১৯. সমুদ্রের অতলে ২ [ওসিআর ভার্সন – প্রুফ সংশোধন করা হয়নি]
কুয়াশা ১৯
প্রথম প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯
এক চারদিকে অতলান্ত নীল সমুদ্র। সূর্যের আলোয় চিকচিক করছে সাগরের বুক। ইংলিশ চ্যানেল ছাড়িয়ে অনেকদূর এসে পড়েছে রোজমেরী। উপকূলের তটরেখা দৃষ্টি সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।’ “ ডেকের উপর, পায়চারি করছিল কুয়াশা। তার চেহারায় গভীর চিন্তার ছাপ। সে ভাবছিল তার আমন্ত্রণকর্তা জোস্টিফেন আক্রমণ করবে কোন পথে। বিপদ আসবেই। কিন্তু কখন, কোন পথে, কিভাবে? জো স্টিফেনের একটা নাটকীয়তা সৃষ্টির ঝোঁক আছে। সে নাটকীয়ভাবে পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার সাথে হামলা চালাবে। কিন্তু প্রথম দৃশ্য শুরু হবে কখন? না কি ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে? | এই ইয়টের বাসিন্দারা ছাড়া বাইরের দুনিয়ায় একমাত্র কামালই তার হদিস
জানে। বিপদ যদি আসেই তাহলে তার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। } রেজিমেরী নামক এই শয়তানপুরীতে মিত্র একমাত্র এডিথ। কিন্তু সে তো কুয়াশার চাইতেও অসহায়। তার উপর ভরসা করার প্রশ্নই ওঠে না, বরং বিপদ থেকে তাকেই রক্ষা করতে হবে কুয়াশার । আর একজনের কাছে সাহায্য পাওয়া যেতে পারত। সে সেই হিপ্পি প্রবর আততায়ান। কিন্তু ইয়টে ওঠার পর চব্বিশঘন্টা পার হয়ে গেলেও তার সাথে সাক্ষাৎ ঘটেনি। হয়ত সে আসেনি। হয়ত জো তার কীর্তি জেনে ফেলেছে। তাকে হয়ত ইতিমধ্যেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
. তাছাড়া আতোয়ানের আসল উদ্দেশ্য কুয়াশার জানা নেই। এমনও হতে পারে, সে জো’র গোপন ধনভাণ্ডার করায়ত্ত করতে চায়। সেক্ষেত্রে তার সাথে কুয়াশার সংঘর্ষ ঘটা বিচিত্র নয়। অন্য সম্ভাবনাও আছে। হয়ত সে পুলিসের লোক। অথবা এডিথ ও এথেন্সের-মত. সে-ও প্রতিশোধ নিতে বেরিয়েছে। শেষেরটাই সত্যি হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কারণ, কুয়াশা জানতে পেরেছে, মাঝে মাঝে লম্বা চুলওয়ালা বিদঘুঁটে পোশাক পরা একটা লোক অতিগোপনে এথেলের সাথে দেখা করতে যেত। আতোয়ানই হয়ত সেই লোক। এথেলের হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবার জন্যেই হয়ত আতোয়ান জো স্টিফেনের উসন নামের সেই অনুচরকে খুন করেছিল। কিন্তু আতোয়ান এখন কোথায়? সে কি এই ইয়ট্রেই আছে? না কি ধূর্ত জোতার পরিচয় পেয়ে হত্যা করেছে? কুয়াশা-১৯
* সিগারেট ধরিয়ে একটা ডেক চেয়ারে বসল কুয়াশা। পাশের চেয়ারটায় প্রফেসর রোজেনবার্গ বসেছিলেন। তাঁর হাতে চুরুট। দৃষ্টি সমুদ্রের দিকে প্রসারিত । তার আগমন ও উপবেশন বোধহয় প্রফেসরের ইন্দ্রিয়মূলে আঘাত করেনি। কুয়াশা বুঝল, প্রফেসর এখন অন্য এক জগতে বিরাজ করছেন। এই পৃথিবীর শব্দ-গন্ধ-বর্ণ তার ইন্দ্রিয়ে এখন পৌঁছুবে না। … সিগারেটে ধীরে ধীরে টান দিতে লাগল কুয়াশা। হঠাৎ এঞ্জিনের গর্জনটা থেমে গেল । একঘেয়ে পরিচিত গর্জনটা থেমে যেতেই প্রফেসর বোধহয় সচকিত হলেন। যেন তাঁর স্বপ্ন ভেঙে গেল। মুখ ফেরাতেই কুয়াশার চোখে চোখ পড়ল। মৃদু হাসলেন প্রফেসর। সলজ্জ হাসি।
কুয়াশা বলল, এখানেই বোধহয় আপনার বাথিস্টলের এক্সপেরিমেন্ট হবে? . প্রফেসর চারদিকে চেয়ে বললেন, ঠিক বুঝতে পারছিনে। এঞ্জিন থেমে যাওয়াতে অবশ্য মনে হচ্ছে আমরা এসে গেছি। পানি এখানে বেশি নয়। মাত্র পঁচানব্বই ফ্যাদম। তবে প্রাথমিক পরীক্ষা চলতে পারে।
চারদিকে একবার তাকাল কুয়াশা। কাছে পিঠে কেউ নেই। জো ও এডিথ হুইল হাউজে। হাত বিশেক দূরে রোদে পিঠ দিয়ে একটা ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছে জো’র এক স্যাঙ্গাৎ! লোকটা ওখানে বসে আছে প্রফেসর ও বিশেষ করে কুয়াশার দিকে দৃষ্টি রাখার জন্যেই। লোকটার নাম কার্ল বাহাম। ইয়টে উঠবার, আগে কুয়াশা ওকে কখনও দেখেনি। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে ঐ কার্ল বানহামই জো’র ডান হাত। লম্বা-চওড়ায়, লকটা দৈত্যের মত। চোখে-মুখে নিষ্ঠুরতার ছাপ স্পষ্ট। ‘ *, সিগারেটটা ছুঁড়ে সমুদ্রে ফেলে দিল কুয়াশা। প্রফেসরের দিকে মুখ ফেরাল আবার। তার হঠাৎ মনে হল, শুধু সে তার এডিথই নয়, তৃতীয় একজনও তাদের মত একই বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। অথচ তার কথা এর আগে কুয়াশার মনে হয়নি। পার্থক্য শুধু এই যে, তারা তাদের বিপদটাকে খুব ভাল করে জানে। অথচ এই বয়স্ক-শিশু কল্পনাও করতে পারছে না যে, জো স্টিফেনের ছদ্মবেশে, মৃত্যু তার শিয়রে এসে দাঁড়িয়েছে। . ১ . . কুয়াশা নিচু গলায় প্রফেসর রোজেনবার্গকে প্রশ্ন করল, ‘জোর সাথে আপনার
পরিচয় নিশ্চয়ই দীর্ঘদিনের? :: :: প্রফেসর মাথা নেড়ে বললেন, না তো। মাত্র মাস ছয়েক আগে ওঁর সাথে আলাপ হয়েছে। সে ধরুন আমার প্রথমবার সাগরের নিচে নামবার কিছুদিন পর। উনি নিজে যেচে আমাকে সাহায্যের প্রস্তাব করলেন। বলতে গেলে, উনি এসেছিলেন দেবতার আশীর্বাদের মত। আমি ঠিক করেছি এবার গভীর সমুদ্রে নতন যে মাছ দেখব, মি. স্টিফেনের নামে তার নামকরণ করব। শেষের দিকটায়। . গদগদ শোনাল প্রফেসরের, কণ্ঠ।
ভলিউম-৭
… আপনি বোধহয় এখন পর্যন্ত আপনার আবিষ্কারের ব্যবসায়িক সম্ভাবনার কথা
ভেবে দেখেননি?’ কুয়াশা মৃদুস্বরে প্রশ্ন করল । : ব্যবসায়িক সম্ভাবনা। প্রফেসরের দুচোখে গভীর বিস্ময়। এর কোন ব্যবসায়িক দিক আছে নাকি? কই একথা তো আমার একবারও মনে হয়নি।
কুয়াশা ইতস্তত করে বলল, আমার মনে হয়, অর্থাৎ•••। পিছন দিকে পদশব্দ হতেই কুয়াশা মুখ ফিরিয়ে দেখল জো ও এডিথ তাদের দিকেই আসছে । প্রফেসরের কথাগুলো নিশ্চয়ই জো’র কানে গেছে। না গেলেও প্রফেসর এখুনি যে তা তার কানে তুলবেন তাতে সন্দেহ নেই। তাতে প্রফেসরের বিপদের মাত্রা বাড়বে বই কমবে না। তার চাইতে নিজের মুখ দিয়েই কথাগুলো বের করা ভাল। বাক্যটা তাই শেষ করল কুয়াশা, ‘আমিও ঠিক নিশ্চিত নই। তবে এই যেমন ধরুন, আপনার বাথিস্টলের সাহায্যে গভীর সমুদ্রে মুভী ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।’
জো ও এডিথ এসে দাঁড়িয়েছে।
প্রফেসর বললেন, “আমি ঠিক বলতে পারছিনে। মি. স্টিফেন, আপনার কি মনে হয় আমার এই এক্সপেরিমেন্টের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আছে? ., : জো তার স্বভাবসিদ্ধ নিরুত্তাপ, কর্কশকণ্ঠে বলল, “এ সম্পর্কে আমি নিজেও কিছু বলতে পারব না। যাদের এসব সম্পর্কে জ্ঞান আছে তাদের জিজ্ঞেস করে দেখা যেতে পারে। ঠাণ্ডা দৃষ্টি নিক্ষেপ করল জো কুয়াশার দিকে। তারপর প্রফেসরের দিকে ফিরে প্রশ্ন করল, লাঞ্চের আগেই কি গিয়ারটা দেখে নিতে চান?
‘প্রফেসর বললেন, নিশ্চয়ই।’’
ওরা সবাই চলে গেল পিছনের ডেকে । তিনজন নাবিক ধরাধরি করে বিদঘুঁটে আকারের একটা বিরাট মূর্তি এনে ডেকের উপর নামাল। দেখতে অনেকটা, মহাশূন্যযাত্রীদের পোশাকের মতই অথবা প্রাচীন রোমান যোদ্ধাদের বর্মের উন্নততর সংস্করণ। মাথাটা চতুষ্কোণ। চারদিকে কাঁচ। সমগ্র পোশাকটাই ধাতুতে গড়া বলে মনে হল কুয়াশার। এখানে সেখানে ছোট-বড় বাক্স। মাথার ডগায় সারি সারি বাল্ব দেখা যাচ্ছে কাঁচের ভেতর দিয়ে। তার একটু নিচেই পাশাপাশি ও উপরে-নিচে দুটো গোলাকার ও কয়েকটা চতুষ্কোণ ফেঁকড়। নিচ দিক দিয়ে একটা কেবল বেরিয়ে এসেছে।
* কুয়াশা অনেকক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। তারপর বলল, তাহলে এটাই আপনার সাঁতারের নতুন পোশাক। কিন্তু বড় ভারি বলে মনে হচ্ছে। আর এর ভিতরে ঢুকলে চলাফেরাই বা করবেন কেমন করে?’;
| প্রফেসর হেসে বললেন, ‘যতটা ভারি মনে করছেন ঠিক ততটা ভারি নয় । ধাতু দিয়ে সমস্তটা তৈরি করলেও এটা আসলে খুবই হালকা। আর ভেতরে যেটুকু হাওয়া থাকবে তাতে ওজন আরও কমে যাবে পানির তলে। এখন আমি যেমন কুয়াশা-১৯
স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারছি, আশা করি, ওর ভেতরে ঢুকলেও ঠিক ততটুকুই স্বচ্ছন্দে চলতে ফিরতে পারব।
, গলার কাছে মাথার চতুষ্কোণ’ বাক্সটার নিচ দিকে একটা বোতাম টিপতেই খুলে গেল সামনের দিকটা।
“ প্রফেসর বুঝিয়ে দিলেন, ‘এই যে, গোল দুটো ফোকড় দেখতে পাচ্ছেন এই দুটো হল চোখ। এটাই সামনের দিক । এর নিচে এই দেখুন কাগজ পেন্সিল রেখেছি, ওটা একটা ছোট্ট ক্যামেরা। পাশেরটাতে আছে ফিল্মরোল। ওই যে, ওটা সুইচ বোর্ড। বাইরের আর ভিতরের আলোর সুইচ ওখানেই আছে। আর এই যে দেখুন, এখানে আছে চিউয়িংগাম। হাসলেন প্রফেসর ‘জানেন তো, আমি একটু। ভোজনবিলাসী মানুষ।
হাসল কুয়াশাও। ঢাকনাটা বন্ধ করে দিয়ে প্রফেসর বললেন, ‘চলুন, ঠিকই আছে সব।
৫.
‘
, ।
দুই দুটো অক্সিজেন সিলিণ্ডার বের করা হল কেস থেকে। প্রফেসর সিলিণ্ডার দুটোর অটোমেটিক ভাল পরীক্ষা করতে করতে বলেন, “বাথিস্টল আর সিলিণ্ডার একই ধাতুতে তৈরি। পরীক্ষা শেষ করে বললেন, এবার তাহলে যাত্রা করা যেতে
পতে তৈরি। পরীক্ষা করতে করতে কেস থেকে। এই
* উপস্থিত সকলের সাথে করমর্দন করলেন প্রফেসর। সবাই তার অভিযানের সাফল্য কামনা করল। বাথিস্টলের মধ্যে প্রবেশ করার জন্য তিনি ডেকহাউজের ছাদে চড়লেন। ঢুকতে হবে উপরের দিক দিয়ে। মাথার ঢাকনাটা খুললেন। ধীরে ধীরে নামলেন পোশাকের মধ্যে। কাঁচের গোল দুটো ফোকরের মধ্যে দিয়ে তাঁর হাসিভরা মুখটা দেখা গেল। একজন নাবিক ডেকহাউজের ছাদে চড়ে অক্সিজেন সিলিণ্ডার দুটো তার হাতে তুলে দিল। তিনি সেগুলো এডজাস্ট করলেন। সুইচ টিপে বাইরে থেকে ঢাকনাটা বন্ধ করে দিল জো নিজে। স্কু লাগানো হল। একজন নাবিক একটা টিউব থেকে আঠার মত কিছু একটা বের করে ঢাকনাটার চারদিকে প্রলেপের মত করে লাগিয়ে দিল। দেখা গেল, প্রফেসর নিজেও টিউব হাতে ব্যস্তভাবে ভিতরে প্রলেপ লাগাচ্ছেন। . একটু পরে প্রফেসর মাথার উপর দিয়ে কানে ইয়ারফোন লাগালেন। শিং-এর আকৃতির ট্রান্সমিটার লাগালেন বুকের উপর। রেলিং-এর পাশে টেবিলের উপর রাখা ক্ষুদ্র একটা লাউডস্পীকারের মধ্যে দিয়ে কণ্ঠস্বর ভেসে এল। ধাতব আর কর্কশ সেই কণ্ঠস্বর ।
| ‘হ্যালো, আমার কথা আপনারা শুনতে পাচ্ছেন?’,
ভলিউম-৭
. “অবশ্যই। আপনি শুনতে পাচ্ছেন আমাদের কথা?’ জবাব দিল জো। তার গলায় ছিল কেবলে জড়ানো আর একটা ট্রান্সমিটার। সে নিজে টেলিফোন চেক করছিল।
‘চমৎকার শুনতে পাচ্ছি, লাউডস্পীকার থেকে ভেসে এল আবার ধাতব কণ্ঠ।
আর কোন কথা হল না। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে আছে প্রফেসরের বাথিন্টলের দিকে। তিনি বোধহয় একটা সুইচ স্পর্শ করলেন। বাথিস্টলের ভিতরটা আলোকিত হয়ে গেল। পর মুহূর্তে মাথার উপরে সারিবদ্ধ বাগুলো জ্বলে উঠল । “ প্রফেসর পোশাকটার হাতার মধ্যে হাত দুটো ঢুকিয়ে দিলেন। গ্লাভসে আঙুল ঢুকিয়ে দিলেন। তার কণ্ঠ শোনা গেল, অলরাইট। এবার নামিয়ে দিন। থ্যাংকস এভরিবডি। . বার্থিস্টলের ঘাড়ের কাছে যে কেবলটা যুক্ত ছিল সেটাতেই টান পড়ল এঞ্জিনিয়ার কপিকলের কন্ট্রোল লিভারের সুইচ টিপতেই। বাধিস্টলটা কয়েকহাত শূন্যে উঠে গেল। তারপর ডেকের সীমানা ছাড়িয়ে সমুদ্রের দিকে ঘুরল। ধীরে ধীরে নামতে শুরু করল প্রফেসরের বর্ম। একটু পরে চারদিকে ঢেউ ছড়িয়ে সমুদ্রের নীল পানিতে মিলিয়ে গেল বাথিস্টলটা।
• : এতক্ষণ কুয়াশা নীরবে, তার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো দেখছিল। বিজ্ঞানের এক আশ্চর্য আবিষ্কার দেখতে দেখতে সে তার পরিবেশ বিস্মৃত হয়েছিল। সে ভুলে গিয়েছিল এই এক্সপেরিমেন্টের পরিণাম, ভুলে গিয়েছিল আসন্ন বিপদের কথা। শুধু একজন বৈজ্ঞানিক হিসেবে অথবা একজন মানুষ হিসেবে বিজ্ঞানের আশ্চর্য অবদান, আর বিজ্ঞানীর সাধনার কথা তার মনটাকে নাড়া দিচ্ছিল। মনে মনে সে প্রফেসরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাল। প্রণতি জানাল বিজ্ঞানকে, পৃথিবীর সকল মহান বিজ্ঞান সাধককে।
মিনিট পনের পরেকপিকলের ঘড়ঘড় শব্দটা থেমে যেতেই কুয়াশার সংবিৎ ফিরল। দেখতে পেল টেলিফোন আর কপিকলের কেবল দুটোতেই ঢিল পড়েছে । চমকে উঠল কুয়াশা।
| কিন্তু না, ভয়ের কিছু ঘটেনি।,লাউডস্পীকার থেকে একটা অস্পষ্ট শব্দ ভেসে এল। যে নাবিকটা কেবলের দৈর্ঘ্য পরীক্ষা করছিল জো তাকে জিজেস করল, কত?
নাবিকটা বলল, ‘পাঁচশ পঁচাত্তর।’
জো টেলিফোনের মাউথপীসটায় মুখ লাগিয়ে বলল, “পাঁচশ পঁচাত্তর ফুট। . ‘চমৎকার। আমি একেবারে নিচে পৌঁছে গেছি। সবকিছু ঠিক আছে। একেবারে সবকিছু। কোন গোলমাল নেই। ঠাণ্ডাও লাগছে না। চমৎকার উত্তাপ আছে। লাউডস্পীকারে শোনা গেল প্রফেসরের কণ্ঠ।
• চলাফেরা করতে পারা যাবে?’ জো প্রশ্ন করল।.. কুয়াশা-১৯
।
।
+
=
||–
–
–
.
।
–
‘মনে হচ্ছে পারব । এই বাথিস্টলটা সত্যিই আগেরটার চাইতে অনেক হাল্কা। ‘মাথা নোয়ানো যায় তো, মানে নিচে থেকে কোন কিছু তোলা যায় কি? ‘দেখি চেষ্টা করে।
অনেকক্ষণ আর কোন কথা শোনা গেল না। ডেকের উপরও সবাই নীরবে বসে আছে । কুয়াশার দৃষ্টি জোর দিকে ন্যস্ত। তার মনে হল জো’র নির্লিপ্ত চেহারায় একটা খুনির আবছা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এডিথের দিকে তাকাল একবার। দেখল এডিথও তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি ভাবলেশহীন।’ :: প্রফেসরের কণ্ঠ ভেসে এল, মি. স্টিফেন, নির্বিরে উঁচু হতে পারছি। একটা নুড়িও কুড়িয়েছি। আছে আমার পকে। একটা নতুন জাতের সামুদ্রিক মাকড়সা ধরেছি। ভারি সুন্দর দেখতে। নাকের কাছে একটা মাছ বড় ঘুরঘুর করছিল। ধরতে চেষ্টা করেছিলাম । বেজায় চালাক। পালিয়ে গেল। এবার আমি কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়াবার চেষ্টা করব। আরও বিশফুট কেবল ছেড়ে দিন।
যে লোকটা টেলিফোনের কেবল পরীক্ষা করছিল তাকে জো নির্দেশ দিল; আরও বিশফুট ওটা নামিয়ে দিতে। এঞ্জিনিয়ার আবার কপিকল চালু করল। কয়েক সেকেণ্ড পরে কপিকল বন্ধ হয়ে গেল।
আবার নেমে এল নীরবতা। কুয়াশা সিগারেট ধরাল। জো হাই তুলল। এডিথ. আকাশের দিকে তাকাল। কার্ল বার্নহাম প্রচণ্ড শব্দ করে কেশে উঠল। এঞ্জিনিয়ার শিস দিল।
প্রফেসরের উল্লাসভরা কণ্ঠ শোনা গেল ‘মিনিট পাঁচেক পর। তিনি বললেন, ‘চমৎকার হাঁটা যায়। এদিকে ওদিকে প্রায় ত্রিশ ফুট হেঁটে এলাম নির্বি।ে অবশ্য খুব দ্রুত চলাফেরা করা যায় না। কিন্তু অসুবিধা হয় না। আর একটুও ক্লান্তি লাগছে না। আবার পরীক্ষা করে দেখেছি। কোথাও কোন ফুটো নেই। হিউমিডিটি রেকর্ডও স্বাভাবিক। যন্ত্রপাতি সবই ঠিকমত চলছে।
জো বলল, “সকলের আগে আমিই আপনাকে কনগ্রাচুলেশন জানাচ্ছি। প্রফেসর বললেন, “থ্যাংকস। 🙂
জো’র দৃষ্টিটা সকলের মুখের ওপর দিয়ে একবার ঘুরে গেল। কুয়াশা দেখল, জোর চোখে-মুখে চাপা উল্লাস। . লাউডস্পীকার থেকে আবার কথা ভেসে এল, ‘মি: স্টিফেন, অক্সিজেন সাপ্লাই
• এ একটা গোলযোগ দেখা দিয়েছে। একটা সিলিণ্ডার ফুটো হয়ে গেছে। অথচ, এখনও তার ভিতরে চারভাগের তিন ভাগ অক্সিজেন আছে। মনে হয়, প্যাকিং এর সময় ভাল ফেটে গিয়েছিল। আপনারা এবারে তুলে ফেলুন। আমি অন্য. সিলিণ্ডারটা দেখছি।’
আপ। নির্দেশ দিল জো এঞ্জিনিয়ারকে।
এঞ্জিনিয়ার কন্ট্রোল লিভারের সুইচ টিপল। কিন্তু কপিকলটা নড়ল না। ১০
ভলিউম-৭ ।
—
–
সে তাকালশার ধমনীর মধ্য দিয়ে শঙ্ক কণ্ঠস্বর প্রয়ে
ঘড়ঘড় শব্দটাও হল না। চমকে উঠল কুয়াশা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে তাকাল জো’র দিকে। জো নির্লিপ্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করল, কি হল?
