২১. আঁধার রাত্রি [ওসিআর ভার্সন – প্রুফ সংশোধন করা হয়নি]
কুয়াশা ২১
প্রথম প্রকাশঃ নভেম্বর, ১৯৬৯ এক এখন রাত প্রায় বারটা। শ্রাবণের বর্ষণক্লান্ত অমাবস্যার তিমিরাবৃত রাত।
. সন্ধে থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। আসলে চলছে বিকেল থেকেই। শ্রাবণের আকাশের ঘন-কালো মেঘে অনেকটা বেলা থাকতেই ঘনিয়ে এসেছিল সন্ধ্যার ছায়া-ছায়া অন্ধকার। তখন থেকেই নেমেছে বৃষ্টি-অবিরাম ঝরেই চলেছে। মাঝে . মাঝে বর্ষণের প্রচণ্ডতা কমেছে বটে কিন্তু ছাড়েনি–ছাড়বার লক্ষণ নেই। তার সাথে আছে তীক্ষ্ণ ও সুচোল হিমেল হাওয়া।
: মিরপুর রোড জনশূন্য। মাঝে মধ্যে দু’একটা বাস বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে পানি ছিটিয়ে অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে যাচ্ছিল। কিন্তু এক সময় তাও বন্ধ হয়ে গেছে। শেষ বাসটাও চলে গেছে গন্তব্যস্থানে :
অন্ধকারে ঝিমুচ্ছে পথে দু’পাশের বাড়িগুলো। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের অন্ধকার পটভূমিতে বাড়িগুলোকে মনে হচ্ছে প্রেতপুরীর মত। আর অমাবস্যার প্রতি পরমভক্তির প্রমাণস্বরূপ শহরের বিদ্যুৎ যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে।
:এই দুর্যোগের রাতে স্যানন ডি, কস্টা আসছিল সাভার থেকে। সকালে মান্নানকে একটা জরুরি কাজে পাঠিয়েছিল কুয়াশা সেখানে। মান্নানের বিঘোষিত প্রতিবাদ উপেক্ষা করেই ডি কস্টা তার সঙ্গ নিয়েছিল। পরে দেখা গেল ডি কস্টা সঙ্গে আসাতেই সুবিধে হয়েছে। যে কাজে সে গিয়েছিল তার প্রয়োজনেই তার রাতে সেখানে থাকা দরকার, অথচ আজকের রাতের মধ্যেই সে সম্পর্কে কুয়াশার কাছে খবর দেয়াটাও দরকার। সুতরাং সাঙ্কেতিক ভাষায় চিঠি লিখে মান্নান ডি। কন্টাকে ফেরত পাঠাল এবং জানিয়ে দিল, যে ভাবেই হোক রাতের মধ্যেই চিঠি কুয়াশার হাতে পৌঁছে দিতে হবে। অন্যথায় ক্ষতি হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজের দায়িত্বভার পেয়ে এবং বসের উপকার করার একটা সুযোগ পেয়ে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যেই রওনা দিল সে ঢাকার দিকে। একটা ট্যাক্সি নিয়ে সে চলে এল। মিরপুরে। রাত তখন প্রায় এগারটা। যানবাহন চলাচল
ইতিমধ্যেই প্রায় বন্ধ। .
ট্যাক্সিওয়ালার নিবাস মিরপুর। সে আর এগোবে না। অন্য ট্যাক্সি পাওয়া কুয়াশা-২১
১০৯
.
|
-।
গেল না। স্ট্যাণ্ড শূন্য। বেবীট্যাক্সি পাওয়া গেল একটা। সে রাজি হল না। কথাই বলল না ডি. কস্টার সাথে । * শীত শীত লাগছিল ডি কস্টার । শরীরটা একটু গরম করা দরকার। কাছেই একটা বে-আইনী তাড়িখানার সন্ধান জানা ছিল ডি, কস্টার। সেদিকেই এগাল । শরীরটা একটু গরম করে তারপর নাহয় আবার খোঁজ করা যাবে গাড়ির। কিন্তু নসীব মন্দ । অনেকক্ষণ ধাক্কাধাক্কি করল দরজায়। কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল
। দরজা খুলতে এল না কেউ। বিড়বিড় করে গাল দিল ডি. কস্টা, ব্যাটারা পেট পুরে টেনে নিশ্চয়ই মাটাল হয়ে আছে। রাগে, বিরক্তিতে ‘ডুট্টোরী ছাই’ বলে পথে । নামল আবার। কিছুক্ষণ গাড়ির চেষ্টা করে অবশেষে ব্যর্থমনোরথ হয়ে হেঁটেই রওনা দিল মোহাম্মদপুরের দিকে। … বৃষ্টিটা মাঝখানে একটু কমে এসেছিল। এখন আবার চেপে
অন্ধকারে পিচ্ছিল পথে এগোতে কষ্ট হচ্ছিল ডি কস্টার। কিন্তু ওর দৃষ্টিশ এখনও রাতে চোখ দুটো তার বিড়ালের মত জ্বলে । পুরানো অভ্যাসের জোরে এখনও অন্ধকারে সে বেশ দেখতে পায়। কিন্তু পথটা ভাঙাচোরা। খানাখন্দ ভর্তি। কো ও কোথাও আবার প্যাঁচপ্যাঁচে কাদা। কয়েকবার হোঁচট খেল ডি. কস্টা । প্রায় আধ মাই ‘ পথ পেরিয়ে এসেছে সে। এদিকটায় বাড়িঘর বড় একটা নেই। যে ক’টা আছে তাও কাছাকাছি নয়। একটা থেকে অন্যটা অনেকটা দূরে। :
হাওয়ার গতি আবার বেড়েছে। পশ্চিম দিক থেকে হিমেল হাওয়া যেন সূচ বেঁধাচ্ছে সর্বাঙ্গে। বর্ষাতি থাকা সত্ত্বেও সমস্ত শরীরটা ভিজে গেছে। ভেতরের শার্ট প্যান্ট ভিজে জবজবে। তবু এগিয়ে চলেছে ডি. কস্টা। রাতেই তাকে বসের কাছে পৌঁছুতে হবে। বসের কাজে লাগার এই অপূর্ব সুযোগ সে ছাড়তে পারে না। | রাস্তার প্রান্ত ঘেঁষে হাঁটছিল ডি কস্টা। সামনে একটা বিরাট গাছ। তার পাশাপাশি যেতেই পা পিছলে গেল হঠাৎ। চিত হয়ে পড়ে রাস্তার ঢালু পাড় বেয়ে কয়েক হাত নিচু ঝোঁপঝাড়ে গিয়ে ঠেকে গেল পা দুটো। অতি কষ্টে আর অতি, সাবধানে উঠে বসতেই কপালে লাগল খোঁচা। মাথাটা সামান্য পেছনে সরিয়ে দেহটা ঘুরিয়ে উবু হয়ে হাতড়ে হাতড়ে জন্তুর মত সে ঢালু পাড় বেয়ে উপরে উঠতে লাগল । সর্বাঙ্গ ব্যথায় ঝিমঝিম করছে। কোমরে আর ডান হাতের, কব্জিতে, চোট লেগেছে জোরে।..।
. দূরে, বহুদূরে একটা আলো দেখা গে। এগিয়ে আসছে আলোটা-একটা নয়, দুটো আলো । গাড়ি আসছে একটা। মিরের দিকেই এগোচ্ছে গাড়িটা। একটু আশার আলো যেন দেখতে পেল ডি কস্টা। গাড়িওয়ালাকে যদি হাতে-পায়ে ধরে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে এই কষ্ট লাঘব হতে পারে। কে
জানে, ওর দুর্দশা দেখে হয়ত রাজিও হয়ে যেতে পারে গাড়িওয়ালা। অবশ্য ১১০ :
ভলিউম-৫
এমনও তো হতে পারে, বস্ নিজেই আসছেন তার খোঁজ করতে। তাছাড়া এই দুর্যোগের রাতে বেরোবার সাহসই বা কার আছে? এই নির্জন পথে, এই ভয়ঙ্কর রাতে চলায় যে বিপদ আছে, তা কে না জানে? আর হতে পারে পুলিস। কিন্তু এই বষ্টির রাতে পুলিস যে নাকে তেল না দিয়েও সুখে নিদ্রা যায় তা তার চাইতে ভাল করে জানে কে? | কিন্তু গাড়িটা প্রায় পঞ্চাশ গজ দূরে এসে থেমে গেল। নিভে গেল গাড়ির আলো। উল্লসিত হল ডি কস্টা। : পথের উপর উঠে পড়েছে ডি. কস্টা। উঠে দাঁড়াল সে। কোমরে কট করে একটা শব্দ হল। অস্ফুট একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এল মুখ থেকে। কয়েক পা এগোল সে অতি কষ্টে।
• হঠাৎ জ্বলে উঠল ‘পথের বাতিগুলো। আর সেই আলোতে ডি কস্টা দেখল, গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে একটা লোক কি যেন টেনে বের করছে। ডি, কস্টার মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুতের মত প্রবাহিত হয়ে গেল। গাছটার, আড়ালে গিয়ে দাঁড়াল ডি কস্টা সড়াৎ করে। মুখটা বাড়িয়ে দিল সামান্য।নিঃশ্বাস বন্ধ করে আতঙ্ক দৃষ্টিতে ডি. কস্টা দেখল লোকটা ভারি কি যেন একটা পাঁজাকোলা করে নামিয়ে ছুঁড়ে দিল পথের পাশে। ডি. কস্টা দেখল বস্তুটা আর কিছুই নয়, একটা মানুষ। তার জুতোপরা পা দুটো মুহূর্তের জন্যে দেখতে পেয়েছিল সে। ধড়াস করে উঠল ডি. কস্টার বুকের ভিতরটা। মেরুদণ্ডের মধ্যে দিয়ে ঠাণ্ডা একটা ত শিরশির করে বয়ে গেল। কণ্ঠতালু শুকিয়ে গেল । বিস্ফারিত চোখে সে চেয়ে রইল। লোকটা বেশ লম্বা-চওড়া। প্যান্ট-শার্ট পরা । মাথায় ফেল্ট হ্যাট। এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখল লোকটা। তারপর গাড়ির পিছনের দরজাটা বন্ধ করে সামনের দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকল। গাড়ির আলোটা জ্বলে উঠবার আগেই মুখ লুকোল ডি, কস্টা। এখনও তার বুকের মধ্যে ভয়ের হাতুড়িটা অবিরাম আহত হেনে চলেছে।
গাড়িটা এদিকে আসছে। লোকটা কি তাহলে দেখে ফেলেছে তাকে? গাছের সাথে দেহটাকে মিশিয়ে দিল ডি কস্টা। হাঁটু দুটো প্রবল ভাবে কাঁপতে লাগল। অর ডি, কস্টার ঠিক সামনে এসেই গাড়িটা টার্ন নিল। ধরা পড়ে গেছে ডি. কস্টা। সে যে গোপনে লোকটার গোপন কার্যকলাপ দেখছিল সে তা জানতে পেরেছে। আর রক্ষা নেই। কিন্তু না, গাড়িটা থামল না। তার কয়েক হাত দূর দিয়ে রে চলে, গেল। স্পীড দিয়েছে গাড়িটাতে। পিছনের লাল আলোটা মিলিয়ে যাচ্ছে।
‘আত্মস্থ হতে অনেকক্ষণ সময় লাগল ডি কস্টার। পায়ে পায়ে এগিয়ে চলল স। হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু যন্ত্রণাকে ছাড়িয়ে ভীতিমিশ্রিত কৌতহলটাই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কুয়াশা-২১
“১১১
.-
–
।।
| বৃষ্টিটা ধরে এসেছে। এখুনি থেমেও যেতে পারে।
গাড়িটা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছিল সেখানে গিয়ে দাঁড়াল ডি কস্টা । ইলেকট্রিসিটির একটা পোল কাছে থাকায় আলোটা এখানে উজ্জ্বল। সেই আলোয় ডি, কস্টা দেখল, ঢালু জায়গায়, হাত দু’য়েক নিচে উপুড় হয়ে পড়ে আছে একটা মানুষের দেহ। লোকটার পরনে একটা কালো ফুলপ্যান্ট। উধ্বাঙ্গ অনাবৃত। স্থান কাল ভুলে গিয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল ডি. কস্টা তা সে বলতে পারে না, কিন্তু সংবিৎ ফিরে পেতেই উধশ্বাসে দৌড়াতে লাগল সে।
*
ঘন্টা দেড়েক পরের কথা। ইতিমধ্যে দুটো বোতল শেষ করে ডি কস্টা তৃতীয় বোতলটার অর্ধেকটা প্রায় সাবাড় করে এনেছে। এর মধ্যেই সে বার পঞ্চাশ ‘বাপস, কি ভয়ঙ্কর’ বলে ফেলেছে। কিন্তু বসকে কৌতূহলী দেখতে না পেয়ে
বেচারা একটু অসন্তুষ্ট ও নিরাশই হয়ে পড়েছে।
. . . . . . . ., কুয়াশা মান্নানের দেয়া চিঠি পড়া শেষ করে কি যেন ভাবছিল গভীর ভাৰে। উঠে দাঁড়িয়ে সে বলল, “বেশ, মি, ডি কস্টা, এবারে তাহলে শুয়ে পড়ুনগে। অষেক তো ঝড়-ঝাঁপটা গেছে আপনার উপর দিয়ে। এবারে একটু ঘুম দিন, রাত তো প্রায় আড়াইটে বাজে। .,,
, ‘
কিটু বস, কি ভয়ঙ্কর! * ওসব খুনোখুনির ব্যাপার তো ভয়ঙ্কর হবেই। : না, মানে হ্যাঁ, টা টো হেবেই। মাগার ঐ খুনেটা কে? লোকটাকে টো রটে হোবে? মানে, আমাকে যড়ি ফলো করে ঠাকে?’ ডি, কস্টার গলায় কান্নার আভাস।
• ‘পনাকে ফলো করবে!’ বিষয় চাপতে পারল না কুয়াশা। ফলো করবে কেন? করেই বা করবে?’… . . . . . . . . . •
: না মানে, আর একটা ঢোক গিলে ড়ি, কল্টা বলল। কিছু লোকটাকে টো ঢর হবে? আর যড়ি খুন করে?– বেশ, তাহলে পুলিসে খবর দিয়ে আসুন, নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল কুয়াশা।’– আঁ! পুলিসে? মাঠা খারাপ, টাহলে ওরা যা মাঠা মোটা, আমাকেই অ্যারেস্ট
করবে। ঢরে জিজ্ঞেস করবেঃ মি.. ডি. কস্টা, অটো রাটে আপনি ওখানে। গিয়েছিলেন কেন? টো হামি কিয়া কৈফিয়ত ডেয়েগা?’ ।
| ‘জাহলৈ তত ভাল বিপদ হল দেখছি! আচ্ছা এক কাজ করলেই তো হয়, আপাত আপনার হাতে কোন কাজ নেই একথা তো ঠিক? : ও কোন কাজ নেই, স্বীকার করল ডি. কটা। … ।
হলে আপনিই লেগে পড়ুন না মি. ডি. কস্টা, লোকটার খোঁজ করতে?’ : | ‘আ মাঠা খারাপা আর্তনাদ করল ডি কস্টা। ১১২)
ভলিউম-৭
*
*
,, না না, মাথা খারাপ হবে কেন? আপনার মাথা অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। মানে, আপনি বেশ বুদ্ধিমান, চালাক-চতুর মানুষ। একবার চেষ্টা করেই দেখুন না? লোকটাকে ধরে পুলিসের হাতে তুলে দিতে পারেন কিনা?’ ..
. | ডি, কস্টার চোখ দুটো আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে খুশি হয়ে বোতল থেকে ঢকঢক করে এক সঙ্গে অনেকটা পান করে জামার হাতায় ঠোঁট মুছে বলল, ‘ডি আইডিয়া।’
বোতলটা রেখে কপালে টোকা দিয়ে বলল, “অঠচ কঠাটা এতক্ষণ আমার মাঠায় ঢোকেনি। মাথাটা দোলাতে লাগল সে।
. *’লোকটাকে আবার দেখলে নিশ্চয়ই চিনতে অসুবিধে হবে না, কি বলেন?
– না না, অসুবিটা কিসের? বেশ লম্বা-চওড়া লোকটা। রঙটা মনে হচ্ছে আমার ‘মট ফর্সাই। অবশ্য মুখটা ডেখতে পাইনি। ফেল্ট হ্যাট ছিল টো মাঠায়? মুখটায় ছায়া পড়েছিল। চিনটে পারব টবু, অবশ্য। টাছাড়া গাড়িটা দেখলেই চিনটে পারব।
কি গাড়ি ছিল ওটা?
‘টাইটো, কি যেন নামটা…আজকাল গাড়ির যে কি বিশ্রী নাম হচ্ছে মনেই ঠাকটে চায় না। টাইটো কি যেন নাম গাড়িটারব কি নাম যেন?”…
‘রোলস রয়েস, ফোর্ড, টয়োক
“উঁহু, ওসব নয়। রোলস রয়েস পাবে কোঠায়, ওটো এডেশে শুরু আমার মামার শ্বশুরের ভাইয়ের শালার ছিল।
“তাহলে?’
যাকগে, ওটা আমি বের করে নিটে পারব। নম্বরটা আমার মনে আছে– ঢাকা-ক••। কটো যেন ঠিক মনে পড়ছে না। সে যা হোক। বাছাটন একবার যডি। আমার পাল্লায় পড়ে টাহলেই, হুম। বোতলটা ঠকাশ করে টেবিলের উপর রাখল ডি. কস্টা। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি টাহলে একটু ঘুমিয়েই নিই। কাল ঠেকে লেগে যাব।’ : কুয়াশা হেসে বলল, “আপনাকে সাতাশ দিন সময় দিলুম, মি. কস্টা। এর মধ্যেই লোকটাকে খুঁজে বের করতে হবে।’
. ‘সাটাশ ডিন! ইউ মীন টুয়েন্টি সেভেন ডেজ! হাঃ হাঃ, টুয়েন্টি সেভেন আওয়ার্স উড় বি এনাফ। ঠ্যাংক ইউ । চলে গেল ডি কস্টা। . ..
উঠে দাঁড়াল কুয়াশাও। কাপড়-চোপড় বদলে প্রস্তুত হয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সে। বৃষ্টিটা থেমে গেছে। আকাশটা এখনও থমথমে। আবার নামতে পারে বৃষ্টি যে কোন মুহূর্তে। কুয়াশা-২১
, ১১৩
•
:’ :
*
;
T
দুই
.
॥
সকালে, চায়ের টেবিলে সংবাদপত্র পড়ছিল শহীদ। লীনা ও শহীদের বাবা ইসলাম। খ সাহেব নীরবে নাস্তা করছিলেন। মহুয়া পরিবেশন করছিল। এমন সময় কামাল এসে উপস্থিত হল। বোস কি একটা উচ্চারণ করতে যাচ্ছিল কামাল । শহীদের, আব্বাকে দেখে দ্রুত রসনা সংবরণ করল।
শহীদ সংবাদপত্র থেকে মুখটা তুলে নিরাসক্ত ভাবে দেখল একবার কামালকে, তারপর আবার কাগজের মধ্যে ডুব দিল । অভ্যর্থনা জানাল মহুয়া, সহাস্যে। বলল, বোস, ভাই। তাই তো বলি, ডাইনিংরূমটা এত খালি-খালি লাগছিল কেন, এতক্ষণ। আর খাবারগুলোই বা কেন অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। ওকি, আব্বা, কলাটা রেখে দিচ্ছেন কেন, আপেলের টুকরো না হয় একটু মুখে দিন।
| ইসলাম খাঁ সাহেব মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালেন। বললেন, না, অনেকটা খেয়ে ফেলেছি। বুড়ো পাকস্থলী এতটা ভার সইতে পারবে কেন?’
* “অন্তত আপেল দু-এক টুকরো মুখে দিতেই হবে, প্লেট এগিয়ে দিতে দিতে– বলল মহুয়া।
. তুমি আমায় না খাইয়েই ছাড়বে না, মা। জান, কামাল, আমার এই মাটি আমাকে খাইয়ে-দাইয়ে বেশ রেখেছে। আর এক জন্মে.বোধহয় ‘ও আমার নিজের মা ছিল।
.: আর আগের জন্মে সাক্ষাৎ আমার নিজের দিদি ছিল। সহাস্যে যোগ দিল . কামাল।
‘থাক থাক, তোমার আর ব্যাখ্যা করতে হবে না। নাও তুমিও শুরু কর। মাথার ঘোমটা ঠিক করতে করতে বলল মহুয়া। তার কণ্ঠে লজ্জার আভাস।..
লীনার দিকে একবার অপাঙ্গে তাকিয়ে কামাল টোস্টের পাহাড়টা.নিজের দিকে টেনে নিল।
• এক টুকরো আপেল মুখে দিয়ে হরলিকসের কাপ হাতে নিলেন ইসলাম সাহেব। হরলিকস শেষ করে বললেন, শহীদ, লীনার ইলেকট্রো-কার্ডিওগ্রাফ। করার কথাটা মনে আছে তোর, না ভুলে গিয়েছিস? আমিই বরং ওকে নিয়ে যাই কোন স্পেশালিস্টের কাছে। .. শহীদ সংবাদপত্র সরিয়ে দিয়ে বলল, না, তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে।
। আমিই নিয়ে যাব এখন। তুমি বরং ইচ্ছে করলে গাড়িটা নিয়ে এমনিতেই ঘুরে
• এস। ১১৪
ভলিউম-৭
।
‘
*
। চলে গেলেন ইসলাম সাহেব।
কামাল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “কিরে, অমন ধারা মেঘাচ্ছন্ন মুখ করে আছিস কেন? কি হয়েছে? মহুয়াদি, তুমি বকেছ বোধহয়?’ ‘
. হাসল শহীদ, সে সৌভাগ্য কি আমার কোনদিন হবে? ভাবছি অন্য কথা।
‘খবরের কাগজে সেই ভাবনার কথাটা লেখা আছে বুঝি? ভাবনার বিষয়টা কি? ভিয়েতনাম, না দেশীয় রাজনীতি? শেখ, না খান, না কোন অগ্নিবর্ষী মওলানার বক্তৃতা?’: ১. ওসব কিছুই নয়। আসলে যে সংবাদটার জন্যে কাগজটা তন্ন তন্ন করে
খুঁজছিলাম সেটা দেখছিনে।।
‘কি সংবাদ রে? খুন-টুন কেউ হবে বলে আগে থেকে জানতিস বুঝি? তোকে বুঝি আগিই বলে রেখেছে?”
, অনেকটা তাই। গতরাতটা অমাবস্যা গেছে, তাই না? : ওসব বাংলা পত্রিকার হিসেব আমি রাখি না। তিথি, নক্ষত্র, শুভ দিনের নির্ঘন্ট, রাশিচক্র, আজকের দিনটি কেমন যাবে এসব নিয়ে আমি মাথা ঘামাইনে।
তাচ্ছিল্যের সুরে বলল কামাল। ওর কথা বলার ভঙ্গিতে হেসে উঠল লীনা আর মহুয়া।
* তা তো রাখবিই না। ভাল কথা, তোর বয়স কত রে এখন? তিরিশ পেরিয়েছে?’,, কামাল চোখ দুটো কুঁচকে শহীদকে ভাল করে পরখ করে বলল, হয়েছে কি তোর, বল তো? রাতে ঘুম হয়নি ভাল? অমাবস্যা থেকে বয়স । কিছুই বুঝতে পারছিনে। :
, সেটা তো খুবই স্বাভাবিক। সহজ কথাটা কবে তুই সহজে বুঝতে পেরেছিস, বল তো? সেই জন্যেই তো বয়স জানতে চাইছি। মেন্টাল’ এজটা বের করতে হবে,.. :
চটে গেল কামাল। কিন্তু মুখের ভিতরে আস্ত একটা সিদ্ধ ডিম থাকায় সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিতে পারল না।
‘লীনা বলল, তুমি মিছেমিছি কামাল ভাইকে চটিয়ে দিচ্ছ, দাদামণি। আসলে আমিও তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছিনে। বৌদিও না, তাই না, বৌদি?
তোমার দাদা আর কামাল বাবুর ওসব উদ্ভট কথাবার্তা বোঝবার চেষ্টা করে লাভ নেই, লীনা।.চল বরং আমার সাথে। তোমাকে একটা প্রেমের গল্প বলব। | ‘আহ, রাখ না, বৌদি। অমাবস্যার সাথে কামাল ভাইয়ের বয়সের সম্পর্কটা
জেনেই যাই। বল না, দাদামণি। আবদার করল.লীনা। : হ্যাঁ দাদা, ঝেড়ে কাশ, দাবি জানাল কামালও।
কুয়াশা-২১
. ১১৫
|
| ::
*.।
.
“
1
তোদের হয়ত খেয়াল আছে, প্রায় আট মাস হল প্রত্যেক অমাবস্যায় একজন করে লোক খুন হচ্ছে। ..
: ‘খুন তো হর-হামেশাই হচ্ছে। পূর্ণিমাতেও হচ্ছে, অমাবস্যাঁতেও হচ্ছে। তা না হলে পুলিসরা যে বেকার হয়ে যাবে।’ কামাল ফোড়ন কাটল। তাতে হয়েছে কি?
