যাডিয়েশনটাও খুব কাজের জিনিস! ওটা নিয়ে পরীক্ষা চালাব আমি। তোমাকে আমার দরকার। নিয়ে যাব সঙ্গে করে তোমাকে..।’
রাজকুমারী চোখ বুজে ফেলল। সাবসোনিক র্যাডিয়েশন আমদানী করার চেষ্টা করছে সে। কিন্তু প্রফেসর ওয়াই হাঃ হাঃ করে হেসে উঠে ভারি ভ্যানিশিং রে-র যন্ত্রটা সজোরে বসূিয়ে দিল রাজকুমারীর মাথায়।
সেই মুহূর্তে গুলি বর্ষণের শব্দ হলো। একযোগে গর্জে উঠল পাঁচছয়টা পিস্তল ও
•য়াশা ৫০
৭৯
রিভলভার।
ডান হাতের কনুইয়ের উপর বুলেট খেয়ে বসে পড়ল শহীদ। কামালের কোথায় গুলি লাগল বোঝা গেল না। পড়ে গেল সে গুলি খেয়ে। ডি. কস্টা শুয়ে পড়েছে, মাথা উঁচু করে দেখছে সে পরিস্থিতিটা। মি. সিম্পসন এখনও অক্ষত, শুয়ে পড়েছেন তিনিও। ক্রল করে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রফেসর ওয়াইয়ের দিকে।
প্রফেসর ওয়াইয়ের অনুচরেরা বিরতি দিচ্ছে না, তাদের হাতের আগ্নেয়াস্ত্র গর্জে চলেছে প্রতি মুহূর্তে।
প্রথম গুলির শব্দ হবার সাথে সাথে দেবমূর্তি রোটেনহেপো হেমনোসান ক্যান ক্যান-এর পিছনে গা ঢাকা দিয়েছে কুয়াশা।
খানিকপর দেখা গেল দেবমূর্তির চোখ দুটোর জায়গায় যে গহ্বরের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে দুটো রিভলভারের নল। গর্জে উঠল রিভলভার দুটো।
প্রফেসর ওয়াইয়ের দুজন অনুচর লুটিয়ে পড়ল রক্তাক্ত অবস্থায়। ক্রল করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মি. সিম্পসন। শহীদ তাঁকে ছাড়িয়ে সামনে চলে গেল।
মি. সিম্পসন দিক পরিবর্তন করলেন। কুয়াশার রিভলভার গর্জে উঠল আবার দেব-মূর্তির চোখের পিছন থেকে।
প্রফেসর ওয়াইয়ের অনুচরদের যন্ত্রণাক্ত চিৎকারে কান পাতা দায়। শহীদ প্রফেসর ওয়াইয়ের পিছনে গিয়ে পৌঁছেছে। প্রফেসরের শক্ত পাথরের মত পা ধরে হেঁচকা টান মারল ও।
পড়ে গেল প্রফেসর। এক লাফে শহীদ প্রফেসরের বুকের উপর চেপে বসল।
প্রফেসরের মুখে অদ্ভুত একটা হাসি খেলে গেল। হাতের ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা ছাড়েনি। অপর হাত দিয়ে শহীদের বুকে ধাক্কা মারল সে। ছিটকে পড়ে গেল শহীদের দেহ পাঁচ হাত দূরে। তড়াক করে স্প্রিংয়ের মত লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল প্রফেসর ওয়াই।
কুয়াশাকে দেখা গেল এই সময়।
মি, সিম্পসনকে দেখা গেল একজন শত্রুর বুকে উঠে বসে তার গলা চেপে ধরেছেন শক্ত হাতে।
প্রফেসর ওয়াইয়ের অনুচরেরা সবাই কাবু-কেউ নিহত, কেউ আহত।
প্রফেসর ওয়াই একা! চারদিকে তাকিয়ে দেখে নিন সে পরিস্থিতিটা। তারপর মেঝে থেকে এক হাত দিয়েই টেনে তুলল রাজকুমারীর অজ্ঞান দেহটা। অনায়াস ভঙ্গিতে দেহটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে গর্জে উঠল সে, কেউ বাধা দিতে এসো না। আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে-খুন করে ফেলব!’