: এঞ্জিনিয়ার লিভার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল, “ঠিক বুঝতে পারছিনে। বৈদ্যুতিক কোন গোলমাল হবে থাকবে। বোধহয় কোন তার ছিঁড়ে গেছে। দেখছি আমি। সিঁড়ির দিকে এগোল সে। বার্নহাম চেয়ার ছেড়ে উঠে গেল লিভারের কাছে। ধীরে সুস্থে বসল সেখানে।.
জো টেলিফোনের মাউথপীসে মুখ লাগিয়ে বলল, “প্রফেসর, পিকলের কোথায় কি যেন একটা গোলমাল হয়েছে। সেটা ঠিক করা হচ্ছে। দেরি হবে না। তক্ষুণি কোন জবাব এল না লাউডস্পীকার থেকে। এল কিছুক্ষণ পরে। প্রফেসর জানালেন, কপিকলে নিশ্চয়ই কোন মারাত্মক গোলমাল ঘটেনি? কিন্তু এদিকে, অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন। রিজার্ভ সিলিণ্ডারটার অবস্থা আরও খারাপ। প্রেশার ক্রমেই বাড়ছে। দেরি করবেন না যেন। শান্তু নিঃশঙ্ক কণ্ঠস্বর প্রফেসরের।
“ অথচ কুয়াশার ধমনীর মধ্য দিয়ে তীব্র রক্তস্রোত বয়ে যাচ্ছে। কঠিন দৃষ্টিতে সে তাকাল জো’র দিকে। জো’র দৃষ্টি তখন কন্ট্রোল লিভারে বসা বার্নহামের দিকে। তাকে কি যেন একটা ইঙ্গিত করল জো। বার্নহাম ঘাড় নাড়ল। | কুয়াশা নড়ল না। চুপ করে বসে রইল চাঞ্চল্য দমন করে। জো স্টিফেনের শয়তানি বুঝতে আর তার বাকি নেই। প্রফেসরকে তার বাথিস্টলের মধ্যেই মরতে হবে। ধীর স্থির ঠাণ্ডা মাথায় জো প্রফেসরের মৃত্যুর ব্যবস্থা করে রেখেছে। এ যেন, গিলোটিন ‘আবিষ্কারের সেই কাহিনীর মত। আবিষ্কারককেই গিলোটিনের প্রথম শিকার হতে হয়েছিল।
কুয়াশা দ্রুত চিন্তা করতে লাগল। এই নাটকীয় হত্যাকাণ্ডে সে অক্ষম নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করবে না। নিজের জীবন দিয়েও সে চেষ্টা করবে প্রফেসরকে রক্ষা করতে। কিন্তু কোনদিক দিয়ে অগ্রসর হতে হবে তা আগে ঠিক করতে হবে। অথচ সয় নেই। প্রতিটি মুহূর্তে প্রফেসর মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন।
এড়িথের দিকে তাকাল কুয়াশা। দেখল, সে কাঁপছে। তার চেহারাটা ছাই-এর মত বিবর্ণ। সে, বলছিল, ‘জো, অমুরা: আমরা কিছু করতে পারি না?’ তার কম্পিত কণ্ঠে আকুল আবেদন।’
| জো ত্যাগ করল। আমি এসব যন্ত্রপাতি কিছুই বুঝি না।, এঞ্জিনিয়ার ফিরে এল সিঁড়ি বেয়ে। কুয়াশা ও এডিথ নিঃশ্বাস বন্ধ করে তার দিকে তাকায়। তার চেহারাটা ভাবলেশহীন। ওদের নীরব প্রশ্নের জবাবে সে বলল, মনে হয়, একটা আর্মেচার পুড়ে গেছে। ওরা দেখছে সেটা।
আবার প্রফেসরের কণ্ঠ শোনা গেল, রিজার্ভ সিলিণ্ডারটা আরও খারাপ ছিল। ওটা বোধহয় এখুনি কেটে যাবে। আপনারা এত দেরি করছেন কেন?’ তাঁর কণ্ঠে কয়াশা-১৯
১১
এবারে একটু ব্যগ্রতা।
কপিকলটা মেরামত করা হচ্ছে। এক্ষুণি হয়ে যাবে।’ ‘ সিলিণ্ডারটা এই মাত্র ফেটে গেল, প্রফেসর জানালেন।
এতক্ষণে কথা বলল কুয়াশা। প্রশ্ন করল, আর একটা কপিকলে কেবলটা জুড়ে দিলে হয় না?’ ‘‘
‘অতটা ভার বইবার মত কপিকল আর নেই। আগের চাইতেও নিস্পৃহ শোনাল জো’র কণ্ঠস্বর।
তাহলে, তাহলে, আমরা সবাই মিলে যদি বাথিস্টলটা টেনে তুলি–?’ কুয়াশা প্রস্তাব করল।
‘তাতেও অন্তত বিশ মিনিট সময় লাগবে।
কুয়াশা জানে জো যা বলছে তা সত্যি। ইয়টের সবাই মিলেও যদি কপিকলটা টেনে তোলা যায় তবুও প্রফেসর রোজেনবার্গকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যাবে না। | ‘আমি অত্যন্ত দুর্বল আর অসুস্থ বোধ করছি। এখুনি আমাকে তুলতে না পারলে আর কোন লাভ হবে না। দুর্বল শোনাল প্রফেসরের কণ্ঠ। তাতে এই প্রথম আতঙ্কের আভাস।
আর সময় নেই। কুয়াশা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। বার্নহাম কেন কন্ট্রোল লিভারটা আড়াল করে বসে আছে কুয়াশা তা জানে। তড়াক করে লাফ দিয়ে সে এসে দাঁড়াল কন্ট্রোল লিভারের কাছে। সে বলল, “মি. বার্নহাম, আমি একবার চেষ্টা করে দেখি। সরুন আপনি। ., বার্নহাম সরল না। মাথা নেড়ে হিংস্রকণ্ঠে বলল, ‘চেষ্টা তো করা হচ্ছেই। আর একটু অপেক্ষা করে দেখা যাক না। তাছাড়া আপনি এসবের।
, আপনি সরে দাঁড়ান। কঠিন কঠে কুয়াশা নির্দেশ জারি করল। তার হাতে ঝলসে উঠল একটা অটোমেটিক.।
কুকুরের মত বেঁকিয়ে উঠল বার্নহাম। কিন্তু স্থান ত্যাগ করল না।
জো নিস্পৃহ ভঙ্গিতে তাকাল কুয়াশার দিকে। বলল, আপনি কি পাগল হলেন | মি. ফগ?’
‘এখনও হইনি। কিন্তু বার্নহাম যদি তিন সেকেরে মধ্যে সরে না যায় তাহলে তার মৃত্যুর জন্যে আমি দায়ী হব না।
জো বিচলিত হল না। সে আগের মতই আবেগহীন, নিরুত্তাপ গলায় বলল, এরকম হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হলে কোন লাভ হবে না। সব করম চেষ্টাই তো হচ্ছে।’ . কয়াশা জোর দিকে কঠিন দৃষ্টি মেলে বলল, কিন্তু আসল কাজটা হচ্ছে না। আর সেটা আমি করতে যাচ্ছি। কপিকলের কোথাও কোন গলদ নেই। আমি তা জানি। প্রফেসরকে তোমরা খুন করছ।’ তপ্তদৃষ্টি বার্নহামের দিকে ফিরিয়ে বলল, ‘সর এখুনি। আর আমি যা করি দেখ।
১২
ভলিউম-৭।
. ‘মাই ডিয়ার মি. ফগ…’– আপনার পিছনে!
এডিথের আর্তনাদ কানে পৌঁছুতেই বিদ্যুৎগতিতে পিছনের দিকে ফিরে তাকাল কুয়াশা। একটা লোক মোটা একটা ডাণ্ডা হাতে তার উপরে ঝাঁপিয়ে। পড়ল। কুয়াশা সরে দাঁড়াতেই লোকটা ডাণ্ডাসমেত কন্ট্রোল লিভারের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কিন্তু পরমুহূর্তেই কুয়াশা পিঠের উপর সঁচ-এর খোঁচা অনুভব করল। চোখে অন্ধকার দেখল কুয়াশা। এই অভিজ্ঞতা তার জীবনে প্রথম।
তিন
দুনিয়ার সবচেয়ে বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল মি. সিম্পসনের জন্যে। প্যারিসে ইন্টারপোলের (আন্তর্জাতিক পুলিস) সেমিনারে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদূলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। এবারে সেমিনারের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল আন্তর্জাতিক, মুদ্রা ও মাদক দ্রব্য চোরাচালানী।
– পেপারে পড়েছিলেন মি. সিম্পসন আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে। তাতে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ সাজেশনও ছিল। প্যারিস পুলিসের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। সংবাদপত্রে ছবি.উঠেছিল। সোজা কথা, বেশ একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। | সেমিনার শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে একটা টেলিগ্রাম পেলেন। বার্তা প্রেরক শার্লস মরিয়া। তিনি লিখেছেন, ‘বন্ধু, আমায় নিশ্চয়ই চিনতে পারবে। আপাতত একটা কেসের ব্যাপারে দিনার্দ বীচে আছি। জায়গাটা সত্যিই মনোরম। চলে এস। পুরানো বন্ধুর সান্নিধ্য আর বীচের সুন্দরীদের ভিড় নিশ্চয়ই মন্দ লাগবে
না। শার্লস মরিয়া।
• চিঠি পড়েই মনে পড়েছে শার্লসকে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে দুজন একসঙ্গে ট্রেনিং নিয়েছিলেন। বেশ হৃদ্যতা জন্মে গিয়েছিল দুজনের মধ্যে। বুদ্ধিমান চৌকশ পুলিস
অফিসার শালস। বিশেষ করে তদন্তের কাজে মাথাটা খোলে ভাল। চিঠির আহ্বান, উপেক্ষা করেননি। কয়েকদিনের জন্য, ঢাকায় ছুটির দরখাস্ত পাঠিয়ে দিনাদ চলে এসেছেন।
, ইন্সপেক্টর শার্লস খুশি হয়েছেন পুরানো বন্ধুকে পেয়ে। নানা কথার ফাঁকে বীচের হত্যাকাণ্ড আর গভীর সমুদ্রের তলায় ডুবে যাওয়া জাহাজ লুণ্ঠনের কথাও এসে পড়েছিল। সামুদ্রিক ঘটনাগুলো বর্ণনা করেছিলেন শার্লস কথা প্রসঙ্গে।..
; তুমি তাহলে বলতে চাইছ যে বীচের সেই হত্যাকাণ্ড আর সাগরের তলায় জাহাজ লুণ্ঠনের ঘটনা একসূত্রে গাঁথা? সবটা শুনে প্রশ্ন করলেন মি. সিম্পসন । : ‘দুয়ে দুয়ে চার হয়। বুঝতেই পারছ।
: তুমি ঠিক পথ ধরেই এগোচ্ছ। আর তোমার ধারণা হোটেল ডি লা মেয়ারে কুয়াশা-১৯
আর্থার ল্যাম্প বলে যে লোকটা থাকত সেই লোকটাই এই হত্যাকাণ্ডের নায়ক আর ঐ ডীপসী র্যাকেট দলের দলপতি। … আমি ঠিক তা মনে করি না। ও ধারণা পোষণ করেন আমাদের ইন্সপেক্টর
দুবোয়া। শুধু ধারণা নয়। এ তাঁর নিশ্চিত নিশ্বাস।’
‘সেই লোকটার কোন হদিস মিলেছে?
মাথা নাড়লেন ইন্সপেক্টর, হোটেলে সে নেই। হোটেলের ম্যানেজার অবশ্য তাকে এক ইয়টে দেখেছে পরশু। তাকে নিয়ে আজ রাতে ইন্সপেক্টর দুবোয়ার সেই ইয়টে হানা দেবার কথা। এতক্ষণ হয়ত দিয়েছে।’ . “আচ্ছা। নিহত যুবতাঁকে যে ক্যানোতে পাওয়া গিয়েছিল তাতে কোন অস্ত্র ছিল? আর ক্যানোর মালিকই বা কে, তার কোন খোঁজ করেছ?’ .. . ক্যানোতে পাটাতনের নিচে একটা রিভলভার পাওয়া গিয়েছিল। তাতে দুজনের হাতের ছাপ ছিল। য়েটার হাতের ছাপ আর অন্য একজনের। সে ছাপটা পুরুষের। কিন্তু গুলি একটাও খরচ হয়নি। মেয়েটার কোমরে একটা পাউচও পাওয়া গেছে। কেমিক্যাল অ্যানালিসিস করে দেখা গেছে তাতে রিভলভার ছিল। আমার মনে হয়, রিভলভারে আর যে-হাতের ছাপটা ছিল ওটা সেই ল্যাম্পের। সে ই উচের ভিতর থেকে রিভলভারটা বের করে পাটাতনের তলায় রেখেছিল। ক্যানোর স্টী, রিং-এ তারই হাতের ছাপ আছে। ভদ্রলোক হয়ত সরল বিশ্বাসেই পুলিস স্টেশনে ‘সেছিলেন খবরটা দিতে। কিন্তু আমার বন্ধু মঁসিয়ে দুবোঁয়া তাকেই হত্যাকারী সাব্যস্ত করে বসলেন একটা বেনামী টেলিফোন কল পেয়ে।’.. .
‘তাহলে তুমি বোধহয় বলতে চাওবেনামী টেলিফোন কল যে করেছিল সেই হ্যাঁকারী বা হত্যাকারীর পক্ষের অর্থাৎ সেই র্যাকেটের লোক?’
‘তোমারও তাই মনে হয় না? .. তোমার ধারণাই ঠিক। কিন্তু আমি ভাবছি, সেই ল্যাম্প লোকটা গা ঢাকা দিল কেন?’ : * ‘ ‘সোজা জবাব,’ দাড়িতে আঙুল বুলাতে বুলাতে বললেন ইন্সপেক্টর শার্লস। ‘পাছে দুবোয়া তাকেই ফঁসীতে লটকাতে চায় সেই ভয়ে।’
সম্ভবত, তোমার শরণাই ঠিক। যাক, এখন তুমি কোন পথে এগুবে ভাবছ?’
‘ভাকছি তো অনেক পথের কথাই। কিন্তু দিশেহারা হয়ে পড়ছি। কোন কুল কিনারা পাচ্ছি না। বরং আরও জটিল হয়ে উঠছে। ‘
| মি, সিম্পসন কিছু বললেন না। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ইন্সপেক্টর শার্লসের মুখের দিকে। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর ইন্সপেক্টর বললেন, হারবারে পরের দিন আরও একটা লাশ পাওয়া গিয়েছিল । তোমাকে বলেছি বোধহয়?’
মাথা নাড়লেন মি. সিম্পসন । | ইন্সপেক্টর বললেন, ‘লোকটার পরিচয় জানা যায়নি। কিন্তু অনেকেই বলেছে,
ভলিউম-৭
১৪
|
‘
..
ঐরম চেহারার একটা লোককে নাকি রোজমেরী নামে একটা ইয়টে দেখা যেত প্রায়ই।
‘সেখানে খোঁজ-খবর করে দেখেছ?’,
‘তা আর পারলাম কোথায়। খবরটা জানবার পরেই শোনা গেল রোজমেরী হারবার ছেড়ে চলে গেছে।’
* ইয়টটা নিশ্চয়ই রেজিস্টার্ড?
‘রেজিস্টার্ড তো বটেই। লিভারপুলে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। জো স্টিফেন নামে এক ব্যবসায়ী জাহাজটার মালিক। খোঁজ নিয়ে দেখেছি অতীতে কোন খারাপ রেকর্ড নেই তার নামে। : তাহলে ব্যাপারটা সত্যি বড্ড জটিল। কোন দিকেই কোন সূত্র পাওয়া যাচ্ছে
। তবুও আমার মনে হয় এই জো স্টিফেন সম্পর্কে ভাল করে খোঁজ খয় করা। দরকার। আমার মনে হয় কোন পথের সন্ধান পেয়েও যেতে পার। আর তার ইয়টটা কি যেন নাম বললে…’
‘বোজমেরী।। ‘হ্যাঁ, রোজমেরী কোনদিকে গেছে জানতে পেরেছ কিছু? ‘তা কি করে জানা যাবে?? :.
“খোঁজ করে, হাসলেন মি. সিম্পসন। কাছে পিঠে আর যে সব জাহাজ টাহাজ ছিল তাদের কাছে খোঁজ নাও। পোর্ট অফিসেও তো অনেক, জাহাজ তাদের গন্তব্যস্থল জানিয়ে যায়, বিপদের সময় সাহায্য পাবার আশায়।
সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি। কেউ কিছু বলতে পারল না। তাছাড়া এখন ওয়্যারলেস ট্রান্সমিশন এত উন্নত হয়েছে যে, পোর্ট অফিসে কোন খবর দেবার প্রয়োজন কেউ অনুভব করে না। তবুও সেখানে খোঁজ করেছি। হারবারের প্রায় প্রত্যেকটা জাহাজে খোঁজ নিয়েছি। নাবিকদের জিজ্ঞেস করেছি। কেউ বলতে পারল না।
‘তাতে তো সন্দেহ। আরও জোরদার হয়, মি. সিম্পসন বললেন। কিন্তু “আর কিন্তু নয়। ভুল হলে পরে তো শোধরাবার সুযোগ রইলই।
ইন্সপেক্টর শার্লস কোন জবাব দিলেন নাঃ নীরবে চিন্তা করতে লাগলেন। অনেকক্ষণ পর ঘড়ি দেখে বললেন, চল, ওঠা যাক। একটু ঘুরে আসি। ইন্সপেক্টর দুর্বোয়া কি শিকার করে নিয়ে এলেন দেখে আসি। অবশ্য তুমি যদি ক্লান্ত বোধ না
“
।
–
।
।
.
.
।
_
। •
*
.
।
*
*
|
+
–
–
।
।
না না, ক্লান্ত হবার কি আছে-চল।’
মিনিট পাঁচেক পরে দিনার্দ পুলিস স্টেশনে পৌঁছে গেলেন দুজনে একটা ট্যাক্সি করে। একজন কনস্টেবল ওদের দেখে এগিয়ে এল। ইন্সপেক্টর দুৰোঁয়ার খোঁজ কুয়াশা-১৯,
—
‘–
করতেই সে বলল, “উনি তো একটা ইনকোয়ারীতে গেছেন । এই এলেন বলে। ঐ
তো এসে গেছেন বোধহয় উনি।
: পিছনে ফিরে তাকালেন মি. সিম্পসন ও ইন্সপেক্টর শার্লস। দুটো পুলিস ভ্যান আর একটা লরী একের পর এক পুলিস স্টেশন প্রাঙ্গণে ঢুকল চারদিকে আলো ছড়িয়ে।
সামনের ভ্যান থেকে নামলেন ইন্সপেক্টর দুবোয়া। তাঁর চোখে-মুখে খুশি উপচে পড়ছে। * : আরে কি ব্যাপার, মঁসিয়ে ইন্সপেক্টর । মনে হচ্ছে দিগ্বিজয় করে ফিরলে?” * দিগ্বিজয়।.হ্যাঁ তা বলতেই পার। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। শুধু দলের চাইটাকে ধরতে পারিনি। কিন্তু সবকটা স্যাঙ্গাকে বেঁধে নিয়ে এসেছি। উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলে ইন্সপেক্টর দুর্বেয়া । ল্যাম্প না কি ল্যাম্ব, মানে র্যাকেটের, নেতা, সে অবশ্য পালিয়ে গেছে আগেই। কিন্তু বাদবাকি সবকটাকে ঝেটিয়ে নিয়ে এসেছি।
: মি. সিম্পনির দিকে তার দৃষ্টি পড়ল, “আরে আপনি! মি, সিম্পসন যে, কি খবর?’ .
. মি. সিম্পসন উত্তরে হাসলেন, বললেন, ‘খবর তো দেখছি সব আপনার কাছে।
: ঠিক বলেছেন। একদম তাজা খবর। কয়েকটা দুনিয়া জ্বালানো ডাকাতকে ধরে এনেছি। কত মহা মহা পুলিস অফিসার যা পারেনি আমি সামান্য নিম্নপদস্থ পুলিস অফিসার হয়ে অনায়াসে সেই কাজটা করে ফেললাম। আত্মগর্বে দীপ্ত হলেন তিনি।
. হাতের ইশারায় একজন কনস্টেবলকে ডেকে আসামীদের তার রূমে নিয়ে, যাবার নির্দেশ দিলেন ইন্সপেক্টর। বললেন, খুব সাবধান। ভয়ঙ্কর লোক ওরা। পালাতে যেন না পারে।’
| মি. সিম্পসন আর ইন্সপেক্টর শার্লসের উদ্দেশ্যে বললেন, “আসুন আপনারা ।। ‘ ওরা দুজন ইন্সপেক্টরের পিছন পিছন চললেন। রূমে ঢুকে তিনি ওদের বসতে ইশারা করলেন। ইন্সপেক্টর শার্লস বসতে বসতে বললেন, ‘কই হে দেখি তোমার এক্সপুয়েট। : “তিষ্ঠ, বৎস। এখুনি এসে যাবে, সিগারেট এগিয়ে দিতে দিতে জবাব দিলেন ইন্সপেক্টর।
করিডরে অনেকগুলো পদশব্দ শোনা গেল। আসামীদের নিয়ে কয়েকজন পুলিস ঢুকল। আর আসামীদের দিকে চেয়ে বিস্ময়ে বোবা হয়ে গেলেন মি. সিম্পসন । আরে এযে তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু শহীদ খান, কামাল, শহীদ খানের স্ত্রী মিসেস মহুয়া খান, চাকর গফুর। | অবাক হয়ে তিনি চেয়ে রইলেন ওদের দিকে। তাঁর বাকস্কৃর্তি হল না।
ভলিউম-৭
1
।
১৬
,
অনেকক্ষণ। তিনি ভাবছিলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখছি না তো! কিন্তু এ তো স্বপ্ন নয়। | জেগেই তো আছি।’
. আসামীরাও অবাক হয়ে চেয়ে রইল মি. সিম্পসনের দিকে। সংবিৎ ফিরে পেল শহীদই প্রথম। কিন্তু কোন কথা না বলে মুচকি হাসল। কথা বলল প্রথমে কামাল, ‘মি. সিম্পসন, আপনি এখানে?’ . তার প্রশ্নে মি, সিম্পসনও সংবিৎ ফিরে পেলেন। তিনিও বললেন, ‘তাইত হে, তোমরা কোত্থেকে এলে? ব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বিব্রত মহুয়ার উদ্দেশ্যে বললেন, মিসেস খান, আপনি বসুন। মহুয়া বসল না। দাঁড়িয়ে রইল।
ইন্সপেক্টর শার্লস ও ইন্সপেক্টর দুবোঁয়া নির্বোধের মত একবার আসামীদের আর একবার মি. সিম্পসনের দিকে তাকাতে লাগলেন। সঙ্গী কনস্টেবলগুলোও কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে গেল। কামাল ভেতরে ভেতরে গজরাচ্ছিল। এতক্ষণে সে ফেটে পড়ল, ঐ অতি বুদ্ধিমান লোকটা আমাদের গ্রেফতার করে এনেছে। আমরা নাকি গভীর সমুদ্রের তলে ডোবা জাহাজ ডাকাতি করি। শুনলেন, মি. সিম্পসন?’