কিন্তু এই অমাবস্যার রাতের খুনটার একটা বৈশিষ্ট্য আছে। . যথা?’ নাস্তা শেষ করে চায়ের কাপটা টেনে নিতে নিতে প্রশ্ন করল কামাল।
বৈশিষ্ট্য হল, ঐ রাতে নিহত লোকগুলোর কোন হৃৎপিণ্ড পাওয়া যায়নি। বা দিকে বুকের অস্থির ঠিক নিচ দিয়ে ছুরি চালিয়ে হৃৎপিণ্ডটা কে যেন নিখুঁতভাবে ‘কেটে বের করে নিয়েছে করোনা আর্টারি পর্যন্ত। আর সবকিছুই ঠিক আছে। আর যারা এইভাবে মারা গেছে তাদের প্রত্যেকেরই বয়স পঁচিশ থেকে তিরিশ বছরের মধ্যে। পুরুষও আছে মহিলাও আছে।’ * কামাল, লীনা ও মহুয়া তিনজনই স্তব্ধ হয়ে, শুনল। লীনা ও মহুয়ার মুখটা শুকিয়ে গেছে।
লীনা কি যেন বলতে যাচ্ছিল। তার আগেই কামাল বলল, ‘দুর্ভাগ্য, আমার ‘বয়সটা হঠাৎ কয়েকদিন আগেই কোন ফাঁকে তিরিশ পেরিয়ে গেছে। আহা,
বেচারা খুনী! ও, এর জন্যেই বুঝি আমার বয়সের খোঁজ করা হচ্ছিল? : কামালের বাঁচালতায় মহুয়া বিরক্ত হয়ে বলল, ‘এ পর্যন্ত ক’জন মারা গেছে।
বললে?’ ..
, “দশজন গেছে এর আগের অমাবস্যা পর্যন্ত। গতরাতে একাদশ ব্যক্তির পালা হিল। নতুন কেউ মারা গেল কি না তাই দেখছিলাম কাগজে। . .
: কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার? কিন্তু এতদিন একথা আমাদের বলনি কেন?’ মহুয়া ভীতস্বরে অনুযোগ করল। . ‘ শহীদ বলল, আমিও কি জানতাম? কাল মি. সিম্পসন ডেকে পাঠিয়েছিলেন। উনিই ব্যাপারটা জানালেন আমাকে। ওঁর উপরেই ভার পড়েছে তদন্তের।’’ ., কামাল মনে মনে হিসেব করে বলল, দশটা অমাবস্যা, মানে, নয় মাস চলে | গেছে। এই নয় মাস কি অপরাধদমন বিভাগ নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছিল?’
** ‘ঠিক ঘুমোচ্ছিল না। ভিতরে ভিতরে জোরে-শোরে তদন্ত চলছিল। পরিণামে ‘অবশ্য নিরপরাধ কয়েকজন লোক ধরা পড়েছিল। তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শেষটায় তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মি, সিম্পসনের উপর। দায়িত্ব পেয়েই আমাকে উনি ডেকে পাঠিয়েছিলেন।” ‘: কোন হদিস পেলি?’ সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল কামাল। * বিন্দুমাত্র না। যে খুন করছে সে অত্যন্ত হুঁশিয়ার। সামান্য সূত্রও সে রেখে যায়নি। লাশগুলো পাওয়া গেছে হয়ত হোটেলের কামরায়, নাহয় পথের পাশে, ১১৬
ভলিউম-৭
,
.
.
নদীতে বা নির্জন কোন বাড়িতে। আর জানা গেছে, প্রত্যেকটি নিহত লোকই অতীতে হার্টের কোন না কোন একটা রোগে ভুগত। পরে অবশ্য সেরে গিয়েছিল . প্রত্যেকের রোগ।’:
কামাল চিন্তা জড়িত গলায় বলল, ‘এমনও তো হতে পারে, কোন গবেষণা কারী হয়ত হৃদযন্ত্রের রোগ গবেষণার জন্যে এই কাণ্ডটা করে বেড়াচ্ছে?’ ..:. ৯ : না, তা হতে পারে না। মাথা নাড়ল শহীদ, এমন ঝুঁকি নিয়ে আজকাল কেউ
এমনধারা বিজ্ঞানের সেবা করতে যায় না। দরকারও হয় না।’
‘হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টেশানের ব্যাপার নয় তো?” . সে রকম একটা সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কিন্তু এমন একটা বিরাট কাজ এমন গোপনে করা সম্ভব বলে আমার মনে হয় না,’শহীদ জবাব দিল,
কামাল জোর দিয়ে বলল, তাহলে আর কি হতে পারে? কোন সন্দেহ নেই, * এটা হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টেশানের ব্যাপার। দেশের আইনে হয়ত কোন নিষেধাজ্ঞা আছে,
তাই গোপনেই কেউ এই গবেষণা চালাচ্ছে।
“কিন্তু তার জন্যে বেছে বেছে অমাবস্যার রাত কেন? ও কাজটা তো অন্য দিনও হতে পারে?
তাই তো। তাই তো আমতা আমতা করতে লাগল কামাল। তারপর, বলল, এমনও তো হতে পারে যে, অমাবস্যার রাতে মানুষের হৃৎণ্ডি অত্যন্ত ভালভাবে ফাংশন করে?…
* ‘আঁ, কি বললি! শহীদ হো হো করে হেসে উঠল। লীনা আর মহুয়াও যোগ দিল হাসিতে। অনেকক্ষণ একটানা হাসি আর থামতেই চায় না।
‘ : বিব্রত, লজ্জিত কামাল ওদের থামাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। লীনা উঠে : পালিয়ে গেল। মহুয়াও চলে গেল তার পিছনে পিছনে।. ..:… ‘… ‘‘, টেলিফোনটা বেজে উঠল। হাসি থামিয়ে রিসিভার তুলল শহীদ।
হ্যালো,••া বলছি। মি. সিম্পসন, বলুন•••কোথায়? লাশটা কোথায়?.••বেশ, তাহলে আপনিই চলে আসুন না। •••, আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি..শ্রীমান কামাল
• চন্দ্র আহমেদ সাহেব এখানেই বসে আছেন..আচ্ছা।’ রিসিভার নামিয়ে রাখল,– শহীদ।
; বিব্রত কামাল ইতিমধ্যেই সংবাদপত্রের মধ্যে আত্মগোপন করেছে। কিন্তু | দৃষ্টিটা সংবাদপত্রে সীমাবদ্ধ থাকলেও মনযোগটা তার শহীদের দূরভাষণে | আলাপনের দিকেই নিবদ্ধ। আলাপনের ধরন শুনেই বুঝল, এ সেই অমাবস্যার
কাহিনীর সর্বশেষ অধ্যায় চলছে। নিশ্চয় নতুন কেউ হৃৎপিও-চোরের পাল্লায় পড়ে হৃদযন্ত্র হারিয়েছে। খবর জানাচ্ছেন সিম্পসন। এখুনি ছুটতে হবে অকুস্থলে। . ‘ ‘কিরে, তুই যাবি নাকি হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টেশান দেখতে?’.
• কুয়াশা-২১, ৭
।
১১৭
•• :
*
৮
।
.. . ‘আপত্তি নেই, মাথা না তুলেই বলল কামাল। … . : তাহলে তুই বোস, আমি কাপড়টা বদলে আসি।’ বেরিয়ে গেল শহীদ।
:: একটু পরেই মহুয়া আর লীনা এসে ঢুকল। কামাল গভীর মনযোগের ভান করে কাগজটা পড়তে লাগল। আর এক দফা এল চায়ের সরঞ্জাম মহুয়ার হাতের ট্রেতে। . . .’।
. মহুয়া একটা চেয়ারে বসে কাপে চা ঢালতে ঢালতে বলল, কামাল ভাই, হার্ট– ট্রান্সপ্লান্টেশানের বাংলা কি, বল তো? লীনা জিজ্ঞেস করছিল।’
, লীনা তারস্বরে প্রতিবাদ জানাল, ‘না কামাল ভাই, আমি কক্ষণো জিজ্ঞেস
করিনি। … .. . … . . . … … … আহা নাইবা করলে, লীনা। নাহয় আমিই জিজ্ঞেস করছি। বলনা তুমি?
* ‘ওসব বাংলা কাগজের সাব-এডিটরদের জিজ্ঞেস কর।’’…’
* ‘আপাতত, তাদের কাউকে তো হাতের কাছে পাচ্ছিনে। কে যেন বলছিল,
• হৃদযন্ত্র পরিবর্তন, না কি সব বাংলা শব্দ লেখা হচ্ছে। আবার কোন কাগজে যেন | দেখলাম লিখেছে, হৃদয় বদল। ……… … . …’
.. হা হা, আমিও দেখেছিলাম। সোৎসাহে বলল কামাল। … … “ | .. ২ ‘ওমা, দেখেছিলে বুঝি! তাই এত আগ্রহ এই হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টেশানের ব্যাপারে।
. লীনারও উৎসাহের কারণটা যেন এখন বোঝা যাচ্ছে।
: ….., “আহ বৌদি, তুমি কি শুরু করলে? আমি আবার কখন উৎসাহ দেখালাম।’ ফ্লাশ করল লীনা। …”, “* * * . .. * কান দুটো উত্তপ্ত হল কামালের। লীনার দিকে তাকাতে গিয়েও তাকাতে _ পারল না সে। মুখে কথাও ফুটল না। … “ . . . . . : মহুয়া সেদিকে কান না দিয়ে বলল, “জান, লীনার নাকি হার্টে কিসব ট্রাবল
দেখা দিয়েছে। আল্লাই জানে কি হয়েছে। বোধহয় ওর হার্টটাও বদলাতে হবে। . একটা উপযুক্ত হৃদয়দাতা পেলেই।’ । “ .. :
“বৌদি, প্লীজ। আমি এখুনি চলে যাব এখান থেকে। ..:: : …’
তোমার আর যেতে হবে না, ভাই। আমিই যাচ্ছি।” “: … *, তোমাকেও যেতে হবে না। আমি আর কামাল যাচ্ছি। শহীদ ঘরে ঢুকতে * ঢুকতে বলল, চল কামাল, মি. সিম্পসন এসে পড়েছেন। বাইরে গাড়িতে আছেন।
: :: সে কি! ওঁকে আসতে বল, অন্তত একটু চা-টা মহুয়া বলল। ‘
১. পরে হবেখণ। এখন উনি চা খেতে রাজি হবেন না। চলরে, কামাল।’.: *
কিন্তু যাচ্ছটা কোথায়? জানতে চাইল মহুয়া। :: :: ‘এই ঢাকা শহরেই। আপাতত মিরপুর রোডে। সেখানে একটা লাশ পাওয়া, | ‘ . . . . . . . . . . . . ভলিউম-৭
গেছে। তার পেট চেরা। সম্ভবত এটাও সেই অমাবস্যার রাতের শিকারীর কীর্তি। ফ্যাকাসে হয়ে গেল মহুয়ার মুখটা। তাহলে তুমি যা ভেবেছিলে শেষটায় তাই হল! সাবধানে থেক, ক্ষীণ কণ্ঠে বলল মহুয়া।
| ‘ভয় পেলে নাকি?
না না, ভয় পাব কেন? তবে কিনা সাবধানের মার নেই।– আচ্ছা আচ্ছা, সাবধানেই থাকব। চলি এবার। . কিন্তু টেলিফোনটা বেজে উঠল আবার। কামাল এগিয়ে গিয়ে রিসিভারটা তুলল, ‘হ্যালো, শহীদ সাহেবকে চান? ধরুন আপনি।’ শহীদকে, টেলিফোন ধরতে ইঙ্গিত করল কামাল। | শহীদ এগিয়ে গিয়ে রিসিভারটা ধরল । হ্যালো•••হা, আমি, শহীদ খান বলছি। কে? সাফাঁকাৎ হোসেন সাহেব•••দুঃখিত, আমি ঠিক চিনতে পারছিনে।•••ও, আচ্ছা আচ্ছা বলুন।••আপনার ছেলে নাজাকাৎ হোসেন::হ্যালো, হ্যাঁ, খুন হয়েছে কোথায়… মিরপুর রোডে? আমাকে তদুস্ত করতে বলছেন? বেশ তোহা, আমি রাজি আছি।’না না, মামার বাসায় আসবার দরকার নেই। আপনি মিরপুর রোডে যেখানে লাশ আছে সেখানেই যান। সি, সিম্পসন আর আমি সেখানেই যাচ্ছি। হ্যাঁ, নিশ্চিন্ত থাকুন আপনি, টাকা? না, টাকা পয়সার দরকার নেই।•••লাগলে সে দেখা যাবে পরে। হ্যাঁ, চলে আসুন। … রিসিভার নামিয়ে রেখে শহীদ বলল, নিহত ভদ্রলোকের বাবা ফোন করেছিলেন। তিনি আমাকে তদন্তে নিয়োগ করতে চান। চিনিস তো ভদ্রলোককে? সাফাঁকাৎ হোসেন। বিজনেস ম্যাগনেট। তারই ছেলে নাজাকাৎ হোসেন। চল যাই এবারে, মি. সিম্পসন বোধহয় অধৈর্য হয়ে উঠেছেন।
_
+
:
–
তিন :
পথের ধারে ভিড় জমেছে। কৌতূহলী জনতা একটা খাঁটিয়াকে ঘিরে ধরে গুঞ্জন করছে। কনস্টেবল ভিড় সামলাচ্ছিল। মি. সিম্পসন, শহীদ ও কামাল গাডি. থেকে নামতেই তাদের জন্য পথ করে দিল ভিড় ঠেলে।
– খাঁটিয়ার উপরে চাদর দিয়ে লাশটা ঢাকা। পাশেই মাটিতে বসে আছেন এক শোকাতুরা বৃদ্ধা। তাঁর রেখবহুল গাল বেয়ে অবিরাম অশ্রু ঝরছে। নিঃশব্দে কাঁদছেন তিনি। *. মি. সিম্পসন লাশের মাথার দিকের চাদরের প্রান্তটা তুললেন। চোখে পড়ল
পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর বয়সের যুবকের মুখ । সুদর্শন চেহারা। তামাটে রঙ। কালো কোঁকড়া চুল। চওড়া কপাল। খাড়া নাক। চোখ দুটো অর্ধমুদ্রিত। নীলচে রঙ কুয়াশা-২১
১১৯
*
.
|
‘
.:::
ধরেছে মুখে। তাতে আতঙ্ক ও যন্ত্রণার ছাপ। মুখে, কপালে শুকনো কাদা লেগে আছে। … শহীদ এক নজর দেখে বলল, ‘আঘাতটা এসেছিল নিতান্তই আকস্মিক ভাবে।
‘ তদন্তকারী অফিসার গোলাম মওলা দাঁড়িয়েছিলেন পাশেই। তিনি বললেন, স্যার, ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। লাশটা সরিয়ে ফেলি?’
মি সিম্পসন চাদর নামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘তদন্ত হয়ে গিয়ে থাকলে সরিয়ে ফেলতে পারেন। মর্গে পাঠাতে পারেন ইচ্ছা করলে।
শহীদ বলল, সেই ভাল। মিছামিছি ভিড় বাড়িয়ে লাভ কি? আপনি লাশ পাঠিয়ে দিন মর্গে, আর কোথায় লাশটা পড়েছিল সেই জায়গাটা দয়া করে আমাকে একবার দেখিয়ে দিন। চলুন, আমরা বাইরে গিয়ে দাঁড়াই। ‘
শহীদ, কামাল ও সিম্পসন ভিড় ঠেলে বাইরে এসে দাঁড়ালেন। মওলা সাহেব পিছনে পিছনে এলেন । তিনি বললেন, “স্যার, লাশটা পড়েছিল ঐখানে। আঙুল দিয়ে রাস্তার পাশের ঢালু জায়গাটা দেখালেন তিনি। উপুড় হয়ে পড়ে ছিল লাশটা।’…।
শহীদ নেমে গেল পায়ে পায়ে। জায়গাটা পিচ্ছিল । দু-তিন হাত নিচে নেমে মাথা নুইয়ে কি যৈন দেখল অনেকক্ষণ ধরে। তারপর উঠে এল। গোলাম মওলা সাহেব লাশ তোলার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত ছিলেন। শহীদ জনতার দিকে আনমনে তাকিয়ে ছিলএক দৃষ্টিতে। ভিড়ের মধ্যে থেকে নানা রকম গুঞ্জন ভেসে আসছে। মানুষগুলোর চোখে-মুখে শুধু কৌতূহলই নয় উৎকণ্ঠার ভাবুও প্রবল।
লাশটা গাড়িতে তুলতেই ভিড় ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। দু-একটা গাড়িও দাঁড়িয়েছিল। আরোহীরাও নেমেছিল কৌতূহল নিরসন করতে। সেই রকম একটা গাড়ির দিকে দৃষ্টি পড়তেই চমকে উঠল শহীদ। ড্রাইভিং সিটে বসা লোকটাকে চেনা বলে মনে হল তার। কুয়াশা? হ্যাঁ, কুয়াশাই বসে আছে গাড়িতে। দৃষ্টি বিনিময় হল দুজনের মধ্যে। দুজনই হাসল। কামালেরও দৃষ্টি পড়েছিল কুয়াশার দিকে। সে উল্লাসে চিৎকার করে উঠতে যেতেই বোধহয় নিজের নির্বুদ্ধিতা,
অনুধাবন করে উৎসাহ দমন করল।
শহীদ দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতেই গোলাম মওলা বলল, সাফাঁকাৎ সাহেব, মানে নিহত যুবকের বাবা এসেছেন। আপনার খোঁজ করছেন তিনি। | শহীদ বলল, “ওঁকেও থানায় যেতে বলে দিন। সেখানেই কথা হবে। আসুন, মি, সিম্পসন।’
: গাড়িতে চাপল কামাল, শহীদ ও মি. সিম্পসন। মিনিট পনের পরে পৌঁছুল থানায়। পথে কেউ কোন কথা বলল না। ওরা বসল অফিসার-ইন চার্জ কমরুদ্দিন শেখের কামরায়। শেখ সাহেব তখন অন্য এক তদন্তের কাজে বাইরে ১২০
ভলিউম-৭
..
।।
*
–
–
–
–
–
|
•;
‘
*
“
f
|
L
।
‘«
|
=
=
=
দিকে।
}
–
,
,
গিয়েছিলেন ।
তদন্তকারী অফিসার গোলাম মওলা সাফাঁকাৎ সাহেবকে নিয়ে থানায় পৌঁছুলেন আরও কয়েক মিনিট পরে। সাফাঁকাৎ সাহেবের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন তিনি।
বৃদ্ধ সাফাঁকাৎ সাহেব শহীদের হাত দুটো ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। কি যেন বলতে গিয়েছিলেন তিনি কিন্তু কান্নার আবেগে কণ্ঠ তার রুদ্ধ হয়ে গেল। শহীদ তাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল, “আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব আপনার ছেলের খুনীকে খুঁজে বের করবার। কিন্তু আমার সাথে সহযোগিতা করতে হবে আপনাকে, আর গোপন রাখতে চেষ্টা করবেন না কোন কথা।
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন তিনি। রুমালে চোখ-মুখ মুছলেন। ৮. মি. সিম্পসন সিগারেট ধরালেন। ধোয়া ছেড়ে প্রশ্ন করলেন, “আপনি খবরটা কখন শুনেছেন; সাফাঁকাৎ সাহেব?’
কান্না ও শ্লেষ্মাজড়িত কণ্ঠে সাফাঁকাৎ সাহেব জবাব দিলেন, সকাল সাতটার ‘খবরটা কে দিয়েছিল? … আমাদের চাকরটারিতে নাজু বাসায় ফেরেনি। তাই স্বভাবতই আমরা, চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। এমনটা তো কখনও এর আগে হয়নি। প্রায় সারা রাত ধরেই জেগে ছিলাম আমরা। আর বিভিন্ন জায়গায় টেলিফোন করেছি। অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে কিনা তা জানতে থানায় আর হাসপাতালে ফোন করেছি। সকাল বেলা নিজেই বেরিয়ে পড়েছিলাম খোঁজ নিতে। আমাদের ড্রাইভার, চাকর, বাবুর্চি সবাই বেরিয়েছিল খুঁজতে। একদফা খুঁজে গিয়ে বাসায় ফিরেই কান্নার রোল শুনে বুঝলাম, সর্বনাশ হয়ে গেছে। ‘
‘গতরাতে কোথায় গিয়েছিল? মানে কোথায় যাবার কথা ছিল, বলতে পারেন? . সন্ধ্যায় ওর মাকে বলে গিয়েছিল, ক্লাবে যাচ্ছে।
গিয়েছিল?’. : হ্যাঁ। ওর বন্ধুদের কাছে জেনেছি। সেখান থেকে সাড়ে ন’টায় বেরিয়ে যায়। কোথায় গিয়েছিল, কাউকে বলেনি কিছু। ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়িটা ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল আগেই।
নাজাকাৎ কি আপনার একমাত্র সন্তান?’ :
‘জি, না। ওর ঘোট আর এক ভাই আছে। লণ্ডনে পড়াশোনা করছে। মেয়েটাও লণ্ডনে।
• নাজাকাৎ কি করত?” : কুয়াশা-২১ : ‘.
. ‘
।
–
•,
–
• ১২১
*
*
*
. . ‘মার বিজনেস দেখত। আজকাল সে-ই ব্যবসা দেখত। আমি বলতে গেলে রিটায়ার করেছিলাম। বয়স তো হয়েছে।’
‘বিবাহিত?’. . . . . • ‘জ্বি, না। দু’এক জায়গায় কথাবার্তা হচ্ছিল। তবে এগোয়নি বেশিদূর। ‘
‘কোনরকম বদভ্যাস? বাজে নেশাটেশা?’ .. … সিগারেট খেত খুব। অন্য কোন নেশাটেশা বা বদভ্যাস ছিল কিনা জানি না। মাঝে-মধ্যে মদদ খেত। কিন্তু সে-ও কালে ভদ্রে।
… শহীদ প্রশ্ন করল, আপনার ছেলের কখনও হার্টট্রাবল দেখা দিয়েছিল কি?
হ্যাঁ, লণ্ডনে পড়াশোনা করার “ময় হঠাৎ ওর এনজিনাল পেকটোরিসের অ্যাটাক হয়েছিল। ভাল হয়ে গিয়েছিল অবশ্য। তবু মাঝে মাঝে ই, সি, জি, করে দেখত। কোন ট্রাবল ইদানীং ধরা পড়েনি। ডাক্তারের মতে ওর হৃদযন্ত্র ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু এ প্রশ্ন কেন, মি. খান? আপনার কি মনে হয়•••?’ : ‘পোস্টমর্টেমের রেজাল্ট জানবার আগে কিছুই বলা যায় না। তবে গতকাল অমাবস্যা গেছে। তাই আমার ঐ রকম একটা কিছু আশঙ্কা হচ্ছে। যাক আপনার বোধহয় এখন বাসায় ফিরে যাওয়া দরকার। আপনাকে আর আটকে রাখব না।’!, সেই ভাল। পরে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করব। সায় দিলেন মি. সিম্পসন।
ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে গেলেন সাফাঁকাৎ সাহেব ।” : গোলাম মওলা সাহেব বললেন, ‘আমারও ধারণা এটা সেই ম্যানিয়াকেরই কীর্তি । এ খুনটাও হয়েছে অমাবস্যার রাতে। স্যার, আমাদের এই থানাতেই এই নিয়ে তিনবার এরকম ঘটনা ঘটল। ঠিক একই রকম কাটার দাগ। রিবের ঠিক নিচ বরাবর। ভুড়ি বেরিয়ে গেছে তিনজনেরই’। তিনজনেরই ঊর্ধ্বাঙ্গ ছিল অনাবৃত। আর তিনজনেরই বয়স পঁচিশ থেকে তিরিশ বছরের মধ্যে। সত্যি বলতে কি, স্যার, অমাবস্যা কাছাাছি এলে আমাদের নিজেদেরই কেমন ভয় ভয় করে। কে জানে, কাকে কখন অ্যাটাক করে বসে।– “ভয় তো হবারই কথা, কামাল এতক্ষণে মুখ খুলল,, ‘আমরা তো, স্যার, এতদিন ব্যাপারটা কোন রকমে বাইরে চাপা দিয়ে রেখেছি। কিন্তু এখন বোধহয় আর তা সম্ভব নয়।
: সবাই চুপ করে রইল অনেকক্ষণ। . . . . .। *. মি. সিম্পসন যেন কি বলতে যাচ্ছিলেন। মওলা সাহেবের কণ্ঠ আবার শোনা, গেল, ‘অ্যাণ্ড ডু ইউ নো, স্যার, মাই ব্রাদার ওয়াজ এ ভিকটিম অব দিস ডেভিল?’
‘. আপনার ভাই! বিস্মিত হলেন মি. সিম্পসন।, করুণ হাসি হাসলেন গোলাম মওলা সাহেব, হ্যাঁ স্যার, আমার সহোদর। হি.
১২২..
‘ভলিউম-৭।
* ‘‘- ‘.
:
T
।
=
=
=
“,
“
“
“
.
.\’ * * . .,,
,,
,
,
ওয়াজ দা ফার্স্ট ভিকটিম। অথচ কিছুই করতে পারলাম না। উঠে দাঁড়ালেন তিনি, ‘যাই, জরুরি কাজগুলো সেরে ফেলি। টলতে টলতে বেরিয়ে গেলেন মওলা সাহেব। ..
