২০. নকল কুয়াশা [ওসিআর ভার্সন – প্রুফ সংশোধন করা হয়নি]
কুয়াশা ২০
প্রথম প্রকাশঃ অক্টোবর, ১৯৬৯
এক. এ ঘটনা ঘটেছিল কুয়াশার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাস দুয়েক পরে ।, জরুরী কাজে করাচী গিয়েছিল দিন-দশেক আগে। আজ সে ফিরছে।
• কাস্টমসের হাঙ্গামা কাটিয়ে ঢাকার একটা সংবাদপত্র নিল কুয়াশা। খবরটা ছি। প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম কলামে। ছত্রিশ পয়েন্ট বোল্ডে হেডিং ও কুয়াশার কুকীর্তি। চোখটা গিয়ে পড়ল সেখানেই। দৃষ্টিটা থমকে গেল। কপালটা কোঁচকাল সে। একটু অবাক হয়েই পড়ল খবরটা।
. চট্টগ্রাম ডেটলাইনে নিজস্ব সংবাদদাতার পাঠানো খবর। দীর্ঘ এক কলাম সংবাদের সারাংশ হলঃ গতকাল ৪ এপ্রিল রাত আটটা নাগাদ ফৌজদারহাটের কাছে একটি জীপের ভিতরে গুলি চালিয়ে কুখ্যাত দস্যু কুয়াশা জানে আলম চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। চৌধুরী ছিলেন পি. আই, এ.-র সাবেক পাইলট। জীপটির মালিক চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব বেদার বখত এম. এন. এ., টি. কে.। তিনি নিজেই জীপটি চালাচ্ছিলেন। পাশের আসনে ছিলেন জনাব চৌধুরী। : পথে লম্বা-চওড়া এক ভদ্রলোক তাদেরকে গাড়ি থামাতে ইশারা করে। গাড়িটা থামতেই লোকটা এগিয়ে গিয়ে জনাব চৌধুরীর দিকে পরপর তিনবার গুলি, করে। একটা গুলি তার বুকে একটা গলায় ও একটা মাথায় লাগে। তিনি সঙ্গে, সঙ্গেই মারা যান। জনাব বখতের গায়ে গুলি লাগেনি। তিনি জানান, আততায়ী যাবার সময়, কুয়াশা এইভাবেই তার কর্তব্য পালন করে, এই কথাগুলো বলে চলে যায়। স্তম্ভি আতঙ্কিত জনাব বখত কিছুক্ষণ পরে মোটর সাইকেল স্টার্ট দেবার শব্দ শুনতে পান। পরে তিনি লাশ নিয়ে থানায় চলে যান। . নিহত জনাব চৌধুরীর পকেটে একটি চিঠি পাওয়া গেছে। তাতে পত্ৰ-প্রেরক হিসেবে কুয়াশার নাম আছে। চিঠিতে জনাব চৌধুরীর কাছে দশলাখ টাকা দাবি করা হয়েছে এবং ৩০ মার্চের মধ্যে টাকাটা না পেলে তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
, পুলিস ঘটনা সম্পর্কে জোর তদন্ত চালাচ্ছে। সি. আই. ডি.-র সুদক্ষ অফিসার | সিম্পসনের উপর এই হত্যাকারে তদন্তের ভার দেওয়া হতে পারে বলে জানা
ভলিউম-৭
গেছে। অন্য একটা তদন্তকার্য উপলক্ষে তিনি চট্টগ্রাম এসেছেন।
: আদ্যোপান্ত খবরটা পড়ে হাসি পেল কুয়াশার মজা মন্দ নয়। হত্যাকারী তার কুখ্যাতিটুকু নিজের স্বার্থ সিদ্ধির কাজে চমৎকার ব্যবহার করেছে। তার ঘাড়ে সমস্ত দায়িত্ব চাপিয়ে পুলিসের সন্দেহ থেকে মুক্ত হবার অত্যন্ত সহজ পথ বের করেছে। এমন কি তার নাম করে একটা চিঠিও হাঁকিয়েছে। লোকটার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। সাহসেরও। কিন্তু, কে এই বুদ্ধিমান বীরপুরুষ? এই নতুন কুয়াশার অভ্যুদয় ঘটল কোথা থেকে? ‘হতভাগ্য জানে আলম চৌধুরীই বা কে? পি, আই. এ.-র পাইলট ছিলেন শুধু এইটুকুই বলা হয়েছে। তার সামাজিক অবস্থানের কোন উল্লেখ নেই। বেদার বখত এম. এন. এ., টি. কে.-র নামটা তার পরিচিত। সাম্প্রতিক খবরের কাগজে বহুল উল্লিখিত নাম। প্রায়ই বিবৃতি হাঁকিয়ে থাকেন।
. উন্নয়ন-দশকে যাদের অভাবনীয় উন্নতি ঘটেছে তিনি সেই মুষ্টিমেয় ভাগ্যবানদের একজন। ভদ্রলোক আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। জনশ্রুতি, ফৌজদারহাটে না কোথায় কতগুলো গরিব চাষীদের উৎখাত করে তাদের জমি জমা জবর দখল করে প্রায় চল্লিশ একর জমিতে পোলট্রি ফার্ম করেছেন তিনি। সম্ভবত সেটাই তাঁর তুমঘায়ে খিদমত খেতাব লাভের পবিত্র কারণ। ‘: সন্দেহ নেই, তার সম্পর্কে হত্যাকারীর এতটুকু ধারণা নেই। শুধু কুখ্যাতিটুকুই তার জানা আছে। তার গতিবিধির খোঁজও লোকটা রাখে না। তবে কাজটা আদপে সে ভাল করেনি। তার নামের আড়ালে নরহত্যা করে সে যে অপরাধ করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত যে কি ভয়াবহ তা হয়ত সে কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। সে জানে না কুয়াশার ক্রোধ কি ভয়ঙ্কর। সে হয়ত বুঝতে পারেনি। পুলিসকে ভুল পথে পরিচালনা করে আত্মপ্রসাদ লাভ করতে পারলেও কুয়াশার রোষানল থেকে সে নিষ্কৃতি পাবে না। আর কুয়াশা তাকে ক্ষমা করবে না। তার সন্ধান পেতে কতটুকু সময়ই বা লাগবে কুয়াশার! তারপর উদ্যত হবে কুয়াশার অশনি। নিয়তির মত অমোঘ ও নির্মম । ভস্ম হয়ে যাবে সে। । গাড়িতে বসেই কর্মপন্থা স্থির করে ফেলল কুয়াশা। এই বেদার বখত আর জানে আলম চৌধুরীর খোঁজ নিতে হবে। তার জন্যে তার হাতের কাজ আপাতত স্থগিত রেখে চট্টগ্রাম যেতে হবে। আজকেই যাবে সে, চট্টগ্রাম মেলে।
পোর্টিকোতে গাড়ি রেখে দরজা খুলে ড্রইংরূমে ঢুকল কুয়াশা । ডাক দিল, ‘মি ডি. কস্টা।
• মি. স্যানন ডি. কস্টা তখন কলিমের জন্য একটা গ্লাসে মেপে তিন ফোঁটা হুইস্কি ঢালছিল। আর বিড়বিড় করে কি বকছিল । দোষটা অবশ্যই কলিমের ।।
সকাল বেলায় মেজাজ সাধারণত ভালই থাকে মি. স্যানন ডি কস্টার। নাস্তার টেবিলে গল্প-গুজব হয়। কস্টা সাহেব কলিম ও মান্নানের কাছে তার জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে। আজকের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল আলাদা। ইংরেজি কুয়াশা-২০,
পুলিসকে ভুল হয়ে না কুয়াশা কি ভয়াবহ মর আড়ালে
উর্দু-হিন্দি-বাংলা মেশানো এক অপরূপ ভাষায় সে কি করে মদের বোতলের কর্ক খুলতে হয় তাই বোঝাচ্ছিল। . কিন্তু মেজাজ খিঁচড়ে গিয়েছিল কলিমের। কারণ ছিল দুটো। একঃ স্যানন ডি. কস্টা এই সাত-সকালে নিজেই দুটো বোতল সাবাড় করলেও ওর ভাগ্যে তলানিটুকুও জোটেনি। দুইঃ সকালেই পকেটে হাত দিয়ে দেখে পাঁচটা টাকার একটা নোট খোয়া গেছে। কাজটা যে কন্টা করেছে তা সে জানে। তাই ডি কস্টার বক্তৃতার ফাঁকে কলিম একটা বেফাঁস মন্তব্য করে বসল।’
মি. স্যানন ডি কস্টা কুয়াশার সর্বশেষ আবিষ্কারলেটেস্ট ফাইণ্ড। পকেট মারার বিদ্যা রপ্ত করতে ব্যর্থ হয়ে সে সম্প্রতি সিঁদকাটিতে শিক্ষানবিশী করছিল।
• একদা নওয়াবপুর রোডের বন্ধু মিঞার দলের লোক ছিল সে। সিঁদকাটিতেও পারদর্শিতা অর্জন করতে না পারায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়। পরে সে নিজেই দল গড়ে তোলার চেষ্টা করে। দুটো ছেলেকে তালিম দিতে থাকে। সদলবলে একরাতে হানা দেয় কুয়াশার বাড়িতেই। প্রাঙ্গণে ঢুকেই ধরা পড়ে। তারপর থেকে তিনজনই কুয়াশার পরিবারের সদস্য হয়ে গেছে। ছেলে দুটো অবশ্য এখন আছে এতিমখানায়। স্যানন ডি কস্টা নাকে খত দিয়েছে, আর কোনদিন সে চুরি করবে না। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাস ও সঙ্গদোষের ফলে । পরদ্রব্যকে এখনও সে লোষ্ট্রবৎ জ্ঞান করতে শেখেনি। সুযোগ পেলেই এটা সেটা হাতড়াবে। পকেট মারবে। মান্নান ও কলিম বিরক্ত হয়। কুয়াশা হেসে বলে, ‘ও : ঠিক হয়ে যাবে। তবে দেখিস; বাইরে যেন কোথাও কিছু না করে বসে।
• সেদিকেও লক্ষ্য রাখে মান্নান ও কলিম। রাতে ডি কস্টাকে তার রূমে তালাচাবি বন্ধ করে রাখে। তখন আবার তাকে গানে পেয়ে বসে এবং সেই সঙ্গীত চর্চায় শান্তিপ্রিয় পড়শীদের জিঘাংসাবৃত্তিকে জাগিয়ে তোেলার আশঙ্কা থাকে বলে কয়েকটা বোতল দিয়ে ঠাণ্ডা রাখতে হয় ডি. কস্টাকে। বোতলগুলো শেষ হতেই সে নেশায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে। মদের বোতল অবশ্য এখন সে নিজেই বের করে নেয় সেলার থেকে। প্রভুর (যীশু নয় কুয়াশা) বিবেক ও স্বাস্থ্য রক্ষার প্রতি তার যে একটা বিরাট কর্তব্য আছে সেটা আবিষ্কার করার পর থেকেই সেলারের চাবিটা সে হাতিয়ে নিয়েছে।
| বয়স পঁয়ত্রিশের মত। লম্বা। হাড্ডিসার। চোয়ালভাঙা মুখটায় গোঁফ-দাড়ির চিহ্নও নেই, আছে শুধু পাউডারের উদার ব্যবহার। কদম-ছাঁট চুলে তেলের পরিমাণও অকৃপণ। রংটা আবলুস কাঠের মত কালো। সর্বদাই প্যান্ট-শার্ট-টাই পরে থাকে। রাজার জাত বলে.নেটিভদের মত লুঙ্গি সে পরতে পারে না। কুয়াশার । স্যুটগুলোও পরে মাঝে মাঝে। কোমরে দড়ি বাঁধতে হয় বলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আজকাল ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু না পরলেও স্যুটের পকেটগুলো ঠিকই হাতড়ায়। . শেষটায় কুয়াশার রূমে সে যাতে ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হয়েছে
ভলিউম-৭
মান্নানকে। তার উপর তাই সর্বদাই চটে আছে ডি. কস্টা। কিন্তু কুয়াশার কাছে নালিশ ঠুকতে সাহস পায় না। মান্নান জানিয়ে দিয়েছে, বেশি গোল করলে সেলারের চাবি কেড়ে নেবে। ভাবনার কথা। . .
. ., রাজার জাত বলে মিস্টার না বললে রুষ্ট হয় ডি. কস্টা। কিন্তু কলিমের ধারণা ওকে কেষ্টা ব্যাটা ছাড়া আর কোন সম্বোধন করা উচিত নয়। কিন্তু তাতে করে সে ঝগড়াটে বুড়িদের মত পাড়া মাতিয়ে চিৎকার করবে এই আশঙ্কায় তাকে বড় একটা ঘটায় না। মাঝে মাঝে অল্প-স্বল্প চটিয়ে দিয়ে মজা করে। | টাকাটা মার যাওয়াতে মেজাজটা অপ্রসন্ন ছিল কলিমের। তারপর ঝাড়া একঘন্টা বক্তৃতা শুনেছে ডি, কস্টার। কিন্তু হেঁদো কথায় তো আর গ্লাস ভরে না । সুতরাং সে জুৎসই মুহূর্তে কথাটা উচ্চারণ করল, ‘কেল্টা ব্যাটাই চোর। * ঠোঁটের কাছে গ্লাস তুলেছিল ডি কস্টা। চুমুক না দিয়ে আস্তে আস্তে গ্লাসটা নামাল। তারপর চোখ-মুখ পাকিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে বলল, কি বললি? আঁা, কি বললি? টোর মাঠটা হামি ভেঙে ডেয়েগা। ইনটু টু পার্টস।
তাই নাকি? কি দিয়ে রে? বোতল দিয়ে?
‘ঘুসি মেরে। মাই ফিস্ট ভেরী স্ট্রং। ডু ইউ নো ড্যাট?’ টেবিলের উপর একটা ঘুসি বসাল ডি, কস্টা। আর্তনাদ করে উঠল বাসনপত্রগুলো।
• স্ট্রাটেজী বদলাল কলিম। বিড়ালের মত মিউ মিউ করে বলল, সর্বনাশ, বলেন। কি, ইওর অনার। আমার মাথাটা-আঁ!’হাত জোড় করল কলিম। এইবারটা মাফ করে দিন, ইওর অনার। আমার তো আপনার মত মজবুত মাথা নয় যে, একটা আস্ত থান ইট খুঁড়ো হয়ে যাবে।
. ঘটনাটা একদিন ডি. কস্টাই বলেছিল সগর্বে। সে নাকি একবার ইউনিভার্সিটির এক হলে চুরি করতে গিয়েছিল। রাতে নয়। দিনের বেলায়। কে একজন দেখে ফেলায় পালিয়ে যাচ্ছিল। ছাদের উপর থেকে আস্ত একটা থান ইট ছুঁড়ে দিয়েছিল একজন। সোজা মাথার উপর পড়েছিল ইটটা। খানখান হয়ে ভেঙে পড়েছিল। মাথায় একটু আঁচড়ও লাগেনি। মাত্র তিনহাত দূরে ছিল নিকটতম অনুসরণকারী। ইটের একটা কনা নাকি তার মাথায় লেগে দরদর করে রক্ত ঝরেছিল।
., আত্মগর্বে স্ফীত হল ডি কস্টা। বলল, ‘টবেই ড্যাখ, অঠচ আমার হাটের একটা ঘুসি খেলে টোর মাঠার খুলিটা টু পার্টস হয়ে যাবে।
কি যে বলেন, কেষ্ট সাহেব? মাত্র…’ ‘ফের, কলিম। চোখ পাকাল ডি. কস্টা।
‘থুক্কু, বস, আর কোনদিন ভুল হবে না। এইযে নাক মলছি, কান মলছি। বলছিলাম কি, আপনার হাতের ঐ ঘুসি খেলে মাথাটা ধু টু পার্টস নয়, মেনি পার্টস হয়ে যাবে। কে যেন বলছিল, আপনি নাকি গ্লাভস ছাড়াই চমৎকার বক্সিং কুয়াশা-২০
৫৭
•
!
করতে পারেন।
প্রসন্ন হল ডি কস্টা। একটু সন্দেহও হল। বলল, ঠাট্টা করছিস? জোকিং?’,
• “কি যে বলেন, স্যার, আপনি হচ্ছেন গিয়ে আমাদের বস্। কি বলিস মান্নান? আর আপনার সাথে ঠাট্টা করব! আমার জিভ খসে পড়বে না। . .. ‘হা। মনে রাখিস সে কথা। কুয়াশা হচ্ছে আমার যাকে বলে বনচু। টোরা কি মনে করিস সে আমার বস-প্রভু? উঁহু, প্রভু নয়, বনঢু। রিমেমবার। কিরে, একটু খাবি না কি?’
‘প্রভুর প্রসাদ পেতেই তো বসে আছি।,… কিন্তু প্রসাদ আর পাওয়া গেল না । মেপে মেপে তিন ফোঁটা ঢালল ডি. কস্ট
একটা গ্লাসে। এমন সময় কুয়াশার কণ্ঠ শোনা গেল । ডি. কস্টা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, ইয়েস, বস্, কামিন।’
পড়ি কি মরি করে দৌড় দিল সে একহাতে গ্লাস অন্য হাতে বোতল নিয়ে
মি. সিম্পসন চট্টগ্রামে ছিলেন না। জানে আলম চৌধুরী যেদিন খুন হল সেদিনই সকালে তদস্তু উপলক্ষে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে। তাঁকে টেলিফোনে খবর দিয়ে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানানো হল চট্টগ্রামে ফিরে আসবার। চট্টগ্রাম পুলিস-কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রামে কুয়াশার উপস্থিতিতে উদ্বিগ্ন বোধ করছিলেন। বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরাও অস্বস্তি বোধ করছিলেন। কে জানে, কুয়াশা কখন কার দিকে নজর দেয়। তারাই পুলিস কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি সক্রিয় হবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে। জানে আলম চৌধুরীর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তথা কুয়াশাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করার জন্য মি. সিম্পসনের উপর দায়িত্ব ‘আরোপের অনুরোধ জানায়। সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখান বেদার বখত সাহেব। বন্ধুর শোচনীয় মৃত্যুতে তিনি ভয়ানক মুষড়ে পড়েছেন। “ অতএব মি. সিম্পসনকে ফিরতেই হল চট্টগ্রামে। সেই দিন পারলেন না। এলেন পরের দিন । বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে গেলেন থানার দিকে। … ড্রাইভার মোসলেম আলী জীপ চালাচ্ছিল। মি. সিম্পসন পাশের আসনে। কর্মব্যস্ত রাস্তার দিকে আনমনে তাকিয়েছিলেন তিনি।
অনেকটা পথ ঘুরে জীপটা থানার কাছে গিয়ে পৌঁছুল। উল্টোদিক থেকে সাদা, একটা ফোক্সওয়াগন আসছিল। সেদিকে দৃষ্টি পড়তেই চমকে গেল মোসলেম । আলী। অস্ফুট, একটা ধ্বনি ‘করে মি, সিম্পসনের দিকে তাকাল সে। ফোক্সওয়াগনটা সঁ করে পাশ দিয়ে চলে গেল পেছন দিকে। | ব্রেক কষল মোসলেম আলী।
ভলিউম-৭
‘ ৫৮
মি. সিম্পসন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন তার দিকে। প্রশ্ন করলেন, ‘কি ব্যাপার, আলী মিঞা?’
স্যার, মানে•••। কিছু বিগড়ে গেছে নাকি? ‘না, স্যার, একটা লোক। অবিকল আপনার মত দেখতে। ‘আমার মত দেখতে!’ বিস্মিত হলেন মি. সিম্পসন।
‘হ্যাঁ, স্যার, আমি নিজের চোখে দেখেছি। একটা ফোক্সওয়াগেনে, ছিল । আমার এতটুকু ভুল হয়নি।
বল কি, হে?’ সন্দেহ প্রকাশ করলেন তিনি তবুও। তাহলে আর বলছি কি, স্যার?’
•
f
‘গাড়ি ফেরাব, স্যার, দেখব একবার? “না। থানায় চল।’ ..।
ড্রাইভার বোধহয় মি. সিম্পসনের সিদ্ধান্তটায় সন্তুষ্ট হল না। সে বলল, বেশিদূর হয়ত যেতে পারেনি। রাস্তা ভাল না।
‘কোন লাভ হবে না। মোসলেম আলী অগত্যা থানার দিকেই গাড়ি ছোটাল।
মি. সিম্পসন ভাল করেই জানেন এই ভাবে নকল সিম্পসনকে অনুসরণ করে লাভ নেই। সন্দেহ নেই, কুয়াশা ছাড়া আর কারও পক্ষে এমন নিখুঁত ছদ্মবেশ ধারণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু তার ছদ্মবেশে কোথায় গিয়েছিল কুয়াশা? নিশ্চয়ই থানায়। কিন্তু সেখানেই ব যাবে কেন? কিসের সন্ধানে? কোন তথ্য প্রমাণ গায়েব করার জন্যে নয় তো? ছাড়া আর কি হতে পারে? থানাসুদ্ধ সবাইকে বোকা বানিয়ে নিশ্চয়ই সে তার কাজ হাসিল করে গেছে। “ থানার বারান্দায় গিয়ে জীপ থামল। মি. সিম্পসন নামলেন গাড়ি থেকে। অফিসার-ইন-চার্জ সোবহান আখন্দ কি কারণে করিডরে এসেছিলেন। মি. সিম্পসনের মুখের দিকে অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন। এগিয়ে এসে বললেন, ‘আবার ফিরলেন যে, স্যার?’ *. ম্লান হাসলেন মি. সিম্পসন। বললেন, ‘তবার এলাম, মানে! এই তো সবে আসছি। আসুন, জরুরী কথা আছে।
হতভম্ব সোবহান আখন্দ মি. সিম্পসনের পিছনে পিছনে নিজের রূমে ফিরে ‘এলেন।
সামনাসামনি দুটো চেয়ারে বসলেন দু’জন। মি. সিম্পসনের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। . সিগারেট ধরালেন মি. সিম্পসন। তারপর ধীরে ধীরে পথের ঘটনাটা বললেন।
কুয়াশা-২০।
শেষে যোগ দিলেন, “আমার ছদ্মবেশ ধরে লোকটা যে থানাতেই তশরীফ এনেছিল এখন তা স্পষ্টই বুঝতে পারছি।’
অফিসার-ইন-চার্জ সোবহান আখন্দের অনেকক্ষণ বাফুর্তি হল না। অবাক দৃষ্টি মেলে মি. সিম্পসনের দিকে তাকিয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। তারপর বললেন, ‘এ যে অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে, স্যার। দিনে দুপুরে এমনভাবে ছদ্মবেশ পরে দিব্যি থানায় এসে বোকা বানিয়ে গেল, স্যার। কিন্তু জানেন, স্যার, সত্যি কথা বলতে কি আমার একটু সন্দেহ হয়েছিল।
• সন্দেহ হয়েছিল? তাই নাকি? কি সন্দেহ করেছিলেন? এখন আবার আমাকে সন্দেহ করছেন নাকি?”, “স্যার, কি যে বলেন। আপনাকে সন্দেহ! আচ্ছা, এক কাজ করলে হয় না,
স্যার?’ বিব্রত হয়ে প্রশ্ন করলেন সোবহান আখন্দ।
কি কাজ? | ‘এখুনিঃমরা বেরিয়ে পড়ি লোকটার খোঁজে। যে গাড়িতে করে লোকটা
এসেছিল, আমি চিনতে পারব, স্যার। ঐ যে কচ্ছপের মত দেখতে। ভক্সওয়াগন। সাদা রংয়ের। নম্বরটা, স্যার••এই যা! একবার মনে হয়েছিল, নম্বরটা টুকেই . ফেলি। তবে গাড়িটা বোধহয় চট্টগ্রামের না, ঢাকার, না স্যার, চট্টগ্রামের গাড়ি। কি বলেন স্যার, তাহলে এখনি বেরিয়ে পড়ি, গাড়িটার খোঁজ করতে?’ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন শেষ কথাগুলো।
তাতে কি লাভ হবে, বলুন? কোথায় কোন পথে গাড়ি গেছে কে জানে? সাদারংয়ের ফোক্সওয়াগেনের অভাব আছে নাকি: চট্টগ্রাম শহরে!’বিরক্তি চেপে গম্ভীর মুখে বললেন মি. সিম্পসন। ..