:তাকে হাত তুলে থামবার নির্দেশ দিয়ে মি. সিম্পসন ফিরে তাকালেন ইন্সপেক্টর দুর্বেয়ার দিকে। ভীষণ বিরক্ত হলেও তিনি তা চেপে স্বভাবসুলভ মৃদুকণ্ঠে বললেন, ‘মশিয়ে ইন্সপেক্টর, আপনার বোধহয় কোথাও ভুল হয়ে থাকবে।’
ইন্সপেক্টর দুধোয়া ইতিমধ্যেই ঐ ধরনের কিছু একটা আন্দাজ করেছিলেন। | তিনি আমতা আমতা করে বললেন, না না, ভুল হবে কেন? হোটেলের ম্যানেজার | যে ইয়টটা দেখিয়ে দিল।
‘ম্যানেজার কি ওদের মধ্যে কাউকে দেখিয়েছিলেন? প্রশ্নটা এবারে করলেন ইন্সপেক্টর শার্লস। তার কণ্ঠে বিরক্তির আভাস। |.. তা অবশ্য নয়, স্বীকার করলেন ইন্সপেক্টর দুবোঁয়া। তবে থেমে গেলেন।
তিনি। ..
* একজন কনস্টেবল খুক খুক করে হাসছিল। ইন্সপেক্টর ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেন।
তিক্তকণ্ঠে ইন্সপেক্টর শার্লস বললেন, ব্যস। বুঝেছি, তোমার আর কিছু বলতে হবে না। ইশারায় কনস্টেবলদের চলে যেতে নির্দেশ দিলেন। ওরা চলে গেল। তিনি শহীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, বসুন আপনারা।
.. ওরা বসতেই মি. সিম্পসন বললেন, ‘মশিয়ে ইন্সপেক্টর; আপনি, যাদের । অপরাধী সন্দেহে ধরে এনেছেন এরা কেউই কোনদিন কোন অপরাধ করেননি। ওরা সবাই আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমার দেশের লোক। ইনি মি. শহীদ খান, বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত প্রাইভেট ডিটেকটিভ। উনি মিসেস খান, মি. কামাল আহমদ, গুটি ওদের চাকর গফুর, অবশ্য ওটাকে চিনতে পারছিনে আমি।’ ২-কুয়াশা-১৯
১৭
•
•
•.
কামাল বলল, মি. চার্লি হ্যারিস, আমাদের নতুনবাটলার। ‘ ইন্সপেক্টর দুবোঁয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন ওদের দিকে
শহীদ এতক্ষণ কোন কথা বলেনি। সে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, আমি একটা টেলিফোন করতে চাই। এখান থেকে সম্ভব হবে কি? | মি. সিম্পসন শহীদের মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন বুঝে নিয়ে বললেন, ‘কোথায় টেলিফোন করবে?’
… ‘প্যারিসে। বাংলাদেশ এমব্যাসীতে। আমাদেরকে যে অপমান করা হয়েছে সেটা এমব্যাসীকে জানানো দরকার। . মি. সিম্পসন বললেন, সেটা করা অন্যায় হবে না। কিন্তু আমার অনুরোধ, ব্যাপারটা ভুলে যাও। মশিয়ে-ইন্সপেক্টর।
আমি। আমি সত্যি দুঃখিত, মশিয়ে খান। প্লীজ। আমি সত্যি দুঃখিত।
চার
‘এখন নিশ্চয়ই অনেকটা ভাল লাগছে?’ প্রশ্ন করল জো স্টিফেন। সেই নিরুত্তাপ
আবেগহীন কণ্ঠস্বর। যেন জবাব না পেলেও কিছু এসে যায় না।
| মাথা নাড়ল কুয়াশা ।
হুইল হাউজে একটা আর্মচেয়ারে সে শুয়ে আছে। একহাতে সিগারেট অন্য হাতে ব্র্যাণ্ডির গ্লাস। তাকে বাঁধা পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু এখানেই ত্রুটিহীন অতিথি আপ্যায়নের সমাপ্তি হল। জো জ্যাকেটের পকেটে হাত ঢোকাল। বানহামের ডান হাতটাও ঢুকে আছে তার জ্যাকেটের পকেটে।
* কুয়াশা সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে ওদের লক্ষ্য করছিল। মৃদুকণ্ঠে সে। প্রশ্ন করল, প্রফেসরের খবর কি?’
. ‘দুঃখের বিষয় গলদটা ধরা পড়েছিল অনেক দেরিতে, মি. কুয়াশা, জোর মুখে তার নাম শুনে চমকাল না কুয়াশা। তবু প্রশ্ন করল, তুমি জানতে আমাকে তাহলে?– “নিশ্চয়ই। তবে আগে নয়। জেনেছি গতকাল মাত্র। তোমার হয়ত মনে আছে ক্যাসিনোতে ছবি তোলার কথা। এখন তোমাকে নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না যে, প্রফেসরের নয়, তখন তোমারই ছবি তোলা হয়েছিল। সে ছবি কয়েক জায়গায় পাঠিয়েছিলাম তোমার পরিচয় সংগ্রহের জন্য।’ * কুয়াশার মনে পড়ল, বুঝতে পারল বোকামি হয়েছিল। আরও বুঝল, তাকে আপ্যায়নের জন্যে উপযুক্ত বন্দোবস্ত করতে ক্রটি করবে না জো। তার দিকে সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। হয়ত তার চিন্তা প্রবাহ অনুধাবনের চেষ্টা করছে। … মৃদু হাসল কুয়াশা। বলল, তারপর? এখন কি যাবে?
১৮
ভলিউম-৭
. সেটা তোমার উপর নির্ভর করছে। সিগারেট ধরাল জো। ধোয়া ছেড়ে বলল, তুমি আমাকে একটা-অসুবিধায় ফেলে দিয়েছ। আমার মারাত্মক ক্ষতি করেছ।
মানে প্রফেসরের ব্যাপারে?’ অকৃত্রিম বিস্ময় প্রকাশ করল কুয়াশা।
সবেগে মাথা নাড়ল জো। উই, তাকে মরতেই হত। মাঝখানটায় তুমি এসে পড়াতে একটু আগেই শেষ করতে হল এই যা।
কুয়াশা তবুও অবাক হয়ে চেয়ে রইল।
‘আমি বলছি একটা দুর্ঘটনার কথা। যেটা তোমার ইয়টে ঘটেছিল। তুমি আমার সবচেয়ে সেরা সেফ-ব্রেকাকে মেরে ফেলেছ। যে লোকটা পরও রাতে তোমার ইয়টে হানা দিয়েছিল, তার কথা বলছি।
: ‘অসম্ভব, প্রবলভাবে মাথা নাড়ল কুয়াশা। তাকে আমি খুন করিনি। ছেড়ে দিয়েছি। অবশ্য পারতাম খুন করতে।’
* অবিশ্বাসের হাসি হাসল জো। বলল, ওসব মিথ্যা কথায় ভবি তোলবার নয়। তাহলে সে গেল কোথায়? ফিরে এল না কেন?
‘তা আমি জানি না। তবে জেনে রেখ, আমি কখনও মিথ্যা কথা বলি না। . জো’র ভাবান্তর হল না। সে বলল, ‘ওরকম দম্ভ আমিও করে থাকি। জান না বোধহয়, ইউরোপের সেরা সেফ-ব্রেকার ছিল ও। আমার একজন মূল্যবান সহকারী..সুতরাং আমি তাকে ফিরে চাই। ১. কুয়াশা কোন জবাব না দিয়ে ব্রাপ্তিতে চুমুক দিল। জো’র সেই অমূল্য সম্পদ কোথায় গেছে তা কুয়াশার জানার কথা নয়। হয়ত সে জোর কাছে ব্যর্থতার কৈফিয়ত দেবার বা শান্তি লাভের ভয়ে পালিয়েছে অথবা নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পেয়ে অতীত কৃতকার্যের অনুশোচনায় সে অসং জীবন আর অসৎ সঙ্গীদের বর্জন করেছে। অথবা মহত্বের স্পর্শে ঘৃণ্য জীবনের প্রতি বিকর্ষণ জন্মেছে। কিন্তু জোর মত চরিত্রের লোক তা বুঝবে না।
জো উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল, তার দৃষ্টি বাইরের দিকে। বাহাম হাত দশেক দূরে। হুইল চালক হুইল নিয়ে ব্যস্ত। বাহামকে এই ফাঁকে কাবু করা যায় কিনা ভাবল কুয়াশা।’
| কিন্তু না। তা যায় না। শায়িত অবস্থা থেকে উঠে বসবার চেষ্টা করল সে ছাইদানি খোঁজার ভান করে। মাথাটা সামান্য তুলতেই রিভলভার বের করল বার্নহাম। কার্পেটের উপরই সিগারেটের ছাই ফেলল কুয়াশা।
মিনিটখানেক পরে ঘুরে দাঁড়াল জো। কিন্তু এগিয়ে এল না। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই বলল, তোমার জন্যেই আমি একটা সেরা কাজের লোক হারিয়েছি। তার মত লোক পাওয়া কঠিন। তাছাড়া পেতে সময়ও লাগবে অনেক । কি দুর্ভাগ্যের বিষয় আমি দেরি করতে পারছি না মোটেও। আর সৌভাগ্যের বিষয়, তার বদলে আমি তোমাকে পেয়েছি। কুয়াশা-১৯,
‘সেটা দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য এখুনি তা বুঝলে কি করে? | সে কথার জবাব দিল না জো । বলল, “আমরা এখন যাচ্ছি কাসওয়েট লাইট হাউজের দক্ষিণ পশ্চিমে। সেখানে আছে নরউইচ নামে একটি জাহাজ। তার . স্ট্রংরূমে আছে তিন কোটি পাউণ্ডের আকাটা হীরে। জাহাজটা ডুবেছিল ১৯২৯
সালে। সেগুলো আমার চাই। কিন্তু আমার দলের যে লোকটা স্ট্রংরূম খুলবার এক্সপার্ট, তোমার জন্যে তাকে হারিয়েছি। আর সেই জন্যে তোমাকেই এর
ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তোমার সম্পর্কে যতটা জেনেছি একাজটা তোমার পক্ষে | অসব হবে না।
আর সেটা যে সব আমাকে তা প্রমাণ করতে হবে।’ স্বভাবতই আমি তাই চাই। ‘ঐ বাথিস্টলে? ‘
তার দরকার নেই। নরউইচ ডুবেছে মাত্র বিশ ফ্যাদম পানির তলে। সাধারণ ডাইভিং স্যুটই তার জন্যে যথেষ্ট।’
‘তুমি আমাকে পার্টনারশিপের প্রস্তাব দিচ্ছ?’ ‘নিশ্চয়ই না। আমার ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি।
মনে মনে হাসল কুয়াশা। সে কখনও আত্মসমর্পণ করেনি, করবেও না। জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন তার কাছে বড় নয়। ন্যায়ের প্রশ্নটাই বড়।
শান্তভাবে প্রশ্ন করল। রাজি না হলে কি হবে? শ্রাগ করল জো। আমি মেলোড্রামাটিক ভয় দেখানো পছন্দ করি না। সেটা বুঝতে তোমার কষ্ট হবার কথা নয়। আমি ধরেই নিচ্ছি তুমি রাজি হবে। তোমার নিজের জন্যে নাহলেও অদ্ভুত । এডিধের জন্যে। আর আমিও কথা দিচ্ছি তুমি রাজি হলে আমি এডিথকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদে সমুদ্রের তীরে নামিয়ে দেব।
. এইটুকুই মাত্র?’
এর বেশি আমার দেবার কিছু নেই। স্বভাবসুলভ নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল জো। তোমাকে পনের মিনিট সময় দেয়া হল। এর পর তোমাকে তোমার সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। রাজি হলে ভালই। না হলে একটু থামল জো। খুব ধীরে ধীরে আর চিবিয়ে বলল, আরও পনের মিনিটের মধ্যে তোমার প্রাণপাখি দেহপিণ্ডর ছেড়ে যাবে। অবশ্য, যতক্ষণ তুমি জীবিত থাকবে ততক্ষণ আমি জানি তুমি নানারকম অবাস্তব আশায় দুলবে হাজারটা পরিকল্পনা করবে, পিঞ্জরাবদ্ধ বাঘের মত গর্জন করবে, আর অলৌকিক একটা কিছু প্রত্যাশা করবে।
পনের মিনিট পরে কুয়াশা জানাল সে রাজি আছে।
জো বলল, দ্যাটস লাইক এ গুড বয়’ বানহামের দিকে ফিরে জো বলল, ‘ওকে নয় নম্বুরে নিয়ে যাও।’ ‘ ‘ ‘ | বার্নহাম কুয়াশাকে উঠবার জন্যে ইশারা করল।
| ভলিউম-৭
নয় নম্বর কেবিনে বসে ছিল কুয়াশা ও এডিথ।
কুয়াশা বলল, ‘শোন, এডিথ। আমেরিকার এক ম্যাগাজিনে একটা চুটকি পড়েছিলাম। এক ভদ্রলোকের ধারণা হয়েছে তিনি মারা গেছেন। অনেক রকম চেষ্টা করা হয়েছিল তাকে তার এই ভ্রান্ত ধারণা সাইকলজির ভাষায়, যাকে বলে ডিলিউশন–তা থেকে মুক্ত করার জন্যে। কোন চেষ্টাই ফলপ্রসূ হয়নি। শেষটায় । তার গিন্নী তাকে নিয়ে গেলেন এক ডাকসাইটে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে। তিনিও অনেক ভাবে বোঝাবার চেষ্টা করলেন যে ভদ্রলোক মরেনি। কিন্তু ভদ্রলোকের এক কথা। অবশেষে ডাক্তার বললেন, আচ্ছা, মরা মানুষের গা দিয়ে রক্ত ঝরে না তা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন? ভদ্রলোক জানালেন যে, তিনি তা স্বীকার করেন। ডাক্তার হঠাৎ বলা নেই, কওয়া নেই, ভদ্রলোকের আঙুলে ছুরি বসিয়ে দিয়ে ঘঁাচ করে কেটে দিলেন। রক্ত বেরোল বিস্তর। ভদ্রলোক তো রেগে কাঁই। কিন্তু ডাক্তার হাসতে হাসতে বললেন, ঐ দেখুন আপনার হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে, তার মানে আপনি মরেননি, বেঁচে আছেন। ভদ্রলোক জবাব দিলেন, এখন দেখতে পাচ্ছি মরা মানুষের গা থেকেও রক্ত ঝরে। গল্পটা কেমন লাগল?’ ..
এডিথ শান্ত স্বরে প্রশ্ন করল, আপনার বোধহয় কোন কিছুতেই এসে যায় না। তাই না?” তার চোখ-মুখ বিবর্ণ। তাতে হতাশার ছাপ স্পষ্ট।
, কুয়াশা হাসল। বলল, “আমাদের দেশের এক কবি বলেছেনঃ জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে। তাছাড়া মরবার একটা চান্স যখন পাওয়াই যাচ্ছে•• |
কতক্ষণ আর বেঁচে থাকব বলে আপনার মনে হয়?’ ক্ষীণকণ্ঠে বলল এডিথ।
‘অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত। আমি বাঁচব দন্তহীন থুথুরে বুড়ো যদ্দিন না হই, আর তোমার চুলগুলো শনের নুড়ি যতদিন না হয় ততদিন। জো আমাকে জানিয়েছে, আমি যদি ওর কাজটা করে দিই তাহলে আমার পৌত্রীর বিয়ের সমস্ত খরচ সেই চালাবে। তরল কন্ঠে বলল কুয়াশা।
এডিথ অসহায়ের মত কুয়াশার দিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। তারপর দীর্ঘনিঃশ্বাস চেপে বলল, “আমাদের বাঁচবার কোন সম্ভাবনা আছে এ কথা এখনও বিশ্বাস করেন আপনি?
‘তুমি নিশ্চয়ই বিশ্বাস কর না। ‘আপনি করেন? ‘করি বৈ কি? মনে তো হয় জো তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।’ ‘কিন্তু সে প্রফেসরকে হত্যা করেছে। স্মরণ করিয়ে দিল এডিথ।
সে তো বাধিস্টলের জন্যে। আমাদের হত্যা করে তো জো’র কোন লাভ হবে। ।। | ‘তুমি কি সত্যি একথা বিশ্বাস কর, কুয়াশা?’
“নিশ্চয়ই বিশ্বাস করি। আর সেই বিশ্বাসের জোরেই তো আমি জোর জন্য কুয়াশা-১৯
..
।
–
| ‘…
–
নরউইচ জাহাজের স্ট্রংকাম খুলতে যাচ্ছি।
শেষ পর্যন্ত ঐ শয়তানেরই জয় হবে। কিন্তু কেন?
ঐ যে বললাম জো আমাদের হত্যা করবে না এই আশায়। জোর কাজটা না করলে মরতেই হবে। অবশ্য করলেও বেঁচে থাকার ভরসা তেমন নেই। তাছাড়া মৃত্যুর আগে একটা নতুন অভিজ্ঞতা হবে। ডাইভিং স্যুট পরে এর আগে কখনও স্ট্রংরূম খুলতে নামিনি। বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চার হবে।’
| তাহলে তুমিও পুরোপুরি বিশ্বাস কর না জোর প্রতিশ্রুতিতে। | প্রসঙ্গটা কুয়াশার প্রিয় নয়। সে যে জোর প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে তা না বোঝার মত বোকা এডিথ নয়। কিন্তু এডিথ, কুয়াশা জানে, অন্যর জীবনের বিনিময়ে নিজের জীবন বাঁচাতে রাজি নয়। আসল সত্যটা সে তাই কুয়াশার মুখ থেকেই
শুনতে চায়।
‘তুমি ভাল উকিল হতে পারতে, এডি, কুয়াশা বলল। ‘এটা আমার প্রশ্নের জবাব নয়।’ . তোমার প্রশ্নের সত্যিকারের জবাব কি আমারই ঠিক জানা আছে? কিন্তু কি জান, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ.আমি এরকম না হলেও অনেক কঠিন অবস্থায় এর আগেও বহুবার পড়েছি। কিন্তু কই কিছুই তো হয়নি। আমি ঠিকই বেঁচে আছি।’
তাতে প্রমাণিত হয় না যে তা অবশ্যই হয় না। কিন্তু আশা করতে আপত্তি কি? ‘আমি জানি তুমি আমাকে অবোধ দিচ্ছ।’
“হয়ত নিজেকেই অবোধ দিচ্ছি। কিন্তু এসব কথা বাদ দাও এবার। মিছিমিছি মন খারাপ করে লাভ নেই। যা হবার তা হবেই।’, বাইরে দরজার তালায় চাবি ঢোকানোর শব্দ হল। পরমুহর্তে খুলে গেল দরজাটা। রিভলভার উঁচিয়ে ঢুকল বার্নহাম, তার পিছনে আর একজন। তারও হাতে উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্র। বার্নহাম দাঁত বের করে বলল, “মি. ফগের সময়টা নিশ্চয়ই ভাল কেটেছে। একটা অশ্লীল ভঙ্গি করল লোকটা। … কুয়াশা কঠিন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। * রিভলভার হাতে থাকা সত্ত্বেও সেই দৃষ্টির সামনে ভড়কে গেল বার্নহাম। কিন্তু মুহূর্তেই দুর্বলতা দূর করে রিভলভার দিয়ে ইশারা করল কুয়াশা ও এডিথকে। মুখে বলল, চল, চীফ ডাকছে তোমাদের।’
.
পাঁচ চল্লিশ পাউণ্ড ওজনের দুটো বোঝা কুয়াশার বুকে আর পিঠে সংযোজন করছিল,
ভলিউম-৭;
n
:
২২
কয়েকজন নাবিক। রাবারের লাইন দেওয়া ভারি টুইলের ওভার-অলে ইতিমধ্যেই তার সর্বাঙ্গ পরিবৃত করেছে। ভালকানাইজড রাবার কাফ বাঁধা হচ্ছে কব্জিতে। মোল পাউন্ড ওজনের বুট তার পায়ে। তার মতই পোশাক পরিহিত এক নাবিক হেলমেট পরলে বাতাস বেরোবার ঢাকনাটা কিভাবে কাজ করে তা বুঝিয়ে দিচ্ছিল। লোকটার নাম আলফানস।
| সে বলল, “ঢাকনাটার স্কুটা বন্ধ করে দিলে পোশাকটার মধ্যে বাতাস আটকে থাকবে। তাতে আপনি ভেসে থাকতে পারবেন। খুলে রাখলে বাতাস বেরিয়ে যাবে আর আপনি ডুবে যাবেন। নিচে নামবার পর ঢাকনাটা এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করবেন, যাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারেন। ওজন ব্যালেন্স করার জন্যে বাতাসের পরিমাণ এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করতে হবে, যাতে বাতাস আপনাকে ঠেলে উপরের দিকে না তোলে।
কুয়াশী মাথা নাড়ল। . জো বলল, আলফানসকে পাঠাচ্ছি শুধুমাত্র তোমার কাজ তদারক করার জন্যে। যাতে আসল কাজটা তুমি ভুলে না যাও। সে তোমাকে স্ট্রংরূমের পথও চিনিয়ে দেবে। জাহাজের প্যানে তাকে আমি দেখিয়ে দিয়েছি স্ট্রংরূমের অবস্থান।
ওর কাছে আণ্ডার ওয়াটার হাইড্রো-অক্সিজেন টর্চও থাকবে।
কুয়াশা মাথা নাড়ল। কিট খুলে যন্ত্রপাতিগুলো নেড়ে চেড়ে দেখল একবার।
জো বলল, “যে লোকটাকে তুমি মেরে ফেলেছ, এগুলো তারই হাতিয়ার। ওর জন্যে এইগুলোই যথেষ্ট ছিল। তবে তোমার দরকার হলে আরও যন্ত্রপাতি পাঠিয়ে দেব।’
‘এতেই চলবে। তবে আমার কাছে এর চাইতেও ভাল যন্ত্র ছিল।
এর চাইতেও ভাল যন্ত্র আছে নাকি?’ ব্যঙ্গ করল জো। | ‘আছে। আন্দ্রাসোনিক্স পদ্ধতিতে তৈরি। আর তুমি জান কিনা জানি না ঐ ধরনের যপাতি পৃথিবীতে শুধু একা আমিই তৈরি করতে জানি। অব্যর্থ বান নিক্ষেপ করল কুয়াশা।
এই আইডিয়াটা জো’র মাথায় ঢুকিয়ে দেবারই সুযোগ খুঁজছিল সে। জো হয়ত চট করে বিশ্বাস করতে চাইবে না। কিন্তু একটা আশা নিরাশায় সে দুলবেই, প্রলুব্ধ সে হবেই। ইতিমধ্যে সে তার এজেন্টদের মাধ্যমে খোঁজ খবর করবে। ততক্ষণ কুয়াশা নিরুপদ্রবে থাকবে।– এতবড় একটা সুযোগ নিশ্চয়ই জো হারাতে চাইবে না। আর খোঁজ করে যখন জানবে, সে মিথ্যে কথা বলেনি তখন জোকে বাগে আনা কুয়াশার পক্ষে অত্যন্ত সহজ হবে। অবশ্য জো. প্রলোভন জয় করতে যদি পারে তাহলে অন্য কথা।
জো কুয়াশার কথাটা শুনতে পায়নি এমন একটা ভঙ্গি করল।
‘আমি টেলিফোনে তোমাদের দুজনের সাথে যোগাযোগ রাখব প্রথম থেকে কুয়াশা-১৯,
.’ ২৩
শেষ পর্যন্ত ।.তোমরা কতটা এগোলে তা আমাকে জানাবে। স্ট্রংরূম খোলা হলেই তুমি আলফানসকে হীরাগুলো বের করে আনতে আর বাক্সে ভরতে সাহায্য করবে। একঘেয়ে নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলে গেল জো। বুঝলে নিশ্চয়ই?