ঘুরে দাঁড়াল প্রফেসর ওয়াই। গম্ভীর কণ্ঠে কথা বলে উঠল কুয়াশা, ওয়াই, দাঁড়াও! প্রফেসর দাঁড়াল না, ফিরেও তাকাল না সে। ‘ওয়াই, দাঁড়াও।’ গর্জে উঠল কুয়াশা বাঘের মত।
কিন্তু মি. সিম্পসন বাক্যব্যয় না করে কাজে নেমে পড়লেন। হাতের চকচকে
৮০
ভলিউম ১৭
রিভলভারটা তুললেন তিনি।
বেরিয়ে যাচ্ছে প্রফেসর ওয়াই। আর মাত্র কয়েক হাত সামনেই একটি দরজা, দরজা পেরিয়ে গেলেই সব শেষ হয়ে যাবে।
গর্জে উঠল মি. সিম্পসনের হাতের রিভলভার। একবার, দুইবার, তিনবার, চারবার
অব্যর্থ লক্ষ্য। ছয়টা গুলিই লাগল প্রফেসরের শরীরে। তাজা লাল রক্ত বেরিয়ে আসছে তার হাঁটু, কোমর, পিঠ এবং ঘাড় থেকে।
দাঁড়ায়নি প্রফেসর ওয়াই। যন্ত্রণা বা ব্যথার কোন চিহ্ন নেই তার হাঁটার ভঙ্গিতে। যেন কিছুই হয়নি।তেমনি দৃঢ় পায়ে হেঁটে চলেছে সে।
আবার ট্রিগারে চাপ দিলেন মি. সিম্পসন। ক্লিক করে শব্দ হলো, বুলেট বের হলো না।
মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল প্রফেসর ওয়াই। মুচকি হাসল একটু, তারপর পা বাড়ান দরজার দিকে। চৌকাঠ পেরিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সে, নাগালের বাইরে।
এই শেষবার বলছি, ওয়াই, দাঁড়াও!
কুয়াশার গমগমে কণ্ঠস্বর ছাড়া আর কোন শব্দ হলো না। ঠিক সেই সময় প্রফেসর ওয়াই কাঁধ থেকে রাজকুমারীকে সামনে ফেলে দিয়ে লাফ দিয়ে পিছিয়ে এল তিন হাত।
| রাজকুমারী ওমেনা উঠে দাঁড়াল। জ্ঞান খানিক আগেই ফিরেছে ওর। সাবসোনিক র্যাডিয়েশন আমদানী করেছে সে নিজের দেহের চারদিকে। সেই র্যাডিয়েশনের শক খেয়েছে প্রফেসর। প্রফেসর বলে এ যাত্রা রক্ষা পেল, অন্য কেউ হলে ঘন্টাখানেকের জন্য সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে মড়ার মত পড়ে থাকত।
ঠক ঠক করে কাঁপছে প্রফেসর ওয়াই। রাজকুমারীর দিকে চেয়ে আছে সে। রাজকুমারী এগিয়ে আসছে স্বপ্নাচ্ছন্ন, ঘুমন্ত মানুষের মত তার দিকে।
| প্রফেসর ওয়াই শক্ত হাতে ধরে আছে ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা। ইচ্ছা করলেই সে ওমেনাকে গায়েব করে দিতে পারে। কিন্তু তা সে করবে না। ওমেনাকে তার দরকার, আজ হোক কাল হোক সে ওকে বন্দী করে নিয়ে যাবেই:••]।
পিছিয়ে যাচ্ছে প্রফেসর ওয়াই। এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে।
সবাই দেখছে কাণ্ডটা। নীরবতা ভাঙছে না কেউ।
পিছিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ লাফ দিয়ে একেবারে মহুয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। প্রফেসর ওয়াই, ভ্যানিশিং রে-এর, যন্ত্রটা চেপে ধরল মহুয়ার বুকের উপর । নির্মমভাবে, সেই সাথে বিকট কণ্ঠে গর্জন করে উঠল, “মি: কুয়াশা। ওমেনাকে থামতে বলুন।
বলতে হলো না, মহুয়ার বিপদ দেখে রাজকুমারী দাঁড়িয়ে পড়ল।
কর্কশ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল প্রফেসর ওয়াই। তারপর, একসময় থামল। সে বলল, আমি ভেবেছিলাম নিষ্ঠুরতা না দেখালেও আপনারা আমার প্রতিহিংসা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। কিন্তু আসলে দেখছি তা নয়। আমার হিংস্রতা সম্পর্কে