* ‘তাও বটে।’ মাথা চুলকাতে লাগলেন আখন্দ সাহেব, কিন্তু স্যার, এই যে লোকটা আপনার ছদ্মবেশে এসেছিল, সে কে তা মোটেও বুঝতে পারছি না। আর আপনার কি মনে হয়?’ |
সম্ভবত কুয়াশা নিজেই এসেছিল অথবা তার কোন অনুচর পাঠিয়েছিল। ‘তাই হবে। আমারও তাই মনে হয়েছিল। অবশ্য সম্পূর্ণ অন্য লোকও হতে পারে। ‘নিশ্চয়ই, স্যার। তাও হতে পারে।
আপনি কি করে বুঝলেন?…।
‘আমি, না মানে, স্যার, যতদূর মনে হয়, স্যার’ মাথা চুলকাতে লাগলেন আখন্দ সাহেব। . মি. সিম্পসন বললেন, আপনাকে আর কষ্ট করে ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে না। কষ্টটুকু আমিই করব না হয়। এখন আমি যা বলি তাই শুনুন। বসুন আপনি।
ভলিউম-৭।
বসলেন আখন্দ সাহেব, ধপ করে। .. ‘লোকটা কি কোন কাগজপত্র নিয়ে গেছে? | ‘মোটেও না, স্যার আমাকে কি এত কাঁচা ছেলে বলে মনে করেন। টুয়েন্টি ইয়ার্স এক্সপেরিয়েন্স ইন পুলিস সার্ভিস। আমি কি কোন কাগজপত্র নিতে দিই। বললুম না, স্যার, আমার তখুনি সন্দেহ হয়েছিল। এসে চাইল আর দিলুম। আমি কি, স্যার, অতটাই বোকা?
– তার মানে, নিতে চেয়েছিল।
: না, স্যার। নিতেও চায়নি। তবে সব কাগজপত্র দেখেছে। ময়না তদন্তের | রিপোের্ট, এজাহারের কপি, তদন্তের বিবরণ । জানে আলম চৌধুরীর পকেটে পাওয়া
চিঠিটা আর আর, চোরাচালান ও জালিয়াতি সম্পর্কে যে গোপন ফাইল আছে সেটাও দেখেছে। অবশ্য ফাইলটা গোপনীয় হলেও এতে কোন গোপন কথা নেই, স্যার। শুধু দুচারটে ইন্সট্রাকশন আছে। তাই দেখতে দিতে আপত্তি করিনি।
‘লোকটা কি মি. চৌধুরীর পকেটে পাওয়া চিঠিটা হাতে নিয়েছিল?
না, স্যার। আমি ভাজ খুলে টেবিলে রেখেছিলুম, স্যার।’ ‘প্রশ্ন করেছিল কিছু লোকটা?
হ্যাঁ, স্যার, অনেক। ‘যেমন? . ‘লোকটা কিভাবে খুন হয়েছে? কবে, কখন, কোথায়? কে কে দেখেছে, লাশ থানায় এনেছিল কে? নিহত লোটার, পরিচয় কি? বাড়ি-ঘর, আত্মীয়-স্বজন, সম্পর্কেও জানতে চাইল। ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার সোনার চোরাচালান সম্পর্কেও অনেক প্রশ্ন করল, স্যার। জালিয়াতদের সম্পর্কে নতুন কিছু জানা গেছে কিনা জানতে চাইল। আসলে, স্যার, খুনের কেসটার চাইতেও সোনা চোরাচালান আর জালিয়াতি সম্পর্কেই দেখলাম, লোকটার উৎসাহ বেশি। … ‘ই। সেটাই স্বাভাবিক।’মন্তব্য করলেন মি. সিম্পসন। যাক। কোন
কাগজপত্র খোয়া যায়নি তো?’..
“না, স্যার। একটাও না।’ | ‘বেশ, এখন কাগজপত্রগুলো সব আমাকে দিন। সেই চিঠিটা কোথায়? জানে
আলম চৌধুরীর পকেটে পাওয়া চিঠিটা?’ .., ডুয়ার খুলে ‘কনফিডেনশিয়াল চিহ্নিত একটা ফাইল বের করলেন আখন্দ সাহেব। সেটা মি. সিম্পসনের দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বললেন, স্যার, সমস্ত কাগজপত্র এখানটায় আছে। জালিয়াতি আর সোনা চোরাচালানের কেসের ফাইলও দেব নাকি, স্যার?
‘ দিতে পারেন। সব কাগজপত্রই আমার অফিসে আছে। কিন্তু সেই ছদ্মবেশী লোকটার এ ব্যাপারে উৎসাহের কি কারণ আছে ঠিক বুঝতে পারছি না। লোকটা
কুয়াশা-২০
–
যদি কুয়াশাই হয় তাহলে হঠাৎ করে এতে তার উৎসাহের কি কারণ থাকতে পারে, ফাইল দেখলে হয়ত তা বোঝা যেতেও পারে।’
• অফিসার-ইন-চার্জ উঠলেন। লকার খুলে পেট মোটা দুটো ফাইল এনে টেবিলের উপর রাখলেন। মি. সিম্পসন খন খুনের কেসের ফাইলে মনোনিবেশ করেছেন।’
‘ ৪ এপ্রিল রাত আটটায় মারা গেছেন জানে আলম চৌধুরী। ময়না তদন্তে বলা হয়েছে সন্ধ্যা ছ’টা থেকে রাত দশটার মধ্যে গুলি লেগেছে। হৃৎপিণ্ড ভেদ করে একটা গুলি বেরিয়েছে। একটা গলার ভিতর দিয়ে বেরিয়েছে। অন্যটা কানের ভিতর দিয়ে ঢুকে মাথার খুলি ভেঙে বেরিয়ে গেছে। মৃত্যু হয়েছে সঙ্গে সঙ্গেই। . লাশ নিয়ে থানায় এসেছেন বেদার বখত। বখত পোলট্রি ফার্মের মালিক।
এজাহারও দিয়েছেন তিনিই।
‘‘ এই বেদার বখত সাহেবটা কে?’, ..
অত্যন্ত গণ্যমান্য লোক, স্যার। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলীর মেম্বার। বিরাট বড়লোক। ফৌজদারহাটে বিরাট পোলট্রি ফার্ম। তাঁর গাড়িতে চট্টগ্রাম শহরের দিকে আসছিলেন জানে আলম চৌধুরী। | বখত।সাহেব লোক কেমন?’–
‘চমৎক৷ ‘ লোক, স্যার। কি অমায়িক ব্যবহার। দিল দরিয়া মেজাজ। আমাকে যা খাতির করে কি আর বলব, স্যার।
. ‘ই। আর এই জানে আলম চৌধুরীর হোয়্যার এবাউট কিছু জানা আছে? তন্তকালে জানা গেছে কিছু?
‘অতি সামান্য, স্যার।’ গড়গড় করে বলে গেলেন আখন্দ সাহেব। যা বললেন তার সার সংক্ষেপ হলঃ ভদ্রলোকের আদিবাড়ি বাংলাদেশে হলেও শৈশব তাঁর কেটেছে বার্মায়। বাংলাদেশেই আছে চোদ্দ-পনের বছর। বাপ-মা বাংলাদেশী বলে নতুন করে নাগরিকত্ব নিতে হয়নি। অবশ্য জন্মও হয়েছে বাংলাদেশেই। দিনাজপুর ছিল পিতামাতার আদি-ভিটা। পি. আই. এ.-তে পাইলট ছিলেন। বাপ মা গত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। বিয়ে করেছিলেন। স্ত্রীর সাথে বনিরনা হয়নি। তালাক হয়নি অবশ্য। কিন্তু সম্পর্ক নেই। ভদ্রমহিলা ঢাকাতে থাকেন। এখন এখানেই আছে। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে এসেছেন। তিনিই লাশ নিয়ে গিয়েছেন-দাফনের জন্য।
‘ঠিকানাটা নিশ্চয়ই রেখে গিয়েছেন, তিনি?” ‘হ্যাঁ, স্যার। ডেডবডি ডিসপোজাল অর্ডঙ্গর ঠিকানা আছে।
মি. চৌধুৰী কি করতেন?’,
‘পি, আই. এ.-র চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসার ধান্দায় ছিলেন, স্যার। বখত সাহেবের বন্ধু । বোধহয় উনিই টাকা পয়সা দিয়েছিলেন।
৬২
ভলিউম-৭
* সোনা চোরাচালানের আর জালিয়াতি কেসের নথিপত্রগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে । পড়লেন মি. সিম্পসন । চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে গত এক বছরেই এককোটি টাকার সোনা চোরাচালান হয়েছে। কুয়াশা হয়ত সেই এককোটি টাকার খোঁজে এসেছে। এছাড়া অন্য কি কারণ থাকতে পারে কুয়াশার এ ব্যাপারে উৎসাহিত হবার, ভেবে। পেলেন না তিনি।
তিন
বখত সাহেবের পোলট্রি ফার্মটা বঙ্গোপসাগরের তীরে বন এলাকায়। ফৌজদারহাটের শেষ প্রান্তে। সড়ক থেকে দুই ফার্লং দূরে। ফার্মের পয়শ তৈরি একটা রাস্তা সড়ক ও ফার্মের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেছে। রাস্তার মাথায়, প্রকাণ্ড সাইনবোর্ড। লেখাঃ বখত পোলট্রি ফার্ম। নিচে একটা ছোট সাইনবোর্ড। তাতে লেখাঃ ‘প্রাইভেট রাস্তা, বিনানুমতিতে প্রবেশ নিষেধ। সংযোগ পথের দু’ধারে কাঁটাতারের বেড়া। দু’পাশে ঘন জঙ্গল। বন থেকে শুধুমাত্র কাঠবিড়ালী ছাড়া আর কারও সেই বেড়া ভেদ করে রাস্তার উপর ওঠার সাধ্য নেই।
. * প্রাইভেট রাস্তাটা কর্ম মুখর। সারাদিন ট্রাক যাতায়াত করছে। গেটে চব্বিশ ঘন্টা বন্দুকধারী দারোয়ান মোতায়েন। বিনানুমতিতে কেউ গেট পর্যন্ত আসতে পারলেও দারোয়ান কাউকে ফটক পার হতে দেয় না। এ ব্যাপারে মালিকের কড়া, নির্দেশ আছে। কিন্তু ফার্মে যার যাতায়াত করে তারা সবাই দারোয়ানদের চেনা। তাই মালিকের কঠোর নির্দেশ সত্ত্বেও কড়াকড়িটা শিথিল। ‘ গেট পেরোলেই একতলা অফিস-ভবন। আকারটা ইংরেজি ‘ই’ হরফের মত। সামনের সুন্দর বাগান বখত সাহেবের সুরুচির পরিচয় দিচ্ছে। বামবাহুটা গেস্ট হাউজ। ডানহুটা রিসার্চ ল্যাবরেটরি। “
‘: অফিস-ভবনের পিছনে ছাদ-সমান উঁচু প্রাচীর। উপরে কাঁটা তারের বেড়া। প্রাচীরের উপর দিয়ে একি দিচ্ছে অনেকগুলো সেগুন গাছ। মূল ফার্মের শুরু এই প্রাচীর থেকেই। সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর বেদার বখত মি. সিম্পসনের সাথে কথা বলছিলেন। জানে, আলম চৌধুরীর হত্যা সম্পর্কে তদন্ত করতে এসেছেন তিনি।
* বখত সাহেব লম্বা-চওড়া মানুষ। দোহারা গড়ন। মুখটা চৌকোণা। চোখ। দুটো ছোট ছোট। চোখের কোনায় লালচে রং। চুল ছোট করে কাটা! থুতনির নিচে সামান্য দাড়ি । পান-দোক্তার বদৌলতে দাঁতগুলো কালো। তবে সামনের দাঁত দুটো সোনা দিয়ে বাঁধানো। গায়ে কালো রংয়ের শেরোয়ানী। . অনুচ্চ, শোকার্ত কণ্ঠে তিনি জানে আলম চৌধুরীর হত্যা পরিস্থিতি বর্ণনা
করছিলেন। কুয়াশা-২০’
|
|
শোকার্ত কণ্ঠে তিন গায়ে কালো রংয়ের লো কালো। তবে সমর
৬৩ ‘
‘ তিনি বললেন, ‘যেন একটা অবিশ্বাস্য ভোজবাজির মত ঘটনাটা ঘটে গেল। আমি বিস্ময়ে, আতঙ্কে বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম। বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পেয়ে বসেছিল। কি হয়ে গেল তা যেন আমার স্নায়ুমণ্ডলিতে কোন চেতনা সৃষ্টি করতে পারছিল না । সংবিৎ যখন ফিরে পেলাম তখন সব শেষ।’ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন বখত সাহেব।
তারপর?’ প্রশ্ন করলেন মি. সিম্পসন। ‘সোজা থানায় চলে গেলাম। ‘হাসপাতালে গেলেন না?’–
জানে আলমের দেহ তখন স্থির হয়ে গেছে। হাসপাতালে গেলে কোন লাভ হত না।
“তা বটে। গাড়িতে আপনারা দুজনেই ছিলেন?
হ্যাঁ। . একটা সিগারেট ধরালেন মি. সিম্পসন । কয়েকটা টান দিয়ে বললেন, ‘যেহেতু নিহত চৌধুরী সাহেব আপনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তাই তার হত্যাকাণ্ড তদন্তে আপনার সহযোগিতা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া একমাত্র আপনিই ছিলেন অকুস্থলে। হত্যাকাণ্ডটা ঘটেছে আপনার চোখের সামনেই। আশা, করি, আপনার আপত্তি নেই আমাদের সহযোগিতা করতে? … … ‘আপত্তি! বলেন কি, মি. সিম্পসন? এ তো আমার সৌভাগ্য। সব রকম সহযোগিতা আমি সাগ্রহে করব। এই শয়তানটা মানে কুয়াশাকে ধরার ব্যাপারে আমি যথাসাধ্য সহায়তা করব।’ জোর দিয়ে কথাগুলো বললেন বখত সাহেব।? সিম্পসন সাহেব মৃদু হাসলেন। সিগারেটে একটা টান দিয়ে বললেন, আপনি বোধহয় ধরে নিয়েছেন, কুয়াশাই খুন করেছে?
• বখত সাহেব পান মুখে দিতে যাচ্ছিলেন। পান দুটো তার হাতেই রইল । একটু অবাক হয়েই মি. সিম্পসনের মুখের দিকে তাকালেন তিনি। বললেন, ‘আপনার কথাটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, মি. সিম্পসন । আপনি কি বলতে চাচ্ছেন কুয়াশা জানে আলমকে খুন করেনি?’.. .t. না, আমি ঠিক তা বলতে চাই না। কথাটা হল, কুয়াশাই যে হত্যা করছে।
তার কোন কনসিভ এভিডেন্স, মানে নির্ভুল প্রমাণ নেই।
‘কেন কেন? উত্তেজিত হলেন বখত সাহেব। স্পষ্ট প্রমাণ আছে। কুয়াশার চিঠি পাওয়া গেছে জানে আলম চৌধুরীর পকেটে। তাছাড়া হত্যাকারীর কথাগুলো তো আমি নিজের কানে শুনেছি। জানে আলমকে গুলি করে লোকটা চলে যাবার সময় বলে গেল, কুয়াশা এই ভাবেই তার কর্তব্য পালন করে। এর পরেও কি সন্দেহের অবকাশ আছে, মি. সিম্পসন? আশা করি আমার কথা আপনি অবিশ্বাস করবেন না? ৬৪
ভলিউম-৭
| ‘সে প্রশ্ন ওঠে না। আপনার ইনটেগ্রিটি সম্পর্কে কোন প্রশ্ন না তুলেও বলা যায় যে, কুয়াশাই এই হত্যাকাণ্ড করেছে কিনা তা প্রমাণ অথবা অপ্রমাণ করার জন্য আরও তথ্য প্রয়োজন।’ :: মনে হচ্ছে আপনার মনে খটকা আছে,’বখত সাহেব বললেন। | : নিশ্চয়ই আছে। আর তার সঙ্গত কারণও আছে। সেইটাই তো হয়েছে
অসুবিধা, ভাবনাজড়িত কণ্ঠে বললেন মি. সিম্পসন। . অনেকক্ষণ দু’জনের কেউ কোন কথা বললেন না। সিম্পসন সাহেব অ্যাশট্রেতে সিগারেটের শেষাংশটা ফেলে দিলেন। ঘঁাৎ করে একটা শব্দ হল। বখত সাহেব দুটো পান মুখে দিয়ে কিছুক্ষণ চিবিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। পিক ফেলে এসে বসলেন আবার। বললেন, ‘শুনেছি, কুয়াশা নাকি অত্যন্ত চতুর। কেউ তাকে আজ পর্যন্ত দেখেনি। ধরা তো দূরের কথা।, ওসব গুজব। তবে এখন পর্যন্ত যে তাকে গ্রেফতার করা যায়নি এটা সত্য কথা। কিন্তু চিরটা কাল তো আর সে পুলিসের চোখে ধুলো দিতে পারবে না। একদিন তাকে ধরা দিতেই হবে। সে যাক। এখন দয়া করে সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে আর একটু আলোকপাত করুন।
বলুন।’ ., হত্যাকাণ্ডটা ঠিক কটায় হয়েছিল? রাত আটটার দিকে। ‘ঘড়ি দেখেছিলেন?
‘এখান থেকে আমরা যখন বেরিয়েছি তখন আটটা বাজতে মিনিট দুয়েক বাকি ছিল?’,
‘খুনী, কি একা ছিল? ‘শুধুমাত্র তাকেই তো দেখেছিলাম।’ রাস্তায় অন্য কোন যানবাহন ছিল না? সাধারণত থাকে-কিন্তু সেদিন ছিল না।’ ‘একটু বর্ণনা করুন ঘটনাটা।
গাড়ি চালাচ্ছিলাম আমি নিজে। ফার্মের জীপটা চালাচ্ছিলাম। ড্রাইভার। একজন ছিল ছুটিতে আর দুজন অন্য দুটো গাড়ি নিয়ে শহরে গিয়েছিল। পথে দু একটা গাড়ি যে দেখিনি, তা নয়। কয়েক মিনিট ধরে গাড়ি চালাবার পর দেখি, একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে পথের উপরে। গাড়ির আলোটা সরাসরি লোকটার। গায়ে গিয়ে পড়েছিল । অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে আশঙ্কা করে স্পীড কমিয়ে দিলাম তখুনি। দেখলাম, লোকটা হাত দিয়ে গাড়ি থামাবার ইঙ্গিত করছে পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে। ওর কাছে গিয়ে গাড়ি থামালাম। লোকটা আমার দিকে এল । গাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে জানে আলম চৌধুরীর দিকে তাকাল। মনে হল, কিছু
৫-কুয়াশা-২০’
• :
+ +
বলবে। কিন্তু না, পরপর তিনবার পিস্তলের আওয়াজ হল। চৌধুরীর আর্তনাদও শুনতে পেলাম সঙ্গে সঙ্গে। পড়ে গেল আমার গায়ের উপর। ভাবলাম, এবার হয়ত আমার পালা। কিন্তু তখন আমি চিৎকার করার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছি। লোকটা গুলি করে দাঁড়াল না। চলে গেল। যাবার সময় বলে গেলঃ কুয়াশা এই। ভাবেই তার কর্তব্য পালন করে।
কোনদিকে গেল, লোকটা?’ ‘পিছন দিকে গেল বলেই মনে হল। একটু পরেই মোটর সাইকেলে স্টার্ট দেবার আওয়াজ পেলাম, পিছন দিকে।
“লোকটাকে ভাল করে দেখেছেন?
না, তেমন দেখতে পাইনি। তবে বেশ লম্বা-চওড়া। পরনে কি ছিল? ‘প্যান্ট আর শার্ট।
‘আপনি কি দৈনিক ঐ সময়েই ফার্ম থেকে বেরোন? মানে, রাত আটটার দিকে?’ ..
-না। কোন ঠিক নেই। ‘সেদিন কখন চৌধুরী সাহেব আপনার ফার্মে গিয়েছিলেন? .’বিকেল পাঁচটার দিকে। আমিই ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কিছু অর্ডার ছিল আমার। গাড়ি পাঠিয়েছিলাম। সেই গাড়িতেই এসেছিল এখানে।
‘ওর সাথে আপনার আলাপ কতদিনের?
‘আমরা দুজনেই রেঙ্গুনে মানুষ। শৈশব কাটিয়েছি সেখানেই। বয়সে অবশ্য আমার চাইতে ও বছর দশেকের হোট। বরাবরই আমি ওকে স্নেহের চোখে দেখতাম। চৌধুরীওআমাকে বড় ভাইয়ের মতই দেখত। মাঝখানে অনেকদিন দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। করাচীতে বীচলাক্সারী হোটেলে আকস্মিকভাবে দেখা হল। ও তখন পি. আই. এ.-তে পাইলট। পুরানো সম্পর্কটা আবার ঝালিয়ে নিলাম।
‘চৌধুরী সাহেব পি, আই.এ.-র চাকরি ছেড়েছেন কবে?
বছর দুয়েক হবে। পরে কি করতেন?’, ‘
ব্যবসার ধান্ধায় ছিল। এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের একটা ফার্ম করেছিল। টাকাটা দিয়েছিলাম আমিই। সবটা নয় অবশ্য
তাহলে উনি খুৰ বিত্তশালী ছিলেন না? ‘মোটও না। সামান্য পজি।
ই। শুনেছি ভদ্রলোকের ব্যক্তিগত জীবন নাকি সুখময় ছিল না।
স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ভাল ছিল না। দোষটা, আমি যতদূর জানি, জানে আলমের নয়। সেই মহিলারই। তিনি হচ্ছেন আর্টিস্ট। নাম শুনেছেন বোধহয়। সীমা
: ভলিউম-৭
:
+
চৌধুরী। এক্সিবিশনও করেছেন কিছুদিন আগে। কিন্তু ভীষণ কান্তিক। আমাদের মত ব্যবসায়ী মানুষদের গেরাহ্যির মধ্যে আমে না। বলে, আমরা নাকি সব রাস্টিক গেঁয়ো। স্বামীটাকেও ঐ রকম অশ্রদ্ধার চোখেই দেখত। আমি বলেছিলাম, আমার
একটা পোর্ট্রেট করে দিতে। কানেই তুলল না।
‘এটাই বুঝি তার উপর আপনার রাগের কারণ?’ মৃদু হাসলেন মি. সিম্পসন ।
‘না না, তা হবে কেন? তাছাড়া এখন রাগ করার কোন মানেই হয় না! হাজার হলেও সে আমার বউমার মত। ওকে তো আমই খবর দিয়েছিলাম। এখানে আসবার জন্য ঢাকায় ওর কাছে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলাম। মৃতদেহের সৎকারের দায়িত্ব তো ওরই। এখনও সে চট্টগ্রামেই আছে। আপনি নিশ্চয়ই তার সাথে দেখা করবেন?’
মাথা নাড়লেন মি. সিম্পসন। তারপর বললেন, ছাড়াছাড়িটা হয়েছে কবে?
• মাস ছয়েক হবে। ঠিক ছাড়াছাড়ি নয়। মানে তালাক হয়নি। জানে আলম বেঁচে থাকলে পরে কি হত বলা যায় না।
‘এসব নিয়ে আপনার সাথে কখনও কোন আলাপ হয়েছে?” … কক্ষণো না। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সে আমার সাথে কখনোই আলোচনা,
করত না।’,…
* মি. চৌধুরী খুন হবার আগে তার মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা দেখেছেন?
কয়েকদিন ধরে একটু চঞ্চল মনে হত। কেমন যে বিষণ্ণ, কি যেন এক চিন্তার ভারে পীড়িত। সবসময় কি যেন ভাবত। মাস দুয়েক ধরে ব্যবসাতেও মনোযোগ দেয়নি তেমন। আমি ভেবেছিলাম, পারিবারিক অশান্তির জন্যেই বোধহয় মন মেজাজ ওর প্রসন্ন নেই। :
“কিছু জিজ্ঞেস করেননি?
করেছিলাম। প্রথমটায় এড়িয়ে যেত। পরে বলত, কই না, ঠিকই তো আছি। কি যে বল, বেদার ভাই! তবে ইদানীং প্রায়ই বলত, সে কানাডা চলে যাবে, চিরদিনের জন্য দেশ ত্যাগ করে।
‘শুধু মুখেই বলত, না, তেমন কোন লক্ষণ দেখেছিলেন?