কুয়াশা মাথা নাড়ল।
জো একজন নাবিককে বলল, ‘হেলমেট পরিয়ে দাও। . ভারি হেলমেটটা পরানো হল কুয়াশার মাথায়। তারপর পোশাকটার রিং-এর। সাথে এটে বসিয়ে অ্যাডজাস্ট করে দেয়া হল । পিছনে অতিরিক্ত স্কু লাগিয়ে দেওয়া। হল আকস্মিকভাবে যাতে হেলমেট খুলে না যায় তার জন্যে। প্লেট গ্লস উইণ্ডো। দিয়ে সে দেখল তার সামনে আলফানসের মাথায়ও হেলমেট পরানো হচ্ছে। তার
ও আলফানসের পোশাকের সাথে এয়ার পাম্পের টিউব অ্যাডজাস্ট করা হল। তেল । ও রবারের গন্ধ ভরা বাতাস তার নাকে ঢুকল এয়ার পাম্প থেকে। ‘ আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?’
…টেলিফোনে জো’র কণ্ঠ শুনতে পেল কুয়াশা। চাল কলের বাঁশির মত, শোনাচ্ছে এখন জো’র কণ্ঠস্বর। ‘..
‘অনায়াসে,’ জবাব দিল কুয়াশা। ‘এবার রওনা দাও তাহলে। কতক্ষণ চলে গেছে কুয়াশা তা বলতে পারে না।
আবছা সবুজ অন্ধকারের মধ্যে সবুজতর কি একটা তার চোখের সামনে উদ্ভাসিত হল । একটু পরে বুঝতে পারল সেটা জাহাজের মাস্তুল। আস্তে আস্তে পুরো একটা জাহাজের উপরিভাগ তার চোখের সামনে ভেসে উঠল। উপরের ডেকের সাদা রং দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। | ‘ রেলিং টপকে দুজন ডেকের উপরে গিয়ে দাঁড়াল। গিয়ার ভারি হওয়া সত্ত্বেও তার খুব হালকা বলে মনে হচ্ছিল। একটু অস্বাচ্ছন্দ্যও লাগছিল। মনে হচ্ছিল, কে যেন তাকে ঠেলে উপরের দিকে তুলে দিচ্ছে।
‘ঢাকনার ফুটা ঢিলে করে দিন। আলফানসের কণ্ঠ ভেসে এল টেলিফোনে।
কুয়াশা নির্দেশ পালন করল। উধ্বগামী আকর্ষণ একটু কমল বলে মনে হল। তবে বাতাসের চাপটা কমে যাওয়ায় বুকের উপর পানির চাপ বাড়ল। আলফানস তার হেলমেট নেড়ে ঢাকনাটা আর বেশি দিলে না করতে ইশারা করল।
পরবর্তী নির্দেশের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল কুয়াশা। সে জানে এখন সে, মুক্ত। টেলিফোন আর লাইফ-লাইনের তার কেটে দেবার মত যন্ত্র বার্গলার্স কিটের মধ্যে রয়েছে। তারগুলো কেটে দিয়ে সে এখন দূরে কোথাও গিয়ে ভেসে উঠতে পারে। উপকূল মাত্র দু’মাইল দূরে। কিন্তু তাতে এডিথের জীবন বিপন্ন হবে। তাছাড়া এখন আর জোর কবল থেকে মুক্তি লাভের চেষ্টার কোন মানেই হয় না। কুয়াশা জানে, সে অমোঘ অস্ত্র নিক্ষেপ করে এসেছে। আন্ট্রাসোনিক্সের তৈরি
ভলিউম-৭
বার্গলার্স কিটের প্রলোভন জো’র মত লোক এড়াতে পারবে না। কুয়াশাকে প্রাণে মারার কথাও তাই এখন তার কল্পনাতীত। সে এখন ছলে বলে কৌশলে কুয়াশার কাছ থেকে তা সংগ্রহ করার চেষ্টা করবে। এবারে জো মেলোড্রামাটিক হুমকি না দেখিয়ে ছাড়বে না। মেলোড্রামাটিক হুমকি-জো’র শব্দচয়ন চমৎকার।.
| আলফানস বলল, আমার পিছনে পিছনে আসুন।
কুয়াশা আলফানসকে অনুসরণ করল। এখন আর চলতে তার অসুবিধে হচ্ছে । পিচ্ছিল কর্দমাক্ত প্যাসেজের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে এগোল দুজন। .’ এ এক অদ্ভুত, অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। ছোট ছোট মাছ, কাঁকড়া মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওদের দেখেও যেন ওরা দেখল না। পরমানন্দে ঘুরে বেড়াতে লাগল। একটা মাছ এসে ঠোকর দিল কুয়াশার গ্লাস উইন্ডোতে। একটা অত দর্শন
জীব. সড়াৎ করে সরে গেল।
স্ট্রংরূমের দরজার কাছে এসে দাঁড়াল দুজন। কুয়াশার মনে হচ্ছিল, ওরা যেন আলাদিনের প্রদীপের সেই দৈত্যের মত। জো’র নির্দেশে ওরা তার জন্যে ঐশ্বর্য সংগ্রহ করতে এসেছে সমুদ্রের অতলে।
• কুয়াশা উঁচু হয়ে বসে যন্ত্রপাতির ব্যাগটা খুলল। টেলিফোনে জানাল, ‘আমি কাজ শুরু করছি।’ . জো একটা ডেকচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সিগারেট টানছিল। তার পাশেই টেবিলের উপর লাউড-স্পীকার। সে কোন জবাব দিল না। পাশের চেয়ারটায় শুকনো মুখে এডিথ বসেছিল। কুয়াশার কণ্ঠ শুনে আশ্বস্ত হল সে। না কুয়াশা মরেনি এখনও।
* অনেকগুলো মিনিট কেটে গেল নিঃশব্দে। এডিথ ঘড়ি দেখল, প্রায় বিশ মিনিট কেটে গেছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। দিন শেষের অস্তরাগ সমুদ্রের বুকে আশ্চর্য মনোরম আলো ছড়িয়েছে। অদূরে লাইট হাউজটার দিকে দৃষ্টি পড়ল এডিধের। এখনও আলো জ্বলে ওঠেনি। ..’ এডিথ জানে আজ রাতে আর আলো জ্বলবে না। জো’র দুজন স্যাঙ্গাৎ লাইট হাউজ-ম্যানদের খুন করে এসেছে দুপরে। জো’কে নির্দেশ দিতে শুনেছে সে নিজের কানে। দুজন নাবিককে যেতেও দেখেছে লাইট হাউজের দিকে। মানুষের।
জীবনের কোন দাম নেই জো’র লোভের কাছে। শয়তান” মনে মনে বলল সে।
স্ট্রংরূম খোলা হয়েছে। লাউড স্পীকারে কণ্ঠ ভেসে এল।, একটু দূরে একটা চেয়ারে বসেছিল বার্নহাম। সে কথাটা শোনা মাত্র লাফিয়ে উঠল। চেয়ার ৮ে এগিয়ে এল জোর কাছে। জো মুখ ঘুরিয়ে তাকে দেখল। কিছু বলল না। ‘
তার চেহারায় কোন ভাবান্তর নেই। টেলিফোন কানেকশন বক্সের একটা * বোম ঘুরিয়ে দিল সে। প্রশ্ন করল, “ঠিক আছে তো, আলফানস?’
কুয়াশা-১৯।
| হ্যাঁ। দরজা খোলা হয়েছে। হীরা পাওয়া গেছে। সোনাও আছে। স্ট্রংরূমটা সিঁড়ির পাশেই। সিঁড়ির ঠিক উপরে ছিল একটা কাঁচের গোলাকার গম্বুজের মত। ওটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওখান দিয়ে বলে নামাতে হবে। তাতেও অনেক সময় লাগবে। কিন্তু আমরা আর কয়েক মিনিটের বেশি এখানে থাকতে পারব না। প্রায় পৌনে একঘন্টা হয়ে গেছে। সমুদ্রের এত নিচে আর বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব নয়। আমি কি একা উঠে আসব?’
• চমকে উঠল এডিথ আলফানসে প্রশ্নে। তার বুকের ভিতর হৃৎপিণ্ডটা যেন মুহূর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে গেল। একটা হিম-প্রবাহ বয়ে গেল মেরুদণ্ড দিয়ে। জিভ শুকিয়ে গেল। ঠোঁট কাঁপতে লাগল। করুণ মিনতি ভরা দৃষ্টিতে সে জো’র মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। সে কি এখনই ক শার মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ পাঠ করবে?
জো এডিধের দিকে ফিরে তাকাল না। . কয়েকটা মুহূর্ত পার হয়ে গেল। যেন হাজারটা বছর পার হয়ে গেছে মনে হল এডিথের। হাজার বছরের আতঙ্ক যেন ভয়ঙ্কর মুখ ব্যালান করে তাকে ঘিরে ধরতে আসছে। বস্পন্দন ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে এডিথের। তবে কি? তবে কি?; মনে হল যেন বহু দূরে কে যেন বলল, “বেশ তোমরা উঠে এস। কপিকলের পাশে তিনজন নাবিক দাঁড়িয়েছিল। জো:তাদের উদ্দেশ্যে বলল, “ডক, তুমি আর কার্ট তৈরি হয়ে নাও। ওরা উঠে এলেই তোমরা নেমে যাবে। শার্ক, তুমি থলে, ওঠাবে নামাবে। * আরও কিছুক্ষণ ধরে সে নাবিকদের নানারকম নির্দেশ দান করল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে হাই তুলল একবার। তারপর ধীরে সুস্থে গিয়ে দাঁড়াল এয়ার পাশের কাছে। নত হয়ে স্পর্শ করল, একটা রাবার টিউব। ১. আর্তনাদ করে উঠল এডিথ। মাথা তুলে তার দিকে তাকাল জো। এডিথ চেয়ার ছেড়ে দুই লাফে এসে দাঁড়াল জো’র পাশে। তার হাতটা চেপে ধরে চিৎকার, করে উঠল, না! না! এ আমি তোমাকে করতে দেব না।’
‘আঃ, এডিথ, কি জ্বালাতন করছ।’ নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল জো ।। কুয়াশাকে মেরে ফেলতে কিছুতেই আমি. দেব না তোমাকে। ‘কেন। সে তোমার কে?…
সে আমার না আমার কেউ নয়। সে কারও কিছু নয়। অথচ সে সকলেরই পরমাত্মীয়। কিন্তু সে তুমি বুঝবে না।” | আমার বোঝবার প্রয়োজন নেই। হাত ছাড়। | “না, না। অসম্ভব। আমি জানি কেন সে তোমার ইচ্ছামত সমুদ্রে নেমেছে। শুধু আমাকে বাঁচানোর জন্যে। কিন্তু তার জীবনের বিনিময়ে নিজের জীবন আমি ফিরে চাই না।’…
. ওসব হিচ কাঁদুনি বন্ধ কর। এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিল জো। পরমুহূর্তে
ভলিউম-৭
•
?
‘
.
.
,
.
*–
.
–
–
–
|
11,
F
= =
এডিথ আবার তার হাতটা চেপে ধরল। জো তার স্বভাবসুলভ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, যদি এমন জ্বালাতন কর তাহলে এখুনি তোমাকে শেষ করে দেব।’
“আমি জানি তা তুমি পারবে না। তুমি আমার কাছে যা চাও তা তুমি পাওনি। যদি ওকে হত্যা কর কোন দিনই তা পাবে না।’… :
নিশ্চয়ই পাব আমি। আমি জানি কি করে পেতে হয়।
সে তো জবরদৃত্তি। সবাই পারে। “তাই যথেষ্ট ।
কিন্তু আমি স্বেচ্ছায় তোমাকে দিতে পারি। জোর চাখ রাখল এডিথ যদি, যদি তুমি ওকে খুন না কর।
শুধু এইটুকুই?”
আর-আর কি দান করতে পারি তোমাকে, বল। যা চাইবে সবই তোমাকে দেব। উজাড় করে দেব।
– কথা দি . .. মাথা নাড়ল এডিথ।
কথা দিচ্ছ?’ আবার প্রশ্ন করল জো। হাজার বার কথা দিচ্ছি।
কুয়াশাকে দিয়ে আন্ট্রাসোনিক্সের যন্ত্রপাতি তৈরি করিয়ে দিতে হবে। বল, রাজি আছ?” . স্তম্ভিত হয়ে গেল এডিথ। এতক্ষণ ধরে-কি জো শুধু এই কাজটুকু করিয়ে নেবার জন্যে তাকে ভয় দেখাচ্ছে? না সে সত্যি কুয়াশাকে সমুদ্রের তলে শ্বাস রোধ করে হত্যা করতে চায়?’ জোর দিকে ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল
এডিথ। ৬ । . জো বলল, ‘শুধু এ, একটি মাত্র শর্তে রাজি হতে পারি আমি। না হলে কুয়াশাকে এখুনি মরতে হবে। নিধুর শোনাল, জোর গলা। মিথ্যা ভয় আমি দেখাই না। কুয়াশা আমার কথা শুনবে না। মরে গেলেও না। কিন্তু তুমি অনুরোধ করলে সে রাজি হবেই। বুঝতেই পারছ তোমাকে দিয়েই কাজটা আমাকে করাতে হবে। অন্যথায়•••।.. . | জোর শেষের কথাগুলো এডিথের কানে পৌঁছুল না। সে জানে না, কাজটা সে ন্যায় করছে না অন্যায় করছে। কিন্তু সে জানে সব কিছুর বিনিময়েও যদি সে কুয়াশার জীবন রক্ষা করতে পারে তাহলে তার চেয়ে বড় পুণ্য আর পৃথিবীতে কিছু নেই।
• ‘ সে মাথা নেড়ে অস্ফুট কণ্ঠে বলল, আমি রাজি।
‘।
:
:
।
।
–
কুয়াশা-১৯
ছয়
সন্ধ্যা নেমেছে। সমুদ্রের বুক নিকষ কালো।
“ রেলিং-এর উপর ভর দিয়ে আত্মসমাহিতের মত অন্ধকার সমুদ্রের দিকে দৃষ্টি মেলে দাঁড়িয়েছিল এডিথ।
কিছুক্ষণ আগে কুয়াশা উঠে এসেছে সমুদ্র থেকে। সাতারের পোশাক বদলাবার পর তাকে সশস্ত্র পাহারাধীনে পাঠানো হয়েছে নয় নম্বর রূমে। নরউইচের ঐশর্য লুণ্ঠন করতে পাঠানো হয়েছে অন্য দুই নাবিককে। ঘন্টাখানেক আগেই নেমে গেছে তারা।
নিজের ভুল বুঝতে দেরি হয়নি এডিথের। জো তার নিজের গরজেই আন্ট্রাসোনিরে লোভে কুয়াশাকে রক্ষা করত। চেষ্টা করত কুয়াশার কাছ থেকে আন্ট্রাসোনিক্স সংগ্রহের জন্যে। কুয়াশাকে প্রলোভন দেখাত, হমকি দিত, হয়ত নিষ্ঠুর অত্যাচারও করত, কিন্তু চট করে তাকে হত্যা করত না। দিনের পর দিন চেষ্টা চালিয়ে যেত। কিন্তু এসব হাঙ্গামার চাইতে সহজ পথ ধরেছে জো। কুয়াশাকে ভয় দেখায়নি, তার বদলে ‘ভয় ধরিয়ে দিয়েছে এডিথের মনে। তাকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিতে চায় জো কৌশলে। . . . . . . .
: কুয়াশা এডিথের প্রস্তাবে রাজি হবে এই আশাতেই এই চাল চেলেছে জো। আবার জয় হয়েছে জো’র। হেরে গেছে এডিথ তার শয়তানির কাছে। … .. . অন্ধকারের দিকে দৃষ্টি মেলে এইসব ভাবছিল এডিথ। একটু দূরেই বসে আছে, জো ও বানহাম। কপিকলের শব্দ আসছে মাঝে মাঝে। লুষ্ঠিত সম্ভার উঠে আসছে নরউইচের স্ট্রংক্রম থেকে। কয়েকজন নাবিক বাক্সগুলো নামিয়ে রাখছে ডেকের, উপর। • ‘, অনেক..অনেকক্ষণ পার হয়ে গেল। লাউডস্পীকার থেকে কণ্ঠ শোনা গেল, ‘সব কাজ শেষ। এবার আমরা উঠতে পারি।
‘ভাল করে দেখেছ?’ জো প্রশ্ন করল।
হ্যাঁ।’ জবাব এল লাউডস্পীকারে।’ . ‘বশ। উঠে দাঁড়াল জো। হাত দিয়ে ইশারা করল কপিকলের
এঞ্জিনিয়ারকে।
একটু পরে ঘরঘর শব্দ করে আবার চালু হয়ে গেল কপিকল। : জোর কণ্ঠ শোনা গেল এবার। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে নিশ্চয়ই আমরা সেন্ট মার্টিনে পৌঁছুতে পারব?’
‘পৌঁছানো দরকার, বার্নহাম বলল, আতোয়ন হয়ত চলে গেছে সেখানে ইতিমধ্যেই।
ভলিউম-৭
| ‘ঠিক বুঝতে পারছিনে। আতোয়ান তো এখন পর্যন্ত কোন খবর পাঠাল না।। আমি একবার খোঁজ নেব এখন। তুমি এদিকটা দেখ।’ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল জো। কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল এডিথের পাশে।
‘তুমি নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত?’ জো প্রশ্ন করল।’’ | মাথা নাড়ল এডিথ, তেমন কিছু না। তবে এইভাবে একজায়গায় বেশিক্ষণ থাকতে ভাল লাগছে না, কখন শেষ হবে তোমাদের কাজ?’
হয়ে গেছে। একটু পরেই ওরা দুজন উঠে আসবে। তারপর আমরা রওনা দেব।’..
এডিথ আর কিছু বলল না। আবার মুখ ফেরাল সমুদ্রের দিকে। ‘একটু ড্রিংক হলে ভাল হয়, তাই না?” . . . . . . মাথা নাড়ল এডিথ. . তার হাত ধরল জো, এস।’
হুইল হাউজে নিয়ে এল জো এডিথকে। ঘন্টা টিপতেই নিঃশব্দে স্টুয়ার্ড এসে পঁড়াল। জো নির্দেশ দিল, ‘দুটো ম্যানহাটান। এডিথের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল,
কি অন্য কিছু?’