• বাইরে পদশব্দ শোনা গেল। অফিসার-ইন-চার্জ শেখ সাহেব ঢুকলেন, সঙ্গে মধ্য বয়সী এক ভদ্রলোক।
মি. সিম্পসন বললেন, ‘আসুন শেখ সাহেব, আপনার বিনানুমতিতে ঢুকে পড়েছি আপনার কামরায়।
• “নিশ্চয়ই আসবেন, স্যার; নিশ্চয়ই আসবেন। বসুন, ডাক্তার সাহেব। আলাপ করিয়ে দিই। ইনি ড. কুদসী, হার্ট স্পেশালিস্ট । উনি মি. সিম্পসন, শহীদ খান সাহেব আর কামাল আহমেদ সাহেব।’… :
ড. কুদসী অভিবাদন জানিয়ে বসতে বসতে সহাস্যে বললেন কি সৌভাগ্য আমার। একসঙ্গে এতগুলো বিখ্যাত লোকের সাথে আলাপ হল। ভাগ্যিস, গাড়িটা চুরি হয়েছিল।… : আপনার নামটাও তো আমাদের, যখৃেষ্ট শোনা আছে। বেশ বড় গোছের নাম। হার্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে আপনার খ্যাতি, তো দেশ-জোড়া।’ শহীদ জবাব দিল। :::একই বোধহয় বাড়াবাড়ি করছেন, প্রশংসা করতে গিয়ে। আসলে আমি তথাকঞ্চিত স্পেশালিস্ট বই কিছু নই। এখানে স্পেশালিস্ট সংখ্যা হাতে গোণা যায় বলেই লোকে আমাকে এত চেনে। জানেন, তো, নেই দেশে ভেরেণ্ডা গাছও মহীরুহের কদর পায়। বিনয়ে জানালেন ড. কুদসী। . .. . . . .
. কামাল বিস্মিত দৃ! মেলে ড. কুদসীকে দেখছিল। ভদ্রলোকের বয়স পঁয়তাল্লিশের মত হবে দীর্ঘ দেহ। মজবুত স্বাস্থ্য। ঐ দেহে আছে বিপুল শক্তি। ব্যক্তিত্ব-ব্যঞ্জক চেহারা। উজ্জ্বল দুটি চোখ-শুধু উজ্জ্বল নয়, অত্যন্ত তীক্ষ্ণ। দেখলে ভক্তির ভাব আসে, আবার ভয়ও হয়। : মহৎ লোক অবশ্যই বিনয়ী হয়। আপনি তার আর একটা প্রমাণ। ড:
কুদসীর দিকে সিগারেটের প্যাকেট বাড়িয়ে দিতে দিতে শহীদ বলল। ‘ : ড. কুদসী মাফ চেয়ে বললেন, আমি ধূমপান করি না। ঘড়ি দেখে ব্যস্ত হয়ে, উঠলেন তিনি। শেখ সাহেবকে বললেন, “আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, শেখ সাহেব। ..’এই যে লিখছি, ড, সাহেব। কোত্থেকে চুরি হয়েছে গাড়ি?’ ডায়েরী লিখতে লিখতে প্রশ্ন করলেন শেখ সাহেব, খরটা বলুন।
• ‘চুরি হয়েছে আমার গ্যারেজ থেকেই। রাত নয়টায় নিজেই গ্যারেজে গাড়ি রেখেছি। সকালে বেরোবার সময় দেখি গাড়িটা নেই। অথচ তালা দেওয়া আছে । পরে অবশ্য দেখলাম, ওটা অন্য একটা তালা।’ কুয়াশা-২১
১২৩
.
.
‘! .
।
.
– .
সাহেব নিজে
করে এড়ানো চায়ের রং
‘কি গাড়ি ডাক্তার সাহেব?’ কামাল জানতে চাইল। ‘মার্সিডিস। শেখ সাহের মুখ তুলে বললেন, ‘শুধু একটা টেলিফোন করলেই হত। ‘তা হয়ত হত। তবু ভাবলাম, একবার নিজে আসাই ভাল।’
কথাবার্তার ফাঁকে কখন শেখ সাহেব চায়ের অর্ডার দিয়েছিলেন কেউ খেয়াল করেনি। একটা ট্রেতে করে চায়ের দোকানের এক ছোকরা ভাঙা কাপে কয়েক কাপ মালাই ভাসানো চা এনে হাজির করল।
পরিবেশন করলেন শেখ সাহেব নিজেই। কামাল ও শহীদের চায়ের তেষ্টা পেয়েছিল, কিন্তু চায়ের রং আর কাপের সৌন্দর্য দেখে ইচ্ছেটা উবে গিয়েছিল। কি করে এড়ানো যাবে, অথচ শেখ সাহেব ক্ষুব্ধ হবেন না, তাই ভাবছিল দু’জন। ‘; . কুদসী পরিষ্কার বললেন, অসময়ে তিনি চা পান না।
* শহীদ তার কাপটা তুলে প্রায় সবটাই কামালের কাপে ঢেলে দিয়ে বলল, ‘নে খা। সেই কখন থেকে চায়ের তেষ্টা পেয়েছে তোর। আমার বন্ধুটি, বুঝলেন শেখ সাহেব সারাদিন চা খায়। কিরে, আর এক কাপ দিতে বলব, কামাল?
– শেখ সাহেব ব্যস্ত হয়ে বললেন, তাহলে আর এক কাপ আনিয়ে দিই? রহমত আলী।
না না, আর লাগবে না। কামাল হি-হি-হি করে হেসে উঠল। মনে মনে সে শহীদের পিণ্ডি চটকাতে লাগল। ‘মি, সিম্পসন কামালের দূরবস্থা কল্পনা করে অতিকষ্টে হাসি চাপলেন। গম্ভীর হয়ে চায়ের কাপটা টেনে নিলেন তিনি।
“ চা’টা শেষ হতেই কামাল উঠে দাঁড়াল। বলল, জরুরি কাজ আছে আমার, আমি চলি এবার।
শহীদ বলল, আমিও যাব। মি, সিম্পসন, আপনি বরং বসুন।, হ্যাঁ, তোমরা যাও।’
* শহীদ ড. কুদসীকে বলল, ভাল কথা ড: কুদসী, আপনার চেম্বারে কি ই. সি, | জি.-র ব্যবস্থা আছে?’
‘আছে, একটা ই. সি. জি, প্ল্যান্ট, ড. কুদসী জানালেন। ‘আমার ছোট বোনের একটা ই. সি. জি. করানো দরকার। ‘বেশ তো, সময় করে নিয়ে আসবেন আমার চেম্বারে। আমি না। আমার এই বন্ধুটি যাবে বোনটিকে নিয়ে। ‘বেশ।
.
.।
৮
।
১২৪
. ভলিউম-৭
চার
L
–
–
—
—
–
–
–
বারান্দায় পা দিয়েই কামাল নিচু গলায় শহীদকে প্রশ্ন করল, এই ড. কুদসীকেই কিছুদিন আগে তার এক অ্যাসিস্ট্যান্ট খুন করার জন্যে সার্জিক্যাল-নাইফ নিয়ে তাড়া করেছিল, তাই না?
-তোরও মনে আছে দেখছি। হ্যাঁ, ইনিই সেই ড. কুদসী। ওঁর এক আধ পাগলা অ্যাসিস্ট্যান্ট ওকে সার্জিক্যাল-নাইফ নিয়ে খুন করতে গিয়েছিল । ওর স্টাফরা অনেক কষ্টে ওঁর প্রাণরক্ষা করে, শহীদ বলল;
‘সেই পাগলটা কি এখনও ওঁর ওখানটায় চাকরি করছে? যতদূর জানি, লোকটাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন ড. কুদসী। ‘পুলিসে দেননি?”
বোধহয়! কেন, ভয় করছে নাকি ড, কুদসীর ওখানটায় যেতে?’ আরে না। হঠাৎ মনে পড়ে গেল ঘটনাটা, তাই।
গাড়ির কাছে গিয়ে হঠাৎ শহীদ দাঁড়িয়ে পড়ল। কামালকে বলল, ‘তুই যা, আমি মওলা সাহেবের সাথে আলাপ করে আসি।
পরদিন সন্ধ্যায় ড. কুদসীর চেম্বারে আবার প্রসঙ্গটা উঠল। | ড. কুদসীর চেম্বার ইস্কাটনে। সকাল, বিকাল দু’বেলা চেম্বারে আসেন। ঘোট। একটা দোতলা বাড়ি। একটা গলির মধ্যে। নিরালয়। দোতলায় ই. সি. জি. প্যান্ট ও ছোট-খাট একটা ল্যাবরেটরি। নিচ তলায় সামনের কামরায় বসেন তাঁর দুই অ্যাসিস্টান্ট-ড. তালেব আহমেদ ও ড. মিন্নত সরকার। স্টাফের মধ্যে আর যারা– “আছে তারা হল, প্যান্ট-অপারেটর সুজাউদ্দৌলা ও নার্স রূপালী বড়ুয়া। দারোয়ান
আছে একজন।
. লীনাকে নিয়ে সকালেই গিয়েছিল কামাল। তখন রোগীর ভিড় ছিল। ভ: কুদসী অত্যন্ত সিরিয়াস ও মেথডিক্যাল চিকিৎসক। অপর দশটা তথাকথিত স্পেশালিস্টদের মত অর্থোপার্জনটাই তাঁর কাছে বড় দায়। পেশাটাকে তিনি সাধনার মত করে গ্রহণ করেছেন। প্রত্যেকটি রোগীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করেন। ড. তালেব প্রাথমিক উপসর্গগুলো লিখে স্নিপসহ রোগীকে পাঠিয়ে দেন ড, কুদসীর, কাছে। সেখানে কম করে হলেও আধ ঘন্টা নানারকম প্রশ্ন করেন ড. কুদসী। তারপর শুরু হয় পরীক্ষা।
সকালের দিকেই রোগী দেখেন তিনি। বিকেলে ঢোকেন ল্যাবরেটরিতে।
কামাল বিকেলে আবার রিপোর্ট আনতে গেল। লীনা আর গেল না। সম্ভবত ।
:
১২৫
=
=
=
=
=
=
=
=
.
কুয়াশা-২১
*
|
কামালের অতি আগ্রহের ফলেই। ড, কুদসী এবেলা এখনও এসে পৌঁছননি। কাছেই এক মরণাপন্ন রোগীকে দেখতে গেছেন। সিনিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ড, তালেবও গেছেন তার সাথে। ‘ … .. | মাঝখানের কামরায় বসেছিল জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট মিন্নত আলী । সুদর্শন হাসি-খুশি তরুণ। সদালাপী। সকাল বেলা প্রথম দর্শনেই তরুণ ডাক্তারকে ভাল লেগেছিল কামালের। সে-ই হেসে অভ্যর্থনা জানাল। বলল, বসুন, ডাক্তার সাহেব, নেই। রোগী দেখতে গেছেন। এখুনি ফিরবেন। | মামার রোগীর খবর কি?
.. ভাল, খুব ভাল। অ্যাজ এ ম্যাটার অব ফ্যাক্ট, শী নেভার হ্যাঁজ হ্যাড অ্যানি ট্রাবল। মিস লীনা খানের হার্টের রোগ আছে, এ ধারণাটা হল কি করে তা বুঝতে পারলাম না। সুস্থ ও সবল হৃৎপিণ্ড। ওর গ্রাফটা পড়া হয়ে গেছে। শুধু স্যারের সই বাকি। তাছাড়া উনিই তো গইনাল রিডিং দেবেন।’
ডাক্তার সাহেবের গাড়ির হদিস পাওয়া গেল কিছু? ‘পাওয়া গেছে। গুলশান ছাড়িয়ে একটা জঙ্গলের মধ্যে।
‘কোন ক্ষতি-টতি?”. . না, এবারে অক্ষত অবস্থায়। স্যারের কপালটা ভালই বলতে হবে। পুলিস অবশ্য যথাসা। চেষ্টা করেছে। ভাল কথা, আপনাদের সেই হৃৎপিণ্ড-চোরের খবর কি? আজকের কাগজে দেখলাম, নাজাকাৎ হোসেনও সেই পিশাচটার কবলে, পড়েই মারা গেছে। ওরও হৃৎপিণ্ডটাই কেটে নিয়ে গেছে। উঃ, সত্যি.কি বর্বর কাণ্ড বলুন তো! মানুষ, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব এমন নিষ্ঠুর হতে পারে! হতে পারে এমন নৃশংস? আমার মনে হয় কি জানেন, কামাল সাহেব, লোকটা, মানে, যে এই হৃৎপিণ্ড চুরি করে বেড়াচ্ছে, সে মারাত্মক কোন ম্যানিয়ায় ভুগছে। জানেন, আমার
তো আজকাল রাতে একা একা পথ চলতে ভয় লাগে। বাসায়ও মাঝে মাঝে ভয়, করে । একা একা থাকি কিনা?গায়ে কাঁটা দেয়। এই দেখুন, লোমলো কেমন কাঁটা দিয়ে উঠেছে। হাতটা এগিয়ে দেখাল মিন্নত আলী কামালকে। অথচ জানেন, আমি মোটেও ভীতু লোক নই। অমাবস্যার অন্ধকারে বাজি রেখে শোনে । গিয়েছিলাম। ভূতের পাত্তা পাইনি, কিন্তু এটা যে বাস্তব! …… .
. ভয় পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। শুধু আপনার কেন, চারদিকে সবখানেই কেমন একটা আতঙ্কের ভাব দেখা দিয়েছে। যে ভয়ঙ্কর কাণ্ড চলছে তাতে দেশ সুদ্ধ লোকও যদি সন্ধ্যার পর দরজা বন্ধ করে দেয় তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। পিশাচটা কখন, কার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কে জানে? কামাল বলল। …, | ‘ঠিক তাই। নাজাকাতের কথাই ধরুন। এই তো সেদিন এসেছিল এই চেম্বারে। ই. সি. জি, করিয়ে নিয়ে গেছে। একদা ওর হার্ট ট্রাবল ছিল। এনজিনাল ১২৬।
: ভলিউম-৭
পেকটোরসে ভুগত। এখন রাতিমত সুস্থ। হাসি-খুশি লোকটা । দেখা হলেই একগাল হাসি উপহার দিত। অথচ কে জানত, পিশাচটা তার ওপর চড়াও হবে?”
নাজাকাকে তাহলে চেনেন আপনি?’ ‘নিশ্চয়ই। বললুম তো, আমাদের রোগী ছিল সে।’;
শেষ কবে এসেছিল, বলতে পারেন? . এই তো পাঁচ-ছয় দিন আগে, মনে মনে হিসাব করে বলল মিন্নত আলী। ‘আশ্চর্য, ব্যাপারটা কি জানেন, কামাল সাহেব, ম্যানিয়্যাকটার চারজন শিকারকে
আমি চিনি। চারজনই আমাদের পেশেন্ট ছিল।’..
. বলেন কি! স্তম্ভিত হল কামাল।
“তবে আর বলছি কি, এই চেম্বারেই আমি ওদের দেখেছি। অ® সেই চারজনের মধ্যে তিনজনই শয়তানটার শেষ তিন ভিকটিম। সর্বশেষ হল, নাজাকাৎ। ……. :একটা সিগারেট ধরাল কামাল। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, ‘ড. কুদসী জানেন
একথা?’ ::
।
।
।
।
ওঁর এসব খেয়াল কম। রোগীদের নাম, চেহারা, পরিচয় ভুলে যেতে ওঁর একটুও সময় লাগে না। বলেছিলাম তাকে, উনিও বিস্মিত হয়েছেন খুবই।’
কতদিন আছেন আপনি এখানে?’ কামাল সিগারেটে টান দিয়ে প্রশ্ন করল। ১. প্রায় এক বৃহুর হল। মেডিক্যাল কলেজ থেকে বেরিয়েই এখানে শিক্ষানবিশী করছিলাম। তবে মাস তিনেক আগে পাকা পোত হয়েছে চাকরিটা । আমাদের এখানেও এক ম্যানিয়া স্তু ডাক্তার ছিলেন। অবশ্য ঠিক’ ম্যানিয়াক বলা যায় না, তবে হিংস্র প্রকৃতির লোক ছিলেন তিনি। কিছুটা ছিটগ্রস্তও। তিনি চলে যাওয়ায় চাকরিটা পাকা হল আমার। ::… ‘হ্যাঁ, কি একটা ইনসিডেন্ট হয়েছিল শুনেছিলাম মাস কয়েক আগে। … :
| ‘হ্যাঁ, মাস তিনেক আগে, উনি মানে ড, তোক ছুরি নিয়ে তাড়া করেছিলেন ড. কুদসীকে। আমরা অনেক কষ্টে ওঁকে রক্ষা করি। মিস রূপালী বড়ুয়া তো চেতনাই হারিয়ে ফেলেছিল, ভয়ে।’
‘তা, হঠাৎ ঐ রকম তাড়া করার কারণটি কি?
‘এমনিতেই ভদ্রলোক মাঝে মাঝে স্রেফ অকারণে খেপে যেতেন। তবে সেদিন কি নিয়ে যেন দুজনের মধ্যে বচসা হয়েছিল। ঠিক বলতে পারব না। জানেন। কামাল সাহেব, ড, তোগালক ছিলেন যাকে বলে রিয়্যাল জিনিয়াস। যদিও সামান্য এল, এম, এফ, ডাক্তার। তবু আমরা যারা এম. বি. বি. এস. পাস করেছি এমন কি যারা বিদেশ থেকে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে এসেছি তারাও ড, তোগলকের নখের যোগ্যতাটুকুও রাখে না। পরিবেশ অনুকূল পেলে তিনি পৃথিবীর একজন সেরা কুয়াশা-২১
* ১২৭
চিকিৎসক-বিজ্ঞানী হতে পারতেন। উপরে যে ল্যাবরেটরিটা আছে সেটাও তারই সৃষ্টি। আগে প্রধানত উনিই গবেষণা করতেন ল্যাবরেটরিতে। ড. কুদসীও ওঁকে সমীহ করতেন। কিন্তু মাঝে মাঝে খেপে গিয়ে গোলমাল করতেন ড. তোগলক। মাঝে মাঝে কিছুদিনের জন্যে গায়েবও হয়ে যেতেন। শেষের দিকে পাগলামীটা বেড়ে গিয়েছিল। হিংস্রতাও যেন বাড়ছিল। একদিন তো এক রোগীকেই গলা টিপে মারতে গিয়েছিলেন তিনি। অথচ কেন জানি না, ড. কুদসী ওকে ঘাঁটাতেন
। কিন্তু ওঁর সহ্যের সীমা পেরিয়ে গিয়েছিল। মাস চারেক আগে হঠাৎ আগের মতই একদিন গায়েব হয়ে গেলেন ড, তোগল। ফিরলেন মাস খানেক পরে। সেইদিনই ঘটল সেই ইনসিডেন্টটা। আমি ও ভ, তালেব এই রূমে ছিলাম। চিৎকার শুনে দু’জন দৌড়ে গেলাম দোতলায়। ড. তোগল বাঘের মত গর্জন করছিলেন আর, ড. কুদসীকে তাড়া করছিলেন। প্রাণভয়ে দৌডুচ্ছিলেন তিনি। ড. তালেব গিয়ে পিছন থেকে ড. তোগলককে ধরে ফেললেন। আমি ছুরিটা কেড়ে নিলাম। উ তোলকের কি প্রচণ্ড হুঙ্কার! পারলে উনি আমাদেরই খুন করেন!’ থামলেন ড. মিন্নত।
“তারপর?
‘ছেড়ে দিতেই উনি চলে গেলেন। বোধইয় শক্তি ফুরিয়ে এসেছিল। তেমন সবল লোক ছিলেন না অবশ্য। তাছাড়া স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম-কানুনও কখনও মানেননি তিনি। অনিয়ম করেছেন সারাজীবন। ব্যাচেলার মানুষ। দেখা-শোনার কেউ ছিল না। ৬,
* ‘পুলিসে দিলেন না?– ডকুদসী রাজি হলেন না। যাবার সময় আমাদের তিনজনের দিকেই অগ্নিবর্ষী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ড. তোগল বললেন, ‘সব কটাকে আমি দেখে নেব।’ তারপর থেকে আর ড. তোলকের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। হয়ত আবার আগের মতই নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন, এবং মারমুখো হয়ে ফিরে আসছেন।
– বাইরে গাড়ি থামাবার শব্দ পাওয়া গেল। ড. মিন্নত বলল, স্যার আসছেন
1
*
*
*
‘ .।
t;
“
,
,
,
,
}
‘
বোধহয়।
{
একটু পরেই ড. কুদসী রূমের মধ্যে ঢুকলেন। পিছনে ড. তালেব। : কামালকে ডেকে বললেন, ‘হ্যালো, ইয়ং ডিটেকটিভ, কি খবর?”
:’খবর তো আপনার কাছে। : “আমার কাছে?’ বিস্মিত হলেন ড. কুদসী। তারপর কি যেন মনে পড়ে যাওয়ায় বললেন; আই সী । শহীদ খানের বোনের ই, সি, জি, রিপোর্ট নিতে
এসেছেন বুঝি?’ .. ‘ • … “জ্বি, হ্যাঁ। ১২৮ . ‘
ভলিউম-৭
‘ই. সি. জি.-র কোন দরকারই ছিল না। হার হার্ট ইজ অলরাইট। মিন্নত, রিপোর্টটা তৈরি হয়েছে? গ্রাফটা দেখি?’; * টেবিলের উপর রাখা কাগজের স্তূপ থেকে পিনে আঁটা একগুচ্ছ কাগজ বের করে দিল ড. মিন্নত। ড. কুদসীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, এই যে, স্যার।’ .. * গ্রাফটার ভাঁজ খুলে আলোতে ধরলেন ড. কুদসী। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুরির ফলার চাইতেও তীক্ষ্ণতর হয়ে উঠল। পুরো এক মিনিট দেখে বললেন, ওয়াণ্ডারফুল। না, কোন গোলমাল নেই। বীট অলরাইট। আর্টারিগুলো ক্লিয়ার। হার্টের মাসলও চমৎকার। আগে সামান্য কনজেস্টেড ছিল। পাতা উল্টিয়ে পরের কাগজটা পড়ে পকেট থেকে কলম বের করে সই করে দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, হৃদরোগ বলতে যা বোঝায় তা নেই, তবে কিনা হৃদয়ে নানারকম রোগ বাসা বাঁধে। ফার্মাকোপিয়ায় তার ওষুধ লেখা:নেই। যন্ত্রেও ধরা পড়ে না সে রোগ। তেমন রোগ হলে অবশ্য আমরা অসহায়।
কামালও হেসে ফেলল । ড. তালেব ও ড, মিন্নত মুখ ফেরাল অন্যদিকে । ড. কুদসীর চেম্বার থেকে কামাল বেরোল সাড়ে আটটায়।
নিউ মার্কেটে কেনা-কাটার দরকার ছিল কামালের। এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে নিউ মার্কেটের দিকে এগোেল কামাল। ট্রাফিক সিগন্যাল পড়েছে। গাড়ি থামিয়ে সবুজ বাতি জ্বলে ওঠার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল সে। ডানদিকে আনমনে মুখ ফেরাতেই দেখল, আধা-অন্ধকারে স্যুট পরা, ফেল্টহ্যাট মাথায় ঢ্যাঙ্গা-পাতলা একটা লোক রাস্তার দিকে বারবার তাকাচ্ছে আর হতে ধরা কাগজে কি যেন লিখছে। কৌতূহল হল কামালের। সবুজ বাতি জ্বলে উঠতেই কামাল মোড় পেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে গাড়িটা পার্ক করল। তারপর ফিরে এল সেই অন্ধকার
জায়গাটায়। “ . * . . ‘ । : :
:
: : | যা ভাবা গিয়েছিল তাই। লোকটা আর কেউ নয়, আদি ও অকৃত্রিম শ্ৰীমান স্যানন ডি, কন্টা। তখনও সে চলমান গাড়িগুলোর দিকে তাকাচ্ছে আর হাতে ধরা একটা নোট-বইয়ে কি সব লিখছে। গাড়ির নম্বর নয় তো? সন্দেহ হল কামালের। *. ডি. কস্টার একদম কাছে গিয়ে দাঁড়াল কামাল। ডি কস্টার দৃষ্টি তখন কালো
একটা পুরানো মরিস মাইনরের দিকে। : কৌতুক ও কৌতূহল মেশানো গলায় কামাল বলল, “আরে, মি. ডি, কস্টা যে, কি করছেন এখানে?’– আচমকা নিজের নাম শুনে চমকে লাফিয়ে উঠল ডি কস্টা। তারপর মুখ তুলে বলল, “আরে, কামাল আমেড সাহেব যে!”
* কামাল দেখল, ডি, কস্টা নোট-বই আর পেন্সিলটা দ্রুত পকেটে ঢোকাল।
“ কি হচ্ছে এখানে দাঁড়িয়ে?’ শুধোল কামাল।..,
৯-কুয়াশা-২১
“ ১২৯
:
|
–
কই, নাটো। দুর্বল গলায় বলল ডি. কস্টা, কিছুই না। কুছ নেহী।, ‘কি যেন লিখছেন বলে মনে হল?’
ওহ ইয়েস, নো। কিছুই না। নাঠিং। সিম্পলি নাঠিং।
মনে হল যেন চলমান জনস্রোতের ছবি আঁকছেন। ..’ ছবি? ইউ মিন পেইন্টিং। ওসব আমার আসে না। টবে আমার আংকল আন ডি কস্টা ওয়াজ এ গ্রেট পেইন্টার। ক্যালকাটায় মিনার্ভা হলের চীফ আর্টিস্ট ছিলেন। চেষ্টা করলে অবশ্য আমিও পেইন্টার হটে পারটাম । কিন্তু আংকল বলল, ড্যাখ স্যানন, ইটস্ আ ফিলদি প্রফেশান। খাটবে, বাট নো মানি। গ্রেট পেইটার লাইক ভ্যানগগ, গগা অল ডায়েড অব স্টার্ভেশান। আমার আংকল অবশ্য মরেছে লিভার পচিয়ে। সারাদিন মড খেট আর মাটাল হয়ে পড়ে থাকট। নাক সিটকাল ডি. কস্টা।
* তাই বুঝি আপনি আর্টের চর্চা পছন্দ করেন না? কিন্তু আপনাকে দেখলেই আমার মনে হয়, আপনি পাকা আর্টিস্ট। মনে হয় সৃষ্টির আবেগে সবসময় তন্ময় হয়ে আছেন।
: ‘ এ সব ক’টা দাঁত বের করে হাসল ডি কস্টা। তারপর সহজ কণ্ঠে বলল, কি যে
বলেন, মি. আমেড। আসলে আমি কি করছিলাম, জানেন?’