‘পাসপোর্টের আবেদনও বোধহয় করেছিল।
• “মি. চৌধুরীর কোন শত্রু ছিল কিনা বলতে পারেন? তেমন কিছু কখনও বলেছেন?’ :
‘না’। তেমন কিছু কোনদিন আমার সাথে আলাপ করেনি। আসলে সে ছিল অত্যন্ত চাপা প্রকৃতির। আমার সাথে যথেষ্ট হৃদ্যতা থাকলেও, ব্যক্তিগত সমস্যা, নিয়ে পারতপক্ষে কখনোই আলোচনা করত না।
কুয়াশা সম্পর্কে কোনদিন কোন কথা হয়েছে?
‘অনেকদিন আগে একবার হয়েছিল। কয়েকবছর আগে। সংবাদপত্রে কুয়াশা কুয়াশা-২০
৬৭।
:
সম্পর্কে একটা খবর ছাপা হয়েছিল, সেই সূত্রে।
ইদানীং কোন কথা হয়েছিল? .
। ঐ শব্দটাই উচ্চারণ করেনি সে। সামনের ফাইল থেকে একটা খাম বের করে বখত সাহেবের দিকে এগিয়ে। দিলেন মি. সিম্পসন। বললেন, ‘পড়ে দেখুন, জানে আলমের পকেট থেকে এই চিঠিটাই পাওয়া গিয়েছিল কিনা। :.
খামটা নিয়ে তার ভিতর থেকে চিঠিটা বের করলেন বখত সাহেব। ভাজ খুললেন। ছোট এক টুকরো নীল কাগজে বাংলা টাইপরাইটারে মুদ্রিতঃ জানে আলম চৌধুরী। আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে দশ লাখ টাকা চাই। রাজি থাকলে তোমার ফ্ল্যাটের সামনে লাল আলো জ্বালিয়ে দিয়ো, ২৯ মার্চ রাতে। গিয়ে নিয়ে আসব টাকা। পুলিসে খবর দিলে পরিণাম খারাপ হবে। টাকাটা না পেলে মৃত্যু অবধারিত। কুয়াশা। ‘..
• চিঠিটা পড়ে ভাজ করে খামটার মধ্যে পুরতে পুরতে বখত সাহেব বললেন, হ্যাঁ, এটা সেই চিঠিটাই।’..
‘বের করেছিল কে মি. চৌধুরীর পকেট থেকে? প্রশ্ন করলেন মি. সিম্পসন।..
ইন্সপেক্টর সোহান আলী। : এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আপাতত আপনার আর কিছু বলবার আছে, বখত, সাহেব?’
না-না। তেমন কিছু আর বলবার নেই। যদি মনে হয় তাহলে, পরে অবশ্যই
.
জানাব। আমি উঠি এবার। সভার তুললেন বলন, আপনার
: টেলিফোন বেজে উঠল। রিসিভার তুললেন বখত সাহেব, ‘হ্যালো, বখত, পোলট্রি ফার্ম…হ্যাঁ, আছেন উনি। •••ধরুন, মি. সিম্পসন, আপনার ফোন। রিসিভার এগিয়ে দিলেন তিনি মি. সিম্পসনের দিকে। … ‘হ্যালো-হা, সিম্পসন বলছি••ও হ্যাঁ, বল কোন ভুল নেই তো•••? আচ্ছা, রাখছি।
বখত সাহেব লক্ষ্য করলেন, অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে উঠেছে মি. সিম্পসনের মুখ।; তিনি বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।…
* পথে গাড়িতে ব্যাপারটা ভাবছিলেন মি. সিম্পসন। বেশ ভাল রকমের একটা জট পাকিয়ে গেছে। জানে আলম চৌধুরীর হত্যা-রহস্য সবত একমাত্র তিনি ছাড়া আর সবাই সহজ কেস বলে মনে করছে। অথচ তিনিই জানেন, ব্যাপারটা কতটা জটিল। সবাই জানে হত্যাকারী কুয়াশা। অর্থাৎ হত্যাকারী কুয়াশার উপর দোষ চাপিয়ে দিতে সফল হয়েছে পুরোপুরি। অথচ মি. সিম্পসনের ধারণা সম্পূর্ণ আলাদা। মাত্র দশ লাখ টাকার জন্য কুয়াশা কাউকে খুন করবে এটা কোন মতেই ‘৬৮
ভলিউম-৭
বিশ্বাস করা যায় না-বিশেষ করে বুয়াশা নিতান্ত প্রাণের দায় ছাড়া নরহত্যা এড়িয়ে যায় একথা আর কেউ জানুক আর নাই জানুক, তিনি নিজে তো ভাল করেই জানেন। তাছাড়া কুয়াশার নামে দেয়া চিঠির বক্তব্যের সাথে হত্যাকারীর কথাগুলোর (কুয়াশা এইভাবে তার কর্তব্য পালন করে) কোন সামঞ্জস্য নেই। ‘একটাতে টাকা দাবি করা হয়েছে, অন্যটাতে কোন এক অজ্ঞাত কর্তব্যের উল্লেখ
করা হয়েছে।
তাছাড়া কুয়াশা এইভাবে চিঠি লেখার ক্লাসিক্যাল স্টাইলটাও পছন্দ করে না। করলেও সে নিজের হাতেই চিঠি লিখত টাইপরাইটারের সাহায্য নিত না।
টাকার ব্যাপারটাও জটিল। বেদার বখতের মতে জানে আলম সঙ্গতিসম্পন্ন ছিল না। কিন্তু এইমাত্র ঢাকা থেকে তাকে ফোনে জানানো হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে জানে আলম চৌধুরীর উনচল্লিশ লক্ষ টাকা ডিপোজিট ছিল। জানুয়ারি থেকে মার্চের চব্বিশ তারিখের মধ্যে সমস্তটা টাকা তুলে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে মিসেস রুখসানা চৌধুরীর অ্যাকাউন্টে যুক্ত হয়েছে মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা। বাকি টাকাটা তাহলে গেল কোথায়? জানে আলম চৌধুরী কুয়াশাকে যদি দাবি অনুযায়ী দশ লাখ টাকা দিয়েই থাকে তাহলে নিশ্চয়ই কুয়াশা তাকে খুন করতে আসত না। তাহলে খুনের কারণ আলাদা এবং এই খুনের সাথে কুয়াশার জড়িত থাকার কোন সম্ভাবনা নেই। অন্য কেউ কুয়াশার দুর্নামটুকু ব্যবহার করেছে। কিন্তু কে সে। তাৰ হদিস পাওয়ার এতটুকু সূত্র নেই। .:: এই বেদার বখত সাহেব নোকটাও অত্যন্ত ধুরন্ধর। তার নিকট থেকে এম কিছু আদায় করা গেল না, যা জানে আলম চৌধুরীর খুনের রহস্য উদঘাটনে সহায়ক হতে পারে। অথচ উনি অনেক কিছুই জানেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। . রঙ্গমঞ্চে আসল কুয়াশা কখন প্রবেশ করেছে তাও ঠিক বোঝা যাচ্ছে ন’, হত্যাকারে আগে থেকেই কি সে চট্টগ্রামে ছিল? হত্যাকার। তার উপস্থি.. সুযোগ নিয়েছে? না বহুদিন ধরে কুয়াশার কোন খবরাখবর বড় একটা কেউ জা.
বলেই হত্যাকারী তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়েছে? . যাই হোক, হত্যাকারী বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়নি। কুয়াশা যদি খেপে গি থাকে তাহলে সে নকল কুয়াশাকে খুঁজে বের করতে চেষ্টার ত্রুটি করবে সেটাই বোধহয় তার বর্তমান তৎপরতার কারণ। এই জন্যেই বোধহয় সে সত্ৰি হয়ে উঠেছে। তার ছদ্মবেশে থানায় গিয়ে খোঁজ-খবরও করে এসেছে। কি সোনা-চোরাচালানীদের ব্যাপারে ওর এত উৎসাহ প্রদর্শনেরই বা কারণ কি? জালিয়াতির ব্যাপারটাতেই বা ওর এত আগ্রহ কেন? সে কি এ সম্পর্কে কি জানতে পেরেছে? নাকি, জানে আলম চৌধুরীর হত্যা-রহস্যের সাথে এর কে? সম্পর্ক আছে?
• জানে আলম চৌধুরী কি কোন র্যাকেটের মেম্বার ছিন? বখত সাহেব হয়ত এ কুয়াশা-২০
সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করবেন না।’ … কুয়াশা কতটাই বা এগিয়ে গেছে? হয়ত অনেকটা, হয়ত আদৌ এগোন, তার মতই অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে। কিন্তু, এবারে কুয়াশাকে বাজিমাৎ করতে দেয়া হবে না। তার নাকের ডগায় বসে কুয়াশা অপরাধীকে নিজ হাতে শাস্তি দেবে আর, তিনি শুধু নীরব দর্শকের মত তা দেখবেন, তা এখন আর তিনি সহ্য করবেন না । তাঁকে এগোতে হবে কুয়াশার চাইতে দ্রুত। অপরাধীকে শাস্তি দেবে আদালত। কুয়াশা নয়। গাড়ি শহরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। ‘
‘ ড্রাইভার মোসলেম মিঞা প্রশ্ন করল, কোনদিকে যাব, স্যার। | আন্দরকিল্লার দিকে যাও।’
আন্দরকিলায় জানে আলম চৌধুরীর বাসা। মিসেস চৌধুরী আপাতত সেখানেই আছেন। পুলিসের অনুরোধেই তিনি চট্টগ্রাম ছেড়ে যাননি। স্বামীর হত্যা রহস্য উদঘাটনে তার কতটুকু উৎসাহ আছে, মি. সিম্পসন তা জানেন না। তবু একবার আলাপ করা প্রয়োজন। তাছাড়া একটা সম্ভাবনার কথা তার মনের কোণে। উদয় হয়েছে। মহিলাকে একটু ঘনিষ্ঠভাবে দেখা দরকার। নকল কুয়াশা-রহস্য হয়ত তাঁকে কেন্দ্র করেই ঘনীভূত হয়ে উঠেছে।
• জানে আলম চৌধুরীর বাসা খুঁজে পেতে সময় লাগল না। ড্রাইভার মোসলেম আলী বহু বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরে আছে। এখানকার অলি-গলি তার নখদর্পণে। নম্বরটা খোঁজ করতে দু-একজনকে জিজ্ঞেস করতে হল, এই যা।
| কিন্তু নিরাশ হতে হল মি. সিম্পসনকে। গেটে একটা বিরাট তালা ঝুলছে।
চার
পরদিন সকালে মিসেস রুখসানা চৌধুরীর সাথে দেখা করতে গিয়ে আবার নিরাশ হলেন মি. সিম্পসন। পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর বয়সের একটা চাকরমত লোক বেরিয়ে এসে বলল,মেমসাহেব তো নাই। সকালের ট্রেনে ঢাকা গেছেন গিয়া।
‘ঢাকা চলে গেছেন মিসেস চৌধুরী?’অবিশ্বাসের সুরে বললেন মি, সিম্পসন। ‘া, স্যার। আপনি কে?– আমি সি, আই. ডি.-র লোক। জানে আলম সাহেবের খুনের তদন্ত করছি। তুমি কে?”“ ।
• আমি এই বাড়ির কাজকাম করি। রান্নাও করি।তার কষ্টে ভয়ের আভাস।
মিসেস চৌধুরী কবে ফিরবেন কিছু বলে গেছেন? “ঠিক নাই, স্যার। তবে শিগগিরই আইবেন। . ‘বেশ, তোমাকেই কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব।’… | লোকটা সপ্রতিভ। কিন্তু মি. সিম্পসনের শেষের কথায় হকচকিয়ে গেল!
ভলিউম-৭
৭০’
সভয়ে বলল, “আমি তো কিছু জানি না, স্যার। ‘, ‘না না, সে কথা নয়। অন্য কয়েকটা কথা তোমাকে জিজ্ঞেস করব। যেগুলো জানতে পারলে তোমার সাহেবের খুনের তদন্তের সুরাহা হবে। তোমার নিশ্চয়ই আপত্তি নেই?
, লোকটার ভয়ের ভাবটা তবু দূর হল না। সে আবার বলল, আমি তো কিছুই। জানি না! ::
তুমি অকারণে ভয় পাচ্ছ। খুন হয়েছে রাস্তায়। তোমার তা জানার কথা নয়। আমি শুধু তোমাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব। তার জবাব পেলে আমার তদন্তের সুবিধা হবে।’ ..
লোকটা কি বুঝল কে জানে? সে বলল, ‘আচ্ছা, কন; আইয়েন ড্রইংরুমে।। . ড্রইংরূমে গিয়ে বসলেন মি. সিম্পসন । লোকটা সামনের দেয়ালের পাশে, দাঁড়াল। * ঘরটা জরীপ করলেন মি. সিম্পসন। নিখুঁত একটা ড্রইংরুম। আসবাব
পত্রগুলো দামী। দেয়ালে দুটো জলরংয়ের ছবি। যেখানে তিনি বসেছিলেন চিত্রকরের নামটা সেখান থেকে দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু অনুমান করলেন, ছবি দুটো বোধহয় মিসেস চৌধুরীর আঁকা হবে। উনি নাকি নামকরা আর্টিস্ট। একটা ল্যাণ্ডস্কেপ। নদী-তীরের একটা পরিচিত দৃশ্য। গুণ টেনে যাচ্ছে একটা নৌকা। আর একটার মাথা-মুণ্ড কিছুই বুঝতে পারলেন না। মনে হল কয়েকটা তক্তা যেন এলোমেলো ফেলে রাখা হয়েছে।”
লোকটা নীরবে দাঁড়িয়েছিল। চিত্র-পরিক্রমার অবসান ঘটিয়ে তার দিকে ‘নজর দিলেন মি. সিম্পসন।
‘তোমার নাম কি?
কদম রসুল। .. অনেকদিন ধরে আছ বোধহয় জানে আলম সাহেবের কাছে?’, ‘হ্যাঁ, স্যার। বছর পাঁচেক তো অইবই।
সাহেব তোমার লোক কেমন ছিল? … ‘খুব ভাল লোক, স্যার। এমন মানুষ হয় না। আমাকে, স্যার, খুব ভাল বাসতেন। :.
* ‘তোমার সাহেবকে যে খুন করেছে সে ধরা পড়ুক, তা নিশ্চয়ই তুমি চাও?”।
মাথা নাড়ল লোকটা। “আচ্ছ, ঘটনার দিন তোমার সাহেবের মন-মেজাজ কেমন ছিল বলতে পার?
যা, স্যার। খুব ভাল ছিল। সকাল বেলা বেগমসাহেব ঢাকা থাইকা ফোনে কি যেন বলছিলেন। সাহেব তাতে খুব খুশি ছিলেন।
‘বেগমসাহেব মানে মিসেস চৌধুরী ফোন করেছিলেন? অবাক হলেন মি. কুয়াশা-২০
. “
সিম্পসন।
হ, স্যার। ঠিক জান, তুমি?’ আমিই তো প্রথমে ফোন ধরছিলাম।’ ‘গলা চিনেছিলে? ‘ নিশ্চয়ই, স্যার। মেমসাহেবের গলা চিনুম না?’ ‘ভুল হয়নি তো?”
না, স্যার, ভুল অইতেই পারে না। বেশ, তারপর?
‘সায়েব খুব খুশি। নাস্তার সময় আমারে কইলেন, কদমা, তোরে দুই হাজার : ট্যাকা দিলে ব্যবসা করতে পারবি? আমি কইলাম, খুব পারুম। তারপর অফিসে গেলেন গা। রাইতে শুনলাম সায়েব নাই।ছলছল করে উঠল, কদম রসুলের চোখ : দুটো।
‘তোমার সাহেবের গাড়ি ছিল না?’
‘বিক্রি কইরা দিছেন কয়েকদিন আগে। : ‘চৌধুরী সাহেব খুন হবার আগে তার সাথে কোন অপরিচিত লোক দেখা। করতে এসেছিলেন?
. না, স্যার। বখত সায়েব ছাড়া আর কেউ আসেন না এই বাড়িতে। আগে মেমসায়েব থাকতে অনেক মেহমান, আইত। •
‘মেমসায়েব বাড়ি ছেড়ে কবে চলে গেছেন?
কার্তিক-অম্রাণ মাসে, স্যার।’
• খুব ঝগড়া হত না কি?’ . … না তো, স্যার। বছরের দুই-একদিন ঝগড়া অইত। সে তো, স্যার, সব বাড়িতেই অয়।
প্রশ্নটাতে কদম রসুল একটু ক্ষুব্ধ হয়েছে বলে মনে হল মি. সিম্পসনের। তিনি এ বিস্মিত হলেন। কিন্তু বিস্ময় চেপে বললেন, তাহলে মিসেস চৌধুরী তোমার সাহেবকে ছেড়ে চলে গেলেন কেন? | ‘তা তো, স্যার, বলতে পারব না। আমি ছুটিতে বাড়ি গেছিলাম। আইয়া। দেখি মেমসাব নাই। সারে কিছু জিগাইতে সাহস পাই নাই। তবে স্যার, দৈনিক রাতে টেলিফোনে মেমসাবের লগে সা’ব কথা কইতেন। মেমসাব মাঝে মাঝে চাটগাঁ আইতেন। কিন্তু বাসায় উঠতেন না, হোটেলে উঠতেন।’
কারণ কিছু জান?’… না, স্যার,আমতা আমতা করে বলল কদম রসুল।
মি. সিম্পসন তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন। তিনি বললেন, কিছুই
৭২
ভলিউম-৭।
জান না?’
লোকটা মাথা নেড়ে বলল, না, স্যার, জানি না।’ | চিন্তিত হলেন মি. সিম্পসন । এই লুকোচুরির অর্থ কি? হয়ত এর মধ্যে জানে আলমের হত্যা-রহস্য লুকিয়ে আছে। . তোমার সাহেবের লাশ দাফনের ব্যবস্থা কে করেছে? “ যা করার বখত সায়েবের লোকেরাই করছে! মেমসায়েব তো খালি কনছেন। কাইদা কাইদা চোখ-মুখ ফুলাইয়া ফেলছেন।’– মিসেস চৌধুরীর সঙ্গে কেউ দেখা করতে এসেছিলেন, কাল বা পরশু?” ..
‘পরশু কেউ আসে নাই, স্যার। কাল রাতে সুন্দরপনা এক সায়েব আইছিলেন। শহীদ খান না কি নাম যেন। তার সাথে আর এক সায়েব ছিল-কামাল সায়েব। … ভূ কুঞ্চিত করলেন মি. সিম্পসন । শহীদ তাহলে ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছে। আশ্চর্য, তিনি জানেন না! অবশ্য জানবার কথাও নয়, কিন্তু কোন সূত্রে এসেছে সে! মিসেস চৌধুরীর আহ্বানে, না কুয়াশার অনুরোধে, না নিজের আগ্রহে? এসে নিশ্চয়ই,
খোঁজ করেছে তার?
তিনি প্রশ্ন করলেন, “কি আলাপ হল, জান কিছু?
‘আমি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তেমন কিছু কানে আসে নাই। তবে সায়েবের খুনের ব্যাপারেই আলাপ অইছিল।’
‘মেমসাহেব কখন গেছেন?’
সকালের ট্রেনে। বললাম তো। কবে আসবেন কিছু বলেছেন? “দুই-চারদিনের মধ্যেই আইয়া পড়বেন।
“আচ্ছা, আমি এবার চলি। মিসেস চৌধুরী এলে তাঁকে জানিও যে আমি এসেছিলাম।’: : : ‘…
মাথা নাড়ল কদম রসুল।
,
পাঁচ
স্বামীর শোচনীয় মৃত্যুর খবর পেয়ে মিসেস রুখসানা শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিল। আকুল হয়ে কেঁদেছিল। কিন্তু মানসিক আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তার বরাবরই। প্রবল। তাই চরম শোকের মধ্যেও স্বামীর হত্যাকারীকে শাস্তিদানের কর্তব্যের কথা স্মরণ করে আত্মসংবরণ করেছে। আত্মস্থ হয়ে উঠেছে সে। . দাফনের পালা চুকতেই ঢাকায় টেলিফোনে যোগাযোগ করেছে শহীদ খানের সাথে। ভদ্রলোক তার পূর্ব-পরিচিত। এক চিত্রপ্রদর্শনীতে আলাপ হয়েছিল। তার একটা ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন ভদ্রলোক। কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিক্রি না কুয়াশা-২০
‘, ৭৩
।
।
E
গে কুয়াশা আমার পরনই।” অন্তত আমারকারী হয়ে
‘
‘
,
‘
করে বিনামূল্যেই দিয়েছিল সে তাকে ছবিটা, তাঁর নাম শুনে। সৌখিন গোয়েন্দা হিসাবে তার খ্যাতিটুকু সংবাদপত্র মারফৎ, বন্ধু-বান্ধব মারফৎ তার কানে। পৌঁছেছিল অনেক আগেই। বিনামূল্যে ছবি নিতে আপত্তি করেছিলেন ভদ্রলোক। বলেছিলেন, অন্তত খাটুনি আর খরচটা তো নেবেন? রাজি হয়নি সে। জবাবে বলেছিল, আপনার মত খ্যাতিমান লোক যে আমার ছবি কিনতে চেয়েছেন এই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। সেই সূত্রেই আলাপ। পরে নানা অনুষ্ঠানে সভা
সমিতিতেই দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। কুশল বিনিময় হয়েছে।
স্বামীর হত্যাকাণ্ডের পর শোকের প্রথম ধাক্কা কাটতেই মনে পড়ল তার শহীদ খানের কথা। ভদ্রলোক হয়ত তার স্বামী। হত্যাকারীকে–সে কুয়াশাই হোক, আর ।
যে-ই হোক, খুঁজে বের করতে তাকে সাহায্য করবেন। ‘ *, গাইড থেকে নম্বর বের করে রিং করেছিল সে ঢাকায় শহীদ খানের বাড়িতে। … প্রথমটা ইতস্তত করেছিল শহীদ খান। বলেছিল, ‘কুয়াশা যদি হত্যাকারী হয়ে থাকে তাহলে তাকে খুঁজে বের করার সাধ্য কারও নেই। অন্তত আমার তো নেই ই। তাছাড়া হয়ত জানেন না, কুয়াশা আমার পরমাত্মীয়।
, “কি রকম! অবাক হয়েছিল রুখসানা।.
আমার স্ত্রীর একমাত্র ভ্রাতা। ‘ওহ, আমার জানা ছিল না। শুধু এই জন্যেই কি আপনার আপত্তি?
যদি বলি তাই? … তাহলে আমি বলব, আপনার সখের গোয়েন্দাগিরির কোনই অর্থ হয় না। আমি নিজে জানতাম যারা গোয়েন্দা, সত্য নির্ণয়ই তাদের কাছে সবচেয়ে বড় কথা। আত্মীয়তা বা অন্য কোন বিবেচনা সেখানে ঠাঁই পায় না। কিছু মনে করবেন
। আমার কথাগুলো বোধহয় রূঢ় শোনাচ্ছে। কিন্তু কথাটা সত্যি কিনা আপনি বলুন?
: হকচকিয়ে গিয়েছিল শহীদ খান। এই প্রশ্নের জবাব দেয়নি। শুধু বলেছিল, ‘বেশ, আপনার কেস আমি হাতে নিলাম। আজ রাতেই আমি চট্টগ্রাম পৌঁছব । প্লেনের টিকেট না পেলে উষ্ণায় যাব।.
সেই দিনই সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম পৌঁছল শহীদ। সঙ্গে কামাল। শহীদ খান পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল, আমার বন্ধু ও সহকারী।অভিবাদন বিনিময়ের পরে শহীদ খান। প্রশ্ন করল, তারপর, মিসেস চৌধুরী, বলুন কিভাবে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি? আমি একবার..যখন আপনার কেস হাতে নিয়েছি, তখন যথাসাধ্য করবই। তাতে কোন ত্রুটি হবে না।
‘সে বিশ্বাস আমার আছে। কিন্তু আমার কথায় আপনি নিশ্চয়ই রাগ করেননি?’
‘মোটেই না। আপনি বরং আমাকে আমার কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ৭৪
‘ভলিউম-৭
Tট
।
“
.
.
প্লেনের টিকেট
নাম হাতে নিলাম। আসবাব দেয়নি। শুধু বলেছিল
কামাল প্রশ্ন
সংঘর্ষ ঘটার তার ও
তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। | আর লজ্জা দেবেন না।’
বলুন, এবারে তাহলে?
কয়েক মুহূর্ত নীরব রইল মিসেস রুখসানা। মনে মনে গুছিয়ে নিল তার বক্তব্যটা। তারপর বলল, ‘শুরু করার আগে একটা প্রশ্ন করব, শহীদ সাহেব?’..