‘ওতেই হবে।’ জবাব দিল এডিথ।
• সিগারেটের প্যাকেট বের করে এডিথের দিকে এগিয়ে দিল জো। এডিথ সিগারেট নিয়ে ধরাল। একটা টান দিয়ে তাকাল জোর দিকে। দেখল, জো’র চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে অন্য এক দৃষ্টি । সেও চেয়ে আছে এডিধের দিকে। এডিথের বুকের ভিতরটা ধ্বক করে উঠল। চূড়ান্ত পরীক্ষার সময় হয়ত এসে, গেছে। জো তাকে নিয়ে চরম খেলায় মেতে উঠবে এখুনি। কলঙ্কিত করবে তার বাইশ বছরের পবিত্র যৌবন। দলিত মথিত করবে তার জীবনের অনাঘ্রাত পুষ্প। কেঁপে উঠল সে বারবার।’ : জো তার হাতে হাত রাখল। সেই সাপের মত ঠাণ্ডা হাতটা। শিরশির করে উঠল এডিথের সর্বাঙ্গ। অসুস্থ বোধ করতে লাগল সে। এখুনি বোধহয় তার বমি হয়ে যাবে। গলা পর্যন্ত কি যেন ঠেলে আসছে। . জো বোধহয় খেয়াল করল না। সে বলল, “ডার্লিং, তুমি বিশ্রাম নাও। আমি একটু কাজ সেরে নিই। তারপর…কিন্তু•••প্রতিশ্রুতি নিশ্চয় মনে আছে? . বুককেস দুটোর দিকে এগিয়ে গেল জো। :
: অর্থহীন দৃষ্টি মেলে তার দিকে চেয়ে রইল এডিথ। স্টুয়ার্ড ফিরে এল। এডিথের পাশের টেবিলের উপর ট্রে রাখল। গ্লাস ভরল একটা। তারপর বেরিয়ে গেল। এডিথ গ্রাসটা তুলে নিয়ে চুমুক দিল একবার। তারপর হঠাৎ তার মনে হল এতে হয়ত ওষুধ মেশানো থাকতে পারে। রেখে দিতে যাচ্ছিল সে। কিন্তু হাসি পেল তার। কি আসে যায়? কুয়াশা-১৯
জো’র দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল এডিথ। সে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বুককেসের সামনে বসেছে। এডিথ দেখল, বুককেসের উপরের তাকগুলো বই পুস্তক সমেত দরজার মত খুলে গেছে। (ফাঁকরের মধ্যে দিয়ে দেখা যাচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ রেডিও ট্রান্সমিশন সেট । জো মাথার উপর দিয়ে ইয়ারফোন লাগিয়েছে। তার দীর্ঘ আঙুলগুলো অভ্যস্ত দ্রুততায় ডায়ালের উপর দিয়ে নড়াচড়া করছে। নীরবতা ভেদ করে এডিধের কানে এসে পৌঁছল জেনারেটরের সোঁ সে শব্দ। একটু পরেই মাঝে মাঝে তার কানে আসতে লাগল স্পষ্ট ভীরু ট্যাপিং-এর আওয়াজ। জো তার বার্তাবাহককে খুঁজে পেয়েছে। বার্তা পাঠাতে শুরু করেছে সে।’
এডিথের ইন্দ্রিয়গুলো মুহূর্তের মধ্যে চঞ্চল হয়ে উঠল। একসময় সে মোর্স কৈাডের ট্রেনিং নিয়েছিল। সঙ্কেতগুলো তার জানা আছে। ডট আর ড্যাশের অর্থ কি সে জানে। জো যে বার্তা পাঠাচ্ছে এডিথ একটু চেষ্টা করলেই তা ডিসাইফার করতে পারে। কান খাড়া করল এডিথ। “
ডট-ডট-ড্যাশ-ডট•••ট-ডট ড্যাশড্যাশ-ডট-ড্যাশ-ডট। স্মৃতির পাতা, হাতড়ে দেখল এডিথ। মনে হচ্ছে এ সঙ্কেত তো আসছে চেরযুগের রেডিও স্টেশন থে ক। জো নিজের স্টেশনের সিগন্যাল দিচ্ছে এবার এবং পেশাদার অপারেটরের মত অভ্যস্ত ভঙ্গিতে বার্তা পাঠাচ্ছে। একটা, তারবার্তাঃ মাকুইস জোনস ও, হার্কভি, রাত দশটায় পৌঁছুচ্ছি।’ … এ নামের কোন অর্থ নেই এডিথের কাছে। বার্তাটাও তার কাছে গুরুত্বহীন। হার্কভিলে বত জোর কোন আড্ডা আছে। রাত দশটায় সেখানে পৌঁছুতে হবে। এখন বাজে সাড়ে সাতটা। কিন্তু এডিথের মাথায় তখন অন্য একটা সাবনা উঁকি দিয়েছে। যদি দিদি সে মাত্র একবার সুযোগ পায় তাহলে সে যে কোন ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফ রিসিভিং স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। হ্যাঁ, যদি সে সত্যি একবার সুযোগ পায় তাহলে উইট দ্বীপে নিস্টস স্টেশনে মেসেজ পাঠাতে পারবে। সেটা নিশ্চয়ই এই স্টেশনের রেঞ্জের মধ্যে পড়বে। সেখান থেকে দিনার্দ, বন্দরে টেলিগ্রাম পৌঁছুবে সহজেই। মেসেজ গ্রহণ না করারও কোন কারণ নেই। অন্যান্য আটলান্টিক লাইনারের মত নোজমেরীও রেজিষ্টার্ড ট্রান্সমিটারের
তালিকাভুক্ত। জো যে, সিগন্যাল দিয়ে নিজের পরিচয় দিয়েছে তা মনে আছে | এডিথের। অনন্তকাল ধরে মনে থাকবে। মনে মনে সিগন্যানটা আওড়াল। মাত্র।
শাঁচ মিনিট সময় পেলেই। যে চেয়ারে জো বসে আছে, মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য সেখানে সে বসতে পারলেই। কিন্তু সে সুযোগ কি আসবে? চঞ্চলতা বেড়ে গেল।
এডিথর। ‘ ।, জোর বার্তা পেরণ সমাপ্ত হয়েছে। সে হেড-ফোন খুলে রেখে মেইন সুহ। ‘অফ করে দিল। যে বাতিটায় ডায়াল আলোকিত ছিল সেটা নিভিয়ে দিল। বুকশেলফের দরজাটা বন্ধ করে দিল। ক্রিক করে শব্দ হল একটা। চেয়ার ছেড়ে
ভলিউম-৭,
দাঁড়াল জো। এগিয়ে এল এডিথের দিকে। … তোমার এখানে যে এতসুন্দর বন্দোবস্ত আছে তা কখনই ভাবিনি আমি।’ জো যাতে তার চাঞ্চল্য বুঝতে না পারে তার জন্যে আবেগহীন কণ্ঠে বলবার চেষ্টা করল এডিথ। জো তার চাঞ্চল্য অনুধাবন করল কিনা বুঝতে পারল না! হয়ত বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কোন কিছুতে পরোয়া করে না সে।
. জো ত্যাগ করল, বলল, এটা অনেক কাজে লাগে। এই তত এখুনি জানিয়ে দিলাম যে আমরা এখন রওনা হচ্ছি।
| ‘কোথায় যাচ্ছি আমরা?’ নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলবার চেষ্টা করল এডিথ।
হার্কভিল-জায়গাটা হচ্ছে কাপ ডিলা হেগের দক্ষিণে ও আনস ডি ডভাইলের উত্তর প্রান্তে। জায়গাটা প্রমোদ নিবাস নয় মোটেও। আর সেটাই আমার পক্ষে সুবিধাজনক। সেখানে আমার একটা বাসভবন আছে। ইচ্ছে করলে তুমি আগামীকালের পর সেখানে গিয়ে থাকতে পার। জায়গাটা আমার মনে হয় পছন্দ হবে তোমার। ।
‘সেখানেই কি কুয়াশাকে নামিয়ে দেবে?
দাত দিয়ে উপরের ঠোঁট কামড়াল জো। বলল, কোন আপত্তি নেই, যদি সে আমাকে আস্ট্রাসোনিক্স ইষ্টমেন্ট দেয়।
ওটা ছাড়া তুমি তাকে ছাড়বে না?
‘সে প্রশ্নই ওঠে না। তাছাড়া তুমি কথা দিয়েছ। অন্যথায় ইতিমধ্যেই তার কি দশা ঘটত তা তুমি জান।
ভুল হয়েছিল আমার। ‘ কিসের ভুল?” ।
তখন বুঝতে পারিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমি কথা না দিলেও তুমি নিজের গরজেই কুয়াশাকে বাঁচাতে।’ : তুমি যে বুদ্ধিমত্ত; অতে সন্দেহ নেই। জো ব্যঙ্গ করল, কিন্তু কথা যখন
দিয়েছ। তাছাড়া এটা তো ভাল করেই জান যে কুয়াশার মত শক্তকে বাঁচিয়ে। রাখাটাও আত্মহত্যা করার সামিল। আমি যে কত বড় ঝুঁকি নিচ্ছি তা নিশ্চয় বুঝতে পারছ। কিন্তু কিসের জন্যে। শুধু কি তোমার জন্যে? আন্ট্রাসোনি এক ফরেশ্চর্য ম্যাজিক। ওটা অনেকটা আলাদিনের প্রদীপের মত। ইউরোপের অনেক এঞ্জিনিয়ার চেষ্টা করেও শব্দভেদী যে শক্তিকে বশে আনতে পারেনি, কুয়াশা তা পেরেছে। আর সেটা আমার চাই। উত্তেজনাহীন একঘেয়ে সুরে বলে গেল জো।
‘ এডিথের গ্লাস শূন্য হয়েছিল। গ্লাসটা সে রেখে দিল। মাথাটা একটু ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকাল। জো’র ভাবলেশহীন মুখটা সে আর সহ্য করতে পারছিল ‘ না। তার মনের মধ্যে সব কিছু ছাড়িয়ে শুধু একটা ইচ্ছেই ঘুরপাক খাচ্ছে। মাত্র . একবার সুযোগ চায় সে। মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্যে বসতে চায় ট্রান্সমিশন সেটটার
কুয়াশা-১৯
–
+
|
সামনে। দিনার্দ বন্দরে কামাল আছে, আছেন ইন্সপেক্টর শার্লস। তার কাছে গোপনে খবর পাঠিয়ে দিয়ে এসেছে সে একটা চিঠিতে। চিঠি নিশ্চয় পেয়েছেন ইন্সপেক্টর। হয়ত তৈরি হয়েই আছেন। কিন্তু রোজমেরীর হদিস তিনি জানবেন কি করে? একবার তাঁকে মেসেজ পাঠাতে পারলেই•••। মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে
এডিথের। সুযোগ কি আসবে? . জো তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়ত তার মনের খবর জানবার চেষ্টা
করছে। সে কি বুঝল এডিথ জানে না।
• একটু পরে জোর কণ্ঠ কানে এল এডিথের। আরও একটা অসুবিধা আছে কুয়াশার ব্যাপারটা ফয়সালা করার। বুঝতেই পারছ এইসব মাল জাহাজে বেশিক্ষণ রাখা সমীচীন নয়। ব্যাংক আমার প্রিয় হতে পারে না। তাও নিশ্চয়ই বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না তোমার। তাছাড়া ওরা, মাল তুলতে সময় নেয় অনেক। সুতরাং আমি নিজেই আমার নিজস্ব ব্যাংক গড়ে তুলেছি। হার্কভিলের কাছে সমুদ্রের নিচে তিরিশ ফুট পানির তলে গড়ে তুলেছি আমার রত্নভাণ্ডার। . . নির্দিষ্ট স্থানটা জানা না থাকলে কারও সাধ্য নেই সেই ভাণ্ডারের সন্ধান পাবার। উপযুক্ত যন্ত্রপাতি ছাড়াও কেউ তা তুলতেও পারবে। সাধারণ চোরের তো প্রশ্নই ওঠে না। সে এক বিশাল ভাণ্ডার। কোটি কোটি টাকার ধনরত্ব আছে তাতে।
. একটু থামল জো। সিগারেট ধরাল। তারপর আবার শুরু হল সেই একঘেয়ে কর্কশ করে বক্তৃতা। আমি নিজেও ঠিক জানি না কত টাকার ধনরত্ন আছে। অবশ্য ওখান থেকে ওগুলো কিছুদিন পরে সরিয়ে ফেলব এমন এক জায়গায়, যেখানে আমি নির্বিরে ভোগ করতে পারব সেই বিপুল ঐশ্বর্য। আর তার অংশীদার হবে তুমি। আজ রাতে আমরা যাচ্ছি সেই ভাণ্ডারের কাছে। নরউইচ জাহাজ থেকে তোলা হীরা আর সোনা ওখানে নামিয়ে রাখতে হবে আজ রাতেই। কিন্তু কুয়াশা যাতে আমার এই ঐশ্বর্যের সন্ধান না পায় তার ব্যবস্থা আমাকে অবশ্যই করতে হবে। আবার থামল জো। তুমি নিশ্চয়ই রাজি আছ আমার প্রস্তাবে?’ সিগারেটে আর একটা টান দিয়ে বলল জো ।
… আমি আমি। আমার কথা নতুন আর কি শুনবে বল? হাসবার চেষ্টা করল এডিথ। ‘.
জো এগিয়ে গেল এডিথের দিকে। তার হাত স্পর্শ করল এডিথের কাঁধ। জড়িয়ে ধরল জো এডিথের গলা। আর এডিথের মনে হল যেন একটা সাপ তার দেহের উপর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। দুহাত দিয়ে জো এডিথকে টেনে তুলল। চোখ বন্ধ করল এডিথ। সে যেন ভয়ঙ্কর এক দুঃস্বপ্ন দেখছে। জো’র গালে চড় কষার প্রবল একটা ইচ্ছা দমন করল এডিথ। .
– ভলিউম-৭
T
“
।
জো’র মুখটা এডিথের মুখের কাছে এসে গেছে। তার পাথরের মত কালো দুটো চোখে আগুন জ্বলছে। জো’র মুখটা আরও এগিয়ে এল । প্রচণ্ড ঘৃণায় মুখটা বেঁকে গেল এডিথের। .. একটু পরেই জো তাকে ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিল। একবার তার অচেতন-প্রায় বিবর্ণ মুখের দিকে তাকাল। তারপর ঘন্টা পিটল । ‘ স্টুয়ার্ড এসে দাঁড়াতেই জো বলল, ‘আধঘন্টার মধ্যে ডিনার খাব আমরা। আজকের মেনু কি?’… ১. ‘স্মোকড স্যামন, ল্যাংগুস্টাইন, গ্র্যাণ্ড ডক, সুপ্রীম ডি ভলেইল বার্গরেট ফ্রিসেজ মিমোসা।’ আউড়ে গেল স্টুয়ার্ড।
‘বাহ! চমৎকার হবে।
স্টুয়ার্ড মাথাটা সামান্য নুইয়ে চলে যাচ্ছিল । জো বলল, আমাদের জন্যে এক, বোতল সেঁটু ল্যাফে ১৯০৬-এর ব্যবস্থা করবে।
• জ্বি, স্যার।’ বেরিয়ে গেল লোকটা।
জোও বেরিয়ে গেল একটু পরে। যাবার সময় এডিথের গালটা টিপে দিল। ‘
সাত
বাংকের উপর শুয়ে কাটাল কুয়াশা সারাটা সন্ধ্যা। কপিকলের শব্দটা মন্দ লাগছিল।
। মাঝখানে একবার ঘুমিয়ে নিল কিছুক্ষণের জন্যে। শরীরটা এখন বেশ তাজা লাগছে।’ বেশ খুশিও লাগছে তার। জো তাহলে তার ফাঁদে পা দিয়েছে।’
• কপিকলের আর্তনাদ একসময় শেষ হয়ে গেল । ইয়ট এখন চলতে শুরু করেছে কোন দিকে কে জানে। পোর্টবহালের ভিতর দিয়ে বাইরের দিকে তাকাল। আদিগন্ত অন্ধকার। কোথাও আলোর রেশ নেই। কোথায় যাচ্ছে রোজমেরী কুয়াশা জানে না । কিন্তু তার ইনটুইশন বলছিল এখন জাহাজ যাচ্ছে উপকূলের দিকে। দিনাদ বন্দরের দিকে অবশ্য নয়। . * রাত আটটার দিকে তিনজন নাবিক এল। একজনের হাতে ট্রে। তাতে খাবার আর এক গ্লাস মদ। অন্য দুজনের হাতে রিভলভার আধঘন্টা পরে তারা আবার ফিরে এল। টেটা নিয়ে গেল। কুয়াশা সিগারেট ধরাতে ধরাতে শুনল দরজার তালায় চাবি দেবার শব্দ। আরও এক ঘন্টা সে বাংকের উপর শুয়ে রইল! সিগারেট টানল একের পর এক। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল সারাটা কক্ষ।
তারপর উঠে দাঁড়াল কুয়াশা। হাই তুলল একবার। আড়মোড়া ভাঙল। পকেটে হাত দিয়ে বের করল ছোট একটা হাতিয়ার। ভাগ্য তার হাতে তুলে দিয়েছে, সামান্য এই হাতিয়ারটা। অথচ কুয়াশা জানে এখন এটা অসামান্য অস্ত্র । নরউইচের স্ট্রংরূম খোলার জন্যে জো যে বার্গলার্স কিট তাকে দিয়েছিল তার ভিতর ৩-কুয়াশা-১৯ ।
থেকে যন্ত্রটা সে সরিয়েছে। | কুয়াশার নিঃশব্দ বৈজ্ঞানিক আক্রমণে দরজার তালাটা মাত্র দু’মিনিটের মধ্যেই আত্মসমর্পণ করল। তালাটা মজবুত সন্দেহ নেই। বিশ্বস্তও বটে। মেকানিজম সত্যি ভাল। কিন্তু কুয়াশার হাতে যে যন্ত্রটা ছিল তার কাছে ঐ তালা কিছুই নয়। | যন্ত্রটা আবার পকেটে ভরল কুয়াশা। জো’র প্রথম এবং একমাত্র নির্বুদ্ধিতার পরিচয় তার পকেটেই থাক। জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হিসেবেও অস্ত্রটার একটা ঐতিহাসিক মূল্য অবশ্যই থাকবে। স্ট্রংরূম খোলবার জন্য তাকে সমুদ্রের তলে পাঠিয়ে জো’ই তাকে বার্গলার্স কিট থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রটা বেছে নেবার সুযোগ দিয়েছে। জীবন্ত অবস্থায় উপরে উঠতে দিয়ে তাকে যন্ত্রটা ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। বাকি কাজটুকু কুয়াশা নিজেই সম্পন্ন করতে পারবে।’
• দরজার হাতলটা আস্তে আস্তে ঘোরাল কুয়াশা। নিঃশব্দে খুলে গেল দরজা। মুখ বের করল খোলা দরজা দিয়ে। সামনে আরও একটা দরজা। এপাশে ওপাশে আরও কয়েকটা দূরজা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সবগুলোই বন্ধ। ডাইনে-বাঁয়ে দেখল কুয়াশা। না কেউ নেই। সবাই হয়ত খেতে গেছে অথবা সারাদিনের খাটুনির পর ডেকে আড্ডা দিচ্ছে। * বেরিয়ে এল কুয়াশা। দরজাটা ভেজিয়ে দিল। নিঃশব্দে কয়েক পা এগিয়ে যেতেই একটা অন্ধকার কোণ পাওয়া গেল। সেখানে দাঁড়াল কুয়াশা।’ | এতক্ষণ কেবিনে গুমোট অবস্থায় থাকবার পর ঠাণ্ডা হাওয়া যেন প্রীতির পরশ বুলিয়ে দিল তার চোখে-মুখে। উপরে আকাশটা কালো। মেঘ জমেছে। মাত্র একটা তারা চোখে পড়ল তার।
রোজমেরী বোধহয় দিক পরিবর্তন করল । কুয়াশা দেখল, দূরে–অনেক দূরে আলোর রেখা। একটু পরে একটা আলো স্পষ্টতর হল । ছোট একটা জাহাজের সার্চ লাইট। তাহলে কোন বন্দরের দিকে, অন্তত উপকলের দিকেই এগোচ্ছে রোজমেরী । ‘ • . যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল কুয়াশা সেখান থেকে উপরের পোর্ট ডক দেখা যায়। জায়গাটা এখন জনশূন্য। তবে এয়ার পাম্প ও টেলিফোনের যন্ত্রপাতি পড়ে আছে এখনও। চারটে ডাইভিং স্যুটও চোখে পড়ল তার। হেলমেটগুলোও আছে। আর আছে অনেকগুলো কাঠের বাক্স। ওতেই বোধহয় নরউইচের লুণ্ঠিত ধনসম্পদ ভরা হয়। আর একটু দূরে হুইল হাউজের জানালা দিয়ে আলো বেরিয়ে এসে ডেকটাকে আলো ও আঁধারে বিভক্ত করে ফেলেছে। ওখানে এখন যাওয়া উচিত হবে না। বিশ্রামরত কোন নাবিকের চোখে পড়া বিচিত্র নয়।
: সবচেয়ে ভাল হয় যদি সে কোনভাবে একবার ডেক হাউজের ছাদে উঠতে পারে”। সিঁড়ির দিকে নিঃশব্দে এগিয়ে গেল কুয়াশা । মিনিটখানেক পরে সে ইং হাউজের ছাদের উপর গিয়ে শুয়ে পড়ল। আকাশটা কি নিকষ কালো। এ ভয়
৩৪”
ভলিউম-৭
এখন কি কছে কে জানে? একটা সিগারেট ধরালে কেমন হয়? অতটা ঝুঁকি নেওয়া কি উচিত হবে?