৬-কুয়াশা ৫০
L
‘-
আপনারা কিছু জানেন না। মি. কুয়াশা, বারবার আপনাকে আমি সাবধান করে দিয়েছি, বলেছি, আমার কাজে বাধা দেবেন না। কিন্তু এখন দেখছি আপনার শিক্ষা হয়নি, হবেও না। যাতে শিক্ষা হয়ন্তার ব্যবস্থা করব এখন আমি। আপনি সবচেয়ে বেশি যাকে ভালবাসেন তাকে আমি শেষ করে দিয়ে যাব এখন। সবচেয়ে প্রিয়জনকে হারিয়ে আপনি হয়তো প্রতিজ্ঞা করবেন, প্রফেসর, ওয়াইয়ের বিরুদ্ধে আর কোন কাজ করব না। মি, কুয়াশা, চেয়ে দেখুন, আপনার সবচেয়ে প্রিয়পাত্রী, আপনার নিজের বোন মহুয়াকে আমি কি রকম শান্তভাবে ভ্যানিশিং রে-এর সাহায্যে এই পৃথিবী থেকে গায়েব করে দিচ্ছি।’
বাচাও? দাদা…শহীদ…’ আর্তনাদ করে উঠল মহুয়া। ‘ওয়াই, থামো।’ গর্জে উঠল কামাল।
শহীদ কথা বলল না। চেয়ে আছে। লাফিয়ে পড়ার জন্য তৈরি ও কুয়াশা ইঙ্গিত করল, নিষেধ করছে সে শহীদকে প্রফেসরের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়তে।
প্রফেসর ওয়াই সময় নষ্ট করতে রাজি নয়। ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রের বোতামে চেপে বসল তার আঙুল••
কিন্তু হঠাৎ, অপ্রত্যাশিতভাবে অবশ হয়ে গেল প্রফেসর ওয়াইয়ের হাতের আঙুলগুলো। বিদ্যুৎবেগে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল সে কুয়াশার দিকে।
আ•••আপনি! হাঁ হয়ে গেছে প্রফেসর ওয়াই-এর মুখটা, বিস্ফারিত চোখে গিলছে যেন কুয়াশাকে।
| একটা পকেটঘড়ির মত গোলাকার ছোট্ট যন্ত্র দেখা যাচ্ছে কুয়াশার হাতে। যন্ত্রের গায়ে অনেকগুলো বোতাম। কুয়াশা একটি বোতাম আঙুল দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে। হাসছে সে মিটিমিটি।
প্রফেসর ওয়াইয়ের দিকে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে আসছে কুয়াশা। প্রফেসরের কাছে এসে দাঁড়াল সে। হাত বাড়িয়ে আস্তে করে ভ্যানিশিং রে-এর যন্ত্রটা তুলে নিল প্রফেসরের হাত থেকে।
আ•••আপনি! বিশ্বাস করতে পারছে না যেন প্রফেসর ওয়াই।
কুয়াশা হাসতে হাসতে বলল, হ্যাঁ, আমি তোমাকে পরিচালনা করার যন্ত্রটা আবার তৈরি করে ফেলেছি।
কুয়াশার কথাটা শেষ হওয়া মাত্র দুই হাত উপর দিকে তুলে প্রফেসর ওয়াই লাফাতে লাফাতে হাহাকার করে উঠল।
সব শেষ হয়ে গেল! সব শেষ হয়ে গেল আমার! মি, কুয়াশা, এ আপনি কি সর্বনাশ করলেন! কি হবে, কি লাভ হবে, কি লাভ হবে আর আমার বেঁচে! মেয়ে ফেলুন, মেরে ফেলুন আমাকে। ধ্বংস করে ফেলুন আপনি আপনার সৃষ্টিকে। একটা যান্ত্রিক পুতুল হিসেবে আমি বাঁচতে চাই না•••চাই না!
টলতে টলতে, চিৎকার করতে করতে উন্মাদের মত এগিয়ে যাচ্ছে প্রফেসর ওয়াই। বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে যেন সে।
ভলিউম ১৭
*
–
–
৮২
মি. সিম্পসন ব্যঙ্গভরে বলে উঠলেন, ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারছি না। শয়তান প্রফেসর হঠাৎ এমন প্রলাপ বকতে শুরু করল কি মনে করে? নতুন কোন অভিনয় নাকি? আমাদেরকে অন্যমনস্ক করে•••।’
শহীদের কণ্ঠস্বর শোনা গেল, না। প্রফেসর ওয়াই প্রলাপ বকছে না।
কামাল উত্তেজিতভাবে এক পা সামনে বাড়াল, তারমানে কি বলতে চাইছিস তুই, শহীদ?