বলুন।” ‘আপনি জানেন কি, কুয়াশা এখন কোথায়?’
না। আবার নীরব হয়ে গেল রুখসানা। সিগারেট ধরাল শহীদ ও কামাল।
রুখসানা মুখ খুলল, ‘প্রথমেই বলে নিই যে, কুয়াশাই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে বলে ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলেও আদতে সে এর সা”ে জড়িত নেই বলেই আমার বিশ্বাস।
: আপনার এই ধারণার হেতু?’ কামাল প্রশ্ন করল।
‘প্রথমত, কুয়াশার সাথে তার যোগাযোগ বা সংঘর্ষ ঘটার কোন সঙ্গত কারণ নেই। দ্বিতীয়ত, থাকলে তা আমি জানতে পারতাম। কারণ, তার প্রত্যেকটা ব্যাপার, প্রত্যেকটা সমস্যা আমার জানা আছে। এমন কোন বিষয় নেই, যা সে আমার কাছে গোপন রেখেছিল।…
{ কিন্তু আমি শুনেছি, আপনাদের মানে আপনার স্বামীর সাথে আপনার বনিবনা, ছিল না, বলল শহীদ খান।
* আপনাদের শোনার দোষ দিই না। কিন্তু আমাদের মানে আমার আর আমার স্বামীর নিরাপত্তার জন্যে ঐ ধরনের একটা ধারণা সৃষ্টির চৈষ্টা করা হয়েছিল। আসল ব্যাপারটা জান শুধু আমাদের চাকর কদম রসুল। তবে যে বিশেষ ব্যক্তিটার মনে ঐ ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করছিলাম, তার ক্ষেত্রেই আমরা ঐ ধারণা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। ওর হত্যাকাণ্ড তারই প্রমাণ। . মিসেস চৌধুরী। ব্যাপারটা আর একটু ভোলাসা করে বলুন। কেমন যেন, জটিল করে তুলছেন;’ বলল কামাল। . সেটা বোধহয় আমার মানসিক অবস্থার জন্যে। আমি কথাগুলো ঠিক গুছিয়ে বলতে পারছি না। আমার স্বামী এক ভয়ঙ্কর চরিত্রের লোকের পাল্লায় পড়েছিলেন। লোকটা একটা আস্ত শয়তান। দুনিয়ায় এমন অপরাধ নেই যা সে করেনি, বা করতে পারে না। জালিয়াতি ও চোরাচালানী হচ্ছে তার প্রধান পেশা। বাইরে অবশ্য অন্য ব্যবসায়ের একটা ছদ্ম-খোলস আছে। কিন্তু সেটা লোক দেখানো। এদিকে অবশ্য সে একটা গণ্যমান্য কেউকেটা লোক।
.’লোকটাকে আপনি নিজে চেনেন?”, কুয়াশা-২০
=
.
‘নিশ্চয়ই চিনি। নামটা পরে বলছি। সেই শয়তানটা ধীরে ধীরে আমার স্বামীকে গ্রাস করে ফেলেছিল। প্রলোভন দেখিয়ে তাকে সোনা-চোরাচালানের ব্যবসায়ে ঢুকিয়েছিল। কিন্তু পরে তার জন্যে অনুশোচনা হয়েছিল ওঁর মনে। উনি শয়তানটার জাল কেটে বাইরে আসবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শয়তানের সাথে শয়তানিতে উনি পারবেন কেন? আমার স্বামী বিদোহ করতেই শয়তানটা তাঁকে বেকায়দায় ফেলে দিল। গোপনে পি, আই. এ. কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিল যে, উনি সোনা-চোরাচালান করছেন। ধরাও পড়লেন কাস্টমসের হাতে বমাল। অথচ উনি, হলফ করে আমাকে বললেন, সেদিন ওঁর ব্যাগের মধ্যে সোনার বার কি করে এল তা উনি জানেন না। পি. আই. এ. থেকে ওঁর চাকরি গেল। শয়তানটাই আবার টাকা পয়সা খরচ করে আর ব্যক্তিগত প্রভাব খাঁটিয়ে ওঁকে নিশ্চিত কারাবাসের কবল থেকে বাঁচাল এবং ওঁকে তার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল করে তুলল। নির্বি সাপের মত ওঁকে খেলাতে লাগল শয়তানটা। বস্তুত আমার স্বামী তখন শয়তানটার ‘কটা যন্ত্রে পরিণত হয়েছিলেন।
* একটু থামল রুখসানা। তারপর আবার আরম্ভ করল, এসব ঘটনা ঘটেছে আমার বিয়ের আগে। ওঁর পি. আই, এর চাকরি চলে যাবার পর আমাদের বিয়ে হয়। বিয়েটাও ঠিক করে ঐ শয়তানটাই। এক্ষেত্রেও তার একটা ভয়ঙ্কর উদ্দেশ্য ছিল। …। | ‘চিত্রকর হিসাবে তখন আমার মোটামুটি ভাল নাম হয়েছে। এই সময় বিয়ের প্রস্তাব এল। শয়তানটার উদ্দেশ্য ছিল, আমাকে দিয়ে এটা-সেটা জাল করিয়ে নেবে। বিয়ের কয়েকদিন পরেই লোকটা এই ধরনের একটা প্রস্তাব নিয়ে আসে। আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। আমাকে নানারকম প্রলোভন দেখায়। তাতেও আমাকে দিয়ে সে তার কাজ করাতে পারেনি। শেষে সে এই বলে হুমকি দেয় যে, আমি তার কাজ করতে রাজি না হলে আমার স্বামীকে সে পুলিসের হাতে তুলে দেবে। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে তার হাতে যে-সব প্রমাণ আছে তাতে করে ওঁকে : অনায়াসে কয়েক বছরের জেল খাটানো যেতে পারে। ১ : ইতিমধ্যে আমার স্বামীর কাছ থেকে সমস্তটা জেনে নিয়েছিলুম। বলতে গেলে, উনি নিজেই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমাকে বলেছিলেন’। সহ্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন উনি। আর কিছুদিন গেলে হয়ত নিজের অপরাধের বোঝার ভার। সইতে না পেরে আত্মহত্যাই করে বসতেন উনি। সুতরা আমাকেই পরিস্থিতির মোকাবেলায় নামতে হল। অনেক চিন্তা-ভাবনা করে দু’জনের মধ্যে বনিবনা নেই এই ধারণা সৃষ্টি করার জন্যে দু’জনে আলাদা হয়ে গেলাম। আমি চলে গেলাম ঢাকায়, উনি রইলেন, এখানে। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হল দুটো। প্রথমত, সেই শয়তানটা সরাসরি আমাকে হাতের মুঠোর মধ্যে পাবে না এবং আমার উপর চাপ সৃষ্টির জন্যে ওঁর উপর অত্যাচার করবে না। উনি বলতে পারবেন যে ‘আমার উপর
৭৬
ভলিউম-৭
এই ধানি রইলোমাকে হা
তার কোন কর্তৃত্ব নেই। দ্বিতীয়ত, ঢাকায় বসে আমি ওঁর আর আমার পাকিস্তান ছেড়ে চিরতরে কানাডা চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করছিলুম। আমরা চেয়েছিলুম, ঐ শয়তানের ছায়া থেকে চিরতরে দূরে সরে গিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে। সব ব্যবস্থাই হয়ে গিয়েছিল। পাসপোর্টও পেয়ে গিয়েছিলুম। কিন্তু শেষ দিকে বোধহয় শয়তানটা জানতে পেরেছিল। তাই ওঁকে আর বাঁচাতে পারলাম না। | আঁচলে মুখ ঢাকল রুখসানা। এতক্ষণ ধরে প্রচণ্ড মানসিক শক্তি দিয়ে সে কান্না চেপে রেখেছিল। তার কথা শেষ হবার পরই সে শক্তি নিঃশেষিত হওয়ায় প্রবল কান্নায় ভেঙে পড়ল। কান্নার দমকে তার দেহটা বারবার কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগল। . . কামাল ও শহীদ চুপ করে বসে রইল। কিছুক্ষণ পরে উঠে দাঁড়াল রুখসানা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, ‘বসুন, আমি আসছি।’ | শহীদ জিজ্ঞেস করল, কি বুঝলি?”
‘ কামাল প্রশ্নটার অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে না পেরে বলল, ‘কি বুঝলাম মানে? কোনটার কথা বলছিস? অনেক কিছুই তো বুঝলাম, আবার অনেক কিছুই বুঝলাম
।’ | ‘যেমন? জানতে চাইল শহীদ।
বুঝলাম যে কুয়াশা এই ঘটনার সাথে জড়িত নেই, আর বুঝলাম না কালপ্রিটটা কে।
‘ঘোড়ার ডিম বুঝলি। কুয়াশাই কালপ্রিট।’ ‘তুই কচু বুঝেছিস। ভারি বুদ্ধিমান তুই! ..
বুদ্ধিমানই তো। তোর মত তো গোবর নেই আমার মাথায়।
‘তোর মাথার গোবর সব খুঁটে হয়ে গেছে। মহয়া বৌদিকে বলব হিটারটা বিক্রি করে দিতে।
‘শোন, মেলা ভ্যাজর ভ্যাচর করিস নে। এখন আমাদের আসল কাজটা কি হবে, জানিস?
‘এখনও জানি না।
‘জেনে নে তাহলে। আসল কাজটা হবে হৈ চৈ করে কুয়াশার খোঁজ আর গোপনে আসল হত্যাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ব্যবস্থা আবার কি? মিসেস চৌধুরী তো জানেনই কে এই হত্যাকাণ্ড করেছে। সোজা গ্রেফতার করলেই হয়।’ …….।
• ঐ জন্যেই তো বলি তোর মাথায় গোবর ছাড়া আর কিছুই নেই। ব্যাপারটা এত সহজ হলে উনি চট্টগ্রাম আসবার জন্য এমন করে অনুরোধ করতেন না। খুন কে করেছে তা জানা থাকলেও তাকে ফাঁসাবার মত কোন প্রমাণ নেই। তাছাড়া ধুনী এমন গণ্যমান্য ব্যক্তি যে, কেউ তাকে সন্দেহই করবে না। মিসেস চৌধুরী কুয়াশা-২০
| ৭৭
এ ব্যাপারটা তাহাতে তুলে দিই। প্রয়োজনীয় ও
চমকাণী।
চান যে, আমরা যেন আসল খুনীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ করি রে তারপর তাকে পুলিসের হাতে তুলে দিই।’ :
ই, ব্যাপারটা তাহলে এই?”
তাছাড়া আর কি হবে? অন্যথায় এই কথাগুলো উনি আমাদের না বলে পুলিসের কানে তুলতেন। কিন্তু তাতে লাভ হবে না বলেই ওঁর ধারণা। * * রুখসানা ফিরে এল। ওকে আগের মতই শান্ত বলে মনে হচ্ছে আবার। চোখে-মুখে পানি দিয়ে এসেছে। বলল, মাফ করবেন। আমি, আমি।’
* না, ওতে কি? আপনার মানসিক অবস্থা আমরা বুঝতেই পারছি। এবারে বন সেই নামটা, যাকে আপনি হত্যাকারী বলে সন্দেহ করেন,’কামাল বলল।
সন্দেহ করি না। আমি এব্যাপারে নিশ্চিত। কিন্তু আমি অসহায় স্ত্রীলোক। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা সাধ্যাতীত। তাছাড়া লোকটা ভয়ানক ধূর্ত । খুন শুধু এই একটাই নয়, আগেও অনেক করেছে। অথচ প্রমাণ করা তো দূরের কথা, কেউ তাকে সন্দেহই করতে পারেনি।’…।’
‘কিন্তু লোকটা কে?’ কামাল অস্থির হয়ে প্রশ্ন করল।
‘বখত পোলট্রি ফার্মের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বেদার বখত এম. এন. এ., টি. ‘ কে।কেটে কেটে উচ্চারণ করল রুখসানা।
কামাল ও শহীদ দুজনেই চমকাল। । ‘চকে উঠলেন যে?’ প্রশ্ন করল রুখসানা। বিশ্বাস হচ্ছে না?
জবাব দিল কামাল, সত্যি বিশ্বাস হতে চায় না। ঐ রকম একজন গণ্যমান্য লোক দিনের পর দিন সমাজবিরোধী কাজ করে বেড়াচ্ছে সে কথা সহজে বিশ্বাস হতে চায় না। কিন্তু তার জন্য চমকাইনি। অন্য একটা কারণ আছে। আপনি টেলিফোন করার কিছুক্ষণ পর বখত সাহেবও কুয়াশাকে গ্রেফতারে সাহায্য করার আবেদন জানিয়ে ফোন করেছিলেন শহীদকে।
“তাই নাকি?’ ম্লান মুখে বলল, “আমার কথা বলেছেন নাকি?”
না। তা বলব কেন? আপনি সে ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকুন,শহীদ বলল। রাজি হয়েছেন?’ ‘ না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে রাজি হলেই ভাল হত।
আশা করি এবাসে আমাকে সাহায্য করতে আপনার আপত্তি নেই? :: : হাসল শহীদ, আপত্তি আগেও ছিল না। কুয়াশাকে আমি জানি। এসব ইতরামির সাথে সে কখনোই জড়িত থাকে না। তবুও সন্দেহ যে ছিল না এমন নয়। কিন্তু বেদার বখত যত চালাকই হোক কুয়াশার নামটা ব্যবহার করে ভুল করেছে সে। জানি না, কুয়াশা এখন কোথায়। সবত পাকিস্তানে সে নেই। কিন্তু
• যদি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই ঘটনাটা সে শুনেছে। সুতরাং বখত আমাদের হাত থেকে ফস্কে গেলেও কুয়াশার হাত থেকে রক্ষা পাবে না। তার হাতেই শ.. ৭৮’..
ভলিউম-৭
বে?
• •
:
‘1’,
শস্তি পেতে হবে তাকে। ভাল কথা মিসেস চৌধুরী, শুনেছিলাম মি. সিম্পসন নাকি এই কোটার দায়িত্ব নিচ্ছেন?’ …। . হ্যাঁ। তার উপরই দায়িত্ব পড়েছে, কিন্তু শুনেছি উনি জরুরী কাজে কক্সবাজার গিয়েছেন। আজ অথবা আগামীকাল এসে পড়বেন। * ‘উনি নিশ্চয়ই আপনার সাথে দেখা করতে আসবেন। কিন্তু তার সাথে আপনার দেখা হোক এটা আমি চাই না। তাহলে, আপনি তাঁকে সমস্তটা ব্যাপার বলে ফেলেছেন এই ধারণা করে বখত আরও সাবধান হয়ে যাবে। সেটা আমাদের কাম্য নয়।’
“তাহলে? নিজেকে তো আর লুকিয়ে রাখতে পারব না।
লুকোতেই হবে। আর লুকোতে হবে সেই শয়তানটার আড্ডায় গিয়ে। ‘অর্থাৎ?’,.: “মিসেস চৌধুরী, আমি ইতিমধ্যেই কর্মপন্থা ঠিক করে ফেলেছি। আপনি কাল সকালেই চলে যাবেন বখতের আস্তানায়, তার পোলট্রি ফামে। তার সাথে যেভাবেই হোক বন্ধুত্ব সৃষ্টি করতে হবে আপনাকে। প্রয়োজন হলে তার হয়ে জালিয়াতি করতেও রাজি হতে হবে আপনাকে। অবশ্য আপনাকে একবার হাতের মুঠোয় পেলে সে বন্দী করেই রাখবে। আর বেরোতে দেবে না। পরে আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করব। ওখানে আপনাকেই আসল কাজটা সারতে হবে। সে যে জালিয়াতিতে জড়িত আছে, সোনা-চোরাচালানের সাথে জড়িত আছে, তার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে।’
‘কিন্তু, কিন্তু। যদি আমার উপর অত্যাচার করে?’ ম্লান মুখে বলল রুখসানা।; অতটা সাহস সে পাবে না। তাছাড়া আপনাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতেই সে বেশি আগ্রহী হবে। তবে খুব সাবধান। এ বারে রাজি হবেন না। রয়ে-সয়ে পাকা অভিনেত্রীর মত এগোতে হবে। পারবেন?
‘আমি ঠিক বুঝতে পারছিনে। মনে হয় বড্ড বেশি ঝুঁকি নেওয়ার কথা
বলছেন।’
. ঝকি, একটু নিতে হবে বৈকি? আমি নিজে যদি আটিস্ট হতাম তাহলে যেভাবেই হোক আমিই বখতের দলে ভিড়ে যেতাম। সেটা সম্ভব নয়। অথচ তার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে তার ফার্মের ভিতর থেকেই। সুতরাং আপনাকেই যেতে হবে।
* ‘বেশ, তাই হবে। কবে যেতে বলেন?’অবশেষে মনস্থির করল রুখসানা। . কাল সকালেই। আপনার চাকরকে বলবেন, আপনি ঢাকা যাচ্ছেন। দু’-এক দিনের মধ্যেই ফিরবেন।
‘ শহীদ ব্যাগটা খুলে তার ভিতর থেকে একটা প্যাকেট বের করে রুখসানার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এর মধ্যে একটা ছোট যন্ত্র আছে। সেটা দিয়ে অনায়াসে কুয়াশা-২০
৭৯
যে কোন তালা খোলা যায়। এটা সঙ্গে রাখবেন।
‘কিন্তু আমি যে ব্যবহার করতে জানি না। . শিখতে হবে না। দেখলেই বুঝতে পারবেন,’হাসল শহীদ। _.. বাইরে খুব কাছে একটা অস্পষ্ট আওয়াজ কানে যেতেই কামাল ও শহীদ পরস্পরের দিকে তাকাল। পর মুহূর্তেই শহীদ উঠে দাঁড়াল। বেরিয়ে গেল সে চোখের নিমেষে। . নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে রইল কামাল ও রুখসানা। কয়েক সেকেও পরে ধস্তা ধস্তির একটা আওয়াজ শোনা গেল। কামাল আর দেরি করল না। সে-ও বেরিয়ে গেল। রুখসানার মুখটা পাংশু বর্ণ ধারণ করেছে। তার বুকের ভিতরটা কাঁপছে।
‘ একটু পরেই ফিরে এল কামাল ও শহীদ। দুজন মিলে একটা লোককে ধরে এনেছে। লোকটার পরনে স্যুট, শরীরের তুলনায় দ্বিগুণ ঢোলা। টাইয়ের গোড়াটা শহীদের মুঠোয়। উঃ আঃ, করছে কালো লম্বা লোকটা। বেঢপ মুখটা কেমন বোকা-বোকা। ‘ ‘ রূমের মধ্যে টেনে এনে লোকটাকে ছেড়ে দিল ওরা দু’জন। দরজার মাঝখানে দাঁড়িয়ে রইল কামাল। লোকটা ছাড়া পেয়ে প্রথমে তার টাইয়ের ফাসটা ঢিলে করল। তারপর বোকার মত বারবার ওদের দিকে তাকাতে লাগল। তারপর ধীরে সুস্থে বসে পড়ল একটা সোফায়, . শহীদ বলল, ‘বাছাধন, কে পাঠিয়েছে তোমাকে?’ * ড্যাট ইজ ব্যাড। আমাকে টুমি বলবেন না। টাহলে আমি জবাব ডেবে না। ডু ইউ নো হ আই অ্যাম? মি. স্যানন ডি, কষ্টা।’…
, উহ, একেবারে রাণী এলিজাবেথের ভাইপো। পাঠিয়েছে কে, তোমাকে?’ ধমক দিল শহীদ। ‘
‘আবার তুমি বলছেন?’ পাল্টা ধমক দিল ডি,কা। টোমরা সবাই উশ্য আছ। মি. চোরীকে মারডার করেই। মাগার আমি এসেছি টু সেভ মিসেস চোরী। আর টোমরা আমাকে মারছ! আমার বস জানতে পারলে টোমাডের খুন করবে।
; তা, হুজুর, আপনার বস্ কে?’ ঠাই করল কামাল।
‘সে কঠা বলটে নিষেট আছে। বাট হি ইজ এ, এটম্যান। টোমরা সব মার্ডারার। টোমাদের বলব না। … ‘বেদার বখত? ‘ | হু ইজ বেড়ার বখঠ?’
“ওমা তাও জান না বুঝি। দুটো পাঞ্চ খেলে ঠিকই চিনতে পারবে,কামাল বলল। : : : : :
‘পাঞ্চ আমিও ডিটে জানি। কাম অন মাই বয়, আস্তিন গোটাবার চেষ্টা করল। সে। এমন একটা গাট্টা মারব, হা-।।
৮০
ভলিউম-৭
.: শহীদ বিরক্ত হচ্ছিল, সে বলল, এই যে সোনা-মানিক, বল তো লক্ষ্মীটি, কে তোমাকে এখানে পাঠিয়েছে?’
“না, সেটা কখনোই বলা যাবে না। নেভার | আমি এসেছি মিসেস চোরীকে সেভ করতে।’
‘পারমিশনটা দিল কে?’ “বলব না।’ ‘কামাল, ওর পকেটে দেখ তো কি আছে?
দরজা ছেড়ে কামাল এগিয়ে গেল কস্টার দিকে। ডিগবাজি খেয়ে সোফার পেছন দিকে পড়ে গেল ডি কস্টা। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “খবরডার।। *** কামাল বলল, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকুন, কস্টা সাহেব। না হলে খুব খারাপ
হবে।..
‘আচ্ছা,বৈশ। কিনটু কিছু নিটে পারবে না, বলে ডিলুম।’ আত্মসমর্পণ করল ডি. কস্টা।
কোটের দু’পকেট থেকে দুটো বিয়ারের বোতল বেরোল। একটা পুরানো মরচে ধরা ছুরি। গুলিশূন্য একটা পিস্তল। আর গোটা বিশেক টাকা বের করল কামাল। সমস্ত দেহ তল্লাশি করে আর কিছু পাওয়া গেল না ।
তল্লাশি সমাপ্ত করে কামাল বোকার মত শহীদের দিকে তাকাল । ভাবটা.এই, আচ্ছা ঝামেলায় পড়া গেছে। এই পাড় মাতালটা এসে জুটল কোত্থেকে?
* আর ইউ স্যাটিসফায়েড?’বোতল দুটো দ্রুত পকেটে পুরতে পুরতে বলল ডি, কস্টা। … বিরক্ত বিব্রত শহীদ ধমকের সুরে বলল, ‘নো। কে তোমাকে পাঠিয়েছে একথা
বললে পিটতে পিটতে লাশ বানিয়ে ফেলব।’
• ৬ ক্রেজী । ইউ পিপল আর রিয়েলী ক্রেজী। বললুম টো, মিসেস চোরীর ঘাটে কোন খটি না হয় টার জন্য আমি টাকে পাহারা ডিটে এসেছি।
‘কে পাঠিয়েছে?’..
‘কেউ পাঠায়নি। আমার বস অন্য দুজনকে পাঠিয়ে ডিল। আমি এটো করে বললুম, আমি খুব ভাল পাহারা ডিটে পারি। কিনটু বস রাজি হল না। টাই পালিয়ে এলুম ওডের দুজনের পিছনে পিছনে। বসকে ডেখাতে চাই আমিও হিরো হতে
‘ওরা দু’জন কোথায়?
এই বাড়ির চারদিকে ঘোরা-ফেরা করছে।’ ‘ওদেরকে কেন পাঠিয়েছে; তোমার বস্?
‘চোরী সাহেব টো মারডার হয়েছেন। আমার বস বললেন, ‘মিসেস চোরীর উপর অ্যাটাক হটে পারে। টাই ওডের পাঠিয়েছেন। . ৬-কুয়াশা-২০
| ‘ওদের নাম জান?”
‘হাঃ হাঃ। নাম বললে খুব সুবিঢ় হয়, না? কিন্তু সুবিঢ়া হবে না। নাম বললেও ওডের চিনটে পারবে না। আর ওরা দুজনই ইয়া জোয়ান। স্ট্রং অ্যাও স্টাউট। কারাট ভি জানে, জুজুৎসু ভি জানে। পাঞ্চ ভি জানে।
‘তাহলে আর নাম বলতে ক্ষতি কি?
‘একজনের নাম মান্নান, ‘আর একজনের নাম কলিম । জাস্ট গো অ্যাও সি ইফ ইউ ক্যান চ্যালেঞ্জ ডেম। বাবা, এটো ডি, কস্টা নয়। একেবারে খুন হয়ে যাবে।
স্তম্ভিত হয়ে গেল শহীদ ও কামাল। কলিম ও মান্নান তো কুয়াশার সহকারী। তাহলে রঙ্গমঞ্চে এর মধ্যেই কুয়াশার আবির্ভাব ঘটেছে।
কামাল ও শহীদ দৃষ্টি বিনিময় করল।’’ ‘ রুখসানা, এতক্ষণ নীরবে ওদের কথাবার্তা শুনছিল শহীদ সাহেব, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনে।
পরে আপনাকে বলছি।.