সম্মুখের দিকে অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে এখানে সেখানে বিক্ষিপ্ত আলো দেখা যাচ্ছে। জাহাজটা ফুল-স্পীডে এগিয়ে চলেছে। আলোর সংখ্যা একটা দুটো করে বাড়ছে। গতিশীল আলো দেখা যাচ্ছে অনেকগুলো । ওগুলো জাহাজের আলো। অন্ধকারের মধ্যে অস্পষ্ট পাহাড়ী উপকূল চোখে পড়ল কুয়াশার । জায়গাটা সে ঠিক চিনতে পারল না। কিন্তু জাহাজের গতিবেগ সম্পর্কে যেটুকু সে শুনেছিল তাতে মনে হল ওটা ফ্রান্সের উপকূল। সম্ভবত কাপ ডি লা হেগের দক্ষিণের কোন পাহাড়ী উপকূলের দিকে এগোচ্ছে রোজমেরী ।। … আরও একটু কফি, এডিথ। হঠাৎ কানে এল জো’র ধাতব কণ্ঠস্বর । নিঃশ্বাস বন্ধ করে নিঃশব্দে ছাদের প্রান্তে চলে গেল কুয়াশা। একটা জানালা খোলা রয়েছে। মাথাটা একটু নিচু করে উঁকি দিল সে। যদি কিছু দেখা যায়। হ্যাঁ, ভিতরটা দেখা যাচ্ছে। কয়েক সেকেণ্ড দেখল সে। তিনজন খেতে বসেছে–জো, বার্নহাম, এডিথ। মুহূর্তের জন্যে এডিথের মুখটা চোখে পড়েছিল কুয়াশার। ভাবলেশহীন-মুখ। চতুর্থ লোকটা রয়েছে হুইলে। তার দৃষ্টি সম্মুখের দিকে নিবদ্ধ। মাঝেমাঝে তার হাতটা চলছে। কিন্তু দেহটা স্থির। ‘
• কান পেতে ওদের কথাবার্তা শোনবার চেষ্টা করল কুয়াশা। টুকরো টুকরো কথা কানে এল তার। তাতে মনে হল, রোজমেরী এখন চলছে জো’র নিকটবর্তী কোন আড্ডায়। সেটাই স্বাভাবিক। ডেকের উপর যে বিপুল ঐশ্বর্য রয়েছে সেগুলো নিশ্চয়ই আজ রাতেই সরিয়ে ফেলা হবে। কোন গোপন স্থানে। আর তার জন্য জো নিশ্চয়ই সাধারণ কোন বন্দরে যাবে না। সমুদ্রের তীরে কোথাও সম্ভবত তার কোন গোপন ধনাগার আছে, সেখানেই রাখা হবে হীরা আর সোনা ভর্তি বাক্সগুলো। আর কাজটা হবে রাতে–দিনের আলোয় নয়। হয়ত আজ রাতেই। কিন্তু জো’র পরিকল্পনা জানতে না পারলে তার নিজের পক্ষে কোন পরিকল্পনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এই শত্ৰুপুরীতে হঠাৎ করে কিছু করে বসাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাকে সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
‘স্যার, আলো।
নতুন একটা কণ্ঠ শোনা গেল। কুয়াশার চিন্তার গ্রন্থিটা ছিঁড়ে গেল সেই কণ্ঠস্বরে। সম্ভবত হেলস্-ম্যান কথা বলছে। আবার উঁকি দিল কুয়াশা হুইল হাউজের মধ্যে। জো চেয়ার ছেড়ে উঠে গেছে হুইলের দিকে। বার্নহাম তখনও খাচ্ছে। এডিথের হাতে সিগারেট। তার দৃষ্টিও সামনের দিকে।– কুয়াশাও মুখ তুলে সামনের দিকে তাকাল। একদম উপকূলের কাছে এসে পড়েছে রোজমেরী । দুটো আলো দেখা যাচ্ছে। অতি উজ্জ্বল দুটো আলো । একটা লাল আর একটা হলুদ। কুয়াশা-১৯
সম্ভবত স্থান নির্ণয় ও পথের নির্দেশ দানের জন্য জো’র স্যাঙাত্রা সিগনাল দিচ্ছে । * হইল হাউজ থেকে আবার জো’র নিরুত্তাপ গলার আওয়াজ শোনা গেল, মাই ডিয়ার, তোমাকে একবার নিচে যেতে হবে। মাটি দেখে উৎসাহিত হয়ে তুমি যদি পালিয়ে যাবার জন্য সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড় তাহলে আমাকে অসুবিধায় পড়তে হবে।
হাসবার চেষ্টা করল বোধহয় এডিথ। কিন্তু হাসি ফুটল না। বলল, বেশ তো, কোথায় যেতে হবে বল। নিশ্চয়ই নয় নম্বর কেবিনে?” * না। সেখানে বসে কুয়াশা আর তুমি ক্ষতিকর পরামর্শ করতে পার। আপাতত নিজের কেবিনে যেতে হবে তোমার। যতক্ষণ দরকার হবে তার বেশি আটকে রাখা হবে না।’
এডিথ বেরিয়ে গেল। দরজার কাছেই স্টুয়ার্ড দাঁড়িয়েছিল। সে চলল এডিথের পেছনে পেছনে।
উঠতে যাচ্ছিল কুয়াশা। তার নিজের যাই হোক, এডিথের বন্দীত্ব যেমন করেই হোক মোচন করতে হবে। কিন্তু পরমুহূর্তেই বুঝল সেটা সম্ভব নয়। এডিথের কেবিনই তো সে চেনে না। খুঁজতে গিয়ে যদি অন্য কোন কেবিনে ঢুকে পড়ে আর তার বাসিন্দা যদি তাকে দেখে ফেলে অথবা খোঁজ করার সময়ই যদি সে কোন নাবিকের চোখে পড়ে যায় তাহলে যে সুযোগ এসেছে সেটাও বরবাদ হয়ে যাবে। সুতরাং তাকে অপেক্ষা করতে হবে উপযুক্ত মুহূর্তটার জন্য।
‘আজ রাতেই কি সোনা নামাবে?’ প্রশ্ন করল বার্নহাম। কুয়াশা নিঃশ্বাস বন্ধ করে জবাবটার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
‘হ্যাঁ, আজ রাতেই। শোনা গেল জো’র জবাব। এই কুয়াশা লোকটা যে কতটা ভয়ঙ্কর তা বোধহয় জান না। সে তার বন্ধুদের কি জানিয়ে দিয়ে এসেছে কে জানে? দুনিয়ার তাবৎ গোয়েন্দাদের চাইতেও মারাত্মক সে। ওকে উপেক্ষা করলে ক্ষতি বই লাভ হবার সম্ভাবনা নেই। সুখের বিষয়, আগামীতে অনেকদিন আমাদের কোন প্রোগ্রাম নেই। রোজমেরী ডুবিয়ে দিতে হয়ত খারাপ লাগবে কিন্তু সেটা নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে না। আমরা ট্রলারে করে সোনা তুলতে পারব। আর বিক্রির ব্যবস্থা, কার্ল, তোমাকেই করতে হবে।’– সে ব্যবস্থা তো হয়েই আছে। আতোয়ান হয়ত খদের নিয়ে ইতিমধ্যেই এসে গেছে।
‘তাহলে অবশ্য দুশ্চিন্তার কারণ নেই। ‘কিন্তু এই লোকটাকে বাঁচিয়ে রাখছ কেন? ‘প্রয়োজনের চেয়ে এক মুহূর্ত বেশি তাকে বাঁচিয়ে রাখব না।’
জোর কণ্ঠ আসছিল হইল হাউজের সানের দিক থেকে। কুয়াশা আবার ডাক দিল কেবিনের মধ্যে। জো নিজে হুইল । লনা করছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে
ভলিউম-৭,
st।
হেলমস-ম্যান। জো থ্রটল লিভারটাকে ধাক্কা দিল, আর এঞ্জিনের শব্দটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। সার্চলাইটটাও নিভে গেল।
• : সামনের দিকে মুখ তুলে কুয়াশা দেখল রোজমেরী উপকূলের একেবারে কাছে এসে গেছে। পাহাড়ী খাদগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খাদের উপর ঢেউ ভেঙে পড়ার শব্দ আসছে কানে। সাদা ফেনা দেখা যাচ্ছে তীরে। আরও কাছে একটা আলো দেখা দিল পানির উপর। আলোটা ক্রমেই এগিয়ে আসছে। কুয়াশা দেখল একটা স্পীড বোট এগিয়ে আসছে। রোজমেরীর দিকে। আরও এগিয়ে আসতেই দেখা গেল বোটে দুজন লোক।
হেলমস-ম্যান হুইল হাউজের দরজা খুলে রেলিং-এর দিকে এগিয়ে গেল । বোটটা এসে থামল ইয়টের পাশে। দড়ি ছুঁড়ে দিল একজন হেলমস-ম্যানের দিকে। দড়িটা শূন্যের উপরেই ধরে বাঁধল সে একটা হুকে। ‘
বোটের আরোহী দুজন উঠে এল। একজনকে দেখে চমকে উঠল কুয়াশা। লোকটা আর কেউ নয় আতোয়ান ।
: হুইল হাউজের দরজায় দাঁড়িয়েছিল জো। সে আগন্তুকদের অভ্যর্থনা জানাল, ‘এস, এস। খবর আলতো?’
হ্যাঁ, সব কিছু ঠিক আছে। হেলমস-ম্যানের দিকে ফিরল জো, তুমি এবার যেতে পার বিশ্রাম করতে।’ হেলমস-ম্যান চলে গেল।
আতোয়ানের সঙ্গী ঢুকল হুইল হাউজে। আতোয়ান বলল, আমাকে একটু মাফ করতে হবে কয়েক মিনিটের জন্য।’
‘অল-রাইট। জো বলল। . আতোয়ান চলে যাচ্ছিল। জো আবার তাকে ডাকল। আততায়ান ফিরে দাঁড়াতেই জো তাকে বলল, তুমি আলফানসকে বলে দিয়ে যাও, আমি আর সে এখুনি নিচে নামব। সে যেন সাঁতারের পোশাক পরে নেয়। আর আমারটাও তৈরি রাখতে বলবে। আমি কয়েক মিনিটের মধ্যেই আসছি । মিনিট পনেরর মধ্যেই নামব আমরা।’
* তথাস্তু।’ চলে গেল আততায়ান।
কুয়াশা পায়ের বুড়ো আঙুলের উপর ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াল। নিঃশব্দে অথচ অতি দ্রুত সে নেমে এল হুইল হাউজের ছাদ থেকে। সিঁড়ির কাছে অন্ধকারে দাঁড়াল কুয়াশা। আতোয়ান, কোন্ দিকে গেছে সে জানে না। তবে ইয়টের অধিকাংশ লোকই এই সিঁড়িটা ব্যবহার করে। ভাগ্য ভাল থাকলে এখানেই দেখা মিলবে তার সাথে। মিললও। ক্লান্ত পদক্ষেপে আতোয়ান এগোচ্ছিল সিডির দিকে। চেহারাটা বিষণ্ণ। তাতে দুর্ভাবনার ছাপটা স্পষ্ট।
চারদিকে একবার জরিপ করল কুয়াশা। কেউ নেই আতোয়ান ছাড়া। কুয়াশা-১৯
৩৭
হয়ে উঠেছে সে। জেজ্ঞেস করল । ও কয়াশা ফি
অন্ধকার কোণ থেকে বেরিয়ে এল কুয়াশা। ছায়াটা পড়ল আতোয়ানের চোখে । ছায়ার মালিকের দিকে তাকাতেই কুয়াশার বিশাল দেহটা চোখে পড়ল। চমকে উঠল আতোয়ান। সে বোধহয় বিস্ময়সূচক শব্দ উচ্চারণ করতে যাচ্ছিল। অতিকষ্টে চেপে গেল। বিস্ময় মিলিয়ে যেতেই চারদিকে একবার চেয়ে দেখল। আশ্বস্ত হল।
, কেউ নেই। কিন্তু সে জানে যে-কোন মুহূর্তে লোক এসে যেতে পারে। সুতরাং সাবধান হতে হবে ।
অন্ধকার কোণে ফিরে এল কুয়াশা। আতোয়ানকে হাত তুলে তার দিকে এগিয়ে যাবার জন্য ইশারা করল। সাবধানী পদক্ষেপে এগিয়ে গেল আতোয়ান কুয়াশার দিকে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আতোয়ানের বিষণ্ণতা দূর হয়ে গেছে । তাকে একটু যেন উত্তেজিত বলে মনে হল কুয়াশার। যেন কি একটা আশায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে সে।
খবর কি?’ আতোয়ান জিজ্ঞেস করল । এখনও বেঁচে আছেন তাহলে?’..
‘আরও অনেকদিন বাঁচব বলে মনে হচ্ছে, কুয়াশা ফিস ফিস করে জবাব দিল ।.. .
. “ওরা এসেছেন । মানে মি. আহমদ আর মি. শহীদ খান এসেছেন। কাছাকাছি অন্ধকারে এক পাহাড়ী খাদে লুকিয়ে আছেন। আলো দেখিয়ে সিগন্যাল দিলেই চলে আসবেন।’
* ওসব শোনবার ধৈর্য কুয়াশার ছিল না। সে বলল, সে যা হয় পরে সময় বুঝে, করবেন। আপাতত একটা পিস্তল চাই। এই মুহূর্তে…’
আততায়ান তার হিপ-পকেট থেকে একটা অটোমেটিক বের করে দিল।
কুয়াশা বলল, “শুনুন; এখন যা বলব তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবেই হোক কাজটা করতে হবে। আমাকে নিয়ে যেতে হবে আপনার সাথে আলফানসের কাছে। তাকে বলতে হবে জো’র সাথে আমি নিচে নামব।’ | কুয়াশার প্রস্তাবটা বোধহয়’মনঃপূত হল না আতোয়ানের। সে আমতা আমতা করে বলল, সেটা কি ঠিক হবে? জো টের পেলে…। | ‘সে ঝুঁকি তো নিতেই হবে। গম্ভীর গলায় বলল কুয়াশা। আপনি চলুন। এর চাইতে ভাল আইডিয়া আমার জানা নেই। . কুয়াশার কণ্ঠের দৃঢ়তায় আতোয়ান আপত্তি করার পথ পেল না। সে বলল, ‘চলুন।’.
কুয়াশা যেতে যেতে তার প্ল্যানটা ভাল করে বুঝিয়ে দিল আতোয়ানকে। শেষে যোগ করল, কিছুটা ঝুঁকি আছে সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটুকু তো নিতেই হবে। ইয়ট এখন সমুদ্রের উপকূলে আছে। এখান থেকে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া সহজ। একটু চেষ্টা করলে এডিথকে নিয়েও পালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু পালিয়ে আমি যেতে পারি না। জীবনে কখনও হার মানিনি। পরাজয় শব্দটা আমার
ভলিউম-৭
+–
TT
|
•
•
.
৩১
অভিধানে নেই। বরং মৃত্যুকে বরণ করব সে-ও ভাল।’. | কুয়াশার কণ্ঠস্বরে এমন একটা সহজ ঋজুতা ও আন্তরিকতা ছিল যা। আতোয়ানকে মুগ্ধ করল। কিন্তু কিছু বলল না। নীরবে এগোতে লাগল। ‘কুয়াশা বলল, দেখবেন কাজটা যেন পুরোটাই প্ল্যানমত হয়। শুধু এঞ্জিনিয়ার, তার সহকারী আর ড্রেসার ছাড়া আর কেউ যেন পোর্ট ডেকে না যেতে পারে। আলফানসকে যেভাবে হোক লোয়ার ডেকে রাখতে হবে। আসলে এর উপরই নির্ভর করছে আমার পরিকল্পনার সাফল্য।
আট ।
পরিকল্পনাটা স্থির করতে কুয়াশার ব্যয় হয়েছে কয়েক সেকেণ্ড মাত্র। জোর লুণ্ঠিত ঐশ্বর্য ডেকের উপর পড়ে থাকায় কুয়াশা, ধরেই নিয়েছিল আজ রাতেই সেগুলো সরিয়ে ফেলা হবে এবং খুব সম্ভব কোন গোপন ধনাগারেই তা রেখে দেবে। একরাতে এই বিপুল ঐশ্বর্য বিক্রি করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কি ঘটতে যাচ্ছে কুয়াশা বুঝতে পারেনি। হঠাৎ জো তার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করায় কুয়াশা তার পরিকল্পনা স্থির করার সুযোগ পেয়েছে। . সমুদ্রের নিচে আছে জো’র গোপন ভাণ্ডার। জো’র কাজের মধ্যে মৌলিকতা আছে সন্দেহ নেই। জো আজ রাতে সেখানে নামবে। নরউইচ থেকে লুটে আনা ঐশ্বর্য সে রেখে আসবে সমুদ্র তলের সেই ধনাগারে।
• ** কুয়াশাও যাবে সেখানে আলফানসের বদলে। যেমন করে থোক যেতেই হবে। দেখে আসবে জো’র গোপন ভাণ্ডার। আর সেই সমুদ্র গর্ভে, তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা যেখানে নেই, সেখানেই নির্ধারণ হবে জয়-পরাজয়।.. .:. নয় নম্বর কেবিন অতিক্রম করে বন্ধ একটা কেবিনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল দুজন। টোকা দিতেই ‘দরজা খুলে দিল কে একজন ভিতর থেকে। তিনজন বসে বসে সিগারেট টানছিল। আলফানস আর ড্রেসার দুজন। ওদের দেখে আলফানস, ও তার সঙ্গীরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।. … কুয়াশা নিশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল আতেয়ানের পিছনে। তার ডান হাতটা ট্রাউজারের পকেটে। আঙুলটা টিগারের উপর।
: আতোয়ান কথা বলবার আগে তার মনে হল যেন অনেক অনেক বছর পার হয়ে গেছে। যেন অনন্তকাল ধরে সে অপেক্ষা করছে আতোয়ানের কথা শোনার জন্যে।
‘চীফ বলেছেন মি. ফগকে আবার নিচে নামতে হবে।’ “ আতোয়ানের গলা শুনতে পেল কুয়াশা। শান্ত স্বাভাবিক কণ্ঠেই আতোয়ান কথাগুলো উচ্চারণ করেছে। কোনরকম সন্দেহের অবকাশ রাখেনি। ধীরে ধীরে কুয়াশা-১৯
নিঃশ্বাস ছাড়ল কুয়াশা। . ড্রেসার দুজন উঠে দরজার দিকে এগোল। আতোয়ান তাদের উদ্দেশ্যে বলল,
কার্ট, চীফ তার পোশাক তৈরি রাখতে বলেছেন। উনি নিজেও নামবেন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই যাচ্ছেন উনি তাড়াতাড়ি হাত চালাবে।
“আচ্ছা।’ বেরিয়ে গেল ড্রেসার দুজন। | আলফানসও তাদের পিছনে পিছনে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তাকে ঠেকাল আতোয়ান, তুমি এখানেই থাকবে। আর তীরে যাবার পোশাক পরে নেবে। তবে ইতিমধ্যে কেউ যেন ওপরে না যায় একজন নাবিকও না। শুধু এঞ্জিনিয়ার আর ‘তার সহকারী ছাড়া । এটাই চীফের নির্দেশ। অবশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত কাজ শেষ না
হয় শুধুমাত্র ততক্ষণের জন্যে। তারপর তুমি তার সাথে তীরে যাবে।’
| ‘এসবের মানে কি?’ ক্ষোভের সাথে জানাল আলফানস, ‘আঁ–এসবের মানে কি?’
আতোয়ান ত্যাগ করল, আমি কি করে বলব? কর্তার ইচ্ছায় কর্ম।
বেরিয়ে এল আততায়ান। তাকে অনুসরণ করার জন্য ইশারা করল কুয়াশাকে। কুয়াশা বেরিয়ে এল আততায়ানের পিছনে।
যাক প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয়েছে: নির্বিঘ্নে।
নাটকের শেষ অঙ্ক এবার অভিনীত হবে। মঞ্চ তৈরি। অদৃশ্য পরিচালকের নিশে এবার যবনিকা উঠবে। ডেকে এখন আর কোন নাবিক যাচ্ছে না। আলফানসকে নিয়েই সমস্যা ছিল। তারও ‘ডেকে আসার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে হয়ত জো’র নাবিক-কুলের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হবে, নিজেদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হবে কিন্তু জোর নাম করে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা
অমান্য করার সাহস রোজমেরীর কারও নেই।
. কার্ট ও তার সহকারীর প্রায় পিছনে পিছনে কুয়াশা ও আতোয়ান উঠল ডেকে। পরমুহূর্তেই সেখান থেকে সরে গেল আতোয়ান। এতক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে অভিনয় করলেও ভয় পেয়েছে আতোয়ান। ঠিক এই মুহূর্তে সে এখানে জো’র সামনাসামনি পড়তে চায় না। বরং জো যদি এদিকে আসতে থাকে তাহলে পথে তাকে দেরি করিয়ে দেবার চেষ্টা করবে।
• কুয়াশা ধীরে সুস্থে টুলের ওপর বসল। জুতোর ফিতে খুলল। এ ধরনের ডুবুরি পোশাক কি করে পরতে হয় সন্ধ্যাতেই সে অভিজ্ঞতা তার হয়েছে। আর সে জানে, প্রত্যেকটা কাজ খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে। প্রত্যেকটা মুহূর্ত এখন মূল্যবান । অথচ অতিব্যস্ততাও দেখানো চলবে না। তাতে সন্দেহ হতে পারে ড্রেসারদের। জোর মধ্যে প্যান্টের নিচের দিকটা ঢুকিয়ে দিল। ভারি উলের প্যান্টটা চাপাল তার উপর উলের সোয়েটার পরে নিল ‘ ড্রেসাররা তাকে সাহায্য করল । উরু, পর্যন্ত উলের ওভার-স্টকিং পরিয়ে দিল ওরাই। ডাইভিং স্যটের মধ্যে পা দুটো,
১০
ভলিউম-৭
ঢুকিয়ে দিতে সাহায্য করল। কুয়াশার কব্জিতে নরম সাবান দিয়ে ঘষে দিয়ে ভালুকানইজড রাবার কাফের মধ্যে হাত দুটো ঢুকিয়ে দিল। তার উপর সেঁটে দিল রাবারের মজবুত বন্ধনী । ঠিক যখন কার্ট কুয়াশার ভারি বুট দুটোর ফিতে বাঁধছিল আর তার সহকারী তার মাথার উপর কুন কলার সেঁটে দিয়ে বুকের প্লেট আটকাচ্ছিল তখন একটু দূরে পায়ের শব্দ শোনা গেল। জো আর বার্নহাম এসে গেছে। যাক প্রায় সবটাই শেষ হয়েছে। শুধু হেলমেট পরানো বাকি। অথচ সেটাই দরকার সবচেয়ে বেশি।
চট করে একটা সিগারেট বের করল কুয়াশা। সেটা জ্বালিয়ে ঐ অবস্থাতেই সে উঠে দাঁড়িয়ে টাফরেলের দিকে এগিয়ে গেল। রেলিং-এর উপর ভর দিয়ে সে সামনের দিকে মাথাটা ঝুঁকিয়ে দাঁড়াল। সে জানে কার্ট যদি বিরক্তও হয় তার আচরণে তবুও সে চুপ করে থাকবে। একটা কথাও বলবে না। জো’কে পোশাক পরানো হচ্ছে। কেউ কোন কথা বলছে না। তার সামনে তার নাবিকরা উঁশব্দটাও উচ্চারণ করে না অপ্রয়োজনে। জো তা একদম পছন্দ করে না, তারা তা জানে। কুয়াশাও জানে সে কথা। এটাই এখন তার সবচেয়ে বড় ভরসা।
. তবুও কুয়াশা জানে বিপদ কাটেনি। জো যেকোন মুহূর্তে তাকে অর্থাৎ আলফানসকে কিছু একটা জিজ্ঞাসা করে বসতে পারে। তারজন্যে প্রস্তুত হয়ে আছে সে। অটোমেটিকটা এখন আর প্যান্টের পকেটে নেই। সিঁড়ি দিয়ে উঠবার সময় সেটা বুকের উপর টাইয়ের ঠিক নিচে রেখে দিয়েছে সে’। বের করতে এক সেকেণ্ডের বেশি সময় লাগবে না।’
কান খাড়া করে রইল কুয়াশা। অনেকক্ষণ পার হয়ে গেল। কেউ কোন কথা। বলল না। বার্নহামও চুপচাপ। নবাগত লোকটাও কথা বলছে না।
অবশেষে কুয়াশার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল। এয়ার-পাম্পের চাফ চাফ শব্দ কানে এল তার। কানে এল ভারি বুটের শব্দ। জো. তার দিকে এগিয়ে আসছে । মেরুদণ্ডের মধ্যে শিরশির করে উঠল। সিগারেটটা বাঁ হাতে নিল ‘কুয়াশা । ডান হাতটা চলে গেল গলার কাছে। কিন্তু কিছু হল না। থেমে গেল বুটের শব্দটা। তার বদলে এগিয়ে এল কার্ট। তার হাতে হেলমেট। কুয়াশা ঘুরল না সমুদ্রের দিকে মুখ করেই দাঁড়িয়ে রইল। অবশেষে কার্ট যখন হেলমেট বসিয়ে সামনের উইণ্ডোর স্ক্রটা লাগিয়ে দিল তখন মুখ ফেরাল কুয়াশা। উজ্জ্বল আলো প্রতিফলিত হল উইণ্ডোর, কাছে। এখন আর বিপদের আশঙ্কা নেই। কাছাকাছি এসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য না করলে এখন আর তাকে কেউ চিনতে পারবে না। আর এখন পর্যন্ত সে সন্দেহজনক কোন আচরণ করেনি। জো নিরুদ্বিগ্ন। সে এখনও জানে কুয়াশা আছে নয় নম্বর কেবিনে বন্দী হয়েই। অথচ ১৮০ পাউণ্ড ওজনের ডাইভিং-স্যটে বন্দী হয়ে সে জো’র সাথেই চলেছে, সমুদ্রের নিচে শয়তানটার গোপন ধনাগারে। ‘
লাউড-স্পীকারে জো’র কণ্ঠ শোনা গেল, সব কিছু ঠিক আছে?’ কুয়াশ-১৯
| ১১
নয় নম্বর কেবি চলেছে সমুদ্রের গেল, সব কিছু
=
হ্যাঁ, ঠিক আছে। কে বলল বুঝতেপারল না কুয়াশা। ‘বেশ, এগোও এবার। জো নির্দেশ দিল ।
কুয়াশা মইয়ের দিকে এগিয়ে চলল । পিছন ফিরে দেখল জো আসছে তার পিছনে। পর মুহূর্তে দীর্থ বারের তলায় ঝুলন্ত তিনশ ওয়াটের সাব-মেরিন ল্যাম্প জ্বলে উঠল। আলোর বন্যায় প্লাবিত হল আফটার ডেক আর সমুদ্রের চঞ্চল ফেনিল বক্ষ । ..