• না। . . . . . . . . . . .
কামালের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল ডি. কন্টা, ‘গাড়ির নম্বর টুকছি।– কেন? হঠাৎ এই প্রফেশান?’ কামালও জবাবে ফিসফিসিয়ে প্রশ্ন করল।
উঁহু উঁহু, প্রফেশান নয়। আই অ্যাম সার্চিং এ মার্ডারার।
মার্ডারার! চোখ দুটো বড় বড় করল কামাল।,, : গলা, আরও খাট করে ডি কস্টা বলল, মিরপুর রোডে পরশু রাটে একটা লোকের লাশ পাওয়া গেছে। ডু ইউ নো? আমি সেই হট্যাকারীকে খুঁজছি। বসকে
বললাম। হি শোভ কোল্ড শোল্ডার। ‘ | ‘তা গাড়ির নম্বরে কি হবে? হত্যাকারীর গাড়ির নম্বরটা আপনি জানেন বুঝি?’
| আর এক গাল হাসল ডি. কস্টা। ড্যর্টি ইজ মাই বিজনেস সিক্রেট। আই মাস্ট ফাইও হিম আউট উইডিন টুয়েন্টি ফাইভ ডেজ।
‘এতদিন কেন?’, : ‘আই ডোন্ট নো ড্যাট। কিন্তু বস্ গটকাল আমাকে টুয়েন্টি সেভেন ডেজ টাইম দিয়েছেন। এই যা, চলে গেল! .
। কি গেল?? : : ‘ড্যাট কার। ইয়েস ইটস ড্যাট কার। দ্রুত অপসৃয়মান একটা গাড়ির দিকে ১৩০
ভলিউম-৭
ফাইও হিম আগলি হাসল ডি কস্টাকারীর গাড়ির নম্বরটা আর
আঙুল দিয়ে দেখাল ডি. কস্টা। তারপর ছুটতে লাগল গাড়িটার পিছনে। বোকার। মত দাঁড়িয়ে রইল কামাল।
পাঁচ
–
ড. মিন্নত সরকার চেম্বার থেকে যখন বেরোল তখ। রাত সাড়ে ন’টা। ড. কুদসী ও ড. তালেব বেরিয়ে গেছেন আধ ঘন্টা আগেই। কয়েকটা পুরানো ফাইল ঘেঁটে একটা কাগজে কি যেন লিখছিল সে। কাগজটা পকেটে ফেলে উঠে দাঁড়াল। অনেক দেরি হয়ে গেছে। কেমন একটা অস্বস্তি ক্রমেই যেন দানা বেঁধে উঠছিল তার মনের মধ্যে।– দারোয়ানকে ফটক বন্ধ করতে বলে পথে নামল সে। একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কখন টের পায়নি ড. মিন্নত। পথটা তখনও ভেজা। পানি জমে আছে মাঝে মাঝে। আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। এই অভিজাত পাড়ার পথে গাড়ি চলে অনেক, কিন্তু ফুটপাথে পথচারী বিরল। বিশেষ করে এই বৃষ্টিসিক্ত রাতে।।
. বেবীট্যাক্সির খোঁজ করে নিরাশ হল ড. মিন্নত। হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে চলল প্রায় নির্জন ফুটপাথ ধরে। দু’একটা বেবীট্যাক্সি আসতে-যেতে দেখা গেল কিন্তু কাছে আসতেই বোঝা গেল সেগুলো যাত্রীশূন্য নয়। যাত্রীহীন বেবীট্যাক্সিওয়ালারা . আরও এক কাঠি সরেস। ফিরেও তাকাল না তার চিৎকার শুনে।
‘অস্বস্তিটা ক্রমেই বাড়ছে। আচ্ছন্ন করে ফেলছে তার মনটাকে। একটা অসহায় অব্যক্ত অনুভূতি তার সত্তাকে এ রছে ধীরে ধীরে। হঠাৎ তার মনে হতে লাগল কে যেন তার পিছনে পিছনে নিপ পদসঞ্চারে এগিয়ে আসছে। এখুনি তাকে। আঘাত হানবে পিছন থেকে। মেরুদণ্ডের ভিতরটা শিরশির করে উঠছে। সেই…সেই হৃৎপিণ্ড অপহরণকারী নরপিশাচটা নয় তো? না কি ড. তোক আসছে ধারাল ছুরি বাগিয়ে, অথবা অশরীরী কোন আত্মা! গা’টা ছমছম করে উঠল ড. মিন্নতের। গায়ের লোমগুলো কাঁটা দিয়ে উঠছে। নিজের হৃৎপিরে শব্দটা শোনা যাচ্ছে। ‘
. হ্যাঁ, স্পষ্ট পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ওর ঠিক পেছনে কে যেন এসে দাঁড়াল। নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘাড়ের উপর উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল কে যেন। ‘: ভয়ে ভয়ে পিছনের দিকে চাইল ড. মিন্নত। কই না, কেউ নেই। শুধু অদুরের বৈদ্যুতিক বাতির ম্লান আলোয় একটা ছায়া পড়েছে পথের ধারে। শব্দটাও পায়ের শব্দ নয়। টপ টপ করে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে পাতা চুঁইয়ে। তারই শব্দ। হাওয়ায় শিরশির করে পাতা নড়ছে।’ ‘ : মনের দুর্বলতার জন্যে নিজেকে ধিক্কার দিল ড. মিন্নত। সে জানে, এসব তার। কুয়াশা-২১ :
| ১৩১
।
—
– .
..:
..
উত্তেজিত স্নায়ুর কল্পনা। এর কোন ভিত্তি নেই, থাকতেও পারে না। নাজাকাতের অস্বাভাবিক মৃত্যু সংক্রান্ত ঘটনা তার মনটাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে, আর ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভেবেছে সে। অনেক আলাপ-আলোচনাও করেছে। সব মিলিয়ে মনটা দুর্বল হয়ে পড়াটাও বিচিত্র নয়। তাছাড়া সেই লোকগুলো? যারা ওদের রোগী ছিল। আর সেই লোমহর্ষক দৃশ্যটা? কাগজটা এখনও পকেটে আছে। । কিন্তু কি বীভৎস, কি ভয়ঙ্কর! আবার ছমছম করে উঠল ‘তার সারা গা। আবার রাজ্যের ভীতি ভয়ঙ্কর মুখ ব্যাদান করে ওকে যেন ঘিরে ফেলতে আসছে। সামনেই মোড়। দ্রুত পা চালিয়ে দিল সে। অনেক মানুষের ভিড়, অনেক আলোর বন্যা তার এই মুহূর্তের কামনা। অনেক মানুষের ভিড়ে সে আত্মগোপন করতে চায়। এই নির্জন পথে আলো-আঁধারির কুহক আর হাওয়ার অস্ফুট কানাকানি তার বিপর্যস্ত স্নায়ুকে যেন কঠোরতম আঘাত হানছে। এ থেকে সে মুক্তি চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে পরিত্রাণ পাবে কি?
মোড়ে পৌঁছুতেই একটা খালি বেবীট্যাক্সি পাওয়া গেল। মোহাম্মদপুরে যেতে আপত্তি করল না ট্যাক্সিওয়ালা। গাড়িতে বসে একটা গিারেট ধরাল ড. মিন্নত। একটু স্বস্তিবোধ করল, সাহসটাও ফিরে এল। বাসার কাছাকাছি পৌঁছুতেই বৃষ্টি নামল মুষলধারে। ১; বস্তুত ঘরে ফিরতে তেমন সাহস পাচ্ছিল না সে। একটা দোতলা বাড়ির উপরের তলায় দুই রুমের একটা বাসা তার। ছোট ভাইটা সঙ্গে থাকে। দুটিতে বাড়ি গেছে সে। চাকরটা চলে গেছে কয়েকদিন আগে ছুটি নিয়ে। কবে ফিরবে ঠিক নেই। বাসায় এখন দ্বিতীয় কোন প্রাণী নই। একা একা ভয় করবে ড. মিন্নতের, অন্তত বর্তমান মানসিক অবস্থায়। অথই বাসায় যাওয়া দরকার। লুকিয়ে রাখতে হবে কাগজটা। .:. ড. তোক চলে যাওয়ার পর থেকেই তার মনটা এমনি অসহায়, ভয়ে মাঝে মাঝে আন্ন হয়ে পড়ে। অবশ্য এই সত্যটা সে নিজের কাছেও গোপন রাখতে চায়। কিন্তু আজকে যেন ভয়ের বাঘটা উন্মত্ত আক্রোশে হিংস্র নখরাঘাতে তার টুটি টিপে ধরছে। আর সেই দৃশ্যটা? উহ, কি ভয়ঙ্কর! কিন্তু কে সেই লোকটা? ড. তোগলক? নিশ্চয়ই সেই। কিন্তু …’’… : . ভিজতে ভিজতে স্কুটার থেকে নামল ড. মিন্নত। অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে টলতে টলতে দোতলায় উঠল সে। কাঁপা কাঁপা হাতে চাবি দিয়ে তালা খুলল, গা-তালা দরজার। চাবিটা খুলে নিয়ে ডান হাত বাড়িয়ে দেয়াল হাতড়ে সুইচ টিপল। আলো জ্বলে উঠতেই মানসিক শক্তিটা ফিরে পেল সে। সিঁড়িতে অস্পষ্ট শব্দ পাওয়া যামে। কে যেন উঠে আসছে সিঁড়ি বেয়ে। দরজাটা বন্ধ করে দিল সে। গা-তালায় চাৰি দিল। কাঁপা হাতে চাবিটা খুলে রূমের দিকে এগোল। সমস্ত শরীরটা অল্প অল্প
ভলিউম-৭
*
. .
.
.
.
.
.
।
।
.
‘১৩৪।
।
।
।
–
–
।
কাঁপছে তার। তবু, তবু যদি সে একবার নিজের রূমের মধ্যে ঢুকতে পারে তাহলে, তাহলে আর আশঙ্কার কিছু নেই। ……….. … »
রূমের তালাটা খুলল সে। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে চাবি লাগিয়ে দিল। যাক, আর ভয়ের কিছু নেই। বাইরের দরজার আর রূমের দরজার তালা খুলে কেউ আর তার কাছে ঘেঁষতে পারবে না। কাপড়-চোপড় বদলে বাথরূমে গেল সে। হাত-মুখ ধুয়ে বেরোতেই বাতি নিভে গেল। মুহূর্তে অন্ধকার নেমে এল ড. মিন্নতের চারদিকে। ১. শিউরে উঠল ড. মিন্নত। খোলা জানালা দিয়ে দেখল, পাশের বাড়িগুলোতে আলো জ্বলছে। কেউ বোধহয় শুধু এই দোতলার অথবা পুরো বাড়িটার মেইনসুইচ অফ করে দিয়েছে। চিৎকার করে উঠতে গেল সে। কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোল না।”,,…; কিন্তু পরমুহূর্তে জ্বলে উঠল বাতি। আর সেই শলোয়ালে, চোখে মুখোশ আঁটা বিশাল একটা মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে চোখdান হাতটা পকেটে। ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি। …
জ্ঞান হারাবার পূর্বমুহূর্তে মনে হল, কে যেন বাইরের দরজায় করাঘাত করছে। আর কে যেন ফিসফিস করে বলল, ‘তুমি অনেক কিছু জেনে ফেলেছ, ডাক্তার।
–
–
–
ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠল টেলিফোন। ঘুম ভেঙে গেল শহীদের চোখ মেলে হাত বাড়িয়ে রিসিভার তুলে বলল, ‘হ্যালো, কে হ্যাঁ, শহীদ বলছি। ড. কুদসী, কি ব্যাপার? •••ড. মিন্নত, খুন হয়েছেন! কে তিনি? ও আপনার অ্যাসিস্ট্যান্ট, কোথায়? চেম্বারে? ও বাসায়। মোহাম্মদপুরে নম্বর বলুন। থানায় খবর দিয়েছেন?•••দয়া করে মি. সিম্পসনকে খবর দিন একটু…ওহ, উনি তাহলে
আসছেন। এখুনি যেতে হবে আমাকে?” :: :: * রিসিভার রেখে উঠে বসল শহীদ। ঘড়িটা দেখল একটা বেজে বিশ মিনিট।
. মহুয়া জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার? কোথায় চললে এত রাতে? 1. ডি, কুদসীর এক অ্যাসিস্ট্যান্ট ডমিন্নত খুন হয়েছেন। যেতে হবে সেখানে। | বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছেন ড. কুদসী।
‘ কে, তিনি? :
• লীনার ডাক্তার। কার্ডিওলজিস্ট। কাল যে ডাক্তারের কাছে লীনাকে নিয়ে গিয়েছিল কামাল। আমার সাথে সবে গত পরশ আলাপ হয়েছে ড. কুদসীর। আর | মিন্নতের সাথে তো রীতিমত ঘনিষ্ঠতাই হয়ে গিয়েছিল কামালের।
‘ ভাল।…
“মানে?” | কুয়াশা-২১
: ১৩৩
=E
: ‘আলাপ-পরিচয় হল সবেমাত্র, একটু ঘনিষ্ঠতাও হল। আর সঙ্গে সঙ্গে খুনোখুনি শুরু হয়ে গেল। খুনী যেই জানতে পারল, শহীদ সাহেব বা কামাল সাহেবের সাথে ড. মিন্নতের আলাপ হয়ে গেছে ঠিক তখুনি এল খুন করতে। যেন এর জন্যেই অপেক্ষা করছিল সে। | ‘তোমার ব্যাখ্যাটা বিচিত্র।’ শয্যা ত্যাগ করতে করতে বলল শহীদ। আর এই রকম জানা-শোনার পর খুননাখুনি হয় বলেই তো আমি সহজে নাক গলাতে পারি আর কালপ্রিটটাকে চিনতে পারি আরও সহজে, এই কথাই বলতে চাচ্ছ বুঝি? সিগারেট ধরাল শহীদ।
: : : সে কথার জবাব দিল না মহুয়া। হঠাৎ সে বিছানায় ধড়মড় ক বলল, কিন্তু তুমি যেতে পারবে না এই খুনোখুনির মধ্যে। . • হঠাৎ একথা বিস্মিত হলহীদ।
. ‘আমার যেন উজান ভঙ্গ হ। মনে হচ্ছে কি জান, অমাবস্যার রাতের খুনের সাথে, মানে সেই খলিখোনর সাথে এই খুনের সম্পর্ক আছে। লোকটা যে কত বড় পাষও আর ভয়ঙ্কর তা তো বুঝতেই পারছ। যদি সে একবার জানতে পারে, কেউ তার পিছনে লেগেছে তাহলে তাকে রেহাই দেবে না .. .. ….
: কিন্তু কথা দিয়েছি যে, যাব। তাছাড়া দুটো ঘটনার মধ্যে যোগাযোগ নাও থাকতে পারে। থাকলেও এখন সরে আসা কাপুরুষতা। লোকে তোমার স্বামীকে কাপুরুষ বলুক, এটাই কি তুমি চাও? “ .. . .. . … । ১ . মহুয়া চটে গিয়ে বলল, তা চাইব কেন? কিন্তু মাথার উপর বিপদ যে ঘনিয়ে আসছে, সেটাও কি তোমাকে বলতে নিষেধ নাকি?
: : | শহীদ হেসে বলল, না না, তা নিষেধ হবে কেন? তবে তুমি তো জানই, আমি সব সবয় সাবধান থাকি। তাছাড়া এতদিন কম ক্রিমিন্যালও ঠেঙাইনি। আমার শক্তির ওপর তোমার কি আস্থা নেই? . মহুয়া লজ্জিত হল। বলল, ‘তা আছে বই কি?’…। | শহীদ বলল, লক্ষ্মীটি, ভয়ের কিছু নেই। যত বড় ক্রিমিন্যালই হোক না কেন তাকে একদিন না একদিন ধরা পড়তেই হবে। কিন্তু তার জন্যে চাই চেষ্টা, চাই পরিকল্পনা। এই ক্রিমিন্যালটাকে ধরতে না পারলে হয়ত অনন্তকাল ধরে প্রতি অমাবস্যায় একজন করে নিরীহ লোক মারা যাবে তার হাতে। সুতরাং আমাকে, তার খোঁজ করতেই হবে, যদিও এখন যে হত্যাকাণ্ড তদন্ত করতে যাচ্ছি তার সাথে অমাবস্যার রাতের হত্যাকাণ্ডের সম্পর্ক আছে কিনা, সেটা এখন পর্যন্ত জানি না। তুমি আমাকে বাধা দিয়ো না, লক্ষ্মীটি।
মহুয়া আর কিছু বলল না। শহীদ তাকে আদর করে উঠে পড়ল
• বেশভূষা পাল্টে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল শহীদ। :… ১৩৪,
ভলিউম-৭
গন্তব্যস্থানে পৌঁছুতে লাগল মিনিট দশেক। একটা জীপের পাশে দুইজন : কনস্টেবল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামাল শহীদ। “,
গাড়ি দেখে একজন কনস্টেবল এগিয়ে এল। দরজা খুলে বেরোতেই কনস্টেবলটি বলল, ‘স্যার, ওঁরা সব উপরে আছেন। আপনাকে উপরে যেতে বলেছেন। আসুন, আমার সাথে।’ .. ‘মি. সিম্পসন এসেছেন?’ .
হ্যাঁ, স্যার।
সরু সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠল শহীদ কনস্টেবলের সাথে। সেখানে মি. সিম্পসন, ইন্সপেক্টর গোলাম মওলা ও ড. কুদসী বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। ড. কুদসী শহীদকে দেখে বললেন, “আসুন, মি. খান। দেখুন তো, কি। ভয়ঙ্কর ব্যাপার! এই যে এই রূমটার মধ্যে।’: : :
. কামরার মধ্যে আলো জ্বলছে। মাটিতে চিত হয়ে পড়ে আছে একটা মানুষ। | সেদিকে এগিয়ে গেল শহীদ। লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা এক যুবক। চোখ দুটো তার ফেটে
বেরিয়ে আসতে চাইছে। জিভ বেরিয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে মুখটা একটা বীভৎস ‘ আকার ধারণ করেছে।
ড. কুদসী বললেন, ‘গলা টিপে মারা হয়েছে লোকটাকে। ‘ শহীদ হু’ জাতীয় একটা শব্দ করে মি, সিম্পসনের দিকে তাকালেন। তিনি বললেন, ‘খুব সহজ ব্যাপার। বাইরের ও রূমের দরজায় গা-তালা ছিল। আমি এসে দুটো গা-তালাতেই চাবি পেয়েছি। হত্যাকারী দুরিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলেছে।
: একসঙ্গে আসেনি তো? মানে, পরিচিত লোক নয় তো?’ মি. সিম্পসনের চোখের দিকে চোখ রেখে শহীদ প্রশ্ন করল। ‘ ………….., ‘মি. সিম্পসন বললেন, ‘পরিচিত লোক নিশ্চয়ই। কিন্তু একসঙ্গে আসেনি। ডুপ্লিকেট চাবি ব্যবহার করেছে লোকটা। ড. মিন্নতের চাবির গোছা পাওয়া গেছে ঐ টেবিলটার উপরে। পরীক্ষা করে দেখেছি, ওখানে গা-তালা দরজার চাবি আছে।। তালাতে ঢুকিয়েও দেখেছি। ডুপ্লিকেট চাবিগুলো মওলা সাহেবের কাছে আছে। ইচ্ছে করলে দেখতে পার তুমি।
পরে দেখব’ক্ষণ। ড. কুদসী, আপনি কখন খবর পেলেন?’ : .: ড. কুদসী ঘুম থেকে উঠে এসেছেন বোঝা যাচ্ছিল। চোখে-মুখে কাঁচা-ঘুমের
চিহ্ন। চুল উস্কোখুস্কো। পাজামা-পাঞ্জাবী পরা। বিষণ্ণ দৃষ্টি। তিনি বললেন, “আমি, “ খবর পেয়েছি সাড়ে বারটার দিকে। মিন্নতের বাড়িওয়ালা ফোনে খবর দিয়েছেন।
উনি নিচে থাকেন। ওঁকে জানিয়েছে মিন্নতের চাকর সাকের আলী। চাকরটা দেশে গিয়েছিল। রাতেই ফিরেছে। বাসায় ফিরে দেখে, মিন্নত মেঝেতে পড়ে আছে।
কুয়াশা-২১
১৩৫.
কাছে গিয়ে অবস্থা দেখে নিচে বাড়িওয়ালাকে খবর দেয়। তিনি আমাকে জানান। বাসায় জানান। আমি আবার জানাই আপনাকে আর মি. সিম্পসনকে।
‘: লাশটা দেখে আবার বারান্দায় ফিরে এল শহীদ। গোলাম মওলাকে জিজ্ঞেস করল, সেই চাকরটা কোথায়?’,,.
‘কিচেনে বসে আছে বোধহয়। ওখানেই থাকতে বলেছি ওকে, গোলাম মওলা বললেন। :– ‘আসতে বলুন ওকে। কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করতে হবে।
। গোলাম মওলা কিচেন থেকে ডেকে আনলেন চাকরটাকে। মধ্য-বয়সী লোকটা। বোকা-বোকা চেহারা। মুখভর্তি দাড়ি গোফ। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। কাঁপতে কাঁপতে এল লোকটা। এসেই ভেঙে পড়ল, আঁই কিছু না জানি, হুজুর। আঁই কিছু ন জানি । আঁই আয়ি দেই, সাব পড়ি আছে। আঁই কিছু ন জানি। ‘ এ শহীদ তাকে অভয় দিল। বলল, তোমার ভয়ের কিছু নেই। আমরা তোমাকে
সন্দেহ করছিনে। তুমি শুধু বল, তুমি এসে কি দেখেছ। : লোকটা গামছা দিয়ে চোখ দুটো ডলে বলল, হুজুর, আঁই আইজা বাড়িথনে আইছি, হুজুর। আঁই দেই, দরজা হাট করি ভোলা। বারের দরজাও পোলা, ঘরের দরজাও খোলা। . . . . .; বাতি জ্বলছিল?
|
*. .
।।
৭
।
।
এ
এ
তারপর?”, “বাইরা পোটলা রাখি সাবের ঘরে ঢুইকলাম। ঐ যে আঁর পোটলা, হুজুর। দেখি, সব মাটিতে পড়ি আছে। হোৎ করি সাবের থনে যাই দেহি, চোখ-মুখ সাবের উল্টা! জিব বারাইয়া রইছে। আঁই এক চিক্কর দিয়া সোজা নিচে বাড়িয়ালারে খবর দিতাম যাই।’; তারপর?… *.. . * •
‘ ‘তাইনরা হলেই ঘুমাইতেছিলেন। অনেক চিক্কুর পাড়ি নজীর সাবরে তুললাম। ‘ ‘ ।
, নজীর সাহেব কে? * ‘ ‘বড়িয়ালার বড় ছেইলা, হুজুর। তাইরে কইলাম। তাই আঁর লগে উপরে উডি আইয়া ছাইলেন। পরে নিচে নামি যাই থানায় ফোন করি দিলেন। বড় ডাক্তার সাবরেও খবর দিলেন।
| ‘তুমি ফিরেছ কখন?’ .. | ‘ঠিক কইতাম পারুম না, হুজুর। তয় এগারটায় ত্যাজগাও ইস্টিশনে টেন
থামছে।’ ৩১৩৬
ভলিউম-৭।
‘হেঁটে এসেছ, না গাড়িতে এসেছ?’ .. ‘হাঁইটা আইছি, হুজুর। তখন হুজুর, খুব বৃষ্টি। কাউকে বেরিয়ে যেতে দেখেছ, এই বাসা থেকে? ‘জে, না। সিঁড়িতে?” ‘জুে, না।
‘তোমার সাহেবের আত্মীয়-স্বজন কোথায় সব?– | ‘সব দ্যাশের বাড়িতে, হুজুর। তাইনের ছুডু ভাই এই বাসায় সাবের লগে ..
থাকতেন। তাইনও ছুডিতে বাড়ি গ্যাছেন। . .. “
‘তোমার সাহেব লোক ছিলেন কেমন? ‘খুব ভালা মানুষ, হুজুর। ফেরেশতার লাহান মানুষ, ভেজা গলায় বলল সে।
সেই নজীর সাহেবকে ডেকে আনতে পার?’ ‘জে। তাইনে বলছেন, দরকার হলি আঁরে ডাকি আইন, সাকের আলী।
যাও, ডেকে নিয়ে এস। :: সাকের আলি চলে গেল। শহীদ একটা সিগারেট ধরাল। লম্বা একটা টান,
দিয়ে এক-গাল ধোয়া ছাড়ল। নীরবে চিন্তা করতে লাগল সে। তারপর মি: . সিম্পসনকে জিজ্ঞেস করল, ‘খুলে রাখা শার্ট-প্যান্টের পকেটে কিছু পাওয়া গেছে?
* একটা পার্সে কিছু টাকা পয়সা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি, জবাব দিলেন . মি. সিম্পসন। …:: : : : :- “ • • • * । : ..
সিঁড়িতে পদশব্দ শোনা গেল। একটু পরেই সাকের আলীর পিছনে এক যুবক এসে দাঁড়াল। সালাম জানাল ওদেরকে।
“শহীদ বলল, “আপনিই নজীর সাহেব? ..
“জ্বি হ্যাঁ, নজীর কোরেশী।’ ‘নিচ তলায় থাকেন?? “জ্বি, হ্যাঁ, এটা আমাদের বাড়ি। ডাক্তার সাহেব আমাদের ভাড়াটে ছিলেন।
কতদিন হল?; মাস তিনেক। ‘সাকের আলীর সাথে আপনিই ডাক্তারকে দেখতে এসেছিলেন?’ 🙂
“জি, হ্যাঁ। সে গিয়ে হাউমাউ করে কি সব বলল। প্রথমটাতে তো বুঝতেই ‘ পারলাম না। তবে যখন বুঝলাম তখন ওর সাথে চলে এসে দেখলাম। . ..