ডি কস্টার দিকে ফিরে শহীদ বলল, ‘বেশ, এবারে তুমি ফিরে যাও। তোমার ওই সামগ্রীগুলো পকেটে তুলে ফেল আর তোমার বসকে বলবে, শহীদ সাহেব ও, সমাল, সাহেব আপনাকে সালাম দিয়েছেন। আর, বাছা, তুমি আর কষ্ট করে পাহারা দিতে এস না। কলিম ও মান্নানই যথেষ্ট।
* মুক্তি পেয়ে ডি কস্টা খুশি হয়ে বলল, একশ’ বার পাহারা ডেৰ। মিসেস চোরীকে সেভ করটে হবে. টো?’রুখসানাকে বাউ করে বিদায় নিল ডি. কস্টা।
জবাবে। খুন্দার বখতেরডের মত।
‘তারপর রুখসানা, খবর কি? আছ কেমন? | কুদ্ধদৃষ্টিতে কুখসানা চৌধুরী চেয়ে রইল বেদার বখতের দিকে, এই প্রশ্নের জবাবে। ঘৃণা ও ক্রোধে তার অনিন্দ্যসুন্দর মুখটা বিকৃত হয়েছে। আর ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে বেদার বখতের মুখটাও। সামনের সানা-বাঁধানো দাঁত দুটো খুলে ফেলায় । তাকে দন্তহীন বুড়ো নেকড়ের মত হিংস্র দেখাচ্ছে।
…’ কি, জবাব দিল না যে? ধূর্ত শেয়ালের মত হাসল যেদার বখত।. .., মিসেস রুখসানা চৌধুরীর বয়স হবে তিরিশ বছরের মত। একহারা দীর্ঘ দেহ। রংটা টকটকে ফর্সা। বড় বড় দুটো চোখ। মুখটা লম্বাটে। ঠোঁট দুটো . সামান্য চাপা। কোঁকড়া চুলগুলো তেলের অভাবে রুক্ষ। পরনে পাড়হীন সাদা সিল্কের শাড়ি।
• এ প্রশ্নেরও জবাব দিল না রুখসানা। * দীর খা! বেদার বখত হাঁক ছাড়লেন।
ভলিউম-৭
1
t
“ ভয়ঙ্কর চেহারার বিশালকায় একটা লোক এসে দাঁড়াল। ভয়ে শিউরে উঠল রুখসানা তাকে দেখে । লোকটা যেন কুঁতে চোখে তাকে গিলে খাচ্ছে।
বেদার বখত বললেন, ‘কথার জবাব না দিলে দবীর খার হাতে তোমাকে ছেড়ে দেব । খ্যাক খ্যাক করে হাসলেন তিনি। ইশারা করতেই লোকটা চলে গেল। . হিংস্রতর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রুখসানা। | ‘স্বামী-স্ত্রীতে মিলে আমার চোখে ধূলো দেবার চেষ্টা করছিলে। দেশ ত্যাগ করার মতলব করছিলে। ব্যাংকের সব টাকা তুলে বিদেশে পাঠিয়েছ। তুমি জান, জানে আলমকে কেন তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম। শুধুমাত্র আমার নিজের জন্য। অথচ তোমাকে দিয়ে আমার কাজ হয়নি। আমার লক্ষ লক্ষ টাকা আয়ের পথ তুমি বন্ধ করে দিয়েছ।’ কথাগুলো চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন বখত সাহেব। . ‘সেটা কোন অন্যায় করিনি আমি। কঠোর স্বরে বলল রুখসানা। ক্রোধে তার নাকের বাঁশিটা ফুলে উঠেছে। ঠোঁট দুটো কাঁপছে।
‘অন্যায়? ন্যায়-অন্যায় শেখাচ্ছ আমাকে? পি.আই.এ. থেকে যখন জানে আলমের চাকরি চলে গিয়েছিল তখন তাকে টাকা পয়সা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিল কে? ব্যবসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল কে? নিশ্চিত কারাবাস থেকেই বা তাকে বাঁচিয়েছিল কে? এই বেদার বখত।দাঁত খিঁচিয়ে বললেন বখত সাহেব।
কিন্তু ওঁর চাকরি চলে যাবার জন্যই বা দায়ী কে? কোন শয়তানের পাল্লায় পড়ে ওঁর চাকরি চলে গিয়েছিল? কোন আশায় তাকে আপনি ব্যবসায়ের টাকা দিয়েছিলেন? আর তার কতগুণ আপনি তার বদৌলতে আয় করেছেন? সে সব কথা ভুলে যাবেন না। . . . . ‘ ‘ ‘ ‘ . . . * ভুলে আমি কিছুই যাই না। আর যাই না বলেই বেঈমানীর সাজা হিসেবে তাকে চরম শাস্তি দিয়েছি।’
| ‘ও, তাহলে কুয়াশা সেজে আপনিই আমার স্বামীকে খুন করেছেন। * হাঃ হাঃ করে হাসলেন বখত সাহেব, অর্থাৎ তোমার সন্দেহ ছিল? কিন্তু তোমার তো সন্দেহ থাকবার কথা নয়। ও নামটা তো নেওয়া হয়েছে শুধু পুলিসকে বোকা বানাবার জন্যে।’: “… ..’’’
‘ ‘পুলিসকে অতটা বোকা মনে না করলেই ভাল করতেন। তাছাড়া কুয়াশা। সে যখন জানতে পারবে?
জানতে পারবে মানে? জানবে কি করে? সে তো অসম্ভব। ‘আমি যদি বলে দিই।
আবার উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠলেন বখত সাহেব, তুমি বলবো তোমার মারণ, কাঠি আমার কাছে আছে না? আমি ধরা পড়লে তুমি নিস্তার পাবে মনে করেছ? * নাইবা পেলাম। বও জোর জেল হবে কয়েক বছরের। কুয়াশা-২০
৮৩
“তাতে ইজ্জত বাড়বে না। ‘কিন্তু অনিচ্ছাকৃত অপরাধের শাস্তি পাব। | ‘কিন্তু সে সুযোগ তুমি পাচ্ছ কোথায়? একবার বাঘের গর্তে যে ঢুকেছে সে কখনও তার কবল থেকে রক্ষা পেতে পারে না। আমার এই ফার্মের বাইরে জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে যাবার সাধ্য তোমার নেই। আর তোমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবার সাধ্যও কারও নেই। বেশি বাড়াবাড়ি করলে খুন করে বঙ্গোপসাগরের পানিতে ফেলে দেব। তাইবা কেন করব? একটা চিতাবাঘ পুষেছি, তার খাঁচায় ছেড়ে দেব। নিদেনপক্ষে দবীর খার হাতে ছেড়ে দেব। আর আমার কথা যদি শোন তাহলে তোমার ভালই হবে। কি রাজি?”,
কি কথা?
তুমি তো জানই। : মানে, নোট জাল করতে হবে?’ … :
শুধু নোট জাধের জন্য এত কষ্ট করতে যাব কেন? অনেক কিছু জাল করবার আছে। যেমন-ডিফেন্স বও, প্রাইজ বন্ড, সেভিংস সার্টিফিকেট, স্বাক্ষর, অনেক অনেক কিছু। যখন যেটা দরকার হবে। রাজি?”
বেশ, তাহলে তোমাকে প্রথম রাউণ্ডে দবীর আঁর হাতেই তুলে দেব। দবীর। ‘দবীর খা।
– না না। ওকে ডাকবেন না। ওকে ডাকবেন না। ওকে দেখলেই আমার ভয়
করে। প্লীজ। করুণ আবেদন ঝরে পড়ল রুখসানার কঠে।
• আকাশ ফাটিয়ে আবার হাসলেন বখত সাহেব, অনেকক্ষণ একটানা হাসি। দবীর খাঁ এসে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে ছিল। হাতের ইশারায় তাকে চলে যেতে বললেন। নোকটা চলে গেল। ‘: হাসি থামিয়ে বললেন, তাহলে রাজি? তাই না? দেখ আমি কাজের মানুষ। অনেকক্ষণ সময় তোমাকে দিয়েছি। আর নয়। মস্করা করার সময় আমার নেই। রাজি হলে বলে ফেল। ঘড়ি দেখে বললেন, ‘এক মিনিট সময় দিলাম সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে।
…বেশ, আমি রাজি।
* এই তো লক্ষ্মী মেয়ের মত কথা। এখানে তোমার থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে রেখেছি। ঘরটা অবশ্য আণ্ডার-গ্রাউণ্ডে। তবে আলো হাওয়ার কমতি হবে না। একেবারে আধুনিক ব্যবস্থা। কিন্তু ঐ দেখ, পালাবার চেষ্টা কর না। . অবশ্য যখন খুশি উপরে আসতে পারবে, কিন্তু ঐ পর্যন্তই।
। কিন্তু একবার আমাকে বাসায় যেতে হবে। ..:), { না, সেটা সম্ভব নয়। কিছু দরকার হলে বল। তোমার জন্য আলাদা চাকর
৮৪
ভলিউম-৭
*
*
*
থাকবে। সব ব্যবস্থা করে দেবে সে।
. আমার নিজের একবার যাওয়া দরকার।’ . তা হয় না। বিশ্বস্ততার নির্ভুল প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত এই ফার্ম-এরিয়ার বাইরে তুমি যেতে পারবে না। দবীর খাঁ, হাসমত আলীকো বোলও।
বাইরে কণ্ঠ শোনা গেল, ‘জ্বি, সরকার।’
রুখসানা মনে মনে হাসল। যাক, অভিনয়টা ভালই হয়েছে। শহীদ খানের। নির্দেশ অনুযায়ী প্রথম পালাটা সাফল্যের সাথেই সে পাড়ি দিয়েছে। অবশ্য শেষ; রক্ষা করতে পারলেই হয়।
সাত।
::
..।।
ব, একটা চান্স আমাকে ডিটেই হবে। আমি যে রিয়েলি হিরো একটা চান্স পেলেই প্রমাণ করে ডেব। চোরীকে যারা হট্যা করেছে একবার চান্স ডিলেই ওডের খটম করে ডেব আমি।’
* নিশ্চয়ই, মি. ডি. কস্টা। আপনাকে তো সেই বদমাশদের খতম করার জন্যই । নিয়ে যাচ্ছি। একেবারে খতম করে দিয়ে আসবেন। অন্ধকার পথের দিকে দু . রেখে বলল কুয়াশা। ৮. কিটু আপনি যেন আবার পালিয়ে যাবেন না। আমি ঠাকটে আপনার কোন
ভয় নেই, বুক ঠুকল ডি. কস্টা। ‘
“সে তো আমি জানিই, মি. কস্টা। সেই জন্যেই তো আপনাকে সাথে, এনেছি। আমি কি আর এসব কাজ পারি? আপনি আছেন, সেই ভরসাতেই যাচিছ।’ | ফৌজদারহাট সড়ক বেয়ে চলছে গাড়ি। রাত বারটার কাটা পেরিয়ে গেছে।’ গাড়ি চালাচ্ছে কুয়াশা। পাশের আসনে বসে তাকে অভয়বাণী শোনাচ্ছে ডি, } * পোলট্রি-ফার্মের প্রাইভেট পথের মুখ ছাড়িয়ে প্রায় পোয়া মাইল দূরে : থামাল কুয়াশা। বাতিটা নিভিয়ে দিল। পথ নির্জন, নিঃশব্দ, পথের দু’পাশে । জঙ্গল। এখান থেকে হাতের ঢাইনে প্রায় দু’শ গজ দূরে ফার্ম।; . পথের উপর গাড়ি রাখা নিরাপদ নয়। বখত সাহেবের অনুচররা নিয়মি. টহল দেয় তা জানতে পেরেছে কুয়াশা। তাদের চোখে পড়ার আশঙ্কা উড়ি দেওয়া যায় না। সুতরাং গাড়িটাকে জঙ্গলের মধ্যে কোথাও ঢোকাতে হবে। গা, থেকে নামল কুয়াশা। জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে এদিক-ওদিক ঘুরে এল। গাডি ঢোকাবার মত একটা প্রবেশ-পথ পাওয়া গেল অবশেষে। ফিরে এসে গাড়িটা স্টি গেল উঁচু-নিচু পথ দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে। । . ডি. কস্টার চোখ দুটো বুজে ‘এসেছিল। পেটে মাল পড়েছে বিস্তর। কিন্তু উঁচু-’. নিচু জায়গায় গাড়ি ঢোকানোর ধকলে তার মৌতাতটা ভেঙে গেল। চোখ খুলে
জলপথের উপরতে পেরেছে কে জঙ্গলের ৯ এদিক-ও টহল দেয় তা জগতরাং গাড়িটার মধ্যে ঢুকে
কুয়াশা-২০
১
. দেখল অন্ধকার জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িটা।
ধড়মড়িয়ে উঠে বসল ডি কস্টা। সভয়ে ডাকল, বস্। …. বলুন, মি. কস্টা? | ‘বাঘ-টাঘ নেই টো এই জঙ্গলে? অবশ্য বাঘকে আমি ঠোড়াই ডরাই। আমার
মামা মস্টবড় শিকারি ছিলেন টো।আমিও খুব ভাল মার্কসম্যান। | ‘বাঘ মেরেছেন কটা?’ ‘ ‘ ‘ ‘ ‘ ‘ ‘ ‘ ।
, চান্স পেলাম কোঠায়? ডেশের সব বাঘ টো মামার হাটেই মারা গেল। কটো করে বললুম, অন্টটঃ ভাগ্নের জন্য একটা বাঘ রাখ। টা শুনল কই। বস্? . . আবার কি হল?’ কুয়াশা প্রশ্ন করল।
‘আপনি একাই যাবেন, না আমি আসব সাঠে? যডি কেউ আপনাকে আক্রমণ করে? ওরা দুষ্টু লোক টো। ‘ : ‘এখন আমি একাই যাই। খোঁজটা নিয়ে আসি। তারপর আপনি নিজে যামে। পিস্তলটা সাথে আছে তো?’
আছে, বস্।। ‘ওতে কিন্তু গুলি ভরা আছে। দেখবেন শেষটায় আমাকেই গুলি করে বসবেন যেন। . কি যে বলেন, বা জিভ কাটল ডি, কন্টা।. * একটু পরেই জঙ্গলের মধ্যে মিলিয়ে গেল কুয়াশা। কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমী তিথি হবে, বোধহয় আজ। আর একটু পরেই চাঁদ উঠবে। কিন্তু আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। জঙ্গলের ভিতরটা নিবিড় অন্ধকার। দূরে দৃষ্টি চলে না। ফ্ল্যাশ লাইটের আলোয়, এগোতে লাগল কুয়াশা। মিনিট দশেক এগোবার পরেই সে উঁচু দেয়ালের কাছে গিয়ে পড়ল। প্রায় দুই মানুষ সমান উঁচু দেয়াল। উপরে কাঁটাতার। দেয়ালের পাশ দিয়ে পশ্চিম দিকে এগোতে লাগল। সেই গাছটা, সেটা কোথায়? ওই তো সেই গাছটা।
• বিরাট একটা কড়ই-গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়াল কুয়াশা। ফ্লাশ লাইটটা নিভিয়ে পকেটে পুরণ। চুপ করে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল গাছের তলায়। রাত
জাগা পাখির ডাক ছাড়া অন্য শব্দ তার কানে এল না।
.. . . . অন্ধকারটা স. এলেও দৃষ্টি দূরে যায় না। তবু সন্ধানী দৃষ্টিতে চারদিকে চোখ বুলাল একবার কুয়াশা। তারপর তরতর করে গাছ বেয়ে উঠল। মোটা একটা ডাল দেয়ালের হতি কয়েক উপর দিয়ে ফার্মের অভ্যন্তরে প্রসারিত হয়ে আছে। ডালটা বেয়ে এগিয়ে গেল সে। তার দেহের ভারে ডালটা নুয়ে পড়ল। দেয়ালের সীমানা পার হয়ে আরও খানিকটা এগিয়ে গিয়ে পকেট থেকে নাইলনের কর্ড বের করে ডালটাতে মজবুত করে বাঁধল সে। তারপর আস্তে করে স্কুলে পড়ল কড ধরে।
৮৬।
ভলিউম-৭
. ফার্মের ভিতর যে জায়গাটাতে সে নামল সেখানটায় এদিকে-ওদিকে ছোট খাট ঝোঁপঝাড়। পশ্চিমে অনেকটা দূরে একটা বাতি দেখা যাচ্ছে। ওটাই বোধহয় বেদার বখতের অফিস। বাতি লক্ষ্য করেই এগোতে লাগল সে। ঝোঁপঝাড় পার হয়ে ফাঁকা মাঠ। হাঁটু সমান উঁচু ঘাস। চোরকাটায় ভর্তি।
‘ কমলার কোয়ার মত আধ ফালি চাঁদ মুহূর্তের জন্যে দেখা দিয়ে মেঘের আড়ালে মিলিয়ে গেল। মাঠ পেরিয়ে সারিবদ্ধ গাছ। গাছের সারিটা বহুদূর পর্যন্ত প্রসারিত। বোধহয় কড়ই-গাছের সারি। উঁচু। মাঝে মাঝে হাওয়ার সস শব্দ আসছে। সারিবদ্ধ গাছের তলায় সম্ভবত বুক সমান উঁচু বেড়া। অস্পষ্ট আলোয়, দেখা গেল শ্রেণীর ওপারে সিমেন্টের বাঁধানো চওড়া পথ।… :
_ সারিবদ্ধ গাছের কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল কুয়াশা। গতিশীল একটা আলো। চোখে পড়ল তার। আলোটা এদিকেই আসছে। একটা গাছের আড়ালে দাঁড়াল কুয়াশা। দেহটাকে গাছের সাথে মিশিয়ে দিল।– মানুষের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। উঁকি দিয়ে দেখল কুয়াশা, দুজন লোক আসছে বাঁধানো পথের উপর দিয়ে। একজনের হাতে টর্চলাইট।
দূরে কোথা থেকে যেন ‘গুড় গুড় গুড় গুড়ু’ শব্দ ভেসে আসছে গভীর নৈঃশব্দ ভেদ করে। শব্দটা ক্রমেই উচ্চতর হচ্ছে। মেঘের আওয়াজ নয় বা দূরে পথ চলতি কোন মোটর গাড়ির আওয়াজও নয়। প্লেনের শব্দ। হয়ত পতেঙ্গা বিমান বন্দরের দিকে কোন বিমান যাচ্ছে। কিন্তু এদিক দিয়ে তো কোন বিমান আসবার কথা নয়। শব্দটা আসছে দক্ষিণ অর্থাৎ সোজা বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে।
• সামনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল কুয়াশা। লোক দুটো চওড়া রাস্তাটার দু’পাশে কয়েকটা মশাল জ্বালিয়ে দিয়েছে। দু’পাশে দু’সারি মশাল। বোধহয় কেরোসিনে ভেজানো তুলো দিয়ে জ্বালানো হয়েছে. মশালগুলো। চারদিকে অনেকটা জায়গা জুড়ে আলোকিত হয়ে উঠেছে। আগুনের তাপ এসে লাগছে তার কপালে, চোখে, মুখে। দুই সারিতে দু’টা করে মোট বারটা মশাল জ্বলছে। সর্বশেষ মশালটা এইমাত্র জ্বালানো হল। প্রায় দু’শ গজ পর্যন্ত জায়গা জুড়ে আলোকিত হয়ে আছে উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত। মশাল জ্বালানো শেষ করে লোক দুটো দূরে, অন্ধকারে সরে গেল।’
• বিমানটার গর্জন প্রচণ্ডতর হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। খুব কাছে-একদম মাথার উপর এসে পড়েছে। উপরের দিকে তাকাল কুয়াশা। একটা হেলিকপ্টার, মাথার উপর বিরাট একটা পাখির মত ঘুরছে। আরও দু’একটা চক্কর দিয়ে চারদিকের হাওয়ায় প্রচণ্ড আলোড়ন তুলল। গাছের পাতায় কাঁপন তুলে হেলিকপ্টারটা নেমে এল দু’সারি মশালের মাঝখান দিয়ে। পাখাটা এখনও ঘুরছে। … । | নিঃশ্বাস রোধ করে পরবর্তী দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল কুয়াশা। হেলিকপ্টারটা ধীরে ধীরে এগোতে লাগল। মোড় ঘুরে পশ্চিমে অন্ধকারে এগিয়ে কুয়াশা-২০
‘ ৮৭
যাচ্ছে হয়ত কোন অদৃশ্য হ্যাঁঙ্গারের দিকে । আগুনগুলো নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে । গগলস্, হেলমেট ও লেদারকোট পরা পাইলটকে চেনবার প্রশ্নই ওঠে না।
বঙ্গোপসাগরের তীরে এই বিরাট এলাকা জুড়ে ফার্ম স্থাপনের অর্থটা এতক্ষণে স্পষ্ট হয়ে উঠল কুয়াশার কাছে। অন্য কারও সন্দেহের উদ্রেক না করেই অনায়াসে সাগরের উপর দিয়ে বিমান চালিয়ে সোজা নামানো যেতে পারে এখানে। বাইরের লোকের চোখে পড়লেও তারা মনে করবে বিমানটা হয়ত বিমানবন্দরের দিকেই যাচ্ছে। অথবা হয়ত পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে বেরিয়েছে। কিন্তু কুয়াশার মত করে কেউ যদি গোপনে এখানে ঢুকে পড়বার সুযোগ পায়, তাহলে ব্যাপারটা বুঝতে কোন অসুবিধা হবে না। কিন্তু কেউ কি এতদিনে সে সুযোগ পেয়েছে? **
লোক দুটো চলে গেছে হেলিকপ্টারের পিছনে পিছনে। কুয়াশা গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে পড়ল। পাশ দিয়ে সড়াৎ করে একটা কাঠবিড়ালী লাফ দিয়ে সরে গেল। মেঘের আড়াল থেকে চাঁদটা আবার উঁকি দিয়েছে। সে আলোয়, কুয়াশা দেখতে পেল কাঠবিড়ালীটা আর একটা লাফ দিয়ে গাছের নিচে ঝোঁপের মধ্যে ঢুকতে গিয়েই ডিগবাজি খেয়ে পড়ে গেল। কাও’ করে একটা শব্দ করে ছটফট করতে লাগল। মাথা নুইয়ে দেখল সে কিছুক্ষণ কাঠবিড়ালীটাকে। স্থির হয়ে গেল। ছোট্ট প্রাণীর দেহটা। মরে গেছে।
চাঁদটা আবার মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে। কাঠবিড়ালীটার আকস্মিক মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার জন্য সে ফ্ল্যাশলাইটটা মাটির খুব কাছে নিয়ে । জ্বালল। ঝোঁপঝাড়ের ভিতর ছয় ইঞ্চি পর পর তামার তার, মাটি থেকে প্রায় পাঁচ ফুট উঁচু। ঐ তারে লেগেই মারা গেছে কাঠবিড়ালীটা। আহা বেচারী! তবু মনে, মনে কুয়াশা মৃত প্রাণীটাকে ধন্যবাদ জানাল।
মশাল ও হেলিকপ্টার নিয়ে সে এতক্ষণ এমন ব্যাপৃত ছিল যে তার ঠিক দু’হাত দূরেই, যে মৃত্যু নীরবে অপেক্ষা করছে তা চিন্তা করার মত সময়ও সে পায়নি। উপরের দিকে তাকাল সে। যা ভাবা গিয়েছিল তাই। ডালেও তামার তার জড়ানো। একটু এগিয়ে গিয়ে পাশের গাছটাও দেখল কুয়াশা। সেটার ডালেও তার জড়ানো।
: ফিরে এল কুয়াশা। মিনিট পনের পরে সে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়াল। ধীরে, ধীরে ডাকল, “মি, ডি, কস্টা, মি. ডি. কন্টা।
– কোন সাড়া পাওয়া গেল না। ফ্ল্যাশলাইটটা জ্বালল কুয়াশা। ডি. কস্টা নেই। মাটিতে পড়ে আছে ভাঙা একটা বোতল। এদিকে ওদিকে খানিকক্ষণ খোঁজ করল কুয়াশা। কোথাও পাওয়া গেল না। গাড়ির ভিতরেও নেই। রাস্তার দিকে গেল। সেখানেও পাওয়া গেল না। চিন্তিত হল কুয়াশা। গাড়ির কাছে ফিরে এল সে। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল। স্টার্ট দিল গাড়িতে। কিন্তু গাড়ি চলল না। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে নেমে এল কুয়াশা। টর্চ জ্বালিয়ে দেখল চারটে চাকার মধ্যে একটারও ৮৮.