– সমুদ্র আলিঙ্গন করল কুয়াশাকে । ক্ষুদ্র ঢেউ ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। একটু পরে সে সমুদ্রের মধ্যে, হারিয়ে গেল । মাথা তুলে দেখল জো নেমে পড়েছে। পানিতে।
, দুজন ধীরে ধীরে নামতে লাগল সমুদ্রের নিচে । বায়ুর চাপের আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে কুয়াশার কানের পর্দায় ঝিম ঝিম শব্দ করতে লাগল। তারপর ধীরে ধীরে নেমে এল অন্তহীন নিস্তব্ধতা নীরবতার ভাষায় যেন মুখর হয়ে উঠল সমুদ্র। সমুদ্র এখানে বোধহয় বেশি গভীর নয়। তবে ঠিক কতটা নিচে ওরা নেমে এসেছে কুয়াশা জানে না। মিনিট দশেকের মধ্যে ওরা ভূমি স্পর্শ করল। অত্যুজ্জ্বল সাব-মেরিন ল্যাম্পটাও ক্রমশ নেমে এল। ওরা ভূমি স্পর্শ করতেই ল্যাম্পটাও থেমে গেল। কয়েক হাত উপরে স্থির রইল বাতিটা।
উজ্জ্বল বাতিটা অনেকটা জায়গা আলোকিত করেছে। পানি এত পরিষ্কার এত স্বচ্ছ যে মনে হয় ওরা যেন একটা ছোট পুকুরে নেমেছে। ..
নিচের দিকে তাকাল কুয়াশা। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । উঁচু-নিচু শিলাময় মাটির বুক। তার ফাঁকে ফাঁকে শেওলা। অদৃশ্য স্রোতে শেওলাগুলো কাঁপছে। ছোট ছোট রং বেরং-এর মাছ চারদিকে খেলা করছে। ওদের অভিযানে বিরক্ত একটা কাঁকড়া দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। একটা মাছ লেজ নাড়তে নাড়তে এগিয়ে আসছিল সেটা থেমে গেল। একটু পরেই দিক পরিবর্তন করল।
: জ্যে তার কাছ থেকে বেশ কয়েক হাত দূরে সরে গেছে। কুয়াশা দেখল সে একটা গোলাকার, পাথরের কাছে গিয়ে দাঁড়াল, ভাল্ভ অ্যাডজাস্ট করল। কুয়াশার অস্বস্তি লাগছিল। আগের বারের মত এবারেও তার মনে হচ্ছিল কে যেন তাকে উপরে ঠেলে দিচ্ছে। সেও বাতাস বেরিয়ে যাবার ভালভটা সামান্য খুলে দিল। বাতাস বেরিয়ে যেতেই স্কুটা আবার বন্ধ করে দিল। তারপর এগিয়ে গেল জা’র দিকে। এগোতে তার বেশ পরিশ্রম হচ্ছিল। মনে হল যেন সে পেরিয়ে যাচ্ছে অন্তবিহীন পথ। কিন্তু জোর কাছাকাছি যেতেই তার খেয়াল হল জো তাকে হাত নেড়ে এগোতে নিষেধ করছে। আবার সে আগের মতই কষ্টকর পরিশ্রম করতে করতে সরে গেল । দাঁড়াল শিলাখণ্ডটার উল্টো দিকে। সেটাকে জো ইতিমধ্যেই স্থানচ্যুত করছে।
: ভলিউম-৭
১২
, হঠাৎ কুয়াশার মনে হল, পানিটা এত স্বচ্ছ আর আলোটা এত তীব্র যে নিচে ওরা কি করছে না করছে উপরের ডেক থেকে তা হয়ত দেখা যাবে। কথাটা মনে হওয়াতে একটু চমকে গেল সে। উপরের দিকে মুখ তুলল। কিন্তু না, কুয়াশা
পরক্ষণেই বুঝতে পারল ওয়ের কোন কারণ নেই। উপর থেকে ওদের দেখা যাচ্ছে ঠিক কিন্তু ঢেউ-এর আন্দোলনে ওদের চলাফেরা কাজকর্ম ভাল করে বোঝা যাবে
, আবছা একটা ছবি দেখতে পাওয়া যাবে শুধু। স্পষ্ট করে কিছু দেখা যাবে না। অতএব এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।
. জোর দিকে মুখ ফেরাল কুয়াশা। সে উপরের দিকে চেয়ে আছে। তাকে দেখাচ্ছে একটা দৈত্যের মত। কুয়াশা মনে মনে হাসল । তাকেও নিশ্চয়ই ঐরকমই একটা দৈত্যের মত দেখাচ্ছে।
: হেডফোনের ভিতর দিয়ে জো’র ধাতব কণ্ঠ শোনা গেল। জো নির্দেশ দিচ্ছে। ‘শুরু কর। আলফানস, গেট রেডি। | কুয়াশা উপরের দিকে তাকাল। মিনিটখানেক পরে নেমে এল একটা বাক্স । ‘ ধীরে ধীরে বাক্সটা নেমে আসছে। জো যেখানটায় দাঁড়িয়েছিল সেখান থেকে
কয়েক গজ দূরে নেমে এল বাক্সটা। কেবলটা ঢিলে হয়ে গেল ।
জো আবার নির্দেশ দিল, ‘আবার তোল।’ কেবলটা সোজা হল আবার। বাক্সটা আবার উঠল। ‘ডাইনে। জো জানাল, তোমাদের, ডাইনে।’ বাক্সটা সচল হল। ধীরে ধীরে এগোতে লাগল জোর দিকে।
থাম।’
থামল বাক্সটা। আবার নেমে এল সেটা পাথুরে মাটির উপর । জো যেখানে . দাঁড়িয়েছিল তার মাত্র তিন-চার হাত দূরে। কেবলটা আরার ঢিলে হয়ে গেল।
. কুয়াশা বুঝল এবার তাকে এগোতে হবে। পানি কেটে এগিয়ে গেল সে। বাক্সটার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ইস্পাতের তৈরি ভারি বাক্স। জোও এগিয়ে এসেছে। . কেবলের হুক থেকে বাক্সকে খুলতে শুরু করেছে। কুয়াশা তাকে সাহায্য করল।
আর হাত চালানোর ফ ক ফাঁকে সে বাঁকা চোখে দেখল জো যেখান থেকে ‘পাথরটা সরিয়েছে সেখাএকটা গর্তের মত লাগছে । আলোটা সেখানে ভাল করে ‘পৌঁছায়নি । অন্ধকার লাগছে গুহাটাকে । ওটাই তাহলে জো’র গোপন ভাণ্ডার।
‘ কেবলের হুক থেকে বাক্সগুলো ভোলা হল। উঠে গেল কেবলটা উপরের দিকে। কুয়াশা ও জো দুজনে মিলে সেগুলো বয়ে নিল গর্তের প্রান্তে। কষ্টকর প্রয়াস। এক গজ এগোতে গেলে মনে হয় যেন একশ গজ এগোতে হচ্ছে । { “. “ তবুও এক সময় গর্তের প্রান্তে বাক্সগুলো বয়ে নেওয়া শেষ হল। গর্তের পাশে উপুড় হয়ে বসল জো। পা দুটো ঢুকিয়ে দিল গর্তের মধ্যে। নামতে লাগল সে।
কুয়াশার মনে হল ভিতরে বোধহয় মই লাগানো আছে। জো মই বইবার মত
কুয়াশ-১৯:
: ৪৩
।
.
করে ধাপে ধাপে নেমে যাচ্ছে।
কুয়াশা তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করতেই তা জো’র নজরে পড়ল। সে হাত নেড়ে কুয়াশাকে এগোতে নিষেধ করল। টেলিফোনে তার গলা ভেসে এল,
ওখানেই থাক, আর বাক্সগুলো একে একে নামিয়ে দাও। * . ইতস্তত করল কুয়াশা। এখানেই–এই সামুদ্রিক গুহার মধ্যেই তার পায়ের নিচে আছে জো’র অন্তহীন ঐশ্বর্য, আছে বিপুল লুণ্ঠিত ধন, আছে অমিত রত্নরাজি। যার জন্য প্রাণ দিয়েছে অসংখ্য লোক, এডিথ আর এথেলের বাবা, এথেল নিজে। প্রাণ দিয়েছেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মণিষী রোজেনবার্গ, আরও কত নাম না জানা হতভাগ্য–যার জন্য ইতিমধ্যেই প্রাণ দণ্ডের নির্দেশ হয়েছে তার নিজের আর এডিথের।এই ভাণ্ডারের ইতিহাস রক্তের কালিমায় ক্লেদাক্ত। এর এতটুকু সামগ্রী ভোগের ন্যায়সঙ্গত অধিকার জোর নেই। এ সম্পদ কুয়াশা যেকরেই হোক উদ্ধার করবে। তা ব্যয় করবে বিজ্ঞানের সেবায় আর মানুষের কল্যাণে । আর সেই জনেই সে পালিয়ে যাবার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও, পালিয়ে যায়নিঃ মারাত্মক এক ঝুঁকি নিয়েছে, তার বদলে। এতটা মূল্যের বিনিময়ে সে জো’র ধনভাণ্ডারের এত কাছে এসে অন্তত সেটাকে চোখের দেখাও দেখতে পাবে না, তা তো হতেই পারে না।
– অবশ্য কুয়াশা জানে তার জন্যে অপেক্ষা করলে ক্ষতি নেই। সে সময় আসতেও তেমন দেরি নেই।’
‘; সে জো’র হাতে একটা একটা করে বাক্স তুলে দিতে লাগল । জো সেগুলো নিয়ে মই বেয়ে নিচে নেমে রেখে আসতে লাগল। কুয়াশা জানে সে ইচ্ছা করলেই এই মুহূর্তে জো’কে গুহা পথের পাথর চাপা দিয়ে রেখে আসতে পারে জীবনে আর কোনদিনই সে উঠতে পারবে না তার ধনাগার থেকে। যক্ষ হয়ে পাহারা দিতে হবে। কিন্তু সে সময় এখনও আসেনি। শিগগিরই আসবে।
. আর এক দফা বাক্স নেমে এল। ধীরে ধীরে এসে নামল গুহার তিন চার গজ দূরে। জো ইতিমধ্যে উঠে এসেছে। সে আর এগিয়ে এল না। গুহামুখ থেকেই টেলিফোনে নির্দেশ দিল, বাক্সগুলো খুলে নিয়ে এস।’
কুয়াশা কেবল থেকে বাক্সগুলো খুলল। একে একে সেগুলো নিয়ে গেল গুহার পাশে। তারপর সেগুলো নামিয়ে দিতে লাগল জো’র হাতে। প্রচণ্ড পরিশ্রম হচ্ছিল কুয়াশার। বুঝতে পারছিল ডাইভিং স্যুটের অভ্যন্তরে তার দেহ থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল সে। চোখের সম্মুখে ঝাপসা লাগছে। চোখের সামনে গ্লাস প্যানেলে. বাষ্প জমেছে। হেলমেটের বাঁ দিকের এয়ার কর্ক খুলে হাঁ করে মুখের ভিতর পানি নিল সে। কুলি করে পানিটা ছড়িয়ে দিল গ্লাস প্যানেলে। দৃষ্টিটা আবার স্পষ্ট হল। সুইমিং ড্রেসের কলারের ভিতর দিয়ে
বুকের দিকে নেমে গেল পানি ফোঁটায় ফোঁটায়।
• ক্লান্তিটা একটু দূর হল কুয়াশার। জো গুহার ভেতরে রয়েছে। বাক্সগুলো
* ভলিউম-৭
৪৪
গুছিয়ে রাখছে সে। বাক্সগুলোতে ইতিমধ্যে কত লক্ষ টাকার ধনরত্ন নিচে নেমেছে একবার হিসাব করার চেষ্টা করল কুয়াশা মনে মনে। পাঁচ লক্ষ টাকার? দশ লক্ষ টাকার? হিসাব করা আসলে দুঃসাধ্য। এমন কি আন্দাজ করতেও কল্পনার রাশটাকে খুলে দিতে হবে। আর জো তার দস্যুবৃত্তির ইতিহাসে এমন কত কোটি টাকার হীরা জহরৎ এনে, এখানে সঞ্চয় করেছে কেউ কোনদিনও, তা কল্পনা করতে পারবে না। জো নিজেও তা জানে না হয়ত। পৃথিবীর অনেক দেশের কোষাগারেও হয়ত এত অর্থ নেই। কুয়াশা নিজেও অনেক গোপন ভাণ্ডার করায়ত্তে এনেছে—- মানিকপুরের গুপ্তধন, চিরণ মন্দিরের গুপ্তধন- কিন্তু জো’র এই সামুদ্রিক ধনাগারের ঐশ্বর্য নিঃসন্দেহে সেগুলোর চাইতে অনেক গুণ অধিক।, তার নিজের আকাঙ্ক্ষাও তো এমন কিছু বিরাট নয়। এমন বিশাল ধনভাণ্ডার, করায়ত্তে আনার কথাও তো সে এর আগে ভাবেনি। শুধু যতটুকু দরকার মনে হয়েছে ঠিক ততটুকু বৈভবই সে সংগ্রহের চেষ্টা করেছে। তাও তো কখনই নিজের জন্য করেনি, করেছে পরের কল্যাণে। আর সে সম্পদ এমন কিছু বিপুলও নয়। জো’র ঐশ্বর্যের তুলনায় তা অতি নগণ্য, অতি তুচ্ছ। অথচ তার নাম আছে দুনিয়া জোড়া। অবশ্য নাম নয়, বদনাম। আর জো স্টিফেন দুনিয়া সুদ্ধ মানুষের অগোচরে দুনিয়ার সিংহভাগ ঐশ্বর্য লুণ্ঠন করে তার মালিক হয়ে বসে আছে।
8. কিন্তু ঐশ্বর্যের পরিমাণ হিসেব করতে কুয়াশা পারুক আর না পারুক সময়ের হিসেব তার চুলচেরা।
. সে হিসাব করে দেখল শূন্য কেবল উঠে যেতে আর তা বাক্সসমেত নেমে আসতে দশমিনিট সময় লাগে। বাক্সগুলো খুলে তা জো’র হাতে তুলে দিতে দরকার হয় ছয় মিনিটের। চার মিনিট তার হাতে থাকে। নাটকের শেষ দৃশ্যের মঞ্চ তৈরি করার জন্যে তাই আর দেরি করা সমীচীন নয়। কাজের ফাঁকে ফাঁকে যে চার মিনিট করে সময় পাবে এখন থেকেই তার সদ্ব্যবহার করতে হবে। আর দেরি করলে চলবে না।
২. তৃতীয়বার কেবলের হুক থেকে বাক্সগুলো খুলে সে জো’র হাতে তুলে দিল একে একে। সবগুলো নেয়া শেষ হলে জো নেমে গেল গুহার ভেতরে। জোর হেলমেটটা অদৃশ্য হতেই কুয়াশা বা হাত দিয়ে তার লাইফ-লাইনটা চেপে ধরল। একটু টেনে নামাল নিচের দিকে। ঢিলে হয়ে গেল কেবলটা। … তারপর শুরু হল তার কাজ। ডাইভিং স্যুটের বেল্টের ভাঁজে যে ছুরিটা সে লুকিয়ে রেখেছিল সেটা ধীরে সুস্থে বের করল। সাব-মেরীন লাইটের আলোতে চকচক করে উঠল ছুরিটা।– কুয়াশা জানে সে কি করছে। কিন্তু তার মনে জোর প্রতি এতটুকু দয়া-মায়া নেই। তার ব্যাপারে সে নির্মম, নিষ্ঠুর। আর যাকেই হোক জোকে ক্ষমা করার প্রশ ওঠে না। কুয়াশার মনে হল প্রফেসর রোজেনবার্গের কথা। জো তাকে নির্মমভাবে কুয়াশা-১৯,
৪৫
বা হাত দিয়েমে গেল গুহা হাতে তুলে নি।
শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে সমুদ্রের অতলে তার আক্সজেন সালণ্ডার দা আৰু থেকে নষ্ট করে রেখে, আর কপিকল নষ্ট হয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে, কয়া। তাকে ক্ষমা করতে পারে না। মানবতার এতবড় শত্রুকে ক্ষমা করা মানবতার চরম শত্রুতা সাধন ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া জোকে যদি সে মাও করে তাহলে জো তাকে ছেড়ে কথা কইবে না। আল্টাসোনিক্সের লোভেই জো তাকে। বাঁচিয়ে রেখেছে কুয়াশা তা জানে। জো যদি কুয়াশার কাছ থেকে আল্টাসসানিক পায় তাহলেও সে তাকে হত্যার চেষ্টা করবে। না পেলে তো কথাই নেই। এডিথের কথাও তার মনে হল। সে জানে এডিথকে কি মূল্য দিতে হবে, শুধু জীবনটাই দিতে হবে না, ইজ্জতও বিক্রি করতে হবে। .:: সারাজীবনে সে নরহত্যাকে ঘৃণা করেছে, নরঘাতককেও ঘৃণা করেছে, কিন্তু আজকে জো’কে সে হত্যা করবে। সে এটাও জানে জোকে হত্যা করায় কোন পা নেই; কোন অপরাধ নেই। আইনের চোখে যাই হোক, বিবেকের কাছে এটা কোন অন্যা, নয়। ‘
দৃ! হাতে জোর লাইফ-লাইন কাটতে শুরু করল কুয়াশা।
উপর থেকে একের পর এক বাক্স আসছে। সেগুলো সে নামিয়ে জো’র হাতে। তুলে দিচ্ছে। কিন্তু মাঝখানে সে যে চার মিনিট করে সময় পাচ্ছে সেটুকু সে ব্যয় করে চলেছে লাইফ-লাইনের আঁশ কাটতে। “ ।
লাইফ-লাইনটা এক সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। শুধু অবশিষ্ট রইল ভিতরে টেলিফোন লাইনটা। তারপর সে নিজের লাইনটাও কেটে ফেলল—টেলিফোন লাইনটা বাদ দিয়ে। দুটো লাইনই এমন অবস্থায় রইল যে, যেকোন মুহূর্তে ছুরির এক আঘাতেই টেলিফোন লাইনের ক্ষীণ যোগাযোগ ছিন্ন করা যেতে পারে। কুয়াশাকে এটা এই জন্য করতে হল যে, কোন লাইন দিয়ে কথা আসছে লাউড স্পীকারে সেটা ধরা পড়বে না আর টেলিফোনে কণ্ঠস্বরের যেটুকু স্বাভাবিক বিকৃতি হয়, তার সাথে হেলমেটের মধ্যেকার বায়ু-তরঙ্গ মিলে গলার আওয়াজটা যে কার তাও চেনা যাবে না। কিন্তু উপরে জাহাজে লাইনের অপর প্রান্তে যে লোকটা বসে আছে কার লাইফ-লাইন কোনটা সে তত তা জানে। তাকে তো ফাঁকি দেওয়া যাবে
। তাছাড়া আলফানস যদি কোনক্রমে ডেকে চলে আসে তাহলে তার পরিকল্পন ফাঁস হয়ে যাবে । তাহলে তাকে আর পৃথিবী আলো-হাওয়ার পরশ পেতে হবে না। *. মোট আটবার উপর থেকে বোঝা নামল। ছয়বারের মধ্যেই কুয়াশার কাজ শেষ । সে এখন প্রস্তুত। এখন সে অপেক্ষা করছে চরম মুহূর্তটার জন্য। সে জানে এখনও তার বিপদ পুরোপুরি কাটেনি, এখনও’সে ধরা পড়ে যেতে পারে। তাতে অবশ্য তার আফসোস নেই, কারণ মরলে সে এখন একা-মরবে না, জো’কে মেরে তবেই মরবে। তখন একমাত্র সেটাই হবে তার সান্ত্বনা।
ভলিউম-৭
=
• অষ্টমবার বোঝা নামাবার পর উপর থেকে গলা ভেসে এল, “ব্যস খতম। ..
কণ্ঠটা সম্ভবত বার্নহামের। * ডাইভিং স্যুটের ভিতরে দেহটা নড়ে উঠল কুয়াশার । বাক্সগুলো এগিয়ে দিল জো’র হাতে। জো সেগুলো নিয়ে নেমে গেল নিচে। ছুরিটা বের করল কুয়াশা। ‘.. টেলিফোনের মধ্যে দিয়ে আবার শোনা গেল কণ্ঠ । একটা গোলযোগ ঘটেছে এখানটায়। . চমকে উঠল কুয়াশা। কে বলছে? কার এই কণ্ঠ? জো’র? বার্নহার? স্পষ্ট বুঝতে পারল না সে। সম্ভবত বাহামের। কারণ নিচে তো গেলযোগ এখন পর্যন্ত ঘটেনি। যেটা ঘটেছে জো সেটা এখনও জানে না। যেটুকু ঘটতে যাচ্ছিল পরের সেকেণ্ডে টেলিফোনে গোলমালের খবর কানে আসতেই সেটুক স্থগিত রয়েছে। আর নিচে আসল গোলমালটা হলে জোর কণ্ঠ ইতিমধ্যেই স্তব্ধ হয়ে যেত। তাহলে উপরে জাহাজ থেকেই কথা বলছে। বার্নহামই হবে। কিন্তু উপরে গোলমাল হলে তো আরও বিপদের কথা। তাহলে সে কি ধরা পড়ে গেছে? আলফানস. কি ডেকে এসে সব ফাঁস করে দিয়েছে?
মুহূর্তে কুয়াশার দেহটা শক্ত হয়ে গেল। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চাপল সে। কঠিন হাতে চেপে ধরল টেলিফোনের লাইন। একা সে মরবে না।
কিসের গোলমাল?’
জো’র সেই একঘেয়ে নির্বিকার কও টেলিফোনের মধ্যে চিনতে কষ্ট হল না কুয়াশার। ..