.. “তারপর? “ .. . … | ‘থানায় খবর দিলাম আর, উ, কুদসীকে দেখিয়ে বলল। ওঁকে খবর দিলাম। ডাক্তার সাহেব যে ওঁর ওখানে চাকরি করেন, তা আমরা জানতাম।’’ “, কুয়াশা-২১
| ১৩৭।
—
–
… ‘ড, মিন্নতের সাথে আলাপ ছিল আপনার?
| ‘সামান্য। উনি তো সারাদিনই প্রায় বাইরে থাকতেন। দুপুরে যখন বাসায় থাকতেন আমি তখন অফিসে। রোববার বা অন্য ছুটির দিনে দেখা সাক্ষাৎ হত।’ | ~ উনি লোক ছিলেন কেমন?’……… …. .. .।
• ভালই। বেশ ভাল মানুষ। নিরিবিলি। কোন হৈ-চৈ নেই। ঝামেলা নেই। ব্যবহারও ভাল ছিল। সদালাপী ছিলেন।, .. . * এই খুনের ব্যাপারে আপনার কাউকে সন্দেহ হয়? * নজীর বলল, সন্দেহ? না, কাকে সন্দেহ করব আমি? ওঁর সম্পর্কে আমি
জানিই বা কতটুকু? . . . . . .
‘শেষ কবে ড. মিন্নতের সাথে দেখা হয়েছিল আপনার?’ | ‘দিন তিনেক আগে। রাতে। দশটার দিকে। উনি বাসায় ফিরছিলেন। আমি
একটু দোকানে গিয়েছিলাম। পথে দেখা। | ‘আলাপ হয়েছিল কিছু?
তেমন কিছু না। “কেমন আছেন” টুকু পর্যন্ত।’ তখন খুব ক্লান্ত ছিলেন। তিনি।’. …
.. .. :. . .’ ‘‘ । : আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম। রাতও হয়েছে অনেক। এবার আপনি বিশ্রাম নিন গে। পরে দরকার হলে আপনাকে খবর দেব। আর যদি আপনি প্রয়োজন বোধ করেন তাহলে যোগাযোগ করবেন আমার সাথে অথবা মি. সিম্পসনের সাথে। ., . . . . . . “ .. .।
• মাথা নেড়ে চলে গেল নজীর। | সিগারেটের শেষাংশটা মাটিতে ফেলে জুতো দিয়ে পিষে শহীদ বলল, ‘ড, কুদসী, আপনি এ ব্যাপারে কোন আলোকপাত করতে পারেন? . : ড. কুদসীকে খুব বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল। তিনি মাথাটা নেড়ে বললেন, কিছুই বুঝতে পারছিনে, মি. খান। কর্মঠ, সচ্চরিত্র, প্রাণোচ্ছল, হাসি-খুশি মিন্নতের কোন শত্রু থাকতে পারে, তা আমি কোনদিন ভাবতে পারিনি। ছেলেটা ছিল খুব কাজের, আমি ওকে তাই স্নেহ করতাম খুব। আমাকেও সে খুব শ্রদ্ধা করত। বোধহয় কিছুটা ভয়ও পেত। তাই কথা বড় বেশি বলত না আমার সামনে। ওর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে তাই আমার কোন আইডিয়া নেই। তবে ওর শক্ত থাকতে পারে, বিশেষ করে ওকে খুন করার মত শক্ত থাকতে পারে সেটা আমি কখনোই কল্পনা করিনি।’ | ‘আজকেও তো চেম্বারে গিয়েছিল শুনলাম, কামালের, মানে আমার বয় কাছে। আমার বোনের ইসিজি, রিপোের্ট আনতে গিয়েছিল কামাল। ‘‘ । | ‘হা, গিয়েছিলেন আপনার বন্ধু। আমি আর তালেব গিয়েছিলাম এক রোগী ১৩৮. ‘
… ভলিউম-৭
দেখতে। ফিরে এসে দেখি, মিন্নত ও কামাল সাহেব গল্প করছেন।
| কামালের কাছেই শুনলাম, কয়েক মাস আগে আপনার চেম্বারে একটা ইনসিডেন্ট হয়েছিল?– হ্যাঁ, ঘটেছিল একটা ঘটনা, নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন ড. কুদসী।
• এমনও তো হতে পারে, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সে ঘটনার যোগাযোগ আছে? :
ড. কুদসী চুপ করে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, ‘সন্দেহটা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ড. তোগলক সত্যিই অত্যন্ত হিংস্র প্রকৃতির লোক ছিলেন। তবে এত হিসেব করে চাবি চুরি করে কিংবা ডুপ্লিকেট তৈরি করে খুন করতে আসবার মত চাতুর্য তার আছে বলে মনে হয় না। তোগলক হচ্ছে আবেগপ্রবণ, মানুষ। মুহূর্তের আবেগ দ্বারা পরিচালিত হয় সে। আর এই খুনটা হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায়। তবু একেবারে উড়িয়ে দিই কি করে সন্দেহটা? বিশেষ করে, গোড়া থেকেই ড, তোগলক মিন্নতকে দুচোখে দেখতে পারত না। আমার কাছে। অনেকদিন অনেক নালিশ করেছে। তারপর ঐ ঘটনা। সেদিনও ড. তোগলক ওর বিরুদ্ধেই নালিশ করতে গিয়েছিল আমার কাছে। তাই নিয়েই ঝগড়া হয় আমার সাথে ড. তোলকের। খেপে গিয়ে আমাকে তাড়া করে।…..
. ‘ড. তোগলক এখন কোথায়, বলতে পারেন? আপনার চেম্বারের চাকরি ছেড়ে দেবার পর তার সাথে আর আপনার দেখা হয়েছে?.
: ) ‘কোথায় থাকে বলতে পারব না। আগে যেখানে থাকত সেখানে এখন থাকে না। বলতে গেলে, সে নিরুদ্দেশ হয়েছে। অবশ্য গত তিনমাসে তাকে আমি | তিনবার দেখেছি।’: “..
সর্বশেষ কবে দেখ হয়েছে? | ডাক্তার একটু ইতস্তুত করে বললেন, “গতকাল।
‘কোথায়? .. . । ‘গুলশানে। আমার বাসার কাছেই। ….. * “আচ্ছা, ডাক্তার সাহেব, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সেই হৃৎপিণ্ড চুরি ঘটিত * হত্যাকারে কোন যোগাযোগ আছে বলে কি আপনার মনে হয়?’
: ড. কুদসী চমকে উঠলেন। তারপর অনেকক্ষণ ভেবে বললেন, আপনি বলতে চাইছেন, যে লোকটা মানুষের হৃৎপিণ্ড খেয়ে বেড়াচ্ছে অমাবস্যার রাতে সেই লোকটাই মিন্নতকে খুন করেছে কিনা, অর্থাৎ ড. তোগলকই মানুষের হৃৎপিণ্ড খেয়ে বেড়াচ্ছে কিনা? ‘অ্যাবসার্ড। মাথা নাড়লেন তিনি, ‘অ্যাবসার্ড। আমার মতে, এই খুনের সাথে কোন যোগ নেই হৃৎপিণ্ড-অপহরণ রহস্যের। । । কুয়াশা-২১
| ১৩৯
*
*
–
–
1
.
L.
।
২ . .
*
*
*
*
)।
৯
শহীদ আর একটা সিগারেট ধরিয়ে নীরবে টানল অনেকক্ষণ। *, ইন্সপেক্টর গোলাম মওলা খুকখুক করে কেশে উঠলেন। শহীদ তার দিকে তাকাতেই তিনি বললেন, ‘লাশটা আর এখানে রেখে কি হবে? পাঠিয়ে দিই মর্গে । : মি. সিম্পসন জবাব দিলেন তাঁর প্রশ্নের। তিনি বললেন, হ্যাঁ, লাশ পাঠিয়ে দিন। আর এখানে পাহারার ব্যবস্থা করুন।
পাহারার ব্যবস্থা করেছি, স্যার, এগোতে এগোতে বললেন, মওলা সাহেব। … চলুন, আমরাও যাই। এখানে এখন আর থাকবার দরকার নেই। চলুন, ড. কুদসী,শহীদ বলল।
ড. কুদসী একটু ইতস্তত করলেন। কি যে বলতে চাইলেন। তারপর বোধহয় মনস্থির করে বললেন, ‘চলুন যাই।
* তিনজন নেমে এল সিঁড়ি বেয়ে। ড. কুদসী. গিয়ে গাড়িতে উঠলেন। তাঁর গাড়ি দৃষ্টির আড়ালে যেতেই শহীদ বলল, “মি. সিম্পসন, আসুন, আমগুলো আবার ভাল করে সার্চ করতে হবে, যদি কিছু পাওয়া যায়।
চল, মি. সিম্পসন বললেন। … আবার দুজন উঠে এল। কয়েকজন কনস্টেবল তখন চাদরে মোড়া লাশটা নিয়ে সিঁড়ির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ওদের পাশ কাটিয়ে দু’জন উঠে এল।
শহীদ ডাকল, সাকের আলী?’ *** : জুে। কিচেন থেকে বেরিয়ে এল সাকের আলী।.
‘তুমি রাতে কোথায় থাকবে?’ …. .. … … … ..– হুজুর, রাইত আর বেশি নাই। এটু ফরেই আজান দিবে। পুলিস সাবরা তো। এহানে থারুর। আঁইও থাকুম রাইড়া। ব্যানে আঁর বাতিজার বাসায় যামু রায়ের বাজার।, . ..,…,,,,;; হ্যাঁ, যেয়ো। কিন্তু ঠিকানাটা দিয়ে যেয়ো। ভাল কথা, সাকের আলী, তোমার সাহেবের কারও সাথে ঝগড়াঝাটি ছিল নাকি?”, ‘, ‘,
‘‘ আঁই তো তেমুন কিছু ন জানি। তয় সাব বড় ভাল মানুষ। তাইনের তো শক্ত থাহনের কথা না। ‘
৮কোন বদভ্যাস ছিল নাকি? এই ধর, জুয়ো-টুয়ো কিংবা মদ?
‘জে, না। . • • ‘
“আচ্ছা, তুমি তাহলে যাও শুয়ে পড়গে। আমরা ওর ঘরটা একবার সার্চ করব। আসুন, মি. সিম্পসন। … .. .
.. . . “, সমস্ত ঘর দু’জনে তন্ন তন্ন করে সার্চ করল। সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেল
। কোন রকম সূত্রও মিলল না। পাশের রূমটা সার্চ করেছিলেন মি, সিম্পসন। শহীদ অনেক খুঁজে ট্রাঙ্কের তলায় পড়ে থাকা একটা ময়লা কাগজ আবিষ্কার করল। ১৪০
ভলিউম-৭
কাগজটা পড়ে চমকে উঠল সে। টোকা দিয়ে আলগা ময়লা ঝেড়ে কাগজটা পকেটে ফেলল শহীদ। ‘
মি, সিম্পসন ফিরে এসে বললেন, ‘পাশের রুমটায় কোন ছাত্র, সম্ভবত ড. মিনুতের ভাই থাকত। এঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কিত গাদা খানেক বই ছাড়া আর কিছু
‘, তাহলে চলুন যাই এবারে, শহীদ বলল। সকাল হতে আর দেরি নেই। রাত সাড়ে চারটে এখন। অন্তত ঘন্টা খানেক ঘুমিয়ে নিতে পারলে মন্দ কি?’ … .’
বাইরের দরজায় একজন কনস্টেবল একটা টুলের উপর বসে ঝিমুচ্ছিল। ওরা দু’জন বেরিয়ে আসতেই সে দরজা বন্ধ করে দিল।
সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে মি. সিম্পসন প্রশ্ন করলেন, কিছু বুঝলে, শহীদ? শহীদ কি যেন ভাবছিল, সে আনমনে জবাব দিল, তেমন কিছু না। আপনি?
“আমার অবস্থাও তথৈবচ। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে হৃৎপিও অপহরণ সংক্রান্ত হত্যারহস্যের নিবিড় যোগাযোগ আছে।’: . .
‘ধারণার কারণ?’ গাড়ির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল শহীদ।
ড. তোগলকের সঙ্গে ড. কুদসীর যে একটা সংঘর্ষ ঘটেছিল সে খোঁজটা আমিও করেছি। তোগলক সাহেব সেই থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন। ভদ্রলোকের : অতীত অনুসন্ধান করেছি আমি। এমনিতে রেকর্ড খারাপ কিছু নেই। পাগলাটে
উদ্ভট ধরনের। সঙ্গে সঙ্গে হিংস্র, শুধু হিংস্র নয়, ভয়ঙ্কর হিংস্র। ঐ ধরনের লোকের পক্ষে খুন করা বিচিত্র ব্যাপার নয়। একবার এক রোগীকে গলা টিপে মারতে। গিয়েছিলেন তিনি। ড. কুদসীর ল্যাবরেটরিতে উনি কাজ করতেন। হৃৎপিণ্ড নিয়ে,
নানারকম গবেষণা করতেন তিনি। মানুষের নয়, প্রধানত ভেড়ার। কিন্তু তাঁর : | পক্ষে মানুষ খুন করে তার হৃৎপিণ্ড নিয়ে গবেষণার কথা চিন্তা করা অস্বাভাবিক
‘ নয়। তাছাড়া শুধু মেডিসিনে নয় সার্জারীতেও ‘তাঁর হাত ছিল পাকা। যে কটা : ‘লোককে হত্যা করে হৃৎপিণ্ড কেটে নেয়া হয়েছে বিশেষজ্ঞদের মতে তার
• প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই পাকা হাতের কাজ ছিল। মানতেই হবে যে লোকটা দক্ষ সার্জন। সাধারণ খুনী নয়। ।
সুতরাং,
••• হয়ত ড. মিন্নত সেটা জানতে পেরেছিল। হয়ত তাই তাকে সরিয়ে দেয়ার
দরকার হয়েছিল। : কিন্তু ব্যাপারটা তাহলে ড. কুদসীরও জানবার কথা।
: না। কারণ গবেষণার কাজে ড. কুদসী বড় একটা সময় দিতে পারতেন না। যদিও তিনি উৎসাহ দিতেন ড. তোগলককে। : : : : ‘ কিন্তু ড. কুদসী তো বললেন, দুটো ঘটনার মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে বলে, কুয়াশা-২১,
১৪১
‘র
–
–
—
তিনি মনে করেন না। | ‘আমি তার কথা বিশ্বাস করি না। এমনও তো হতে পারে, তিনি জেনে-শুনেও ব্যাপারটা চেপে আছেন। . .. . ..
. . * কিন্তু ড. কুদসী একজন হীন নরঘাতককে, একজন ম্যানিয়াককে কোন কারণে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, এটাও কি খুব যুক্তিসঙ্গত কথা হল, মি. সিম্পসন?.. “ | ‘এমনও তো হতে পারে উ, তোগলককে, উনি ভয় করেন বলে প্রাণভয়েই।
চেপে যাচ্ছেন সব। অন্যথায় তার অবস্থাও ড. মিন্নতের মত,হত। ..
‘তা অবশ্য সব, শহীদ স্বীকার করল। ‘একথা তাহলে স্বীকার করছ?’, ‘ ‘ । শহীদ মাথা নেড়ে বলল, ‘একশ বার। কিন্তু প্রমাণ কোথায়?’ ‘সেইটাই তো সমস্যা, চিন্তাজড়িত কণ্ঠে বললেন মি. সিম্পসন।
আকাশটা ইতিমধ্যে ফর্সা হয়ে গেছে। দু-চারটে রিকশা বেরিয়েছে। প্রাতঃভ্রমণকারীরাও বেরিয়ে পড়েছে দু-একজন। কয়েকজন মুসল্লিকে দেখা গেল
পথে। : :
পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের করতে করতে শহীদ বলল, “ড. মিন্নত স্রেফ”.. অকারণেই ভয় পাননি। কিছু একটা কারণ ছিল।’ | তার মানে?’. . : “
। কামাল বলছিল, ড, মিন্নতকে নাকি সন্ধ্যায় খুব বিচলিত দেখাচ্ছিল। কেমন ভীত বিপর্যস্ত। হয়ত নিশ্চিত একটা আশঙ্কা দানা বেঁধেছিল তার মনে।’ ..
| ‘তাহলে তো মেনে নিতেই হয়, দুটো ঘটনার মধ্যে যোগাযোগ একটা
‘সেটা তো আমিও স্বীকার করছি। কিন্তু কথা হল যোগাযোগ কতটা আর | কোন ধরনের? তাছাড়া ঐ যে বললাম, নির্দিষ্ট প্রমাণ কোথায়? তবে একটা কথা
আমাকে খুব স্ট্রাইক করেছে। .. কি কথা?’ . ..
| ‘ড. মিন্নত কামালকে জানিয়েছিল যে, যারা ম্যানিয়াকটার হাতে মারা পড়েছে। : তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নাকি ড, কুদসীর চেম্বারের রোগী ছিলেন ড. | তোগলকের রোগী। ‘ ‘, ‘, ‘, ‘, ‘.. :
: তাই নাকি! অবশ্য তাদের সবাই যে একদা হৃদরোগে ভুগত এই তথ্যটা তো আমরা অনেক আগেই আবিষ্কার করেছি।’
. কিন্তু তাদের হত্যাকালীন হৃদযন্ত্রের অবস্থা কেমন ছিল সে তথ্যটা জানবার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। আপনি বরং সেই খোঁজটা নেবার চেষ্টা করুন।
, আর কোন খোঁজ নেবার দরকার হবে না, শহীদ, বুঝলে। আসল কালপ্রিট। * ১৪২
ভলিউম-৭,
যে কে তা বুঝতে আর বাকি নেই। এখন তাকে খুঁজে বের করাটাই একমাত্র কাজ। . .
হাসল শহীদ। . মি. সিম্পসন বিব্রত কণ্ঠে বললেন, “তুমি হাসলে যে বড়?
‘বেশ তো,, খুঁজে বের করুন ভদ্রলোককে। আমার মনে হয়, সে কাজটাও অত্যন্ত দুরূহ।,, | ‘ড. কুদসীর কাছে নিশ্চয়ই দু-একটা ছবি পাওয়া যাবে ভদ্রলোকের। অন্তত নিখুঁত একটা বিবরণ পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই। তারপর দেখা যাক। মি. সিম্পসন বললেন, ‘অবশ্য কাজটা যে অত্যন্ত দুরূহ তাতে তো, কোনই সন্দেহ নেই।
শহীদ বলল না কিছু। গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বলল, ‘বিকেলে দেখা হবে।’ . মি. সিম্পসন নিজের গাড়ির দিকে এগোলেন। গোপন একটা রহস্য ভেদ করার আনন্দে তিনি খুব খুশি হয়ে উঠেছেন। একটা সিগারেট ধরিয়ে গাড়িতে উঠলেন তিনি।
পনেই দাঁড়িয়েছিল মহুয়া। গাড়িটা প্রাঙ্গণের মধ্যে ঢুকতেই মহুয়া পোর্টিকোর দিকে, যেখানে গাড়িটা এসে থামল, এগিয়ে গেল সেখানে। ৩. মহুয়ার চোখ-মুখ শুকনো। চুলগুলো রুক্ষ।
• শহীদ দরজা খুলতে খুলতে বলল, “নিশ্চয়ই ঘুমোতে পারনি, আমি যাওয়ার পরে। তোমার চোখ-মুখ তার প্রমাণ। ‘, ‘, ‘ ‘ . . . . . ., । সত্যি জান, আমার কেমন যেন ভয় করছিল। এমনটা এর আগে কোনদিন
করেনি। মনে হয়, ভাস্কর একটা বিপদ ঘনিয়ে আসছে আমাদের চারদিকে। যাঃ হোক, সকাল বেলা, এসব নিয়ে মাথাব্যথা করার দরকার নেই। পরে ঢের সময়। পাওয়া যাবে। চা দেব, না একেবারে গোসল করে নাস্তা করবে? আমি বলি কি, . রাত জেগে এসেছ, একেবারে গোসলটা সেরেই নাস্তা কর।’
শহীদের বাবা ইসলাম খাঁ সাহেব লীনার সাথে বেরিয়ে এলেন লনে। তিনি বললেন, রাতে নাকি কোথায় গিয়েছিলে? বৌমা বলছিল। . : জ্বি, আব্বা। কোথাও যাচ্ছেন বুঝি?’ ‘
লীনাকে নিয়ে বেড়িয়ে আসি একটু। আয়, লীনা।
‘বেশি দেরি করবেন না যেন। নাস্তা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। মহুয়া সতর্ক করে। দিল। দেখিস, লীনা, ম্যাক্সিমাম আধ ঘন্টা। আর, দূরে যাসনি যেন। গাড়ি-টাড়ির কুয়াশা-২১
১৪৩
‘:
;
TIT
|
|
।
দিকে খেয়াল রাখিস।’–
. ‘আ, হবে হবে। তোমার সব ব্যাপারেই বাপু খবরদারী, লীনা কৃত্রিম রাগ ‘দেশ। .
লীনা আর ইসলাম সাহেব বেরিয়ে গেলেন। ‘বেশ, তাহলে আমি গোসলটা সেরেই আসি।
নিজের রূমে ঢুকল শহীদ মহুয়ার পিছন পিছন। কিন্তু বাথরূমে ঢুকবার আগেই টেলিফোনটা আবার বেরসিকের মত বেজে উঠল। … এগিয়ে গিয়ে রিসিভারটা তুলতে তুলতে শহীদ বলল, না, জ্বালালে দেখছি।’ হ্যালো..”হ্যালো•••শহীদ বলছি ওহ..ড. কুদসী। আবার কি হল এইটুকু সময়ের মধ্যে•••চুরি, ল্যাবরেটরিতে•••চেম্বারেও। হ্যাঁ, খবরটা আমাকে দিয়ে ভাল করেছেন•• হা হা, ড. মিন্নতের খুনের সাথে যোগাযোগ থাকতেও পারে।
• দারোয়ান খবর দিয়েছে?…কি হারিয়েছে•••আপনি এখনও যাননি চেম্বারে? পুলিসে খবর দিয়েছেন?…কি হারিয়েছে, জানাবেন আমাকে টেলিফোনে, দরকার ইলে নিশ্চয়ই যাব।’….
মহুয়া বল্ল, ‘শুধু চুরি কেন, এখন থেকে পকেটমারের তদন্তও শুরু করে দিলে পার। **
শহীদ হেসে বলল, ‘ভাবছি গরু চোরই বা বাদ যায় কেন?
মহুয়া বলল, “আর এক হাফ-ডিটেকটিভ তো সকালে তিনবার ফোন করেছিল।
: হাফ-ডিটেকটিভ! সে আবার কে? তোমার ভ্রাতার নতুন পোষ্য, সেই মি. স্যানন ডি কস্টা বুঝি? সেও আবার টেলিফোন করতে শুরু করেছে নাকি? তার আবার কি হয়েছে?’… }, { : . … . .. … ।
‘ “আরে, সেই কস্টা সাহেব নয়। তোমার বন্ধুর কামাল আহমেদ সাহেব। সারারাত বুঝি ঘুমোয়নি। সকাল হতেই টেলিফোন করতে শুরু করেছে। কি নাকি আইডিয়া এসেছে তার মাথায়। ‘.. :, . • •,
তবে তো সেরেছে। আমি বাথরুমে ঢুকলাম। ফোন করলে আসতে বলে দিয়ো। ভাল কথা, আমি কোথায় গিয়েছিলাম রাতে, বলেছ নাকি কামালকে?’…
: বলেছিলাম।’ ‘ .. .; কি বললে শুনে?’ :: . . . .,
‘প্রথমে তো আঁতকে উঠল। বিশ্বাসই করতে চাইল না। পরে বলল, তার মাথায় ব্রিলিয়ান্ট সব আইডিয়া এসেছে।
তারপর? ‘‘: . ….
• বারবার ফোন করছে আইডিয়াগুলো শোনাবার জন্যে।
১৪৪
ভলিউম-৭’
“
ওহ। তাহলে সেগুলো নিয়ে আসতে বলে দিও।’ বাথরূমে ঢুকল শহীদ। আর সঙ্গে সঙ্গে আবার ফোনটা বেজে উঠল।.:.
ঘন্টা খানেক পরে কামাল এ েপৌঁছুল। শহীদ তখন নাস্তা শেষ করে সবে, চায়ে চুমুক দিচ্ছে। ইসলাম সাহেব নাস্তা শেষ করে চলে গেছেন।
তোর মাথায় কি সব ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া গিজগিজ করছে যেন? উত্তেজিত কামালকে ইনিংরুমে ঢুকতে দেখেই শহীদ প্রশ্ন করল। কিন্তু একটা আবিষ্কারের আনন্দে কামালের চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, লক্ষ্য করল শহীদ।
* একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসল কামাল।
‘দেখিস, ভাঙবে চেয়ার। সেগুন কাঠের সি, এফ.টি. কত জানিস?
কি করে জানব? আমি তো আর কাঠের কারবায় করি না।’
সেই তো, আদার ব্যাপারী কাঠের দর জানবে কি করে? তা, বৎস কামাল, তোমাকে এমন উত্তেজিত দেখাচ্ছে কেন? যেন দিগ্বিজয় করে এসেই বলে মনে হচ্ছে।
‘সলভ করে ফেলেছি পুরো রহস্যটা। …….। ** “তাই নাকি! হত্যাকারী কে? সিগারেট ধরিয়ে জিজ্ঞেস করল শহীদ। কামাল সোৎসাহে বলল, ‘নিশ্চয়ই হত্যাকারী সেই পাগল ডাক্তারটা, ভ: তোগল। কাৰ সারারাত ধরে ভেবে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, এই অমানুষিক হত্যাকাণ্ডগুলো সেই শয়তানটা ছাড়া আর কেউ করছে না। সকালে বৌদি যখন বললেন ড. মিন্নত খুন হয়েছেন, তখন আর সন্দেহের অবকাশটুকুও রইল না।
“এই বুঝি তোর ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া? নিশ্চয় তোর সিদ্ধান্তের কথা মহুয়াকে ‘বলেছিস?’ ‘ । :.