| শহীদ একটু হাসল। বলল, তোরা কেউ জানিস না। কিন্তু আমি অনেকদিন আগে থেকেই জানি। প্রফেসর ওয়াই মানুষ নয়।
মি. সিম্পসন, কামাল, ডি, কস্টা, রাজকুমারী–সকলে একযোগে সবিস্ময়ে বলে উঠল, মানুষ নয়?’ | শহীদ বলল, না। প্রফেসর ওয়াই একটা যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। ওর শরীরটা তৈরি হয়েছে কৃত্রিম মাংস দিয়ে। ব্রেনটা কম্পিউটারের উন্নত সংস্করণ ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রফেসর ওয়াইকে ঠিক রোবটও বলা চলে না। রোবটের চেয়ে অনেক বেশি নিখুঁত এবং উন্নত করে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রফেসর ওয়াইকে। মানুষের হুবহ মেকানিক্যাল সংস্করণ বলা যেতে পারে ওকে। পরিচালিত হয় স্বয়ংক্রিয় ভাবে। নিজের বোধ, অনুভূতি, বুদ্ধি, সৃজনীশক্তি–সবই ওর আছে। ওর স্রষ্টা ওকে নিজের বিজ্ঞান সাধনার কাজে ব্যবহার করার জন্যে একটা রেডিও আবিষ্কার করেছিল। রেডিও ওয়েভ-এর সাহায্যে সে ওকে নিজের খুশিমত পরিচালিত করতে পারত। কিন্তু প্রফেসর ওয়াই তার স্রষ্টার দান করা জ্ঞান ও বুদ্ধির চেয়ে বেশি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান হয়ে দাঁড়ায়। সে নিজের পদ্ধতি অনুযায়ী বিজ্ঞানের সাধনা করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তার স্রষ্টার সাথে বিরোধ দেখা দেয়। তারপর প্রফেসর ওয়াই সেই রেডিওটা চুরি করে নষ্ট করে ফেলে। এবং সে নিজের শরীরের যন্ত্রপাতিতে এমন। কিছু পরিবর্তন ঘটায় যে তার স্রষ্টার আর সাধ্য থাকে না তাকে বশ করার।’
‘প্রফেসর ওয়াইয়ের স্রষ্টাকে সে!’
শহীদ বলল, প্রফেসর ওয়াই কুয়াশাকে কি বলল শুনলি না? কুয়াশাই প্রফেসর ওয়াইকে তৈরি করেছিল।
কুয়াশার কণ্ঠস্বর শোনা গেল, থামো, ওয়াই!’
প্রফেসর থামল না। নিজের বুকে চাপড় মেরে প্রচণ্ড শব্দ তুলে এগিয়ে যাচ্ছে সে। পাগলের মত চেঁচাচ্ছে, মেরে ফেলুন! শেষ করুন এই যান্ত্রিক পুতুলের বিন! আপনি সৃষ্টি করেছেন আমাকে কিন্তু স্বাধীনতা দেননি। নিজের ইচ্ছা মত
•কাজ করার সুযোগ দেননি। অনেক কষ্টে আপনার প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করেছিলাম। আজ আবার বন্দী হলাম আপনার হাতের মুঠোয়! এই বন্দী জীবন দরকার নেই আমার–যবনিকা টানুন এই নাটকের!