ভলিউম-৭
s
:
পাম্প নেই। ভাল করে পরীক্ষা করে দেখল, ধারালো কোন অস্ত্র ঢুকিয়ে কেটে
ফেলা হয়েছে চারটে টায়ারই। | আবার রাস্তার দিকে, এগোল কুয়াশা। আকাশে মেঘ আর নেই। পিচ-ঢালা। . পথের উপর আলোর বন্যা। হেঁটে চলল সে। কিছুক্ষণ পরেই মোটর গাড়ির শব্দ কানে এল। পিছনের দিক থেকে শব্দটা আসছে। পঁড়িয়ে পড়ল পথের উপর। একটা গাড়ির হেড-লাইট দেখা যাচ্ছে। দ্রুত গতিতে আসছে গাড়িটা। কাছে আসতেই গাড়িটার গতি স্তিমিত হল। ধীরে ধীরে এসে থামল কুয়াশার পাশেই।
‘কুয়াশা! : কে, শহীদ?
“হ্যাঁ, দরজা খুলতে খুলতে জবাব দিল শহীদ। নেমে এল পথের উপর। বলল, কামাল আর তোমার সেই পাগলা খ্রীস্টানটা ধরা পড়েছে বেদার, বখতের লোকদের হাতে।
* কামালও ধরা পড়েছে। কিন্তু কিভাবে?– তোমার ঐ পাগলা লোকটার দোষে। আমি আর কামাল এসেছিলাম ফার্মের ভিতরে ঢুকবার চেষ্টা করার জন্যে। গাড়িটা প্রায় মাইলখানেক দূরে রেখে দিয়েছিলাম। তারপর হাঁটতে হাঁটতে ফিরে এসে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকলাম। তোমার গাড়িটা আমার চোখে পড়েনি। কিন্তু লোকটা আমাদের দেখেই ভয়ে চিৎকার করে উঠল। বেদ্বার বখতের লোকও সেই সময় এসে পড়েছিল। চিৎকার শুনে ওরা এগিয়ে এসে লোকটাকে ধরে ফেলল। পালাবার চেষ্টা করতেই পিস্তলের তো দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে দিল। আমরা দু’জন গেলাম ওকে হৈলপ করতে। কামাল “ একটা গাছের গুঁড়িতে পা আটকে পড়ে গেল। তাকে তুলতে যেতেই আমার উপর | দু’জন ঝাঁপিয়ে পড়ল। কোনক্রমে ওদের কবল থেকে রক্ষা পেয়ে লুকিয়ে পড়লাম। : কিন্তু ততক্ষণে প্রায়’বার-তেরজন লোক এসে গেছে। আর এগোতে সাহস পেলাম,
না। শেষের দিকে করুণ শোনাল শহীদের কণ্ঠ।
আর একবার চেষ্টা করে দেখতে চাও?’ কুয়াশা প্রশ্ন করল। তাতে লাভ হবে কি? সম্ভাবনা কম। “তাহলে কি করা যায়? “চিন্তার কি আছে? দু-একটা দিন অপেক্ষা কর।
এখন কি করবে?’ শহীদ প্রশ্ন করল।
‘আপাতত চট্টগ্রাম শহরে ফিরে যার। . চল তাহলে আমার গাড়িতে। . “
‘চল। আমার গাড়ির চারটে টায়ারই ফাঁসিয়ে দিয়েছে। কুয়াশা-২০
* কিছুদূর এগোবার পর শহীদ বলল, ভাবছি সকালেই মি. সিম্পসনকে নিয়ে। পুলিস বাহিনীসহ চড়াও হব ফার্মে। … তাতে লাভ হবে না। বরং ক্ষতি হবে। তাছাড়া, সে ন্যাশনাল এসেম্বলীর মেম্বার। তাকে অ্যারেস্ট করতে গেলে এবং সম্ভবত রেইড করতে গেলেও গভর্নমেন্টের পারমিশন দরকার। আর সে পারমিশনের জন্যে বখত সাহেবের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ চাই। সে প্রমাণ আছে?
‘অন্তত একটা প্রমাণ তা হল, ফার্মে কামালের বন্দীত্ব?
‘সেটা তো বখত সাহেবেরই পক্ষে যাবে। মাঝখান থেকে বেআইনী অনুপ্রবেশকারী হিসেবে শাস্তি পাৰে কামালই। … তাও তো বটে। কুয়াশার যুক্তিটা মেনে নিল শহীদ।’
কুয়াশা বলল, তাছাড়া আমার মনে হয় কয়েকদিন চুপচাপ থাকাই ভাল। অন্যথায় বেদার বখত আরও বেশি সাবধান হয়ে যাবে। হয়ত কামালকে সরিয়েই দেবে চিরতরে। ভাল কথা, কামালকে বেদার বখত চেনে নাকি?’
না, বোধহয়। আমার সাথেও সাক্ষাৎ পরিচয় নেই। নামটা শুনেছে অবশ্য। জানে আলম চৌধুরীর হত্যাকারীকে অর্থাৎ কুয়াশাকে খুঁজে বের করার অনুরোধ করেছিল।
. সেই আমন্ত্রণেই এসেছিলে বোধহয়?’হাসল কুয়াশা।
প্রত্যুত্তরে শহীদও হাসল। বলল, ‘আমি এসেছি মিসেস চৌধুরীর অনুরোধে। :: ‘তা, আমার পিছু ছেড়ে বেদার-বখতের পিছনে ধাওয়া করছ কেন?’হালকা, সুরে প্রশ্ন করল কুয়াশা। :: ::
শহীদ কোন জবাব দিল না।। | গাড়ি চট্টগ্রাম শহরে প্রবেশ করতেই কুয়াশা বলল, আমি এবার নামব। যদি কিছু মনে না কর, তাহলে আবার তোমাকে অনুরোধ করব, কয়েকদিন চুপচাপ
কাটিয়ে দিতে। গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল কুয়াশা। ‘ * “কিন্তু মি. সিম্পসন তো ছাড়বেন না। তিনি খুব ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন এ নকল কুয়াশার হদিস জানবার জন্যে। আজকে আমার সাথে তাঁর কথা হয়েছে। তার ধারণা আমি অনেক দূর এগিয়ে গেছি।..
কিছু জেনেছেন?” …’, ‘ ‘.. | ‘মোটেও না। তাঁকে এখনও কিছু বলবার সময় আসেনি। উনি একেবারে অন্ধকারে আছেন আর সেই জন্যেই অস্থির হয়ে উঠেছেন বেশি। তাছাড়া তাঁর ধারণা হয়েছে, মিসেস চৌধুরীও নকল কুয়াশার পাল্লায় পড়েছে। তার অস্থিরতার সেটাও একটা কারণ।
‘তাকে যেভাবে হোক ঠাণ্ডা কর।’ | ‘দেখি চেষ্টা করে। গাড়িতে স্টার্ট দিল শহীদ। রাত তিনটে বেজে গেছে।
ভলিউম-৭
কিন্তু বখত সাহেবের পোট্রি ফার্ম এখনও পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়েনি। একটা কক্ষে এখনও জোরাল আলো জ্বলছে। বখত সাহেব একটা ডিভানে বসে আছেন। তাঁর চেহারাটা ক্রোধে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।
সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে দবীর খা। তার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি মেলে বখত সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ধরা পড়েছে ক’জন?
‘দো আদমী; হুজুর।। ‘পালিয়ে গেছে ক’জন?’ ‘এক আদমী। ‘পালাল কি করে?
একা, হুজুর, তিনজনকে কায়দা, কোরতে পারিনি। আর লেকটাকে দুবলা দেখলে কি হোবে গায়ে তাগদ বহুত।’ : . . ‘‘,’’।
‘আর তুমি কি ঘাস খাও? জমিরুদ্দিন, কমর এরা যায়নি? ‘
উর্দু-বাংলা মেশানো বিচিত্র ভাষায় দবীর খাঁ জবাব দিল, নাকে উপর এমন। একটা পাঞ্চ কোষল যে মাথাটা আমার ঘুরিয়ে গেল। আমি আম্মাছে খাড়া হোনে কো আগেই চো-চা দৌড় দিল। আমি ভি সুমিয়াকে পাস দে, আদমীকে ছোড়কে দৌড় দিলাম। তো হজুর, আন্ধারমে বিলকুল ভাগ গেল। জমিরুদ্দিনরা, স্যার, পরে গিয়েছিল। তখন লোকটা ভেগে গেছে।’
রেখেছ কোথায়, ওদের? | ‘তিন নম্বর মে। বেগম সাহেবের পাশের রূমে।
ইডিয়ট। এখুনি ওদের সরাও। চল, আমি যাচ্ছি। : চলিয়ে, হুজুর। ‘
ডিভান থেকে নামলেন বখত সাহেব। দরজা খুলে সরু প্যাসেজ দিয়ে এগোতে লাগলেন। দীরা নীরবে অনুসরণ করল। ‘ একটা দরজার সাম । গিয়ে দাঁড়াল দু’জন। কোমর থেকে চাবি বের করে তালা খুলল দবীর খা। রজার পাশেই সুইচবোর্ড। একটা সুইচ টিপে দিল। রিভলভার বের করলেন বখত সাহেব।
. দরজা খুলতেই ষাট পাওয়ারের বিদ্যুতের আলোয় দেখা গেল রূমের দু’জন বাসিন্দার মধ্যে একজন শূন্য মেঝেতে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। লোকটা ডি কস্টা। তার ঠোঁটের কোণ বেয়ে লালা গড়াচ্ছে। অন্যজন কামাল! সে দেয়ালে হেলান দিয়ে আগন্তুকদের দিকে ঔৎসুক্যভরে তাকিয়ে আছে।
তার চেহারায় যন্ত্রণার ছাপ কিন্তু চোখে আশার আলো। পিস্তল হাতে বখত সাহেবকে দেখেই চোখের আলোটা মুহূর্তে দূর হয়ে গেল।
বখত সাহেব সেটা লক্ষ্য করলেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কামালের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন, শ্বশুর বাড়ির সদর রাস্তাটা বোধহয় চিনতে পারনি! তাই কুয়াশা-২০
৯১
পিছন দিক দিয়ে ঢুকবার চেষ্টা করছিলো কোথা থেকে উদিত হয়েছ, বাছা?’
কামাল কোন উত্তর দিল না। : কথা বলবে না বলে মনে করেছ? ভুল করছ। বলতেই হবে। আগে হোক, পুরে হোক।
: দীর খাঁ ডি. কস্টার দিকে এগিয়ে গেল। পা দিয়ে একটা পুঁতে দিল ডি, কস্টার গালে। মাথা নুইয়ে মুখটা দেখল কিছুক্ষণ । তারপর বলল, শা ভিরমি গেছে, হুজুর।..
‘ সেকথা কানে তুললেন না বখত সাহেব। বললেন, ‘বুঝলে তো চাঁদ, উত্তম মধ্যম দিয়ে আমি মূককে বাঁচাল করতে পারি।
: দীর খাঁকে বললেন, ‘এটাকে আগে নিয়ে যা, ওকে পরে এসে নিয়ে যাবি। চল হে। দরজাটা বন্ধ করে দে, দবীর।
‘শেষ র দেব, হুজুর?
প্রশ্নটা শুনে কেঁপে উঠল কামাল। . . ‘অত তাড়াহুড়ো করার কি আছে? আলাপ পরিচয় হোল না। আজ আমার সময় হবে না। তবে ইচ্ছে করলে হাতের সুখ করে নিতে পারিস’নির্বিকার কণ্ঠে বললেন বখত সাহেব। “ রিভলভার উদ্যত করে রইলেন বখত সাহেব। কামাল তার সামনে। আগে
খেয়াল করেনি সে, এখন সে দেখল সরু প্যাসেজের দুই পাশে অনেকগুলো দরজা। * নিশ্চয়ই অনেকগুলো রূম আছে। কোনটা বাইরে থেকে তালা দেওয়া। কোনটা,
ভিতর থেকে বন্ধ। । কিছুদূর এগোবার পর বখত সাহেব বললেন, ‘ডাইনে যাও।ডাইনে আর একটা প্যাসেজ। মোড় ঘুরল কামাল। পিছন থেকে বখত সাহেবের কণ্ঠটা আবার শোনা গেল, কারও সাধ্য নেই, তোমাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাবার। নিজে তো পারবেই না। তাছাড়া যেখানে, তোমাকে রাখৰ সেই রূম থেকেও সারাজীবনে তুমি বেরোতে পারবে না।’
আরও একবার মোড় ঘুরতে হল। তারপর বখত সাহেব বললেন, “থাম’, থামল কামাল । যখত সাহেব ডাকলেন, “দবীর খা। । ‘জি, হুজুর।
পাশের একটা দরজা খুলে গেল। দবীর খাঁ কামালকে ইশারা করে বলল, অন্দর ঘুসো ।
. নীরবে নির্দেশ পালন করল কামাল। রূমের ভিতরটায় অস্পষ্ট আলো। একটা বিছানাও দেখা যাচ্ছে। অনাহুত আগন্তুকদের প্রতি উদারতার অন্ত নেই বখত সাহেবের।
| রূমের মধ্যে গিয়ে দাঁড়াল কামাল। বখত সাহেব বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলেন।
ভলিউম-৭
* •…
{
রিভলভারটা নামালেন না।
“ওকে সার্চ করেছিস?’ প্রশ্ন করলেন তিনি। “জ্বি, হুজুর। “কিছু পাওয়া গেছে?’ বাঁ হাতে দাড়ি চুলকে জানতে চাইলেন। পাওয়া গেছে সিগারেট কেস আর সিগারেট লাইটার। পিস্তল-টিল?’
জ্বি, নেহী। একটাপেন্সিল কাটনে কো ছুরি থা। তোবে ঐ লোকটার কাছে একটো পিস্তল পাওয়া গিয়েছে।’
“আর কিছু?’
নেহি, সরকার। বেশ; চলে আয় এবার।’ দবীর খা বেরিয়ে গেল। একটু পরেই দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল।
অনেকক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে রইল কামাল। তারপর ঘরটা দেখল ঘুরে ঘুরে। ঝকঝকে তকতুকে চুনকাম করা দেওয়াল! ছাদটা অনেক উঁচুতে। আলো- .. হাওয়া ঢুকবার জন্য ছাদের লাগালাগি দুটো হোট খুপরির মত স্কাই-লাইট আছে। আলো নিশ্চয়ই ওখান দিয়ে ঢোকে না। কারণ, কক্ষটা যে মাটির তলায় তা সে প্রথমে ঢোকার সময়ই টের পেয়েছে। অথচ ব্যবস্থা সত্যি সুন্দর। মাটির নিচে ঘর। হলেও হাওয়ার ব্যবস্থা আছে পর্যাপ্ত। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে তেমন কষ্ট হয় না। …. দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল কামাল। সেগুন-কাঠের শক্ত দরজা। এখানে- . সেখানে টিপে দেখল। না, কোথাও গোপন কোন সুইচ জাতীয় কিছু চোখে পড়ছে
। . বিছানায় গিয়ে বসল। সিগারেট খেতে বড় ইচ্ছে করছে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে শূন্য হাতটা আবার বের করল। তাই তো, সিগারেট তো ওরা কেড়ে নিয়েছে।
. শহীদ এখন কোথায়? সে-ও কি ধরা পড়েছে? না-সে পালিয়ে যেতে পেরেছে? যদি পালিয়ে যেতে পেরে থাকে, তাহলে সে শীঘ্রই ওকে উদ্ধার করতে আসবে। কিন্তু ততক্ষণে বেদার বখতের ঐ ভয়ঙ্কর স্যাঙ্গাতটার কবল থেকে রক্ষা পেতে পারবে কি? কতক্ষণ একে বাঁচিয়ে রাখবে বখত সাহেব? নিশ্চয়ই বেশিক্ষণ নয়। তার আগে ওর পরিচয় জানতে চেষ্টা করবে। উদ্দেশ্য জানবার জন্যে অত্যাচার করবে। . মিসেস চৌধুরী কি এখনও বেঁচে আছেন? বখতসাহেব কি তাকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে? কোনক্রমে মিসেস চৌধুরীর সাথে দেখা করতে পারলে হয়ত বাঁচবার একটা উপায় বের করাও যেতে পারে। অবশ্য যদি উনি বেঁচে থাকেন আর । ঐ শয়তানটার আস্থা অর্জন করতে পারেন। কুয়াশা-২০
*
*
*
*
*:
আর এক ভরসা কুয়াশা এবং সবত শ্রেষ্ঠ ভরসা। দেখা যাক, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। সেই আশার দীপ জ্বেলে অনন্তকালের জন্যে অপেক্ষা করতে পারে কামাল।
আট.
বখত সাহেবের প্রাতঃভ্রমণের অভ্যাস বহুদিনের। ফার্মের মধ্যেই সাধারণত তিনি সকাল বেলা পায়চারি করেন। সেদিন তিনি খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সমুদ্রের ধরে চলে গিয়েছিলেন। হঠাৎ বিমানের গর্জন কানে যাওয়ায় আকাশের দিকে তাকালেন। একটা হেলিকপ্টার তার ঠিক মাথার উপরে ঘুরছে। নিচের দিকে নেমে আসছে ক্রমশ। দু-একটা পাক দিয়ে মুরগীর একটা বিরাট খাঁচার পিছনে হোট এক ফালি জমিতে নেমে পড়ল। সভয়ে ডেকে উঠল মুরগীগুলো। কোনটা দৌড়ে,, কোনটা উড়ে পালাবার চেষ্টা করল।’ * ‘‘ বিসিত মধত সাহেব স্থাণুর মত, দাঁড়িয়ে রইলেন। তাঁর বুঝতে বাকি রইল না যে ককপিটে বসা লোকটা একটা ঝানু পাইলট। দেশলাই-বাক্সের উও সে যেকোন বি.নির্বিক্সে নামাতে সক্ষম। ঠিক যেমনটা পারত জানে আলম চৌধুরী। .. পাইলট নেমে এল। হেলমেট আর গগদ না খুলেই ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে বলল, “আমি অত্যন্ত দুঃখিত। সবত আপনার জায়গায় আমি হেলিকপ্টারটা নামিয়েছি। অথচ না নামিয়ে উপায় ছিল না।
. তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ বখত সাহেব পাইলটের দিকে। . ই, বুঝতে পারছি। নীরসকণ্ঠে বললেন বখত সাহেব।
• পাইলট আবার বিনীত ভঙ্গিতে কৈফিয়ৎ দিল, সত্যি আমার উপায় ছিল না। খুব তাড়াতাড়ি তেল পুড়ছিল সুতরাং আমাকে নামতেই হল। আশা করি আপনার কোন ক্ষতি করিনি। যত তাড়াতাড়ি পারি আমি চলে যাব। দয়া করে যদি আমাকে। পতেঙ্গা এয়ারপোর্টের পথটা দেখিয়ে দেন তাহলে আমি সেখানে গিয়ে মেকানিক নিয়ে আসতে পারি। হেলমেট ও গগলস খুলতে খুলতে পাইলট বলল। . . বেদার বখত জবি দিলেন না। পাইলটকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন। তারপর বললেন, “আসুন, আপনি আমার সাথে।
. এক মিনিট,কুয়াশা বলল। ‘ । ‘ হেলিকপ্টারের দিকে ফিরে গেল সে। ককপিট থেকে একটা চামড়ার ব্যাটাছি কেস নিয়ে ফিরে এল। কেসটার বেস্ট সবত ভাল করে আটকানো হয়নি। বখত সাহেবের কাছে আসতেই ঢাকনিটা খুলে গেল। ভিতর থেকে জিনিসপত্রগুলো। হয়ে পড়ে গেল মাটিতে। শার্ট, প্যান্ট, মোজা, পাজামা, শেভিং-ট্যাকল, টুথ ব্রাশ, পেট ইত্যাদি নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের কোনটাই বেরোল না কেস থেকে। ৯৪
ভলিউম-৭
কাশির লজেন্সের কৌটোর মত ছোট ছোট অনেকগুলো কৌটো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। বস্তুত, কৌটোগুলোর গায়ের লেবেলে লেখাও ছিল কফ-লজেন্স। কিন্তু একটা কৌটো খুলে গিয়ে সাদা গুঁড়ো বেরিয়ে পড়ল। : কুয়াশা হাঁটু গেড়ে বসে দ্রুত কৌটোগুলো তুলে অ্যাটাচি কে প পুরল। সাদা পাউডারগুলোও খোলা কৌটোতে ভরল। আর যখন বখত সাহেব তার ঘাড়ে স্পর্শ করলেন, তখন সে চমকে উঠল।
‘ ‘ .. * বখত সাহেব বললেন, আমার ঔৎসুক্য ক্ষমা করবেন, কিন্তু আপনার লাগেজ তো মোস্ট আনইউজুয়্যাল? . . . . . . . . . | বোকার মত হাসির ভান করল কুয়াশা, হ্যাঁ, তা একটু তো বটেই। আমি হংকং-এর একটা মেডিক্যাল ফার্মের রিপ্রেজেন্টেটিভ। কোম্পানির পক্ষ থেকে পাকিস্তানে এসেছি।’বেল্টটা বাঁধতে বাঁধতে কুয়াশা বলল। . “।হেলিকপ্টারটার দিকে তাকিয়ে বললেন বখত সাহেব, এই হেলিকপ্টারে করেই বুঝি চলাফেরা করেন? অতদূর থেকে তো কেউ হেলিকপ্টারে আসে না? অবশ্য দরকার হয় না বলেই।’…
: . ‘ ‘ ‘, | ‘আপাতত আমি এসেছি রেঙ্গুন থেকে। ওখানে এখন আমাদের একটা অফিস নেয়া হয়েছে। আপনার অসুবিধা সৃষ্টি করায় আমি আন্তরিক দুঃখিত। ., না না, তাতে কি হয়েছে? চলুন এগুলো থাক। বখত সাহেবের কণ্ঠ নীরস আর অস্বাভাবিক শোনাল। … * ‘ ‘, ‘, ‘ । । । । . দু’জন চলতে শুরু করল। কুয়াশা চোখে চেয়ে দেখল, বখত সাহেবের চেহারাটায় চিন্তার ছাপ। বারকয়েক তিনি কুয়াশার দিকে তাকালেন। চেহারা দেখে মনে হল কি যেন বলবেন। কুয়াশা শরিরে চলতে লাগল। . . .
• সামনেই দুই মানুষ-সমান উঁচু দেওয়াল। ডাইনে বাঁয়ে বহুদূর বিস্তৃত। এখানে-সেখানে ছড়ানো অনেক খাঁচা। নানা জাতের, নানা রঙের, নানা চেহারার হাঁস-মুরগী। নানা কম পাখিও আছে। কয়েকজন লোক এণীগুলোর তদারকি করছে। এদিকটা পরিষ্কার পরিত্র। গাছ-পালাও নেই। . . . . . . | গেটের ভিতর দিকে বখত সাহেব তার নতুন অতিথিকে নিয়ে অফিসের দিকে এগোলেন। অফিস-ভবনের বারান্দায় উঠে বললেন, যদি অসুবিধে না হয় তাহলে বলুন আপনার কি কি দরকার? আমি আমার শোফারকে পাঠিয়ে দিই এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্টের অফিসাররা আমাকে চেনে। আমি ফোন করে দিচ্ছি। কোন অসুবিধা হবে না। তাছাড়া কর্তৃপক্ষকেও ব্যাপারটা জানানো দরকার। কথাগুলো বলার সময় পাইলটের প্রতিক্রিয়া তীক্ষ্ণভাবে লক্ষ্য করছিলেন তিনি।
“, না না, তার দরকার নেই।বিনীত কঠে আপত্তি জানান কুয়াশা, আপনাকে এমনিতেই অনেক কষ্ট দিয়েছি। ..’ ‘.. . :,,,, ‘‘ । | কষ্ট আর কোথায়? এটুকু তো সবাই করে। তাছাড়া আপনার বোধহয় নাস্তাই কুয়াশা-২০
}
.
*
*
+
;
–
করা হয়নি। আসুন, আপনি আমার সাথে নাস্তা করবেন মি.•••?”