., কই, না তো! বৌদি, তোমায় বলেছি নাকি? আমার তো মনে পড়ছে না।’ ৭ : মহুয়া বলল, কই, মনে পড়ছে না তো।তোমাকে আমি তেমন কিছু বলেছি,
কি?’ শেষের কথাটা বলল শহীদের উদ্দেশ্যে। * * বললে না আমাকে, হাফ-ডিটেকটিভ সাহেব ফোন করেছিল? আমি ভাবলুম, তোর এই ওয়াণ্ডারফুল সিদ্ধান্তের জন্যেই মহুয়ার এই এপ্রিসিয়েশান।। .. .
. ‘হো হো করে হেসে উঠল সবাই। লীনা প্লেটের দিকে মুখ নামাল।’ .,., ‘তোর সব তাতেই ঠাট্টা। আমার সশনটা নিশ্চয়ই তোর পছন্দ হচ্ছে না?
‘একশ’বার হচ্ছে। মি. সিম্পসনেরও ধারণা, ড, তোগলকই কালপ্রিট। এখন তাকে খুঁজে বের করলেই, ব্যস।
• আমিও তো তাই বলছি। ‘ . . কিন্তু, বাছা, আমি তা বলছি না।’
থতমত খেয়ে কামাল বলল, তাহলে তোর কি ধারণা? ১০-কুয়াশা-২১
|
‘স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। ড. তোগলকও কালপ্রিট হতে পারেন। কিন্তু এই সন্দেহটাকে প্রমাণ করার মত কোন কনসিভ এভিডেন্স যতক্ষণ না পাওয়া যাচ্ছে। ততক্ষণ আমি তোগলকের পশ্চাদ্ধাবন করতে রাজি নই। : * .’ কিন্তু ঘটনাবলী তো ড. তোলকের দিকেই ইঙ্গিত করে।
‘তা অস্বীকার করি না। কিন্তু যে কথা আমি বারবার বলছি তা হল, প্রমাণ কোথায়? স্রেফ সন্দেহই কি যথেষ্ট?
‘ ‘বেশ, তুমি প্রমাণের অপেক্ষায় থাক। আর এদিকে একটার পর একটা লোককে ড. তোক খুন করে তার হৃৎপিণ্ড কেটে নিক। কিন্তু ভায়া, একটা কথার জবাব দেবে?’
‘ জানা থাকলে অবশ্যই দেব ।
‘ডাক্তার তোক পালিয়ে গেল কেন? সে গা-ঢাকা দিয়েছে কেন? তিনমাস ধরে তাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?’
• এই রহস্যের মীমাংসা হলে তো সমস্তটাই হয়ে গেল,’ হেসে বলল শহীদ। . মহুয়া খাবারের প্লেট কামালের সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘যাক, রহস্যভেদের সময় অনে পাওয়া যাবে। আপাতত এগুলোর সৎকার কর। সকাল বেলা মাথা খারাপ নাইবা করলে।
শহীদ বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, সেইটেই ভাল। পেটে কিছু পড়লে ঘিলুটা, খেলবে ভাল।’: ‘… :
সে তো তোকে দেখেই বুঝতে পারছি, থালাটা কাছে টেনে নিয়ে বলল । কামাল। ‘‘
* টোস্টে মাখন লাগাতে লাগাতে কামাল জিজ্ঞেস করল, “ড. মিন্নতের মার্ডার সম্পর্কে ড. কুদসী কি বললেন, রে?” . . . . .
. বিশেষ কোন আলোকপাত করতে পারলেন না, ড. কুদসী। এদিকে সার এক কাণ্ড হয়েছে। ড, কুদসীর চেম্বারে চোর ঢুকেছিল রাতে তালা ভেঙে। | ‘সে কি! বিস্মিত হল কামাল। চুরি গেছে কি কি? . . . .
‘? তা বলতে পারলেন না ড. কুদসী। শুধু বললেন, আলমারিতে যত কাগজপত্র– ছিল সেগুলো তন্ন তন্ন করে কে যেন ঘেঁটেছে। ওর মধ্যে থেকে কিছু হারিয়েছে কিনা তা একমাত্র ড. মিন্নতই বলতে পারত। ফাইল-টাইল তো সে-ই গুছিয়ে রাখত।
. যাবি নাকি?’… “.. দরকার নেই!, এখন তাহলে কি করবি? | ‘ঘুমোব নাকে তেল দিয়ে। রাতের ঘুমটা পেড়ে নিতে হবে না এখন?’ শহীদ ১৪৬
ভলিউম-৫ :
বলল। | কামাল চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে বলল, “আমি তাহলে মি. সিম্পসনের অফিসে চললাম।’ ‘… । : উঠে দাঁড়াল কামাল। একটা সিগারেট ধরাল। কামাল জানে, শহীদ এখন ঘুমোবে না। এখন সে চিন্তা করতে বসবে। সে এখন নিরিবিলিতে সমস্ত ব্যাপারটা ভাববে। সুতরাং ওকে ডিসটার্ব করা উচিত হবে না।
* দরজার দিকে এগোতে এগোতে কামাল বলল, যতই ভাব না কেন, বৎস, সিদ্ধান্ত ঐ একটাই! আগেই তো, তা বলে দিয়েছি।’
সাত
আবার এসেছে অমাবস্যার রাত। পুলিশ বাহিনী আজ সতর্ক। সন্ধ্যা থেকেই পুলিস টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে শহরের সর্বত্র। পুলিস বাহিনীর তৎপরতায় অবশ্য ঢাকার বাসিন্দাদের আতঙ্ক বেড়েছে।
. বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছে অবশ্য তারাই যাদের বয়স পঁচিশ থেকে তিরিশের মধ্যে। প্রচুর গুজব রটছে এবং গুজব পল্লবিত হয়ে শহর জুড়ে একটা বিভীষিকার রাজত্ব সৃষ্টি করে তুলেছে।, পথে আজ লোকজন চলাচল অপেক্ষাকৃত কম। সিনেমায়, বাসে, চায়ের দোকানে স্বাভাবিক ভিড় নেই। যে ক’জন আছে তাদের চোখে-মুখে শঙ্কার আভাস। অপরিচিত লোককে সবাই আড়চোখে দেখছে। সন্দেহের চোখে দেখছে। রাত আটটার মধ্যেই শহরের সব দোকানপাট প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
‘ ২’, আবাসিক এলাকাগুলোতে যৈন নিশুতি রাতের স্তব্ধত্ম বিরাজ করছে। দু’একটা এলাকায় হাস্যকর ঘটনাও ঘটে গেছে। একটা এলাকায় কয়েকটা হোকরা মিলে এক আধবুড়ো জোয়ান ভিখিরীকে পিটিয়ে লাশ বানিয়েছে। আবার দু’-এক
জায়গায় কয়েকজন পাগল মার খেয়েছে। . * গোটা শহরটাই আতুঙ্কে ম্রিয়মান। কে জানে, কখন কার পাশে, অমাবস্যা রাতের সেই নিষ্ঠুর শয়তানটা নিশ্চিত মৃত্যুর মত এসে হাজির হবে। তারপর বক্ষ চিরে হৃৎপিণ্ড বের করে নিঃশব্দ পৈশাচিক উল্লাসে কালরাত্রির অন্ধকারে মিলিয়ে যাবে। কে জানে, কখন শেষ হবে এই ভয়ঙ্কর দুঃস্বর্গের রাত। .. . .
‘‘ শুধু.সরগরম হয়ে আছে ঢাকা স্টেশন। স্টেশনের বাইরে একটাও যানবাহন নেই। বাইরের যারা এসেছে তারা ধারণা করছে, ঢাকায় বোধহয় যানবাহন ধর্মঘট চলছে। কিন্তু ধর্মঘট তো সাধারণত রাতে থাকে না। তবে কি কারফিউ? কিন্তু, কিছু কিছু লোকও চলাচল করছে। স্টেশনের চারদিকে পুলিসও দেখা যাচ্ছে কুয়াশা-২১,
:১৪৭
।
অনেক। অথচ যাত্রীদের তারা বাধা দিচ্ছে না।
খোঁজ করতে গিয়ে যা তারা শুনছে তাতে তাদের পিলে চমকে উঠছে। কেউ বলছে, শহরে নাকি হায়েনা বেরিয়েছে দলে দলে। কেউ বলছে, মানুষ নাকি মন্ত্র পড়ে হায়েনা হয়ে রক্ত খাচ্ছে। একজন তো বলল, আমার চাচা নিজের চোখেই দেখেছে, একটা লোক হঠাৎ হায়েনার মত হয়ে গেল।.. **: “আর একজন বলল, তোর চাচার হাডিড ড়মড় করে খেয়ে ফেললে বুঝি? .
না, চাচা তিনতলা বাড়ির ছাদের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। . অন্য একজন বলল, ‘পাঁচতলার একটা, রূমে উঠে হায়েনাটা এক যুবতীর রক্তপান করেছে বলে কাগজে লিখেছে। * যাত্রীরা আর শহরের দিকে এগোতে সাহস পেল না।
চট্টগ্রাম মেল ছাড়বার সময় হয়েছে। যাত্রীসংখ্যা আজ কম। ইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে আছে ট্রেন।– ইয়ার্ডের বাইরে একটা কার এসে থামল। বলিষ্ঠ এক বৃদ্ধ নামলেন গাড়ি থেকে। স্যুট পরা, মুখে পাইপ, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। কয়েকজন কুলী এগিয়ে এল। বৃদ্ধ ইশারা করলেন গাড়ির বুট থেকে মাল নামাবার জন্যে। মাল বলতে, ছোট একটা স্যুটকেস আর একটা হাল্কা হোন্ডল।’ { গেট পেরিয়ে ট্রেনের দিকে এগিয়ে গেলেন বৃদ্ধ। একটা ফার্স্ট ক্লাস কম্পার্টমেন্টের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রিজার্ভেশন স্লিপটা পড়তে লাগলেন। কুলীটা পিছনে এসে দাঁড়াল। ‘ইতিমধ্যে চেকারও এসে পঁড়িয়েছে। সে বলল, ক্যান আই
হেল্প ইউ, স্যার?’; :
. বৃদ্ধ চেকারের দিকে তাকালেন। চেকার দেখল, অন্তর্ভেদী দৃষ্টি মেলে বৃদ্ধ তার দিকে চেয়ে আছেন। চোরের বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল সেই দৃষ্টির সামনে।
বৃদ্ধ রাশভারী গলায় বললেন, ‘ননা, থ্যাঙ্কস।’…… . নীরবে সরে পড়ল চেকার। যেন বেঁচে গেল সে। : দরজা খোলাই ছিল। উঠে পড়লেন বৃদ্ধ। চার-বার্থের ছোট কম্পার্টমেন্ট। দুটো আপার আর দুটো লোয়ার বার্থ। একজন এসে গেছে। অবশিষ্ট দু’জন এখনও আসেনি। ……
কুলীটা পিছনে পিছনে উঠল মাল নিয়ে।
বৃদ্ধ বললেন, বিছানাটা পেতে দাও, হে।’. ‘ উপরে, না, নিচে?’, .
. . . . . . .
• বৃদ্ধ এবারে কথা বললেন না, আঙুল দিয়ে ইশারা করে নিচের বার্থটা দেখিয়ে দিলেন। কুশীটা বিছানা পেতে দিয়ে পয়সা নিয়ে চলে গেল। * সামনের বার্থে বসেছিল এক যুবক। রিডার্স ডাইজেট পড়ছিল কামরার মান। ১৪৮
ভলিউম-৭।
.
? *
আলোয়। বুদ্ধকে উঠতে দেখে তাঁর দিকে তাকাল। হঠাৎ তার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল। তার দিকে ফিরেও তাকালেন না বৃদ্ধ যাত্রী। কিন্তু যুবক তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল। মুখটা পরিচিত বলে মনে হচ্ছে তার। কোথায় যেন তাকে দেখেছে সে। এ মুখ তার ভাল করেই চেনা। কে? কে, এই সৌম্যকান্তি বৃদ্ধ? কিন্তু চোখ দুটো কি তীক্ষ্ণ। আমি ওকে চিনি? ভাল করেই চিনি। অথচ এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। স্মৃতির পাতা হাতড়াতে লাগল যুবক…।
* বৃদ্ধ পোশাক বদলালেন না। সিটের উপর বসে বাইরে ইয়ার্ডের দিকে মুখ ফিরিয়ে ধূমপান করতে লাগলেন নীরবে। ১. ট্রেন ছাড়বার সময় হয়েছে। ঘন্টা পড়ে গেছে। চেকার এসে দরজা খুলল। বুদ্ধের দিকে তাকাবার ভরসা না পেয়েই বোধহয় যুবককে জিজ্ঞেস করল, আসেননি, বোধহয় আর দু’জন?’ তার কণ্ঠস্বরে বৃদ্ধ ফিরে তাকালেন।
যুবক বলল, এখন পর্যন্ত তো দেখছি নে..
“ওহ্, আচ্ছা। ট্রেন ছাড়লে, ইচ্ছে করলে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিতে পারেন।’ চলে গেল চেকার।– একটু পরেই ট্রেনে গতি সঞ্চারিত হল। ধীরে ধীরে ইয়াঙ অতিক্রম করল .
ঐন। বৃদ্ধ তখনও বাইরের দিকে তাকিয়ে আছেন। * যুবকও তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। সে ভাবছে নিজের কথা। আজ বছর ‘খানেক হল সে বেকার। বিরাট একটা সংসারের বোঝা তাকে বইতে হয়। বৃদ্ধ বাপ-মা, ভাই-বোন নিয়ে অনেকগুলো মুখ। হার্ট ট্রাবল হওয়ায় তার চাকরি চলে গিয়েছিল, ঠিক তা নয়। ছাড়তে হয়েহিল। ডাক্তার বলেছিলেন, পূর্ণ বিশ্রাম চাই, আর কোনরকম উত্তেজনার যেন কোন কারণ না ঘটে। চকরি করত তখন এক মেডিকেল ফার্মে। রিপ্রেজেনটেটিভ ছিল সে। কিছু জমানো টাকা ছিল। বিয়ের জন্যে জমিয়েছিল টাকাটা। বেকারত্বের আমলে সেই টাকায় তার চিকিৎসা করা হয়েছে। সংসারের চাকাটা কোনক্রমে ঘুরেছে এবং সেই টাকাতেই বোনটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। পড়া শোনা ছেড়ে দিয়ে চাকরি নিয়েছে। কিন্তু কতই বা পায় সে।
এখন সে রীতিমত সুস্থ। একটা চাকরি চাই। কিন্তু চাকরির বাজার এখন মন্দা। আগে যে ফার্মে চাকরি করত সেখানে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। সংবাদপত্র খুলে কর্মখালির বিজ্ঞাপন দেখে ইদানীং প্রায়ই দরখাস্ত করত সে। ইন্টারভিউ পেত দু-একটা। কিন্তু চাকরি জুটত না। স, হঠাৎ গত পরশু চট্টগ্রাম থেকে একটা ইন্টারভিউ কার্ড এসে হাজির। একটা মেডিকেল ফার্ম পাঠিয়েছে কার্ডটা। ঐ ফার্মে সে দরখাস্ত করেছিল কিনা মনে পড়ছে না তার। কিন্তু ইন্টারভিউ কার্ডের সাথে ট্রেনের টিকেট পাঠিয়েছে। কুয়াশা-২১
. ১৪৯
“T
:
*
ফার্স্টক্লাস কম্পার্টমেন্টের টিকেট। রিজার্ভেশনও আছে তার নামে। বাদবাকি খরচ ইন্টারভিউ-এর সময় দেওয়া হবে। খুব বড় ফার্ম হবে হয়ত। তাই মুক্ত হস্তে পয়সা ব্যয় করতে বাধে না। চাকরি ঠিক এখানেই হবে, জানে সে। বাড়িসুদ্ধ সবাই খুশি। হয়েছিল সম্ভাবনার আনন্দে। কিন্তু টিকেটের তারিখ দেখে বোনটা কেমন যেন চমকে উঠেছিল। যুবক বলেছিল, “কিরে চমকে উঠলি যে?’ বোন কিছু বলেনি। কিন্তু ব্যাপারটা বোঝা গেল আজ সকালে। আব্বা পঞ্জিকা দেখে বললেন, ‘অমাবস্যা আজ রাতে। যাত্রা নাস্তি পঞ্জিকায় লিখেছে। মায়ের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে।… | যুবক তার মাকে বলল, ওসব পঞ্জিকার কথা। লিখে দিয়েই খালাস। যাত্রা নাস্তির খোঁজ করলে ট্রেনগুলো মাসের মধ্যে পনের দিন বন্ধ থাকত। আব্বা আর কিছু বললেন না। কিন্তু মা বললেন, কিন্তু ঐ যে…ঐ যে সেই…সবাই কী সব
বলছে! | ‘ওসব গুজব। এই সুযোগ আমি বাজে গুজবের ভয়ে হারাতে পারি না। সংসারের কি হাল দেখছ? বাজে কতকগুলো গুজবের ভয়ে সংসারের আরও অসুবিধা ঘটাতে পারব না আমি।’ গুজবে যে তার মায়ের অবিচল আস্থা তাসে জানে।
. সে কথা তো ঠিকই। কিন্তু জীবনটা তো সকলের আগে। তুই যেতে পারবি না, বাবা। মরলে সবাই একসঙ্গে না, খেয়ে মরব, আমার বুকের ভেতরটা কাঁপছে। লক্ষ্মী, বাবা।
‘লক্ষ্মী, মা, মণি । দেখে নিয়ে, আমার কিছু হবে না। পরশু দেখবে, হাসতে হাসতে ফিরে এসেছি। তুমি বাধা দিয়ো না, সোনা মা।’ | সন্ধ্যার আগেই স্টেশনে এল সে। এ প্রস্তাবটা ছিল তার বোনের।
আসবার সময় কাঁদছিলেন মা। আব্বরও চোখ দুটো ভিজে। তাঁর ঠোঁট দুটো কাঁপছিল। কিন্তু কিছু বলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। খোকার চাকরি হওয়াটা বড় দরকার। অথচ আজকের এই বিভীষিকার রাতে ছেলেকে একাকী পাঠাতে বুকের ভিতরটা তার ভেঙে আসছিল। বোনটা বলল, “সাবধানে থাকিস, দাদা। .. . ভয় জিনিসটা সংক্রামক। তার নিজেরও ভয় করছিল না এমন নয়, কিন্তু সে একটা চাকরির জন্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সামান্য গুজবের ভয়ে এমন একটা চাকরির সম্ভাবনা নষ্ট করা যে কত বড় বোকামি সে তা জানে। অবশ্য হৃৎপিণ্ড চুরির ঘটনা সে কাগজে পড়েছে। এ নিয়ে আলোচনা শুনেছে। নিজেও অনেক আলোচনায় যোগ দিয়েছে। কিন্তু দুনিয়ায় এত লোক থাকতে বিশেষ করে তার হৃৎপিরে দিকেই সেই কালপ্রিটটা নজর দেবে এমন সম্ভাবনা সে স্বীকার করে না। তাছাড়া ঐ ঘটনার সবগুলোই ঘটেছে ঢাকা শহরে। অন্তত তাই সে শুনেছে। আর ১৫০,
ভলিউম-৭
– GT
সে তো থাকবে ঢাকার বাইরে। সুতরাং তার ভয়ের কি আছে। এটুকু রিস্ক নেওয়াতে তার আপত্তি নেই। ‘ :
* ট্রেনের গতি বাড়ছে। তেজগা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন ছাড়িয়ে এসেছে ট্রেন। পরবর্তী স্পপেজ টঙ্গী। ‘ এখন একটু ঘুমিয়ে নেয়া দরকার। কামরার ভিতর মুখ ফেরাল যুবক। দেখল, সামনের বার্থে বসা বৃদ্ধ এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখ দুটো যেন জ্বলছে বাঘের মত। * যুবকের বুকের ভিতরটা দুরুদুরু করে উঠল এক অজানা আশঙ্কায়। তবে কি, এ সেই! তার মনে হল, বৃদ্ধ যেন নিষ্ঠুর হাসি হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। সমস্ত শরীরটা থরথর করে কাঁপতে লাগল তার। কপালে ঘাম দেখা দিল। হৃৎপিণ্ডটা তার লাফাচ্ছে। এখুনি কি সে চেতনা হারাবে? না, চেতনা হারালে চলবে না তার। দরকার হলে রুখে দাঁড়াবে সে। কিন্তু সাহস কোথায়? শক্তিই বা কোথায়? সে যে ইতিমধ্যেই নিঃশেষিত! আর ঐবিরাট পেশল শক্তিশালী লোকটার কাছে তো সে একটা শিশু! হোক না কেন সে বৃদ্ধ? যুবক জানে, ঐ বৃদ্ধের দেহে আছে অফুরন্ত শক্তি। তার সাথে দৈহিক শক্তিতে সে এঁটে উঠতে পারবে কি? তবু, তবু সে একবার দেখবে। উঃ, কি ভয়ঙ্কর দৃষ্টি! : “:: •••লোকটা যে উঠে দাঁড়াল! হ্যাঁ, এগিয়ে আসছে। চিৎকার করে উঠবে যুবক? | কিন্তু কে শুনবে? ট্রেনের গর্জনে চাপা পড়ে যাবে তার আর্তনাদ। .. : : ভীত হরিণের মত অসহায় দৃষ্টিতে বৃদ্ধের দিকে চেয়ে রইল সে। লোকটা এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে। নিঃশব্দ পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠেছে তার সৌম্য-সুন্দর মুখে। এখন সে চিনতে পেরেছে। কিন্তু তাতে লাভ আছে কি?: তোমরা সবাই . শোন, এই সেই পিশাচ আমি ওকে চিনি। এ হচ্ছে সেই…। : লোকটা কি যেন বলছে, ভয় পেলে? ভয়ের কি আছে? এতটুকু কষ্ট হবে, না।•••পরম শান্তিতে ঘুমোবে তুমি। ঘুমোও, মাই চাই। ঘুমিয়ে পড়।••••
চোখ দুটো বুজে এল যুবকের।
আট
পরদিন সকালে শহীদ তীব্র উৎকণ্ঠায় লনে পায়চারি করছিল। মি. সিম্পসনের
পরামর্শে গতরাতে সমস্ত শহরটা পুলিস পেট্রল দিয়ে বেড়িয়েছে। এতে লাভ হবে। . কতটুকু সে সম্পর্কে সন্দেহ ছিল শহীদের। কিন্তু কিছু বলেনি, কারণ সাবধানের মার নেই, হৃৎপিণ্ডলোভী দানবটা যদি সত্যি কোন টহলদার বাহিনীর হাতে পড়ে যায়। কুয়াশা-২১ ‘
১৫১
: তাছাড়া শহীদ নিজের কাছেই লজ্জিত বোধ করছিল কারণ এই জটিল। রহস্যের জট ছাড়াতে এখনও সে পারেনি। কে জানে, হয়ত তার বা তাদের ব্যর্থতার ঋণ আর কাউকে শোধ দিতে হল কিনা।
• সকাল আটটার দিকে মোড়ের মুদিদোকানের ছোকরা একটা চিঠি নিয়ে এল। শহীদকে সালাম জানিয়ে বলল, ‘আপনার চিঠি, স্যার। “ চিঠিটা হাতে নিতে নিতে শহীদ বলল, কে দিল রে? কোথায় পেলি?’,
একটা দাড়িওয়ালা সাহেব, হুজুর। বুড়ো মানুষ। গাড়িতে এসেছিল। খুব লম্বা-চওড়া।
আচ্ছা, ঠিক আছে। তুই যা।” ৮. চিঠিটা খুলল শহীদ। ছোট একটা চিরকুট। খবরের কাগজের কোণা ছিঁড়ে লেখা, স্পষ্ট গোটা-গোটা অক্ষরে সিদ্ধিলাভের চরম মুহূর্তে আমি কোন বাধা মানব না। আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াও। অন্যথায় আমার রোষানলে পুড়ে ছাই
হয়ে যাবে আমার পথ থেকে সরে সিদ্ধিলাভের চর
বিঃদ্রঃ–তোমরা এত চেষ্টা করে কি করতে পারলে? আমার শিকার আমি ঠিকই।
• খুঁজে নিয়েছি। পারবে না। পারবে না, আমার পথে বাধা সৃষ্টি করতে। | ‘ ধ্বংস্ব হয়ে যাবে।’
অভিবাদনহীন, স্বাক্ষরহীন চিঠি। সকাল বেলা যেন মূর্তিমান ব্যঙ্গ আর হুমকি হিসেবে হাজির হয়েছে। ভাল করে পরীক্ষা করে বুঝতে পারল, বাম হাতে লেখা হয়েছে চিঠিটা। ভাঁজ করে পকেটে ফেলল সে কাগজটা।
‘ঘন্টাখানেক পরে নিরাশার সুরে মি. সিম্পসন জানালেন, সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে। গেছে। চট্টগ্রাম মেলের প্রথম শ্রেণীর কম্পার্টমেন্টে পাওয়া গেছে এক যুবকের মৃতদেহ। তার হৃৎপিণ্ডটা পাওয়া যাচ্ছে না।
, পুরো খবরটা শোনা গেল সন্ধ্যায়। কামাল ও শহীদ দুজনেই গিয়েছিল মি.. সিম্পসনের কাছে। তিনিই জানালেন যুবকের নাম, তাজুল ইসলাম। একটা ইন্টারভিউকার্ড পেয়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল সে। এক মেডিক্যাল ফার্ম থেকে এসেছিল কার্ডটা। তারা বার্থ রিজার্ভ করে টিকেট পাঠিয়েছিল। ফার্মটার নাম ‘জনপ্রিয় ফার্মাসিউটিক্যালস’ যুবৰ বছর খানেক আগে হৃদরোগে ভুগেছিল। ড. কুদসীর নাম তাজুল ইসলামের বাড়ির লোকজন শোনননি।
এ সম্পর্কে ড. কুদসীও কোন হদিস দিতে পারেননি। তাঁর ফাইল-পত্র সব চুরি হয়ে গেছে গত মাসে। মি. সিম্পসন চট্টগ্রামে খোঁজ-খবর করে দেখেছেন, সেখানে জনপ্রিয় ফার্মাসিউটিক্যালস’ নামে কোন মেডিক্যাল ফাম নেই। যে খামে করে ইন্টারভিউ কার্ড ও ট্রেনের টিকেট এসেছিল সেটা খুঁজে পওয়া যায়নি যুবকের মালপত্রের মধ্যে।
* ভলিউম-৭।
/
}
,
+
.