| কুয়াশা তার হাতের গোলাকার যন্ত্রের গায়ে বসানো অনেকগুলো বোলামের একটিতে চাপ দিল।
মাথার উপর থেকে প্রফেসরের হাত দুটো দুপাশে ঝুলে পড়ল। স্থির হয়ে গেল ‘তার দেহটা। নড়াচড়ার শক্তি হঠাৎ যেন সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছে সে।
কুয়াশা ৫০
কুয়াশাকে গভীর দেখাচ্ছে।
কথা বলল সে ভারী গলায়, নিজের সৃষ্টিকে কে-ই বা ধ্বংস করতে চায়, ওয়াই? তোমার অনেক অত্যাচার আমি সহ্য করেছি। তুমি কত যে ক্ষতির কারণ হয়েছ আমার তা বলে শেষ করা যায় না। তবু তোমাকে ধ্বংস করে ফেলতে পারিনি। তোমাকে আমি তৈরি করেছিলাম অনেক পরিশ্রম, অনেক ত্যাগ স্বীকার করে। তোমাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতাম আমি। বিজ্ঞানের সাধনায় তোমার ব্রেনকে কাজে লাগিয়ে এমন সব আবিষ্কার একটার পরে একটা করব যা দেখে পৃথিবীর মানুষ স্তম্ভিত হয়ে যাবে। কিন্তু ভুল করে ফেলেছি আমি গোড়াতেই। তোমাকে আমি অনেক বেশি বুদ্ধি দিয়ে ফেলেছিলাম! তুমি আমাকে ছাড়িয়ে যাবার চেষ্টা করবে সবদিক থেকে তা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।’
| ‘ধ্বংস করে ফেলুন! আমি আর বাঁচতে চাই নাঃ•• | বিড় বিড় করে বলল প্রফেসর ওয়াই।
কুয়াশা হঠাৎ কঠোর হয়ে উঠল, ‘না! ধ্বংস তোমাকে আমি করব না। তা আমি পারি না। আমি এখনও সম্পূর্ণ নিরাশ হইনি। আমি চেষ্টা করব তোমার ত্রুটি সারিয়ে আবার নিজের অধীনে নিয়ে আসতে। যাও, ওয়াই, নিঃস্ব হয়ে বেরিয়ে যাও! তোমাকে আমি কী করেও রাখব না। স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াও তুমি পৃথিবীর বুকে। কিন্তু সাবধান, কারও কোন ক্ষতি করার চেষ্টা কোরো না। সেক্ষেত্রে আমি তোমাকে বন্দী করে রাখব। যাও, খালি হাতে বেরিয়ে যাও এখান থেকে। আমি তোমার সব ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছি। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দখল করে নিচ্ছি তোমার সব আস্তানা। ক্ষমতাহীন একা তুমি। তোমার জীবন-মৃত্যু এখন আমার হাতে।
বিরতি নিল কুয়াশা। তারপর কঠিন কণ্ঠে দুটো শব্দ উচ্চারণ করল, গেট আউট!
: টলতে টলতে ঘুরে দাঁড়াল মেকানিকাল প্রফেসর ওয়াই। টলতে টলতে হাঁটছে সে। মনে হচ্ছে পড়ে যাবে। কিন্তু পড়ল না। ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেল সে দরজা দিয়ে।
আধঘন্টা পর প্রফেসর ওয়াইয়ের স্বয়ংক্রিয় পাইলটহীন অ্যারোপ্লেন ল্যাণ্ড করল রহস্যপুরীর প্রকাণ্ড পাকা উঠানে।
অপেক্ষা করছিল ওরা। পঞ্চাশ মণ স্বর্ণ, বাইশ মণ মহামূল্যবান হীরে, মুক্তো, জহরত তোলা হলো প্লেনে।
নিজের হাতে শহীদ, কামাল এবং ডি. কস্টার ক্ষতস্থানে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে দিয়েছে কুয়াশা। বিদেশী আহত শত্রুদের চিকিৎসার দায়িত্ব পালন করছে রাজকুমারী ওমেনা।
প্লেনে তোলা হলো বন্দীদেরকে। তারপর নিজেরা চড়ল ওরা। ঘন্টা দুয়েক পর আবার আকাশে উড়ল প্লেন।
অভিযান সফল হয়েছে। রহসপুরীর রহস্য হয়েছে উন্মোচিত। ‘আমার জীবনের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো প্রফেসর ওয়াইয়ের প্রকৃত
ভলিউম ১৭
পরিচয় জানা। কুয়াশা, তোমাকে শ্রদ্ধা জানাই!’ মি. সিম্পসন কথাগুলো বললেন।
কি যেন ভাবছে কুয়াশা। অন্যমনস্ক, বিষণ্ণ দেখাচ্ছে তাকে। মি. সিম্পসন ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেন। আর কোন কথা বললেন না তিনি।
হঠাৎ সকলের দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল কুয়াশা। চোখ দুটো যেন ভিজে ভিজে বলে মনে হলো।
স্তম্ভিত সবাই।
আবেগে আপ্লুত কণ্ঠে কুয়াশা শুধু জানতে চাইল, তোমাদের কি মনে হয় বলো তো? ওয়াই কি নিজের ভুল বুঝতে পারবে! সে কি সংশোধন করবে নিজেকে? তার কি সুমতি ফিরে আসবে আবার?
মুখ ফিরিয়ে নিল কুয়াশা। আবার আনমনা হয়ে পড়ল সে। প্লেন ছুটে চলেছে আরব সাগরের উপর দিয়ে। বাংলাদেশ অভিমুখে।
Leave a Reply