হাসিবুল হাসান। | ‘আসুন, মি. হাসান, এই দিকে। … নাস্তাটা প্রায় নীরবেই সম্পন্ন হল। বখত সাহেব বার বার কি যেন বলতে গিয়ে চেপে গেলেন। অবশেষে অন্তরের অপ্রতিরোধ্য আবেগের মত প্রকাশ করেই ফেললেন, ‘আপনার এই ওষুধ বিক্রির কাহিনীটা কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি মোটও। | ‘বিশ্বাস করেননি?’ভু কোঁচকাল কুয়াশা। কিন্তু
: “নিশ্চয়ই না,’মুচকি হাসলেন বখত সাহেব। আমি দেখেই বুঝেছি ওগুলো কোকেন।
কুয়াশা হাসবার চেষ্টা করার ভান করল। নিচে চেয়ারের পাশে রাখা অ্যাটাচি কেসটার দিকে একবার তাকাল। তারপর দৃষ্টিটাকে কঠিন করে তুলল। … :
. ‘অবশ্য, বখত সাহেব অভয়বাণী শোনালেন। ভয়ের কিছু নেই। আমি ব্যাপারটা পুলিশকে জানাতে যাচ্ছি না। সে ভয় করবেন না। আমি ভাবছি অন্যকথা। তাহল, আপনার মত বুদ্ধিমান,সাহসী আর দক্ষ পাইলট এই সামান্য কাজ নিয়ে কিভাবে সন্তুষ্ট থাকেন? আশ্চর্য!”
. কাজটা কি আসলেই খুব সামান্য? তা নয়। তাছাড়া যে দিনকাল পড়েছে, অর্থ উপার্জন আগের মত সহজ নয় এখন।’ “ কিন্তু এই কাজে তো আর লাখ লাখ টাকা আয় করা যায় না? : .. • হাসল কুয়াশা, ওটা তো আমার কাছে ঘেঁড়া কাঁথায় শুয়ে স্বপ্ন দেখার মত। আপনি যদি এমন কোন পথ দেখাতে পারেন যাতে লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়, তাহলে আমি অবশ্যই তা করব।’ জবাবের অপেক্ষায় বখত সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইল কুয়াশা। : : :,, *– … . .. :– কিন্তু তৎক্ষণাৎ কোন জবাব দিলেন না বখত সাহেব। চা শেষ করে দুটো পান মুখে দিলেন। জানালার ধারে গিয়ে পিক ফেললেন। কুয়াশা সিগারেট ধরাল।, বখত সাহেব ফিরে এসে বসলেন আবার। সরাসরি কুয়াশার মুখের দিকে না তাকিয়ে বললেন, চট্টগ্রাম বিমান বন্দর থেকে একটা প্লেনে দশ টন সোনা হংকং হয়ে টোকিও যাচ্ছে। পথে বঙ্গোপসাগরের উপর প্লেনটাকে গুলি করে নামাতে হবে। যদি সাহস থাকে তবে এই কাজটা আপনি করতে পারেন। সোনাগুলোর দাম কম হলেও এগার কোটি টাকা হবে।’
| সুন্তিত হল কুয়াশা। বখত সাহেবের মুখের দিকে অবাক দৃষ্টি মেলে চেয়ে রইল সে। অনেকক্ষণ বার্তি হল না তার। | ‘একেবারে বোবা বনে গেলেন যে?’হাসলেন বখত সাহেব।
| ‘এটা কি সব? •
ভলিউম-৭
.
‘সাহসী লোক হলে অবশ্যই সম্ভব। সমস্ত খবরই আমার জানা আছে। সমস্ত ব্যবস্থাই আমি কারে রেখেছি। কিন্তু অসুবিধে হয়েছে পাইলট নিয়ে। আমার যে পাইলট ছিল সে গোলমাল পাকাচ্ছিল বলে সরিয়ে দিতে হয়েছে তাকে। অথচ এই মুহূর্তে একজন অত্যন্ত দক্ষ পাইলট’ আমার দরকার। আমি নিজেই যাব বলে ঠিক করেছিলাম কিন্তু দক্ষ পাইলট আমি নই। তাছাড়া আমার লড়াইয়ের অভিজ্ঞতাও নেই। আপনি যদি রাজি হয়ে যান••• ‘কুয়াশার চোখের দিকে তাকালেন বখত সাহেব।
‘কিন্তু শুধুমাত্র পাইলট হলেই তো চলবে না? চিন্তা জড়িত কণ্ঠে বলল কুয়াশী, একটা জঙ্গীবিমানও চাই যাতে মেশিনগান থাকবে এবং আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাও থাকবে।’
. আমি ইতিমধ্যেই একটা হেলিকপ্টার সংগ্রহ করেছি চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে। গতরাতে নিয়ে এসেছি কপ্টারটা। তাতে মেশিনগান ও কামান ফিট করা হয়েছে। কপ্টারটা বিদেশী । চট্টগ্রাম হয়ে যাচ্ছিল। ওতে প্রয়োজনীয় রসদও আছে। আমি নিজেই কপ্টারটা চালিয়ে নিয়ে এসেছি। তাও দিনের বেলায় নয়, রাতের বেলায়। রাতে কপ্টার চালানো আমার এই প্রথম।
• আপনি নিজেই নিয়ে এসেছেন হেলিকপ্টারটা? :: _ ‘অবশ্যই। ‘
‘কিন্তু আরও সমস্যা আছে।কুয়াশা বলল, ‘সোনাবাহী বিমানের পাইলট তো সব সময় উপকূলের সাথে যোগাযোগ রাখবে এবং তাকে সাহায্য করার জন্য নিকটবর্তী দেশের সরকারদের অনুরোধ করা হয়েছে নিশ্চয়ই। . . . ।
| ‘তাতে কিছু এসে যায় না।শান্ত স্বরে বললেন বখত সাহেব। এ তো আর যুদ্ধের সময় নয়? আসলে পাইলট তো কোন আক্রমণের আশঙ্কা করছে না। ঐ পথে হেলিকপ্টার প্রায়ই চলা-ফেরা করে। সুতরাং পাইলট কোন সন্দেহ করবে না। তাছাড়া আপনি আগেই চলে যাবেন। তারপর আকস্মিকভাবে হামলা করতে হবে। ঠিক মত আঘাত করতে পারলে উপকূলে খবর দেবার সময়ই পাবে না।’ | কিন্তু নেভী আছে। তাদের নিশ্চয়ই জানানো হয়েছে? …’পাকিস্তান-নেভীকে অনুরোধ করা হয়েছে লক্ষ্য রাখতে। কিন্তু তাই তো বললাম, আক্রমণ করতে হবে আকস্মিকভাবে। আর উপকূল থেকে একশ’ মাইল দূরে গিয়েই হামলা করতে হবে। এ ব্যাপারে ভুল করলে চলবে না।
কিন্তু, সমুদ্র থেকে সোনা উদ্ধার হবে কিভাবে? প্লেন ডুবে যেতে তো বেশিক্ষণ লাগবে না?”
কুয়াশা যেন বোকার মত কথা বলেছে এই ধরনের একটা ভাব দেখিয়ে হাসলেন বখত সাহেব। বললেন, “সে ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আপনাকে শুধু, আপনার দিকটা দেখতে হবে। সে দিকটা দেখবার লোক আছে। আপনি রাজি।
৭-কুয়াশা-২০
৯৭।
আছেন কিনা তাই বলুন? . কুয়াশা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, ‘আই অ্যাম ইওর মান।
“ খুশির ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল বখত সাহেবের মুখে। সোনা-বাঁধানো দাঁত দুটো বের করে হাসলেন তিনি। বললেন, তাহলে আর আমার শোফারকে এয়ারপোর্টে পাঠাবার দরকার নেই। … … | ‘কিন্তু আমার হেলিকপ্টারের কি হবে?
| ‘ওটা এখানেই থাকুক আপাতত। আমার হ্যাঁঙ্গারে স্থানাভাব ঘটবে না। মেকানিকও আছে। কোন ত্রুটি থাকলে সে মেরামত করতে পারবে।’ ‘‘ তাহলে তো খুব ভাল হয়,’ জোর দিয়ে বলল কুয়াশা। কিন্তু সে জানে তার হেলিকপ্টারে কোন গলদ নেই। সেটা ধরতে মেকানিকের বেশিক্ষণ লাগবে না। | বখত সাহেব কুয়াশার অ্যাটাচি কেসটা নিয়ে ডাইনিংরূমের কোণে বিরাট একটা সেফের মধ্যে রেখে দিলেন। সেটা চাবি দিতে দিতে বললেন, ‘আপনার স্যাম্পল নিরাপদে রইল। চলুন, এবার আপনাকে বিশ্রামের ব্যবস্থা করে দিই।
. এখন এই সকাল বেলা বিশ্রাম! আপত্তির সুরে বলল কুয়াশা। | ‘বেশ, তাহলে আসুন আমার সাথে। গত রাতে দুটো টিকটিকি ধরা পড়েছে ।
ওদের একটু খোঁজ-খবর করতে হয়। আপনিও না হয় আসুন?’
‘না, না। মাফ করবেন, ওসবে আমার আগ্রহ নেই। আমি বরং একটা সংবাদপত্র পেলে পড়ে দেখতাম। ‘ … কুয়াশা টিকটিকিদের চেনে। জানে,ধরা পড়েছে কামাল আর ডি. কস্টা। ডি. কস্টা যা বুদ্ধিমান! হয়ত তার পরিচয়টাই প্রকাশ করে ফেলবে। সুতরাং বখত সাহেবের সঙ্গে ওদের কাছে যাওয়া চলবে না।
• তাহলে চলুন, আপনাকে আমার অন্যান্য লোকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। ওদের সাথে বরং খেলাধুলো করে সময় কাটাবেন। সংবাদপত্রও আছে
সেখানে।’ … ডাইনিংরূম থেকে বেরিয়ে কয়েক হাত দূরে একটা দরজার পাশের বোম টিপলেন বখত সাহেব।দরজাটা খুলে গেল। সামনে একটা সিঁড়ি নিচের দিকে
নেমে গেছে। উজ্জ্বল আলোয় সিঁড়িটা আলোকিত।
বখত সাহেব বললেন, ‘আসুন। . :…
মুহূর্তের জন্যে ইতস্তত করল কুয়াশা। তারপর হাত দিয়ে পকেটের রিভলভারটা অনুভব করে অনুসরণ করল বখত সাহেবকে। সিঁড়ির নিচে সরু প্যাসেজ। একটা চলে গেছে সোজা। একটা ডাইনে। প্যাসেজের দু’পাশে অনেকগুলো দরজা। সামনের দিকেই এগোল দু’জন। কিছুদূর এগিয়ে বাঁ দিকে মোড় নিল। একটা দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। পকেট থেকে চাবি বের করে দরজার তালা খুললেন। ফাঁকা একটা বড় কামরা। কামরাটা পেরিয়ে একটা
* ভলিউম-৭
দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন দু’জন। দরজটা ঠেলা দিতেই খুলে গেল। প্রশস্ত একটা কক্ষ। মাঝখানে একটা ট্রেবিলকে কেন্দ্র করে চারজন লোক বসে তাস খেলছে। চারটে তক্তপোশ। তাতে মলিন বিছানা। সিগারেটের টুকরো, দেশলাই এর কাঠি, হেঁয়. কাগজে মেঝেটা নোংরা। ‘‘
. ওদের দুজনকে ঢুকতে দেখে কামরার চার বাসিন্দা, চোখ তুলে তাকাল। তারপর আবার খেলায় মন দিল। দু’জন এগিয়ে গেলেন ওদের দিকে।
কাছে যেতেই একজন বলল, ‘আসুন, বখত সাহেব।’ . বখত সাহেব পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘নসু মিয়া, বন্দে আলী, সাহেবুদ্দিন, রজব শেখ। আর ইনি হচ্ছেন, হাসিবুল হাসান সাহেব। জানে আলমের জায়গায় এসেছেন ইনি। ।
‘জানে আলম সাহেব কোথায় গেলেন?’ জানতে চাইল নসু মিয়া।
হংকং সেছে। ফিরতে দেরি হবে।
কুয়াশার দৃষ্টি পড়ল একটা সংবাদপত্রের উপর। ব্যানার হেড, হেড-লাইনে– লেখা আছে, কুয়াশা কর্তৃক একটি হেলিকপ্টার অপহরণ।’
কুয়াশার এতক্ষণে খেয়াল হল, নতুন নিয়োগ-কর্তার নামটা এখন পর্যন্ত তার জানা হয়নি।
. সে প্রশ্ন করল, আপনিই কি কুয়াশা?’ . বখত সাহেব বিনীত হাসি উপহার দিয়ে বললেন, হ্যাঁ।
কুয়াশা কক্ষটিতে আঠার ঘন্টা কাটিয়ে দিল। যদিও তার মনে হচ্ছিল সেখানটায় . সে রয়েছে আঠার দিন ধরে। ঘুমোল আর তাস খেল কক্ষের অন্য বাসিন্দাদের
সাথে।
* নসু মিয়া জিজ্ঞেস করল, ‘হবে নাকি একহাত? * ‘আপত্তি নেই?’ খালি একটা, চেয়ার টেনে বসল কুয়াশা। যস্মিন দেশে যদাচার | তস্মিনও কুরু। তাস, বিশেষ করে বাজি রেখে তাস খেলা সে পছন্দ করে না। কিন্তু রূমের অন্য বাসিন্দারা তাস খেলার প্রতি তার অনীহাকে ভিন্নতর ব্যাখ্যা দিতে পারে। তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক হওয়াও বিচিত্র নয়, সুতরাং ওদের একজন ‘বলে নিজেকে পরিচিত করাই বাঞ্ছনীয়।
। রজব শেখ ব্ল্যাক-জ্যাক খেলার প্রস্তাব করল কুয়াশা বসতেই। কুয়াশা বলল, . ‘আপত্তি নেই।’ ..
এক নাগাড়ে কয়েক ঘন্টা খেলল ব্ল্যাক-জ্যাক। হারল দু’হাজার টাকার মত।
• জিততে পারত কিন্তু তাহলে হয়ত মারপিট হয়ে যেত। ওরা সবাই, কুয়াশা লক্ষ্য করল, খেলায় কারচুপি করছে। মনে মনে হাসল কুয়াশা। জিতলেও খুশি অখুশির কোন চিহ্ন ধরা পড়ল না ওদের ভাবলেশহীন চেহারায়। কথা বলল শুধু নসু মিয়া।
|
কুয়াশা-২০
কাছে।
দেহটা বিরাট কিন্তু গলার আওয়াজটা মেয়েলী। সে মেয়েলী গলায় প্রশ্ন করল, কত গেল?
‘দু’হাজার। আর খেলব না আমি, আর মাত্র তিরিশ টাকা আছে আমার
‘ধার দিচ্ছি, পরে শুধলেও চলবে। : দু’হাজার টাকা ধার নিল কুয়াশা। সেগুলোও হারল। খেলতে খেলতে লোকপলোর চরিত্র নির্ণয় করছিল কুয়াশা। প্রত্যেকটা লোকের চেহারাতেই অপরাধের ছাপ অত্যন্ত স্পষ্ট। দৃষ্টি ঠাণ্ডা অথচ তীক্ষ্ণ। অতি সামান্য কারণে খুন খারাবি করতে এদের বাধে না। বেদার বখত এই লোকগুলোকে কোথা থেকে, কিভাবে সংগ্রহ করেছে, একমাত্র বিধাতাই বলতে পারে।– ওঁদের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কুয়াশাকে ওরা নিজেদের একজন বলে মনে করেছে। তাকে ওরা কোন প্রশ্ন করেনি। কুয়াশার মনে হল, সে যদি ওদেরকে কোন প্রশ্ন করত তাহলে ওরা হয়ত বিস্মিত হত, হয়ত চটেও যেতে পারত। মারপিট হওয়াও বিচিত্র নয়। যে উদ্দেশ্যে বেদার বখত তাদেরকে সংগ্রহ করেছে তা নিয়ে একবারও কথা ওঠেনি। ঘুণাক্ষরেও কেউ ব্যাপারটার উল্লেখ করেনি। ব্যাপারটা বোধহয় বহুল আলোচিত হওয়ায় আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে
। অথচ জানবার জন্যে ঔৎসুক্য ছিল কুয়াশার । * : খেলা চলতেই থাকল। কুয়াশা খেলা শেষ করে সংবাদপত্রটা আবার টেনে নিল, কাল্পনিক কুয়াশার কার্যকলাপের পূর্ণ বিবরণ পাঠের জন্য। বিবরণ যা লেখা থাকবে বলে তার ধারণা ছিল মোটামুটি সেই রকমই লিখেছে স্টাফ রিপোর্টার। নতুন কিছু নেই। এমন কি প্রখ্যাত ডিটেকটিভ শহীদ খান যে এই কেস তদন্ত করতে চট্টগ্রাম এসেছেন তাও বলা হয়েছে। ভাবটা এই, এবার আর কুয়াশার রক্ষা নেই। *. মাটির নিচের সেই আলোকিত কক্ষে দিন-রাতের কোন প্রভেদ নেই। কিন্তু ঘড়ি অনুযায়ী এখন রাত বারটা বাজে। শুয়ে পড়ল কুয়াশা। কিছুক্ষণ পরেই ঘুমিয়ে পড়ল।’’ .
* ঘুম ভাঙতেই দেখতে পেল রূমের অন্য বাসিন্দারা উঠে পড়েছে। কাপড় চোপড় পরছে। বন্দে আলী টেলিফোনে কথা বলছে, সাহেব এখনও ঘুমুচ্ছে। না, এই তো উঠে পড়েছে।
; রিসিভারটা রেখে বন্দে আলী বলল, কাপড়-চোপড় পরে নাও, মিয়া, এখুনি বেরোতে হবে। কুয়াশা দেখল ঘড়িতে সাড়ে চারটে বাজে। দিন না রাত বুঝতে পৗরল না। পিরবার কথাও নয়।
মিনিট দশেক পরে নসু মিয়ার নেতৃত্বে ওদের মিছিলটা সরু প্যাসেজ দিয়ে, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল। ১০০
ভলিউম-৭,
UTT
.
যে রূমটাতে গিয়ে ওরা পৌঁছুল এর আগে কুয়াশা সেটাতে যায়নি। অফিস কক্ষের মত রামটা। দেয়ালে পাশাপাশি দুটো সেফ। পাশে লম্বা একটা র্যাকে বইপত্র ঠাসা। . বখত সাহেব সেখানেই অপেক্ষা করুছিলেন। কুয়াশাকে দেখে বললেন, আসুন। কেমন ছিলেন?’ : ওহ, চমৎকার!’’
• কুয়াশার উত্তর শোনবার জন্যে বোধহয় বখত সাহেবের আগ্রহ ছিল না। তিনি বললেন, “আপনাকে আমাদের ব্যবস্থার সাথে আরও কিছুটা পরিচয় করিয়ে দিই। চলুন। একটা সেফ খুললেন বখত সাহেব। তাকগুলো শূন্য। উপরের তাকে হোট, একটা বাক্স। বেদার বখত বাক্সটার ডালা খুলে ভিতরটাতে কিছু একটা টিপলেন, বলে মনে হল। সেফের ভিতরের সবকটা তাক ডান পাশে সরে গেল। একটা সিঁড়ি ভেসে উঠল ঠিক ওদের সামনে।– . বখত সাহেব ইশারা করলেন ওদের। প্রথমে ঢুকল বন্দে আলী মিয়া, তারপর তার সঙ্গীরা, ওদের পিছনে কুয়াশা। বখত সাহেব রইলেন তাঁদের সকলের শেষে।
: ওরা নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে। কুয়াশা মুখ ফিরিয়ে দেখল দরজাটা আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সামনে একটা দীর্ঘ সুড়ঙ্গ। আবছা আলো। ‘মিনিট দুয়েক এগোতেই সামনে আর একটা সিঁড়ি পাওয়া গেল। সিঁড়ি বেয়ে ওরা উঠে গেল একের পর এক। সিঁড়ির উপরে একজন দাঁড়িয়ে ছিল। ::ওরা উঠে যেতেই লোকটা বলল, ‘সব ঠিক আছে, হুজুর। লোকটাকে অন্ধকারে চিনতে পারল না কুয়াশা।
: শেষ রাতের হাওয়া ঠাণ্ডা পরশ বুলিয়ে দিল কুয়াশার ললাটে, মুখে। খোলা, হাওয়ায় বুক ভরে শ্বাস নিল সে। অন্ধকার একটু একটু করে কেটে যাচ্ছে।
* ওরা সবাই সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আছে। ঢেউ-এর শব্দ এসে পৌঁছুল কুয়াশার কানে। চাঁদের আলো আদিগন্ত সমুদ্রের উপরে চিকুচি করে এক মায়াময় পরিবেশ, সৃষ্টি করেছে। | দশফুট নিচে সমুদ্র তীরটা ঢালু। সামনে একটা জাহাজের । যাচ্ছে।
তীর থেকে হাত পনের দুরে। তীরে একটা রো-বোট।’ * ওটা হচ্ছে আমার ইউ-বোট। আঙুল দিয়ে জাহাজটা দেখিয়ে বললেন বখত, সাহেব।
‘ কোত্থেকে সংগ্রহ করলেন?” | অস্পষ্ট চন্দ্রালোকে হাসলেন বখত সাহেব। সোনাবাঁধানো দাঁত দুটো দেখা গেল। তারপর মুখ ঘুরিয়ে বললেন, নসু মিয়া, তোমরা যাও। দেরি করছ কেন?’
| ঢালু তীর বেয়ে নেমে গেল ওরা। রোববাটে চড়ল একে একে। ‘ কুয়াশা প্রশ্ন করল, ‘কে চালাবে, সাবমেরিনটা?’, কুয়াশা-২০
একজির একটা মিষ্টি দীষ সুড়শ মুখ ফিরিয়ে গুদের সকলের
–
১০১
নসু মিয়া চালাবে। এখন ব্যবস্থাটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন? বোটটা এখুনি। চলে যাবে। এখান থেকে প্রায় পাঁচ মাইল দূরে গিয়ে অপেক্ষা করবে। ওদেরকে আগেই দ্রাঘিমা-অক্ষাংশ দেখিয়ে দিয়েছি। চলুন এবার আপনাকে বুঝিয়ে দেব।’
সুড়ঙ্গ বেয়ে আবার ফিরে এল ওরা। তৃতীয় ব্যক্তি দবীর খাঁ। সুড়ঙ্গের দেয়ালে একটা ইস্পাতের প্যানেল দেখিয়ে বখত সাহেব বললেন, ‘সমুদ্রে যাবার পথ আর একটা আছে। এই দরজা দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এখন জোয়ারের সময় তা সম্ভব নয়।’
: আপনার সমস্ত ব্যবস্থাই অত্যন্ত চমৎকার। যাকে বলে সায়েন্টিফিক। কোথাও কোন ফাঁক নেই। কিন্তু এত সোনা রাখবেন কোথায়? … রাখব কেন? ইউ-বোট সোজা চলে যাবে দক্ষিণ আমেরিকায়। সেখানে
খদের অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।
: যে রূম থেকে ওরা যাত্রা শুরু করেছিল সেই রূমেই ফিরে এল এবার। সেফের দরজায় চাবি লাগাতে লাগাতে বখত সাহেব বললেন, আপনি আপনার হেলিকপ্টার চেক করতে যেতে পারেন ইচ্ছা করলে। আমি ততক্ষণে জরুরী কতকগুলো কাজ সেরে আসি। খবর পেয়েছি, সকাল আটটায় সোনাভর্তি প্লেন ছাড়বে চট্টগ্রাম থেকে। তার আগেই হাতের কাজগুলো সারতে হবে।
না, দরকার নেই হেলিকপ্টার চেক করার। … তাহলে আপনি পাশের রুমে গিয়ে বসুন। পাশের রূমটার দিকে ইঙ্গিত করলেন তিনি, “দরজাটা ভেজানো আছে। ধাক্কা দিলেই খুলে যাবে। চল, দবীর–
কুয়াশা পাশের রূমের দিকে এগোল। ছোটখাট একটা লাইব্রেরি। মাঝখানে। চেয়ার-টেবিল। একপাশে একটা ইজি-চেয়ার। ঠিক তার পিছনেই ছোট একটা সেফ। । ।
সেটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল কুয়াশা। সময় নেই। এখুনি কাজ শুরু করতে হবে। উঁচু হয়ে বসল কুয়াশা সেটার সামনে। পকেট থেকে একটা ওয়ালেট বের করল। সেটা খুলতেই ছোট কয়েকটা যন্ত্র বেরিয়ে পড়ল। সেটা নতুন, মজবুত। তালাটার পদ্ধতিও নতুন। কিন্তু কুয়াশার আক্রমণের কাছে পরাস্ত হতে বেশিক্ষণ লাগল না। ডালাটা খুলে ভিতরের জিনিসপত্র পরীক্ষা করতে লাগল। উপরের তাকে হাতীর দাঁতের বাক্সটাই আগে হাতে নিল সে। ভিতরে কিছু টাকা। কয়েকটা, আকাটা হীরা আর একটা কাগজ। ভাঁজ খুলে দেখল, একটা চিঠি। জানে আলম চৌধুরী লিখেছে বেদার বখতকে। চিঠিটা পড়া শুরু করতেই পাশের রূম থেকে পদশব্দ ভেসে এল। শব্দটা এদিকেই আসছে।
* দ্রুত চিঠিটা পকেটে চালান করল কুয়াশা। কিছু ব্যাংক-নোট আর কয়েক খণ্ড আকাটা হীরা পকেটে পুরে হাতীর দাঁতের বাক্সটা বন্ধ করে সেফের ‘ডালাটা আটকে পাশের ইজি-চেয়ারটায় অর্ধ-শায়িত হয়ে চোখ বন্ধ করল সে। ওয়ালেটটা ১০২,
ভলিউম-৭
গুছিয়ে পকেটে রাখতে ভুলল না।
রূমে ঢুকলেন বখত সাহেব। সোজা এগিয়ে গেলেন সেফের দিকে। পকেট থেকে চাবি বের করলেন। কিন্তু হাতল স্পর্শ করতেই খুলে গেল সেফের ডালা। চিত্ৰাপিতের মত মুহূর্তের জন্যে দাঁড়িয়ে রইলেন তিনি। তারপর নতজানু হয়ে হাতীর দাঁতের বাক্সটা বের করলেন।
উঠে দাঁড়াল কুয়াশা। তার হাতে পিস্তল। পায়ের শব্দে মুখ ফেরালেন বখত সাহেব। মুখটা মুহূর্তের মধ্যে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তিনি ভীতকণ্ঠে বললেন, “ওহ, তাহলে তুমি?’