* চেকার ও স্টেশন মাস্টারের স্টেটমেন্ট থেকেও তেমন কিছু জানা গেল না। চেকারের কাছে জানা গেল, যে কামরায়, এই ঘটনা ঘটেছে তাতে বার্থ ছিল চারটে। দু’জন যাত্রী শেষ পর্যন্ত আসেনি। নিহত যুবক ছাড়া অন্য যে ভদ্রলোক ঐ কামরাতে চেপেছিলেন তিনি বৃদ্ধ। লম্বা-চওড়া মানুষটা। মুখে দাড়ি আছে। রাসভারী প্রকৃতির মানুষটা। দেখলেই ভয় লাগে। টঙ্গী স্টেশনে সেই চেকারই যুবকটিকে নিহত অবস্থায় দেখতে পায়। দরজা খোলা দেখে কৌতূহলী হয়ে ভিতরের দিকে তাকাতেই তার চোখে পড়ে সেই বীভৎস দৃশ্যটা। বৃদ্ধ ভদ্রলোকটাকে সে আর দেখতে পায়নি। বিছানাপত্র রেখেই চলে গেছেন তিনি। স্টেশনের এনকোয়্যারীতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ঐ কামরায় বাগুলোর যাত্রীরা ছিলেন-তাজুল ইসলাম, আবদুল হাশেম, মনোয়ার উদ্দিন আর কুদরত আলী। লোয়ার বার্ধটা রিজার্ভ করা ছিল মনোয়ার উদ্দিনের নামে। কিন্তু ঐ বৃদ্ধই মনোয়ার উদ্দিন কিনা তা চেকার বলতে পারল না।
নীরবে সমস্তটা শুনল শহীদ। তারপর বলল, “জানেন মি. সিম্পসন, কুকটা আমাকে হুমকি দিয়ে চিঠি লিখেছে একটা?’ হাসল শহীদ, আজ সকালে, পেয়েছি। ‘
“তাই নাকি! একটু বিস্মিত বোধ করলেন তিনি। কই, এনেছ নাকি চিঠিটা?’
সঙ্গে নেই। দেখবারও কিছু নেই। তাতে শুধু আমাকে ধ্বংস করে দেবার শপ করা হয়েছে। আর কি দম্ভ,
‘তাহলে এখন কি করতে চাও? তুমি তো আর হুমকিতে পিছিয়ে পড়ার লোক নও?’’
শহীদ হাসল, কিন্তু আমি কয়েকদিনের জন্যে নিজেকে নিষ্ক্রিয় বলে দেখাতে চাই।……..। ২৯. কারণ?”……
‘দেখি আমাদের বন্ধু কি করেন?
‘কিন্তু এখন কি আমাদের ঢিল দেবার সময় আছে? একটু উদ্বিগ্ন হয়েই বললেন মি. সিম্পসন। … “ঢিল দিচ্ছে কে? শুধু মাত্র নিষ্ক্রিয় থাকার ভাণ করতে চাই। আসলে অতি
গোপনে আমি তদন্ত করন চাই।’ : তাতে কি সেই ধূর্ত লাকটার চোখে ধুলো দিতে পারবে? বুঝতেই পারছ কি ধড়িবাজ আর শয়তান সে।’. . . . . . . . .’ ‘
‘চেষ্টা করতে দোষ কি? তাছাড়া আপাতত আমাদের এখন কিছু করবার নেই। আমাদের আসল ও চূড়ান্ত.কাজ হল আগামী অমাবস্যার কয়েকদিন আগে। ‘: মি. সিম্পসন শহীদের কথাগুলো মেনে নিতে পারলেন না। তিনি সবেগে মাথা
কুয়াশা-২১।
১৫৩
. নেড়ে বললেন, তার মানে অন্তত আরও একজনকে নিশ্চিত মরণের কবলে সঁপে
দেওয়া। দ্যাট ইজ ব্রুটাল। আমরা আর অপেক্ষা করতে পারি না। আগামী . অমাবস্যার আগেই আমাদের ধরতে হবে কালপ্রিটটাকে। ইউ মাল্ট, আদারওয়াইজ | উই শ্যাল বি ফেইলিং ইন আওয়ার ডিউটিজ।
| ‘আমি কি আর ইচ্ছে করে দেরি করতে চাই? পারলে তো এখুনি তাকে আদালতে হাজির করি। কিন্তু এত চেষ্টা করেও কি করতে পারলাম আমরা? কিছুই না। অথচ CT ঠিকই তার জিঘাংসাবৃত্তি চরিতার্থ করে চলেছে। আফসোস ঝরে ‘পড়ল শহীদের কণ্ঠ থেকে।’
| ‘ মি. সিম্পসন নীরবে চিন্তা করতে লাগলেন। তারপর ঘড়ি দেখে বললেন, ‘আমায় উঠতে হবে। ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চের ডি.আই.জি. ডেকে পাঠিয়েছেন। ঐ কালপ্রিটটাকে যেমন করে থোক আগামী অমাবস্যার আগে রাউণ্ড আপ করতেই হবে, সেটাই আলোচ্য বিষয়। তুমিও ইচ্ছে করলে আসতে পার।’ …। | ‘মাফ করবেন ওসব কনফারেন্সে কিছু লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না । | আমারও কাজ আছে, আমি চললুম।
অপ্রশ্ন করলে শহীদ কিছুক্ষণের জন্যে লক্ষটিয়েছে
শুক্লপক্ষ চলে গেছে। পার হয়ে গেছে কৃষ্ণপক্ষেরও কয়েকটা দিন। অমাবস্যা । আসন্ন। একটা আতঙ্কের মেঘ ইতিমধ্যেই রাজধানীর মানুষের মনটাকে আচ্ছন্ন করে তুলছে ক্রমে ক্রমে। কে জানে, এবারে কে হবে সেই নর-রাক্ষসের শিকার।
কামালের ধারণা, যথার্থই ব্যর্থ হয়েছে শহীদ। তাই সে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। বিরক্ত হয়েছে কামাল। ক্ষুব্ধ হয়েছেন মি. সিম্পসন। সমালোচনার হুল ফুটিয়েছে। কামাল। গা করেনি শহীদ। তবু মাঝে মাঝে শহীদ কিছুক্ষণের জন্যে লাপাত্তা হয়ে যেত। পরে এ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করলে শহীদ এড়িয়ে যেত। তারপর একদিন। গাঝাড়া দিয়ে উঠল শহীদ। অমাবস্যার তখন মাত্র তিন দিন বাকি। ‘ . .
সকালে ফোন করে রেখেছিল কামালকে, সন্ধ্যায় যেন সে বাসায় থাকে। . | সুতরাং সন্ধে থেকেই বাসায় ছিল কামাল। নিশ্চয়ই কোথাও বেরোতে হবে। পোশাক পরে তৈরি হয়েই রইল সে। একটু যেন উত্তেজনা অনুভব করছিল সে। *. কিন্তু সন্ধ্যা তো দূরের কথা, রাত দশটা পর্যন্ত শহীদ এল না। কামাল। প্রথমটায় বিরক্ত হল, পরে অবাক হল, এবং শেষে ভীত হল। দুপুর থেকে টেলিফোনটা ডেড হয়ে আছে। সুতরাং যোগাযোগ, করাও সম্ভব নয়। কাছেপিঠে কোথাও ফোন করতে যেতে পারে না, পাছে শহীদ এসে তাকে না পেয়ে ফিরে যায়।’..
: বারান্দায় পায়চারি করতে লাগল কামাল অস্থির হয়ে। অবশেষে শহীদ এল রাত পৌনে বারটায়। সে তখন ক্লান্ত অবসন্ন। গাড়ি থেকে নেমেই কামালকে
বলল, ‘বড্ড খিদে পেয়েছে রে। ১৫৪
ভলিউম-৭
ব্যস্ত হয়ে পড়ল কামাল, ‘হোয়াই অফ কোর্স, কিন্তু এতক্ষণ ছিলি কোথায়?’
পরে শুনবি। এখন চল; খেয়ে নিই আগে।’–: কামাল ও শহীদ ভিতরে গিয়ে ঢুকল। আর ঠিক সেই সময় একটা বিরাট। ছায়ামূর্তি পাচিল ডিঙিয়ে কামালের বাড়ির বাগানের মধ্যে ঢুকল। পাঁচিলের পাশে ঝাঁকড়া কামিনী গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল ছায়ামূর্তিটা অনেকক্ষণ। বারান্দার, স্নান আলোয় কাউকে দেখা গেল না। দীর্ঘ পদক্ষেপে মুখোশপরা ছায়ামূর্তিটা নিঃশব্দে এসে গাড়ির কাছে দাঁড়াল। জানালা খোলা কিনা পরখ করে দেখল। ছায়ামূর্তিটা। জানালা বন্ধ । হ্যাঁন্ডেল ধরে টান দিয়ে দেখল, দরজাটাও বন্ধ। পকেট। থেকে চাবি বের করল সে। চাবিটা দরজার তালায় ঢুকিয়ে দিয়ে হ্যাঁণ্ডেল ধরে টেনে, দরজা খুলে ফেলল সে। পকেট থেকে কি যেন বের করে সীটটা তুলে তার নিচে রেখে সীটটা যথারীতি নামিয়ে দরজা বন্ধ করে চাবিটা খুলে আবার দীর্ঘ পদক্ষেপে . অন্ধকার বাগানের কোণে অদৃশ্য হয়ে গেল।
: মিনিট পনের পরে কামাল ও শহীদ বেরিয়ে এল বাসার ভিতর থেকে। ঘড়ির কাঁটা তখন বারটার ঘর পেরিয়ে গেছে। ‘ “ . . . . . … ‘; কিছুদূর এগোতেই কামাল বলল, “আমার ঘুম পাচ্ছে। শহীদ কোন জবাব দিল না। কয়েকবার হাই তুলল কামাল। খাওয়াটা বেশি হয়ে গেছে। ঘুমে দুটো
চোখ তার জড়িয়ে আসছে। সীটের কোণে হেলান দিয়ে ঢুলতে লাগল কামাল।
• আর আশ্চর্য শহীদেরও কেমন ঘুম পাচ্ছিল। তারও দুটো চোখ যেন আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যেতে চাইছে। গাড়িটা রাস্তার পাশে রেখে একটু ঘুমিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু এটা তো আর ঘুমের সময় নয়? একটা সিগারেট ধরালে হত। কিন্তু তার সমস্ত হাত-পা অবসাদগ্রস্ত হয়ে আসছে কেন?, হাত দুটো যেন একটু একটু কাঁপছে। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। অ্যাক্সিডেন্ট করবে নাকি সে। মনের সমস্ত শক্তি দিয়ে সে অবসাদ দূর করার চেষ্টা করল। কিন্তু না, হাত তবুও কাঁপছে। স্টিয়ারিং বাগ মানছে না। হঠাৎ তার চেতনার মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ খেলে গেল। তাই তো, এ সম্ভাবনার কথা তার আগেই ভাবা উচিত ছিল। . উহ, ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু না, আর সম্ভব নয়, তার পক্ষে গাড়ি চালানো । সমস্ত শক্তি দিয়ে সে স্টিয়ারিংটাকে কন্ট্রোল করে পথের পাশে গাড়িটা রাখল। পিছনের দিকে তাকাল একবার। যমদূত এসে গেছে! কিন্তু শহীদের দেহের সমস্ত
শক্তি নিঃশেষিত। ধীরে ধীরে সীটের উপর তুলে পড়ল সে। | কয়েক সেকেণ্ড পরে পিছনে একটা গাড়ি এসে থামল। গাড়ি থেকে নেমে এল সেই ছায়ামূর্তিটা। শহীদের গাড়ির পাশে এসে দাঁড়াল সে। সামনের দরজাটা খুলল । সে। তারপর খুলল পিছনেরটা। সামনের আসন থেকে শহীদের অচৈতন্য দেহটা অনায়াসে তুলে পিছনের সীটে নামিয়ে দিল। দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ড্রাইভারের কুয়াশা-২১
‘১৫৫
আসনে গিয়ে বসল। মূর্তির মুখে ফুটে উঠল ক্রুর হাসি!
রাত দুটোর দিকে ঘুম ভেঙে গেল গফুরের। খুব গরম পড়েছিল বলে সে রান্নাঘরের বারান্দায় শুয়ে ছিল । ফুরফুরে হাওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিল সঙ্গে সঙ্গেই। মশারীর মধ্যে মশা ঢুকেছে। কানের কাছে ভনভন করছে। হাত নেড়ে কানের কাছ থেকে মশা তাড়াবার চেষ্টা করল সে। হঠাৎ তার মনে হল দোতলা থেকে অস্পষ্ট একটা আওয়াজ আসছে। কার যেন পায়ের শব্দ। অত্যন্ত ক্ষীণ, অত্যন্ত সাবধানী । চোর টোর নয়ত? কান খাড়া করে রইল গফুর। সাহেব বাড়ি নেই। জেনে শুনেই হয়ত এসেছে। কিন্তু গফুর তো আছে। দাঁড়াও মজাটা দেখাচ্ছি, আপন মনে বলল সে। কিন্তু চোর কিনা সেটা আগে বুঝতে হবে তো। মশারীর মধ্যে উঠে বসল গফুর। শব্দটা থেমে গেছে। ৩. কিন্তু দোতলার বারান্দার বাতিটা নেভানো কেন? ওটা তো রাতে কখনোই নেভানো থাকে না। কে নেভাল ওটা? ভাবী আর আপা তো নিশ্চয়ই নয়। আব্বা তো সারারাতের মধ্যে একবারও বাইরে বেরোন না।
বালিশের তলায় হাতখানেক লম্বা লোহার একটা ডাণ্ডা নিয়ে শোবার অভ্যাস, গফুরের। কখনও দরকার হয়নি। সে আফসোস তার বহুদিনের। আজ কি সেই ডাটা ব্যবহারের সময় এসেছে? পদশব্দটা আবার শোনা যাচ্ছে। খট করে দরজা খোলারও যেন শব্দ হল একটা। আর দেরি করা যায় না। বালিশের তলা থেকে লোহার ডাণ্ডটা নিয়ে মশারীর বাইরে চলে এল গফুর। পা টিপে টিপে সিঁড়ির দিকে এগোল। নিঃশব্দে শ্বাসরোধ করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল। সিঁড়ির উপরেই একটা দরজা। সেটা হাট করে খোলা, অথচ ওটা খোলা থাকবার কথা নয়। বাঁ দিকের ঘরটায় থাকেন দাদামণি ও দিদিমণি। ডান দিকের প্রথম ঘরটায় আব্বা আর পরেরটায় লীনা আপা । শব্দটা সেদিক থেকেই আসছে। দরজা দিয়ে মুখ বাড়ল গফুর। বারান্দায় কেউ নেই। কিন্তু মৃদু আলো আসছে যেন কোথা থেকে। লীনা আপার রুমের ভিতর থেকেই আসছে যেন আলোটা। দরজাটা কি তবে। খোলা? তার বুকের ভিতরটা ধড়াস করে উঠল। দেয়ালের সাথে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল গফুর। হ্যাঁ, দরজাটা খোলাই। মুখ বাড়াল সে সন্তর্পণে, দরজা, দিয়ে । .,.আর স্তম্ভিত হয়ে গফুর কামরার নীলাভ ম্লান আলোয় দেখল, লীনা আপার মশারীর একটা দিক তোলা, আর বিরাট একটা মূর্তি লীনা আপার মুখের উপর, কাপড় চেপে ধরে আছে। লোকটা দাঁড়িয়ে আছে দরজার দিকে পিঠ করে। ‘‘ .’, গফুরের মাথায় আগুন ধরে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে সে সাবধানী পদক্ষেপে এগিয়ে গেল বিড়ালের মত নিঃশব্দে। লোকটার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়েছে সে।
ভলিউম-৭:
|–
•
• “।
| ১৫৬ ‘,
ডাণ্ডাটা তুলল গফুর। আর ঠিক সেই সময় লোকটা ফিরে দাঁড়াল এবং গফুরকে দেখেই মুহূর্তের মধ্যে মাথাটা সরিয়ে ফেলল। গফুর ততক্ষণে প্রচণ্ড শক্তিতে ডাণ্ডা চালনা করেছে। কিন্তু তাল সামলাতে না পেরে সে সামনের দিকে অনেকটা ঝুঁকে পড়ল আর সেই মুহূর্তেই লোকটা তার কানের উপর প্রচণ্ড একটা ঘুসি বসাল। মাথাটা ঘুরে গেল গফুরের। লোহার রডটা পড়ে গেল হাত থেকে। ৫ টা হয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করল আবার, কিন্তু পর মুহূর্তেই আর একটা ঘুসি এসে পড়ল তার নাক বরাবর। টলতে টলতে সে চিত হয়ে পড়ল’ মেঝের উপর। মাথাটা গিয়ে ধাক্কা খেল খাটের কোণায়। প্রচণ্ড বেদনায় সে চিৎকার করতে গেল। কিন্তু মুখ দিয়ে শব্দ বেরোল না। নাক দিয়ে তখন তার ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত বেরোচ্ছে।
অনেক কষ্টে গফুর একবার তাকাল। তার চারদিকের পৃথিবীটা তখন দুলছে। সেই লোকটা জ্বলন্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে। এখুনি যেন তাকে খুন করবে। সভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করল গফুর।
হঠাৎ তার মনে হল, কে যেন তার চুলের মুঠো ধরে টেনে তুলছে । পরের মুহূর্তে কানের পাশে আর একটা আঘাত এসে পড়। আবার মেঝের উপর ছিটকে পর্ভুল গফুর। সঙ্গে সঙ্গে চেতনা হারাল সে।
“
,
}
.
• +
| IL
*
L
সকালে খবর পেয়েই মি. সিম্পসন ছুটে এলেন। মহুয়া তখন কাঁদছিল। ইসলাম সাহেব শোকে বোবা হয়ে গেছেন। তাঁর দুচোখ বেয়ে দরদর করে অশ্রু ঝরছে। গফুরকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হল। শহীদও রাতে বাসায় ফেরেনি, শুনে আরও অবাক হলেন মি.সিম্পসন । প্রাথমিক তদন্ত করে এলেন গোলাম মওলা ।
লীনার রূমে টেবিলের উপর পাওয়া গেল একটা চিঠি। গোলাম মওলা খামটা খুলে পড়ে মি. সিম্পসনের হাতে দিলেন। তিনি পড়লেনঃ
“মিসেস খান, ‘‘আপনার স্বামী ও তার বন্ধু কামাল আমার হাতে বন্দী। মিস লীনাকেও নিয়ে গেলাম। আগেই আপনার স্বামীকে আমার পিছনে লাগতে নিষেধ করেছিলাম। আমার বারণ সে শোনেনি। সুতরাং তাকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। তার বন্ধুকেও। মিস লীনাকে আমার প্রয়োজন।” : : : : : : : : : :.. **, চিঠিটা পড়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলেন মি. সিম্পসন। বাকরোধ হয়ে গেছে তাঁর । তাহলে শেষ পর্যন্ত লীনাকেও সেই হৃৎপিণ্ডলেভী দৈত্যটার শিকারে পরিণত হতে হবে। শিউরে উঠলেন তিনি।..! ::.
গোলাম মওলা বলল, ‘স্যার, এ সেই ভয়ঙ্কর লোকটারই কীর্তি।, মি. সিম্পসন বললেন, “আস্তে। চিঠির কথা ওরা যেন না শোনে। ‘, সীনার রূম থেকে বেরিয়ে এলেন দু’জন। বারান্দায় একটা চেয়ারে স্তব্ধ হয়ে
কুয়াশা-২১
*.f;
বসে আছেন ইসলাম সাহেব। করুণ দুটো চোখ তুলে তিনি তাকালেন মি, সিম্পসনের দিকে। .