ছুরিটা বসাল না জো’র টেলিফোন লাইনে। কান খাড়া করে রইল কুয়াশা। শোনাই যাক না। সে তো তার কবল থেকে পালিয়ে যেতে পারছে না। নিঃশ্বাস বন্ধ করে শুনতে লাগল সে।
‘দুজন অতিথি এসেছে।
কোথা থেকে? জানি না। বোধহয় টিকটিকি। সাঁতরে এসেছে। ‘জ্যান্ত ধরেছ?’, ‘হ্যাঁ। ‘কোথায় রেখেছ?’ নিচে আছে। আততায়ানের কেবিনে। তাকেও বন্দী করা হয়েছে।” কাকে?’ . ‘আতোয়ানকে। ‘কেন?’ এবার যেন জোর কণ্ঠে একটু বিস্ময় ফুটে উঠল।
কার্ল আর ব্রিজম্যানকে গুলি করেছে আতোয়ান।
‘কি বলছ তুমি? কুয়াশা-১৯।
যা বলছি,তা ঠিক। কারণটা কি?’
‘জানি না। ওরা দুজন তোমাকে আর আলফানসকে ড্রেস পরিয়ে নেমে যেতেই ওদের দিকে পিস্তল ছুঁড়েছে আতোয়ান ]
মারা যায়নি তো?’
না। আঘাত কারও তেমন গুরুতর নয়। কার্লের ডান হাতে আর ব্রিজম্যানের বাঁদিকে কাঁধের ভিতর দিয়ে গুলি চলে গেছে। দুজনই বেঁচে যাবে বোধহয়। তবে এখন দুজনই অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে। ডাক্তার ওদের দেখছে।
‘বেশ, বিচার হবে আতোয়ানের। এমন শাস্তি দেব মহামান্য অতিথিদের কি এখনই শেষ করে দেব?’
না । আমি আসছি। মিনিট কয়েক পরে আমাদের তুলবে। : স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কুয়াশা।’ ড্রেসার দুজনের জন্য একটু আফসোসও হল। কিন্তু ওরা নিশ্চয় এমন কিছু করেছিল বা করতে যাচ্ছিল যার ফলে কুয়াশা ধরা পড়ে যেত মনে করে বাধ্য হয়েই আতোয়ান গুলি করেছিল। মনে মনে সে আতোয়ানের প্রতি কৃতজ্ঞও হল.”।
. কে জানে হয়ত আলফানসেরও একই অবস্থা হয়েছে আতোয়ানের হাতে। অন্তত কিছু একটা যে আলফানসের ভাগ্যে ঘটেছে তাতে সন্দেহ নেই। অন্যথায় জাহাজের এমন মারাত্মক একটা ঘটনা ঘটে গেল তাতে আলফানসের কিছু একটা ভূমিকা তো থাকবার কথাই। আর তার ভূমিকা থাকলেই কুয়াশা ধরা পড়ে যাবে। কারণ ওরা সবাই জানে আলফানসই জো’র সাথে সমুদ্রের নিচে নেমেছে। আসল কথা জানে শুধু আলফানস নিজে, ড্রেসার দুজন, আতোয়ান আর কুয়াশা। তাই আলফানসকে এখন কেউ জাহাজে দেখলে প্রথমে হয়ত ভূত দেখবার মত চমকাবে কিন্তু পরক্ষণেই কুয়াশার সমস্ত পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় জীবন দিয়ে হলেও মূল্য শোধ করতে হবে।
নয়।
জো’র টেলিফোন লাইনে ছুরি বসিয়ে দিল কুয়াশা। লাইনটা বিচ্ছিন্ন হল। জোর লাইফ-লাইনের গোড়াটা সে টেনে নিয়ে নিজের কোমরে জড়াল । ভাল করে গিট দিল। …. ..। | নিজের লাইফ-লাইন আরও কিছুটা টেনে নিল। আগেই এমন একটা শিলাখণ্ড সে দেখে রেখেছিল যেটাতে তার লাইফ-লাইনটা, বেঁধে রাখা যায়। নিজের লাইফ লাইনটা কেটে সেটা সেই শিলাখণ্ডে আচ্ছা করে পেঁচিয়ে বাঁধল। তার লাইফ লাইনটা ঢিলে হয়ে গেলে’ উপরে জাহাজে যে লোকটা লাইফ-লাইন ধরে আছে তার ৪৮,
ভলিউম-৭
সন্দেহ হতে পারে। তাই এই ব্যবস্থা করল কুয়াশা। ‘ | জো’র হেলমেটটা দেখা গেল। সে মই বেয়ে গুহার ভিতর থেকে উঠে আসছে। . .
কুয়াশা গুহার প্রান্তে একটা হাঁটু মুড়ে নিচু হয়ে মুঠোর চাইতে দ্বিগুণ আকারের একটা পাথর তুলে নিল।
. জো’র উচ্চারণ নকল করে, টেলিফোনে জানাল, এবারে আমি উঠব। আচ্ছা রাখ, একটু দেরি কর। কিন্তু আমাকে একটু পরেই আবার নামতে হবে। আলফান, তুমি কিছুক্ষণ থাক। তোমাকে আর একটা কাজ করতে হবে।’
জো’র হাতটা গর্তের উপরে এসেছে। সে হাত রাখবার একটা জায়গা খুঁজছে। হেলমেটটা গর্তের বাইরে এসে পড়েছে। এক হাত দিয়ে সে কুয়াশাকে সরে যেতে ইশারা করছে। হয়ত কে জানে মৌখিক নির্দেশও দিচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে। * কুয়াশা হাঁটু মুড়ে এমনভাবে বসেছিল যে, সে না সরলে জো উঠতে পারবে না গর্ত ছেড়ে।
কুয়াশা সরল না। সেখানে হাঁটু গেড়ে বসে থেকেই আবার জো’র উচ্চারণের অনুকরণ করে বলল, আতোয়ান বদমায়েসটাকে এখনি নিয়ে এস ডেকের উপর। আর দেখ ড্রেসারদের কেউ যেন বিরক্ত না করে। কোন কথা এখন তাদের জিজ্ঞেস করার দরকার নেই। | ‘ডাক্তারও তাই বলেছে, জানাল উপর থেকে।
এদিকে জো ক্রমাগত হাত নেড়ে তাকে সরে যাবার ইশারা করছে। তার লাইফ-লাইনের ছিন্ন অংশ যে পানির মধ্যে ভাসছে তা এখনও তার নজরে পড়েনি। . সে উপরে আলোর দিকে চেয়ে আছে। আর তার ঠোঁট নড়ছে। নিশ্চয়ই কিছু একটা
সে বলছে। কিন্তু কুয়াশা জানে জোর জীবনের এই শেষ কথাগুলো কেউ শুনতে: পাচ্ছে না, কোনদিন আর কেউ জো’কে দেখবে না। তার কণ্ঠস্বরও কোনদিন কেউ শুনবে না। কুয়াশা সেখানেই সেই অবস্থাতেই অটল হয়ে রইল।
হয়ত সে যা বলছিল তার কোন জবাব না পেয়ে অথবা প্রতিক্রিয়া ঘটতে না দেখে জো থমকে গিয়েছিল অথবা কুয়াশাকে অটল হয়ে থাকতে দেখে তার মনে কোন সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল। যেটাই হোক, তার হাত নাড়া বন্ধ হল, ঠোঁট দুটোও আর নড়তে দেখা গেল না কাঁচের মধ্যে দিয়ে। তারপর সে তার শিরস্ত্রাণে আবৃত মাথাটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আনল কুয়াশার মাথার কাছে। ধীরে ধীরে নিকটবর্তী হল দুজনের মুখাবরণের কাঁচ। পার্থক্য রইল মাত্র পাঁচ ছয় ইঞ্চি। * কুয়াশা জো’কে ভাল করে দেখতে দিল তার নিজের মুখটা। জো’র কাছে চরম সত্যটা গোপন করার পরিকল্পনা তার আদৌ ছিল না। এই প্রথম কুয়াশা সরাসরি জো’র দিকে তাকাল। এমনভাবে মুখটা তুলল যাতে করে জো তাকে চিনতে ৪-কুয়াশা-১৯ .
৪৯
।
‘
,
*
পারে। সাব-মেরিন লাইটের উজ্জ্বল আলো কাঁচে প্রতিফলিত হওয়ায় মুখটা পুরোপুরি স্পষ্ট দেখা না গেলেও এত:কাছে থেকে চিনতে পারা অসম্ভব নয়।
আর জো ঠিকই চিনতে পারল তাকে। তার কালো জ্বলন্ত চোখ দুটো আতঙ্কে ঠিকরে পড়ল। পাতলা রক্তশূন্য ঠোঁট দুটো ভেদ করে দাঁতগুলো বেরিয়ে এল নেকড়ে বাঘের মত। এই প্রথম তার নির্বিকার চেহারার মুখোশটা একেবারে খসে পড়েছে, তার বদলে বেরিয়ে পড়েছে নেকড়ের হিংস্রতা। আতঙ্কে বীভৎস দেখাচ্ছে জোকে। হয়ত সে প্রচণ্ড চিৎকার করে ডাইভিং স্যুটের ভিতরটা কাঁপিয়ে তুলছে। কিন্তু সে চিৎকার সে একাই শুনছে। কোন উত্তর না পেয়ে তার আদেশ পালন হতে
দেখে সে হেলমেটের দিকে একহাত বাড়িয়ে দিয়েছে সন্দেহবশে । আর হাত দিয়েই বুঝতে পেরেছে তার টেলিফোন লাইন আর লাইফ-লাইন দুটোই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। . কুয়াশা চেয়ে আছে জোর দিকে। কে জানে কি ভাবছে জো। হয়ত সে ভাবছে, মৃত্যু তাহলে সত্যিই তার পিছনে পিছনে এসে দাঁড়য়েছে এইখানে তার গোপন ধনাগারে।
“ কিন্তু কি করে এটা সম্ভব হল তা সে কোনদিনই জানবে না। সাফল্যের উতুঙ্গ শীর্ষে আরোহণ করেছিল সে। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি দফায় সে একের পর এক জয় লাভ করে এসেছে। . ‘: ‘জো জানে কুয়াশাকে সে বন্দী করে রেখে এসেছে পরাজিত, নিরস্ত্র ও অসহায় অবস্থায় তারই জাহাজের দুর্ভেদ্য, এক কক্ষে। কিন্তু তবুও সে এখানে কেমন করে এসেছে আলফানসের বদলে কে জানে সে রহস্য সে কোনদিন জানতে পারবে না। কুয়াশা পরাজিত হয়নি, সে স্বাধীন, সে অসহায় নয়, নিরস্ত্র নয়। নাবিকরাই তাকে পোশাক পরিয়েছে। তাকে নামিয়ে দিয়েছে। একটি কথাও উচ্চারণ করেনি। আর সেটাই হল নিয়তির শেষ মার। কিন্তু কিভাবে এই অসম্ভব সম্ভব হয়ে উঠল? কয়াশা কি জাদু মন্ত্রে নাবিকদের আবিষ্ট করেছিল? … শেষ চেষ্টা করতে ছাড়ল না জো। বিস্ময় মিলিয়ে যেতেই আত্মসংরণ করল মুহূর্তের মধ্যে। ডান হাতটা দ্রুত এগিয়ে এল কুয়াশার দিকে। চেপে ধরল তার কাঁধ। কিন্তু অমসৃণ টুইলের উপর থেকে হাতটা ফস্কে গেল। কুয়াশা তার কব্জিটা ধরে মোচড় দিয়ে সরিয়ে দিল। বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে জো একটা শিলাখণ্ড চেপে ধরে ভারসাম্য রক্ষা করছিল। হাতের পাথরটা দিয়ে চেপে জো’র সেই আঙলের উপর প্রচণ্ড শক্তিতে আঘাত করল কুয়াশা।
• কাঁচের ভিতর দিয়ে দেখা গেল জো’র চেহারাটা যন্ত্রণায় কুঞ্চিত হয়ে গেছে। হাতটা সরিয়ে নিল সে।।
কুয়াশা ছুরি চালিয়ে দিল জো’র এয়ার পাইপের মধ্যে। তারপর একটা ধাক্কা,
দিল।
ভলিউম-।
|
L
–
।
জো ধীরে ধীরে পড়ে গেল চিৎ হয়ে। তার হাত দুটো নড়ছে। মই থেকে তার দেহটা পড়ে গেল। তলিয়ে গেল সে নিজের গোপন ধনাগারে। সূক্ষ্ম বুদবুদ উঠতে লাল পানির মধ্যে দিয়ে।
‘বার্নহাম। জো’র উচ্চারণ নকল করে সে বলল।
হ্যাঁ। বার্নহামের কণ্ঠ শোনা গেল। ‘শুধু আমাকে তোল।
জোর লাইফ-লাইন সে মজবুত করে তার কোমরে জড়িয়ে নিয়েছে। বাহামকে নির্দেশ দিয়েই সে নিজের টেলিফোনের লাইনটা কেটে দিল। এটাই
ছল তার লাইনের সাথে শেষ সহযোগ। .. . ।
* ধীরে ধীরে উঠতে লাগল কুয়াশা। বাতির পাশ দিয়ে সবুজ ছায়া ছায়া পানির রাজ্য ভেদ করে সে মুক্ত আলো হাওয়ার রাজ্যের দিকে এগিয়ে চলেছে। নিচে অন্ধকারে পড়ে আছে জো তার গুপ্ত ভাণ্ডারে। সে ভাণ্ডারের দ্বার আর কোনদিন খুলতে পারবে না। চিচিং ফাঁকের মন্ত্র আর কোনদিন সে উচ্চারণ করতে পারবে,
। . কয়েক মিনিট পরে সে রোজমেরীর মইয়ের ধাপে পা রাখল। দেহের চারদিক থেকে অকস্মাৎ চাপ দূর হয়ে গেল। আলোর মধ্যে এসে দাঁড়াল কুয়াশা। ‘
* বার্নহাম ও এঞ্জিনিয়ার তাকে ধরে ডেকে নিয়ে গেল। একটা টুলের উপর বসিয়ে দিল তাকে। কুয়াশা বসে রইল সমুদ্রের দিকে মুখ করে। ওরা তার হেলমেটের সামনের কাঁচটা খুলে দিল। এক ঝলক হাওয়া কুয়াশার মুখে মিষ্টি পরশ বুলিয়ে দিল। মুক্ত হাওয়ায় বুক ভরে শ্বাস নিল কুয়াশা। | ওরা তার হেলমেট খুলছে। মাথাটা সামান্য নুইয়ে বসে আছে কুয়াশা। ডান হাতে বেল্টের ভাঁজ থেকে ছুরিটা বের করে বাঁ হাতে চালান করে দিল সে। হেলমেটটা খুলে ফেলা শেষ হতেই মাথাটা, ঘাড়টা আর একটু নিচের দিকে, বাৎল। হাতটা উঠে গেল তার গলার কাছে। ৪.পরের সেকেণ্ডেই তার বাঁ হাতে ছুরি আর ডান হাতে রিভলভার ঝলসে উঠল।
সে মুখ ঘুরিয়ে মাথা তুলে সরাসরি ওদের দিকে তাকাল। | শান্ত, নম্র ও উদ্বেগহীন কণ্ঠে সে বলল, আমার মনে হয় এখানেই এই নাটকের যবনিকা ঘটল। জো খতম হয়েছে। গোলমাল করলে তোমরাও খতম হবে। ‘
• যারা তার দিকে এতক্ষণ তাকায়নি তারাও তার কণ্ঠস্বর শুনে চমকে ফিরে তাকাল। যে নাবিকটা হেলমেট খুলেছিল সে ভূত দেখার মত চমকে উঠল। যেন তাদের সামনে বিনামেঘে বজ্রপাত হয়েছে। তারপর বিস্ফারিত দৃষ্টিতে ওরা চেয়ে আছে তার দিকে নিঃশব্দে। …
| কিন্তু সে তো মূহর্তের জন্যে। মাত্র দু’হাত দুরে দাঁড়িয়েছিল বার্নহাম। সে ঘুসি কুয়াশা-১৯
•
•
বাগিয়ে এল। কুয়াশা বাঁ হাতের ছুরিটা সোজা বাগিয়ে রইল। আত্মসংরণ করে দাঁড়িয়ে পড়ল বার্নহাম। তার চোখ দুটো বাঘের চোখের মত জ্বলছে। নাকের বাঁশি ফুলে উঠছে বারবার। হাতটা নামাল সে। পকেটের দিকে তার হাতটা এগোচ্ছে।
হাত তোল, বার্নহাম! কঠোর স্বরে আদেশ ঘোষণা করল কুয়াশা।। বার্নহাম দু’হাত শূন্যে তুল। তার দৃষ্টি বিস্ফারিত।
কুয়াশা বলল, ‘কেউ এতটুকু চালাকি করার চেষ্টা কোরো না। তাহলে মৃত্যু নিশ্চিত। কিন্তু কাউকে অহেতুক খুন করার ইচ্ছে আমার নেই। সবাই হাত তুলে রেলিং-এর দিকে এগিয়ে যাও। সমুদ্রের দিকে মুখ করে দাঁড়াও। বার্নহাম তুমিও…’ ‘… নিঃশব্দে তার আদেশ পালন করল ওরা। . .
আদেশ দানের ফাঁকে ফাঁকে কুয়াশা আতোয়ানের খোঁজ করছিল। একপাশে পিছমোড়া করে হাত পা বাঁধা অবস্থায় সে ডেকের উপর পড়ে আছে। কুয়াশা দেখল সেও বিস্ফারিত দৃষ্টিতে কুয়াশার কার্যকলাপ দেখছে।
“মি, এঞ্জিনিয়ার, আপনি আসুন এদিকে, নির্দেশ দিল কুয়াশা। : এঞ্জিনিয়ার লোকটা ভয়ে ভয়ে এগিয়ে এল। কুয়াশা দেখল লোকটা কাঁপছে। বলিরপাঠার মত এসে দাঁড়াল সে কুয়াশার কাছে। আতোয়ানের বাঁধন খুলে দিন। .: এঞ্জিনিয়ার করবে এগিয়ে গেল আতোয়নের দিকে। মিনিটখানেক পরে মুক্ত আতোয়ান এগিয়ে গেল কুয়াশার দিকে। সে হাসল। কুয়াশাও হাসল প্রত্যুত্তরে। । কুয়াশা পরবর্তী নির্দেশ জারি করল এঞ্জিনিয়ারের উদ্দেশ্যেই। বলল, ‘লাইফ, লাইনটা দিয়ে ওদের সবাইকে বেঁধে ফেলুন। কব্জিতে আচ্ছা করে বাঁধবেন। প্রত্যেকের মধ্যে অন্তত এক গজ দূরত্ব রাখবেন।
“ আমি কি ওকে সাহায্য করব?’ | মাথা নেড়ে কুয়াশা বলল, না। ও কষ্টটুকু ওদেরই একজন করুক। তুমি বরং একটা রিভলভার সংগ্রহ কর। ওদের কারও পকেট থেকে তুলে নাও একটা রিভলভার।
| এঞ্জিনিয়ার লাইফ-লাইনটা নিয়ে এগিয়ে গেল নাবিকদের দিকে। কুয়াশা বোধহয় মুহর্তের জন্যে অন্যমনস্ক হয়েছিল। হঠাৎ তার চোখে পড়ল বার্নহামের দেহটা নড়ে উঠছে। শুন্যে উঠেছে দেহটা। পর মুহূর্তে বার্নহামের দেহটা রেলিং টপকে অদৃশ্য হয়ে গেল।…. … লাফ দিয়ে এগিয়ে গেল আতোয়ান রেলিং-এর দিকে।
কুয়াশা বলল, ‘যেতে দাও। ওকে ইচ্ছা করলেই আমি শেষ করে দিতে। পারতাম।’
। আতোয়ান বলল; কিন্তু ওটাও তো কম শয়তান নয়। | এঞ্জিনিয়ার লাইফ-লাইনটা হাতে নিয়ে বোকার মত দাঁড়িয়েছিল। কুয়াশার
| ভলিউম-৭
ইশারায় তাকে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিল । আতোয়ান এঞ্জিনিয়ারের রিভলভারটা তুলে নিল তার পকেট থেকে।
. কুয়াশা আতোয়ানকে বলল, এরপর নিজের নাবিকগুলোকে বেঁধে ফেলতে হবে।’
‘সে কাজটা ইতিমধ্যেই সমাপ্ত হয়েছে, সিঁড়ি থেকে কে যেন বলল।
কুয়াশা মুখ ফিরিয়ে দেখল কামাল, এসে দাঁড়িয়েছে সিঁড়ির মাথায়। তার পিছনে শহীদ খান। দুজনেরই হাতে রিভলভার। হাসছে কামাল।
| ‘আরে তোমরা! এস, এস!’
কামাল বলল, “ওদেরকে কায়দা করতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। কেউ বাকি নেই। সব কটাকেই পাকড়াও করেছি। অবশ্য ওরাই আমাদেরকে আগে বন্দী করেছিল।
| ‘এডিথ-এডিথ কোথায়?, প্রসাধন করছে,’কামাল বলল।’ . জাহাজের ঘটনাগুলো শোনা গেল আতোয়ানের কাছে। সে বলল, ‘কার্ল আর ব্রিজম্যান, মানে ড্রেসাররা সন্দেহ করেছিল আমাকে। চ্যালেঞ্জ করেছিল। তাই
ওদেরকে সামান্য জখম করতেই হল। এছাড়া গত্যন্তর ছিল না।’
‘‘আলফানস কোথায়?’ কুয়াশা প্রশ্ন করল।
সে এখনও তার ঘরে বন্দী হয়ে আছে। ..
এডিথ রেডিও মেসেজ পাঠিয়েছিল কামাল আর ইন্সপেক্টর শার্লসের কাছে। কামাল মেসেজ পায়নি। তার আগেই সে আর শহীদ আতোয়ানের সাথে রওয়ানা দিয়েছে হার্কভিলের উদ্দেশে।
ইন্সপেক্টর হয়ত মেসেজ পেয়েছেন। হয়ত রওয়ানা দিয়েছেন।
কুয়াশা হিসাব করে দেখল সকাল হবার আগে বাইরের হস্তক্ষেপের কোন সম্ভাবনা নেই। সকালে হয়ত ইন্সপেক্টর শার্লস আসবেন তাঁর পুলিস বাহিনী নিয়ে। তার আগেই উদ্ধার করতে হবে জোর গোপন ধনভাণ্ডারের ঐশ্বর্য। আততায়ান আর,
সে এখনি নিচে নেমে যাবে। উপরে থাকবে শহীদ আর কামাল।
• একটা রহস্য কিন্তু অনুদঘাটিতই রয়ে গেল, আতোয়নের দিকে তাকিয়ে বলল এডিথ। . “কি রহস্য?
| ‘জোর পিছু ধাওয়া করবার একটা নির্দিষ্ট কারণ আমাদের প্রত্যেকের আছে আমার, এথেলের, কুয়াশার। কিন্তু আপনার কারণটা কি?” * মুখে বেদনার ছাপ ফুটে উঠল আতোয়ানের। সে ধীরে ধীরে বলল, ‘উদ্দেশ্য। অভিন্ন। আমিও প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম আপনাদের মতই। আমিও পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম।’ কুয়াশা-১৯
Leave a Reply