.. ‘হ্যাঁ, আমিই। চাবিটা আমায় দাও। চাবিটা বখত সাহেব কুয়াশার হাতে তুলে দিলেন নীরবে। ‘
সেই লোকগুলো কোথায়?’ ‘কারা? ‘ ‘ ‘ . ‘সেই টিকটিকি দু’জন, আর মিসেস চৌধুরীই বা কোথায়?
‘ওরা তাহলে তোমার লোক! তুমি, তুমি পুলিসের লোক, মানে সি. আই. ডি র লোক!’দাঁতে দাঁত পিষলেন বখত সাহেব। বিস্ময় আর ভয়ের ভাবটা কেটে গেছে তার। এখন হিংস্র হয়ে উঠেছে তিমি।’নেকড়ের মত দেখাচ্ছে তাকে।
সে পরিচয় পরে হবে। * তুমি তাহলে মি. সিম্পসন?
বলেছি তো, ঢের সময় পাওয়া যাবে পরিচয়ের। এখন চল, আগে ওদেরকে বের করে দাও।’. …
• ‘ওরা মারা গেছে।
: তাহলে তোমাকেও মরতে হবে এবং এই দণ্ডেই। এখন সত্যি কথা বল। আর ওদেরকে বের করে দাও। নিয়ে চল আমাকে ওদের কাছে।
‘আমি দুঃখিত। ওরা মারা গেছে। “আমি ওদের মৃতদেহ দেখতে চাই।
সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছি।’কুয়াশার চোখে চোখ রেখে বললেন বখত সাহেব। .” পিছনে অতি মৃদু পদশব্দ শোনা গেল। কিন্তু কুয়াশা সেদিকে তাকাবার আগেই তার ঘাড়ের উপর দিয়ে একটা হাত এসে পিস্তলটা স্পর্শ করল। পিস্তলটা ছিনিয়ে নিতে পারল না সেই অপরিচিত হাতটা, কিন্তু মুহূর্তের অসাবধানতায় সেটা ছিটকে পড়ল হাত থেকে। মাটিতে পড়ার আগেই সেটা বলের মত লুফে নিলেন বখত সাহেব। মুখ ফিরিয়েই প্রচণ্ড একটা ঘুসি বসাল কুয়াশা লোকটার চোয়ালের নিচে। একটা শব্দ করে লোকটা চিত হয়ে সোফার উপরে পড়ে গেল। লোকটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগেই বখত সাহেবের নিরুত্তাপ কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ব্যাস ব্যাস, আর নয়। থাম এবার।তার হাতের পিস্তলটা কুয়াশার দিকে উদ্যত। কুয়াশা-২০
আমি ওদের মৃলয়ছি। কুয়াশারগল। কিন্তু
.. ১০৩
+
।
.
।
১
.
*
| কুয়াশা আত্মসংবরণ করল। সোফার উপর থেকে উঠে দাঁড়াল লোকটা। হিংহ
দুটো চোখ মেলে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে রইল। লোকটা দবীর খা।
| ‘এবারে বল, তুমি কে? তোমার আসল পরিচয় কি?’: . . ‘পরিচয় জেনে আর কি হবে, হুজুর। শেষ করে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায় আমার হাতে ছেড়ে দিন। দু’পায়ে লোহার রড বেঁধে সমুদ্রের নিচে রেখে আসি। দীর খাঁ বলল।
‘মানে নতুন ধরনের একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে চাস? মন্দ না তোর আইডিয়াটা। কিন্তু এখন সম্ভব নয়। যাই করিস কেউ যেন জানতে না পারে। তার, পরিণাম হবে মারাত্মক। আপাতত ওকে নসু মিয়াদের রূমে নিয়ে যা। পরে তোর | প্রাণে যা চায় করিস। জানে আলমের মত ওকেও শেষ করে দেওয়া ছাড়া পথ।
নেই,
‘অপরাধ বুঝি দু’জনের একই?’কুয়াশা ঠাট্টা করল।
: ‘ পরিমাণ বিবেচনা করলে তো তাই দাঁড়ায়। পাল্টা রসিকতা করলেন বখত সাহেব:। আরও বোধহয় কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু টেলিফোনটা বেজে উঠল। দবীরের হাতে পিস্তল দিয়ে রিসিভার তুললেন বখত সাহেব, হ্যালো, হ্যালো হ্যাঁ হ্যাঁ, বলছি। প্যাড ও পেন্সিল টেনে নিলেন, হ্যাঁ, জি-জি, এফ, এক্স. কিউ.। সাতটায়! হঠাৎ…? আচ্ছা, ঠিক আছে।’ রিসিভারটা রেখে দিয়ে নীরবে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। দাড়ি চুলকালেন। চেহারায় চিন্তার আভাস। তারপর টেবিলের উপরে রাখা মাইক্রোফোনের সুইচটা টিপে দিয়ে বললেন, ‘আজমল? হা••শোন,সময়টা বদলে গেছে। কপ্টারটা বের করে আন আর এঞ্জিনটা চালু করে দাও।তারপর দবীর ধার দিকে ফিরে বললেন, ‘প্লেন একঘন্টা আগে রওয়ানা হচ্ছে। আমাদের হাতে সময় নেই। | দীর খা জিজ্ঞেস করল, আপনি নিজেই চালাবেন, হুজুর?
: হ্যাঁ, আমিই চালাব। যা ওকে রেখে আয়। তোকেও থাকতে হবে আমাদের সাথে। ওকে নসু মিয়াদের রূমে নেবার দরকার নেই। ওই টিকটিকি দুটোর কাছেই রেখে আয়। জীবনের শেষ সাধ পূর্ণ হোক। যা, দেরি করিসূনে। আমি এখানেই আছি।
আবার সেই সিঁড়ি, সরু প্যাসেজ ধরে একটা রূমের সামনে এল দু’জন। সামনে কুয়াশা। পিছনে পিস্তল হাতে দবীর খা। সুইচ টিপে দরজা খুলে ভিতরে যেতে ইঙ্গিত করল লোকটা কুয়াশাকে। কুয়াশা ঢুকতেই দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল।
. ভাঙা একটা তড়পোষের উপর পাশাপাশি শুয়ে আছে কামাল ও ডি কস্টা। কুয়াশার পদশব্দে দু’জনই দ্রুত উঠে বসল। ওদের দৃষ্টিতে আতঙ্ক। কিন্তু কুয়াশাকে দেখে আতঙ্ক মিলিয়ে গেল। দু’জনের চোখেই ভেসে উঠল আবার আশার আলো। কামাল কি যেন বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু ডি কস্টার কণ্ঠ শোনা গেল ‘
• ‘ ১০৪
ভলিউম-৫
“
• ‘বস’ ভাঙা গলায় চিৎকার করে উঠল ডি, কস্টা। তারপর ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠল। ডান হাতটা দেখাল কাঁদতে কাঁদতে। ফুলে গেছে ডান হাতটা। কামালের কপালেও বড় একটা কাটা দাগ । চোখের পাশে কালশিরা পড়েছে। মুখেও আঁচড়ের চিহ। ‘‘‘… ‘ ‘ ‘, ‘‘. . . :
* ডি কস্টাকে ঠাণ্ডা করতে বেগ পেতে হল কুয়াশাকে। তাকে যতই বোঝাবার চেষ্টা করে, তার আবেগ ততই প্রবল হয়ে ওঠে। শেষটায় রণে ভঙ্গ দিয়ে কামালের দিকে তাকাল কুয়াশা, তারপর কেমন লাগছে?’ …….. ….. . ১. : ‘রাজকীয় সম্বর্ধনা,’ ম্লান হাসি হাসল কামাল। ভীষণ মেরেছে। বিশেষ করে
ওকে। কান্নাকাটি করাতেই মারটা বেশি খেয়েছে। তারপর তুমি কিভাবে?
.একই ইতিহাস। মানে, ধরা পড়েছি।’ …।? সিগারেটের প্যাকেট বের করল কুয়াশা। লোলুপ হয়ে উঠল কামালের দৃষ্টি। বলল, ‘দেখি সিগারেট দাও আগে। মরবার আগে শেষ সুখটানটা দিয়েই মরি। :: মুহূর্তে কান্না থামিয়ে হাত বাড়াল ডি, কন্টাও। কামালের দিকে বাড়িয়ে দেওয়া প্যাকেট থেকে ছোঁ মেরে একটা সিগারেট নিয়ে বলল, বস্, পকেটে মাল আহে?’,
•১ ডিকার জন্যে সহানুভূতিতেমনটা পূর্ণ হয়ে গেল কুয়াশার। ইশারায় জানাল, নেই। | নিজে একটা সিগারেট ধরিয়ে উঠে পড়ল কুয়াশা। বলল, কামাল, সময়
নেই। আমাকে এক্ষুণি শুরু করতে হবে কাজ। ১।
পকেট থেকে ওয়ালেটটা আবার বের করল কুয়াশা। তাড়াহুড়োর জন্যেই হোক আর যে কারণেই হোক বেদার বখত বা তাঁর স্যাজাৎ কুয়াশার পকেট সার্চ করেনি। তার পরিণামটা অবশ্যই ভোগ করতে হবে ওদের। সোনাবাহী বিমানে হামলা ওরা চালাবেই যদি কুয়াশা যথাসময়ে মুক্ত হতে না পারে।
‘ সোয়া ছটার সময় সে কাজ শুরু করল। দরজা ভাঙবার চেষ্টা করা বৃথা। ওতে ইলেকট্রিক কারেন্ট আছে। সুতরাং দেয়াল ভাঙতে মনস্থ করল সে। ক্ষুদ্র ক্ষু ড্রাইভার একাজের উপযুক্ত নয়। কিন্তু উপায় নেই। ‘ডি, কষ্টা আর কামাল নীরবে কর্মরত কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বসে রইল। প্রথম ইটটা যখন খুলে গেল ডি কস্টা লাফ দিয়ে এসে উবু হয়ে কুয়াশার পাশে বসল। বার ইঞ্চি কঠিন দেয়াল ভেঙে সে যখন একটা মানুষের বেরোবার উপযুক্ত পথ করতে পারল তখন সাতটা বেজে গেছে। সোৎসাহে কামাল বলল, বাইরে বোধহয় সুইচ আছে। টিপলেই দরজা খুলে যাবে। : কুয়াশা তখন ক্লান্ত। সমস্ত শরীর বেয়ে দরদর করে ঘাম বইছে। প্রথমে বেরোল কুয়াশাই। বাইরে এসে সুইচটা খুঁজে বের করল। সেটা টিপতেই দরজা খুলে গেল। ডি. কস্টা ও কামাল বেরিয়ে এল। কুয়াশা-২০
১০৫
প্যাসেজের মধ্যে কাউকে দেখা গেল না। কামাল বলল, ‘মিসেস চৌধুরীও কাছে-পিঠেই একটা রূমে বন্দী হয়ে আছেন।
• কোন রূমে জান তুমি?’ | ‘মোটামুটি একটা আইডিয়া আছে। আগে, আমাদের তার পাশের রূমেই
আটকে রাখা হয়েছিল। দবীর খা, মানে বেদার বখতের স্যাঙ্গাতের মুখে শুনেছি।’ .., কিন্তু এখন সময় হবে না। এদিকে অনেক কাজ। চল, আগে উপরে যাই।
: তিনজন প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে এগোল। সিঁড়ির কাছে এসে কুয়াশা বলল, ‘আস্তে, কোন শব্দ কোরো না। মি. কস্টা, পায়ের শব্দ না হয় যেন। ।
সিঁড়ির দরজাটা খোলা। নির্বিঘ্নে উপরে উঠে এল ওরা। সোজা চলে এল লাইব্রেরিতে। কেউ কোথাও নেই। ল ব্রেরির পুব দিকের একটা জানালা খোলা। টেবিলের উপরে রাখা মাইক্রোফোনটার উপর আলো এসে পড়েছে। ‘– আর একটা সিগারেট ধরাল কুয়াশা। ডি কস্টা বোধহয় মদের খোঁজ করতে
গেল পাশের রূমে। কামাল একটা সোফায় বসল।
সিগারেটে একটা টান দিয়ে কুয়াশা রিসিভারটা তুলল। অনেকক্ষণ ডায়াল করল। টেলিফোন ডেড় নয় কিন্তু লাইন পাওয়া গেল না। এনগেজ-সাউও হচ্ছে। ‘ শেষটায় রিসিভার রেখে দিয়ে আপন মনে বলল, ‘তাই তো, আমারই ভুল হয়েছে। এক্সচেঞ্জে নিশ্চয়ই বখতের লোক আছে। প্রয়োজনীয় নম্বরগুলোর এখন কানেকশন পাওয়া যেতেই পারে না।
• দ্রুত চিন্তা করতে লাগল কুয়াশা। প্রতিটি সেকেণ্ড মূল্যবান। একটিই পথ দেখতে পেল সে। কিন্তু অত্যন্ত ঝুঁকি আছে তাতে। অন্য পথও আছে, কিন্তু এই মুহূর্তে তা কার্যকরী হবে না। একটা কথা তার মনে পড়ল। বখত বলেছিল, অন্য কাউকেই জানানো চলবে না। তাহলে পরিণাম হবে মারাত্মক। সেই কথাটাই কুয়াশাকে তার কার্যধারা স্থির করতে সাহায্য করল। টেবল-মাইক্রোফোনের সুইচটা ঘুরিয়ে ডাকল, “আজমল?’ | ‘জি, স্যার। . . . . . ‘‘ ‘হাসিব বলছি। আমার কপ্টারটা তাড়াতাড়ি চালু করে ফেল।’
| করছি, স্যার,’লোকটা জবাব দিল। একটা ভারি বোঝা নেমে গেল কুয়াশার মাথা থেকে। লোকটা অবাক হয়নি মোটেও।..
হয়ত এখনও কোন আশা নেই। হয়ত সে নিশ্চিত মৃত্যুর পথে এগোচ্ছে কিন্তু একথাও ঠিক যে অসহায়ের মত সে নীরবে বসে হাত কচলাতে পারে না। সোনাভর্তি বিমানের নিরপরাধ পাইলটকে বাঁচাবার শেষ চেষ্টা তাকে করতেই হবে। এই বাড়িটার কোথাও একটা রেডিও ট্রান্সমিশন স্টেশন আছে। কিন্তু তা খুঁজে বের করতেও অন্তত আধ ঘন্টা সময় লাগবে ‘সুতরাং এই পথ ছাড়া অন্য কোন পথ নেই। ১০৬
ভলিউম-৭
|
“
– হেলিকপ্টারের ককপিটে বসে যখন কামালের দিকে তাকাল কুয়াশা তখন। দেখল তার পাশে আরও কয়েকজন লোক এসে দাঁড়িয়েছে। শহীদকে দেখা গেল। মি, সিম্পসনও দাঁড়িয়ে আছেন। ওদের দিকে হাত নেড়ে বিদায় জানাল কুয়াশা। . একরাশ ধুলো উড়িয়ে গর্জন করে উধ্বমুখে ধাবিত হল কুয়াশার হেলিকপ্টার । অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু বাতাস ছিল অনুকূল । দু’হাজার ফুট উঠতেই তার চোখে পড়ল একটা বিমান উত্তর দিক থেকে দক্ষিণের দিকে এগোচ্ছে। নিশ্চয়ই এটা সেই স্বর্ণবাহী বিমান। এ ছাড়া আর কোন বিমান আকাশে নেই। বেদার বখতের খোঁজ করল। বেশ অনেকটা দূরে বেদার বখতের হেলিকপ্টার দেখা গেল। প্রায় তিন হাজার ফুট উপরে রয়েছে বেদার বখত।
• বিমানটা এগিয়ে আসছে। অতি ধীর গতিতে। ঘন্টায় বোধহয় মাত্র একশ’ মাইল গতিতে। এত ধীরে চলবার মানে বুঝতে পারল না কুয়াশ: হয়ত নিরাপত্তার জন্যে। কুয়াশার হেলিকপ্টারের কাছে এসে পড়েছে বিশনটা। বডিতে বড় বড় হরফে লেখা আছে, জি-জি, এফ, এক্স, কিউ’। কুয়াশা। হঠাৎ খেয়াল হল, বেদার বখতও নিশ্চয়ই তাকে দেখেছে। এমন কি তার হেলিপ্টারটা উঠতেও দেখেছে । নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে যে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। তার পথে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। আগে তাই তার মোকাবেলায় লাগবে বেদার বখত। :’, কখন বখত সাহেব আক্রমণ করবে, তাই ভাবছিল কুয়াশা। আর সেই মুহূর্তেই শুরু হল আক্রমণ । নিজের এঞ্জিনের গর্জন ছাপিয়ে প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেল। মেশিনগান চার্জ করছে বেদার বখত। ডাইভ দিল কুয়াশা। বখতের কপ্টার উত্ত কুকুরের মত এগিয়ে আসছে অনেকটা উপর দিয়ে। কমলা রংয়ের হালকা আগুনের আভা বেরোচ্ছে ককপিটের পাশ থেকে। আবার গোলা ছুঁড়ছে বখত। সোজা উপরের দিকে উঠে গে। কুয়াশা। বখতের কপ্টারের খুব কাছে দিয়ে উঠে গেল উতর আকাশে। বাঁ দকে ঘোরাল। বখত ডাইনে ঘুরে উপরের দিকে আর একবার চার্জ করল। ততক্ষণে কুয়াশা বখতের পাশে এসে পড়েছে। বখত ঘুরে তাকে চার্জ করতেই কুয়াশার কারটা ঘুরে গেল। দুটো কপ্টার এখন। সামনাসামনি। পরস্পরের সাথে ধাক্কা লাগাটা বিচিত্র নয়। কিন্তু ঘুরল বখতই। সা করে কপ্টারটাকে ডান দিকে ঘুরিয়ে আবার চার্জ করল। কুয়াশাও ততক্ষণে ঘুরে গেছে। …. …….
এতক্ষণ পর্যন্ত কুয়াশা একবারও গুলি করেনি। কারণ তার কাছে যেটুকু রস
• আছে তা এই মুহূর্তে ব্যয় করলে পরে বখত তাকে বেকায়দায় ফেলতে পারে সুরাং সে চাইছে বখত তার রসদ শেষ করে ফেলুক। তারপর দেখা যাবে। .. | ঘৰ চার্জ করে চলেছে অবিরামভাবে। কিন্তু কুয়াশার কপ্টারকে একবার শও করতে পারেনি। সম্ভবত তাতে আরও খেপে গিয়ে বিপুলতর উদ্যমে চাও করছে সে। গগলসূ-পরা বেদার বখতকে দেখতে পাচ্ছে সে। ওর দিকেই তাকিয়ে কুয়াশা-২০
| ১০
আছে। আর একবার চার্জ করল বখত। কুয়াশা সরে গেল। পুরোপুরি ঘুরে বখতের কপ্টারের পিছনের দিকে গেল। মেশিনগানটা এই প্রথম সে স্পর্শ করল। আগুনের আভা দেখা দিল একবার। কিন্তু সরে গেছে বখতের কপ্টার। ডাইভ দিয়ে অনেকটা নেমে আবার উঠে পড়ল বখতের কন্টারটা। . স্বর্ণবাহী বিমানটা চোখে পড়ল কুয়াশার। কাছে এসে পড়েছে নিশ্চয়ই বখত সাহেব। দেখতে পেয়েছে বিমানটাকে। কিন্তু বখতকে সুযোগ দেয়া চলবে না। এতক্ষণে কুয়াশার, খেয়াল হল যে দুটো হেলিকপ্টারই তীর থেকে কয়েক মাইল দূরে চলে এসেছে। স্বর্ণবাহী বিমানটাও ওদের অনেকটা কাছে এসে গেছে। সাঁ করে দিক পরিবর্তন করল বিমানটা। অনেকটা জায়গা ঘুরে এবাউট-টান করল। নিশ্চয়ই ওদের লড়াই দেখে সন্দেহ করেছে কিছু একটা। পাইলট বুদ্ধিমান সন্দেহ | নেই।
– বিমানটা, সুরে যেতেই কুয়াশাকে অগ্রাহ্য করে বেদার বখত তার কন্টারটা নিয়ে ছুটে চলল পলায়নপর বিমানটার দিকে। বুমবুমবুম করে এক নাগাড়ে গোলা বর্ষণের আওয়াজ কানে এল কুয়াশার। কিন্তু স্বর্ণবাহী বিমানটা গতি বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এঁকে বেঁকে এগোচ্ছে। আবার কখনও উপরে উঠছে, কখনও নিচে নামছে। তবু একটা গোলা বিমানটার দক্ষিণ পাখায় আঘাত হানল। কুয়াশা দেখতে পেল ঝাঁকুনি খেল বিমানটা। পাখায় আগুন ধরে গেছে। কিন্তু গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে পাইলট। ছুটে চলেছে পতেঙ্গা বিমান বন্দরের দিকে। তাকে অনুসরণ করছে বেদার বখত। গোলাবর্ষণ করেই চলেছে সে। কুয়াশাও ছুটে চলেছে বেদার বখতের পিছন পিছন। খুব কাছে এসে পড়েছে কুয়াশা বেদার বখতের। তার হাতটা চলে গেল মেশিনগানের ট্রিগারের দিকে। নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানল। বেদার বখতের হেলিকপ্টারের লেজ গোলাবিদ্ধ হল-একবার . দু’বার, তিনবার। …
কেঁপে উঠল বেদার বখতের হেলিকপ্টার। উল্টে-পাল্টে যোচড় খেয়ে আবার সোজা হয়ে গেল। কিন্তু আগুন ধরে গেছে পিছন দিকটায়। আরও কয়েকবার গুলি চাল কুয়াশা। আবার ডিগবাজি খেল হেলিকপ্টারটা, কিন্তু সোজা হয়ে উঠল না।
জ্বলন্ত হেলিকপ্টারটা নামছে। ধীরে ধীরে নামছে। আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাচ্ছে কুয়াশা। দাউ দাউ করে জ্বলছে। হেলিকপ্টারটার সর্বাঙ্গে আগুন ধরে গেছে। • ২. নামছে এখনও ওটা–এখনও নামছে। নিচে নীল সমুদ্র আহবান করছে বেদার বখতকে। স্বর্ণবাহী বিমানটা চোখের আড়ালে চলে গেছে। এতক্ষণে হয়ত গিয়ে
ল্যা করেছে বিমান বন্দরে।
–
–
–
–
Leave a Reply