মি. সিম্পসন বললেন, ‘ভয়ের কিছু নেই, চাচাজী। আমরা যেভাবেই হোক, আপনার মেয়েকে ফিরিয়ে এনে দেব। আপনি ভাববেন না। ‘
| এতক্ষণে হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠলেন বৃদ্ধ ইসলাম সাহেব, আমার লীনা, আমার শহীদ! কোথায়, কোথায় ওরা? ওরা কি? আবেগের প্রাবল্যে তার কণ্ঠ রোধ হয়ে গেল। অনেক কষ্টে তাকে শান্ত করলেন মি. সিম্পসন। আর লোকজন
থাকায় তাঁকেই বললেন, মিসেস খান বোধহয় খুব কান্নাকাটি করছেন। তাকে শান্ত হতে বলুন। . চোখ মুছতে মুছতে মহুয়া বেরিয়ে এল। ভেজা গলায় বলল, ‘মি. সিম্পসন, আপনার গাড়িটা যদি দয়া করে রেখে যান।
মি. সিম্পসন একটু অবাক হলেন। কিন্তু ব্যাপারটা অনুধাবন করতে তাঁর দেরি হল না। তিনি বললেন, “নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই, কিন্তু ড্রাইভার?’ :
. ‘আমি নিজেই চালিয়ে যাব। ‘কিন্তু আপনার এই মানসিক অবস্থায়–?’ মৃদু আপত্তির সুরে বললেন তিনি। দৃঢ়গলায় জবাব দিল মহুয়া, ‘পারব আমি। আপনি দুশ্চিন্তা করবেন না।’
গোলাম মওলা সাহেব দু’জন কনস্টেবল পাহারায় রাখতে চাইলেন। মহুয়া রাজি হল না। সে বলল, দরকার নেই।’
: মি. সিম্পসন অফিসে গেলেন । মিসেস খান গাড়ি নিয়ে কার কাছে যাবে তা তিনি জানেন। এই রকম একটা ইচ্ছা তিনিও গোপনে পোষণ করছিলেন। কয়েকদিন ধরেই তিনি ভাবছিলেন, কুয়াশা যদি এই ব্যাপারটায় আগ্রহ দেখাত তাহলে অনেক আগেই হয়ত ঐ হৃৎপিণ্ডলোভী রাক্ষসটাকে খতম করতে পারত সে। কিন্তু কুয়াশা কেন যে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে, সেটাও তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না। তিনি কুয়াশাকে যতখানি চেনেন তাতে তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, এই ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলোয় কুয়াশা কখনও নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে না। কেন তবে তার এই অনীহা? এখন অবশ্য বোনের আহ্বানে তাকে সাড়া দিতেই হবে। তার অর্থ হল, ড. তোগলক নামে সেই নরপিশাচটা এবার আর কোনক্রমেই নিস্তার পাবে না। তবু মি. সিম্পসনের এখন একমাত্র প্রার্থনা, হৃৎপিণ্ডলোভী সেই পশুটা এই মুহূর্তেই ধরা পড়ুক আর না পড়ুক লীনার প্রাণটা যেন রক্ষা পায়। লীনাকে বাঁচানোটাই এখন সবচেয়ে বড় কথা। …
‘এগারটার দিকে একজন কনস্টেবল একটা ভিজিটিং কার্ড নিয়ে ঢুকল। কার্ডটা মি. সিম্পসনের দিকে এগিয়ে দিয়ে নীরবে দাঁড়াল সে। | মি. সিম্পসন কার্ডটা পড়লেনঃ
১৫৮
ভলিউম-৭।
ড. মনসুর আলী ডি.এস.পি.এইচ.ডি. ডিরেক্টর, হেকমত রিসার্চ ইন্সটিটিউট।
| তেজগাঁ, ঢাকা। … নামটা পড়ে প্রথমটায় চিনতে পারলেন না মি. সিম্পসন। কিন্তু একটু চিন্তা করতেই তার মনে পড়ল, কুয়াশা এসেছে। মনসুর আলী তো তারই নাম। অবাক হলেন না তিনি। যেন এইটাই আশা করছিলেন এতক্ষণ, অথচ তা নিজের কাছেও তিনি স্বীকার করেননি। কিন্তু ও নিজে সশরীরে ক্রিমিন্যাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের সদর দফতরে আসবে এতটা তিনি আশা করেননি। ভেবেছিলেন শহীদের বাসায় দেখা হতে পারে, ইতস্তত করতে লাগলেন তিনি। অনেকক্ষণ ধরে কার্ডটা হাতে নিয়ে চুপ করে বসে রইলেন। কনস্টেবলটি দাঁড়িয়েই আছে। সে নড়ে উঠল। মি, সিম্পসন মনের সকল দল দুর করে দিয়ে বললেন, নিয়ে এস ভদ্রলোককে। . একটু পরেই মধ্যবয়সী সৌম্যদর্শন অথচ ব্যক্তিত্বব্যঞ্জক চেহারার যে ভদ্রলোক ঢুকলেন তাঁকে দেখে চিনতে পারলেন না তিনি। নিখুঁত ছদ্মবেশে এসেছে কুয়াশা। চিনতে পারার সাধ্য নেই কারও। উঠে দাঁড়িয়ে মি. সিম্পসন হাত বাড়িয়ে দিলেন। আন্তরিক সম্বর্ধনা জানিয়ে বললেন, বসুন, ড. আলী। অনেকদিন পরে দেখা। তাহলে পোসাকী নামটাও আপনি মাঝে মাঝে ব্যবহার করেন? “ “ কুয়াশা বসল। সে হেসে বলল, “পিতৃপ্রদত্ত নাম যখন, ব্যবহার করতেই হয় মাঝে মাঝে।
.তাই বলে একেবারে বাঘের ঘরে এসে ঢুকেছেন। আপনার সাহস তো কম নয়? হাসতে হাসতে বললেন মি. সিম্পসন।
। জবাবে হাসল কুয়াশাও তার সাহস কতটা, অন্তত মি, সিম্পসনের তা জানা না থাকবার কথা নয়। একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, বুঝতেই পারছেন, প্রস্তুত হয়েই ঢুকেছি। তাছাড়া আমি ইদানীং কি ভাবছি, জানেন? ভাবছি, এবার আমি মেষশাবকের মত সৎ ও নিরীহ নাগরিক-জীবন বেছে নেব কিনা। শুধু ভরসা, পাচ্ছিনে আপনাদের পুলিশ বাহিনীর জন্যে। দুনিয়ার কোন প্রান্তে সামান্য গাঁটকাটা হলেও আমায় দুষবে। দু’বেলা বাড়ি বয়ে জ্বালাতন করবে। | কিন্তু আপনার বিরুদ্ধে মামলাও আছে। আপনার জীবিত বা মৃত মাথার দামও
তো লাখ টাকার সমান। | ‘ওতে কিছু এসে যায় না। আপনারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন কিন্তু
এখন পর্যন্ত কোন প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেননি। যেটুকু প্রমাণ ছিল তাও নষ্ট করে ফেলেছি। কুয়াশা সিগারেটে টান দিয়ে বলল। কিন্তু সর্বক্ষণ জ্বালাতন আমার সইবে না।’
কুয়াশা-২১
১৫৯
।
. সে আশঙ্কা আছে অবশ্য,’ স্বীকার করলেন মি. সিম্পসন, তবে এ ব্যাপারে আমি কিছু করতে পারি কি না দেখব। আপনার সোশ্যাল রিহ্যাবিলিটেশন নিশ্চয়ই গভর্নমেন্ট অপছন্দ করবে না।’
এ সম্পর্কে পরে বিবেচনা করা যাবে। এখন আসল ব্যাপারটা সম্পর্কে বলুন। লীনা মাস্ট বি সেল্ড, বাট আই শ্যাল হ্যাভ টু ফাইট উইথ দ্য টাইম। তবে একথা ঠিক যে শয়তানটা লীনার কোন ক্ষতি করবার সুযোগ পাবে না। দরকার হলে
আমি দুনিয়াটা:ওলট-পালট করে ফেলব।’
মি, সিম্পসন ধীরে ধীরে গত দশ মাসের ঘটনাবলী বিবৃত করলেন। তাঁদের তদন্তের ধারা সম্পর্কে আলোকপাত করলেন। তাদের সিদ্ধান্তের কথা বললেন। বু শাকে জানালেন যে, তাদের তে ড. তোগশকই এই নারকীয় হত্যাগুলো, করে চলে। অথচ তার টিকিটারও সন্ধান পাওয়া যাঙ্গে না। শহীদ অবশ্য অন্য ধারণা পোষণ করত। কিন্তু তার ধারণাটা প্রকাশ করেনি। * কুয়াশা আরও দু-একটা কথা জিজ্ঞাসা করে বিদায় নিল। বাসায় পৌঁছে ফোন করল মহুয়াকে। তাকে জানাল, ‘তুই ভয় পাসনে। আমি মোটামুটি এগিয়ে গেছি। ‘শহীদ, লীনা বা কামাল কারও কোন ক্ষতি হবে না, বিশ্বাস রাখিস তোর এই
লক্ষ্মীছাড়া দাদাটার উপরে। | জবাবে মহুয়া শুধু কাঁদল।
ফোন করে দিয়ে ডি কস্টাকে ডাকল কুয়াশা। ডি’কস্টা এসে স্যালুট দিয়ে দাঁড়াল।
কুয়াশা বলল, সেই যে মীরপুর রোডে আপনি এক খুনীকে দেখেছিলেন তাকে খুঁজে বের করতে পেরেছেন নিশ্চয়ই, মি. ডি. কস্টা। আপনাকে সাতাশ দিন সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু একমাস সাত দিন চলে গেছে।
অনেকক্ষণ মাথা চুলকে ডি. কস্টা বলল, গাড়িগুলো নিয়েই হয়েছে যটো মুশকিল। যে গাড়িটাই ডেখি মনে হয় এইটাই যেন সেই রাটে ডেখেছিলাম। .
নম্বরগুলো নিশ্চয়ই সযত্নে টুকে রেখেছেন?
‘নিশ্চয়ই, বস্। আমার পকেটেই আছে।’ বলতে বলতে দুটো ছোট নোট-বই বের করে কুয়াশার দিকে এগিয়ে দিল।
কুয়াশা একটা নোট-বই খুলে কয়েকটা পাতা উল্টে দেখল। তাতে অসংখ্য গাড়ির নম্বর টোকা। বোধহয় কোন গাড়িই বাদ যায়নি। কার, ট্যাক্সি, জীপ, স্কুটার । মাইক্রোবাস সবকিছুরই নম্বর টোকা আছে ডি. ‘কস্টার নোট-বইতে। বোধয় বাস . ও ট্রাক বাদ পড়েছে। দুটো নোটবই-এর একই দশা। আর, সব পোর গাড়ির
নম্বরই আছে।
“অনেক কাজ করে ফেলেছেন তো! কুয়াশা বই দুটো ফিরিয়ে দিয়ে বলল।
ভলিউম-৭
.
.।
.
১৬০
‘কোন গাড়িই বাড ডিইনি, স্যার। আমাদের গাড়ি
টুকেছি। গর্বে স্ফীত হল ডি. ক।
পরশ পাথর খুঁজে বেড়াচ্ছে সে।
‘সেডিন টো নিউ মার্কেটে মোড়ে এক লম্বা চুলওয়ালা হোকরা আমাকে মাটেই এসেছিল।
| ‘কেন? কেন?”
‘ওর গাড়ির নম্বরটা টুকছিলাম। উঁটি খিঁচিয়ে, ঘুসি বাগিয়ে হোকরা গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বলল, এই শা, কি করছিস? আমি বললুম, গাড়ির নম্বর টুকছি। হোকরা নাকের কাছে ঘুসি বাগিয়ে বলল, কেন টুকছিস? আমি টো বুডরিমান কম নই। বলুন, এটা আমার হবি, স্যার। এই দেখুন না, দুটো বাটা ভরে ফেলেছি গাড়ির নম্বর টুকে। হোক হ্যাট নামিয়ে হাঁ করে আমার মুখের ডিকে টাকিয়ে রইল। টারপর কি হাসি। ঠা ঠা ঠা ঠা করে হাসতে হাসতে লাফাতে
লাগল। আর আমি এক ফাঁকে কেটে পড়লুম।
কুয়াশাও হাঁ হয়েই শুনছিল ডি, কার কীর্তি-কাহিনী। সে বলল, বেশ, এক কাজ করুন। আপনি মান্নান আর কলিকে ডেকে দিন। আর বাইরে গিয়ে দেখুন, বাড়ির চারদিক থেকে কেউ উঁকি-ঝুঁকি মারছে কিনা।
‘এখুনি যাচ্ছি, স্যার। মিলিটারি স্যালুট ঠুকে বেরিয়ে গেল ডি কস্টা। . একটু পরেই মান্নান ও কলিম এসে হাজির হল। নিচু গলায় তাদেরকে কয়েকটা নির্দেশ দিল কুয়াশা। ওরা দুজন নীরবে শুনে বেরিয়ে যালি। কুয়াশা বলল, খুব সাবধান, লোকটা সাপের চাইতে খল। আর শোন, অন্ত্র ছাড়া যাবি না কিন্তু।
* মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল দুজন। দরজা পেরিয়ে গিয়ে কলিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ‘তবু যা হোক এতদিনে একটা কাজ পাওয়া গেল।
*
।
আমি অমর হতে চলেছি আমি লাভ করতে চলেছি অনন্ত জীবন। তিরিশ বছর। ধরে যে সাধনা আমি করেছি, আজ রাতে, মাত্র এক ঘন্টা পরে তাতে আমি সিদ্ধি লাভ করব। দুনিয়ার কোন মানুষের সাধ্য নেই আমার সাধনা ব্যর্থ করে দেবে। হা। হাঃ হাঃ হাঃ। উন্মাদের মত আকাশ ফাটিয়ে হাসতে লাগল মুখোশ-পরা এক বিশাল মূর্তি। কালো মুখোশে, আলখেল্লায় আর ভারি কণ্ঠস্বরে তাকে রহস্যময় লাগছিল। ১১-কুয়াশা-২১
১৬১
•••
:
:-
1.
মাঝারি আকারের একটা রূম। মাঝ খানে একটা টেবিল । তার উপরে শায়িত আছে লীনা। তারপর হাত-পা আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। চোখ দুটোও বেঁধে দেওয়া হয়েছে । মুখের মধ্যে কাপড় খুঁজে দেওয়া।
| কয়েক হাত দূরে ঘরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত কাঁচের পার্টিশন। পার্টিশনের ওপারে দুটো চেয়ারে বসে আছে শহীদ ও কামাল। তাদের দু’জনেরও হাত-পা আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। এতটুকু নড়া-চড়া করার ক্ষমতা নেই। মুখটাও বাঁধা। কথা বলা অসম্ভব। বিস্ফারিত দৃষ্টিতে ওরা অসহায়ের মত সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
মুখোশ পরা মূর্তিটা কথা বলছিল পাশে একটা ছোট টেবিলের উপর রাখা মাইক্রোফোনে। অদৃশ্য একটা লাউডস্পীকারে শোনা যাচ্ছিল তার ধাতব কণ্ঠস্বর। মাইক্রাফোনটার পাশেই উজ্জ্বল আলোয় চিকচিক করছে সার্জারীর কতগুলো যন্ত্রপাতি। গোটা-দুই কাঁচের পাত্র। একটা রিভলভার। একটা হুইস্কির বোতল। মুখোশধারী যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার ঠিক পিছনেই রূমটার একমাত্র দরজা এবং সেটা বন্ধ। | মুখোশধারী বোতল খুলে নির্জলা হুইস্কি পান করল। বোতলটা রেখে দিয়ে কামাল ও শহীদের দিকে তাকাল।
.. তারপর আবার শুরু করল, “তোমরা তো মারাই যাবে, যদিও আমার সেটা ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু আমার পথে বাধা সৃষ্টি করার অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে তোমাদেরকে। যা হোক, তোমাদের হয়ত কৌতূহল থাকবে, কেন আমি একের পর এক মানুষ হত্যা করে চলেছি গত এক বছর ধরে। কেনইবা তাদের হৃৎপিণ্ড আমি ভক্ষণ করছি। | ‘সেই রহস্যটাই বলছিঃ পৃথিবীতে মানুষের কামনা অনেক। ব্যক্তি-জীবনের তুচ্ছ কামনাগুলো ছাড়াও মানুষ চাঁদে যাবার স্বপ্ন দেখেছিল, গ্রহান্তরে যাবার স্বপ্ন দেখে। এই ইচ্ছাগুলো ইতিহাসের গোড়া থেকে মানুষ তার অন্তরে লালন পালন করছে। তেমনি একটা প্রাচীন বাসনা হল, অমর হওয়ার বাসনা। আদি মানবের কাল থেকেই মানুষ তার অন্তরে অন্তরে এই বাসনা, লালন পালন করে এসেছে। তার জন্যে অমৃ-ের সন্ধান করেছে, যদিও বাসবের অমৃত আসবে কোনদিনই মানুষ এতটুকু অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সমুদ্র মন্থন করে যে অমৃত পাওয়া গিয়েছিল তার জন্যে লড়াই করেছে সুরাসুর। অসুরেরা জিততে পারেনি। দেবতারা অমৃত পান করে অমর হয়েছে। কিন্তু এ-তো মিথোলজীর কথা। এই মরলোকের মানুষের অমর হবার বাসনা কোনদিনই পূর্ণ হয়নি। অথচ ইতিহাসের সর্বযুগে সকল দেশের মানুষই অমর হবার চেষ্টা করেছে কম-বেশি । প্রাচীন মানুষ নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। ইতিহাসে তার প্রমাণ আছে। অমরত্বের সাধনা ১৬২
ভলিউম-৭
করতে গিয়ে উদ্ভাবিত হয়েছে বিজ্ঞান, আবার তন্ত্রমন্ত্রের উদ্ভবও ঘটেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত মানুষের সেই ইচ্ছে অপূর্ণই রয়ে গেছে। শত কোটি বছরের মানুষের সাধনা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমি–আই শ্যাল বি দ্য ওনলি ইমরট্যাল ম্যান। আমি, একমাত্র আমিই অমর হব-অনন্তকাল ধরে আমি বেঁচে থাকব । পৃথিবীর সমত মানুষ হয়ত পারমাণবিক বিস্ফোরণে মারা যাবে। সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু, নিজের বুকে টোকা দিল মুখোশধারী, আমি বেঁচে থাকব।’
লাউডস্পীকারে শোনা গেল তার তীক্ষ্ণ পৈশাচিক ধাতব কণ্ঠস্বর । শিউরে, উঠল কামাল ও শহীদ। নড়ে উঠল নার’ শায়িত দেহটা।
• ‘ত্রিশ বছর ধরে আমি এই সাধনা করে চলেছি । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছি। আফ্রিকার দুর্ভেদ্য, অরণ্যের বর্বর মানুষের সাথে মিশেছি, ব্রাজিলের রেড ইণ্ডিয়ানদের সাথে বসবাস করেছি, অস্ট্রেলিয়ার অরণ্যবাসীদের সাথে থেকেছি। হিমশীতল মেরু অঞ্চলের এস্কিমোদের সাথে থেকেছি। প্রাচীন পুথি-পত্র পাঠ করেছি। কোথাও কোন কিনারা পাইনি। অবশেষে পথের সন্ধান পেলাম, পুরানো, এক প্রস্তর ফলকে। মিসরের এক পিরামিডে । শুধু তাই নয়, সুদূর অতীতে অমরত্বের যে সাধন হয়েছে তার ইতিহাসও পাওয়া গেল সেই শিলালিপিতে। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে গ্রীক চিকিৎসক থেলিসণ্ডিার জানতে পেরেছিলেন এর লাভের গোপন মন্ত্র। তারও অনেক আগে ভারতের তন্ত্রবিদ্যার আচার্য ইন্দ্রকেতু জানতে পেরেছিলেন। তিনি ভারতীয় ইন্দ্রজাল বিদ্যার আদি পিতা কিন্তু ইন্দ্রকেতু মন্ত্র জানলে কি হবে, তিনি ছিলেন ভীরু। তাই তার জ্ঞান গিয়েছিল বিফলে। পারস্যের গণিত-শাস্ত্রবিদ খারাজও জানতেন অমরত্ব লাভের গোপন রহস্য। সে
সম্রাট দরায়ুসের আমলের অনেক আগের কথা। জানতেন; সরের পুরোহিত কিয়া: কিন্তু কেউ সে বিদ্যা কাজে লাগাতে পারেননি! অথচ আশ্চর্য, প্রত্যেকেই অমরত্বের জন্যে একই বিধান দিয়ে গেছেন: “আটাশ দিন পরপর তেরটা মানুষের হৃৎপিণ্ড
চা খেতে হবে, এই হচ্ছে তাদের পবিত্র উপদেশ। ‘ | শিউরে উঠল তার বন্দী শ্রোতারা। সেটা চোখ এড়াল না মুখশধারীর। নিষ্ঠর হাসি হেসে সে বলল, ভয় লাগছে, কিন্তু উপায় কি? বারটা হৎপিণ্ড আমি এর আগে খেয়েছি। আর এটা হলেই আমার সাধনা সিদ্ধ হবে। আমি অমর হব…আমি অমর হব..হাঃ হাঃ হাঃ হা। *. আবার কেঁপে উঠল লীনার দেহটা। কামালও কেঁপে উঠল। শহীদ একবার
কামালের দিকে মুখটা ফেরাল। … আবার শোনা গেল মুখোশধারীর কণ্ঠস্বর। তারপর তোমাদের দুজনকে শেষ করব। কিন্তু সেকথা যাক, যা বলছিলাম, শুধু মানুষের হৃৎপিণ্ড হলেই চলবে না । আমার দরকার নীলোগ •ৎপিণ্ড। সুতরাং আমি যে-কোন লোকের হৃৎপিণ্ড তে কুয়াশা-২১
১৬৩
খেতে পারি না। এ ব্যাপারেও আমার সুবিধা হয়েছিল কারণ আমি নিজে হট স্পেশালিস্ট.কলে আমার অতীত রোগীদের মধ্যে থেকে শিকার বেছে নিতে পেরেছি সহজেই ইংপিও ভক্ষণের জন্যে বেছে নিয়েছি অমাবস্যার রাত। যদিও যে কোন আটাশ দিন পরে হৃৎপিণ্ড ভক্ষণ করলেই চলে, অমবস্যার রাতটা বেছে নিয়েছিলাম। শুধু রহস্যটাকে ঘোরাল করার জন্যে, আর এটা ভৌতিক ব্যাপার বলে এদেশের কুসংস্কারা মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার জন্যে। তবে যার ইংপি খেতে হবে তার বয়েসের বাছবিচারের প্রশ্নটা অবশ্যই আছে। তিরিশ বহরের বেশি বয়স হলে তার পিও কোন কাজে আসবে না। অথচ হৃদরোগীদের অধিকাংশেরই বয়স তিরিশের বেশি। খুব কম হলেও পঁচিশ বছরের নিচে বড় একটা হৃদরোগ দেখা দেয় না। সুত. আমি পঁচিশ’ থেকে তিরিশ বছর বয়সের রোগীদের মধ্যে আমার শিকার বেছে নিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে সন্দেহ করেছিল বলে ড. মিন্নতকে বিদায় নিতে হল। শহীদ, তুমি সন্দেহ করেছিলে বলে, কুদসীর চেম্বারের ফাইলপত্র গায়েব করতে হয়েছিল।
• ঘড়ি দেখল মুখোশধারী। আর সময় নেই। রাত একটা বেজে গেছে, এবারে, আমি আমার কাজ শুরু করব।’ চকচকে সার্জিক্যাল নাইফটা হাতে নিল সে। ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে এল লীনার দিকে। মুখের ভিতরে খুঁজে দেওয়া কাপড়টা বের করে ফেলল। চোখের উপর থেকেও কাপড়টা সরিয়ে ফেলে। পরের মুহূর্তেই একটা তীব্র চিৎকার শোনা গেল। আতঙ্কিত কামাল শহীদের দিকে তাকাল। দেন শহীদের দু’চোখ বেয়ে দরদর করে পানি ঝরছে। মুখের উপরের কাপড়টা ভিজে গেছে।
মুখোশধারী বোধহয় শীনাকে ধমক দিল। আর একটা তীব্দ চিৎকার কানে এল ওদের। মুখোশধারী সার্জিক্যাল ছুরিটা দিয়ে লীনার গলায় একটা খোঁচা দিল। শীনার দেহটা একবার কেঁপে উঠে স্থির হয়ে গেল। মুখোশধারী অনেকক্ষণ চেয়ে রইল শীনার মুখের দিকে। কি যেন বলল বলে মনে হল কামালের। শীনার হাতের আর পায়ের বাধন খুলে দিল মুখোশধারী। কিন্তু লীনা আর নড়ল না। ওর বুকের উপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে দিল মুখোশধারী। রাউজের নিচের দিকের বোতামটা খুলে ফেলল।
: ডানহাতে ধরল ধারাল ছুরিটা। চকচক করে উঠল তুরিটা আলোয়। কামালের বুকের ভিতরটা তখন প্রবল ভাবে আলোড়িত হয়ে। একবার চেষ্টা করল নড়াচড়া . করার, কিন্তু বৃথা চেষ্টা। না, আর কোন আশাই নেই।
শহীদের দেহটাও নড়ে উঠল একবার। | ঠিক সেই মুহূর্তে মুখোশধারীর পিছনের দরজাটা খুলে গেল। আর কা.. সবিশয়ে দেখল, দরজার মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে আছে কুয়াশা। ‘, ..
ভলিউম-৭
১৬৪ :
. অর্থহীন একটা চিৎকার ভেসে এল লাউডস্পীকারে। মুখোশধারী সঙ্গে সঙ্গে পিছনে ফিরে তাকাল। এর পরমুহূর্তেই ছুরিটা ছুঁড়ে দিল কুয়াশার দিকে। কুয়াশা সরে যেতেই ছুরিটা দরজা দিয়ে বাইরের অন্ধকারে ছিটকে পড়ল। পরমুহূর্তেই মুখোশধারী রিভলভার তুলে নিতে গেল কিন্তু কুয়াশা ইতিমধ্যেই রিভলভার বের করেছে। সেটা গর্জে উঠল। নির্ভুল তাক কুয়াশার। গুলিটা গিয়ে লেগেছে টেবিলে রাখা মুখোশধারীর রিভলভারের উপর। রিভলভারটা দড়াম করে কাঁচের পাটিশানের উপরে পড়ল। পর পর দুটো গুলি করল কুয়াশা পার্টিশানের উপর। খানখান হয়ে ভেঙে পড়ল পার্টিশানের কাঁচ প্রায় তিন-চার হাত জুড়ে। . কুয়াশার কণ্ঠস্বর শোনা গেল, হাত তুলে দাঁড়াও।
‘নো। ইউ বেটার কিল মি ইফ ইউ লাইক।’ বলেই হাত’ ঝাঁকুনি দিল মুখোশধারী। কুয়াশা এর জন্যে প্রস্তুতই ছিল। সে মাথা নোয়াল। তার ঠিক মাথার উপর দিয়ে গা করে চলে গেল একটা প্ৰোই নাই।
• কুয়াশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, নাউ মাই বয়, আর কি অস্ত্র আছে তোমার কাছে?”
কেঁপে উঠল মুখোশধারী ও রিভলভারটা বাগিয়ে ধরে রইল কুয়াশা। হাত
।
মুখোশধারী ধীরে ধীরে হাত তুলল উপরে।, বাইরে পদশব্দ শোনা গেল। মান্নান ও কাপ এসে পড়েছে। ওরা ঢুকল দু’জন। :– কুয়াশার কণ্ঠস্বর শোনা গেল, কুক, তোরা ওদের বাঁধন খুলে দে। বাঁ
হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে শহীদ ও কামালকে দেখিয়ে দিল কুয়াশা। কাঁচের ভাঙা পার্টিশানের ভিতর দিয়ে সাবধানে এসে দাঁড়াল কলিম ও মান্নান শহীদের কাছে। মিনিট দুয়েক পরে দুন মুক্ত হতেই শহীদ পার্টিশান পার হয়ে লীনার কাছে এসে দাঁড়াল। লীনা তখনও স্থির হয়ে পড়ে আছে। আরে আস্তে ঝাঁকুনি দিল শহীদ শীনার দেহটায়। কুয়াশা বলল, ওকে বোধহয় হিরোটাইজ করেছে। অন্তত ঘন্টাখানেক লাগবে ফিট হাড়াতে।। ‘ কুয়াশার রিভলভারটা মুখোশধারীর দিকে বাগানো থাকলেও তার দৃষ্টিটা ঘরের চারদিকে ঘুরপাক খালি। হঠাৎ সে দেখতে পেল, মুখোশধারী মেঝের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল। চমকে উঠল কুয়াশা। তারপর নিচু হয়ে দেখল কিছুক্ষণ।
শহীদ বল, ব্যাপার কি, অমর লোকটা মরে গেল না কি?
কুয়াশা বলল, হ্যাঁ, ঠোন ডেড। বোহয় শেষ মুহূর্তের জন্যে প্রস্তুত ছিলেন ড. কুদসী।’
।
।
•াশা-১১
১৬৫
উকুদসী?’ বিস্ময়ে ভর্তনাদ করে উঠল কামাল।
‘হ্যাঁ, ড. কুদসী। ডতোগলক নয়। তিনি এই বাড়িতেই বন্দী ছিলেন। এখন নিচে আমার গাড়িতে বসে আছেন।
কামাল এগিয়ে এল মঝেতে লুটিয়ে পড়ে থাকা মুখোশধারীর কাছে। মাথা নুইয়ে মুখোশটা একটানে খুলে ফেলল কামাল। অপলক দৃষ্টিতে সে চেয়ে রইল লোকর মুখের দিকে। ড. কুদসীই বটে। কোন সন্দেহ নেই। * কামাল মুখ তুলে বলল, ‘কিন্তু মারা গেল কিভাবে?
* কুয়াশা বলল, দাঁতের কোন ক্যাভিটিতে বোধহয় মারাত্মক কোন বিষ, সম্ভবত পটাশিয়াম সায়ানাইডের ক্যাপসুল রেখে দিয়েছিল। জুরুরি মুহূর্তের জন্যে। সেটা জিভ দিয়ে বের করে ভেঙে ফেলেছে সে।
অমর হবার বাসনা তাহলে অপূর্ণ হয়ে গেল। শহীদ বলল, ‘প্রকৃতির নিয়ম কুখনও খুন করা যায় না
Leave a Reply